#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_11
–এই আবিদ,আমাকে কাল বাহিরে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে?জানো তোমার সাথে ঘূরতে আমার খুব ইচ্ছা করে
–হুম নিয়ে যাবো,তবে আমি নিজেই তো এখনও ভালো করে চলতে পারিনা,ভালো করে দেখতে পারিনা,হাটতে পারিনা,তো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে গেলে,লোকে দেখলে তোমাকে কি বলবে?
–কি বলবে?
–বলবে একটা অচলের পিছনে কত সুন্দরী একটা মেয়ে,অযথাই জীবনটা শেষ করছে
–তোমারে কিন্তু……(ধমকের সুরে)
–আমারে কি?
–আমার সাথে তুমি ঘূরতে যাবে,এটাই ফাইনাল
–ঠিক আছে
বিকেলবেলা আনিকাকে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে গেলাম৷আফসোস কতগুলো মাস কেটে গেল,এখনও আমার পা আর চোখের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি৷উচু নিচু জায়গায় চলতে গেলে অনেক প্রবলেম হয়৷হয়ত আনিকা আমার পাশে না থাকলে এতদিনে কবরেই চলে যেতাম৷আমি অচল জেনেও ও আমার পাশে আছে৷হয়ত এটাই ভালোবাসা৷আর বর্তমানে এমন কোথাও দেখা যায়না,আর দেখলেও খুব কম৷খুব কম সংখ্যক ছেলে মেয়েই তাদের সঙ্গী এমন অচল থাকলে মেনে নিবে৷
আনিকাকে নিয়ে শিশু পার্কে গেলাম৷সমানন্তরাল রাস্তা দিয়ে আনিকার হাতে হাত রেখে হাটতেছি৷হাটতে হাটতে দুজনেই একটা বেঞ্চের উপর বসলাম৷আর বসার পরই আনিকা আমার সাথে গল্প করতে লাগল৷
আর হঠাৎ করেই ওর মাথাটা আমার ডানপাশের কাধের ওপর রাখল৷আর ডান হাতটা আমার হাতের সাথে শক্ত করে আকড়ে ধরল৷আর হঠাৎই বলে উঠল
.
–আচ্ছা আবিদ,তূমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাই না?
–হুম খূব ভালোবাসি,তবে সেটা তোমার থেকেও অনেক কম
–আমার থেকে কম ভুলেও না,কারন তোমার ভালোবাসা পেয়েই আজ তোমাকে ভালোবাসতে শিখেছি
–কিভাবে ভালোবাসতে শিখেছো,সেটা আমি জানিনা তবে তুমি আমার থেকেও আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো
–আরে না,
–হুম,সেটাই
–আচ্ছা সব সময় তোমার বুকে,তোমার কাধে মাথা রাখার অধিকার দিবে তো?আর আমাকে অনেক ভালবাসবে তো
–কতটা ভালবাসতে পারব সেটা জানিনা,তবে আমি আমার এই পাগলি বউটাকে নিজের জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি ভালোবেসে যাবো
–জানো আবিদ,তুমি হয়ত বিশ্বাস করবে না,তোমার ওই বুকে আমি স্বর্গসুখ খুজে পাই৷তোমার বুকে মাথা রাখতে পারলে,আমার মনের সব দূঃখ ভুলে গিয়ে নতুন একটা সুখ খুজে পাই,সেটা আর কোথাও খুজে পাই না৷আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি,আমার শেষ নিঃশ্বাসটাও যেন ওখানেই ত্যাগ করতে পারি
–তোমারে কিন্তু এখন মারব!কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছো?আমাকে ছেড়ে যাবার কথা বলছো কেন?ছেড়ে গেলে এখনই চলে যাও,আমি একাই থাকব(ওর প্রতি কিছুটা রাগ করে)
–ওপপপস আমার পাগলটা দেখি রাগও করতে পারে?যাও আর বলব না
–(চূপ করেই আছি)
-কি হলো,বললাম তো আর বলবনা
–হুম
–এবার তাহলে হাসো
–হুম
–কি হলো?হাসো বলছী
–হি হি হি,এবার তুমিও হাসো
–হি হিহি
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল৷তাই আনিকাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাটতে লাগলাম৷হঠাৎই একটু উচূ জায়গায় হাটতে গিয়ে পড়ে গেলাম৷আর আনিকা আমাকে সাথে সাথেই তোলার চেষ্টা করছিল৷আশেপাশে সন্ধ্যার সময়ও অনেক মানুষ আমার দিকে তখন কেমন করে যেন তাকিয়ে রইল৷আর অনেকেই হো হো হো করে হেসে উঠল,আর বলতে থাকল,কি কানা কোনা মানুষ রে!সন্ধ্যা না হতেই কেমন শুকনোর ভিতর আছাড় খাওয়া শুরু করছে
এগুলো বলছে আর হাসাহাসি করছিল৷আনিকা তখন অনেক রেগে যায়,আর ওদেরকে কিছু বলার জন্য যেতে চাইলে আমি তার হাতটা ধরে ফেলি,আর তখন আনিকা বলে উঠল
–আবিদ,ছাড়ো বলছি,ওই অসভ্য লোকটার দাতগুলো ভেঙে ফেলব
–আনিকা,বাদ দাও,আর ওরা তো কিছু মিথ্যে বলেনি৷চলো আমরা চলে যাই
–না ওদেরকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া দরকার
–না আনিকা,কিছুই বলার দরকার নেই৷
তোমাকে এখান থেকে যেথে বলছি,তো চলো এখান থেকে,আর একটা কথাও বলোনা৷আর যদি আমার কথা না শুনো,তাহলে আমি খুব কষ্ট পাবো৷এখন তুমি যদি আমাকে কষ্ট দিতে চাও,তাহলে যাও
–না আবিদ,আমি তোমাকে কখনই কষ্ট দিবো না৷কিন্তু ওদের….
–কোনো কিন্তু নেই,চলো বলছি
–হুম
তারপরই আনিকা নিয়ে হাটতে লাগলাম৷আনিকা রাস্তা দিয়ে আমাকে নিয়ে আসছে৷কোনো রিক্সা পাচ্ছিলাম না৷দুজনেই রিক্সার জন্য রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম৷কেননা তখন রাত হয়ে যাচ্ছিল,আর আমার এই অবস্থায় আনিকা কে নিয়ে বাইরে থাকা একদমই ঠিক না৷
আনিকা হাটছে আর আমাকে বলছে
–সামনে ইট আছে আবিদ!ওখানে একটূ উচু,সাবধানে হাটো,
আরেকটু যেতেই
–সামনে গর্ত বামে হাটো,নয়ত কাদায় পড়ে যাবে
আরেকটু যেতেই
-ডানে হাটো ,বামে গর্ত,
এভাবেই আনিকা আমাকে পথ চলাতো৷কখনও ডানে হাটতে বলতো,কখনও বা বামে হাটতে বলতো৷
সত্যি বলতে যদিও আমার অবস্থা খারাপ ছিল,তবুও আমি অনেক সুখিই ছিলাম৷ওর মত একটা মেয়ে যে আমার পাশে আছে,ভাবতেই আমি অবাক হয়ে যাই৷
অনেকক্ষন পর রিক্সা পাওয়া গেল৷আর দুজনেই রিক্সা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম৷বাসায় আসার কিছুক্ষন পরই বুঝতে পারলাম আনিকা কেমন পাগলের মত করছে৷আর বার বার মাথায় হাত দিচ্ছে ৷মনে হচ্ছে ওর মাথায় অনেক প্রবলেম হচ্ছে৷তাই আনিকাকে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু সে কোনো কথাই বলল না৷শুধু বলল কিছু না৷পরে রাগ নিয়ে,একটু ধমক দিয়ে যখন জিজ্ঞাসা করলাম৷তখনই আনিকা বলে উঠল
–আসলে আবিদ,আমার মাথাটা একটু ব্যাথা করছে৷আমি এখন একটু শুয়ে থাকব,তাই তুমি যদি এখনি খেয়ে নিতে,তাহলে খুব হতো ভালো
–কখন থেকে ব্যাথা করছে
–এইত
–এইত কি?
–একটু আগে থেকেই
–তোমার মাথা ব্যাথা করছে,আমাকে একবার বলছো?
–না
–কেন বলোনি?বলার প্রয়োজন বোধ করো না,তাই বুঝি(ওর প্রতি রাগ হচ্ছিল,ওর মাথা ব্যাথা করছে কিন্তু আমাকে একবারও বলল না)
–এই আবিদ কি বলছো তুমি হ্যা?তোমাকে বলার প্রয়োজন বোধ করি না মানে?তুমি আমার সব,বুঝেছো
–হুম সেটা তো বুঝতেই পারছি
–কি বুঝতে পারছো ?
–কীছুনা৷এখন চূপ চাপ খাটোর ওপর আসো
–কেন?
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
–যেটা বলছি সেটা করো
তারপর আমি খাটে গিয়ে বসলাম৷আর আনিকাও বসল৷আর তখন ওকে আমার কোলে শুয়ে থাকতে বললাম৷আর ও আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইল৷
আমি তখন মাথা ব্যাথার মলম ওর মাথায় লাগিয়ে দিচ্ছি৷আর ওর মাথায় মালিশ করে দিচ্ছিলাম৷আর আরেক হাতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম৷
ও তখন এক দৃষ্টিতে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে৷আর ওর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল৷
–আনিকা,খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে তোমার?দেখবে মাথা ব্যাথা কমে যাবে,তুমিএকদমই কান্না করো না
–মাথা ব্যাথার কারনে আমি কান্না করছি না,তুমি হাত বুলাতেই মাথা ব্যাথা সব শেষ
–তাহলে কেন কান্না করছো?
–জানো আবিদ,আমি না খুবই ভাগ্যবতী একটা মেয়ে,যার কারনে তোমার মত একজনকে আমার জীবনে পেয়েছি৷যার কাছে আমার সমস্ত সুখ খুজে পাই৷আর কোথাও এত সুখ আমি পাই না৷যতটা তোমার বুকে মাথা রেখে পাই৷আমাকে না সব সময় তোমার ওই বুকে রাখবা
বলেই আরও জোড়ে কান্না করে দিল৷আর আমাকে খূব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল৷অনেক শক্ত করেই জড়িয়ে আছে,যেন আর একটূ হলে আমার সাথে ও নিজেকে মিশিয়ে ফেলবে৷
পাগলিটার আচরন গূলো খুবই অদ্ভুদ৷আর ওর চাওয়া গূলোও খুব সামান্য তবে খুব অদ্ভুদ লাগে৷কারন ও কিছু হলেই বলে,আমার বুকে যেন তাকে সব সময় জড়িয়ে রাখি,কখনই যেন এ বুক থেকে ওকে আলাদা না করি৷পাগলিটা যখনই ঘুমাবে আমার এই বুকের মধ্যে ঘুমাবে৷বালিশের কথা বললে তো হেব্বি কান্না করে দেয়৷কারন ওর একটাই কথা ,আমার বুকেই নাকি তার সব সুখ৷আর ওকে যখন আমার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রাখি৷তখন ও খরগোশের মত একদম কাচুমাচু করতে থাকে৷মনে হয় একটা খরগোশের বাচ্ছা,আমার বুকে কেমন কাচুমাচূ করছে৷
ইদানীং প্রায়ই আনিকার মাথা ব্যাথা করে৷জ্বর আসে৷
বমি করে৷যেগূলো আমাকে খূব ভাবনার ভিতর রাখছে৷
খূব ভয়ে পেয়ে যেতাম৷ওকে ডক্টরের কথা বললে ডক্টরের কাছে যেতে চাইত না৷
কিছু বললেই বলত ওর কিছুই হয়নি৷
কিন্তু ওর এমন অবস্থা আমাকে সত্যিই খুব বেশিই ভাবায়৷
কারন পাগলিটার কষ্ট একদমই যে সহ্য করতে পারিনা৷নিজের হাজারও কষ্ট হলে কোনো সমস্যা হয়না৷কিন্তু ওর কিছু হলেই বুক ফেটে যায়,অসহ্য যন্ত্রনায়৷হয়ত একটু বেশিই ভালোবাসি তাই৷
সেদিন রাতেও হঠাৎ ওর মাথা ব্যাথা হচ্ছিল৷আর ব্যাথাটা হয়ত অনেক বেশিই হচ্ছিল৷
যার কারনে ও কান্না পর্যন্ত করছিল৷যদিও কান্নাটা আমার অগোচরে৷
আনিকাকে হঠাৎ খুজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলাম না৷আর আনিকাকে একটা ডাকও দিচ্ছিলাম না৷কারন সকাল থেকেই ওর আচরন একদমই ভিন্ন ছিল৷আস্তে আস্তে খূজতে খূজতে যখন ছাদে গেলাম৷দেখলাম ছাদের একটা কর্নারে বসে বসে মাথায় হাত দিচ্ছে আর কান্না করছে৷আর আমাকে দেখেই চোখ মুছে ফেলল৷
–আনিকা,তোমার কি হইছে বলো
–কই কিছুনা তো
–সত্যি করে বলো বলছি
–কই কীছু না তো৷আর তুমি এই অবস্থায় একা একা ছাদে আসছো কেন?
–তোমাকে যেটা বলছি বলো,কি হইছে তোমার?
–আসলে মাথা ব্যাথা করছে
–আমাকে বলোনি কেন?
–আসলে তুমি নিজেই তো অসূস্থ,তাই….
–তাই বলে আমাকে বলবেনা?চলো এখনি ডাক্তারের কাছে যাবো
–না,এখন যাবো না,পরে যাই
–না এখনি যাবো
–না আবিদ,এখন মাথা ব্যাথা করছে,এখন গেলে,রাস্থায় আমারই যদি কীছু হয়ে যায়,তখন তোমাকে কে দেখবে?
–তাই বলে এখন কষ্ট ভোগ করবে?
–না,কষ্ট ভোগ করব কেন?
–ওই চূপ৷এখনি নিচে চলো৷তোমার মাথায় আমি মলম মালিশ করে দিচ্ছি
তারপর আনিকাকে নিয়ে গিয়ে মাথায় মলম মালিশ করতে লাগলাম৷আর আস্তে আস্তে সময়টা কাটিয়ে দিলাম৷বিকেল বেলা ওর মাথা ব্যাথা ঠিক হলে ওকে নিয়ে আমার চেনা জানা,বাংলাদেশের সব চাইতে বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম৷
আর ওখানে ওর অনেকগলো টেষ্ট করাচ্ছিল৷আর ডাক্তার আমার চেনা৷আমি ওনাকে চাচা বলে ডাকি৷কিন্তু যতই আনিকার মাথা ব্যাথাসহ সবকিছুরাজন্য টেষ্ট করছিল৷ডাক্তার চাচা ততই ঘাবরে যাচাছিল৷ওনাকে এমন ঘাবরে যেতে দেখে আমি খূব ভয় পেয়ে গেলাম৷চেষ্ট শেষে ডাক্তার চাচার সাথে আমি একা একটূ কথা বললাম
–চাচা,ওর টেষ্ট গূলো করতে গিয়ে এমন ঘাবরে যাচ্ছিলেন কেন?(আমি)
–আরে তেমন কীছুই না,চিন্তা করো না,আল্লাহকে ডাকো,যেন কাল রিপোর্টগূলো ভালো আসে(ডাক্তার চাচা)
–হুম,তবে ওকে কেমন দেখলেন?
–দেখো বাবা,রিপোর্ট ছাড়া কিছুই বলতে পারছিনা৷তোমরা কষ্ট করে একটূ কালকে আসো
–হুম
তারপর টেষ্ট গুলো করে আমরা বাসায় চলে আসলাম৷বাসায় এসে বার বার আল্লাহর কাছে পার্থনা করছিলাম৷যেন রিপোর্টগুলো ভালো আসে৷
চিন্তায় একদমই খেতে পারছিলাম না৷তবে আনিকাকে তেমন কিছুই বুঝতে দিলাম না৷
রাতে একদমই ঘূম হচ্ছিল না৷খূব টেনশন হচ্ছিলো৷
আর কেন জানি বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রনা অনূভূত হতে লাগল৷আনিকা তখন আমার বুকের উপর ঘূমিয়ে আছে৷ঘূমের ভিতরই আনিকাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম৷আর মনে মনে বলতে লাগলাম
.
“””””””খূব ভালোবাসি রে পাগলি,তোকে খুব ভালোবাসি,তোকে কোথাও, কখনও এই বুক থেকে হারাতে দিব না””””””