#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ২৯
🍁
অক্টোবরের শেষের দিকে হালকা ঠান্ডার প্রকোপ সাথে রয়েছে হালকা ঠান্ডা বাতাস! একটু বাতাস গায়ে লাগলেও গায়ের লোম দাঁড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
কিন্তু এই ঠান্ডার মধ্যেও রাতের অন্ধকারে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গুনগুনিয়ে গান গাচ্ছে এক অদ্ভুত রমনী।
কিছুক্ষণ ওভাবেই কেটে যাওয়ার পর দুটি শীতল হাতের স্পর্শ কোমড়ে পেতেই শিউরে ওঠে আরোহী । না দেখেই ঠান্ডা স্বরে বলে,,,,
–‘ঘুম ভেঙ্গেছে আপনার?’
আরোহীর করা প্রশ্নে আঁধার উত্তর না দিয়ে পেছন থেকে আর একটু শক্ত করে জড়িয়ে নেয় আরোহীকে।কিন্তু আরোহী যখন তার হাতের উপর হাত রাখে কেঁপে উঠে আঁধার।
আরোহীকে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দিয়ে কন্ঠে রাগ নিয়ে বলে,,,,
–‘এই ঠান্ডার মধ্যে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?’ শরীর তো পুরোই ঠান্ডা হয়ে গেছে।
আঁধারের করা প্রশ্নে আরোহী হালকা হাঁসে, কিন্তু কিছু বলে না।আঁধারের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, চুপচাপ ঘরে চলে যায়,একটা শাল নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রবেশ করে।
বিনা বাক্যে শালটা আরোহীর গায়ে জড়িয়ে দেয়,আরোহী নিজেও নিশ্চুপ হয়ে দূরে ফাঁকা রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আঁধার আবার শক্ত করে তার প্রেয়শীকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,
–‘কি হয়েছে বউ, মন খারাপ কেনো? ‘
আরোহীকে আগের মতোই নিশ্চুপ দেখে আঁধার নিজে ও আরোহীর দৃষ্টিকে অনুসরণ করে ফাঁকা রাস্তার দিকে তাকায়।কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না সে আসলে কেনো তার বউ ওদিকে তাকিয়ে আছে।
এবার আরোহীকে ছেড়ে দিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আঁধার, কিন্তু তাকে সামনে দাঁড়াতে দেখে মাথা নিচু করে নেয় সে।আঁধার আরোহীর দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে বলে,,,,
–‘আরুপাখি, কি হয়েছে জান আমায় বলবে না!’
আঁধারের আদুরে ডাকে এবার হয়তো তার আরুর মন গলে যায়,দু’হাতে ঝাপটে ধরে আরোহী তাকে।আঁধার অবাক হয় না বরং হেঁসে ফেলে!
মেয়েটি ও যে তাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে সেটা এখন আঁধার তার প্রতিটা পদক্ষেপেই বুঝতে পারে।
–‘আমার ও বাচ্চা চাই মিস্টার চৌধুরী !’
হঠাৎ করেই আরোহীর এই কথাটা শুনে কিছুটা চমকে যায় আঁধার! অবাক হলেও শান্ত কন্ঠে আরোহীকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
–‘সময় হলে বাচ্চা ঠিকই হয়ে যাবে, তুমি আর একটু বড় হও!’
–‘আর কতো বড় হবো বলেন তো, বিয়ের ছয় মাস হয়েই যাচ্ছে!’
–‘শুধু বিয়ের ছয় মাস হয়ে যাচ্ছে বললে তো আর হবে না, বাসরটা ও তো করতে হবে নাকি!’
আঁধারের ফিসফিস কন্ঠে কেঁপে উঠে আরোহী, আঁধারকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
–‘আমার বাচ্চা চাই!’
–‘হুম!’
এবার আঁধার কিছুটা নরম কন্ঠে বলে,,
–‘কি হুম!’
–‘এই যে তোমার বাচ্চা চাই।’
আঁধারের দায়সারা কন্ঠে আরোহী হঠাৎ রেগে যায়,আঁধারের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,,,
–‘আপনার বাচ্চা চাই না,আপনি বাবা হতে চান না?’
–‘আমি কখন বললাম চাই না রে বাবা, চাই তো!’ কিন্তু মিসেস চৌধুরীর মাথায় হঠাৎ এইসব কে ঢুকালো শুনি?
আরোহীকে টেনে আবার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলে আঁধার। আরোহী হাসফাস করতে করতে বলে,,
–‘বড় মামীরা এসেছিলেন না আজকে তারাই বলছিলেন যে আপুর বিয়ের আট মাস কিন্তু বাচ্চা তাড়াতাড়ি নিয়ে নেওয়ার কারণে বাচ্চার বয়স ও তো সাত মাসই।’ কিন্তু আমি বড় জা হয়ে এখন ও বাচ্চা নিতে পারলাম না,আমায় ডাক্তার দেখানোর কথা বলেছেন উনি আঁধার!’ বলেছেন আমার হয়তো কোন সমস্যা আছে।
কথাগুলো বলতে বলতে আরোহীর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে আঁধারের শার্টে পড়ে।আঁধার চোয়াল শক্ত করে আরোহীকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দেয়।
–‘তার মানে তুই মানুষের কথায় বাচ্চা নিতে চাস,নিজের ইচ্ছেতে না!’ তাই তো বলি ভুতের মুখে হঠাৎ রাম রাম কেনো।
প্রথমের কথাটা শক্ত কন্ঠে বলে, একটু থেমে শেষের কথাটা বলে আঁধার। আরোহী আঁধারের কথায় ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
–‘আমি আবার কখন বললাম অন্যের কথায়….’
–‘উনি তোকে ওইসব বলছিলো আর তুই চুপচাপ শুনতেছিলি,মুখ নেই তোর উত্তর দিতে পারিস না!’ ওনাকে তো আমি দেখছি দাঁড়া, আর পরে তোকে দেখছি।
আরোহীর কথা শেষ হওয়ার আগে আঁধার শক্ত করে তার দু’বাহু চেপে ধরে বলে।আরোহী ভয় পেয়ে দু’কদম পেছনে চলে যায় ঠিকই কিন্তু আঁধারের আক্রমণে হতভম্ব হয়ে যায়।
আঁধার যে এতোটা রেগে যাবে সেটা তার ধারণার বাহিরে ছিলো। আর কোন কিছু না ভেবেই শক্ত করে আঁধারকে জড়িয়ে ধরে আরোহী। মুহুর্তেই যেনো আঁধারের সব রাগ উড়ে চলে যায়।
–‘উনার সাহস কি করে হয় আরু তোমায় এসব বলার,উনি আমার বউয়ের মাতৃত্বের উপর আঙ্গুল তোলার কে?’ উনি জানে না তুমি কার বউ।
চাপা স্বরে কথাগুলো বলে নিজেও আরোহীকে জড়িয়ে ধরে। আরোহী সামান্য হেসে বলে,,,
–‘মানুষ কি আর আমাদের ঘরের ভিতরের খবর জানে বলেন, তাই হয়তো বলেছে।’
আঁধার নিজেও চুপ হয়ে যায়,আসলেই তো তাদের বিয়ের ছয় মাস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাদের মধ্যে তেমন কোন সম্পর্কই হয় নি।আঁধার অনেক কয়েকবার কন্ট্রোলেস হলেও, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছিলো শুধু মাত্র আরোহীর সম্মতির জন্য। কিন্তু বোকা আরোহী এখন অব্দি সেটা বুঝতেই পারেনি।
–‘জানেন আঁধার আমার না বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো, কিন্তু ভাগ্যে খেলা দেখেন বিয়ের দিন কতো কিই না ঘটে গেলো!’
–‘হুম যাও ঘুমাও!’
হঠাৎ করেই আঁধারের গম্ভীর কন্ঠে আরোহী খানিকটা অবাক হয়, কিন্তু যায় না।আঁধার এবার আর কোন কথাই বলে না, আরোহীকে ঝট করে কোলে তুলে নেয়।আঁতকে উঠে আরোহী! আঁধার আরোহীর মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,,,
–‘আপনার না বাচ্চা চাই মিসেস চৌধুরী, তো এবার…’
আরোহী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, কিন্তু তার লজ্জারা বিরক্ততে ছুটে পালায়, যখন আঁধার তাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বলে,,,
–‘চুপচাপ ঘুমাও আমি এসে যেনো দেখি তুমি ঘুমিয়েছো। ‘
–‘আর আপনি!’
বিরক্ত হয়ে বলে আরোহী! আরোহীর রিয়াকশন দেখে আঁধার হেঁসে বলে,,,
–‘তোমার না বাচ্চা চাই তারই প্লানিং করতে যাচ্ছি!’
–‘এ্যাঁ!’
–‘এ্যাঁ নয় মিসেস চৌধুরী হ্যা!’
আরোহী কিছু না বুঝে লজ্জায় উল্টো দিকে ঘুরে সুয়ে পড়ে আর আঁধার দরজা খুলে সোজা বাহিরে চলে যায়। এক পলক তাকায় আরোহী, কিন্তু আঁধারকে আবার ফিরে আসতে দেখে চোখ বন্ধ করে নেয়।আঁধার হেঁসে বলে,,,
–‘তুমি যদি এবার না ঘুমিয়েছো তাহলে কিন্তু আমি আমার টেকনিক ইউসড করবো,দেন জানোই তো!’
–‘অসভ্য!’
বিরবির করে বলেই চোখ বন্ধ করে নেয় আরোহী। আঁধার এবার নিশ্চিন্তে চলে যায়।
রাহির ফোন অনবরত বাঁজছে, কিন্তু মেয়েটা ঘুমে এতোটাই বিভোর সে যেন শুনছেই না।কিন্তু কলদাতা যেনো থামার নামই নিচ্ছে না।বার বার ফোনের আওয়াজে এবার বিরক্ত হয়ে রাহি ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই তার ঘুম ছুটে যায়।
–‘ভুলেও ফোন কাটার চেষ্টা করবে না, নাহলে আমি কিন্তু বেলকনিতে টপকে উপরে চলে আসবো সেটা কিন্তু তোমার জন্য সুবিধে হবে না!’
রাহি ফোনটা কান থেকে সরিয়ে একপলক দেখে আবার কানে দেয়, কিন্তু আবার একটা রাম ধমকে তার সব ঘুম ছুটে যায়।
–‘তোমার সাহস হয় কি করে আমায় ইগনোর করার,দুই ফুটের একটা মেয়ে হয়ে আমায় ইগনোর করছো ইডিয়েট!’
–‘আমি…’
রাহির কথা শেষ হওয়ার আগেই লোকটি গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,
–‘নিচে আসো ইমিডিয়েটলি!’
–‘এতো রাতে নিচে আমি কিভাবে যাব,পাগল আপনি কেউ দেখে নিলে কি হবে!’
রাহির একটা কথায় যথেষ্ট ছিলো লোকটির রাগ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
–‘তুই যদি পাঁচ মিনিটের ভেতরে নিচে না আসিস আমি কিন্তু কলিং বেল বাজিয়ে দিবো! ‘ সেটা কিন্তু তোর জন্য ভালো হবে না।
রাহি এবার ভয়ে জমে যায়,এই লোকের যে রাগ কখন না জানি সত্যি সত্যি বেল বাজিয়ে দেয়।ভয়ে ভয়ে এবার বলে উঠে রাহি,,,
–‘আসছি!’
রাহির কথা শুনে লোকটা এবার প্রসস্ত হেসে ধির কন্ঠে বলে,,,
–‘সাবধানে আসো!’
ব’লেই ফোন কেটে দেয় লোকটি।রাহির রাহি হয় অনেক,এই লোকটার প্রেমে যে কেনো পড়তে গেলো মনে মনে নিজেকে শ খানিক গালি দিয়ে বলে,,,
–‘ইইই ঢং,নিজেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসতে বলে এখন নিজেই বলছে সাবধানে আসো!’
বিরক্তির সহিত কথাটা বলেই, গায়ে ভালো করে ওরনা জড়িয়ে পাঁ টিপে টিপে এগিয়ে যায়।ড্রয়িং রুমে সাবধানতার সহিত টেবিলর উপর থেকে চাবির গোছাটা তুলে দরজা খুলে এগিয়ে যায়।দুইতলায় থাকে তারা, সেই হিসেবে তাকে এখন সাবধানতার সহিত যেতে হবে ভেবেই এক পলক আসে পাশে তাকায়!
না সব ফ্লাটের দরজা বন্ধ! কিন্তু নিচে এসে আর কাউকে দেখতে পায় না,তবে দারোয়ান ঠোঁট উল্টে ঘুমিয়ে আছে দেখেই শব্দ করে হেঁসে ফেলে রাহি।পরমুহূর্তেই নিজের মুখ চেপে ধরে একটু পিছিয়ে যায় যেনো ঘুম ভাঙ্গলে ও দারোয়ান তাকে দেখতে না পারে।
হঠাৎ করেই দু’টি হাত তাকে টেনে নিয়ে পাশের গাছের সাথে চেপে ধরে বলে,,,,,
–‘এবার দেখি কি করে ইগনোর করেন!’
রাহি ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলেও কন্ঠে মালিকে চিনতে পেরেই হাফ ছেড়ে বাঁচে মনে হয়! কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা মনে হতেই ভয়ে কেঁপে উঠে।
–‘তোমার সাহস দেখে আমি রীতিমতো অবাক হচ্ছি,প্রথমে আমায় নিয়ে এতো মাতামাতি করলে,প্রেমে ফেললে আর এখন রাত দিন তোমার পেছনে ঘুরচ্ছ!’ টাইম পাস করতে চেয়েছিলে নিশ্চয়ই, বাট ইয়োর ব্যাড লাক সুইটহার্ট! তুমি নিজেও ভালো করে জানো তুমি কার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছো,চাইলেও তুমি আর আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না!
বলেই লোকটি একটু ঝুকে রাহির গলায় শক্ত করে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।
সকালে,,,,,
আরোহী ঘুম থেকে উঠে ও আঁধারকে পাশে পায় না অবাক হয় সে,মনে মনে ভাবে,,, “তাহলে কি রাতে আঁধার আর ঘরেই আসে নি!”
ফ্রেস হয়ে নিচে যেতেই আঁধারের বড় মামী, তার সাথে মেজো ও ছোট মামীকে বসে থাকতে দেখে কিন্তু আঁধারকে না পেয়ে হতাশ হয়। এরইমধ্যে আঁধারের বড় মামী বলে,,,
–‘কি গো বড় বউ, এতো বেলা অব্দি ঘুমানোটা কেমন অভ্যেস শুনি!’ তুমি থাকতে আপাকে কেনো রান্না করতে হবে সকাল সকাল, বাপের বাড়ি থেকে কি কিছু শিখে আসো নি! আর এ কি সকাল সকাল গোসল না করে চলে আসলে যে, বলি আজকালকার মেয়েরা তো লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে বসে আছে! কি দেখে যে তোমায় আঁকলিমা বড় ছেলের বউ করে নিয়ে এসেছে সেটাই বুঝতে পারছি না।
বড় মামী শাশুড়ীর কথা শুনে আরোহীর লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে,কিন্তু বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না সে।এরইমধ্যে আলিশা সাত মাসের পেটটা ধরে ধিরে ধিরে নিচে নেমে আসে।
ভদ্রমহিলা এবার আলিশাকে দেখে নাক মুখ কুঁচকিয়ে কিছু বলবেন তার আগেই আঁকলিমা চৌধুরী হতদন্ত করে ছুটে এসে আরোহীকে জড়িয়ে ধরেন। আরোহী অবাক হয়ে যায়, উনি যে কিচেন থেকেই এসেছেন সেটা তার হাতের আটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
–‘আপা আপনি মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন ওরা আমার ছেলের বউ না মেয়ে, আর আপনার বাড়ির মেয়েরা যদি বেলা দশটা অব্দি ঘুমাতে পারে আমার বাড়ির বউরা কেনো সকাল আটটা অব্দি ঘুমাতে পারবে না!’ আর বাপের বাড়ি থেকে শিখে আসেনি না তাদের এই মা তাদের হাতে কলমে সবকিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে আপনি আমার মেয়েদের সাথে এভাবে কথা বলবেন না অনুরোধ রইলো।
–‘কিন্তু তাই বলে গোছল করে আসবে না এটা কেমন কথা আঁকলিমা,সকাল সকাল যে গোছল করতে হয় এটা তুই ওদের শিখাসনি!’
–‘আপনার কথার ভিত্তিতে যেটা আপনি বুঝচ্ছেন সেটা হয়নি বড় মামী তাই গোছল করার ও প্রয়োজন নেই আমার বউয়ের!’
বাহিরে থেকে আসতে আসতে কথাটি বলে আঁধার।মুলত সে ওইটুকুই শুনেছে বাহির থেকে আসার সময়। ভদ্রমহিলা চুপ হয়ে যান, আঁধার বরাবরই টেরা কথা বলে তার সাথে তাই তিনি আঁধারকে একটু ভয় পান।আঁকলি চৌধুরী নিজেও আলতো হাসেন। তাকে ঘটনাটা লিমা গিয়ে বলতেই তিনি ওভাবেই ছুটে এসেছেন।
আলিশা মুখ চেপে হেসে ফেলে, আঁধারকে তার বরাবরই মুখের উপর জবাব দেওয়ার কারণে ভালো লাগে। সে তো নিজেও ভয়ে ভয়ে ছিলো এই মহিলার জন্য না জানি কি থেকে কি বলে।কালকেও তাকে ও আরোহীকে অনেক কথা শুনিয়েছে কিন্তু সকলের আড়ালে।
সেসব যদি আজকে আঁধার শুনে তো মহিলার চাটনি বানিয়ে দিবে বুঝতেই পারছে আলিশা।তবে আঁধারের মেজো ও ছোট মামী খুবই নমনীয়, তারা আলিশা ও আরোহী উভয়কেই অনেক আদর করেছে কালকে।
–‘আর বড় মামী, একটা ছেলের বাচ্চার জন্য খুশি না হয়ে আপনি আর একটার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন!’
সোফায় আরাম করে বসতে বসতে বলে কথাটি আঁধার। সকলে অবাক হয় আঁধারের কথায়,শুধু মাত্র আলিশা ও আরোহী ছাড়া। ভদ্রমহিলা শুকনো ঢোক গিলে আরোহীর দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকায়।
–‘কি বলছিস তুই এসব আঁধার! ‘
–‘উফফ মা তুমি তো দেখছি কিছুই জানো না, বড় মামীর মনে হয়েছে আমার বউয়ের সমস্যা আছে তাই এখনো তার বাচ্চা হচ্ছে না!’ তাই তো উনি আমার বউকে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
–‘বাবা আঁধার তুমি ভুল বুঝছো,আমি তো বলেছি আজকালকের যুগে বাচ্চা নিতে সমস্যা হয় তাই বউমাকে ডাক্তার দেখানের কথা বলেছিলাম।’
মিনমিন করে কথাটি বলেন ভদ্রমহিলা।আঁকলিমা চৌধুরী চোয়াল শক্ত করে মনে মনে তারেক চৌধুরীকে সবকিছু জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
–‘আপনার কি মনে হয় বড় মামী আপনি কি গুনিক যে গুনেই বলছেন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা,তবে একটা কথা শুবে রাখেন।আল্লাহ যেদিন আমাদের বাচ্চা দিবেন সেদিনই আমাদের বাচ্চা হবে! ‘ আর আপনার কথায় আমরা বাচ্চা নিতে যাব না,দয়া করে এ-সব আর আমার বউয়ের মাথায় ঢুকানের চেষ্টা করবেন না নাহলে ফল খুব একটা ভালো হবে বলে মনে হয় না! আর হ্যা আমার বউ আপনাকে সন্মান করে তাই কিছু বলতে পারে না সো সাবধান।
বলেই উপরে যেতে যেতে আরোহীকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
–‘উপরে এসো!’
#চলবে?