#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪২
🍁
পরেরদিন বিকেলে রাহিরা সকলে চৌধুরী ম্যানশনে হাজির।তৌফিক চৌধুরী ও শিরিন চৌধুরী এসেই নিজেদের রুমে চলে গিয়েছেন ফ্রেস হতে।
শিহাব ও রাহি ড্রয়িং রুমের সোফায় শরীর এলিয়ে বসে আছে।তারা মূলত সকলে শিরিন চৌধুরীর বোনের বাড়ি চট্টগ্রামে বেড়াতে গেছিলো।
–‘রাহু তোর গাঁ থেকে গন্ধ আসছে, সরে বস!’
আরোহীর কথায় বড় বড় চোখে তাকায় তার দিকে রাহি।কিন্তু আরোহী নাক মুখ চেপে ধরেই বসে আছে।
–‘সত্যি বলছিস আরো?’
অবিশ্বাসো কন্ঠস্বর রাহির।শিহাব পাশেই বসে মুখ চেপে হাসছে।
–‘সরে বস তো!’
বিরক্ত হয়ে বলে আরোহী, রাহি কাঁদো কাঁদো ফেঁস করে বলে,,,,
–‘আমার গাঁ থেকে গন্ধ আসছে এটাও সম্ভব?’
বলতে বলতেই উপরে ছুটে চলে যায় রাহি,আরোহী এবার স্বাভাবিক হয়ে বসে। শিহাব নিজেও মুখ টিপে হেসে পেছনে পেছনে চলে যায়।
আরোহী দীর্ঘস্বাস ছাড়ে!এখন একটু গন্ধ যদি তার থেকে দশ হাত দূরে ও থাকে তবুও যেভাবেই হোক না কেনো তার নাক গন্ধ পাবেই।
এরইমধ্যে আঁকলিমা চৌধুরী হাতে কিছু ফল নিয়ে হাজির হন,সেটা দেখেই নাক মুখ কুঁচকায় আরোহী।আঁকলিমা চৌধুরী হেঁসে বলেন,,,
–‘পুষ্টিকর খাবার দেখেই চোখ মুখ কুঁচকাচ্ছেন আম্মা, এইগুলোই খেতে হবে এখন আপনার চুপচাপ সব কয়টা শেষ করেন!’
আরোহী অসহায় চোখে তাকায় মিসেস আঁকলিমা চৌধুরীর দিকে।আঁকলিমা চৌধুরী হেঁসেই আবার যেভাবে এসেছিলেন ওই ভাবেই রান্নাঘরে চলে যান।
!
!
রাহি গোসল করে বের হতেই দু’হাতে তাকে ঝাপটে ধরে শিহাব!চমকে উঠে রাহি,
–‘রিল্যাক্স আমি এটা, এতো ভয় পাও কেনো এখনো?’
শিহাবের কন্ঠ শুনে শান্ত হয় রাহি।
–‘এভাবে কেউ ধরে ভয় পেয়ে গেছিলাম তো!’
হাফ ছেড়ে বলে রাহি।শিহাব আর একটু শক্ত করে ধরে বলে,,,,
–‘বরের ছোঁয়া এখনো চিনতে পারো না,কেমন বউ তুমি!’
–‘ছাড়ো তো, ভালো লাগছে না!’
শান্ত কন্ঠ রাহির।
–‘কি হলো আবার তোমার?’
–‘মাথাটা ঘুরছিলো কেনো জানি না, একটু আগে বমি ও হলো অনেক!’
ক্লান্ত কন্ঠে বলে রাহি।
–‘কি হলো এমন হা করে কি দেখছো?’
শিহাবকে হা করে তাকাতে দেখে বলে রাহি।
–‘তুমি প্রেগন্যান্ট?’
হঠাৎ করেই চেঁচিয়ে বলে শিহাব।হকচকিয়ে যায় রাহি,একটা হাত আপনা আপনি তার পেটে চলে যায়।
–‘কি বলছো এসব তুমি?’
নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে রাহি।
–‘আরে হ্যাঁ, তোমার লাস্ট পিরিয়ড কবে হয়েছিলো?’
