#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৩৩
🍁
সকলে নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।আঁধার ও আদরের অফিসের আজকে প্রথম দিন!
আঁকলিমা চৌধুরী সকাল থেকেই ব্যাস্ত সাথে আরোহী আর লিমাও টুকটাক সাহায্য করছে।আঁকলিমা চৌধুরীর মতে তার ছেলেদের অফিসের প্রথম দিন তিনি নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবেন।
তাই তো সকাল সকাল তিনি কাজে লেগে পড়েছেন, আরোহী শাশুড়ীর বাচ্চামো দেখে মনে মনে হেঁসে লুটোপুটি খাচ্ছে! তার শাশুড়ী বর্তমানে একটা ছোট বাচ্চার মতো আচরণ করছে তার ছেলেদের প্রথম অফিস যাওয়া নিয়ে।
আঁকলিমা চৌধুরী আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,,,
–‘আরো মা তুই গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে, ঘেমে নেয়ে এ কি অবস্থা হয়েছে তোর!’
–‘তুমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও আম্মু বাকিটা আমি করছি, তোমার শরীর খারাপ করবে নাহলে!’
আঁকলিমা চৌধুরীর হাত থেকে মরিচের বাটিটা নিতে নিতে বলে আরোহী।
–‘তা কি করে হয় মা আমি থাকতে তুই এসব করবি কেনো?’
–‘সেম কথা তো আমি ও তোমায় বলতে পারি আম্মু!’
আরোহীর কথা শুনে আঁকলিমা চৌধুরী এবার হেঁসে ফেলেন।
–‘আচ্ছা সব তো হয়ে গেছে, তুই এখন গিয়ে আঁধারের কি লাগবে না লাগবে সেটা দেখ না যা!’
–‘কিন্তু আমি তো সব রেডি করেই রেখে এসেছি!’
–‘আরু একটু উপরে এসো তো!’
আঁধারের চিৎকারে মুখটা ছোট হয়ে যায় আরোহীর।আঁকলিমা চৌধুরী এবার শব্দ ছাড়াই হেঁসে উঠেন।
–‘যা নাহলে আবার ডাকবে তো!’
–‘আরু!’
আঁকলিমা চৌধুরীর কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবার আঁধারের ডাক ভেসে ওঠে।
–‘কি হলো যা?’
আঁকলিমা চৌধুরীর জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে আরোহী উপরে আসে।রুমের ভেতরে ঢুকতেই দু’টো হাত তাকে টেনে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
আরোহী ভয় পেয়ে গেলেও মুখে প্রকাশ করে না কিছু!
–‘কখন থেকে ডাকছি?’
–‘আসছিলাম তো!’
আরোহীর ভাবলেশহীন উত্তর। আঁধার ছোট ছোট চোখ করে তাকায় আরোহীর দিকে।আরোহী ভরকে যায়,আমতা আমতা করে বলে,,,
–‘কি!’
–‘কতো বার ডাকতে হয়েছে তোমায় আর তুমি বলছো আসছিলে?’
–‘না মানে কাজ করছিলাম তো তাই আর কি!’
–‘হুম, এখন আমার শার্টের বোতাম গুলো লাগিয়ে দেও লেট হয়ে যাচ্ছে! ‘
আরোহীকে ছেড়ে কথাটা বলে আঁধার, আরোহী ভ্রুকুঁচকায়,,,
–‘কেনো আপনার হাতে কি হয়েছে?’
–‘আমার হাতে আবার কি হবে?’
ভ্রুকুঁচকে বলে আঁধার।
–‘তাহলে শার্টের বোতাম লাগানোর জন্য আমায় ডাকলেন যে?’
আরোহীর কথা শুনে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় আঁধার তার দিকে। হঠাৎ আঁধারকে এভাবে তাকাতে দেখে ভড়কে যায় আরোহী!
–‘আগে দাও তারপর বলছি!’
আঁধারের কথা শুনে অগত্যা আরোহী বোতাম গুলো লাগানো শুরু করলো!
–‘বউয়ের দায়িত্ব বরের শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেওয়া!’
প্রথম বোতামটা লাগানোর পর পরই আঁধারের মুখে এই ধরনের কথা শুনে হঠাৎ আরোহীর হাসি পায়,কিন্তু না হেসে নিজেকে স্বাভাবিক করেই দ্বিতীয় বোতাম লাগানো শুরু করতেই আঁধার সামান্য ঝুঁকে আসলো আরোহীর দিকে।
হঠাৎ হওয়াতে আরোহী ভয় পেয়ে দু কদম পিছনে পিছিয়ে যায়! আঁধার সামান্য হেঁসে আরোহীর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়ে আসে।
–‘তুমি কন্টিনিউ করো! ‘
আরোহী আবার কাঁপা কাঁপা হাতে বোতাম লাগাতে শুরু করে,আঁধার টুপ করে পর পর দুবার আরোহীর গালে চুমু খায়।
আরোহীকে নিজের দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে দেখে মাথা চুলকিয়ে বলে আঁধার,,,
–‘তোমার গাল গুলো না একদম টমেটোর মতো দেখলেই আদর আদর পায় আমার কি দোষ বলো আমি তো ইনোসেন্ট একটা বাচ্চা মাত্র!’
আরোহী কিছু না বলেই সব কয়টা বোতাম লাগানো শেষ করে,সরে আসতে গেলেই আঁধার চেপে ধরে। আরোহী একটা ভ্রু উঁচু করে বলে,,,
–‘আবার কি?’
–‘প্রথম দিন অফিসে যাচ্ছি মিষ্টি মুখ করবো না!’
–‘ফ্রিজে আছে আমি নিয়ে….. ‘
আর কিছু বলতে পারে না আরোহী, আঁধার তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রথমে হতবম্ভ হলেও পরে আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে যায় আরোহীর।
কিছুক্ষণ পরে আরোহী নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু আঁধার যেনো ততোই আরও খানিকটা আঁকড়ে ধরছে তাকে।
আরোহীর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, নিশ্বাস নিতে পারছে না ঠিক মতো সে আর এদিকে আঁধার ছাড়ার নামই নিচ্ছে না।
আঁধারকে ছাড়ানোর জন্য ধাক্কাচ্ছে আরোহী, আঁধার এবার নিজে থেকেই ছেড়ে দেয়।আরোহী হাফাতে থাকে,বড় বড় দম ছাড়তে থাকে সে।
–‘এখনো ঠিক মতো কিস করতে শিখলে না!’
আরোহী কিছু না বলেই পাশের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।
!
!
আদর রেডি হচ্ছে আর আলিশা তাকে খুঁটিয়ে খাঁটিয়ে দেখছে।আদর রেডি হওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আলিশার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে, তবে আলিশা সেটা এখন অব্দি খেয়াল করে নি।
আদর রেডি হয়ে আয়নায় আর একবার নিজেকে ভালো করে দেখে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে আলিশার কাছে যায়।
আলিশা তখন ও একদৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আদর এভাবে আলিশাকে তার দিকে তাকাতে দেখে একটা শুকনো কাশি দেয়,আলিশা চমকে উঠে তবে বুঝতে না দিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
–‘এভাবে কি দেখছিলে?’
–‘কই কিছু না তো!’
আলিশার আমতা আমতা করে কথা শুনে মনে মনে বাঁকা হাসে আদর।
–‘সত্যি কিছু না?’
–‘হ্যা হ্যা!’
–‘আমাকে আজকে ভিষণ সুন্দর লাগছে তাই না?’
আদরের কথা শুনে চোখ মুখ কুঁচকে বলে আলিশা,,,
–‘কঁচু লাগছে, একদম ভালো লাগছে না এই শার্টে তোমায়!’
–‘কি বলো শার্টটা কতো সুন্দর দেখছো,কতো মেয়ে আমায় বলেছে জানো নেভি ব্লু শার্টে আমায় অনেক হ্যান্ডসাম লাগে।’
আদরের কথা শুনে এবার আলিশার চোখ মুখ কিছুটা শক্ত হয়ে যায়।
–‘শার্ট চেঞ্জ করে যেখানে যাওয়ার যাও!’
–‘কেনো শার্টটা ভালো লাগছে তো?’
–‘সেটা আমি কি জানি চেঞ্জ করে যেতে বলছি যাও।’
এবার আদরের এক ভ্রু খানিকটা উঁচু হয়ে যায়,,,,
–‘আর ইউ জেলাস আশা?’
–‘আমি কেনো জেলাস হতে যাবো?’ তোমায় দেখতে এতোই বাজে লাগছে না আদর মানুষ দেখলেই পালিয়ে যাবে তাই চেঞ্জ করতে বললাম।’ হে হে
সামান্য হাসার চেষ্টা করে বলে আলিশা।
–‘তাহলে আমি তো এটাই পরেই যাবো! ‘
–‘আদরের বাচ্চা! ‘
একটা বালিশ ছুঁড়ে মারে আদরের দিকে আলিশা।
!
!
গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাহি,তার পাশেই অগ্নিরুপে দাঁড়িয়ে আছে শিহাব! রাহি হতভম্বের ন্যায় সকলের দিকে তাকিয়ে আছে, তবে শিহাব ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে!সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে!
–‘এই ছেলে তোমার সাহস হয় কি ভাবে আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলার?’ কে তুমি?
–‘আমি কে সেটা নাহয় পরে জানবেন এখন বলেন তো এনারা কারা?’
–‘ওরা আমাদের আত্মীয় হয় আমার মেয়েকে দেখতে এসেছে, তুমি কে? ‘ ভারী বেয়াদব তো তুমি, আমারই বাড়িতে এসে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলছো?
ক্রোধের সহিত কথাটা বলেন রিয়াদ আজমল।
–‘আমি আপনার জামাই শশুর মশাই, আপনার একমাত্র মেয়ের জামাই।’
শিহাবের কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে যায়।
–‘কি যা তা বলছো আপনি মাথা ঠিক আছে তো?’ রাহি আমার হবু বউ, এই ধরনের মজা কেনো করছেন ভাই?
মিলন অর্থাৎ রাহির হবু স্বামী কথাটা বলে,কিন্তু কথাটা বলার পর পরই রাহির গালে আবার একটা চড় পড়ে।রাহি টলমল চোখে শিহাবের দিকে তাকায় তবে শিহাবের মায়া হয় না।
#চলবে?
#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৩৪
🍁
ভালোবাসা ও মায়া এই দুটি শব্দ অনেক সাধারণ হলেও শব্দগুলো মূল্য অনেক! যারা মূল্য দিতে পারে তারা শব্দ দু’টি ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারে!
আর যারা দিতে পারে না কিংবা দেয় না তারা হয়তো উপলব্ধি করতে পারে না।কেউ বা পরিস্থিতির কারণে মূল্য দিতে পারে না আর কেউ বা ইচ্ছে করেই দেয় না।
এই যেমন বর্তমানে শিহাবের কাছে মনে হচ্ছে রাহি ইচ্ছে করেই এমনটা করলো।তবে আসলেই কি তাই, মোটেও না! বাবার ভয়ে ছেলে পক্ষের সামনে এসেছিলো ঠিকই রাহি তবে তার মন পরে ছিলো শিহাব চৌধুরীর কাছেই।
মেহমান চলে গেলেই সে জানিয়ে দিতো তার বাবাকে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা তবে এতো কিছু যে ঘটে যাবে সেটাই বা কে জানতো।
ইতিমধ্যেই শিহাবের অনেক কয়টা থা’পড় খেয়েই ফেলেছে সে,অথচ শিহাবের মনে না আছে কোন অনুশোচনা আর না আছে প্রিয়তমার গায়ে হাত তুলার অভিমান কিংবা কষ্ট।
তার ভেতর হয়তো এখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে, তাই তো রাহিকে না কিছু বলতে দিচ্ছে নাই বা বাকি সবাইকে!
–‘কে এই ছেলে রাহিয়ানা?’ আর তুমিই বা কিছু বলছো না কেনো ওকে?
রাহির বাবা ক্রোধে চিৎকার করে বলে উঠেন,,,
রাহি শুঁকনো ঢোক গিলে কিন্তু কিছু বলতে পারে না।শিহাব শক্ত চোখে রাহির দিকে তাকায়।
–‘এই ছেলে হয়তো রাহিকে ডিস্টার্ব করে আঙ্কেল দেখছেন না বখাটেদের মতো এসে মারপিট করছে!’ একে বের করে দেন আঙ্কেল!
মিলনের কথায় কড়া চোখে তাকায় তার দিকে রাহি!রাহিকে এভাবে তাকাতে দেখে ভড়কে যায় মিলন।রাহির বাবা অবাক হয় রাহিকে এভাবে তাকাতে দেখে।
–‘সুইটহার্ট বলো হু এ্যাম আই!’
বাঁকা হেসে বলে উঠে এবার শিহাব।
–‘বাবা ও শিহাব তোমাদের জামাই!’
কথাটা বলেই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় রাহি।
–‘কিহ!’
একসাথে সকলে চিৎকার করে উঠে! শিহাব নিজের কান চেপে ধরে ধপ করে পাশের সোফায় বসে পড়ে।
–‘কি বলছো রাহি, তোমার কোন বোনের হাসবেন্ড উনি?’
মিলনের কথায় এবার উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে শিহাব।
–‘মিস্টার মিলন, আমি মিসেস রাহিয়ানা রাহি চৌধুরীর হাসবেন্ড শিহাব চৌধুরী নট ওর আনাদার গার্লস হাসবেন্ড!’
মিলন অবাক হয়,
–‘এসব কি হচ্ছে এখানে ভাই আমরা কি এখানে তামাশা দেখার জন্য এসেছি!’
মিলনের বাবা রাগে ফুঁসে উঠে বললেন।
–‘আপনারা এখন আসতে পারেন ভাই!’
রাহির বাবার কথা শুনে সকলে অবাক হয়।
–‘মানে কি বলছেন আঙ্কেল? ‘
–‘তোমাদের যেতে বললাম তো!’
অপমানে আর একটা বাক্য ও ব্যায় করলো না তারা ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো।
–‘এই ছেলে এদিকে আসো!’
রিয়াদ আজমলের গম্ভীর কন্ঠে শিহাব ভদ্রতার সহিত উঠে তার কাছে চলে যায়।
–‘তুমি সত্যি আমার মেয়ের জামাই? ‘
–‘আসসালামু আলাইকুম বাবা আমি আপনার একমাত্র জামাই!’
শিহাবের কথা শুনে রিয়াদ আজমল উচ্চস্বরে হেঁসেই সালামের জবাব দেন।
–‘ওয়ালাইকুম আসসালাম!’ বসো বসো বাবা।
রাহি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার বাবা ও শিহাবের দিকে।শিহাব হেঁসে রিয়াদ আজমলের পাশের স্থান দখল করে নেয়।
–‘রাহিয়ানা একটা কাজ তুমি অনেক ভালো ভাবে করেছো এই যে শিহাবের মতো ছেলেকে বিয়ে করে!’ অবশ্য তুমি বিয়ে না করলেও আমি নিজেই বিয়ে দিতাম কি বলো বাবা শিহাব!
শেষের কথাটা শিহাবের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন রিয়াদ আজমল। রাহি হাঁ করে তাকিয়ে আছে, সবকিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
–‘ ওকে তোমার রুমে নিয়ে যাও ফ্রেস হতে বাকি কথা পড়ে হবে!’
রাহিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কথাটা বললেন তার বাবা।শিহাব মুখ টিপে হেসে উঠে আসলো।রাহির পেছন পেছন উপরে উঠতে হলো শিহাবকে ও!
–‘এই যে ওইটা ওয়াশরুম!’
রুমে ঢুকে শিহাবকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো রাহি।শিহাব এক পলক রাহির দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায়! শিহাবকে হঠাৎ দরজার দিকে যেতে দেখে ভ্রুকুঁচকে যায় রাহির।
দরজা লাগাতে দেখে এবার রাহির বুকের ভেতর কাঁপতে শুরু করে,একটু আগেই তো এতোগুলো মারলো আর এখন দরজা লাগিয়ে কি ইচ্ছে মতো মারবে না।
কিন্তু রাহিকে ভুল প্রমাণ করে হঠাৎ ঝাঁপটে ধরলো শিহাব।রাহি সস্থির নিশ্বাস ছাড়লো মনে হলো! শিহাব কিছুক্ষণ পর রাহিকে ছেড়ে দিয়ে বললো,,,
–‘ফাস্টএইড বক্স নিয়ে এসো!’
রাহি একটু অবাক হলেও বটেই তবে কিছু না বলেই তার কথা মতো ফাস্টএইড বক্স এনে শিহাবের হাতে দিয়ে দিলো।
হঠাৎ গালে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেতেই চোখ তুলে তাকায় রাহি,শিহাবকে কিছু একটা তার গালে লাগাতে দেখেও কিছু বলে না।নিজের কাজ শেষ করে শিহাব ওয়াশরুমে চলে যায়।
রাহি আবার অবাক হয়,শিহাব তার সাথে একটা বাক্য ও বিনিময় করলো না!এটা ও সম্ভব? আসলেই সম্ভব, তা না হলে কি আর এমনটা করতো শিহাব!
কিন্তু তার তো জানতে হবে তার বাবা এতো সহজে কি করে শিহাবকে মেনে নিলেন? রাহি বিয়ে করেছে শুনেও তেমন কিছু কেনো বললেন না? কিন্তু তার প্রশ্নের উত্তর কে দিবে শিহাব নাকি তার বাবা? কাকে জিজ্ঞেস করবে সে?বিছানায় বসে ভাবতে থাকে রাহি এসব!
!
!
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আরোহী, পাশেই আলিশা একটা চেয়ারা বসা!
–‘আরো আর একবার ফোন কর না ওরা কতো দূরে এখনো আসছে না কেনো?’
মুখ গোমড়া করে বলে আলিশা।
–‘উফফ আপু তুই একটু চুপ থাকবি ওরা সময় হলে চলে আসবে তো!’
আরোহীর উত্তরে মনে হলো না আলিশা খুশি হতে পারলো।সে আবার ঘড়ির দিকে তাকালো! প্রায় অনেকক্ষণ যাবতই আলিশা সেম কাজটিই করছে আরোহী আলিশার পাগলামিতে বিরক্ত হয়ে গেছে!
–‘এই আপু তুই এমন ব্যাবহার করছিস মনে হচ্ছে তোর একার বরই প্রথম অফিস গেছে!’
–‘তুই বুঝবি না রে আরো আমার অফিসে যাওয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে না!’
আলিশার কথায় এবার আরোহীর একটা ভ্রু আপনা আপনি উঁচু হয়ে যায়।
–‘তাহলে?’
আরোহীর কথায় আলিশা হায় হুতাশ করে বলে,,,
–‘আদরের পি এ হিসেবে একটা মেয়েকে সিলেক্ট করা হয়েছে!’
–‘তো?’
আরোহীর কথায় এবার আলিশা কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে,,,
–‘আরো!’
আলিশার মুখ দেখে হয়তো আরোহী এবার কিছুটা আন্দাজ করতে পারে।হেঁসে ফেলে আরোহী,,,,
–‘আরে তুই যেমনটা ভাবছিস তেমনটা তো না ও হতে পারে আপু শুধু শুধু চিন্তা করছিস!’
–‘কে কি চিন্তা করছে?’
দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলে আঁধার। আরোহী ও আলিশা দু’জনে চমকে যায়।
–‘আপনি কি ভাবে?’
আরোহীর প্রশ্নে আঁধার ভ্রুকুঁচকে বলে,,,
–‘কি ব্যাপার বলো তো তোমাদের?’
–‘ক-কই কি ব্যাপার,হে হে কিছু না হঠাৎ করেই আপনাকে দেখে চমকে গেছি! ‘
হাঁসার চেষ্টা করে বলে আরোহী। আলিশা নিজেও হাসার চেষ্টা করে! আঁধার সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় দু’জনের দিকে।
–‘আমি যাই কেমন হে হে!’
কেনো মতে ধীরে ধীরে পালিয়ে যায় আলিশা, যাওয়ার আগে আরোহীকে চোখের ইশারায় বলতে বারণ করে।
আরোহীর দিকে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায় আঁধার, আরোহী ধিরে সুস্থে এগিয়ে গিয়ে আঁধারের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলে,,,
–‘অফিস কেমন কাটলো?’
আঁধার মুচকি হেসে আরোহীর কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,,,
–‘ভালোই তবে তোমায় মিস করেছি অনেক, এই প্রথম তোমার থেকে সারাদিন দূর ছিলাম ভাবা যায়!’
–‘খারাপ লেগেছে অনেক?’
আঁধার এবার মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে,,
–‘হুম অনেক!’
–‘অভ্যেস হয়ে যাবে!’
আঁধার এবার একটু শক্ত করে তার হাতের চাপ দেয় আরোহীর নরম পেটে।আরোহীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,,,
–‘তুমিহীন অভ্যেস যে আমার চাই না বউ,যে অভ্যেসে তোমার অস্তিত্ব নেই সেই অভ্যেস এই তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর চাই না মিসেস চৌধুরী!’ আমার সকল অভ্যেস গুলো তোমার অস্তিত্ব নিয়ে হোক,তাশরিফ আঁধার চৌধুরী সকল ভালোবাসা আপনার হোক! ভালোবাসাহীন কিংবা ভালোবাসা বিহীন সবকিছুতেই তোমার অস্তিত্ব মিশে থাক।আমার শরীরে মনে মস্তিষ্কে সবকিছুতেই আমার আরু থাক! আরুহীন যে আঁধার অসম্পূর্ণ বউ,তোমায় ছাড়া একটা মিনিট যেনো আমার একটা যুগের সমান কাঁটে! আচ্ছা তুমি কি আমায় জাদু টোনা করছো নাকি সত্যি করে বলো তো, নাহলে আমার মতো একটা ছেলে কি না বউ পাগল হয়ে যাচ্ছে এটা ও মানা যায়?
আঁধারের কথা শুনে আরোহীর নিজেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে, এতো ভালোবাসার যোগ্য কি সে আদোও!
ভালোবাসা শব্দটা অমূল্য, যে ভালোবেসেছে সে হয়তো সুখেই মরেছে নয়তো বা দুঃখেই! এখন যেমন আরোহী নিজেকে সুখের সাগরে ভাসানোর ভেলার মতো মনে করছে।
#চলবে?