#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
#Part:9
“”তুই আমার ঘরে কি করছিস?””
আমার সেই চিরচেনা চমত্কার কন্ঠটা শুনে আমি চট করেই পিছু ফিরে তাকালাম।ভাইয়া টাওয়াল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো চোখ মুখের লাল আভা টা দূর করার জন্যই চোখে মুখে পানি দিয়েছে।আমার হাতে নিজের ডাইরীটা দেখে চোখ মুখ শক্ত করে ধমক দিয়ে উঠল
“”তুই জানিস না কারো অনুমতি ছাড়া তার ডাইরীতে হাত দিতে নেই।মিনিমাম এই কমনসেন্স টুকুও তোর নেই?””
ভাইয়া আমাকে বকেই যাচ্ছে।কিন্তু আমি তার কথা শোনার মতো অবস্থায় নেই।নিজের অজান্তেই হাত থেকে ডাইরীটা পরে যায়।নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না।দৌড়ে গিয়ে ভাইয়া বুকে ঝাঁপিয়ে পরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।আজ এতো সুখ সুখ কেন লাগছে আমার?যেন পৃথিবীর সব সুখ এসে এই বুকে বাসা বেঁধেছে।আর আমি এই বুকের একমাত্র অধিকারিনী।সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবতী।এমন ভালোবাসার মানুষ কজনই বা পায়।ভাইয়া হয়তো আমার এমন কাজে বুদ্ধিহীন হয়ে গেছে।হয়তো ভাবতে পারেনি আমি এমন কিছু করবো।এতটা সুখের মাঝেও আমি অনুভব করলাম ভাইয়া ধীরে ধীরে তার হাত তুলছে।হয়তো আমায় নিজের সাথে আরো গভীরে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য।তাই আমি আরো শক্ত ভাবে তার বুকে মাথা গুজে দিলাম।এমন সময় বড় মা কন্ঠে কানে ভেসে এলো।বড়মার ডাক শুনে আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম।নিজের চোখ মুখ মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম।কিন্তু ভাইয়া এখনো ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।যেন এখনো তার ঘোর কাটে নি।কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় মা ঘরের ভেতরে ঢুকল।
“”আরমান তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে….””
আমাকে দেখেই বড় মা কথা বলা থামিয়ে দিল।আমি মাথা নিচু করে আছি।আর ভাবছি বড় মা যদি জিজ্ঞাসা করে আমি এখানে কি করছি তাহলে কি উত্তর দেব।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বড় মা আমাকে এড়িয়ে আরমান ভাইয়ের দিকে তাকালো।
“”আরমান তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নে আমরা বেরোবো।””
এবার মনে হয় ভাইয়ার ধ্যান ভাঙল।হালকা কেশে বলে উঠল
“”কোথায় যাওয়ার কথা বলছো।”
“”সেটা নাহয় গেলেই দেখতে পাবি এখন তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নে তো।সময় নেই””
“”আমি কোথাও যাচ্ছি না।””
“”আমি এখানে তোর কোনো মতামত নিতে আসিনি তোকে বলতে এসে।তুই যাচ্ছিস মানে যাচ্ছিস।আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।””
বলেই বড় মা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে ভাইয়া পা দিয়ে খুব জোরে বেডে লাথি মেরে চোখ মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকালো।আর আমি এই শব্দে আমি কেঁপে উঠলাম।বুঝলাম না বড়মা বাইরে যেতে বলেছে তা নিয়ে এতো রাগ করার কি আছে?সামান্য বাইরেই তো যেতে হবে।সে সব যাক আমি এবার মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।রাগের মাথায় আবার আমাকেই না মেরে বসে।
?
রাত আটটা।বসার ঘরে বসে সবাই মিলে এক সাথে জবার সিরিয়াল দেখছি।দেখতে দেখতে বিরক্ত বোধটা চরম পর্যায়ে পৌছেছে।কিন্তু আমার মা এই জবার মারাত্মক ফ্যান।একটা এপিসোড ও মিস করে না।তার সাথে রিপিট ট্যালিকাস্ট তো আছেই।উফফ কিভাবে যে মায়ের ব্রেন এই জিনিসটা সহ্য করে কে জানে?তবে আমার টেনশন হচ্ছে ভাইয়াদের নিয়ে।এখন অবধি এলো না কেন তারা।সেই কখন বড় আব্বু বড় মা আমার বাবা আর ভাইয়া বেরিয়েছে কিন্তু এখন অবধি ফিরল না।কি করছে এতক্ষণ যাবৎ বাইরে।আমার ভাবনা শেষ হতে না হতেই দরজার কলিংবেল বেজে উঠল।আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।হ্যা ভাইয়ারাই এসেছে।দরজা খোলার সাথে সাথে ভাইয়া ভেতরে ঢুকে সোজা উপরে নিজের ঘরে চলে গেল।চোখে মুখে বেশ গাম্ভীর্যতা ফুটে উঠেছে।ভাইয়ার পিছু পিছু বাকি সবাই ভেতরে ঢুকল।বাবা বড় আব্বু বড় মা গিয়ে সোফায় বসতে আমি দৌড়ে রান্নাঘরে গেলাম ওদের জন্য পানি আনতে।পানির ট্রে টা নিয়ে তাঁদের কাছে যেতেই যেতেই বড় মা কথা টা কানে এলো।
“”যাক বাবা এতদিনে টেনশন ফ্রি হলাম।ছেলেটার বিয়েটা একে বার ফাইনাল করেই এসেছি।””
কথাটা শুনতেই আমি থমকে গেলাম।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল।কি বলছে কি বড় মা।তারমানে তারা ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছিল।ভাইয়া তাহলে বিয়ে করতে যাচ্ছে তাও আবার অন্যকাউকে।আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।যেন এক্ষুনি হাতে গ্লাস গুলো পড়ে যাবে।
“”কি রে পানি নিয়ে আয় খুব পিপাসা পেয়েছে তো!””
বাবার কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো।হাতে থাকা ট্রে তাঁদের সামনে ধরতেই তারা পানির গ্লাস তুলে নিল।শুধু বড় মা ছাড়া।আমি পানির ট্রে টা টেবিলের ওপর রেখে সবার পেছনে এসে দাড়ালাম।যেন কারো নজর আমার ওপর না পরে।সবাই ভাইয়া হবু বউ কে নিয়েই কথা বলছে।সে কতো সুন্দর,সে কত স্মার্ট।কিন্তু এসব শুনে যে আমার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে সেটা কারোর নজরে পরছে না।নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না।সবার আড়াল হয়ে ওখান থেকে চলে এলাম।ভাইয়ার নামের সাথে জুড়ে দেওয়া অন্য মেয়ের নাম।এই জিনিস টা যেন আমার একদম ই সহ্য হচ্ছে না।মনের মধ্যে আবার হাজারো অভিযোগ জমা হলো ভাইয়ার বিরুদ্ধে।তাই ছাদে চলে এলাম।আজ আবার এই আকাশকে আমার অভিযোগ শুনতে হবে।কেন?কেন ভাইয়া আমার সাথে এমনটা করল?ভাইয়া তো ওখানে ছিল তাই না।তার সামনে সবাই তার বিয়ে ঠিক করল।অথচ সে কিছুই বলল না।হয়তো ওই মেয়ে খুব বেশিই সুন্দর।তাই তো আমার কথা ভুলেই গেছে ও।কান্না পাচ্ছে।ভীষন কান্না পাচ্ছে।আমি কি করে অন্যের সাথে ভাইয়াকে সহ্য করব?সামান্য নাম শুনতেই তো আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।এখন কি করবো আমি?কান্না ছাড়া যে আর কিছুই অবশেষ রইল না আমার।
আপন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই চলেছি।তখনই নিজের পেটে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠল।মূহুর্তেই ওই হাত টেনে পিঠ তার বুকে ঠেকালো।বুঝতে বাকি রইল না এই হাতে মালিক কে?রাগে মাথার রক্ত টগবগ করা শুরু করল।আর সহ্য হলো না।আমি ভাইয়ার দিকে ঘুরেই দুই হাতে তার বুকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম।বরঞ্চ ও আমাকে আরো গভীর ভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল।আমি তার বুকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি।
“”ছাড়ো আমাকে।আমি ছাড়ো আমায়।কেন এসেছো এখানে?কষ্ট দিয়ে সেটাতে মলম লাগাতে। সেটাতো আবার পুরোনো দিনের অভ্যাস এটা তোমার।কিন্তু এই ফর্মুলা কোনো কাজে আসবে না।তুমি খুব বাজে একটা লোক।যদি বিয়ে অন্য কাউকেই করার ছিল তাহলে কেন?কেন আমার এত কাছে এসেছিলে?আমার শরীর কি তোমার কাছে সস্তার মনে হয়?শুধু মাত্র তোমার…তোমার সায় আজ আমি তোমায় এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি?এত অপমান সহ্য করেও আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি।তোমার মুখে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য ছটফট করেছি।এসব কিছু হয়েছে শুধুমাত্র তোমার জন্য।কেন কেন এতো আশকারা দিয়েছো আমায়।ভালো যদি নাই বাসবে তাহলে কেন ভালোবাসার মানেটা শেখালে আমায়?কেন এতো কষ্ট দিচ্ছ?সহ্য হচ্ছে না আমার।ভেতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পরছি আমি।দয়া করে আর কষ্ট দিতে এসো না।আর সহ্য করার ক্ষমতা নেই আমার।””
একনাগাড়ে কথা গুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পরলাম তার সামনে।এতে তার কি ভাবান্তর হলো বলতে পারবো না।কিন্তু হঠাৎ ই কানের কাছে কারো উষ্ণ ন্বাস অনুভব করলাম।
“”ম্যাজিক দেখবি মিতু?””
ফিসফিস করে কথাটা বলেই ভাইয়া আমার দিকে তাকালো।আর আমি তার কথার মানে বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তার চোখের দিকে তাকালাম।এটা কি মজা করার সময় যে ও আমায় এখন ম্যাজিক দেখাতে চাইছে।আমি কি বাচ্চা মেয়ে নাকি যে ম্যাজিক দেখেই আমি সব কষ্ট ভুলে যাবো।এসব ভাবনার মাঝেই আমি অনুভব করলাম আমি হাওয়ায় ভাসছি।ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম ভাইয়া আমায় কোলে তুলে নিয়েছে।কি করতে চাইছে কি ভাইয়া।কিছুই তো বুঝতে পারছি না…..
চলবে❤