পতিতা মেয়ে part_6

0
1840

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_6

আনিকার হাত ধরে বৈশাখি মেলাতে খুব খুশি মনেই হাটতেছিলাম৷ঠিক তখনই
একটা ছোট বাচ্ছা এসে আনিকার কাপড়ের আচল ধরে টানতে লাগল৷বাচ্ছাটা একদমই খালি গাঁয়ে আর পরনে শুধু একটা শর্ট প্যান্ট তাও সেটা অনেক নোংরা আর ছেড়া৷বয়স আনুমানিক ৮-৯বছর৷এই টূকু একটা বাচ্ছার এমন অবস্থা দেখলে কার না বুকটা কেপে উঠবে?ওই বাচ্ছাটা আনিকার কাপড় ধরেই বলতে লাগল
.
–আফা,দুইডা টেহা দেন না?খুব খিধা লাগজে,
দেন না আফা দুইডা টেহা
.
–(চুপ করেই বাচ্চাটার দিকে চেয়ে আছে)
.
–আফা,দেন না দুইডা টেহা,খুব খিধা লাগজে
.
–তোমার নাম কি বাবুমনি?(আনিকা)
.
–সূচনা
.
–তোমার বাবা মা কই?
.
–বাপ মা ,নাইকা,
.
–তাহলে থাকো কই?
.
–রাস্তার সাইডেই ,
.
–রাতে থাকো কই?
.
–স্টেশনের রাস্তার মোড়ে,দেন না দুইডা টেহা,অনেক খিধা লাগজে
,
মেয়েটার সাথে কথা বলছিল আর আনিকার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে,আর অপর দিকে আমি অবাক হয়েই তাকিয়ে রইলাম৷মেয়েটার কথাগুলো শুনেই বুকটা কেপে উঠল৷বাবা মা না থাকলে জীবন যে কতটা কষ্টের হয় সেটা আমি বুঝি,কারন আমারও যে বাবা মা নেই৷
পান্জাবীর হাতা দিয়েই চোখটা মুছে ফেললাম৷
মেয়েটার সাথে কথা বলেই আনিকা আমার দিকে তাকিয়ে রইল৷
.
আমি বুঝতে পারলাম আনিকা ছোট মেয়েটাকে সাহায্য করতে চাচ্ছে কিন্তু ওর কাছে তো কোনো টাকা নেই,কারন আসার পথে ও টাকা নিয়ে আসেনি ,যার কারনে কিছুই দিতে পারছেনা৷
.
তখনই আমি মাটিতে হাটু গেড়ে
.
–সুচনা?(আমি)
.
–সাহেব,দুইডা টেহা দেন(আমার দিকে হাত পেতে)
.
–আমার সাথে যাবে?
.
–কই নিয়া যাইবেন আমারে?
.
–তোমাকে ভালো একটা স্কূলে নিয়ে যাবো,সেখানে তুমী বন্ধুদের সাথে গল্প করবা,লেখাপড়া করবা,খেলাধুলা করবা,যাবে আমার সাথে?
.
–হ যামু কিন্তু খাইতে দিবেন তো?আর কি কি কাম করতে হইব?আমি কিন্তু বেশি কাম পারিনা
.
মেয়েটার কথাটা শুনে একদমই অবাক হয়ে গেলাম৷এই টুকু একটা মেয়ে,কি বলে এসব?
.
–তোমার কাজ করতে হবে না,চলো আমার সাথে,আর তোমার আরও বন্ধু আছে?
.
–হ আছে
.
–তাদের কাছে আমাকে নিয়ে যাও
,
–হ আয়েন আমার লগে
.
তারপরই মেয়েটাকে ওই অবস্থাতেই ওর গালে একটা চুমু দিয়ে,কোলে তুলে নিলাম৷আর মেয়েটাকে কোলে নিয়েই তাদের পাড়াতে চলে গেলাম৷আনিকাও আমার সাথেই,আনিকা শুধূ অবাক দৃষ্টিতে আমাকে দেখছিল৷
.
যাই হোক মেয়েটাকে নিয়ে একটা চিপা গলিতে ডুকতেই দেখলাম আরও অনেকগুলো শিশু৷
তাদেরকে একজন মুরুব্বি বয়সের লোক ভিক্ষার গান শিখাচ্ছে৷দেখেই রাগ উঠে গেল৷আর তখনই
.
–এই বুড়ো,এইগুলো কি শিখাচ্ছো এগুলো,(রেগে)
.
–আপনার সমস্যা কি?যা খুশি তাই শিখামু,
.
–আমার অনেক সমস্যা,বাচ্ছাদের দিয়ে এগুলো করানো ঠিক না
.
–কোনটা ঠীক আর কোনটা বেঠিক আপনার কাছ থেকে শিখতে হবে নাকি?ওদের খাওন তো আর আপনি দেন না
.
–আজ থেকে ওদের খাবার আমি দিব
.
–তাহলে আর দেড়ি করছেন কেন?এই হতচ্ছাড়াগুলো কে এখনি নিয়ে যান
.
–হুম নিয়ে যাবোই কিন্তূ ওদের বাবা মা কই
.

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

–হুহহহ,বাবা মা?এগুলো সব পতিতাদের পোলা মাইয়া,ওদের নষ্টামির ডাস্টবিনের ফসল,
.
–আচ্ছা আমাকে ওদের কে নিয়ে যেতে দিন
,
–বললেই তো হবে না,এতদিন ধরে এগুলোরে বড় করছি,এই টেকা কে দিব?টাকা দিলে নিতে পারবেন নয়ত আমি ওগুলো শিখাবোই
.
কথাগুলো শুনার পর আনিকাও কেমন চূপসে গেল৷ওদের জন্য মেয়েটার কত মায়া?ঠিক তখনই বললাম
.
–কত টাকা লাগবে?
.
–৫লক্ষ টাকা দিলেই ওদের সবাইকে যেতে দিব
.
তারপরই আনিকাকে কিছুক্ষনের জন্য থাকতে বলে ওখান থেকে চলে আসলাম৷আর প্রায় ৩০মিনিট পরে ওখানে টাকা নিয়ে ওখানে গেলাম৷আর ওদেরকে নিয়ে আসলাম৷
তারপর সবাইকে একটা এতিম খানায় নীয়ে যেতেই কয়েকশত ছোট শিশু আমার দিকে দৌড়ে আসল৷সবাই আমাকে আব্বু আব্বু বলে ডাকতে লাগল৷
আনিকা তখন আমার দিকে অবাক করা দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে৷
ঠিক তখনই ওখানকার হুজুর এসেই বলল
.
–স্যার আল্লাহ আপনার কল্যান করুক৷আজকে নতূন কাউকে নিয়ে এসেছেন?
.
–হ্যা চাচা,আজকে এই শিশূগুলোকে নীয়ে এসেছি,এদের দায়িত্বও কিন্তু তোমার(আমি)
.
–হুম,আপনি সাথে থাকলে আমিও রাজি আছি
,
–চাচা ওদেরকে নতূন পোশাক পরাও,
আর ভালোভাবে গোছল করিয়ে দিও
আমরা আজ সারাদিন একসাথে অনেক মজা করব৷
আনিকা তুমি আমার সাথে থাকবে তো?(আনিকার দিকে তাকিয়ে)
.
বলতে না বলতেই মেয়েটার চোখ দিয়ে অঝর ধারায় বৃষ্টি ঝরতে শুরু করল৷আর ওর মুখ দিয়ে ও এমনভাবে হাসতে লাগল যেন ও অনেক অনেক খুশি
,
–কি হলো আনিকা থাকবে তো?
.
–হ্যা আবিদ আমি থাকবো,আর আমি সবার সাথে আজ অনেক মজা করব,
.
ঠিক তখনই সব বাচ্ছাদের ডাক দিয়ে বললাম
,
–বাবুরা,এটা তোমাদের নতুন আম্মু৷ওকে সবাই আম্মূ বলেই ডাকবা
.
বলতে না বলতেই সব শিশূরা দৌড়ে আনিকার কোলের দিকে দৌড়ে গেল৷আর আনিকাও ওদের জন্য মাটিতে বসে দুহাত বাড়িয়ে দিল৷
.
বাচ্ছাগুলোকে একদম নিজের সাথে জড়িয়ে ধরেই অনেকক্ষন কাটিয়ে দিল৷
.
এই প্রথম আনিকাকে এত খুশি দেখে নিজের মনে এতটাই খুশি লাগছিল যেটা আগে কখনই আমার লাগে নি৷
.
মেয়েটাও বাচ্ছাদের সাথে একদম বাচ্ছা হয়েই মিশে গেল৷
.
বিকেল বেলা ওখানে ভালো খাবারের আয়োজন করা হলো আর সব বাচ্ছাদের নতুন পোশাক কিনে দিলাম৷
আনিকা নিজ হাতে সবাইকে খাইয়ে দিচ্ছে৷
আহ কত ভালো লাগছে, ঠিক তখনই বাচ্ছাদের খাওয়ানোর সময় ওর সামনে বসে পড়লাম৷আর
হা করেই বললাম
,
–ওদেরকে খাইয়ে দিবে আর আমাকে কি দিবেনা?
,
আনিকা তখনই একদম থ হয়ে গেল
.
–কি গো দিবে না খাইয়ে?আমার ও তো খুব খিদে পাইছে
.
–তোমাকে তো…..
.
–এই দেখো,এমন করছো কেন গো?দাও না গো একটু খাইয়ে?খুব খিদা লাগছে তো,বলেই হা করে রইলাম
.
তারপরই আনিকা আমার মূখের দিকে হাতে খাবার নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল৷আমি খেতে যাবো ঠিক তখনই খাবারটা নিচে পড়ে গেল৷তখন ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম ও অন্যদিকে তাকিয়ে আমাকে খেতে দিচ্ছিলো৷
.
খূবই খারাপ লাগলছিল,একটূ খেতে চাইলাম তাও সেটা নিজ ইচ্ছাতে দিল না৷হয়ত আমার জোড় করার করনেই অনিচ্ছায় দিতে চেয়েছিল৷
.
চূপ করে উঠে গেলাম৷আমাকে উঠে যেতে দেখেই আনিকা কেমন জানি হয়ে গেল৷আমি ওখান থেকে অন্য একটা কর্নারে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম৷আর ভাবতে লাগলাম ও কি আমাকে কখনই বুঝবে না?
.
ঠিক তখণই কেউ আমার হাতে ধরে টান দিল৷তাকাতেই দেখলাম আনিকা৷
আনিকাকে দেখে খূব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম৷কারন এই প্রথম আনিকা নিজে আমার হাত ধরেছে৷
আমি অবাক চোখেই ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম
ঠিক তখনই ও বলল
,
–কি হলো,চলে আসলে কেন?খাবে না?
.
–না
.
–সরি,আসলে কখনও কোনো ছেলেকে এভাবে খাইয়ে দেইনি তো,তাই নিজের কাছে অনেক সংকোচ বোধ লাগছিল
.
–আপনাকে সরি বলতে হবে না,আসলে বুঝতেই পারিনি,সব কিছু সবার কপালে সয় না,আর খারাপ মানুষদের কপালে তো,আরও সয় না,ভেবে নিব আমার কপালেও তাই(আনিকাকে হঠাৎই আপনি করে বললাম)
.
–সরি,চলো খেতে যাবে,
.
–না যাবো না,আর আপনি বাচ্ছাগুলোকে নিয়ে খেতে যান,ওরা খাবে এখন
.
–তুমি খাবেনা?শুধু বাচ্ছাদের কথাই কি ভাববে?
,
–হুম!আমি না খেলেও সমস্যা নেই,কিন্তু ওরা না খেয়ে থাকলে,অনেক সমস্যা
.
–বাচ্ছাগুলোকে অনেক ভালোবাসো বুঝি
,
–হুম নিজের জীবনের থেকেও বেশি,যেদিন আমার জীবন থেকে ইভা নামক মেয়েটা হারিয়ে গেল,সেদিন থেকেই ওরা আমার সব কিছু
.
–এই ইভা আবার কে?
.
–বাদ দিন,সময় হলেই বলব,এখন ওদেরকে খেতে দিন
,
–হুম,সাথে যে তোমাকেও যেতে হবে
.
ঠিক তখনই বাচ্ছাগুলো আমাকে জড়িয়ে ধরছে আর বলছে
.
–চলো না আব্বু,তুমি আমাদের সাথে খাবে,চলো না
.
তখন সবার কথায় খেতে গেলাম৷
তারপরই আনিকা আমার সাথে খূব ভালোভাবে কথা বলতে লাগল৷নিজ হাতে খাইয়ে দিল৷
খুব খুব বেশিই ভাল লাগছিল৷
.
সারাদিন অনেক মজা আর আনন্দের মাঝেই বৈশাখ পালন করে দুজনে বাসায় চলে আসলাম৷

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

রাতে একা একা ছাদে বসে তারাদের সাথে উকি মারছিলাম৷ঠিক তখনই আনিকা এসে হাজীর
,
–আবিদ ,জানো আজকে আমি খুব খুশি,আজকের মত কোনোদিন এত খুশি আমি হইনি৷সত্যিই তুমি অনেক ভালো
.
–আমি আবার কি করলাম?(অবাক হয়েই)
.
–এই যে এতিম বাচ্ছাদের এত ভালোবাসো আর তারাও তোমাকে কত ভালোবাসে
,
–হুম
.
–জানো আবিদ,তোমাকে আমি স্যুলুট জানাই
.
–কেন
.
–কারন তোমার ওখানে অনেক ছেলে বাচ্ছার পাশাপাশি অনেক মেয়ে বাচ্ছাও আছে,যাদের কোনো বাবা মা নেই
.
–হুম ,তো?
.
–জানো,এই মেয়েগুলোই একদিন সমাজের নির্মমতায় একদিন পতিতা হয়ে যাবে
.
–মানে?কি উল্টা পাল্টা বলছো এগূলো?(একটূ রেগেই)
.
–হুম আবিদ!যখন মেয়েগূলো আস্তে আস্তে এভাবে রাস্তায় বড় হবে,তখন তারা হয়ে যাবে রাস্তার মেয়ে!
তাদেরকে কেউ বিয়ে করবে না,অভাবের তাড়নায়,খাদের জালায় তারা একদিন এই পতিতা পেশাই বেছে নিত,আর সমাজে তখন আরও পতিতা বেড়ে যেত
.
কথাটা বলেই মেয়েটা কান্না করে দিল৷বুঝতেই পারলাম না,হঠাৎ আনিকা এগূলো কেন বলছে৷আর কেনই বা এমন কান্না করে দিল
.
ঠিক কিছুক্ষন পরই মাথায় আসতে লাগল,ও তো মিথ্যে বলেনি,মেয়েগূলো যখন একটু বড় হয়ে যেত,রাস্তায় থাকার কারনে মানুষরুপি অনেক শেয়াল কুকুরের থাবার নিচে নিজেদের বলি দিতে হত৷আর একটা সময় ঠিকই খারাপ পথটাই বেছে নিত৷
.
কথাগুলো যদিও আগে কখনই ভাবিনি,কিন্তু আনিকার এমন আচরন দেখেই মনের ভিতর ভাবনার সঞ্চার হতে লাগল৷
.
–আবিদ,তুমি না ওদেরকে কখনই খারাপ হতে দিও না,খারাপ পথটা অনেক কষ্টের,একবার খারাপ হয়ে গেলে,নিজেকে আর ভালো করা যায় না
.
–এই তুমি এই গুলো কি বলছো
,
–হুম,সত্যিই বলছি,
পতিতা শব্দটাতে মাত্র ৩টা অক্ষর কিন্তু এর ভয়াবহতা যে কতটা খারাপ,সেটা আমার মত পতিতারাই জানে,,,
.
—ঠাসসস ঠাসসসস,ওই কি বললি তুই?তোকে বলছি না,কখনই নিজেকে পতিতা বলবি না,সব কিছু ভুলে যেতে,ভুলে গিয়ে সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে
আর একবার যদি নিজেকে পতিতা বলিস,তাহলে …….(রেগে ওকে মারতেই চোখ দিয়ে পানি বের হতে লাগল)
.
–মেরে ফেলবে তাই তো
.
–এই তুই এগুলো কি বলছিস?তোকে আমি মেরে ফেলব?নারে তোকে কখনই মারব না রে৷নিজে মরে গেলেও তোকে মরতে দিব না
,
বলেই কান্না করতে লাগলাম,আর তখনই নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আনিকাকে জড়িয়ে ধরলাম৷
.
আমিও কাদছি আনিকাও কাদছে
.
আর সেই কাদার মাঝখান থেকে,আমার মুখ দিয়ে একটা কথাই বের হচ্ছিলো
.
“”ভালোবাসি রে তোকে,খুব ভালবাসি?কেন বুঝিস না তুই?তোকে যে অনেক বেশিই ভালবাসি,সব সময় এই বুকে আগলে রাখব তোকে,খুব ভালো বাসি,খুবই ভালোবাসি,””””””

#_____________চলবে________________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে