নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি পর্ব-৩০

0
671

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৩০

🍁

–‘এই যে বড় বউ রান্না বান্না কিছু পারো নাকি শুধু স্বামীকেই আঁচলে বাঁধতে পারো!’

আঁধারের জন্য পানি নিতে এসেছিলো আরোহী কিন্তু মাঝপথে বড় মামী শাশুড়ীর কথা শুনে পাঁ জোড়া থেমে যায় তার। ধির কন্ঠে বলে উঠে,,,

–‘টুকটাক পারি!’

–‘টুকটাক পারলে তো আর হবে না ভালো করে পারতে হবে,এখন আমায় বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়াও তো দেখি!’

মামী শাশুড়ীর কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলে আরোহী, বিরিয়ানি রান্না করবে সে এখন,,,,

–‘আচ্ছা!’

আরোহীর কথা শুনে সুরাইয়া বেগম অর্থাৎ তার মামী শাশুড়ী তার আগা গোড়া একবার পরক্ষ করে নেন। তার পর বলেন,,,

–‘আমি কি দাঁড়ায় দাঁড়ায় দেখবো বড় বউ! ‘

আরোহীর এবার ভয়ে হিচকি উঠে যায়,এই মহিলা এতো চালাক!এরইমধ্যে উপর থেকে আঁধারের চিৎকার আসে আরোহীর নাম ধরে।আরোহী তড়িঘড়ি করে গ্লাসে পানি ঢেলে উপরের দিকে ছুট লাগায়।সুরাইয়া বেগম চোখ মুখ কঠিন করে বিরবির করে বলেন,,,

–‘শিক্ষা দিক্ষা কিছুই নেই দেখছি এই মেয়ের, বড় ডেকে উঠলো ওমনি চলে গেলো!’ আমায় দেখছি মানলোই না।

–‘একা একা কি কথা বলছেন বড় ভাবি?’

জমিলা বেগমের কথা শুনে সুরাইয়া বেগম হতাশার স্বরে বলেন,,,

–‘বুঝলি মেঝো আঁধারের মতো হীরার টুকরা ছেলেটার বউয়ের কি না শিক্ষা দিক্ষাই নাই।’

–‘কি যে বলেন না বড় ভাবি, আরোহী নিজেও তো হীরার টুকরা একটা মেয়ে! ‘ কি সুন্দর তার ব্যাবহার, কথা বার্তা কতো সুন্দর।

–‘তোরা এতো বছরের ও মানুষ চিনতে শিখলি না রে জমিলা।’

কিছুটা আপসোস স্বরে কথাটি বলেই সুরাইয়া বেগম সোফায় গিয়ে বসে পড়ে, কিন্তু জমিলা বেগম অবাক হয়ে তাকায় তার যাওয়ার দিকে।

এই যে সুরাইয়া বেগম যিনি তার বড় জা,মানুষটি খিত খুঁতে স্বভাবের হলেও মনের দিক দিয়ে অনেক পরিষ্কার একজন মানুষ। সকলকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু কোন এক কারণে আরোহী ও আলিশার ক্ষেত্রে তিনি একটু দৃঢ় ব্যাবহার করছেন।

তারা মোট তিন জা! এই তো সুরাইয়া বেগম বড় তিনি হলেন আঁধারের বড় মামা অর্থাৎ বাদল রাশেদিনের বউ, তারপর জমিলা বেগমের স্বামী বশির রাশেদিন আর তার পর আয়েশা বেগমের স্বামী বাঁধন রাশেদিন।

দুপুরে আরোহী রান্না করবে, তবে কিভাবে কি করবে বুঝতে পারছে মা।আঁকলিমা চৌধুরী বার বার বারণ করার পরও আরোহী শুনেনি! তার মতে বড় মামীকে প্রমাণ দেওয়ার এইটায় সুযোগ তবে, এখন নিজের কাজে নিজেই ফেঁসে গেছে।

সুরাইয়া বেগম ড্রয়িং রুমে বসে আছে, আঁধার কি একটা কাজে বাহির গেছে। তাই তিনি আরোহীকে দিয়ে রান্না করানোর সুযোগ পেয়েছেন।

আরোহী কি করবে ভেবে না পেয়ে যখন চালে হাত দেয় তখনই কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে যায়।ঘুরতেই লিমার হাসি মুখটা দেখে সামান্য হাসার চেষ্টা করে আরোহী।

লিমা খুব সাবধানে আরোহীকে একটা ছোট কাগজ দিয়েই চলে যায়।আরোহী খুলে দেখে কিভাবে কি করতে হবে সবটায় লেখা আছে। তাই খুব সাবধানের সহিত কাগজটা রেখে কাজে লেগে পড়ে।

পার্কে মাথা নিচু করে বসে আছে রাহি, আর তার সামনে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিহাব।

–‘কাল রাতের ডোজ কি কম হয়ে গেছিলো যে আজকে আবার একই ভুল করছো!’

শক্ত কন্ঠে কথাটা বলেই ধপ করে রাহির পাশে বসে পড়ে শিহাব।রাহি একটু সরে বসে, কিন্তু শিহাবের মনে হয় সেটা সহ্য হয় না তাই একটা হাত রাহির কোমড়ে দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে গাঁ ঘেসে বসিয়ে দেয় তার।রাহির অসস্তি হয়,মেয়েটা এবার খানিকটা বিরক্ত ও হয় বটে।

–‘ছাড়ুন সবাই দেখছে!’

–‘কেউ দেখছে না, তোমার নিজের দোষের জন্যই আজকে এইসব সহ্য করছো তুমি!’

বিরক্ত হয়ে বলে শিহাব।রাহি মাথা নিচু করে নেয়,মিনমিন করে বলে,,

–‘আমার মনে হয় আমাদের সবকিছু এখান থেকেই শেষ করা উচিত শিহাব!’

শিহাব কিছু বলে না কিন্তু আরও খানিকটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,,,

–‘কারণ!’

–‘কোন কারণ নেই শিহাব, তবে সবকিছু শেষ করাই উচিত!’

–‘কারণ বল!’

চোয়াল শক্ত করে বলে শিহাব।

রাহি ধির কন্ঠে বলে,,

–‘জানিনা তবে আমার মনে… ‘

আর কিছু বলতে পারে না রাহি তার আগেই চিৎকার করে বলে উঠে শিহাব,,,,

–‘কারণ বলতে বলছি না তোকে,কারণ বল!’

একটু থেমে আবার বলে,,,

–‘একদম নাটক করবি না চুপচাপ কারণ বল!’

বলেই আসে পাশে তাকায়,অনেক মানুষ তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। রাহি চোখের জ্বল মুছে বলে,,,

–‘আমি আপনাকে ভালোবাসি না!’

ব্যাস একটা কথায় যথেষ্ট ছিলো শিহাবের রাগকে আকাশে তুলে দেওয়ার জন্য। শক্ত হাতে রাহির গালে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়।রাহি সামান্য হেলে পড়ে,কিন্তু এক হাত দিয়ে শিহাব ধরে রাখার জন্য পড়ে যায়নি বেচারি। ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে গেছে অলরেডি তার।মাথা ঝিমঝিম করে উঠে তার।কিছু বোঝার আগেই শক্ত হাতে তার গাল চেপে ধরে বলে শিহাব,,,

–‘গেট রেডি,সামনে যেটা হবে সেটার জন্য তুই দ্বায়ি থাকবি!’

বলেই হাত ধরে হনহনিয়ে সামনে এগুতে থাকে, আর ফোনে কিছু একটা করতে থাকে।

শিহাবের ব্যাবহারে রাহি কষ্ট পায়, কিন্তু বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না। হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায় শিহাব, ফোনে শুধু বলে,,

–‘সবকিছু রেডি কর কয়েক মিনিটের মধ্যে।’

বলেই ফোন কেটে, রাহিকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে স্টার্ট করে। গাড়ির ইঞ্জিন চালু হওয়ার সাথেই হেলে পড়ে কিছুটা সামনের দিকে রাহি।ব্যাথা পায়,কিন্তু শিহাব ধরেও না কিছু বলেও না।

কয়েক মিনিটে গাড়িটি থেমে যায়,রাহি চোখ তুলে একবার শিহাবের দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগে আবার তাকে বের করে টানতে টানতে সামনে নিয়ে যায়।সামনে নজর যেতেই কলিজা কেঁপে উঠে রাহির, সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা কাজি অফিস।

শুঁকনো ঢোক গিলে রাহি, শিহাব এবার থেমে যায় রাহির দিকে তাকিয়ে কঠোর কন্ঠে বলে,,,

–‘ভেতরে গিয়ে নাটক করবি না, চুপচাপ কবুল বলে দিবি নাহলে আমি কি করতে পারি তোর নিশ্চয়ই ধারণা আছে!’

–‘অসম্ভব!’

–‘আর এক বার বল কি বললি?’

এবার সামান্য হাসার চেষ্টা করে রাহি কিন্তু কাজে দেয় না,ভেতরে নিয়ে গিয়ে তাকে বসিয়ে দেয়। রাহি এক পলক সকলের দিকে তাকায়,আরোহী বাদে আঁধার থেকে শুরু করে নীলি, সোহেল সবাই আছে। বাহ তার মানে এসবই রেডি করতে বললো তখন লোকটা বাজে লোক একটা।মনে মনে শ খানেক গালি দেয় শিহাবকে রাহি।কি আর করার বিয়েটা হয়ে যায়।আঁধার শিহাবের পিঠে চাপড় মেরে বলে,,

–‘শালা একা একা বিয়ে করলি, তোর আদরের বোন শুনলে তো খবর আছে তোর!’

শিহাবের এবার আরোহীর কথা মনে হয়,শুকনো ঢোক এবার শিহাব গিলে নেয় তার এতোক্ষণ মনেই ছিলো না আরোহীর কথা।

#চলবে?

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃসারপ্রাইজ(১)

🍁

বিকেলে আঁধার বাড়ি ফিরতেই বাসার সবাইকে ড্রয়িং রুমে কাউকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রুকুঁচকে এগিয়ে যায়।

–‘কি হচ্ছে এখানে?’

আঁধারের গম্ভীর কন্ঠে বলা কথাটি যেনো সকলের কানের পর্দা ভেদ করে ঢুকতেই সকলের পিলে চমকে উঠে। আঁকলিমা চৌধুরী শুকনো ঢোক গিলে, তার যে ছেলে না জানি এখন কি করে ভেবেই তিনি বসা থেকে দাঁড়িয়ে আঁধারের কাছপ এগিয়ে যান, আঁধার তার মায়ের থমথমে গম্ভীর মুখ জোড়া দেখে ভ্রুকুঁচকায়।

–‘কি হয়েছে আম্মু!’ আর তোমরা এভাবে কাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছো?

আঁধারের কথা শুনে কিছুটা ঢোক গিলে আঁকলিমা চৌধুরী বলেন,,,

–‘দেখ আঁধার আমি এখন যেটা বলবো সেটা শুনে মাথা গরম করবি না, শান্ত থাকার চেষ্টা করবি।’

আঁধার সন্দেহের দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকায় এবার, মিসেস আঁকলিমা চৌধুরী আমতা আমতা করে বলে,,,

–‘আরো মায়ের হাত পুড়ে গেছে!’

–‘কিহ!’ কোথায় ও এখন?

আঁধারের চিৎকারের ঢোক গিলে আঁকলিমা চৌধুরী বলেন,,,

–‘আঁধার!’

তার কথা আর শুনার প্রয়োজন মনে করলো না আঁধার, সামনে এগিয়ে আসলো, সামনে এগোতেই সোফায় গুটিশুটি মেরে ব্যান্ডেজ লাগানো হাতে আরোহীকে নজড়ে পরলো তার।

বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথার আভাস পেতেই কাউকে পড়োয়া না করেই ছুটে গিয়ে অস্থির হয়ে আরোহীর হাতটা ধরে অবাক হয়ে বললো,,,

–‘এতো বড় ব্যান্ডেজ কেনো?’ তার মানে হাতটা প্রায় অর্ধেকই পুরে গেছে,কিভাবে হলো? তুমি ঠিক আছো?

আরোহীকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে বিচলিত হয়ে যায় আঁধার।

–‘আরুপাখি তোমার হাতে কি অনেক বেশি পেইন করছে,ডাক্তার ডাকবো?’ কোথায় পেইন হচ্ছে বলো? চলো তোমায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।

আঁধারকে দেখে প্রথমে আরোহী ভয় পেলেও এখন বুকটা প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছে। প্রিয় মানুষের একটু ভালোবাসায় নারীরা গলে যায় কথাটা এতোদিন শুনেছিলো আরোহী তবে আজকে বুঝতে পারছে কথাটার মর্ম।

এই তো আঁধার নামক শক্ত কঠিন মানুষটার ভেতরে তার প্রতি এতো অস্থিরতা দেখে অনেক ভালো লাগছে আরোহীর।মুচকি হাসে আরোহী, ভালোবাসার মানুষ হয়তো একেই বলে।

–‘কি হলো তুমি হাসছো কেনো,কিছু জিজ্ঞেস করছি না তোমায়?’

আরোহী এবার নিজের মুখটাকে একটু কাঁদো কাঁদো করার চেষ্টা করে, কিন্তু কেনো জানি না তার কান্না পাচ্ছে না!

কান্নারা ও হয়তো তাকে বলছে, ” আরোহী আজকের মতো আমাদের ছুটি, আজকে তুই বরং হাসিকেই ধরে রাখ!” স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে উঠে আরোহী এবার,,,

–‘আমি ঠিক আছি ডাক্তার দেখে গেছেন তো!’

–‘সত্যি তুমি ঠিক আছো,আমার দিকে তাকিয়ে বলো তো?’

–‘হুম!’

আঁধারের দিকে এক পলক তাকিয়ে শুধু হুম বলে চুপ হয়ে গেলেও, আঁধার যেনো এতে সন্তুষ্টি পেলো না।তবে হঠাৎ করেই তার মনে হলো সকলে আছে এখানে তাই আর কিছু বললো না,তবে হুট করেই একটা প্রশ্ন করে ফেললো,,,,

–‘এক সেকেন্ড, হাতটা পুরলো কিভাবে?’

আঁধারের প্রশ্নে সকলে চুপসে গেলো,আলিশা কিছু একটা বলার জন্য উসখুস করছে তবে বড়দের জন্য সাহস পাচ্ছে না।

–‘কি হলো,কেউ কিছু বলছো না কেনো?’ আরু হাত পুরলো কিভাবে তোমার রান্না করছিলে তুমি?

আঁধারের কথায় জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় আরোহী, আঁধার সন্দেহের দৃষ্টিতে সকলের দিকে তাকায়! কাউকে কিছু না বলতে দেখে হঠাৎ আঁধারের নজর যায় লিমার দিকে, সে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে!

–‘এই লিমা এদিকে আয়!’

আঁধারের ডাকে লিমা এক ছুটে এসে আঁধারের সামনে দাঁড়ায়, মনে হয় এতোক্ষণ সে আঁধারের ডাকেরই অপেক্ষায় ছিলো।

–‘বড় ভাইজান বড় বউমনি রান্না করতে গেছিলো বিরিয়ানি, তবে সে নিজে থাইকা রান্নাঘরে যায় নাই আপনার বড় মামী তাকে রান্না করতে বলছিলো!’ বিরিয়ানি রান্না করতে বড় বউমনি পারে না আমি একটা চিরকুটে লিখে দিয়েছিলাম তবে সেডাও আপনার বড় মামী দেখে ফেলেছিলো তিনি বউমনির থাইকা চিরকুটটা কাইড়া লইয়া যান।আর বউমনি মনে করছিলো পানি দিয়েই রান্না করতে হবে,গরম পানি উঠাইতে গিয়া পানির পাতিল উল্টে হাতে পইড়া গেছে গাঁ।

এক নিঃস্বাসে কথা গুলো বলেই দম ছাড়ে লিমা।আঁধার চোয়াল শক্ত করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।

আঁধারের বড় মামীর ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়, আঁধার মানেই তার কাছে ভয়ংকর! একবার তার মেয়ে আঁধারকে শুধু বলেছিলো সে তাকে পছন্দ করে।

সাথে সাথেই আঁধার তাকে টানা তিনটা থাপ্পড় মেরে সকলের কাছে এনে ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলো, এই ভুল যেনো দ্বিতীয় বার না হয়।তখন থেকেই তিনি মেয়েকে সাবধান করেছিলেন আর নিজেও সাবধানে থাকেন, কিন্তু আজকের ব্যাপারটা এতোটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে তার ধারণার বাহিরে ছিলো এটা।

আঁধার তার বড় মামীর দিকে তাকাতেই তিনি মাথা নিচু করে নেন,হয়তো অপরাধবোধে নয়তো বা লজ্জায়! আঁধার আর কাউকেই কিছু বলে না,শুধু মাত্র আলিশার দিকে তাকিয়ে একবার বলে,,,,

–‘আলিশা তোমার বোনকে ঘরে গিয়ে রেস্ট নিতে বলো,তার এখন রেস্টের প্রয়োজন!’

কথাটি বলেই গটগট করে উপরে চলে যায়,সবাই অবাক হয়।আঁধার যে ছেলে তার বর্তমানে বাড়ি মাথায় উঠানোর কথা কিন্তু সে কিছু না বলেই চলে গেলো? এটা ও কি সম্ভব!

রাহি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে, আর শিহাব বিরক্ত না হয়ে ড্যাব ড্যাব করে রাহির কান্না দেখছে।রাহি একবার শিহাবের দিকে আড় চোখে তাকায়,কিন্তু শিহাবকে এভাবে ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকাতে দেখে ঠোঁট উল্টে আবার ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কেঁদে উঠে।

কিন্তু শিহাব নামের পাষাণ লোকটার মায়া হয় না! সে তখন ও একইভাবে তার নতুন বউয়ের দিকে তাকিয়ে তাকে খুঁটিয়ে খাঁটিয়ে দেখতে ব্যাস্ত।রাহি নিজেই বিরক্ত হয়ে কান্না থামিয়ে কটমট চাহনিতে শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

–‘ আমি কাঁদছি!’

এবার একটু নড়েচড়ে বসে শিহাব, শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে বলে,,,

–‘দেখছি তো!’

রাহি এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,

–‘তো কান্না কি দেখার জিনিস আজব,কান্না থামানোর চেষ্টা করবেন না?’

–‘না!’

শিহাবের নির্লিপ্ত শিকার রক্তি! রাহির এবার সম্পূর্ণ শরীর রাগে জ্বলে ওঠে।

–‘আমি থাকবো না আপনার সাথে, বিয়ে করেছেন দেখে ভাববেন না আমি মেনে নিয়েছি!’

–‘আচ্ছা!’

আবার একই ভঙ্গিতে যখন কথাটি বললো শিহাব রাহি হতভম্ব হয়ে যায়। একটু আগেই লোকটা তাকে জোড় করে বিয়ে করলো আর এখনই কি না বলছে আচ্ছা! এ তো গিরগিটির যমজ ভাই!

কটমট করে শিহাবের দিকে তাকিয়ে এবার উল্টো দিকে ঘুরে বসে রাহি,শিহাব সামান্য হেঁসেই পেছন থেকে রাহিকে জড়িয়ে ধরে। কেঁপে উঠে রাহি,বুকের ভেতর মনে হয় কেউ একজন ঢোল বাজাচ্ছে তার।

–‘ভালোবেসে ধরছি না তাই এতো কাঁপা কাঁপি বন্ধ করো,আমি ভুলিনি তুমি আমায় কি কি বলেছিলে সকালে!’

–‘তাহলে বিয়ে করলেন কেনো?’

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রাহি।

–‘তোমায় নিজের করে নেওয়ার জন্য, পুরো তুমিটাকেই এই শিহাব চৌধুরীর নামে করার জন্য!’

হাতের বাঁধন শক্ত করে বলে উঠে শিহাব।

হালকা হাঁসে রাহি,হেঁসেই বলে,,,

–‘চৌধুরী?’

–‘ইয়েস ম্যাডাম,আই আ’ম সান অফ তৌহিদ চৌধুরী এন্ড শিরিন চৌধুরী।’ এন্ড ব্রার্দার অফ তাশরিফ আঁধার চৌধুরী এন্ড তৌহিদুল আদর চৌধুরী।

শিহাবের কথা শুনে রাহি অবাক হয়ে ঘুরে বসার চেষ্টা করে কিন্তু শিহাব সেটা করতে দেয় না।

–‘উহু নড়ে না,ওভাবেই যা বলার বলো!’

–‘এতোদিন বলেন নি কেনো আপনি আঁধার ভাইয়ের ভাই?’

–‘বলার প্রয়োজন মনে করি নি তাই,তবে বাকি সবাই জানে আমি ও আঁধার চাচাতো ভাই!’ তবে মজার ব্যাপার কি জানো আমাদের জন্ম দিন কিন্তু একসাথেই।তাই আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড ও। এখন তোমার প্রশ্ন হতে পারে তাহলে একসাথে থাকি না কেনো? আব্বু আর বড় আব্বু মানে আঁধারের আব্বুর মাঝে কি নিয়ে জানি ঝামেলার কারণে আমরা চৌধুরী ভিলা থেকে বর্তমানে আমাদের ফ্লাটে থাকি।তবে তাদের মাঝের ঝামেলার কারণ এখন অব্দি কেউ খুঁজে বের করতে পারিনি।তবুও আঁধার আর আমার ভালোবাসা কখনো কমেনি, আমি আঁধারদের বাসায় গেলে বড় মা আমাকে যেমন ভালোবাসে আঁধার আমাদের বাসা গেলেও তেমন ভালোবাসায় পায়।আঁধার আর আমি ভাবছি এবার অন্তত্য আব্বুদের মাঝে সবঠিক করে দেওয়া উচিত।অনেক তো হলো আর কতো? তাই দেখি কি করা যায়।

শিহাবের কথা শুনে রাহির মাথা পুরোই হ্যাঙ্গ হয়ে যায়,বাপ রে বাপ এতো কাহিনি এদের।

–‘এখন আপনি বলেন তো ম্যাডাম আপনার কি কাহিনি,কেনো এমনটা করলেন আমার সাথে?’

শিহাবের কথা শুনে এবার রাহি চমকে উঠে, কিন্তু কিছু না বলেই শিহাবের দিকে ঘুরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে! শিহাব নিজেও আর কিছু না বলে প্রেয়শীকে শক্ত করে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে।

তার বুকের ভেতরটা অনেকটা শান্ত হয়ে যায়,এই যে তার বুকে থাকা মেয়েটা তার নিশ্বাসের সাথে জড়িত অথচ এই মেয়েটাকে সে আজকে মেরেছে।

টুপ করে একফোঁটা জ্বল গড়িয়ে পড়ে রাহির চুলে,সাবধানতার সহিত মুছে নিয়ে রাহির মাথায় একটা চুমু দিয়েই ভাবতে থাকে রাহির সাথে তার প্রেমের শুরুর সবকিছু।

অতীত,,,,

চার মাস আগে, একদিন রাহিকে রাস্তার পাশে একা মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখেছিলো তখন প্রথম বারের মতো শিহাবের কেনো জানি না রাহির মলিন মুখটি দেখে খারাপ লেগেছিলো।

সেদিন কিছু বলে নি কারণ এমনি তেও মেয়েটা যখনই তাকে দেখে তখনই কিছু না কিছু বলে জ্বালায় হয়তো সোয়ামী সোয়ামী করে আগে পিছে ঘুরঘুর করে শিহাবের বিরক্ত লাগতো আগে কিন্তু এখন বিরক্তের সাথে সাথে সে নিজেও রাহির সাথে কোমড় বেঁধে ঝগড়া করে।

চুপচাপ চলে যায় সেদিন শিহাব কিন্তু পরের দিন ও একই ঘটনা দেখে ভার্সিটিতে তাই নিজে থেকে রাহিকে একটু জ্বালাতে যায়,অবশ্য সে সফল ও হয় সেদিন।

রাহি মন খারাপ ছেড়ে কোমড় বেঁধে ঝগড়া করে, একসময় রাহি ঝগড়ায় না পেরে টুপ করে শিহাবের গালে একটা চুমু দিয়ে পালিয়ে যায়।হতভম্ব হয়ে যায় শিহাব,আঁধারা পুরোই হাঁ হয়ে যায়! রাতুল তো লাফিয়েই বলে ফেলে,,,

–‘ছেলে হও তো এ্যাছা,যাকে কিনা রমনীরা নিজে থেকেই চুম্মা চুম্মি দেয়!’

তারপর শিহাবের পিঠে চাপড় মেরে রাতুল আবার বলেছিলো,,,

–‘তোর মতো হ্যান্ডু হ্যান্ডু ছেলে ঘরে ঘরে হওয়া উচিত, তুই তো ছেলে জাতির নাম উঁচুতে নিয়ে যাবি!’ তার আগে তো আঁধার নিয়ে গেছেই,তাকে তো একেবারে আরোহী আফু প্রথম দিনেই খাইয়া লইছে!

সেদিন রাতুলের কথা শুনে সকলে নাক ছিটকিয়ে ছিলো,ছেলেটার কথা বার্তা তাদের কাছে অশ্লীল ছাড়া কিছুই মনে হয় না।তবে পড়ে ধিরে ধিরে রাহির করা কাজ গুলোতে শিহাব নিজেও আসক্ত হয়ে যায়।

অবশেষে বুঝতে পারে রাহির প্রতি তার ভালোবাসা।তবে রাহিকে প্রপোজ করা হয়নি তার! আর রাহি সে তো প্রথম দিন থেকেই শিহাবের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে,তাই তো শিহাবের আগে পিছে ঘুরাঘুরি করতো সবসময়।

এইতো চারমাস আগে যখন বুঝতে পারলো সে শিহাবকে ভালোবাসে তখন থেকেই শিহাবকে ইমপ্রেস করার মিশন স্টার্ট করেছিলো।



আরোহী রুমে আসতেই দেখে আঁধার চোখ বন্ধ করে আধ সোয়া হয়ে আছে,অবাক হয় আরোহী! ধিরে ধিরে আঁধারের মাথার কাছে গিয়ে বসে পড়ে, ভালো হাতটা দিয়ে আঁধারের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

ঝট করে চোখ খুলে তাকায় আঁধার, তবে আজকে আর আরোহী হাত সরিয়ে নেয় না।আঁধার এবার আলতো হাতে আরোহী নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে! আরোহী নিজেও চুপটি করে সুয়ে থাকে,আঁধার গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,

–‘তুমি কিছু বলো না কেনো মামী কে আরুপাখি?’

–‘উনি তো গুরুজন আঁধার! ‘

–‘তাই বলে এভাবে তোমায় কষ্ট দিবে?’ আজকে যদি তোমার কিছু একটা হয়ে যেতো?

–‘উনি জানতো না তো আমি রান্না পারিনা তাই,বাদ দেন না যেটা হওয়ার হয়ে গেছে!’

–‘হয়ে গেছে বলছো,তোমায় এই অবস্থায় দেখতে আমার যে কষ্ট হচ্ছে সেটা কি তুমি বুঝতে পারছো না আরুপাখি?’

আঁধারের কথা হাসে আরোহী, হেঁসে আরও শক্ত করে আঁধারকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু এবার আর আঁধার ধরে না।আরোহীকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,,,

–‘রেডি হও তোমায় ও বাড়িতে রেখে আসবো!’

–‘মানে?’

–‘মানে মামী যতোদিন আছে তুমি ওই বাসায় থাকবে এটাই ফাইনাল!’

শক্ত কন্ঠে বলে আঁধার। আরোহী হতভম্ব হয়ে যায়, আঁধার হঠাৎ করেই এসব কি বলছে তাকে।

–‘আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে, উনি না জেনেই বলেছেন করতে আমায়!’ উনি শুনলে খুব কষ্ট পাবে আঁধার।

মলিন কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠে আরোহী।

–‘সেটা তোমার ভাবতে হবে না যেট বললাম সেটাই করো,আমার কথার উপরে কথা বলবে না মেজাজ খারাপ হয়!’

–‘কিন্তু…’

–‘কথা কানে যায় না তোমার?’

আঁধারের চিৎকারে কেঁপে উঠে আরোহী, অজান্তেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি বের হয়ে যায় আরোহী। আঁধার যেনো দেখেও না দেখার মতো করে উল্টো দিকে ঘুরে কিছুটা নরম কন্ঠে বলে,,,

–‘চোখের পানি মুছে নেও,আগেই বলিনি আমার সামনে কাঁদবে না!’

আসলে আরোহীর কান্না দেখে আঁধারের ও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই এখন!

চোখের পানি মুছে নেয় আরোহী। ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলে উঠে,,,

–‘প্লিজ আঁধার!’

–‘রাগীয়ো না আমায় যেটা বললাম করো!’

শান্ত কন্ঠে বলে উঠে আঁধার। আরোহী আর কিছু বলে না, আঁধারের শান্ত কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারছে আঁধার রেগে যাচ্ছে! উপায় না পেয়ে ওভাবেই পার্স নিয়ে রাগে, কষ্টে,দুঃখে বের হয় আরোহী।

গটগট পায়ে হেঁটে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় সে,আঁধার আরোহীকে ওভাবে বের হতে দেখে চোয়াল শক্ত করে নিজেও এগিয়ে যায়।

আঁকলিমা চৌধুরী আরোহীকে এভাবে বের হতে দেখে বলেন,,,

–‘কি হয়েছে মা তুই এভাবে কোথায় যাচ্ছিস?’

–‘তোমায় পড়ে বলছি আম্মু, আরু চলো!’

নিচে নামতে নামতে কথাটা ব’লেই আরোহীর হাত ধরে বের হয়ে য়ায় আঁধার। আঁকলিমা চৌধুরী হতবাক হয়ে তাদের যাওয়া দেখে।

গাড়িতে আর কেউ কারো সাথে একটা কথাও বিনিময় করে না! বাসার সামনে গাড়ি থামতেই গটগটিয়ে চলে যায় আরোহী, আঁধারের দিকে একবার ঘুরেও তাকায় না।আঁধার হতাশার নিঃস্বাস ছেড়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

বাসায় গিয়ে আরোহী ঘুমাবে বলেই আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। শাহানাজ শেখ হতভম্ব হয়ে গেলেও পরে কি একটা মবে করে মুচকি হেসে চলে যান।

সারারাত কান্না কাটি করে ভোরের দিকে ঘুমায় আরোহী, কারো ধাক্কায় বিরক্ত হয়ে চোখ খুলতেই চেঁচামেচি শুনে ভালো করে চোখ মেলিয়ে তাকায়।

–‘আজকে তোর বিয়ে আরো ম্যাডাম তাড়াতাড়ি উঠে পড়!’

#চলবে?

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বোঃসারপ্রাইজ (২)

🍁

আরোহীকে বড় বড় চোখ করে নিজের দিকে তাকাতে দেখে ভড়কে যাওয়ার কথা হলেও ভড়কায় না রাহি!শয়তানি হাসি হেসে আরোহীকে টেনে বিছানা থেকে তুলে বলে,,,

–‘তাড়াতাড়ি কর, সময় নেই তো!’ আজকে রাতের মধ্যেই তুই নতুন শশুর বাড়িতে চলে যাবি।

–‘হোয়াট, কি আবল তাবল বলছিস তুই রাহি?’ মাথা ঠিক আছে তো তোর?

আরোহীর চিৎকারে রাহি নিজের কান চেপে ধরে বলে,,,

–‘চুপ হয়ে যা মেরি মা,অন্য কারো সাথে না তোর নামে রেজিস্ট্রি করা বরের সাথেই তোর বিয়ে!’

প্রথমে ক্ষিপ্ত চোখে তাকালেও রাহির কথাটা বোঝা মাত্রই আরোহী আবার চেঁচিয়ে ওঠে,,,

–‘কিহ!’

রাহি এবার অসহায় চোখে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলে,,

–‘আসতে চেঁচাতে পারিস না,তোর জন্য আমি কানে কালা হলে আমার বিয়ে করা বরের কি হবে!’

কথাটা ব’লেই জিহ্বায় কাঁমড় দেয় রাহি,ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে বুঝতে পেরেই এক পলক আরোহীর দিকে তাকায় সে।আরোহীকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় রাহি।আরোহী সন্দেহের চাহনিতে তাকিয়ে বলে,,,

–‘বিয়ে করা বর মানে?’ তুই বিয়ে করে নিয়েছিস?

–‘আসলে আরো তুই যেমনটা ভাবছিস ব্যপারটা তেমন নয়,আমি তোকে সবটা বলবো!’

রাহিকে আমতা আমতা করতে দেখে আরোহী এবার নিশ্চিত হয় যে আসলেই রাহির বিয়ে হয়ে গেছে।রাহিকে আর কিছু না বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে আরোহী! রাহি অসহায় চোখে আরোহীর দিকে তাকায়,কিন্তু আরোহী মুখ ঘুরিয়ে নেয়! উপায় না পেয়ে একে একে সবটা আরোহীকে বলতে থাকে রাহি! সবটা শুনে আরোহী কিছুটা স্বাভাবিক হয়,তবে মন খারাপ করেই বলে,,,

–‘যাহ তোর বিয়ে নিয়ে কতো শখ ছিলো কিন্তু কিছুই হলো না!’

–‘আমার নিজের ও কতো প্লানিং ছিলো বিয়ে নিয়ে কিন্তু ওই শয়তান বেডার জন্য কিছুই হলো না!’ বাদ দে চল এখন তোর বিয়েতে মজা করি!

রাহির খুশি খুশি মুখ দেখে আরোহী ভ্রুকুঁচকে বলে,,,

–‘কিসের বিয়ে,কোনো বিয়ে হবে না!’ আমার বিয়ে তো একবার হয়েই গেছে, ওই লোকটা তো বুড়ো ও হয়ে গেছে আর কতো বার বিয়ে করতে হয়!

আরোহীর কথা শুনে রাহি শব্দ করে হেঁসে বলে,,,

–‘কিন্তু ভাইয়া তো বললো ওনার একমাত্র বউয়ের নাকি বিয়ে নিয়ে অনেক শখ ছিলো, তাই আবার বিয়েটা তার বউয়ের শখ পূরণের জন্যই হচ্ছে! ‘

–‘মানে?’

–‘মানে আপনাকে আমার বড় ভাসুর বুঝাবে মেডাম, এখন বর্তমানে আপনি ফ্রেস হয়ে এই নাস্তাটা খেয়ে এই যে, এই শাড়িটি পড়ে আমাদের উদ্ধার করুন!’

দরজা দিয়ে আলিশা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলেই বিছানায় বসে পড়ে।

আরোহী আলিশাকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে যায়,

–‘কি হচ্ছে আপু এসব,আর তুমি এই অবস্থায় এতো সকালে এখানে কেনো?’ আর কিসের বিয়ে বিয়ে করছো?

–‘একি আরো এখন ও রেডি হসনি,ওরা চলে আসবে তো তাড়াতাড়ি কর!’

এবার আরোহীর মা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে তাড়াহুড়ো করে কথাটি আরোহীর উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেন।

–‘কিন্তু মা!’

–‘কোন কথা না তাড়াতাড়ি কর,এখন সাতটা বাজে আটটা তিরিশের মধ্যে নাহলে নয়টার মধ্যে ওরা চলে আসবে তো!’

আরোহী তার মায়ের কথা শুনে বিরক্ত হয় কিন্তু তার মায়ের চোখ রাঙ্গানো দেখে আর কিছু না বলেই চলে যায় ফ্রেস হতে। আরোহীর মা মুচকি হাঁসে,কিন্তু আলিশাকে দেখে মুখ গম্ভীর করে বলে,,,

–‘আর তুমি,এই শরীর নিয়ে উপরে এসেছো কেনো যদি পড়ে টরে যাও তখন!’ বাচ্চাটার দিকে ও তো খেয়াল রাখতে হবে নাকি?

আলিশার চোখ মুখ এবার উজ্জ্বল হয়ে যায়, ধির পায়ে উঠে তার মাকে হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরে। শাহানাজ শেখ কিছু বলে না কিন্তু ধরেও না।

–‘আমায় কি মাফ করা যায় না মা আমি কি এতোটাই খারাপ,তোমাদের সাথে কথা না বলে আমি ভালো নেই মা!’ সবার এতো ভালোবাসা পেয়েও আমি ভালো নেই, তোমরা আমায় ক্ষমা না করলে আমি কার কাছে যাবো বলো?

কেঁদে উঠে হঠাৎ করেই কথাগুলো বলে আলিশা,শাহানাজ শেখের ও মনটা গলে যায়! তিনি তো মা, আর মায়েরা সন্তান হাজার ভুল করলেও ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখে।তিনি আলিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,,,

–‘আমি ক্ষমা তোকে অনেক আগেই করে দিয়েছি মা,কাঁদিস না বাচ্চার ক্ষতি হবে তো!’

আলিশা ও এবার চুপ হয়ে যায়, কিন্তু ওভাবেই তার মায়ের সাথে জড়িয়ে থাকে।

!
!

শাড়ি পড়ে দশ হাত ঘোমটা টেনে এক কোণে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরোহী তার হাত শক্ত করে ধরেই পাশেই রাহি দাঁড়িয়ে আছে। পাশের সোফায় আঁধারের বড় মামী সুরাইয়া বেগম, এক বৃদ্ধা মহিলা ও এক বৃদ্ধ লোক বসে আছে ।

আর তার সামনের সোফায় বসে আছে আঁকলিমা চৌধুরী, জমিলা বেগম ও আয়েশা বেগম আর তার পাশেই অন্য সোফায় এক সুন্দরী মহিলা বসে আছে, যাকে আরোহী চেনে না! তাদের সামনেই টেবিলে নানা ধরনের নাস্তা ও ফলমূল দিয়ে ভরা।

আরোহীদের হয়তো তারা দেখেননি তাই তো তারা নিজেদের মতো গল্প করছে শাহানাজ শেখ ও আমজাদ শেখর সাথে। এরইমধ্যে কোথা থেকে যেনো হুরমুর করে শিহাব,আঁধার ও আদর চলে আসে তারা ও যোগ দেয় তাদের সাথে।

–‘কোথায় আমাদের নাতবউ কে এবার তো নিয়ে আসুন!’

বৃদ্ধা মহিলাটির কথায় শাহানাজ শেখ উঠে আসতেই আরোহীদের দিকে চোখ যায়,তিনি রাহিকে ইশারায় আরোহীকে এগিয়ে নিয়ে আসতে বলেন।

আরোহীরা এগিয়ে আসতে সকলে তাদের দিকে তাকায়,আঁধার, আদর ও শিহাব যেনো আরোহীকে এতো বড় ঘোমটা টেনে আসতে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে যায়। ঘোমটার আড়াল থেকে আরোহী সেটা দেখে ঠোঁট উল্টে তাকায়!

সুরাইয়া বেগম আরোহীকে বৃদ্ধাদের মাঝে বসিয়ে দেয়! আরোহী তার মায়ের শেখানো হিসেবে সালাম দেয়! বৃদ্ধা আরোহী ঘোমটা তুলে বলেন,,

–‘মাশাল্লাহ, চান্দের মতোন বউ আমাদের!’

আরোহী লজ্জায় মাথা নত করে নেয়,এবার বৃদ্ধ লোকটি বলে,,,

–‘আমি কিন্তু তোমার নানা শশুর হই, আর এই বুড়িকে দেখছো না এ হলো তোমার সতীন মানে আমার বউ!’

আরোহী এক পলক তাকিয়ে হেঁসে আবার মাথা নত করে।

–‘তা আপনাদের মেয়ে কি রান্না বান্না সব পারে,আর ঘরের কাজ কর্ম?’

পাশের সোফায় আলিশা বসতে বসতে কথাটি বলে,আরোহী ভ্রুকুঁচকায়,সকলে মিটমিটিয়ে হাঁসে।

–‘এই মেয়ে কি বোবা নাকি কালা, কথা বলে না কেনো?’ এই মেয়ে কথা বলো আমি তোমার ছোট জা হই।

–‘জ্বি আসলে আমি তো রান্না বান্না পারি না, তবে আপনার মতো ছোট জা থাকতে কি আর আমায় রান্না করার প্রয়োজন আছে নাকি ছোটটট জা!

আলিশার কথায় বাঁকা হেঁসে উত্তর দেয় আরোহী।সকলে এবার মুখ চেপে হেঁসে ফেলে। আলিশা ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,,,

–‘মেয়ে তো দেখি মুখে মুখে তর্ক ও করে,তবে বড় জা হিসেবে আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে!’ এমন একটা বড় জা থাকলে সারাদিন ঝগড়া করতে পারবো আমার আবার ঝগড়া করার খুব শখ!’

–‘আপনি নিজেও তো বড় জা এর মুখে মুখে কথা বলছেন, না এ বিয়ে আমি করবো না!’

এবার আঁধারের মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায়, সে এতোক্ষণ দু’বোনের কথা শুনে হাসছিলো!

–‘তা বললে তো হয় না বড় জা,বিয়ে তো আপনাকে আমার ভাসুরকেই করতে হবে!’ যান এখন সবার জন্য ফটাফট চা বানিয়ে নিয়ে আসুন তো!

আরোহী এবার মুখ বাঁকিয়ে বলে,,,

–‘আপনার চা এ নিশ্চয়ই চিনি দেব না তাই না ছোট জা,এমনিতে ও মিষ্টি কথা আর বলেনই বা কখন!’

আলিশা কটমট চাহনিতে আরোহীর দিকে তাকায়,কিন্তু ততক্ষণে তার বোন রান্নাঘরে চলে গেছে।আরোহী যেতেই সকলে উচ্চস্বরে হেঁসে ফেলে।আলিশা নিজেও হাঁসে তবে আদরের ধমকে চুপ হয়ে যায়।

–‘এই মেয়ে এভাবে হাসছো কেনো বেবির কষ্ট হবে না!’

আলিশা এবার অসহায় চোখে সকলের দিকে অভিযোগের সাথে তাকায়,সকলে আর এক দফা হাসাহাসি করে।শাহানাজ শেখ ও আমজাদ শেখ মুগ্ধ চোখে তাকায় আদরের দিকে।তাদের মেয়েরা যে নিসন্দেহে ভালো আছে সেটা তারা প্রতিটি কদমে বুঝতে পারছেন।

সকলে চা দেওয়ার পর আরোহী জানতে পারে, আজকে দুপুর বারোটার দিকে তার হলুদ, বিকেল চারটার দিকে মেহেন্দি আর রাত আটটার পর তার বিয়ে। সব প্ল্যান যে আঁধারের সেটা ও সে জানতে পারে।

সেই অচেনা মহিলাটি এবার আরোহীর কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের পরিচয় দপয়,তিনি শিহাবের আম্মু আর তারেক চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের বউ যেটা আরোহী আগে জানতেই পারেনি। এরইমধ্যে শিহাব গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,,

–‘নানুমা তোমার এই নাতিটার ও কি তোমার বিয়ে দিতে ইচ্ছে করে না?’

বিউটি বেগম হেঁসে বলেন,,,

–‘তোর বিহা করার ইচ্ছে থাকলে বল মেয়ে দেখি,কি কস শিরিন!’

শিহাবের আম্মু এবার ভ্রুকুঁচকে তাকায় তার ছেলের দিকে।
শিহাব আমতা আমতা করে বলে,,

–‘আম্মু তোমার ছেলের জন্য ঐ যে আরোর পাশের মেয়েটাকে ভালো মানাবে মেয়েটা ঝগরুটে হলেও বউ হিসেবে ভালোই!’

শিহাবের হাতের দৃষ্টি অনুযায়ী সকলে এক পলক রাহির দিকে তাকায়,বেচারি লজ্জা পেয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।শিরিন চৌধুরী মুচকি হেসে গিয়ে শিহাবের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,,

–‘ফাজিল, এভাবে কেউ বলে মেয়েটা লজ্জা পেয়েছে তো!’

–‘বাট আমি সিরিয়াস আম্মু!’

–‘নাতি চিন্তার কিছু নেই তোমার এই নানুভাই আছে কিসের জন্য! ‘

কামাল রাশেদিন উৎসাহের সহিত কথাটি বলেন,সকলে মুচকি হেসে চা খাওয়ায় মন দেয়।শিহাব খুশিতে লাফিয়ে আঁধারকে জড়িয়ে ধরে। আঁধার চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,,

–‘মেয়ে মানুষের মতো কথায় কথায় গায়ে পরিস কেনো,আমার তো মাঝে মাঝে তোর উপর ডাউট হয়!’

আদর ফিঁক করে হেঁসে দেয়,তার পাশে আলিশার ও একই অবস্থা। শিহাব এবার অসহায় চোখে আরোহীর দিকে তাকায়।

যার অর্থ,বোন এটাকে নিয়ে কিভাবে সংসার করিস তুই! কিন্তু আরোহী একটা ভেংচি কেটে চলে যায়,শিহাবের এবার হিচকি উঠে যায়! এক চোরের কাছে আর এক চোরকে নিয়ে বিচার দেওয়ার মতো তার অবস্থা হয়েছে।

!
!
হলুদের জন্য তৈরি হয়ে কখন থেকে বসে আছে আরোহী কিন্তু রাহি ঐ যে তাকে বসিয়ে রেখে গেছে এখনো তার আসার নাম নেই। কি জানি কোন মেহমানের পাল্লায় পরেছে সে এখন, এইটুকু সময়ের মাঝে সকল আত্নীয় স্বজনদের দাওয়াত করেছে তার বাবা ও আঁধাররা!

আরোহী অবাকের উপর অবাক হচ্ছে, সব কিছু তার স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে! তার ইচ্ছে ছিলো এভাবে বিয়ে করার সত্যি যে তার ইচ্ছে পূরণ হবে সে কল্পনায় ও ভাবেনি।

এরইমধ্যে দরজা বন্ধ করার শব্দে চোখ তুলে তাকায় আরোহী, কিন্তু হঠাৎ আঁধারকে দেখে অবাক হয়! তবে তার অবাক হওয়া আর বেশিক্ষণ থাকে না আঁধারকে ভালো করে লক্ষ করতে তার নজর আঁটকে যায়!

হলুদ একটা পাঞ্জাবি পরেছে আঁধার সাথে সাদা পায়জামা আর গলায় একটা সবুজ ওরনা টাইপ কিছু একটা হবে যেটা সে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে।তার ফর্সা শরীরে মনে হচ্ছে হলুদ আর সবুজ রংটা একটু বেশিই মানিয়েছে।আরোহীর তো মনে হচ্ছে রংটা আঁধারের জন্যই তৈরি!

প্রতিদিনের মতোই হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি,চুলগুলো সবসময়ের মতো স্পাইক করা তবে আজকে একটু ব্যাতিক্রম! কিছু কিছু চুল এসে কপালে পরছে, এতে যেনো আঁধারকে আরও বেশি সুদর্শন লাগছে।আরোহী তো হাঁ করে তাকিয়ে আছে, এই ছেলেটা যে তার নামে রেজিস্ট্রার করা সেটা সে ভুলেই গেছে।

আরোহীকে এভাবে তাকাতে দেখে আঁধার বাঁকা হাঁসে!আরোহীকে সে অনেকক্ষণ থেকেই খুঁটিয়ে খাঁটিয়ে দেখছিলো দরজায় দাঁড়িয়ে, তার এই পিচ্চি বউটাকে হলুদ পরির থেকে কম লাগছে না অবশ্য!

এই যে হলুদ আর সবুজ রংয়ের মিশ্রণের শাড়িটাতে তার বউকে অপ্সরীর মতোই তো লাগছে তার কাছে! মুখে হালকা মেকাপ, তাজা ফুলের গহনা, কমোড়ে কোমড় বন্ধনী! চুলগুলো খোঁপা করে মাথায় ফুলের টায়রা!

আঁধার আর এক দফা ক্রাশ খায় তার আরুপাখিকে দেখে।ইচ্ছে করছে ঝাপটে ধরে বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখতে। মুখের উপর গরম নিশ্বাস পরতেই আরোহী চোখ বন্ধ করে নেয়!

আঁধার একটা হাত দিয়ে এবার আরোহীর কোমড় জড়িয়ে ধরে, আর একটা হাত দিয়ে আরোহীর শাড়ি ভেদ করে উমুক্ত পেটে হাত রাখে!নিজের পেটে ঠান্ডা কোন কিছুর আভাস পেতেই শিউরে উঠে আরোহী, আঁধার আরোহীর শিউরে ওঠা দেখে হেঁসে বলে,,

–‘Happy six months Anniversary Arupakhi !’

আরোহী চমকে চোখ খুলে তাকায় আঁধারের দিকে,আজকে তাদের ছয় মাস পূর্ণ হলো বিয়ের তার তো মনেই ছিলো না! এইতো সেদিনই সে আঁধারকে বললো ছয় মাস হতে চললো তবে সেটা যে আঁধার মনে রাখছে তার ধারনার বাহিরেই ছিলো।

আরোহীর ভাবনার মাঝেই আঁধার টুপ করে তার গালে একটা চুমু খায়,আরোহী হেঁসে আঁধারের দিকে তাকায়।আঁধার আবার একই কাজ করে, আরোহী এবার লজ্জা পায়!

–‘তোমায় সর্বপ্রথম আমি হলুদ লাগিয়ে দিলাম কিন্তু এখন পাওনা হিসেবে আমায় একটা ঝটপট চুমু দিয়ে দাও তো!’

আঁধারের কথা শুনে আরোহী লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। আঁধার এবার আরোহীর গালে আর একটা চুমু দিয়ে বলে,,,

–‘একি তুমি লজ্জা পাচ্ছো,যে মেয়ে ভড়া মাঠে আমার ঠোঁটে চুমু খেতে পারে সে এখন লজ্জা পাচ্ছে এটা ও সম্ভব!’

আরোহী এবার আঁধারের দিকে তাকিয়ে আবার লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়।আঁধার বাঁকা হেসে বলে,,,

–‘দিস ইজ নট ডান আরুপাখি, তুমি আমায় আমার পাওনা দিচ্ছো না আমি কিন্তু পাওনা না পেলে ওই যে তোমার লাল গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় কামড়ে দিবো!’ তখন মানুষের সামনে কি ভাবে যাবে বলো,বিয়ে শাদির ব্যাপার লোক জনের কাছে লজ্জায় পরতে হবে না।

আঁধারের বলতে দেরি হলেও আরোহীর তার গালে চুমু দিতে দেরি হয়নি।আঁধার মুচকি হেঁসে আরোহীকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

–‘আরুপাখি!’

–‘হুম!’

–‘আজকের দিনটি তোমার ও আমার জন্য অনেক স্পেশাল, আজকের দিনে ছয় মাস আগে ভাগ্য আমাদের একসাথে জড়িয়েছিলো।’ আর আজকের দিনেই দেখো আবার আমরা এক হতে যাচ্ছি, তোমার জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে আজকে রাতে! বি রেডি।

আরোহী আঁধারের কথা শুনে কিছু বলতে যায় তবে আঁধার বলতে দেয় না,আরও শক্ত করে ধরে বলে,,,

–‘হুস,নো মোর ওয়াড!’

আরোহী চুপ করেই পরে থাকে তার রাগি বরের বুকে,কিছুক্ষণ ওভাবেই কেটে যায়! আঁধার এবার আরোহীর কপালে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে বলে,,,

–‘এখন আমি আসি নাহলে আমি নিজেকে আর কন্ট্রোল করেতে পারবো না বউ!’ তুমি লজ্জা পেয়ো না আর রাতের জন্য রেডি থেকো।

আর দাঁড়ায়নি আঁধার, দরজা খুলেই চলে গেছে, আরোহী লজ্জায় মুখ ঢেকে নিয়েছে আর মনে মনে বলছে,” লোকটা এমন কেনো!”

রাহি ঢুকেই আরোহীকে লাল বেগুনি হতে দেখে বলে,,,

–‘কি ব্যাপার আরো মেডাম,স্যার কি একটু বেশি ডোজ দিয়ে গেলো নাকি?’

–‘তুই… ‘

–‘আমি আর রাহিই তো পাহারাদার হিসেবে ছিলাম আর আমরা জানবো না!’

আলিশা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে।আরোহীর লজ্জা যেনো আরও কয়েকগুন বেড়ে যায়।এরইমধ্যে নিচে থেকে আওয়াজ আসে আরোহীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আলিশা আর রাহি দেরি না করে নিয়ে যায়।

হলুদের স্টেজ করা হয়েছে আলিশাদের বাসার সাথে বাগান বাড়িতে! আরোহীকে স্টেজে বসানো হয়, সকলে এক এক করে হলুদ লাগানো শুরু করে!

আলিশার ফোনে কল বেজে ওঠে, আদরের কল দেখতেই আলিশা এক পলক সকলের দিকে তাকায়,এতো আওয়াজের মধ্যে কথা বলতে সমস্যা হবে ভেবেই বাড়ির ভেতরে চলে যায় আলিশা।

ফোন কানে ধরতেই কোথা থেকে দুটো ঠান্ডা শীতল হাত আলিশার শাড়ি ভেদ করে পেট স্পর্শ করে।চমকে ওঠে আলিশা কিন্তু পরক্ষণেই স্পর্শের মালিককে চিনতে পেরে হাফ ছেড়ে বলে,,

–‘তুমি এখানে কখন আসলে,ভয় পেয়ে গেছিলাম তো!’

আদর এবার আলিশাকে ঘুরিয়ে দু’হাতে আবদ্ধ করে বলে,,,

–‘তোমায় ও বাবুকে মিস করছিলাম বউ,তাই তোমার টানে ছুটে আসলাম!’

আলিশা হাঁসে আদরের কথায়,ছেলেটা যে এখন ধিরে ধিরে তার প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে সেটা তার কাজেই বুঝিয়ে দিচ্ছে আলিশাকে।আলিশা নিজেও এই ছেলেটাকে এখন অনেক ভালোবেসে ফেলেছে, তাই তো চোখের আড়াল হলে অন্তরটা পুরে যায় তার।

–‘আমি না দিনে দিনে কেমন বউ পাগল হয়ে যাচ্ছি আশা,সবাই কিছুদিন পরে আমায় বউ পাগল বলে বসবে!’ আমি কি করবো বলো তোমার নেশা যে আমায় ধিরে ধিরে তোমার প্রতি আসক্ত করে নিচ্ছে! এই আসক্ত থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় কি তুমি বলতে পারবে বউ।

আলিশা এবার লজ্জা পায়,পরক্ষণেই তার লজ্জারা ছুটে পালায় যখন হাত ভর্তি হলুদ তার গালে লাগিয়ে দেয় আদর।আলিশা চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,,

–‘এটা কি করলে তুমি হলুদ আমার একদম পছন্দ না!’

আলিশাকে মুখ ফুলিয়ে থাকতে দেখে শব্দ করে হাঁসে আদর! আলিশার মন ভালো হয়ে যায় আদরকে হাসতে দেখে,সে মুগ্ধ চোখে তার প্রেমিক পুরুষ নামক বরটাকে দেখতে থাকে।

ফুলের ডালা নেওয়ার জন্য আসছিলো রাহি, কোথা থেকে দু’টো হাত তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। রাহি ভয় পেয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।

শিহাব হালকা হেসে রাহির মুখের উপর ফুঁ দেয়,হালকা কেঁপে উঠে রাহি।চোখ খুলেই শিহাবের মুখ দেখে সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে রাহি।কিন্তু পরক্ষণেই শিহাব যখন নিজের গালে হলুদ লাগায় অবাক হয় রাহি।

কিন্তু তার অবাক হওয়া লজ্জায় পরিনত হয়ে যায়, যখন শিহাব নিজের গালের সাথে তার দু গালে পর পর ঘসে দেয়।রাহিকে লজ্জা পেতে দেখে শিহাব বাঁকা হেসে বলে,,,

–‘এভাবে লজ্জা পেয়ো না জানেমান খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে!’

রাহি এবার আরও বেশি লজ্জা পায়, শিহাবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। আর শিহাব চেঁচিয়ে বলে উঠে,,,

–‘এর পরের সিরিয়াল কিন্তু আমাদের সো গেট রেডি মিসেস রাহিয়ানা রাহি চৌধুরী!’

রাহি ঘুরেও তাকায় না,তবে মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে