#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_7
ভালোবাসি রে তোকে,খুব ভালবাসি?কেন বুঝিস না তুই?তোকে যে অনেক বেশিই ভালবাসি,সব সময় এই বুকে আগলে রাখব তোকে,খুব ভালো বাসি,খুব বেশিই ভালোবাসি,”
.
আনিকাকে জড়িয়ে ধরেই আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের নোনা জল ফেলছিলাম৷আর কথাগুলো বলছিলাম
.
ঠিক তখনই আনিকা বলে উঠল
,
–তুমি আমাকে যতই ভালোবাসো না কেন?আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারব না,তোমার জীবনে আমি নিজেকে চিরদিনের জন্য জড়াতে পারব না
.
কথাটা বলেই আনিকা নিজেকে ছাড়িয়ে নিল৷
তখন ঝাপসা চোখে ওর দিকে তাকালাম৷
খুব বেশিই আবাক হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে,কিন্তু কিছুই বলতে পারছিনা৷আনিকাও আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে৷
চাঁদের আলোতে শুধু ওর চোখ দুটি চকচক করছে৷
আনিকাকে ঠিক তখনই বললাম
,
–কেন আনিকা?আমি কি তোমার যোগ্য না?
নাকি আমি খারাপ বলে,সেই যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছি?বিশ্বাস করো আনিকা আমি একদম ভালো হয়ে যাবো,কখনই অন্যায় কাজ করব না,
.
–দেখো আবিদ,তুমি অনেক ভালো ছেলে,সেটা আমি জানি,কিন্তু আমি তোমাকে আমার জীবনে মেনে নিতে পারব না…..
.
ঠিক তখনই বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল৷কেন আনিকা এই কথা বলছে?আমি কি তার যোগ্য না?নাকি অন্য কোনো কারন আছে?
.
–আচ্ছা আনিকা,আমাকে কি তোমার মেনে নিতে কোনো কারন আছে?নাকি তোমার লাইফে কেউ আছে?
.
–হুম আছে
.
কথাটা শুনেই বুকটা ফেটে গেল৷বুকের গহীনে ঝড়,শুরু হয়ে গেল৷
ভাবতেই অবাক লাগে!এই পৃথিবীতে আমি কত অসহায়.
.
–আনিকা ঠিক আছে,তাহলে আমি আর তোমাকে এই বিষয় নিয়ে কখনই আর জোড় করব না,
আসলে আমি বূঝতেই পারিনি,আমার কপালটা এত পোড়া,দেখই না,একটা মেয়েকে ভালোবেসে যখন সব মেয়েকেই ঘৃনা করতাম,ঠিক তখনই আবার তোমাকে ভালোবেসে ফেলি কিন্তু বুঝতেই পারিনি,আমার ভালোবাসা স্বার্থক না
.
–(অবাক চোখেই তাকিয়ে আছে)
.
–জানো আনিকা?ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলাম আমি,বাবা মা থাকতে ,তাদের কাছে যা চাইতাম তারা যেভাবেই হোক,সেটাই আমাকে এনে দিত,আর না দেয়া পর্যন্ত,অনেক জেদ ধরতাম৷বয়স যখন মাত্র ১২বছর ঠিক তখনই একদিন একটা এক্সিডেন্টে বাবা মা মারা যায়,
আর হারিয়ে যায় বাবা মা নামক ছায়াটা৷ সেদিন অনেক কান্না করেছিলাম৷এর পর থেকে কেউ কখনই আমার চাওয়া কোনো জিনিস আমাকে এনে দেয়নি৷
এরপর আমার চাচাও আমার সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করে ফেলে,রাস্তায় বের করে দিল আমাকে,হয়ে গেলাম রাস্তার ছেলে,আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম৷কাজ করে পড়াশোনা করতাম৷সারারাত কাজ করে দিনে স্কুলে যেতাম৷
আস্তে আস্তে যখন ভার্সিটি লাইফে চলে গেলাম,তখন ইভা নামের একটা মেয়েকে অনেক পছন্দ হয়,আর মেয়েটা অনেক বেশিই সুন্দর ছিল৷
আস্তে আস্তে ফ্রেন্ডশীপ আর তারপর রিলেশন৷
হঠাৎই একদিন দেখলাম ও আরেকটা ছেলের সাথে ঘুরছে৷আর আমি জিজ্ঞেস করার করনে ও বলেছিল আমার মত গরীব,অযোগ্য ছেলের সাথে নাকি ওর মানায় না,টাকাই ওর কাছে সব৷সেদিন ও আমাকে অনেক অপমান করে,নিজে অনেক সূন্দর বলে অনেক অহংকার করেছিল৷
সেদিন নিজেকে কোনোভাবেই ঠিক রাখতে পারিনি৷
টাকা কিভাবে আয় করতে পারি,সেটাই ভাবা শুরু করলাম,এরপরই ঘটনাক্রমে আমার চাচার কাছ থেকে আমি আমার সম্পত্তি আদায় করে নিলাম৷বাবার সম্পদ পেয়ে হয়ে গেলাম কোটিপতি৷
.
কোটিপতি হবার পরই সূন্দরি মেয়েদেরকে অনেক ঘৃনা করি,কারন ইভার সেই চরিত্রটা আমার সামনে ভেসে আছে৷
আর সব চাইতে মজার ঘটনা হলো,আমার লাইফে টাকার বিনিময়ে রাত কাটানো প্রথম মেয়েও ওই ইভাই৷পরে টাকার জন্য আমার সাথে রাত কাটায় সে৷
দিনে ভদ্রবেশধারী হলেও রাতে ওর মত খারাপ আর কেউ ছিল না৷
সেদিন থেকেই সুন্দরী মেয়েদেরকে হেট করতাম৷কারন তাদের সৌন্দয্যের ভিতর যে কতটা কালো থাকে,সেটা ইভাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না,
যাই হোক এর পর আর কোনো মেয়েকে কখনই ভালোবাসিনি,কারন তখন আমি নিজেই খারাপ জগতের বাসিন্দা,
.
এরপর তোমার সাথে পরিচয়৷আর তোমার সব কিছু জেনেও আবারও নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলি৷এরপরই তোমাকে খূব ভালোবেসেছি!বিশ্বাস করো আনিকা,তোমাকে খূব ভালোবাসি৷প্লীজ আমাকে একা করে দিও না,আর তুমি তো আমার বিয়ে করা বউ ও,তাই না?
.
বলেই চোখ দিয়ে পানি বের করতে লাগলাম৷কিন্তু সেটা হয়ত আনিকার কাছে কিছুই না৷ওর মনে আমার জন্য একটুও দয়া হলো না৷
ও তখনই বলে উঠল
,
–আবিদ!আমি তোমার সব কিছু বুঝতে পারছি,
কিন্তু তারপরও আমি তোমাকে মেনে নিতে পরব না,তবে দোয়া করি,তুমি যেন ভালো একটা মেয়েকে বউ করতে পারো,আর তুমি এখন অনেক ভালো একটা ছেলে,তোমাকে যেকেউ পছন্দ করবে৷আর আমার মত খারাপ একটা মেয়েকে নিয়ে বেশি কিছু ভেবো না
আর ভাবলে ভুল করবে,আর একটা কথা মনে রেখো,আমি তোমার দুমাসের জন্য বউ হয়েছি,সারাজীবনের জন্য না৷আর সেই দুমাস পার হতে আর মাত্র ৭টা দিন বাকি,এর পরই আমি চলে যাবো,
.
একটানা কথাগুলো বলেই আনিকা ছাদ থেকে চলে গেল৷আর রেখে গেল আমাকে৷
নিজেকে তখন অনেক বড় অসহায় লাগছিল৷
মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে আমার চেয়ে বড় অসহায় আর কেউ নেই৷
.
চোখদুটো বার বারই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল৷
ভাবতেই অবাক লাগে,আমার জীবনে ভালোবাসা বলতে কোনো জিনিস নেই৷যাকে যাকে ভালোবাসলাম৷তারাই দূরে ঠেলে দিল আমায়৷
.
অনেকক্ষন ছাদে একা একা দাড়িয়ে চোখের জল ফেলেছিলাম৷
চোখ দূটো অনেক ফুলে গেছে মনে হচ্ছে৷অনেক ঘূম পাচ্ছে৷তাই রুমে চলে গেলাম৷
গিয়ে দেখলাম আনিকা নিজের মত করে ঘুমিয়ে আছে৷আনিকাকে আর জাগালাম না৷
চুপ করে খাটে শুতে গেলাম কিন্তু শুয়ে থাকতে পারলাম না৷আজ কেন জানি ওর সাথে শুয়ে থাকতে খূব বেশিই কষ্ট হচ্ছে৷বার বার মনে হচ্ছে আর তো মাত্র কয়েকটা দিন৷এর পর তো আমাকে একাই থাকতে হবে৷
খাট থেকে নেমে পড়লাম৷তারপর সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম৷কখন ঘুমিয়ে পড়ছি সেটা হয়ত মনে নেই৷
তবে যখন ঘুমটা ভেঙে গেছে তখন ঠিক ঘড়িতে রাত ৩টা বেজে ৩৯মিনিট
.
একদমই ঘূম আসছে না৷ঘুমহীনভাবেই রাতটা কেটে গেল৷
সকাল বেলা আনিকাকে হসপিটালে রেখে অফিসে চলে গেলাম৷
অফিস থেকে ফিরে আবার হসপিটালে গেলাম কারন আজকে আনিকার আম্মুকে বাসায় নেওয়ার কথা৷
হসপিটালে গিয়ে ওদেরকে পেলাম না৷এর আগেই ওরা ওখান থেকে বের হয়ে গেছে৷
.
আনিকাকে ফোন দিলাম
.
–আনিকা কোথায় আছো?
.
–বাসায়,কেন?(ওপাশ)
.
–না,তেমন কিছুই না,তোমার আম্মুকে বাসায় নিয়ৈ গেছো?
.
–হুম
.
–হুম খুব ভালো,তবে আমাকে কি সাথে নিয়ে গেলে বা আমাকে বললে কি আমি সাথে থাকতাম না?
,
–আসলে বুঝতে পারিনি সরি
.
–হুম৷আচ্ছা আমি বাসায় আসতেছি
.
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম৷
.
বাসায় চলে গেলাম৷ওদের সাথে অনেক মজা করলাম৷
এখন ওর থেকে দুরত্ব বজায় রেখেই চলতে হয়৷কারন ওর আম্মু জানেনা আমরা বিয়ে করেছি৷ওনি জানে ও আর আমি বন্ধু৷
ওর আম্মু,আমি আর আনিকা তিনজনে মিলে খুব আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিলাম৷সবার মূখেই হাসি ছিল৷আনিকার আম্মু মন থেকে আমাকে অনেক পছন্দ করত৷আর ওনি আমাকে কয়েকবার বলেছিল,আনিকা আমি বিয়ে করে সবসময়ের জন্য রেখে দিতে৷
কিন্তু বারবারই তখন আনিকা অমত করে৷
.
হঠাৎই আনিকা আমাকে বলল
.
–আবিদ কিছু কথা বলার ছিল
.
–হুম বলো আনিকা
.
–একটু ছাদে আসো
.
–হুম
.
আনিকা তখন ছাদে চলে গেল৷
আমিও তার পিছু পিছু গুটিগুটি পা বাড়াচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম,আনিকা কি বলতে চাচ্ছে আমায়?সে চলে যাবে না তো?
ভাবতেই কেমন কষ্ট লাগে৷কিন্তূ কিছু কষ্ট দৃষ্টির আড়ালেই থাকে৷
ছাদে গেলাম৷গিয়েই বললাম
.
–বলো আনিকা কি বলতে চাও?
,
–আবিদ,তুমি আমার অনেক উপকার করেছো,আমার মায়ের জীবন বাঁচাতেও অনেক সাহায্য করেছো৷আসলে তোমার উপকারের ঋন হয়ত কখনই শেষ করতে পারব না
.
–হঠাৎ এগুলো বলছো যে
,
–আসলে আজকের দিন গড়িয়ে রাত পার হলেই তো ,তোমার দুমাস শেষ৷আর তারপরই তো আমি চলে যাবো,আর কাল সকালেই আমি মাকে নিয়ে চলে যাবো(অন্যদিকে তাকিয়ে)
.
–(অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি)
,
–কি হলো কীছু বলছো না যে?
.
–আসলে আমার কিছুই বলার নেই আনিকা,তবে দিনগুলি যে এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে,সেটা খেয়ালই করিনি৷তবে তোমাকে আমি আর আটকাবো না৷যদি কখনও মনে হয় আমার কাছে তূমি ভালো থাকবে,তাহলে চলে এসো,আমার মনের দরজা তোমার জন্য সব সময় খোলা থাকবে৷
.
–ধন্যবাদ
.
–তবে আমার এক অনুরোধ রাখবে আনিকা?
.
–কি অনুরোধ?
.
–কাল যখন চলে যাবে,তোমাদেরকে আমি ড্রাইব করে,তোমার বাসায় পৌছে দিব৷
তবে সমস্যা নাই,যদি প্রবলেম থাকে,তাহলে যাবো না
,
তখন আনিকা আমার দিকে কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে রইল৷আর মাথা নাড়ালো৷
.
সেদিন রাতে আনিকা সহ সবার সাথে অনেক বেশিই মজা করেছিলাম৷তারপর আনিকা ওর আম্মুর সাথেই ঘুমাতে চলে গেল৷আমিও চলে গেলাম ছাদে৷
সারারাত না ঘূমিয়ে একটার পর একটা সিগারেট টানতে লাগলাম৷মনের কষ্টগুলোকে সিগারেটের ধোয়ার সাথে মিশিয়ে দিচ্ছিলাম৷খুব কষ্ট লাগছিল,কারন আনিকাকে যে এতটা ভালোবেসে ফেলব বুঝতেই পারিনি৷আর ওর কি দোষ?ও নিজেও তো অন্য আরেকজনকে ভালোবাসে৷আমি যেমন আনিকাকে কাছে পেতে চাই ঠিক তেমন ও নিজেও তো ওর ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে চায়৷
এই কথাগুলো বলেই নিজেকে বার বার শান্তনা দিচ্ছিলাম৷
হঠাৎই ফজরের আযান দিচ্ছে৷আযান শুনে ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে গেলাম৷
সকালে খাওয়া দাওয়া করে ওদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম৷খুব দ্রুত গাড়িটা চলছে৷
আর খূব দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে আমার আনিকা৷
বিকেলের দিকে ওদের বাসায় পৌছে গেলাম৷ওদেরকে নামিয়ে দিয়েই
.
–আনিকা,আমি তাহলে চলে যাচ্ছি,ভালো থেকো,আর মায়ের প্রতি যত্ন নিও
.
— সে কি বাবা,তুমি মাত্র আমাদেরকে বাসায় পৌছে দিছো৷এখন তূমি নিজেই অনেক ক্লান্ত,একটু রেস্ট নিয়ে,খেয়ে দেয়ে তারপর যাও(আনিকার মা)
.
–না গো মা,সব জায়গায় থাকার আর খাওয়ার অধিকার হয়ত আল্লাহ সবার কপালে লিখেনি৷তবে আপনি বলেছেন এতেই আমি খুশি৷আনিকা আমি চলে যাচ্ছি,ভালো থেকো
.
–একটু থেকে গেলে কি হয়না?(নরম সুরেই আনিকা)
.
–না আনিকা,তুমি তো জানই আজকে আমার কাজ শেষ,আজ আমি অপ্রয়োজনীয়৷যাই হোক,ভালো থেকো আনিকা,অনেক সুখে থেকো
.
–হুম,তুমিও সুখে থেকো,আর ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে,সুখের সংসার করো
.
–হা হা হা,হুম,করতে চেয়েছিলাম তো,কিন্তু সেটা হলো না৷আর এখন নতুন করে আমার কোনো ইচ্ছা নেই৷
ভালো থেকো গো পাগলি৷খুভ ভালো থেকো
.
বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম৷আনিকার মা কয়েকবার আমার দিকে কেমন রহস্যজনকভাবে তাকিয়েছিল৷হয়ত কিছু বুঝবে হয়তবা না
,
বুকের কষ্টগুলোকে চাপা দিয়ে ওদের কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলাম৷গ্রামের আকাবাকা রাস্তা,তার ওপর চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসছিল বারবার,গতকাল রাতে না ঘুমানোর কারনে মাথাটাও কেমন ভনভন করে ঘুরাচ্ছিল৷
.
গাড়ির স্পীডটা আরও বাড়িয়ে দিলাম৷যেভাবেই হোক আমাকে এই মায়া ত্যাগ করে অনেক দূরে চলে যেতে হবে৷
গাড়ি আকাবাকা রাস্তা দিয়েই চালতে লাগল হঠাৎই মাথাটা কেমন ভন ভন করে ঘুরে গেল,আর চোখ দুটি বন্ধ হয়ে গেল৷সবকিছুই অন্ধকার মনে হচ্ছে৷
এরপর আর কিছু মনে নেই
.
.
.
.
.
চলবে……..