–‘দু মাস আগে!’
শিহাব খুশিতে জড়িয়ে ধরে রাহির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,,,,,
–‘ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব কাল রেডি থেকো!’
রাহি হতভম্ব হয়ে যায়, আসলেই কি শিহাব যেটা ভাবছে সেটাই হবে নাকি হবে না!যদি না হয় তাহলে তো শিহাব অনেক কষ্ট পাবে আর যদি হয় তাহলে?
!
!
রাত তখন দুইটা,,,,
আরোহীর প্রতিদিনের মতোই আজকে ও ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুম ঘুম কন্ঠে সে আজকে আর আঁধারকে ডাকে না,আঁধারের বুকে আকিঁ বুকিঁ করতে শুরু করে।
আঁধার নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়, কিন্তু আরোহী এবার আঁধারের চুলে হাত বুলিয়ে,দারিগুলোতে হাত বুলাতে শুরু করে।
আঁধার ঘুম ঘুম চোখে আরোহীর দিকে তাকায়। আরোহী মিষ্টি হেঁসে বলে,,,,
–‘আপনি চোখ খুলছেন কেনো?’
–‘আমি চোখ খুললে কি হবে?’
ঘুমঘুম কন্ঠ আঁধারের।আরোহী ক্রাশ খায় আঁধারের ঘুম ঘুম কন্ঠের উপর।
–‘আমার কাজের ডিস্টার্ব হচ্ছে তো?’
আঁধারের চুলের ভাজে হাত বুলাতে বুলাতে বলে আরোহী। আঁধার এবার আরোহীর হাতটা টেনে নিয়ে হাতে একটা চুমু দিয়ে বলে,,,,
–‘আপনি কি আমায় সিডিউস করতে চাচ্ছেন ম্যাডাম?’ কিন্তু সেটা তো এখন আর সম্ভব নয়।
আরোহী হতভম্ব হয়ে যায়,,,,
–‘অসভ্য লোক, আমি কখন সেটা বললাম!’
–‘নাম মুখ কুঁচকিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছো আমি মিথ্যে বলছি?’
অন্যরকম কন্ঠ আঁধারের,আরোহী থতমত খেয়ে যায়। নিজেকে সামলিয়ে বলে,,,,
–‘আমি আইসক্রিম খাবো!’
ভ্রুকুঁচকিয়ে বলে আঁধার,,,,
–‘অন্য কি খাবা সেটা বলো!’ বাবুর ঠান্ডা লাগবে এখন এইসব খাওয়া যাবে না।
–‘না আমি খাবোই!’
জেদি কন্ঠস্বর আরোহীর।
আঁধার কিছু না বলেই উঠে চলে যায়।আরোহী অবাক হয় হঠাৎ আঁধারকে এভাবে উঠে বাহিরে যেতে দেখে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আঁধার একটা বাটিতে আইসক্রিম নিয়ে এসে কোনো কথা ছাড়াই আরোহীর সামনে রেখে শুয়ে পড়ে।
আরোহী আঁধারের দিকে একটু তাকায় তবে আঁধারকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকাতে দেখে হালকা হাসে আরোহী।
তবে মুখে কিছু বলে না আর চুপচাপ সবগুলো আইসক্রিম খেয়ে বাটিটা একপাশে রেখে শুয়ে পড়ে সে ও।
আঁধার তখনো উল্টো দিকে ঘুরে আছে,আরোহী এবার একটু এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে আঁধারকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,
–‘আমি ঘুমাচ্ছি!’
আঁধার কোনো রেসপন্স করে না আর না ঘুরে জড়িয়ে ধরে। তার অভিমান হয়েছে আরোহী তার কোনো কথায় শুনতে চায় না! সে ও ওভাবেই ঘুমিয়ে যায়।
পরের দিন সকালে ছেলেরা সকলে অফিসে চলে গেছে আর মেয়েরা নিজেদের কাজে ব্যাস্ত।শিরিন চৌধুরী ও আঁকলিমা চৌধুরী রান্নার কাজে, আলিশা তার বাচ্চাদের সামলাচ্ছে,লিমা তাকে সাহায্য করছে আর রাহি ও আরোহী বসে বসে টিভি দেখছে।
রাহি পানি খাচ্ছিলো,তখনই হঠাৎ করেই আরোহী চিৎকার দিয়ে উঠে।রাহির হাত থেকে পানির গ্লাস পরে যায়।
রান্না ঘর থেকে শিরিন চৌধুরী ও আঁকলিমা চৌধুরী দৌড়ে চলে আসেন।আরোহী তখন পেটে হাত দিয়ে ব্যাথায় ছটফট করছিলো।
তারা সকলে আরোহীকে দেখে বুঝতে পারে তার লেবার পেইন উঠছে, শিরিন চৌধুরী তাড়াতাড়ি আঁধারকে ফোন করেন।
কিন্তু সে ফোন রিসিভ করে না,এরইমধ্যে আঁধার ও শিহাব হাতে কতোগুলো ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করে।কিন্তু আরোহীর অবস্থা দেখে আঁধার সবকিছু ফেলে ছুটে চলে যায় তার কাছে।
আঁধার কি করবে বুঝতে পারছিলো না, তখনই শিহাব তাকে তাড়া দেয় আরোহীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য!
আঁধারের টনক নড়ে, সে আরোহীকে কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দেয় পাশেই বসে সে চট জলদি ড্রাইভিং শুরু করে।
শিহাবরা হতভম্ব হয়ে যায়, তাদের রেখে ততোক্ষণ আঁধার আরোহীকে নিয়ে চলে গেছে।শিহাব আর কিছু না ভেবে সকলকে নিয়ে অন্য গাড়িতে উঠে বসে।
আরোহী ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে।আঁধার টলমল চোখে এক বার আরোহীর দিকে তাকায় আর একবার সামনে তাকিয়ে ড্রাইভে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু তার নিজেকে পাগল পাগল লাগতে শুরু করে।
–‘কিছু হবে না আরু,আর একটু সহ্য করো এই তো চলে এসেছি!’
আরোহীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে আঁধার, আরোহী ব্যাথায় ছটফট করতে করতে কোনো মতো টেনে টেনে বলে,,,,
–‘আ-আ-মার খু-ব ক-ষ্ট হ.চ্ছে!’ মনে হচ্ছে আমি বাঁচবো না আঁধার!
–‘আরু এভাবে বলো না আমার কষ্ট হচ্ছে তো আরু,আমি আছি তো আমি তোমায় কিছু হতে দেবো না!’
আরোহীর কপালে চুমু দিয়ে কথাটা বলে আঁধার যখন সামনের দিকে তাকালো,তার অন্তর আত্মা যেনো কেঁপে উঠলো!
সামনের দিক থেকে একটা বড় মালবাহী ট্রাক ধেয়ে আসছে তাদের গাড়ির দিকে,আঁধার আরোহীর দিকে তাকিয়ে কথা বলার কারণে বুঝতেই পারেনি।
গাড়ি সাইডে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ও তার কাছে নেই এখন তাই আর কোনো কিছু না ভেবেই আরোহীকে ঝাপটে ধরে গাড়ি পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করলো তবে শেষ রক্ষা আর হলো না!
মুহুর্তেই যেনো দু’টো গাড়ির সংঘর্ষে বিকট একটা শব্দ তৈরি হলো।আঁধার পিট পিট করে চোখ খুলে ধির কন্ঠে শুধু একবারই বললো,,,,,
–‘ভালোবা-সি আরু-পাখি,তোমা-য় শেষবারের মতো র-ক্ষা করতে পারলাম না!’
আরোহী আঁধারের বুকে লেপ্টে থাকলেও তার অবস্থা খারাপ পুরো শরীরে রক্তে মাখামাখি, আর আঁধার সে তো তার আরু পাখিকে বাঁচাতে গিয়েই নিশ্চুপ হয়ে আছে।তার মাথা দিয়ে রক্তের স্রোত পড়ছে একসময় দু’জনে একসাথে নিস্তেজ হয়ে যায়।
নিস্তেজ হওয়ার আগে আরোহী একবার আঁধারের মুখটা ছুঁয়ে দেখে নেয়।তারপর ধিরে ধিরে চোখ বুঁজে আসে তার।
হয়তো সেও শেষ বারের মতো তার রাগী গম্ভীর বরটাকে কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তার ইচ্ছে হয়তো পূরণ হওয়ার ছিলো না।
#চলবে?
#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪৩
🍁
এইটুকু পড়তেই ক্যারির হাত থেকে ডায়েরিটি ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেলো! তার চোখ দিয়ে ও অঝোর ধারায় বৃষ্টির পানির মতো চোখের পানি পড়ছে!
সে যেনো একটা ঘোড়ের মধ্যে আছে,কিন্তু তার চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়ছেই। তার পাশের ক্যাথির ও একই অবস্থা!
এই মুহুর্তে যে কেউ এই দু বোনকে দেখলে বলবে তারা নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ডের কাছে ধোকা খেয়েছে, তাই এভাবে কাঁদছে আর মূর্তির মতো বসে আছে!মিসেস ফ্লোরা ফারুকি রুমে ঢুকেই মেয়েদের অবস্থা দেখে অবাক হন!
–‘হোয়াট হ্যাপেন্ড মাই চাইল্ডস?’ হোয়ায় বোথ আর ইউ ক্রায়িং?’
অস্থির কন্ঠে যখন কথাটা বলেই এগিয়ে আসেন মিসেস ফ্লোরা ফারুকি তখন তাদের উভয়ের ধ্যান ভাঙ্গে।কিন্তু কান্না থামে না!
ক্যাথি দৌড়ে গিয়ে তার মমকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে। কিন্তু ক্যারি কিছু একটা ভেবে ফ্লোর থেকে নীল কভারের ডায়েরিটি সযত্নে হাতে তুলে নেয়!
মিসেস ফ্লোরা ক্যারির দিকে অদ্ভুত নজরে তাকান, তবে ক্যাথির কান্নার বেগ বারতে দেখে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন তবে ক্যারির থেকে নজর সরিয়ে নেননি তিনি।
ক্যারি সময় নষ্ট না করেই ডায়েরিটি উল্টে পাল্টে দেখতে থাকে,তবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি না পেয়ে এবার সে ডায়েরিটি ছুঁড়ে মারে!
ডায়েরিটি ছুঁড়ে মারতেই সেটা একটা কাঁচের শোপিজে লেগে নিচে পড়ে যায়,আর শোপিজটি পড়ে ভেঙ্গে যায়। কিছু ভাঙ্গার শব্দ ক্যাথির কান্না থেমে যায়, মিসেস ফ্লোরা ফারুকি আঁতকে উঠেন।
কারণ শোপিজটি ক্যারির প্রিয় শোপিজেগুলোর মধ্যে এজটা! ক্যাথি চোখের পানি মুছে ক্যারির দিকে তাকায়, ক্যারি নিজের চুল খাঁমচে ধরে মাথা নিচু করে আছে।
মিসেস ফ্লোরা ফারুকি অবাক হন,কারণ নিজের প্রিয় জিনিস গুলোর ব্যাপারে ক্যারি অনেক কঠোর, আর সেই ক্যারিই কি না এখন অব্দি চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে!
ব্যাপারটা যে অনেক সিরিয়াস সেটা তিনিই ভালোই বুঝতে পারছেন।তিনি ক্যারির এগিয়ে যেতে গেলেই সে উঠে সোজা ডায়েরিটির কাছে চলে যায়, এতে করে তার পায়ে বেশ কয়েকটা কাঁচ ঢুকে যায়।
চেঁচিয়ে উঠে ক্যারি,ক্যাথি ও মিসেস ফ্লোরা ফারুকি দৌড়ে এগিয়ে যান!তবে ততোক্ষণে ক্যারি ডায়েরিটি কুড়িয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে!
অবাকের থেকেও বেশি অবাক হয়ে যান এবার ফ্লোরা! থেমে যায় তার পদচারণ, তবে থেমে থাকেনা ক্যাথি!কিন্তু তাকেও থেমে যেতে হয় ফ্লোরার কারণে!তার হাত টেনে থামিয়ে দেন ফ্লোরা!
–‘ক্যাথি ডিয়ার কেয়ার ফুল,গ্লাস গুলো পায়ে গেঁথে যেতে পারে!’
–‘বাট মম!’
–‘আমি দেখছি,তুমি দাড়াও!’
বলেই তিনি একটা ঝাড়ু হাতে নিয়ে পরিষ্কার করতে করতে এগিয়ে যান!ক্যারিকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দেন তবে কোনো প্রশ্ন করেনি এখনো তিনি!
ক্যারি একপলক নিজের মমের দিকে তাকায়, তারপর চোখ ঘুড়িয়ে তার জমজ বোন ক্যাথির দিকে তাকায়। ক্যাথি তার বোনের দৃষ্টি দেখে এগিয়ে এসে পাশে বসেই মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়!
ক্যারি তার বোনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে হাউমাউ করে!ফ্লোরা ততোক্ষণে ক্যারির পায়ের কাঁচগুলো বের করে ড্রেসিং করে দেন।
ক্যারি তখনো কান্না থামায়নি আর তার সাথে এবার ক্যাথিও যোগ দিয়েছে।
ফ্লোরা এবার দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয়,মায়ের ভালোবাসা পেয়ে দু’বোনে মাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্না কাটি করে!তবে একসময় চুপ হয়ে যায়।
–‘হোয়াট হ্যাপেন্ড মাই ডিয়ার এঞ্জেল’স?’
দু’বোনের মাঝখানে বসে কথাটি বলেন ফ্লোরা ফারুকি!
–‘মম উই ওয়ান্ট টু গো দেয়ার!’
কাতর কন্ঠস্বর ক্যারির! ফ্লোরা ভিষণ অবাক হন,অবাক কন্ঠেই তিনি এবার বলে উঠেন,,,
–‘হোয়ার ডিয়ার?’
–‘বাংলাদেশে , আওয়ার কান্ট্রি মম।’
ক্যাথি তার মায়ের কাথে মাথা রেখে বলে।ফ্লোরা চরমে ওঠেন।
–‘বাট তোমরা তো…’
–‘উই নো মম,বাট বাংলাদেশের সব মানুষ এক হয় না মম!’ নাও উই লাভ’স দ্যাট কান্ট্রি!
মাঝ পথে থেমে যেতে হয় ফ্লোরা ফারুকিকে, ক্যারির এহেন কথায় চরমে যান তিনি!’
–‘আমরা যেতে চাই মম,প্লিজ!’
ক্যারির কথা শেষ হতেই ক্যাথি অনুরোধের কন্ঠে বলে উঠে কথাটি।
–‘বাট হোয়াই ডিয়ার?’ আই কান্ট আন্ডারসট্যান্ড হোয়াই আর বোথ অফ ইউ গো দেয়ার?’
ফ্লোরার কথা শুনে ক্যারি এবার উৎসাহের সাথে বলে উঠলো,,,
–‘ তাশরিফ আঁধার চৌধুরী!’
–‘হোয়াট,হু ইজ হি?’
ফ্লোরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
–‘আরোহী’স হাসবেন্ড!’
–‘আরোহী, হু ইজ দ্যাট গার্ল?’
আরেক বার অবাক কন্ঠ ফ্লোরা ফারুকির।
এবার ক্যারি ও ক্যাথি উভয়েই একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠে,,,
–‘উফ মম,দে আর হাসবেন্ড ওয়াইফ!’
–‘ওখেই আই আন্ডারসট্যান্ড ডিয়ার, বাট আই ডন্ট নো হু ইজ হি এন্ড সি?’
–‘লুক এট দিস মম?’
–‘বুক?’
ক্যারির হাতের ডায়রিটিকে দেখে যখন ফ্লোরা ফারুকি কথাটি বললেন সাথে সাথেই দু’বোননে একত্রে হেঁসে উঠলো।
–‘নো,ইট’স কল ডায়েরি!’
উৎসাহের সাথে কথাটি বলে উঠে ক্যাথি।ফ্লোরা ফারুকি এবার ভালো করে লক্ষ করলেন!হ্যা আসলেই এটা ডায়েরি যেটা তার ছোট রাজকন্যাটা বুকে জড়িয়ে ধরে ছিলো এতোক্ষণ। কিন্তু কি আছে এতে?
–‘ওহ,আই সি!’ বাট এটা তো পুরাতন মনে হচ্ছে আর কারো ইউস করা ও মনে হচ্ছে ? কিন্তু তোমাদের কাছে কেনো? কার ডায়েরি এটা?
চিন্তিত কন্ঠ ফ্লোরা ফারুকির! এবার তার দুই মেয়ে তাকে দু’দিকে থেকে জড়িয়ে ধরে সম্পূর্ণ ঘটনা শুরু থেকে বলতে শুরু করে সবে শর্ট ভাবে।
সবটা শুনে তিনি একবার তার মেয়েদের দিকে তাকান!তারা বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য কতোটা এক্সাইটেড দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তিনি এবার বললেন,,,
–‘বাট আঁধার ও আরোহীকে তোমারা খুঁজে পাবে কিভাবে ডিয়ার?’ বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও সেখানে কোটি কোটি মানুষ থাকে?
মায়ের কথা শুনে ক্যারি ও ক্যাথি চিন্তায় পড়ে যায় আসলেই তো? মন খারাপ করে বসে পড়ে দু’জনে।
–‘ওরা তো অন্য দেশের ও হতে পারে তোমরা সিয়র হচ্ছো কিভাবে ওরা বাংলাদেরই?’
ফ্লোরা ফারুকি ভাবুক হয়ে বলেন।
–‘কজ আমরা লাস্ট টাইম,আই মিন তিন /চার বছর আগে যখন বাংলাদেশে গেছিলাম এই ডায়েরিটা আমরা সেখানেই একটা গাছ তলায় পেয়েছিলাম!’ নিয়ে এসেছিলাম ঠিকই তবে পড়ার সুযোগ হয়নি কখনো!
ক্যারির কথায় তার মা তার দিকে তাকায় এবার!
–‘কিন্তু কোথায় সেটা?’
–‘গ্রান্ডমমের বাসা থেকে অনেক দূরে ঘুরতে এসে পেয়েছিলাম!’
ক্যাথি তার মায়ের উৎসহের কন্ঠ শুনে বলে।
–‘ইউ মিন চট্টগ্রাম?’
–‘ইয়াহ আওয়ার লাভলি মাদার!’
আবার একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠে তারা।
–‘ডায়েরিটাতে তাদের ঠিকানা,বা এনিথিং ইল’স আছে কি?’
কৌতূহল অনুযায়ী জিজ্ঞেস করে ফ্লোরা ফারুকি।
–‘নো মম!’
ক্যাথি মন খারাপ করে বলে।
–‘এমনকি শেষ এ আর কিছুই লেখা নেই মম সব পেইজ সাদা!’
উদাস কন্ঠ ক্যারির।
–‘তাহলে খুঁজবে কিভাবে?’
–‘উই ডন্ট নো!’
চিন্তিত কন্ঠ তাদের। ফ্লোরার নিজের ও বাচ্চাদের কাছে এসব শুনে কৌতূহল জেগেছে কিন্তু কিভাবে খুঁজবে তাদের সেটায় বুঝতে পারছে না।অনেকক্ষণ ভাবার পর এবার তিনিই চেঁচিয়ে উঠেন,,,,
–‘সোশাল মিডিয়া!’
ক্যাথি ও ক্যারি নিজেরাও চমকে উঠে, আসলেই তো তারা এতোক্ষণ ভাবেই নি এটা।আর কিছু না ভেবে একসাথে জড়িয়ে ধরে তার মাকে।
–‘লাভ ইউ মম!’
তার মায়ের দু’গালে চুমু দিয়ে বলে দু’জনেই।ফ্লোরা ফারুকি হেঁসেই বলে উঠেন,,,,
–‘সার্চ করো তাহলে কুইক!’
ক্যারি দৌড়ে ডিভান থেকে নিজের আই প্যাড নিয়ে আসে।প্রথমেই তারা তাশরিফ আঁধার চৌধুরী দিয়ে সার্চ করে,সামনে একটা সুদর্শন পুরুষের ছবি ভেসে ওঠে।
ডায়েরিতে আরোহীর বর্ণনা অনুযায়ী তাদের বুঝতে সমস্যা হয়না এটা আঁধার!
আরোহীর আঁধার যাকে তারা খুঁজছিলো।আঁধারকে দেখে তার উভয়েই ক্রাশ খেয়ে যায়,তাদের মতে আঁধারের মতো সুদর্শন পুরুষকে তারা কখনোই দেখেনি।
কিন্তু তার আইডিতে ঘুরতে গিয়ে হতাশ হয় তারা কারণ তিন বছর আগের পোস্ট সব।তার মানে হয়তো তার পর থেকে আঁধার আর সোশাল মিডিয়াতে আসে নি।মন খারাপ হয়ে যায় তাদের, তাহলে কি আঁধার আর বেঁচে নেই।
–‘নো নো ইটস নট পসিবল, মম আঁধার বেঁচে আছে তাই না? ‘ আমি জানি আঁধার বেঁচে আছে, আমার হার্ট বলছে।
ক্যারির চিৎকারে ফ্লোরা ফারুকি দীর্ঘস্বাস ছাড়েন,তার মেয়ের কথা যেনো সত্যি হয় সেটা উনি নিজেও চান। তবে আঁধারের সোশাল মিডিয়া একাউন্ট দেখে মনে হচ্ছে তার মেয়ের চিন্তা ভাবনা ভুল।
–‘ক্যারি,আরোর নামের একাউন্ট খুঁজে পেলাম না তো!’
ক্যাথির কথায় ক্যারি এবার চোখ মুছে বলে,,,,
–‘ দেখি! ‘
এরপরও সে আঁধারের একাউন্টে আবার ঢুকে তার ঠিকানা, ভার্সিটি সব দেখে নেয়।
–‘আঁধারের বাসা ঢাকাতেই, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তো তার মানে আরোহী ও সেখানেই পড়তো।’ আমাদের ঢাকায় যেতে হবে ক্যাথি আর আজকেই।
–‘হোয়াট আর ইউ সেয়িং ডিয়ার?’ বাংলাদেশ আর আজকেই, আর ইউ ক্রেজি?
ফ্লোরা ফারুকির কথা শুনে ক্যাথি ও ক্যারি অসহায় চোখে তাকায় তার মায়ের দিকে।কিন্তু তাদের পাত্তা না দিয়ে ফ্লোরা ফারুকি রুম থেকে বের হয়ে যায়।
–‘মম তো চলে গেলো!’
ক্যাথির কথা শুনে ক্যারি এবার উৎসাহের সাথে বলে,,,
–‘ডোন্ট প্যানিক,আমরা যাচ্ছি এটাই ফাইনাল!’ আমি এই নীল ডায়েরির মেয়েটি কে সেটা দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি! আই ওয়ান্ট টু সি হার এন্ড আই ওয়ান্ট টু নো , পরে কি হলো? কোথায় তারা?
–‘বাট মম?’
–‘ডোন্ড ওয়ারি আমরা রাজি করাবো চল!’
ক্যারির কথা শুনে ক্যাথি মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়।কারণ সে নিজেও এক্সাইটেড নীল ডায়েরির সেই মেয়েটিকে দেখার জন্য।
আচ্ছা আঁধারের মতো কি আরোহী ও দেখতে সুন্দর হবে?আঁধার কি আদোও বেঁচে আছে আর আরোহী ও তাদের বেবি? দু”বোনেই অনেক এক্সাইটেড!
#চলবে?