পতিতা মেয়ে part_10

0
1738

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_10

রাতের বেলা খাবারের সময় আনিকা নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগল৷আমি খাচ্ছি আর অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি,যদিও চোখদুটো তখনও ঝাপসা৷তারপরও আনিকাকে কেন জানি সেই ঝাপসা চোখেই অনেক মায়াবতি লাগছিল৷
.
–এই এভাবে কি দেখছো?
,
–আমার মায়াবতীকে
.
–সেটা আবার কে?
.
–আমার বউ,আনিকা
.
বলতেই আনিকা কেমন লজ্জা পেয়ে গেল৷
,
–যাও দুষ্টু,এখন চুপচাপ খেয়ে নাও
.
–হুম
.
খাওয়া শেষ করার পর আনিকার আম্মু আসল
.
–আনিকা,তুই ঘুমাবিনা?
.
–হুম মা,তুমি গিয়ে ঘূমিয়ে পড়
,
–তুই কোথায় ঘুমাবি?
.
–আমি আবিদের সাথেই ঘূমাবো,তুমি যাও
.
তারপরই আনিকার আম্মু চলে গেল৷
তখন আনিকা বলে উঠল
.
–এই তুমি এখনি ঘূমিয়ে পড়ো,এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে
.
–হুম৷কিন্তু তুমি কি করবা?
.
–আমি আমার পাগলটাকে পাহারা দিব
,
–পাহারা দিতে হবে না,তুমিও ঘূমাও

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

.
–না,তুমি কি জানো না নাকি?আমি তো প্রতিদিনই তোমাকে পাহারা দেই
.
–হুম,এখন তুমিও ঘূমাও
,
তারপর দূজনেই ঘূমিয়ে পড়লাম৷কিন্তু পাগলিটা একদমই ঘুমালো না৷সে তার মায়াভরা হাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল৷ওর প্রতিটা স্পর্শে আমার মনে নতুন করে আলোড়ন তৈরি করছে৷
কখন যে ঘূমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারলাম না৷
খূব ভালভাবেই আমাদের দিনগুলি কাটতে লাগল৷আর আমার অবস্থাও দিন দিন ভালো হতে লাগল৷আর ভালই হবে না কেন?যার এমন একজন আছে!তার কাছে কি আর কোনো অসুস্থতা থাকতে পারে নাকি?
,
দুমাস পর
,
এখন আমার পায়ের অবস্থা মোটামুটি ভালো৷ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা হইছে৷কিন্তু এখনও আমি হাটতে পারিনা”
আসলে দীর্ঘ সময় ধরে না হাটার কারনে পা কেমন অচলের মত হয়ে গেছে৷ডাক্তার বলছে আমাকে নিয়মিত এখন হাটার চেষ্টা করতে হবে৷নয়ত হাটার ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেলব৷কিন্তু আমি হাটতেই পারিনা৷মাটিতে পা রাখলেই প্রচন্ড ব্যাথা করে৷তাই হাটতেই মন চায় না৷সারাদিন শুয়েই থাকি৷
.
–এই আবিদ্দা……
.
–কে গো?
.
–তোমার…..
.
–আমার কি?নানি নাকি?(মজা করে)
.
–ওই মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিব কিন্তু!
.
–পা তো ভাঙাই আছে,হাত দুটো ভেঙে ফেলো শুধু
.
–দেখছো?সাহস কত বেশি হইছে?ওই চুপ করে উঠো,তোমাকে এখন হাটতে হবে
.
–না গো ,ব্যাথা করে
.
–তোমার ব্যাথার গুষ্টি কিলাই৷উঠো বলছি
.
কি আর করার,উঠার চেষ্টা করছী কিন্তু পারছিলাম না৷
ঠিক তখনই আনিকা আমার হাত তার কাধে ভর করালো৷আর আমাকে খাট থেকে নামালো৷খুব ভয় লাগছিল৷কারন অনেকদিন পর মাটিতে পা ফেলাচ্ছি৷
মাটিতে পা ফালাতেই
,
—আহহঃ(পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব)
,
–কি হইছে আবিদ?খুব ব্যাথা লাগছে?
.
–হুম
.
–একটূ কষ্ট করো,দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে৷
.
বলেই আমার কপালে একটা চুমু দিল৷
জানিনা কেন জানি তখন নিজের সব কষ্ট আর ব্যাথা ভুলে গেলাম৷আমি হাটার চেষ্টা করতে লাগলাম৷কিন্তু পারছিলাম না৷তবুও চেষ্টা করতেই লাগলাম৷
.
সেদিন আর আমার তেমন হাটা হলো না৷তবে হঠাৎ পা নাড়ানোর জন্য রাতের বেলা দুপায়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতে লাগলাম৷অনেকবার বৃথা চেষ্টা করলাম মূখ দিয়ে যেন ব্যাথার কারনে কোনো আওয়াজ বের না হয় ৷আমি জানি আমার কষ্ট দেখলেই আনিকা কেমন করে ফুপিয়ে কান্না করে দেয়৷
কিন্তু শেষমেষ আর পারলাম না৷এর আগেই আনিকা সব বুঝে গেল৷আর আমাকে বলে উঠল
.
–খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাই না?
,
–কই না তো?
.
–আমার কাছে লুকাতে চাইলেও পারবে না৷কারন আমি তোমার মুখ দেখেই সব বলে দিতে পারি৷৷
,
–হুম৷
.
এরপর থেকে আনিকা প্রতিদিনই আমাকে হাটানোর চেষ্টা করাতো৷আমিও আনিকার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে হাটার চেষ্টা করতাম৷তবে তখনও আমার চোখ ততটা ভালো হয়নি,তাই দেখতেও প্রবলেম হত৷চোখে গ্লাস ৷পরা থাকলে কিছুটা দেখতে পেতাম৷
যাই হোক,আনিকা আমাকে প্রতিদিনই হাটানোর চেষ্টা করতো৷
.
একটা ছোট বাচ্ছাকে মানুষ যেভাবে ধরে ধরে হাটা শিখায়,ঠিক আমার পাগলি আনিকাও তাই৷
আমাকে ধরে ধরে বাচ্ছাদের মত হাটা শিখানোর চেষ্টা করতো৷
.
বিষয়টা যদিও অদ্ভুদ তবুও সত্যি,মানুষ জন্মের পর হয়ত একবারই হাটা শিখে,আর আমার শিখতে হচ্ছে দুবার৷একবার ছোটকালে বাবা মায়ের হাত ধরে,আর এখন আমার এই পাগলিটার হাত ধরে৷
.
এভাবেই অনেকগুলি দিন কেটে গেল৷
এখন আমি একাই হাটতে পারি৷তবে বেশিক্ষন দাড়িয়ে বা হাটতে পারিনা৷বাচ্ছাদের মত একটু হেটেই পরে যাই৷
আমি যখনই পরে যেতাম ঠিক তখনই আনিকা দৌড়ে গিয়ে আমার হাতটা ধরে ফেলত৷
.
কিছুদিন পর
.
–আবিদ,চলো আজকে বাইরে যাবো
,
–কিন্তু আমি যে এখনও ভালো করে হাটতেই পারিনা
,
–তাতে কী?আজকে বাইরে গিয়ে হাটবে
.
–বাইরে গিয়ে তো পরে যাবো৷আর তুমি তো জানো,আমি ভালো করে চোখেও দেখতে পারিনা৷আর সূর্যের আলোর কারনে আরও দেখতে পারব না
.
–হুম,তবে প্রবলেম নাই৷তোমার এই পাগলিটা যতদিন আছে,ততদিন তুমি তার চোখ দিয়েই দেখবা
এখন চলো তো
,
–হুম৷
.
কি আর করার?আনিকার সাথে বাহিরে গেলাম৷বাহিরে মাঠে যেতেই কেমন অন্ধকার দেখা শুরু করলাম৷
চোখের পাওয়ার যেন একদমই জিরো হয়ে গেছে৷
আনিকা একটূ দুরে সরে গিয়ে বলল
,
–আবিদ?এবার হাটো
.
–আনিকা,আমি তো ভালো করে কিছুই দেখতে পারছিনা৷কিভাবে হাটবো
,
–একদম আলসেমি করবানা৷চূপ করে হাটো
,
–আরে ভালো করে তো কিছুই দেখছি না,আচ্ছা তার চেয়ে ভালো,তুমি এসে আমার হাতে ধরো,আর……
.
–একদম হাত ধরার কথা এখন বলবে না
,
–কেন?
.
–আমি তোমার হাত এখন ধরব না
,
–কিন্তু কেন আনিকা৷
,
–কারন তোমাকে একা একাই হাটতে হবে
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

.
–কিন্তু আমি যে হাটতে পারছিনা কারন কীছুই দেখছি না
,
–আচ্ছা তুমি হাটো,আমি তোমার পথ বলে দিচ্ছি
,
–হাত ধরবে না?
,
–ওই চূপ করে যেটা বলছি ,সেটা করো
.
–হুম
.
তারপর কি আর করার?ওর কথা মতই হাটা শুরু করলাম৷
আমি হাটতে লাগলাম আর ও বলতে লাগল
,
–আবিদ বাম দিকে হাটো,ডানে উচু.
আবিদ সোজা হাটো
আবিদ ডানে নিচু,বামে হাটো
আবিদ সামনে গর্ত,ডান বা বামে হাটো
.
এভাবেই সারাটাদিন আনিকা আমাকে হাটিয়েছে৷
সত্যি বলতে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা৷
খুব ভাল লাগছিলো,যখন আনিকা একটু পর পর বলত,আবিদ বামে হাটো,ডানে উচু,নিচু,
ডানে হাটো,বামে সমস্যা৷
.
রাতের বেলা
,
আনিকা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলো,আর বার বার বলছিল
.
–দেখছো আবিদ,আজ তুমি কতটা একা একা হাটছো?
তুমি কিন্তু একদমই চিন্তা করবেনা,দেখবে তুমি একদম ঠিক হয়ে গেছো৷
.
–হুম
.
–হুম৷তুমি আবার হাটবে,চলবে
.
–আচ্ছা আনিকা,একটা কথা বলব?
.
–হুম বলো
,
–এত কষ্ট করার কি দরকার?
,
–মানে?
,
–মানে এই যে তুমি দিন রাত,একটা অচলের পিছনে এভাবে এত কষ্ট করছো?আর নিজেও কত কষ্ট পাচ্ছো,এগুলো ছেড়ে তো তুমি ভালো……….(মুখ হাত দিয়ে আটকিয়ে দিল)
,
–আবিদ,তোমাকে এই কথাটা না বলতে আগেও নিষেধ করেছি৷কিন্তু তুমি আবারও বলছো কেন?আর হ্যা আমি কোনো কষ্ট পাচ্ছিনা,আর তোমাকে ছেড়ে আমি কখনই ভালো থাকতে পারব না৷তোমার ওই বুকে যে ,আমি আমার সব সুখ খুজে পাই৷
,
–কিন্তু..
.
–কোনো কিন্তু নেই,প্লীজ আবিদ,আমাকে আমার সুখ থেকে বঞ্চিত করো না,আমার সুখ টূকু তুমি কেড়ে নিও না আবিদ,আমি তোমার বুকে আমার পৃথীবির সবটূকু সূখ খূজে পাই,যেটা আর কোথাও পাইনি৷আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি,এই বুকের মধ্যে মাথা রেখেই যেন,আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারি
.
বলেই ফুপিয়ে কান্না করে দিল৷
.
–এই পাগলি,প্লীজ কান্না করো না৷আর কখনই বলব না
,
–(কান্না করেই চলছে)
,
–সত্যি বলছি,আর কখনই বলব না
,
–তাহলে তিন সত্যি বলো
,
–হুম তিন সত্যি
.
–এবার আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে
,
তখন কি আর করার? আনিকাকে তখন বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলাম৷
মনের ভিতর যে তখন কি পরিমান শান্তি লাগছিল,সেটা হয়ত প্রকাশ করার মত না৷
আর ওর ভালোবাসা পেয়ে,খাবারের কথা ভুলেই গেছি৷
এই মন তখন বারবার বলতে লাগল
.
“”””কিসের খাওয়া কিসের কি?
এমন পাগলি পেলে লাগে কি?””””””
.
.
.
.
চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে