নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি পর্ব-৩১+৩২

0
607

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৩১

🍁

মিষ্টি রোদের ঝিলিক চোখে পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে নেয় আঁধার, একটা হাত চোখের উপরে দিয়ে রোদের ঝিলিক পরা থেকে বাঁচতে চাইলেও সেটা সম্ভব হয় না!

শেষ মেষ বিরক্ত হয়েই চোখ হালকা মেলিয়ে দেখার চেষ্টা করে, কিন্তু বুকের পাশটাতে ভারী কিছু অনুভব করতেই তৃপ্তি একটা হাসি চলে আসে মুখে।

চোখ আর খুলতে ইচ্ছে হয় না তার, তাই চোখ বন্ধ করেই দু-হাত দ্বারা ঝাপটে ধরে তার আরুপাখিকে।আরোহী একটু নড়েচড়ে আঁধারের সাথে আর একটু ঘেঁসে ঘুমিয়ে যায়।

আঁধার চোখ বন্ধ করেই সবকিছু অনুভব করে,তাই হাতের বাঁধন আর একটু দৃঢ় করে নেয়।আরোহী যেনো এতে আর ও একটু আড়াম পায়! কিন্তু আঁধারের মনে দুষ্টু বুদ্ধি আসে।

চোখ খুলে এক পলক তার আরুপাখিকে দেখে নেয়,পরম শান্তিতে তাকে ঘুমাতে দেখে আরোহীর মাথায় একটা চুমু দেয়।আরোহীর কোন সাড়াশব্দ নেই, আঁধার বাঁকা হেসে একটা হাত দিয়ে আরোহীর উমুক্ত পেটে স্লাইড করতে শুরু করে।

আরোহী এবার খানিকটা নড়ে ওঠে, আরোহী নড়ে উঠার সাথেই আঁধার আসতে করে হাত সরিয়ে নেয়।আরোহী যখন আবার নড়েচড়ে ঘুমিয়ে যায়, তখন আবার আঁধার তার একটা হাত দিয়ে আরোহীর পিঠে স্লাইড করতে শুরু করে।

কিন্তু এবার আর আরোহীর কোন সাড়াশব্দ পায় না! তাই আবার হাতটা দিয়ে তার পেটে স্লাইড করতে শুরু করে আঁধার।আরোহী বিরক্ত হয়ে আঁধারের হাতটা সরিয়ে দেয়। আঁধার হেঁসে ফেলে, তবে বিরক্ত করা ছাড়ে না।

আবার একই কাজ করতেই আরোহী বিরক্ত হয় শুধু বিরক্ত না যাকে বলে মহা বিরক্ত!

–‘উফফ আঁধার কি হচ্ছেটা কি?’

–‘কি আবার হচ্ছে যেটা হওয়ার সেটাই!’

আঁধারের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে তাকায় আরোহী, কিন্তু আঁধারকে মিটমিট করে হাঁসতে দেখে যা বুঝার বুঝে যায়।

–‘ঘুমাবো প্লিজ!’

–‘তো ঘুমাও আমি কি তোমার ঘুম ধরে রাখছি নাকি?’

আঁধারের ভাবলেশহীন উত্তর শুনে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় এবার আরোহী।

–‘ডিস্টার্ব দিচ্ছেন কেনো!’

–‘হ আমি আর তোমায় ডিস্টার্ব করবো এটা ও সম্ভব নাকি?’

আঁধারকে ফাজলামো করতে দেখে আর কিছু না বলেই চোখ বন্ধ করে বলে উঠে আরোহী,,,

–‘আপনার হাত সামলিয়ে রাখুন আর দূরে যান ঘুমাবো আমি!’

–‘ছি আরু ছি তুমি কি মিন করতে চাচ্ছো বলো তো আমার হাতকে নিয়ে, আমার হাতের আর কি অপরাধ যখন এতো সুন্দর….’

আর কিছু বলতে পারে না আঁধার তার আগেই তার মুখ চেপে ধরেছে আরোহী।

–‘আর একটা ও কথা না, আপনি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন চরম অসভ্য!’

আরোহীর হাতটা সরিয়ে শব্দ করে হেঁসে দেয় এবার আঁধার।

–‘বউয়ের কাছে সকল পুরুষই অসভ্য হয় সেটা একটু আধটু হোক বা চরম!’ তবে আমি কিন্তু সাধু পুরুষ বুঝলে আরু নাহলে তো এখন এই অবস্থায় তোমায় দেখে রাতেরটায় আবার রিপিট করতাম।

আঁধারের কথা শুনে লজ্জায় আরোহীর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার মতো অবস্থা। হুট করে উঠে কোন রকম পালিয়ে ওয়াশরুম চলে যায় আরোহী, আঁধার হাবলার ন্যায় তাকিয়ে হু হা করে হেঁসে দেয়।

ওয়াশরুমের ভেতর থেকে আরোহী তার হাঁসির শব্দে “অসভ্য” বলে আর একবার গালি দেয়।

!
!

আদরের ঘুম ভেঙে যেতেই আজকে আর প্রতিদিনের মতো বুকের মাঝে আলিশার আভাস পায় না! ভ্রুকুঁচকে হাত দিয়ে পাশের জায়গায় আলিশাকে খোঁজার চেষ্টা করে!

কিন্তু পায় না,হঠাৎ আদরের ভয় হতে শুরু করে! এক লাফে উঠে দাঁড়ায়, ওয়াশরুমে চেক করে দেখে নেই ঘরের দরজা ও ভেতর থেকে বন্ধ করা তাহলে গেলো কোথায় মেয়েটা?

বেলকনিতে দেখার জন্য এগিয়ে যেতেই কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায় আদরের।

হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ একজন ঝাপটে ধরতেই মুচকি হাসে আলিশা।আদরের হাতের উপর হাত রেখে বলে,,,

–‘কখন উঠলে?’

–‘ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি আশা, তুমি এভাবে হুটহাট করে এখানে আসবে না ভয় পাই তো আমি!’

আদরের কন্ঠে কিছু একটা ছিলো যেটা শুনেই কেঁপে উঠে আলিশা।আলিশাকে চুপ করে থাকতে দেখে আদর এবার একটু নরম কন্ঠে বলে,,,,

–‘কখন উঠেছো?’

–‘ছয়টার দিকে!’

–‘ছয়টা,এখন তো আটটা বাজে?’ দু ঘন্টা আগে উঠেছো তুমি খিদে লাগে নি আর এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেনো? বসবে চলো।

আদরের অস্থির কন্ঠ শুনে আলিশা হাসে! এই ছেলেটার ছোট ছোট কেয়ারগুলো তার অনেক ভালো লাগে।এই যে এখন যেমন লাগছে!

আলিশার আর কোন কথা না শুনে তাকে বেলকনিতে রাখা চেয়ারে বসিয়ে দেয় আদর।

–‘তুমি বসো আমি তোমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি,একদম চুপ করে বসে থাকবে উঠার চেষ্টা করবে না একদমই!’

আলিশাকে বসিয়ে হুট করেই আদর কথাটা বলে চলে যায় ঠিকই তবে কিছুক্ষণ পরে হাতে করে দু’টো স্যান্ডউইচ দু’টো কলা আর ফল কেটে নিয়ে আসে সে।আলিশা অবাক হয় না,তার প্রতিদিনের খাবারের রুটিন এটা!

প্রথম প্রথম বাহানা করলেও এখন অভ্যেস হয়ে গেছে তার। আদরের এসব খাবারের অত্যাচারের সাথে আরও অনেক কিছুর অত্যাচার তার সহ্য হয়ে গেছে এখন।

!
!

সকাল সকাল ফোনের সাউন্ডে বিরক্ত হয় রাহি, ফোন হাতে নিতেই সাহফিফের নাম্বার দেখে অবাক হয় রাহি।এই লোকটার সাথে তার প্রথম দেখা বাজে ভাবে হলেও এর পর থেকে রাহির সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে তার।কিন্তু এতো সকলে ফোন দেওয়ার কারণে ভাবছে রাহি, কেনো দিয়েছে ফোন? আবার একই ভঙ্গিতে ফোন বেজে উঠতেই রিসিভ করে কানে দেয় রাহি,,,

–‘হ্যালো মিস লম্বা চুল ওয়ালি!’

বিরক্ত হয় রাহি,মানছে তার চুল একটু লম্বা তাই বলে এভাবে তাকে বলবে লোকটা? বিরক্তের সহিত বলে রাহি,,,

–‘হুম!’

–‘তুমি কি আমার সাথে আজকে দেখা করতে পারবে, অনেক ইম্পরট্যান্ট কাজ ছিলো!’

–‘আমার সাথে আপনার আবার কি ইম্পরট্যান্ট কাজ?’

রাহির কঘ্থা শুনে এবার মনে হয় সাহফিফ নিজেই বিরক্ত হয়। বিরক্তের সহিত বলে,,,

–‘সেটা না হয় আসলেই দেখতে পারবে,আমি টাইম ও প্লেস টেক্সট করে দিয়ো দিবো !’ লেইট করবে না ঠিক সময়ে চলে আসবে কেমন।

কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয় সাহফিফ, রাহি অবাকের সাথে হতবাক হয়ে যায়।নিজের কথা বলেই ফোন কেটে দিলো তার কথা শুনার প্রয়োজনই মনে করলো না বাহ।

!
!

বিকেলে সাহফিফের জন্য অপেক্ষা করছে রাহি একটা রেস্টুরেন্টে বসে।কিন্তু তাকে রেখে হঠাৎ করেই লোজটা উধাও হয়ে গেছে এখন অব্দি ফেরেনি।

বিরক্ত হয় রাহি,একটা মানুষকে এভাবে বসিয়ে রেখে বিরক্ত করার কোন মানেই হয় না।এরইমধ্যে তড়িঘড়ি করে সাহফিফ চলে আসে, বিরক্ত চোখে তাকিয়ে এবার বলে,,,

–‘কি বলবেন ভাইয়া এখন তো বলেন!’

–‘আসলে আমি না মিস তরীকে পছন্দ করি,আমার মনে হয় উনিও আমায় পছন্দ করেন বাট কিভাবে বলবো কি করবো বুঝতে পারছিলাম না!’ আর তোমায় ওর সাথে বেশি দেখে মনে হলো তোমার কাছে হেল্প নেওয়াই যায়,কি বলো?

আমতা আমতা করে কথাগুলো বলে সাহফিফ, রাহি ফিক করে হেঁসে দিয়ে বলে,,,

–‘এই কথাটা বলার জন্য এতোক্ষণ অপেক্ষা করায় কেউ, অবশ্যই হেল্প করবো আপনার যতোই হোক বিয়াই সাহেব বলে কথা!’

রাহির কথা শুনে মুচকি হাসে সাহফিফ।

#চলবে?

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৩২

🍁

রৌদ্রময় দুপুরে, ক্লান্ত ধরনীতে ক্লান্ত মানব মানবীরা নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে! সাথে যানবাহনের যাতায়াত তো আছেই।কেউ একজন নিষ্পলক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়েই মানুষের আনাগোনা দেখছে।

বাহিরের ঠান্ডা বাতাস সাথে তীব্র রৌদ্রের তাপ,কিন্তু মানবীটির শরীরে এসবের ইফেক্ট পরছে বলে মনে হচ্ছে না। সে এখনো নিষ্পলক চোখে তাকিয়েই আছে সেদিকে।

হঠাৎ ব্যাস্ত পায়ে গরমে ঘেমে নেয়ে আঁধার দৌড়ে এসে আরোহীকে এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলেও চুপচাপ এগিয়ে যায়!

পেছন থেকে কেউ একজন ঝাঁপটে ধরতেই আরোহীর ধ্যান ভাঙ্গে,হাতের মালিক কে সে ভালো করেই চেনে তাই মুচকি হেসে নিজের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দেয় আঁধারের বাহুডোরে।

–‘সরি!’

হাতের বাঁধন একটু মজবুত করে বলে আঁধার। আরোহী অবাক হয়,,,,

–‘কেনো?’

–‘এই যে আমি আসতে লেট করলাম, তুমি এখন ও না খেয়েই আছো আমার জন্য!’

হালকা হাসে আরোহী।

–‘কে বলেছে আমি না খেয়ে আছি!’

আরোহীর কথা শুনে আঁধার হালকা কেঁশেই বলে,,,

–‘আপনার বর বলেছে ম্যাডাম!’

–‘উনি তো এতোক্ষণ ছিলো না তাই আমি খেলাম কি না উনি কিভাবে দেখলো?’ উনি কি একটা চোখ বাসায় রেখে গেছিলেন নাকি?

আরোহীর কথা শুনে এবার শব্দ করে হেঁসে দেয় আঁধার।

–‘মনের চোখ দিয়ে ম্যাডাম,চলো এখন খাবে!’

আরোহী ছেড়ে দিয়ে কথাটি বলে আঁধার।

–‘ফ্রেস হয়ে নিন আগে তো!’

আরোহীর কথা শুনে বাঁকা হাঁসে আঁধার।

–‘তুমি থাকতে আমায় ফ্রেস হতে হবে কেনো!’

–‘তো আপনি কি চাচ্ছেন আমি আপনাকে ফ্রেস করিয়ে দেই!’

কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দেয় আরোহী, আঁধার যেনো আরও সুযোগ পেয়ে যায়!

–‘দিতেই পারো আমি আবার এসবে মাইন্ড করি না।’

আরোহীর কোমড় জড়িয়ে টেনে নিজের কাছে এনে বলে আঁধার। আরোহী চোখ মুখ কুঁচকে “অসভ্য ” কথাটি উচ্চারণ করে।

–‘আমি তো অসভ্যই, তবে এখনো তেমন কিছু করিনি কিন্তু যে অসভ্য বলছো!’ তুমি চাইলে করেই অসভ্য উপাধিটা গায়ে লাগাতে পারি।

শেষের কথাটা আরোহীকে চোখ টিপ দিয়ে বললো আঁধার। আরোহী একটা ভেংচি কেটে আঁধারের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।

–‘আপনি আর আপনার অসভ্যতামি,যান গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসেন আগে।’

–‘এটা কিন্তু ঠিক না আরুপাখি, অন্যান্য বউয়েরা বর যখন বাহির থেকে আসে তখন পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়,জড়িয়ে ধরে গাঁয়ের সাথে লেপ্টে থাকে!’ আর তুমি দূর দূর করছো।

মনটা একটু দুঃখী দুঃখী করেই কথাটা বলে আঁধার। আরোহীর এবার একটু মনটা গলে যায়,সে এগিয়ে এসে ওরনার কোণা দিয়ে আঁধারের মুখের গলার ঘামগুলো মুছিয়ে দেয়।

আঁধার ক্লান্ত চোখে এতোক্ষণ আরোহীর দিকে তাকিয়ে ছিলো,কিন্তু এখন আর নেই মুচকি মুচকি হাঁসছে সে! হুট করে আবার আরোহীর কোমড় জড়িয়ে ধরে বাঁকা হেসে বলে,,,

–‘এবার কোথায় পালাবে বউ!’

আরোহী হতভম্ব হয়ে যায়, বার বার এই লোকটার ফাঁদে সে না চাইতেও পাঁ দেয়।এবার ও তার ব্যাতিক্রম হয়নি,আঁধার যে এতোক্ষণ এক্টিং করছিলো সেটা তার ভোলা মন ধরতেই পারেনি।

–‘আপনি একটা বাজে লোক,ধূর ছাড়ুন তো।’

কটমট চাহনিতে আঁধারের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠে আরোহী। আঁধার শয়তানি হাঁসি হেঁসে বলে,,,

–‘আই নো,নতুন কিছু বলো!’

আরোহী নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট শুরু করে, কিন্তু আঁধার আরও শক্ত করে ধরে থাকে।

–‘উফফ এভাবে ছটফট করো না তো, নাহলে কিন্তু আমি অন্য কিছু করতে বাধ্য হবো!’ তুমি কি চাও সেটা এখন।

ব্যাস আঁধারের একটা কথাতেই আরোহীর ছটফট করা বন্ধ হয়ে গেছে।সে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে,আঁধার মুচকি হেসে আলতো হাতে বুকে জড়িয়ে নেয় তার প্রেয়শীকে।আরোহী নিজেও মুচকি হেসে আঁধারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

–‘এখন ভালো করে জড়িয়ে ধরো বুঝলে কাল থেকে আর সারাদিন কাছে পাবে না আমায়!’

আঁধারের কথায় অবাক হয়ে মাথা তুলে ভ্রুকুঁচকে তাকায় তার দিকে আরোহী। আঁধার হালকা হেঁসে বলে,,,

–‘কাল থেকেই অফিসে জয়েন করছি আমি আরু পাখি!’

–‘কিন্তু আপনার ভার্সিটি?’ আর ফাইনাল এক্সাম তো কিছুদিন পর?

–‘হুম জানি!’

আঁধারের কথায় অবাক হয় আরোহী, কি বলছে লোকটা?

–‘জানেন তাহলে তবুও…’

–‘হুস..’

আরোহীকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দেয় না আঁধার।

প্রায় অনেকটা সময় নিয়ে তার কপালে ওষ্ঠদ্বয় বসিয়ে রাখে আঁধার, আরোহী বিরক্ত হয় না তবে অবাক ও হয় না।হুট হাট আঁধারের এইসব কাজে এখন সে অভ্যাস্ত হয়ে গেছে।

চোখ বুঝে আরোহী ও কিছুক্ষণ অনুভব করে আঁধারের ভালোবাসার ছোঁয়া! কিছুটা সময় যাওয়ার পর আরোহী কপাল থেকে ওষ্ঠদ্বয় সরিয়ে নেয় আঁধার, তবে আরোহীর থেকে দূরে সরে না। আরোহীর চোখের দিকে তাকিয়ে এবার বলে উঠে আঁধার,,,

–‘আমার বউকে আর কতোকাল আব্বুর হোটেলে বসে খাওয়াবো বলো,নিজেকে ও তো কিছু একটা করতে হবে নাকি?’ লোকে যখন তোমায় জিজ্ঞেস করবে তোমার বর কি করে তখন কি বলবে বউ যে আমার বর সে তো বাবার হোটেলেই খায়।

আঁধারের কথা শুনে আরোহীর মুখের বুলি এবার ফুঁড়িয়ে যায়,আসলেই তো সে ব্যাপারটা ভেবে দেখেনি আগে।

আরোহীকে চুপ করে যেতে এবার তার দু’গাল নিজের দু-হাত দিয়ে আলতো করে ধরে বলে আঁধার,,,

–‘তুমি চিন্তা করো না,আমি ঠিক সামলিয়ে নিবো সব তবে সারাদিন তোমার থেকে দূরে থাকতে কষ্ট হবে আমার!’ তুমি না হয় হুট হাট ভার্সিটি থেকে আমাদের অফিসে গিয়ে আমায় চমকে দিয়ো আরুপাখি।

শেষের কথাটা উৎফুল্লের সহিত বলে আঁধার, আরোহী আঁধারকে যতোই দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে।

একটা মানুষ এতোটা ভালো কি করে হতে পারে,এই যে সবসময় আরোহীর খেয়াল রাখা,পরিবারের সকলের খেয়াল রাখা,সকলের সাথে আড্ডা দেওয়া, ভার্সিটিতে যাওয়া,নিয়ম করে আরোহীকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা কখন কি লাগবে তার খেয়াল রাখা আবার এখন অফিস।

ছেলে মানুষের জীবনটাই হয়তো সকলকে সামলো থেকে শুরু করে সকলের প্রয়োজন হওয়া অব্দি সব করতে হয়।তাহলে তারা নিজেরা কখন নিজের কথা ভাববে?

এই তো আঁধার আগে বাবা মায়ের খেয়াল রাখতো এখন আরোহী এসে যুক্ত হয়েছে তাই তার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে।যখন তাদের বাচ্চা হবে তখন আরও দায়িত্ব বেড়ে যাবে,বাচ্চা আদোও কি সেটা সম্ভব।

হু সম্ভব, তবে আঁধারের মতে তার বউ এখনো নিজেই বাচ্চা।

–‘কি ভাবছো আরু?’ যাবে না আমায় দেখতে?

–‘হু হু!’

–‘কি হু হু করছো?’

ভ্রুকুঁচকে বলে আঁধার।

–‘না কিছু না, কি বললেন আপনি?’

অদ্ভুত চোখে আঁধারকে তার দিকে তাকাতে দেখে ভড়কে যায় আরোহী।

–‘না মানে..’

–‘থাক কথা ঘুরাতে হবে না, তা কি এতো ভাবছিলেন ম্যাডাম?’

–‘কিছু না আঁধার চলুন ফ্রেস হবেন, খেতে হবে তো!’

আঁধার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নাড়ায়, আরোহী একটা টাওয়াল এনে আঁধারের হাতে ধরিয়ে দেয়।আঁধার একপলক আরোহীর দিকে তাকায়,আরোহী যখন তাকায় তখন আঁধার টুপ করে একটা চুমু দেয় আরোহীর গালে।

আরোহী হেঁসে ফেলে, আঁধার ততোক্ষণে হওয়া মানে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।

!
!

আলিশা মুখ গোমড়া করে বসে আছে আর আদর অপলক তাকিয়ে আছে আলিশার পেটের দিকে।শুধু তাকিয়েই আছে না দু-হাত দ্বারা আগলিয়ে বসে আছে।

–‘উফফ আদর হাত সরাও তো!’

–‘আরে আশা বেইবি চুপ করো তো আমার বাচ্চারা কিক মারবে তারই অপেক্ষায় আছি আমি তোমার পেট থরি না ধরে আছি!’

আদরের কথা শুনে ভ্রুকুঁচকায় আলিশা,এই বেইবি শব্দটা আদর যখন তাদের রিলেশন ছিলো তখন ব্যাবহার করতো তারপর আর এই শব্দটা তার মুখে শুনেনি। আজকে হঠাৎ বললো কেনো?

–‘আরে হাত সরাও তো অদ্ভুত লোক একটা!’

আদরের হাত সরিয়ে দিয়ে বিরক্তের সহিত কথাটা বলে আলিশা।আদর অবাক হয় কিছু বলবে আর আগেই আলিশা নিজেই বলে উঠে,,,

–‘ভুলেও বলবে না যে তুমি আমার পেটে হাত দেও নি।’

আদর ঢোক গিলে মনে মনে ভাবে হঠাৎ এতো রেগে গেলো কেনো?

–‘আরে আশা বেইবি…’

বালিশ ছুঁড়ে মারে এবার আদরের দিকে আলিশা,তাই আদর আর কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারে না।

–‘আর একবার বেইবি বেইবি করবি তো ওই যে ফুলদানিটা দিয়ে তোর মাথা ফাটিয়ে দিবো!’

ফুঁসতে ফুঁসতে বলে আলিশা।

–‘আরে বেইবি আমি তো..’

সত্যি সত্যি এবার ছুঁড়ে মারে আলিশা তবে ফুলদানি না হাতের ফোনটা আর সেটাও আবার আদরেরই।আদর ক্যাচ ধরে নেয় চট জলদি! শুকনো ঢোক গিলে বলে,,,

–‘বে….’

আলিশার চোখের দিকে তাকিয়ে সামান্য হেঁসে বলে,,,

–‘না মানে কি হয়েছে বেইবি!’

বলেই মুখ চেপে ধরে নিজের আদর,আর আলিশা ফুঁসতে ফুঁসতে যা পাচ্ছে সেটাই ছুঁড়ে দিচ্ছে আদরের দিকে।

–‘তোর বেইবির গুষ্টির সস্ঠি পুঁজো করি গাধা!’

–‘আরে কি হয়েছে বলবে তো, উফফ আশা থামো তো!’ আরে আশা…

কারো উচ্চস্বরে হাসির আওয়াজে দু’জনে থেমে যায়,একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসির উৎস খুঁজতে দরজার কাছে আরোহীকে লেপ্টে হাসতে দেখে অবাক হয়ে যায় দু’জনে। কিন্তু আরোহী কি সে তো হাসতেই ব্যাস্ত।

হাঁসতে হাঁসতেই আরোহী এবার এগিয়ে আসে,আদরকে সরিয়ে দিয়ে আদরের যায়গায় নিজে বসে আবার হাঁসতে শুরু করে।আলিশা আদরের দিকে তাকায়, আদর আরোহীর দিকেই তাকিয়ে ভাবছে আসলে আরোহী হাসছে কেনো?

প্রায় অনেকক্ষণ পর আরোহী থেমে যায়,আলিশা ও আদরকে নিজের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে আবার হাসতে শুরু করে।আলিশা এবার একটা বালিশ ছুঁড়ে মারে আরোহী দিকে।আরোহী মনে হয় অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে নেয়!

–‘আরে ভাইয়া আপু তোমায় বেইবি ওরফে বেবি শব্দটা ইউস করতে বারন করেছে আর তুমি কি না ঘুরে ফিরে ওই এক কথাতেই আঁটকে আছো!’ আশা বেইবি…

শেষের কথাটা কিছুটা টেনে টেনে বলে আবার হাসিতে লুটোপুটি খায় আরোহী।

আলিশা এবার কড়া চোখে আদরের দিকে তাকায়, যার অর্থ “বলদ আমি এতোক্ষণ একজন্যই এমন করছিলাম”। আদর মাথা চুলকে সামান্য হাসার চেষ্টা করে। আরোহী নিজের হাসি থামিয়ে বলে,,,

–‘ভাইরে ভাই তোমাদের কাহিনি দেখে ভালোই মজা লাগে আমার, ফ্রিতে বিনোদনের জন্য তোমাদের তো অস্কার দেওয়া উচিত।’

–‘হ্যা ওই অস্কারটা আগে আপনার গলায় ঝুলানো উচিত ম্যাডাম!’

দরজার বাহির থেকে কথাটা বলে আঁধার, তিনজনেই এবার সেদিকে তাকায়।

–‘আরে ভাই তুই বাহিরে কেনো ভেতরে আয়!’

–‘হ্যা হ্যা ভাইয়া ভেতরে এসো না!’ তোমার বউ তো এতোক্ষণ হেঁসে লুটোপুটি খাচ্ছিল সে আর কি বলবো!

আলিশার কথা শুনে আরোহী চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় আলিশার দিকে।

–‘এখন না পরে এসে আড্ডা দিবো, খিদে লেগেছে প্রচুর সকাল থেকে এখনো খাওয়া হয়নি!’

কথাটা বলেই চলে যায় আঁধার আর আঁধারের কথা শুনে তার পেছনে পেছনে ছুটে যায় আরোহী। ইনডাইরেক্টলি আঁধার যে তাকেই ডেকে গেলো সেটা কেউ না বুঝলেও সে বুঝেই পেছন পেছন চলে গেলো।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে