পতিতা মেয়ে part_5

0
1773

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_5

বাইরে থেকে একটা কাশির আওয়াজ দিয়ে ভিতরে ডুকলাম৷আমাকে দেখেই আনিকা তাড়াতাড়ি করে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলল৷
আমি আর বেশি কিছু বললাম না৷ভিতরে গিয়েই অফিসে কাজ আছে বলেই বের হয়ে গেলাম৷
তারপর বাসায় এসে চুপ করে শুয়ে রইলাম৷
ভাবতে লাগলাম কি করব?
ওর সাথে প্রায় দুটা মাস কেটে গেল,১০টা দিন মাত্র বাকি,এতগুলো দিনেও কি ও আমাকে একটুও বুঝতে পারল না?
.
ভাবতে ভাবতেই বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লাম৷
হঠাৎই কারও ডাকে আমার ঘুম ভাঙল৷
চোখ খুলতেই দেখলাম আনিকা৷আমার দিকে কেমন অবাক করা দৃষ্টিতেই তাকিয়ে রইল মেয়েটা৷
আস্তে আস্তে খাটের একটা কর্নারে এসে বলল
.
–তুমি ঠিক আছো তো?তোমার কিছু হয়নি তো?কোনো সমস্যা?আর কখন বাসায় আসছো(এক সাথেই কথাগুলো জিজ্ঞাসা করল)
হয়ত আমি বাসায় এসে শুয়ে আছি আর ওকে জানায়নি বলে প্রশ্নগূলো করছে৷
–এই তো,হসপিটাল থেকে সোজা বাসায় চলে আসছি(ওপরের দিকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
.
—অফিসে যাও নি?
.
–না
.
–কেন
.
–এমনিতেই
.
–হুম ভালো,কিন্তু আমাকে তো একটু বলতে…..
.
বলতে গিয়েও আনিকা আর কিছু বললনা,কথাটা অপূর্নই রেখে দিল৷
.
আনিকার প্রতি খুব রাগ হচ্ছিলো,ও কি একটু বুঝতে পারছে না তাকে আমি কতটা ভালোবাসি?
ও কি আমাকে একটুও বুঝবেনা?নাকি বুঝতেই চায়না?
.
ওর প্রতি বুক ভরা অভিমান নিয়ে চূপ করেই শুয়ে রইলাম৷
.
–তুমি খাবে না?না খেয়েই শুয়ে থাকবা?(আনিকা)
.
–তোমার খেতে ইচ্ছে করলে তুমি খেয়ে তারপর ঘুমিয়ে পরো,আমাকে আর ডাকবেনা.(আমি)
.
–তুমি খাবেনা?আর আমি ডাকব না কেন?
.
–ওই ডাকবে না তো,ডাকবে না,আর একটা যদি ডাক দাও ,তাহলে………..
.
–তোমাকে আর বলতে হবে না,আর আমি এভাবে বলার কারনে লজ্জিত,আসলে নিজের অবস্থানের কথাটা ভুলেই গেছি,আর তো মাত্র ১০দিন৷তারপর ই তো চলে যাবো,
.
ওর চলে যাবার কথাটা শুনে বুক ফেটে কান্না আসছিলো৷
খূব কষ্ট লাগছিল,মনে মনে বলছিলাম
,,হায়রে আনিকা,একটু রাগ দেখালাম বলে ,খুব সহজেই উল্টা পাল্টা বুঝে নিলে,কিন্তু তোমাকে ভালোবাসি বলে যে ,তোমার পাশে থাকতে চাচ্ছি,সেটা তুমি হয়ত কখনই আর বুঝবে না,,,,,,,,বলেই
বুক ফাটা ,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম৷
.
এরপরও ও কয়েকবার ডেকেছিল খেতে কিন্তু ওর প্রতি একটু রাগ নিয়ে আবার নিষেধ করার কারনে আর ডাকেনি৷
.
চুপ চাপ শুয়েই রইলাম৷বুকটা খা খা করছিল,
ওকে বুকের সাথে মিশিয়ে,খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছিল,,আনিকা খুব ভালোবাসি তোমায়,খুব বেশিই ভালোবাসি,আমাকে না কখনও ছেড়ে যাবার কথা বলো না,
.
কিন্তু সেদিন মনের ভেতরের আর্তনাদ গুলো মুখ ফেটে বের করতে পারলাম না৷
.
কিছুক্ষন পর আনিকাও আমার পাশেই শুয়ে পড়ল৷প্রতিদিন পাগলিটাকে বুকে নিয়ে ঘুমাই৷আমার বুকটা ওর জন্য বালিশ বানিয়ে দেই৷কিন্তু আজ অভিমান করে ওকে আর আমার বুকে টেনে নিলাম না৷
ভাবলাম ও হয়ত আমাকে বলবে,
“”””আবিদ, আমি না তোমার ওই বুকে অনেক শান্তি পাই,আমাকে সব সময় তোমার ওই বুকের মধ্যেই রাখবা,আর আজকে আমাকে রাগ করে কেন বালিশে শুয়ে থাকতো বলছো?আমি কিন্তু তোমার বুকেই ঘূমাবো”””
.
কিন্তু আফসোস,আনিকা এগুলো বলবে তো দূরে থাক,ওর কল্পনায়ও এগূলো আসে না৷
আর হয়ত আমার সাথে শর্তের কারনেই যতটূকু থাকছে৷নয়ত ও হয়ত আমার কাছে কখনই থাকত না৷
.
বিছানায় ওর অপর দিকে মুখ করে বালিশে চোখ ভিজাচ্ছিলাম৷লাইট টা অফ আছে৷তাই হয়ত ওর চোখে আমার চোখের পানি পড়বেনা৷
.
চোখের নোনা জল ফেলতে ফেলতে,কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছি বুঝতেই পারিনি৷
,
হঠাৎই কারো চিৎকার শুনেই ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলাম৷লাফিয়ে উঠতে চাইলেও তখন আমি উঠতে পারলাম না৷কারন এর আগেই আনিকা আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে লাগল,আর বলতে লাগল
,””প্লীজ মামা,আমাকে ছেড়ে দাও!আমার সর্বনাশ করো না,মামা তুমি না আমার বাবার মত?
তুমি তো জানোই আমার বাবা নেই,প্লিজ আমাকে এই পতিতালয়ে ফেলে যেও না,
মামা যেও না, মামা,,,মামাআআআআআ
.
কথাগূলো বলছিল,আর মামা মামা,বলেই আনিকা চিৎকার করে কান্না করতে লাগল.আর ভয়ে কাপতে কাপতে আমাকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে লাগল৷হয়ত আমার বুকের ভিতর ও ডুকেই যাবে নয়ত আমার সাথে মিশে যাবে,,,আনিকাকে শান্ত করার জন্য ওকে ডাকতে লাগলাম,কিন্তু ও যেন শুনছেই না
.
–এই আনিকা,আনিকা,তোমার কি হইছে?আর কোথায় তোমার মামা?ওনাকে তো তুমি নিজ হাতেই শেষ করে দিছো,আনিকা ,এই দেখো,এখানে কেউ নেই…
.
–(চূপ)
.
–আনিকা,এই আনিকা,এই দেখো আমি আছি তো?কেউ তোমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না,একবার মার দিকে দেখো?
.
অনেক বলার পর আনিকা ধীরে ধীরে শান্ত হয়,আর কেমন অসহায়ের মত আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল৷বুঝতে পারলাম মেয়েটা হয়ত বাঝে কোনো স্বপ্ন দেখে ভয় পাইছে৷
তখনও ও আমাকে জড়িয়ে ধরেই আছে৷
ও হঠাৎ কি বুঝে যেন,ও নিজেকে ছুটিয়ে নিতে চাইল৷
কিন্তু সেটা আর হতে দিলাম না৷
কারন সেই মুহুর্তেই আনিকাকে আমি আমার নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলাম৷আর ও তখন কিছুই বলল না৷শুধু চুপচাপই দেখছে
.
আনিকার মাথাটা তখন আমার বুকে মাঝে৷তখন ওর মূখটা একটু সামনে আনলাম,আর আস্তে করে ওর চোখের পানিটুকু মুছে দিলাম৷
.
অনেকক্ষন পর আনিকা যখন স্বাভাবিক হয়,তখন ওকে বলতে লাগল
,
–এই পাগলি,তোমার কিচ্ছু হবে না৷এই পাগল টা যে তোমার কিচ্ছু হতে দিবে না৷সব সময় এই বুকে আগলে রাখবে,কখনই আলাদা হতে দিবেনা
.
–(ও শুধু মাথা নাড়ালো)
,
–এই শুনো,আর কান্না না করে চুপ চাপ এই পাগলের বুক নামক বালিশটাতে ঘুমিয়ে পড়ো,আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,একদম কথা বলবে না কিন্তু…
.
তখন আনিকাকে আমার বুকের মধ্যে রেখেই শুয়ে থাকতে বললাম৷ও আমার কথা শুনে চুপ চাপ তাই করলো৷
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম৷
.
আসলে আনিকার চূলগুলোও অনেক সুন্দর৷
ও যেমন সুন্দর ঠিক ওর চুলগুলোও৷
অনেক বড় বড় চুল৷
ওর চূল গুলো কাধ ছাড়িয়ে ওর কোমরেরও অনেক নিচে চলে যায়৷
.
যাই হোক ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মেয়েটা কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছে বুঝতেই পারিনি৷
ফজরের আযান দিয়ে দিচ্ছে,এখনও ও আমার বুকেই ঘুমাচ্ছে,আর আমিও সারারাত জেগে ওর মাথায় হাত বুলাতেই লাগলাম৷
.
একদম ছোট বাচ্ছাদের মতই ওকে ঘূম পাড়াইছি,আর ছোট বাচ্ছাদের মতই ও ঘুমাচ্ছে৷
.
একটা জিনিস তখনই মাথায় আসল,
এতদিন মেয়েটাকে বুকে নিয়ে ঘুমাতাম,একদিনও ও খারাপ কিছু স্বপ্নে দেখেনি,ভয় পায়নি৷আর আর আজ অভিমান করে ওকে বুক থেকে সরাতেই কেমন আবোল তাবোল স্বপ্ন দেখে মেয়েটা ভয় পাইছে৷
আর কখনই ,যতই রাগ করিনা কেন?ওকে আমার বুক থেকে আলাদা করব না৷
.
সকালাবেলা
.
ওকে হসপিটালে ওর মায়ের কাছে রেখেই অফিসে চলে গেলাম৷
একটু হাসিখুশি ভাবেই বসে আছি৷ঠিক তখনই আমার অফিসের কলিগ মিম আসল৷ওর সাথে আমি আবার একদমই ক্লোজ,ভালো ফ্রেন্ড বললেও চলে৷মিম এসেই বলল
.
–স্যার,একটা কথা বলব?যদি রাগ না করেন(মিম)
.
–হুম বলো
.
–স্যারকে আজ অনেক খুশি খুশি লাগছে,স্যার কি আজ অনেক খুশি নাকি?
.
–না,আসলে…..
.
–বুজতে পারছি স্যার ,ব্যাপারটা ভাবিকে নিয়ে,তাই তো???তো কাল পহেলা বৈশাখে ভাবিকে নিয়ে কি কি প্লান আছে ?
.
–পহেলা বৈশাখ?(অবাক হয়েই)
.
–কেন আপনি কি জানেন না নাকি?কোন দেশে থাকেন স্যার?
.
–আরে থাকি তো বাংলাদেশেই কিন্তু….
.
— হুম বুঝতে পারছি আপনি তো চলে গেছেন,ভাবির সাথে প্রেমের দেশে,আর যার কারনেই সব ভুলে গেছেন,তাই না স্যার
,
–(মাথায় হাত দিয়ে শুধু চুলকাচ্ছি)
,
–কি হলো স্যার,ধরে ফেললাম তো
.
-আগ্গে,,,,
.
বলেই দুজনে হো হো করে হেসে উঠলাম৷তখনই আমি ওকে বললাম
.
–আচ্ছা মিম,পহেলা বৈশাখে,তোমার ভাবিকে কিভাবে অনেক খুশি করা যায় ,?বলো তো
.
–আসলে স্যার,বাঙালী মেয়েরা তার স্বামীর কাছ থেকে তেমন কিছুই চায়না,শুধু চায় স্বামির একটু ভালোবাসা,তবে কাল ভাবিকে নিয়ে বৈশাখী মেলায় ঘুরতে পারেন,এতে ভাবি অনেক খুশি হতে পারে
,
–থ্যাংকু মিম,কিন্তূ দুজনে কি কি পড়ে গেলে ভালো হয়?
.
— স্যার, পোশাক বলতে কাল কিন্তু অবশ্যই ভাবিকে সাদা আর লাল রঙের মিশ্রনে একটা শাড়ি,খোপায় ফূল পড়ে সাজতে বলবেন৷আর আপনি সাদা পায়জমা আর একটা লাল ফতুয়া বা পান্জাবি পড়ে গেলে হয়ত অনেক ভালোই হবে
.
–থ্যাংকু মিম৷এত্ত এত্ত থ্যাংকু
.
বলেই অফিস থেকে বের হয়ে সরাসরি মার্কেটে চলে গেলাম৷ওর জন্য একটা লাল সাদা মিশ্রনে একটা বৈশাখি শাড়িসহ সব কিছু কিনে বাসায় গেলাম৷বাসায় যেতে যেতে রাত হয়ে গেল৷
ওকে আর রাতে কিছুই দেখালাম না৷
খুব ভালো লাগছে কাল সারাটাদিন মেয়েটার সাথে কাটাবো,ওর হাত ধরে হাটবো,ঘূরবো অনেক মজা করবো৷
.
রাতে খুশিতে ঘুমই আসছে না৷আনিকাকে বুকে রেখেই শুয়ে পড়লাম ৷আর একটূ পর পর ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম
.
আহ আমার পাগলিটাকে কাল আমি নিজ হাতে সাজাবো,কত্ত সুন্দর লাগবে ওকে?
.
ওর দিকে একটু পর পরই তাকিয়ে মুচকি হাসছিলাম৷
হয়ত ও আমাকে আজকে পাগল বলবে কারন বিষয়টা ও একটু অন্যরকম ভাবে নিচ্ছিল৷
.
যেভাবেই নিক,আমার কি?আমি তো খুব খুশি হি হি হি৷
.
অনেক অপেক্ষার পর সকালের আলো ফুটলো৷
আর তখনই সব কিছু ওর সামনে দিলাম
.
–আনিকা,এই নাও
.
–কি এটা?
.
–এটাতে বৈশাখি শাড়ি আছে,তুমি পড়ে এক্ষনি তৈরি হও,আমি পান্জাবি পড়ে আসছি
,
–আমি তৈরি হবো কেন?আর আমার জন্য এগূলো কেন
.
–আরে বোকা,আজ তো পহেলা বৈশাখ,তোমাকে নিয়ে আজ সারাদিন ঘুরব
,
–না,আমি যাবো না,
.
–প্লিজ আনিকা,না করো না,প্লীজ প্লীজ
.
–না,আমি এগূলো পড়ব না
.
ওর এমন কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল৷আজ এত আশা করেছিলাম,কত কি ভেবেছিলাম,আর ও সবকিছুই কেমন অগোছালো করে দিল?তাই মন খারাপ করে অন্য একটা রুমে গিয়ে বসে রইলাম৷
মন চাচ্ছিল,সব কিছুই ছিড়ে ফেলি,তবে কিছুই করলাম না৷মন খারাপ করেই বসে রইলাম৷
.
হঠাৎই দরজায় চোখ পড়ল৷দড়জায় চোখ পরতেই চোখ আসমানে উঠে গেল৷কারন মেয়েটা পোশাকগুলো পড়েছে৷
আনিকাকে যে এতটা সুন্দর লাগবে ভাবতেই পারিনি৷ওর দিকেই কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম
.
অনেকক্ষন পর
.
–এই যে মিষ্টার,হা করেই থাকবে নাকি আমাকে নিয়ে ঘূরতে যাবে?
.
–আনিকা,আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?তুমি আমার সাথে যাবে?
.
–হুম,যাবো বলেই তো তৈরি হয়ে এসেছি
.
ওর এমন কথা শুনে মনের ভিতর লাড্ডু ফুটছিল৷
.
তখনই আনিকাকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে গেলাম৷
বৈশাখা মেলায় দুজনে হাতে হাত ধরে অনেকক্ষন ঘুরছিলাম,সব কাপলদের আর বিবাহিতদের জুটির ভিতর কেমন আমাদের জুটি টাই বেশি ভালো মনে হচ্ছিলো৷যার সাথে এমন একজন মানুষ আছে,তার জুটি কি খারাপ হতে পারে নাকি?
ওর হাত ধরে বৈশাখী মেলার ভিতর হাটাহাটি করছিলাম৷
আহ কত শান্তি?আনিকার হাত ধরে আজ হাটাহাটি করছি৷তখনই মনে মনে বলতে লাগলাম
শুভ নববর্ষ,আর এই শুভ নববর্ষ আমার জন্য শুভ দিন৷
ভাবতেই কেমন খুশিতে মন আনচান করছিলো ঠিক তখনই……..
.
.
.
.
.
চলবে………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে