#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ২৭
🍁
“প্রিয় আঁধার,, ”
“তুই তো জানিস আমি মা ছাড়া বড় হয়েছি,কিন্তু সবকিছু তোদের বলা হয়নি রে! জানিস ছোট বেলায় যখন আমি কোনো ভুল করতাম আম্মু আমায় সবসময় হাসিমুখে শিখিয়ে দিতো সঠিকটা। আর বলতো,,’ নীলি মা সবসময় সঠিকটা তোকে শিখিয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু আমি থাকবো না, তাই ভুলগুলোকে এখন থেকে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা কর!’ তখন আমি কেবল ক্লাস ফাইভে পড়ি, একটু হলেও বুঝতাম মায়ের কথার মানে তবে ওতোটা ও বুঝতাম না। তাই তো আম্মুকে সবসময় জড়িয়ে ধরে বলতাম,,, ‘তুমি থাকতে আমায় আর কোনো কিছু শিখতে হবে না আম্মু।’ আম্মু হাসিমুখে বলতো,, ‘ পৃথিবীটা বড্ড কঠিন রে মা, তুই এতো সহজ সরল তোর জন্য আমার ভয় হয়, আমি যদি না থাকি তোর আব্বু তোকে আগলিয়ে রাখবে !’ আর দেখ সেই দিনটা আসলো কিন্তু আব্বু আমায় আর আগলিয়ে রাখলো না রে আঁধার, রাখলো না।হঠাৎ করেই একদিন সকালে আম্মুরগলায় দড়ি দেওয়া লাশটা আমাদের বাসার সামনের বট গাছে ঝুলতে থাকতে দেখলাম আর সে দিন থেকেই আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।আম্মুকে কবর দেওয়ার পরপরই আব্বু তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে তুলে নিয়ে আসলো। আত্মীয় স্বজনরা সবাই অবাক হলো তাদের মনে হলো আমার মায়ের মৃত্যুর মূল কারণ এটাই হয়তো, তবে স্বাভাবিক থাকলাম আমি খুশি হলাম এটা ভেবে আমার আম্মু হয়তো ওই মহিলার ভেতরে ঢুকে এসেছে,কথাটা হাস্যকর তাই না, তবে আমার ছোট মস্তিষ্কে কেনো জানি না এটাই মনে হয়েছিলো। তারপর থেকেই শুরু হলো আমার নতুন মায়ের আমার প্রতি আদর! উহু সেই আদর না যেটা তোরা তোদের মায়ের কাছে পাস, সৎ মায়ের আদর। সেদিনের মতো কিছু না বললেও কিছুদিন পর থেকেই আমায় কারণ ছাড়া মারতো, অথচ আমার বাবা কিছুই বলতেন না তার চোখের সামনেই আমাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করানো থেকে শুরু করে একটু ভুলের জন্য মারা, দুদিন অব্দি না খেয়ে রাখা সব করতো কিন্তু বাবা সে ছিলো নির্বাক। তখন থেকে আমার বাবার উপর অভিমান জমতে শুরু করলো আর সেই অভিমান যেটা এখন অব্দি আছে। আমাদের বন্ধুত্বর প্রথম দিনের কথা মনে আছে তোর, যেদিন তুই, সোহেল, শিহাব ও রাতুল মিলে এই ছোট আমিটাকে বাঁচিয়েছিলি। সেদিন ও ছোট মায়ের অত্যাচারে রাস্তায় এসেছিলাম মরার জন্য কিন্তু তুই নিজের জীবনের বিনিময়ে আমায় বাঁচিয়েছিস অথচ নিজেই মৃত্যুর সাথে লড়াই করে বেঁচে ফিরতে পারলি। তখন থেকেই আমার মনে তোর জন্য আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করতো বড় হওয়ার সাথে সাথে সেটা ভালোবাসায় পরিনত হয়ে গেলো কিন্তু সেটা একতরফা! বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে তোকে বলিনি, তবে যেদিন আরোহীকে নিজের বউ হিসেবে পরিচয় দিলি সেদিন থেকেই আমার পাগলামি বাড়তে শুরু করলো। আজকে যখন আমি তোর বাসায় আরোহীর সাথে কথা বলার জন্য গেলাম,আরোহীর কথা শুনে মনে হলো সে আসলেই মিসেস তাশরিফ আঁধার চৌধুরী হওয়ার যোগ্য। আর আমার মতো হতভাগির তার নখের যোগ্য হওয়ার ও দাম নেই রে! তোর আরু তোকে অনেক ভালোবাসে আর মেয়েটা অনেকটা সহজ সরল জানিস তো,নাহলে দেখ একজন অপরিচিত মেয়ের কান্না দেখে কেউ কাঁদতে পারে। আমি যখন কান্না করছিলাম মেয়েটা আমায় টেনে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো ঠিক আমার আম্মুর মতো,আমার আম্মু ও আমি কাঁদলে ওভাবেই আমায় জড়িয়ে ধরে নিজেও কাঁদত রে। আরোহীর মাঝে আমি আমার মায়ের প্রতিছবি দেখেছি আজকে তাই তো কাঁদতে কাঁদতে চলে এসেছিলাম।আরোহীর মতো করে হয়তো কখনো আমি তোকে ভালোবাসি নি রে তাইতো স্বার্থপরের মতো ওকে আমাদের জীবন থেকে চলে যেতে বলেছিলাম, কিন্তু মেয়েটা আমায় বুকে টেনে নিয়ে আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো আমি কতোটা বাজে।আসলেই আমি বাজে আঁধার, অনেক বাজে আমি তোর সাথে এতোদিন যা কিছু করেছি সবকিছুর জন্য সরি রে পারলে আমায় মাফ করে দিস! এই জীবন রাখার ইচ্ছে আর করছে না,হয়তো আর কিছুক্ষণ পরই আমি তোদের সকলকে মুক্তি দিয়ে চলে যাবো। আমার ও তো কারো ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে আঁধার, কেউ কেনো আমায় ভালোবাসে না রে।জানিস আসার পথেই আমার বাবা আর ছোট মায়ের সাথে দেখা হয়েছিলো কিন্তু তারা আমার কান্না দেখে ও আমায় আপন করে নিলো না রে তারা ভেবেছে আমায় হয়তো কোন ছেলে ইউস করে ছেড়ে দিয়েছে তাই হয়তো আমি এভাবে কেঁদে কুটে বেড়াচ্ছি। জানিস যখন আমি তাদের দেখে রিকশা থেকে নেমে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলাম,,,’বাবা আমি মা.. ‘ ছোট মা আর আমায় বাকি কথা বলতেই দেয় নি কি বলেছে জানিস,,,,’ছি ছি তোমার মেয়ে কি না মা হতে যাচ্ছে, আরেতোমার মানসম্মান কিছুই রাখলো না এই অলক্ষী।’ আমায় কিছু বলতে না দিয়েই বাবা আমায় পর পর কয়েকটা চড় মের বললো আমি যেনো তাদের কাছে না যাই, তারা আমার বা আমার বাচ্চার দায়িত্ব নিতে পারবেন না।আমি কান্না ভুলে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম তাদের। আমি মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে এটাই বলতাম রে অথচ ওরা আমায় চরিত্রহীন উপাধি দিয়ে দিলো। আমায় পতিতার সাথে তুলনা করলো অথচ আমি কিছুই বলতে পারলাম না! কষ্ট হচ্ছিল আমার, তবে কিছু করার ছিলো না। তখনই মরার কথা আমার মাথায় আসলো কিন্তু আরোহীর মুখটা ভেসে উঠলো হঠাৎ তখন আমার মনে হলো সবাইকে ছেড়ে তো চলেই যাবো কিছুক্ষণ পরেই না হয় যাই তাই তরীর বাসায় এসে এই চিঠিটা লেখা। আমি চরিত্রহীন নইরে, আমি তো শুধু একজনকেই মন দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম। আর তোরা সবাই ছোট থেকে আমার জন্য যা করেছিস ভালোবেসেই করেছিস জানি, আমিও তোদের ভালোবাসি রে।আরোহীকে ভালো রাখিস আঁধার আর ওকে বলিস নীলি নামের এই অভাগা মেয়েটাকে যেনো মাফ করে দেয়।এই চিঠিটা যতোক্ষণে তুই পাবি ততোক্ষণে হয়তো আমি আর এই পৃথিবীতে থাকবো না, আমার মৃত্যুর জন্য কাউকে দ্বায়ি করিস না আঁধার তবে ওদের বলে দিস আমি চরিত্রহীন নয় রে,আমি পতিতা নয়, আমি আমার মায়ের মেয়ে। আমি এইসব অপবাদ নিয়ে বাঁচতে পারবো না আঁধার, যেখানে কাল অব্দি ও ভেবেছিলাম আরোহীকে একটু পরীক্ষা করে ওর ভালোবাসা দেখবো তবে তোকে ভুলে যাব। তাই আজকে তরীকে নিয়ে গেছিলাম, আরোহী তোকে এতোটাই বেশি ভালোবাসে যে সেখানে আমার মতো দশটা নীলিমা ও সেই ভালোবাসা দিতে পারবে না রে। আমার ভালোবাসাটা এক তরফাই সুন্দর আঁধার, আমি তোকে ছাড়াই বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওরা আমায় বাঁচতে দিলো না রে। আমার নিজের বাবাই যেখানে অন্যের কথা শুনে বিশ্বাস করে নিলো আমায় একবার জিজ্ঞেস অব্দি করার প্রয়োজন মনে করলো না সেখানে বাহিরের কেউ শুনলে কি বলবে বল। আমি তো পবিত্র আঁধার, আমি কিভাবে প্রমাণ করতাম বল, কেনো করতাম তাই এই সিদ্ধান্তটা নিতে বাধ্য হলাম রে। তোরা সকলে পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস রে তোদের নীলি চরিত্রহীন নয়।
ইতি
তোদের সকলের ভালোবাসার নীলি।
চিঠিটা পড়েই ঢুকড়ে কেঁদে উঠলো আরোহী, একটা মেয়ে কতোটা কষ্ট নিয়ে চিঠিটা লিখেছে সেটা পড়েই আরোহী বুঝতে পারছে। সোহেল ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো, তার চোখে পানির কণাদ্বয় স্পষ্ট। আঁধার নিচের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, রাতুল ও শিহাব নিচের দিকে মাথা চেপে ধরে বসে আছে।
আলিশা ও আদর হতভম্ব হয়ে আছে, মূলত তারা সকলেই মনে করেছিলো আঁধারের জন্যই হয়তো নীলিমা সুইসাইড করেছে কিন্তু বর্তমানে সকলের কাছে নীলিমার সুইসাইড করার কারণ স্পষ্ট।
আরোহী এবার আঁধারের কাছে এগিয়ে গিয়ে আঁধারের বুকে পড়েই কাঁদতে শুরু করে, আঁধার দু’হাতে আগলে নেয় তার প্রেয়শীকে কিন্তু মাথা তুলে তাকায় না।
আরোহীর কান্না দেখে আলিশার ও চোখে পানি চলে আসে, মেয়েটাকে নিয়ে সে মনে মনে কতো কিই না আজে বাজে কথা ভাবছিলো।তরী নিজেও ডুকরে কেঁদে উঠে।
–‘এক্সকিউজ মি,এটা হসপিটাল! এখানে এভাবে নয়েজ করবেন না প্লিজ।’ আপনাদের জন্য অন্য রোগীদের প্রব্লেম হচ্ছে!
সামনের কেবিন থেকে একটা ডাক্তার বের হয়ে কথাটি বলেন।
তরী চুপ হয়ে যায়,আরোহীর কান্নার গতি ও কমে যায়,কিন্তু তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।
টানা ছয় ঘন্টা থেকে নীলিমাকে নিয়ে ওটিতে আছে ডাক্তার, বিষাক্ত পয়জন খাওয়ার কারণে নীলিমার শরীর অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে। আঁধার হাসপাতালে চলে আসার পর পরই আরোহী উঠে আঁধারকে দেখতে না পেয়ে নিচে যায়।তখনই আলিশা ও আদরের মুখে ঘটনা শুনে সে আদর ও আলিশাকে সাথে নিয়ে চলে আসে।
নীলিমা পয়জন খাওয়ার পর পরই তরী বাসায় গিয়ে দরজা ধাক্কাছিলো বাসায় কেউ ছিলো না দেখে কেউ বুঝতে ও পারেনি। তবে নীলিমা যখন দরজা খুলছিলো না তরীর মনে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছিলো তাই সে শিহাবকে ফোন করে আসতে বলছিলো।
দরজা ভেঙে ফেলার পর পরই নীলিমার মুখ দিয়ে ফেনা বের হওয়ার পরিমাণ ও বাড়ছিলো। তরী ভয়ে কেঁদে দিয়েছিলো,শিহাব নিজে ও হতভম্ব হয়ে গেছে।
মূলত শিহাব আর সে ই মিলে নীলিমাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে আর শিহাবই আঁধার ও বাকি সবাইকে খবর দিয়েছে।
নীলিমাকে ওটিটে নেওয়ার পর নার্স নীলিমার হাতের মুঠ থেকে চিঠিটা পেয়েছে তাই তিনি বাহিরে এসে দিয়ে গেলেন কিন্তু নীলিমার উন্নতির কথা আর বললেন না।
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যখন ডাক্তার বের হলেন, সোহেল দৌড়ে চলে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,
–‘ডাক্তার আমার নীলি,আমার নীলি।’
–‘রিলাক্স মিস্টার, সি ইজ আউট ওফ ডেঞ্জার!’
ডাক্তার হাসি মুখে কথাটি বলেই সোহেলের কাঁধে হাত দিয়ে আবার বললেন,,,
–‘ অনেক ভালোবাসেন পেসেন্ট কে তাই না,তবে উনি এতো কঠিন একটা স্টেপ কেনো নিতে গেলেন বলেন তো?’
ডাক্তাররে প্রথম কথায় সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠলেও পরের কথায় সকলের মুখে আঁধার নেমে আসে। ডাক্তার হয়তো ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন,তাই আর বেশি কিছু না বলে বললেন,,,,
— ‘ওনাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন আর বেশি বেশি খেয়াল রাখবেন, অল্পের জন্য বেঁচে ফিরতে পেরেছেন উনি। ‘
সোহেল মাথা নাড়িয়ে বলে,,,
–‘ওর সাথে কি দেখা করা যাবে?’
ডাক্তার সোহেলের দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন,,,
–‘ওনাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে, তবে দেখা করতে পারেন আপনারা।বাট ওনাকে উত্তেজিত করা যাবে না!’
ডাক্তারের কথা শুনে সোহেল দৌড়ে চলে যায় তার প্রেয়শীকে দেখে কলিজা ঠান্ডা করতে। পেছন পেছন বাকিরা ও চলে যায়।
গভীর রাতের দিকে নীলিমার ঘুম ভাঙ্গে, চোখ খুলতে কষ্ট হলেও পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে দেখেই হতভম্ব হয়ে যায়, এখানে কি করছে সে! বাম হাতের মাঝে কারো হাতের অস্তিত্ব পেতেই চোখ ঘুরিয়ে তাকায় নীলিমা।
সোহেলকে তার হাত ধরে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায়,কিন্তু মাথার ঘুরিয়ে তাকাতে পারে না মনে হচ্ছে মাথার পাশে কেউ মাথা দিয়ে আছে।অনেক কষ্টে একটু সরতে চেষ্টা করে কিন্তু ডান পাশে হাতের কাছে শিহাব আর পায়ের কাছে রাতুলকে দেখে আরও খানিকটা অবাক হয় সে।
মাথার কাছে কে দেখার জন্য চেষ্টা করতেই একটু দূরে সোফায় আরোহী ও তরীকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে।তড়িৎ গতিতে মাথার কাছের মানুষটাকে দেখতে চেষ্টা করে সফল ও হয়, আঁধারই তার মাথার কাছে ঘুমিয়ে আছে হাসে নীলিমা।
ধিরে ধিরে মনে করার চেষ্টা করতেই সবকিছু মনে পড়ে যায় তার, চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হয়ে বালিশে পড়ছে কিন্তু মুছে নিতে পারছে না সে কারণ সোহেল ও শিহাব দু’জনে দু’টো হাত ধরে আছে। মুহুর্তেই নীলিমার মনটা ভালো হয়ে যায়,এতোগুলো মানুষ তার পাশে আছে, এতো ভালোবাসে তারা তাকে অথচ সে কি করলো একবার ও এদের কথা ভাবলো না।
আপসোস হচ্ছে নীলিমার, কিন্তু পরক্ষণেই আবার মুখে হাসি ফুটে উঠছে। এতো বড় একটা স্টেপ না নিলে হয়তো সে বুঝতেই পারতো না এরা সকলে তাকে এতোটা ভালোবাসে। মুচকি হেসে নীলিমা একটু নড়ার চেষ্টা করে।
সোহেলের ঘুম ভেঙ্গে যায়, সোহেল খুশিতে চিৎকার করে উঠে,,,, নীলিমা তাকে চোখের ইশারায় শান্ত থাকতে বলে কিন্তু ততোক্ষণে সকলে উঠে পড়েছে।
নীলিমা ঠোঁট উল্টে তাকায় সোহেলের দিকে কিন্তু সোহেল মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।নীলিমা অবাক হয় না, সে জানতো এমটা হবে। আরোহী দৌড়ে এসে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
–‘কেমন আছ এখন আপু,জানো আমরা কতোটা চিন্তিত ছিলাম! ‘
আরোহীর কান্ডে নীলিমা হাসে,কে বলবে বিকেলেই এই মেয়েটাকে সে এতোকিছু বললো আর মেয়েটা ও তার সাথে তর্ক করলো কিন্তু এখন এই মেয়েটিই তার জন্য এতো বিচলিত হচ্ছে। নীলিমা একটা হাত আরোহীর মাথায় রেখে আসতে আসতে বলে,,,
–‘আ’ম সরি আরোহী,আমি…’
নীলিমাকে আরোহী বাকি কথা বলতে না দিয়েই বলে,,,
–‘পুরোনো সব বাদ আজকে থেকে তুমি ও আলিশা আপুর মতো আমার বড় বোন কেমন!’ আলিশা আপুর থেকে ও বেশি ভালোবাসতে হবে আমায় বুঝলে।
আরোহীর কথায় নীলিমার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে, আরোহী আলতো হাতে সেগুলো মুছে দেয়।নীলিমা মন থেকে হাসে।কিন্তু তার মন খারাপ হয়ে যায়, কারণ বন্ধুরা সবাই তার থেকে দুরে দাঁড়িয়ে আছে কেউ তার কাছে ও আসছে না কথা প বলছে না।
–‘আরো ওকে বলে দেও কাল সকালে ওর সাথে আমার বিয়ে, চুপচাপ যেনো বিয়েটা করে নেয়।’
সোহেলের কথাটা বর্জ্য কন্ঠের মতো বেজে ওঠে সকলের কানে, সকলে চমকে ওঠে। সোহেল যে নীলিমাকে ভালোবাসে সকলে জানে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি, মোট কথায় এই মুহুর্তে বিয়ের কথা বলবে এটা কেউ আশা করেনি।
নীলিমা এবার সোহেলের দিকে তাকিয়ে আরোহীকে বলে,,,
–‘আঁধারের আরু,ওকে বলে দাও সে যদি আমায় সব থেকে বেশি ভালোবাসতে পারে তাহলে কাল কেনো আজকেই আমি ওকে বিয়ে করবো।’
এবার সকলে বড় বড় চোখ করে তাকায় নীলিমার দিকে,তারা একটার পর একটা ঝটকা খেতেই আছে, নীলি কি না সোহেলকে বিয়ে করতে রাজি এটা ও সম্ভব কেমনে?
সোহেল নীলিমার দিকে ঘুরে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকায়।সোহেলের দৃষ্টি দেখে নীলিমা হাসে সাথে সকলের দৃষ্টি দেখেও। কিন্তু আঁধার নির্বাক যেনো সে আগে থেকেই জানতো এমনটা হবে, আরোহী আঁধারকে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোহেলের দিকে আবার তাকায়।সোহেলের মুখে প্রাপ্তির হাসি দেখতে পাচ্ছে সে আর নীলিমার মুখ লাজুক হাসি। আরোহী নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
–‘সত্যি বলছো আপু, কিন্তু তুমি এসব কি ভাবে বলছো?’
–‘আমি জানি সোহেল আমায় ভালোবাসে কিন্তু আমি এতোদিন বুঝেও না বুঝার চেষ্টা করতাম তবে যখন আমি সুইসাইড করার চেষ্টা করছিলাম কেনো জানি না আমার বার বার সোহেলের কথা মনে পড়ছিলো।’ আর সোহেলর কথা শুনে আমি সাথে সাথে হ্যা বলার কারণ সেই সময়ই আমার মনে হচ্ছিলো আমায় যদি কেউ একজন ভালোবাসে আগলিয়ে রাখে ক্ষতি কি,আমার ও তো ভালো ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে সেই মানুষটা যদি সোহেল হয় তাহলেই বা ক্ষতি কিসে।
#চলবে?
#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ২৮
🍁
হাসপাতালে আজকে নীলিমার চতুর্থ দিন! এই চার দিনে নীলিমা সকলকে নতুন করে আবিষ্কার করেছে, সকলের ভালোবাসা নতুন করে পেয়েছে আর আরোহীকে নতুন করে আবিষ্কার করেছে!
আরোহীর প্রতি এখন নীলিমার মন থেকে ভালোবাসা আসে, আর সোহেল তার সাথে কথা বলতেও এখন নীলিমার লজ্জা লাগে।
সেদিন সকাল ৯ টার দিকে নীলিমা চোখ খুলে দেখে তার পাশে সোহেল বসে আর সোহেলের মা-বাবা। সোহেলের মা বাবাকে দেখে নীলিমা যতোটা না অবাক হয়েছিলো তার থেকে বেশি অবাক হয়েছিলো কেবিনের ভেতর টুপি পড়া এক বয়স্ক ভদ্রলোক কে দেখে।
যখন জানতে পারলো ইনিই কাজি আর ওনাকে সকাল সকাল সোহেল নিজ দায়িত্বে নিয়ে এসেছে তখন কেনো জানি না নীলিমা না চাইতেও লজ্জা পায়,আর সেই লজ্জা পাওয়া এখন অব্দি যায়নি নীলিমার।
আর তার বন্ধুরা প্রথমের দিকে তার সাথে রাগ অভিমান করলেও পরে সবাই সবকিছু ভুলে গেছে। বাঁধাহীন ভাবে নীলিমা ও সোহেলের বিয়ে হাসপাতালেই সম্পন্ন হয়ে যায়। ডাক্তার নার্সরা অবাক হয়ে তাকিয়েছিলো তারা হয়তো এমন বিয়ে কোথাও দেখেনি।
আজকে নীলিমাকে ডিসচার্জ দিয়ে দিলো ডাক্তার সবাই অনেক খুশি তবে সবার থেকে বেশি খুশি হয়েছে আরোহী। নীলিমাকে রীতিমতো সে কখনো আপু আবার কখনো ভাবি ভাবি বলে মুখে ফেণা তুলছে!
আরোহীর কান্ডে আঁধার নিজেও অবাক এই মেয়ে যে এতো বিচ্ছু সেটা সে এই চার দিনে ভালো করে বুঝে গেছে।এতোদিন আরোহীর এই রুপ থেকে বঞ্চিত ছিলো আঁধার কিন্তু এখন আরোহীকে প্রাণোচ্ছল দেখে তার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
সোহেলদের বাড়িতে সকলে একসাথে প্রবেশ করে, সোহেলের মা নীলিমাকে রুমে নিয়ে যেতে বললে নীলিমাকে নিয়ে ভেতরে যায় সকলে।কিন্তু রুমের অবস্থা দেখে ও সাথে আদর ও আলিশাকে দেখে সকলের চক্ষু চড়াগাছ, তবে শুধু মাত্র আরোহী হেসে বলে,,,
–‘সারপ্রাইজ!’
সকলে আরোহীর দিকে তাকায়, আরোহী ঠোঁট টিপে হেসে বলে,,,
–‘আজকে নীলি আপু ও ভাইয়ার ফাস্ট নাইট এই বাড়িতে তাই আমি, আদর ভাইয়া ও আলিশা আপু মিলে সাজিয়ে দিলাম নীলি আপুর বাসর!’
আরোহীর কথায় নীলিমা, সোহেল দু’জনেই লজ্জা পায়,কিন্তু সকলে একসাথে হইহই করে উঠে। রাতুল তো রীতিমতো সোহেলের গাঁ ঘেসে বলেই ফেললো,,,,
–‘দোস্ত বিড়াল মারার রাত চলে এসেছে তোর, আ’ম ভেরি এক্সাইটেড!’
রাতুলের কথা শুনে সোহেল চোখ মুখ কুঁচকে রাতুলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়! নীলিমা লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়,বেচারি কারণে অকারণে আজ কাল বড্ড বেশি লজ্জা পাচ্ছে।
এই তো যেমন এখন লজ্জা পাচ্ছে, যেসব বন্ধুদের কাছে সে নির্দ্বিধায় সবকিছু বলতো আজকে তাদের সামনেই তাকে লজ্জা পেতে হচ্ছে।
–‘শালা বাসর সোহেলের তোর না তাহলে এতো এক্সাইটেড হচ্ছিস কেনো তুই! ‘
রাতুলের পিঠে চাপড় মেরে শিহাব কথাটি বলে।
–‘বুঝলি শিহাব আমি ভাবছি ওকে আজকে নীলিদের রুমের সামনে সারারাত পাহারাদার হিসেবে রাখবো, যেনো তার বাসর নিয়ে এতো এক্সাইটমেন্ট হাওয়া হয়ে যায়!’ কিরে ব্যাটা কি বলিস?
প্রথমের কথাটা সিহাব কে উদ্দেশ্য করে বললেও শেষেরটা রাতুলের পিঠে জোড়ে একটা থা’বা মেরে বলে আঁধার।
সোহেল এবার শব্দ করে হেসে দেয়, সাথে বাকিরা ও হাসে।
রাতুল ভোতা মুখ করে আঁধারের দিকে তাকায়, আঁধার ভাবলেশহীন ভাবে রাতুলের দিকে তাকায় যেনো সে কিছুই জানে না! রাতুল এবার আঁধারের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে,,,
–‘তুমি মামা আগেই বাসর সেরে এখন আমার পেছনে লাগছো তো, খুব শিগ্রই আমি ও বিয়ে করে আমার বাসর ঘরে তোমায় পাহারাদার হিসেবে রাখবো!’
রাতুলের কথায় আঁধার এবার শব্দ করে হেঁসে বলে,,,
–‘সে তুই রাখতেই পারিস, তবে তোর যে বাসর করার সাধ জন্মের মতো ঘুচিয়ে দেব সেটা কিন্তু তোর জন্য ভালো হবে না!’
আঁধারের কথায় আর এক দফা হাসাহাসি করে সবাই, কিন্তু রাতুল অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় আরোহীর দিকে।রাতুলের দৃষ্টির মানে আরোহী বুঝতে পেরেই হাসি থামিয়ে দিয়ে সকালের উদ্দেশ্যে বলে,,,
–‘আরে এখন চলো চলো ওদের একটু একা থাকতে দাও!’
সকলে চলে যায়, কিন্তু আরোহী সবার পেছনে বের হয় আর তার পেছনে আঁধার।
হঠাৎ করেই আরোহীর হাঁটার গতি থেমে যায়,ততোক্ষণে সকলে নিচে চলে গেছে।কেঁপে ওঠে আরোহী, আরোহীকে কাঁপতে দেখে হাতের বাঁধন আরও দৃঢ় করে আঁধার। আরোহীর হাসফাস লাগা শুরু হয়,আঁধার আরোহীর অবস্থা দেখে হালকা হাসে।
–‘অন্যের বাসর নিয়ে এতো এক্সাইটমেন্ট মেডাম যে বাসর ঘর অব্দি সাজিয়ে দিলেন কিন্তু আমার বিয়ের যে তিন মাস হয়ে গেলো তার কি খবর আছে?’
আঁধারের কথায় লজ্জা পায় এবার আরোহী, লোকটা তাকে কি ভাবছে সে তো নীলি ও সোহেলকে সারপ্রাইজ করার জন্য বাসর ঘর সাজালো!এখানে এক্সাইটমেন্ট এর কি আছে!তবে আঁধারকে সেটা মুখে বলার সাহস নেই এই লোক যে নিলজ্জ না জানি উল্টো পাল্টা কিছু বলে দেয়।কিন্তু আঁধার কি আর থেমে থাকার লোক, আরোহী ঘাড়ে হালকা করে একটা চুমু দিয়ে বলে,,,,
–‘বউ আমাদের বাসর কবে হবে?’
আরোহী এবার চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়,এই লোক না জানি কবে তাকে লজ্জা দিতে দিতেই শহিদ করে দেয়।
–‘কিরে তোরা করিডরের মাঝে রোমান্স করছিস, রুমে কি করিস তাহলে সারারাত?’
হঠাৎ রাতুলের কথা শুনে আঁধার আরোহীকে ছেড়ে দাঁড়ায়, আরোহী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে! আঁধার বিরক্ত চোখে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
–‘ব্যাটা সারারাত রুমে নাচ গান করি দেখে আসিস, মুড টায় নষ্ট করে দিলি!’ আসলি তো আসলি কয়েক মিনিট পড়ে আসতে পারলি না?
আঁধারকে বিরক্ত হয়ে দেখে রাতুল দাঁত কেলিয়ে বলে,,,
–‘তোদের এতো সুন্দর রোমান্সটা মিস করতে চাইনি তাই এগিয়ে গিয়েও আবার চলে এসেছি!’
আরোহী বাকি কথা না শুনেই দৌড়ে নিচে চলে যায়,আঁধার কটমট চাহনি নিক্ষেপ করে নিজেও হনহনিয়ে চলে যায়।রাতুল এতে যেনো বেশ মজা পায়,আঁধারকে জ্বালানোর উপায় এখন সে পেয়ে গেছে ভেবেই গাঁ কাঁপিয়ে হেসে উঠে।
নীলিদের বাসা থেকে এসে আঁধার আগে ফ্রেশ হতে যায়,পরে আরোহী ফ্রেশ হয়ে আসে। আঁধার তখন সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আঁধারকে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে আরোহী একবার তাকিয়েই নিজের কাজে মন দেয়।
আঁধার একটু পর পর যখন আরোহীর দিকে তাকাচ্ছিল আরোহী তখন এগিয়ে যায়।আঁধারের পাশে শব্দ করে বসে পড়ে কিন্তু এবার আর আঁধার তাকায় না।আরোহী আঁধারের চুলের ভাজে হাত গলিয়ে দিয়ে বলে,,,,
–‘কি হয়েছে জনাব?’
আঁধার এবার আরোহীর দিকে এগিয়ে বসে একটু, আরোহী অধীর আগ্রহে আঁধারের দিকে তাকায় কিন্তু আঁধার তাকে অবাক করে দিয়ে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে,,,
–‘আমি কি একবার তোমার কোলে মাথা দিতে পারি আরু!’
আঁধারের কথায় আরোহী অবাক হয়, আঁধার অনুমতি নিচ্ছে কোলে মাথা দেওয়ার জন্য এটাও সম্ভব? আঁধার অনুমতি কোন কালেই নেয় না আরোহী থেকে তবে আজকে কেনো? আরোহীর ভাবনার মাঝেই ধপ করে আরোহীর কোলে শুয়ে পড়ে আঁধার।
আরোহী চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় আর মনে মনে বলে,,,” ব্যাটা অনুমতি নিলি আমি কি তোরে অনুমতি দিয়েছি আমার কোলে শোয়ার জন্য, সেই তো আমার বলার অপেক্ষা করলিই না তাহলে অনুমতি চাইলি কিসের ঢং করে।তাই তো বলি ভুতের মুখে রাম রাম কেনো!”
আরোহীকে চোখ মুখ কুঁচকাতে দেখে আঁধার টুপ করে তার গালে একটা চুমু দিয়ে বলে,,,
–‘মিসেস চৌধুরী কি এতো ভাবেন বলেন তো সবসময়?’ আপনার ভাবনায় সবসময় আমায় ও তো রাখতে পারেন নাকি?
–‘আপনাকে কেনো রাখবো আমার ভাবনায় শুনি?’
–‘কেনো রাখবেন জানেন না,আমি আপনার পাঁচটা নয় দশটা নয় একটা মাত্র বর বলে কথা!’
আরোহীর গাল টেনে বলে আঁধার। আরোহী এবার বিরক্ত হয়,গাল টানা জিনিসটা তার ছোট থেকেই পছন্দ নয়,ছোট বেলায় এই একটা জিনিসের জন্য কতো ঝগড়া করেছে মানুষের সাথে! একবার তো এলাকার একটা বড় ভাই তার গাল টেনে বলেছিলো,,,
–‘এই পিচ্চিটা এতো কিউট কেনো তুমি!’
আরোহী কোন কিছু না ভেবেই ছেলেটার পায়ে হাঁটুর নিচে কামড়ে ধরেছিলো। কামড় দিয়েই দৌড়ে পালিয়ে গেছিলো আরোহী।
সেদিন ছেলেটা কামড় খেয়ে আরোহীর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলা শুরু করেছে,ওই ঘটনা তাদের এলাকায় ও ছড়াছড়ি হয়ে যায়। ছেলেটার মা পরের দিন আরোহীদের বাসায় এসে আরোহীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হেসে বলেছিলেন,,,
–‘তুমি আর কামড় দেওয়ার জায়গাই পাও নি মা!’
আরোহী বোকার মতো তাকিয়ে ছিলো সেদিন।
তারপর থেকেই ভয়ে আর কেউ তখন থেকে আরোহীর গাল টেনে দেয়নি।
আরোহী এবার ও একই ঘটনা রিপিট করে অর্থাৎ সে মাথাটা ঝুঁকিয়ে আঁধারের ডার্ক রেড ঠোঁটজোড়ায় জোড়ে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।
আঁধার ব্যাথায় আর্তোনাদ করে ওঠতেই। কোনো মতো তাকে সরিয়ে আরোহী এক ছুটে বাহিরে চলে যায়।আঁধার হতভম্বের ন্যায় বসে থাকে।
#চলবে_