নেশা তুই আমার Part:10

0
3491

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
#Part:10
?
বসার ঘরে বসে থাকা সকলে আমাদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।সকলের এমন চাহনি আমায় বেশ অসস্থিতে ফেলছে।যার কারনে আমি বারবার নিচু গলায় ভাইয়াকে আমায় নিচে নামাতে বলছি।কিন্তু ভাইয়ার তাতে কোনো হেলদুল হচ্ছে না।ও নিজের মতোই আমায় কোলে নিয়ে সবার সামনে দিয়ে বাড়ির বাইরে চলে এলো।পেছন থেকে বাবা বড় আব্বু বড় আম্মু অনেক ডাকার পরেও সে শুনল না।আমি ভেবে পাচ্ছিনা কি হচ্ছে আমার সাথে।কি করতে চাইছে ভাইয়া?আর কোথায়ই বা যাচ্ছি আমরা?আমার সকল ভাবনার মাঝেই ভাইয়া আমাকে গাড়ির সামনের সিটে বসিয়ে সিটবেল্ট লাগিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।আর ও নিজে ড্রাইভিং সিটে এসে বসল।
“”কোথায় যাচ্ছি আমরা?””
চেহারায় রাগী ভাব এনে কথাটা বললাম।কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো বলে মনে হলো না।ভাইয়া স্বাভাবিক ভাবেই নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ওটাতে মনোযোগ দিল।এবার আমার মাথা একশো ডিগ্রি ঘুরে গেল।এখানে আমি মরছি আমার জ্বালায় আর উনি মনের সুখে ফোন টিপতে লাগলেন।রাগের মাথায় তার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিতে চাইলেই ভাইয়া হাত সরিয়ে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই হাতের ফোনটা পকেটে পুরে এবার গাড়ি চালাতে শুরু করল।এবার আমার টনক নড়ে উঠল।
“”এই এই গাড়ি থামাও।কোথায় যাচ্ছি আমরা?কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?আমি কোথাও যাবো না তোমার সাথে।শুনেছ তুমি আমি তোমার সাথে কোথাও যাবোনা।গাড়ি থামাও বলছি।””
একনাগাড়ে বকবক করতে করতে তার স্টেয়ারিং এ থাকা হাত ধরে টানাটানি করছী।আর ভাইয়া একদম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।
বকবক করতে করতেই হঠাৎই আমার মনে হলো গাড়ি থেমে গেছে।আমি ভাইয়ার হাত ধরে থাকা অবস্থাতেই আশেপাশে তাকালাম।হ্যা গাড়ি থেমে গেছে।তাহলে কি ভাইয়া আমার বকবকানিতে রাগ করেই গাড়ি থামালো।এবার আমার ভয় লাগা শুরু করল।ছোট খাটো একটা ঢোক গিলে ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি ভাইয়া গাড়ি থেকে নামছে।
“”আরে কোথায় যাচ্ছো?
আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে গ্ড়ির দরজা খুলে সটান আমার কোলে তুলে নিল।ভাইয়ার এমন বিহেভিয়ারে সত্যিই আমি অবাক হচ্ছি।আসলেই কি করতে চাইছে ভাইয়া?আর আমরা কোথায়ই বা যাচ্ছি।আমি জায়গা টা চেনার জন্য আশেপাশে তাকালাম।হঠাৎ ই আমার চোখ সামনের অফিসে টাঙানো বোর্ডের ওপর আটকে গেল।সাথে সাথেই বুকটা ধড়াস করে উঠল।এ তো ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিস।কিন্তু ভাইয়া আমায় এখানে কেন নিয়ে এলো।না না আর এই লোককে বিশ্বাস করা যাবে না।এর মতলব আমার কাছে ঠিক লাগছে না।তাই নিজের শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে নিজের হাত পা ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিলাম।
“”ছাড়ো আমায়।আমি কোথাও যাবো না।আমায় এখানে কেন নিয়ে এসেছো?আমি যাবো না তোমার সাথে ছাড়ো বলছি আমায়।
হাত পা ছোড়াছুড়ি করেও কোনো লাভ হলো না।ভাইয়া খুব শক্ত ভাবে আমায় ধরে অফিসের ভেতরে ঢুকল।ও ভেতরে ঢুকতেই দুজন ছেলে ওর সাথে এসে দাড়ালো।আমি এই দুজন ছেলেকে চিনি।আরমান ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড রনি আর পিয়াস।ছোট থেকে খুব ভালো বন্ধু এরা।ওরা কাছে আসতেই আরমান ভাই তাঁদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল।
“”সব রেডী তো?””
“”হ্যা সব এরেন্জম্যান্ট হয়ে গেছে।আরে আমি কাজী সাহেব কেও রেডী করে রেখে দিয়েছি।শুধু তোদের আসার অপেক্ষা ছিল।””
রনি ভাইয়ার কথা শুনে আমার ভয় আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল।একটা ঢোক গিলে ভাইয়ার দিকে তাকালাম পিয়াস ভাইয়া আমায় আরমান ভাইয়ের কোলে দেখে দাঁত কেলিয়ে বলে উঠল
“”কি রে ভাই শেষমেশ ভাবী কে তুলে নিয়েই চলে এলি।””
“”ওতো কথা বাদ দে আর নিজেদের কাজে মন দে””
বলেই আমার একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল।আমার সামনেই একজন উকিল কালো কোট পরে বসে আছে।ভাইয়া তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।
“”কাগজ পত্র সব রেডী?””
“”হ্যা হ্যা শুধু সাইন টা করে দিলেই হয়ে যাবে।””
বলেই উকিল মহাশয় ভাইয়ার সামনে কিছু কাগজ আর আর একটা কলম এগিয়ে দিল।ভাইয়া কলম টা হাতে নিতেই আমি একটা ঢোক গিললাম।আজ তো ঢোক গিলে গিয়েই আমার পেট ভড়াতে হবে দেখছি।আরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।এতো কিছুর মাঝে তো আমার ডিনার টাই হয় নি।আমিই হয়তো একাই একজন যে বিপদে পরলে খাওয়ার কথা মনে পরে।খাওয়ার কথা মনে পরতেই আমার প্রচন্ড রকম খিদে পেল।খিদেয় পেট চো চো করতে লাগল।কিন্তু নিজের খিদে টাকে এই মূহুর্তে দমন করে ভাইয়ার দিকে মনোযোগ দিলাম।ভাইয়া হাতে কাগজ নিয়ে সাথে সাথে সাইন করে দিল।তার সাথে রনি ভাই আর পিয়াস ভাই ও।বূঝলাম তারা সাক্ষী হিসেবে সাইন করল।এবার এলো আমার পালা।ভাইয়া আমার দিকে তাকাতেই আমার বুক ধক করে উঠল।অলরেডী আমার হাত পা কাপা কাপি শুরু হয়ে গেছে।কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।পালাবো নাকি?কিন্তু তার জন্যেও তো হাত পা চলার দরকার।আমার তো হাত পা কিছুই কাজ করছে না।ভয়াতুর দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভাইয়ার আমার কাছেই এগিয়ে আসছে।আমার কাছে এসেই পেপার টা আমার সামনে তুলে ধরল।
“”সাইন কর।””
“”না আমি সাইন করবো না।””
বলেই আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।কি করে করবো সাইন?যতই আমি আরমান ভাইকে ভালোবাসি না কেন তবুও আমার জীবনে আমার বাবা মার প্রায়োরিটি টা অনেক বেশি।তাঁদের না জানিয়ে আমি কি করে বিয়ে করে নিতে পারি।আমি চাই আরমান ভাই কে বিয়ে করতে কিন্তু এভাবে নয়।পরিবারের সম্মতিতে বাবা মা কে সামনে রেখে বিয়েটা করতে চাই।মা বাবার ও তো কত ইচ্ছে আছে আমার বিয়ে নিয়ে।আমি কি করে তাঁদের এইভাবে ঠাকাতে পারি।আমার কান্না পাচ্ছে ভীষন কান্না পাচ্ছে।ভাইয়া যদি আমায় বিয়েই করতে চায় তো কথাটা সবার সামনে কেন বলল না। এইভাবে সবার আড়ালে বিয়ে করার মানে কি?এসব ভাবনার মাঝেই আমি অনুভব করলাম আমার চেয়ার দুলছে।হঠাৎ এমন হওয়ায় কিছুটা ভড়কে গেলাম।কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বুঝলাম ভাইয়া আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে দুই পাশে চেয়ারে হাতলে হাত রেখে একদম আমার মুখের কাছে মুখ এনে বলল
“”সাইন করবি নাকি আমি ওই মেয়েকে গিয়ে বিয়ে করে নেব?যার সাথে আমার বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।””
চলবে❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে