#নীড় #একাদশ_পর্ব
#সুহা
দুপুর প্রায় ৩টা বাজে অঙ্কিতা মাত্র এয়ারপোর্ট এ এসে দাঁড়িয়েছে। কিছুটা সামনে আগাতেই দেখলো আনিক আর নাইমা দাঁড়িয়ে আছে। অঙ্কিতা তাদের দিকে মুচকি হাসি এগিয়ে গেলো।
এত ব্যস্ততার মাঝেও আপনারা আমায় বিদায় জানাতে আসলেন!আমি অনেক খুশি হয়েছি।(অঙ্কিতা)
কিসব যে কও না অঙ্কিতা দিদি তুমি আইতে কইবা আর আমরা আমু না। যতই ব্যস্ততা হোক না কেন তোমার কথা কোনোদিন ভুলমু না। তুমি আমাগো কাসে ঠিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা হয়তো তুমি নিজেও জানো না।(নাইমা)
অঙ্কিতা নাইমাকে জড়িয়ে ধরলো অতঃপর নাইমার হাত দুটো আঁকড়ে ধরে বললো-
কিছু কিছু সম্পর্ক রক্তের হয় না আত্মীয়তারও হয়না কিন্ত সম্পর্কের মাধুর্যতা অন্যসব সম্পর্ককেও হার মানায়। তোর আর আমার সম্পর্কটাও ঠিক সেরকমই। যখন দিদি ডাকিস না লাগে আমার লাগে আমার ছোটো বোনটা আমায় ডাকছে। জীবনে ছোট বোনের একটা আশা ছিলো যে কিনা আমায় দিদি বলে ডাকবে, তোর মাধ্যমে তা অল্প সময়ের জন্য হলেও পূর্ণ হলো। (অঙ্কিতা)
অঙ্কিতা এবার তার ব্যাগ থেকে একটা ব্রেসলেট বের করে নাইমার হাতে পরিয়ে দিলো। নাইমা কিছুই বলবে তার পূর্বেই অঙ্কিতা নিজের হাত দেখিয়ে বললো-
আশা ছিলো বোন হলে একরকম একই ডিজাইনের দুটো ব্রেসলেট বানিয়ে একটা তার হাতে দিবো একটা নিজের হাতে পড়বো। কিন্তু কপাল আমার কোনো ভাই-বোনই নেই। কিন্তু হ্যা বোন একটা যেহেতু পেয়েছি ইচ্ছে পূর্ণ করেই ছাড়বো। এই দেখ একই রকম দুটি ব্রেসলেট বানিয়েছি একটা তোর একটা আমার। ভুলেও এটা নিতে মানা করবি না আমি রাগ করবো কিন্ত আর বলতো ডিজাইন টা কেমন হলো?
নাইমার চোখে জল চলে এলো জীবনে কোনোদিন ভাবে নি এমন একটা বড়বোন পাবে যে তাকে অগাধ মায়া করবে। সে অঙ্কিতা কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো অঙ্কিতাও পরম মায়ায় জড়িয়ে ধরলো তাকে। ক্ষণকাল পরে অঙ্কিতা নাইমাকে ছেড়ে আনিক থেকে বিদায় নিলো, আনিক তাকে জানালো অতিরিক্ত জার্নি সহ্য না করতে পাড়ায় চাচা-চাচি আসেনি। কিন্তু তার জন্য কিছু শুকনো খাদ্য পাঠিয়েছে অঙ্কিতা সেগুলো খুশিমনেই নিলো।তন্মধ্যেই এনাউন্সমেন্ট হলো লাস্ট চেকিং এর অঙ্কিতা দ্রুত ভিতরে ঢুকে গেলো। শেষবারের মতো কাচের দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আনিক আর নাঈমকে দেখলো, আনিক আর নাইমাও যতক্ষণ অঙ্কিতাকে দেখা গেলো তার দিকে তাকিয়ে রইলো। অঙ্কিতা তাদের দৃষ্টিসীমানার বাইরে যেতেই আনিক আর নাইমা নিজেদের গন্তব্যর উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো। প্লেন টেক অফ করলেই অঙ্কিতা জানালা দিয়ে শেষবারের মতো বাহিরটা দেখে নিলো, চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বললো-
বিদায় বাংলাদেশ, বিদায় আমার মাতৃভূমি। এতটা বছর আমায় নিঃস্বার্থহীন ভাবে তোমার দয়ায় পালন করার জন্য তোমাকে হাজারো প্রণাম।
কথাটুকু বলতেই অঙ্কিতার চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। মানুষ যতই উন্নত হোক আর যতই ভালো পর্যায়ে চলে যাক না কেন মাতৃভূমির টান কখনোই ছাড়তে পারে না। যার মধ্যে মাতৃভূমির টান নেই তাকে মানুষ বলে আখ্যা দেয়াটা বেশ কঠিন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বারান্দায় একা মনে বসে আছে রবি, দৃষ্টি তার দূর আকাশে। সারাদিন বাসার বাইরে নিজেকে কাজের ব্যাস্ততায় ভুলিয়ে রাখলেও বাসায় পা রাখতেই মনে পরে যায় এই বিশাল ধরণীর বুকে সে ঠিক কতোটা একা আর নিঃস্ব।
এত্ত রাত্রে ঠান্ডায় বারান্দায় বসে আছেন আবার গায়ে কোনো গরম কাপড় ও নেই! জ্বর বাঁধালে কি হবে শুনি? (অঙ্কিতা)
অঙ্কিতাকে পাশে দেখে রবি মুখ ফুলিয়ে বলে-
বাস্তবে তো পাত্তা দাও না আর কল্পনায় আসো তো আসো আজ আবার উপদেশ ও দিচ্ছ! কি আজব দুনিয়া!
অঙ্কিতার রবির কথা শুনে দম ফাটা হাসি পেলো, তার মানে শুধু সেই না রবিও তাকে কল্পনায় দেখতে পেতো। পরিস্থিতি আপাতত অনুকূল না এই ভেবে অঙ্কিতা হাসলো না।
কি হলো ১০ সেকেন্ড ওভার তো এবার তো তোমার যাওয়ার টাইম হয়েই গেসে না! যাও না কেন? (রবি)
অঙ্কিতা এবার রবির হাতে জোরসে খামচি মেরে বসলো। বেচারা রবি তো ব্যথার ঠেলায় তিন ফাল দিয়ে বসছে। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পর টের পেলো কল্পনা তো তাকে খামচি মারবে না আর মারলেও বা তার ব্যথা লাগার কথা না। তার মানে কি…………। সে অঙ্কিতার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালে অঙ্কিতা নিচের দিকে তাকিয়ে বলে –
বিয়ের লগ্ন ঠিক করুন বিয়ের শখ জেগেছে। রবি কিছু বলবে তার পূর্বেই অঙ্কিতা বলে-
ঘুম পাচ্ছে আমার গুড নাইট। কাল সকালে কথা বলবো।
অঙ্কিতা চলেও যায় আর রবি খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরে অবশেষে তার ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো। ভেবেই সে ওখানেই লাফালাফি শুরু করে, আর অঙ্কিতা তা আড়াল হতে দেখে মুচকি হেসে সরে যায়। বস্তুত অঙ্কিতা পূর্বে যখন এখানে এসেছিলো তখনই জরুরি প্রয়োজনে লাগতে পারে ভেবে তাকে এক্সট্রা চাবি দেয়া হয়েছিলো। তাই আজকে নিজে নিজেই বাসায় ঢুকে যেতে সম্যসা হয় নি তার। নিজের থাকার রুমটায় গিয়ে দেখলো যেমনটা তার থাকাকালীন ছিলো তেমনি আছে কিন্তু পরিপাটি রাখা হয়েছে। সে বিছানায় শুয়ে ঠাম্মিকে কল দিলো ওপরপাশ হতে ঠাম্মি কল রিসিভ করতেই-
কিরে দি ভাই ভালো মতো পৌঁছেছিস? কোনো সম্যসা হয়নি তো?(ঠাম্মি)
হুম ঠাম্মি আমি ঠিক আছি, কিন্তু তোমায় বড্ড মনে পড়ছে গো। এত্ত করে বললাম আমার সাথে লন্ডনে এসে পরো আসলেই না তোমার কিনা ওই গ্রামেই থাকতে হবে। কি আছে টাকি ওই গ্রামটায়? (অঙ্কিতা)
মানুষটার স্মৃতি, টানা ২০টা বছর মানুষটার সাথে ঘর করেছি এই জায়গায় তাই শেষ নিঃশ্বাস টাও এই মাটিতেই ফেলবো। (ঠাম্মি)
অঙ্কিতা আর কথা বাড়ালো না দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলা শুরু করে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
অনিমা তুমি কি কিছু খুঁজছো বা কোনো কাজ ছিলো ?কিছু দরকার হলে বা কাজ থাকলে আমায় বলতে আমি তোমার কাজ করে দিতাম। তুমি শুধু শুধু এই সময় কষ্ট করতে গেলে কেন?(আবির)
ওয়াশরুমে গেসিলাম, এখানে নিশ্চই তোমার কোনো দরকার হত না বা তুমি কোনো প্রকার সাহায্যে করতে পারতা না। (অনিমা)
আবির অনিমার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলো। নিজেকে ধাতস্থ করে কিছু বলবে তার পূর্বেই অনিমা বলে-
“অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ” কথাটা জানো তো? তোমার ভাবভঙ্গিতে এখন তাই প্রকাশ পাচ্ছে। হুট্ করে এত্ত প্রেম এত্ত সেবা কোথা হতে আসলো? বিয়ের প্রথম প্রথম ও তো তোমাকে আমার প্রতি এতটা ডেসপারেট হতে দেখি নাই।
আবির কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলে-
প্রেগন্যান্সির মুড সুইং ভয়য়ঙ্কর কিন্তু এতটা ভয়ঙ্কর তা জানতাম না। বাবারে বাবা আমি পারবো না আমি গেলাম অফিস।
কথা শেষ করেই আবির হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় যেন কতই না সুখী দাম্পত্য চলছে তাদের। কিন্তু আবিরের চালাকিটা অনিমার ধরতে বেশ একটা ঝামেলা হচ্ছে না। কিন্তু সে আপাতত চুপ আছে আবিরের বিপক্ষে কোনো পাক্কাপোক্ত প্রমান না পাওয়া পর্যন্ত কোনো তার কিছুই করাই ঠিক হবে না। হিতে বিপরীত ও ঘটতে পারে।
একটা বার শুধু তোর বিপক্ষে প্রমান পাই তার পর দেখ তুই। *** মুড সুইং।(অনিমা)
আজকেও অফিসে এসে সবার সাথে কড়া মেজাজ দেখাচ্ছে এমনকি মৌমিতা আসলে তার উপরো চড়াও হলো সে।
এই তুই ঠিক কি প্ল্যান করসিস সাফ সাফ বল। ওই অনিমার সাথে আর ভালো মানুষির নাটক করতে পারমু না। (আবির)
** বউরে সামাল দিতে পারিস না আমার সাথে চড়াও হস কোন সাহসে? (মৌমিতা)
মৌমিতাকে রেগে যেতে দেখে আবির শান্ত হয়ে গেলো। আপাতত আবিরের কাছে মৌমিতা সোনার হরিণ একে হাত ছাড়া করাটা বোকামি। এসব ভেবেই সে গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলে উঠে-
সরি গো, আসলে আমি অনেক ডিসটার্বড হয়ে আছি। কি করবো বলো আমি তোমায় ভালোবাসি তাই ওই অনিমার সাথে মিশতে আমার একটুও ভালো লাগে না।
মৌমিতা আবিরের নাটক বেশ বুঝতে পারছে কিন্তু আপাতত এটা নিয়ে সে কিছুই বললো না।
তোমার বৌয়ের নামে নাকি ৫০ লক্ষ টাকার ইনসুরেন্স আছে?(মৌমিতা)
হ্যা আছে তো?(আবির)
তোমার বৌকে যদি তুমি ডিভোর্স দাও তাহলে তোমাকে মোটা অঙ্কের খরচ করতে হবে আর যদি তোমার বৌ কোনোভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় তো…………(মৌমিতা)
তুমি ঠিক কি বলছো বুঝতে পারছো তো? (আবির)
সব কিছু জেনে বুঝেই বলছি। ভেবে দেখো তোমারই লাভ। (মৌমিতা)
কিন্তু যদি ধরা পরে যাই? (আবির)
টাকার জোরে সবই সম্ভব। (মৌমিতা)
আবির মৌমিতার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে ভাবতে থাকে।সে কি এই পদক্ষেপটা নিবে?
চলবে……………