নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি পর্ব-৩৯

0
597

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৩৯

🍁

চেক-আপ শেষ করে ক্লান্ত পায়ে এসে হাসপাতালের করিডরের একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে আরোহী! আঁধার ফোনে কথা বলছিলো,আরোহীকে এভাবে এসেই বসতে দেখে ভয় পেয়ে যায় সে!

–‘এই তুমি ঠিক আছো,এভাবে বসে পড়লে কেনো?’

ব্যাস্ত হয়ে বলে উঠে আঁধার, আরোহী বিরক্ত হয়ে বলে,,,

–‘আপনি এতো ভয় পাচ্ছেন কেনো বলেন তো কয়েকদিন থেকে?’

–‘মানে?’

অবাক কন্ঠ আঁধারের।

তপ্ত শ্বাস ফেলে এবার আঁধারকে টেনে তার পাশে বসিয়ে বলে আরোহী,,,,

–‘আমি ঠিক আছি ক্লান্ত লাগছিল তাই এভাবে বসে পড়লাম!’

–‘ও তাই বলো…’

–‘হ্যা জানি তো আপনি ভয় পেয়ে গেছিলেন?’

আঁধারকে সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়েই বলে উঠে আরোহী।

–‘বড্ড বেশি কথা বলা শিখে গেছেন আপনি মিসেস চৌধুরী!’

আরোহীর নাক টিপে দিয়ে আবার বলে,,,

–‘চেক-আপ শেষ সব?’

–‘হুম!’

–‘ডাক্তার আপনাদের ভিতরে ডাকে? ‘

একজন নার্স কথাটা বলেই চলে গেলেন।

আঁধার আরোহীকে এক হাতে আগলে নিয়েই ডাক্তারের চেম্বারের চলে যায়।

!
!

–‘আশা বাচ্চারা কাঁদছে তো কখন বের হবে ওয়াশরুম থেকে তুমি!’

আদরের চিৎকারে আলিশা তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে গেলে আদর ছুটে গিয়ে ধরে।

–‘আসতে কালকেই বাচ্চা হলো আর আজকেই দৌড়াদৌড়ি করতে চাচ্ছো নাকি?’

আদরের কথা শুনে আলিশা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,,,,

–‘তাহলে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছিলে কেনো?’

আদর অবাক হয় তবে সেটা প্রকাশ না করেই বলে,,,

–‘ওরা কাঁদছে যে তাই!’

আলিশা আর কিছু না বলেই তার একটা ছেলেকে কোলে নিয়ে খাওয়াতে শুরু করে, তবে আর একটা যে কাঁদছে তার কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না।

–‘আরে এর কি হবে এ যে কাঁদছে?’ একে কে খাওয়াবে?

কথাটা বলার সাথে সাথেই আলিশা কটমট চাহনিতে তাকায় আদরের দিকে।আদর ভেবাচেকা খেয়ে যায়, আলিশা হঠাৎ রেগে গেলো কেনো বুঝতে পারলো না সে।

–‘সব দোষ তোমার, এখন এই দু’টোকে কে সামলাবে একসাথে? ‘

কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে আলিশা।

–‘কেনো তুমি?’

–‘আর তুমি কি করবে, তুমি খাওয়াতে পারছো না?’

আদরের কথা শেষ হওয়ার সাথেই হুঙ্কার ছেড়ে বলে আলিশা।

আদর থতমত খেয়ে যায়, আলিশার কোল থেকে তাহশিফকে নিয়ে তাহমিদকে ধরিয়ে দেয় আগে। তারপর মুচকি হেসে বলে,,,,

–‘আমি কিভাবে খাওয়াবো বউ আমি কি মেয়ে মানুষ নাকি!’

লাজুক হেসে বলে আদর।আলিশা কপাল চাপড়ায়, একে বলে আর কি হবে।

–‘এই তুমি যাও তো আমার চোখের সামন থেকে দেখতে পারছি না তোমায়!’ তুমি আর তোমার বাচ্চারা আমায় জ্বালিয়ে মারছো।

বলেই ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কেঁদে উঠে আলিশা।আদর আলিশার কাছে বসে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,,,,

–‘আহা বউ কাঁদে না, পরের বছর আরও দু’টো চলে আসবে তোমায় জ্বালানোর জন্য!’

কটমট চোখে তাকায় আলিশা আর আদর দাঁত কেলিয়ে সরে যায় নাহলে তার কপালে আজকে শনি রবি সব আছে।

!
!

বাসায় এসেই শুয়ে পড়ে আরোহী, আঁধার দৃঢ চাহনিতে তাকিয়ে বলে,,,,

–‘নোংরা শরীরে শুয়ে পড়েছো কেনো আরু, বাহিরে কতো ধুলো বালি!’ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো!

আরোহী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে।

–‘কি হলো যাও?’

আঁধারের ধমকে আরোহী এবার দৌড়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।

আঁধার ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলে আর মনে মনে ভাবে,,,,
“এখন থেকে তাহলে ধমক দিয়েই সবকিছু করতে হবে।”

!

!

এক পায়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাহি, তারই পাশে বিছানায় আরাম করে শুয়ে তারই দিকে নজর রেখেছে শিহাব।

–‘আর কতক্ষণ?’

রাহির করুন কন্ঠ।শিহাব রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,,,,

–‘তোমার ওই সাহফিফের সাথে কিসের এতো কথা শুনি?’ আমাকে ইনগোর করো তুমি ওই জন্য তাই না এখন দাঁড়িয়ে থাকো তুমি।

রাহি বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায় শিহাবের দিকে।

–‘এদিকে আসুন তো একবার?’

আদেশের স্বরে বলে রাহি।শিহাব বাধ্য ছেলের মতো উঠে চলে যায়।রাহি এবার কান ছেড়ে পাঁ ঝেরে শিহাবের চুল ধরে টেনে বলে,,,,

–‘হনুমান উনি তরী আপুকে ভালোবাসে, তাই আমি ওদের সেটিং করিয়ে দিচ্ছি!’ আর তুই ঘটনা না জেনেই আমায় এতোক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখলি।

শিহাব অবাক হয়,,,

–‘আরে ছাড়ো ছাড়ো,লাগছে!’ তোমার ভুল আমায় আগে বলা উচিত ছিলো তো!

চুল ছেড়ে রাগী চোখে তাকায় এবার রাহি,শিহাব ক্যাবলা হাসি দিয়ে কেটে পড়ে।

!

!

বিকেলে,,,

আঁধার গিয়েছে রিপোর্ট আনতে দু’ঘন্টা আগে, এখনো ফেরার নাম নেই। আরোহী ভাবছে যে এখনো আসলো না কেনো? নাকি আবার অফিসে চলে গেছে?

লোকটা আজকাল কাজ পাগল হয়ে গেছে, যখনই সময় পায় তখনই অফিসের কাজ করতে বসে পড়ে।

আলিশাকে বা বাড়ির অন্য কাউকে এখনো ব্যাপারটা বলেনি আরোহী।কারণ তারা চিন্তা করবে শুধু শুধু তাই।

এরইমধ্যে আঁধার চলে আসে তবে প্রতিদিনের মতো আরোহীকে জড়িয়ে ধরে না, বরং পাশ কাটিয়ে টেবিলের উপর রিপোর্টটা রেখে দেয়।আরোহী অবাক হয় অনেকটা,আঁধারকে হাত ঘড়ি খুলতে দেখে এগিয়ে যায় সে।

–‘এতো দেরি করলেন যে?’ আর রিপোর্টে কি এসেছে?

আরোহীর কথায় আঁধার পাত্তা দেয় না।হাত ঘড়িটা ড্রসিং টেবিলের উপর রেখে টাই খুলে রেখে দেয়। আরোহী আবার প্রশ্ন করে,,,,

–‘কি হয়েছে আপনার? ‘

আঁধার এবার পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আরোহীর এবার মন খারাপ হয়ে যায়। আঁধার কি তার উপর বিরক্ত, যে একটা প্রশ্নের ও উত্তর দিলো না।

টেবিলের উপর রিপোর্টটা দেখেই এবার কৌতুহল নিয়ে হাতে তুলে নেয় সে।উল্টে পাল্টে দেখতেই হাত পা কাঁপতে শুরু করে আরোহী।

চোখ ফেটে কান্না আসছে তার, এই তো বড় বড় অক্ষরে এই কাগজটায় লেখা,,,,” প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজিটিভ”.

একটা হাত আরোহীর আপনা আপনি পেটে চলে যায়, খুশিতে লাফিয়ে ওঠে সে।কিন্তু পরক্ষণেই তার মন খারাপ হয়ে যায় এটা ভেবে,,,আঁধার কি তবে এই কারণেই তার সাথে এমন ব্যাবহার করলো?

আঁধার কি তবে বেবি আসাতে খুশি নয়? এরপর কি হবে আঁধার আর তার সম্পর্কটা কি তাহলে এই বেবির জন্যই ভেঙ্গে যাবে? এবার শব্দ করেই কেঁদে উঠে আরোহী।

কি হবে তার জীবনে, আঁধারকে ছাড়া সে থাকবে কিভাবে? তার আঁধার কি তবে এই বাচ্চাটার জন্য তাকে ছেড়ে দিবে? আরোহী এইসব ভাবনার মাঝেই পেটে শীতল স্পর্শ পায় সে।

চমকে যায় আরোহী, তবে এই ছোঁয়ার মালিকে সে খুব করে চেনে! এটা তো তারই প্রিয় মানুষ তারই ভালোবাসার মানুষ।

মুখ দিকে কথা বের হয় না তার,তবে আঁধার আরোহীর অ
উুমুক্ত পেটে হাত বুলিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আরোহীকে।

–‘আরুপাখি আমি বাবা হতে যাচ্ছি, তুমি মা হবে?’ কেউ একজন ছোট ছোট হাত দিয়ে আমায় ধরবে,ছোট ছোট পাঁ দিয়ে আমার সাথে পাঁ মিলিয়ে হাঁটবে, আমায় আধো আধো গলায় পাপা বলে ডাকবে, আমার সাথে খেলবে? তুমি বুঝতে পারছো আরু।

আরোহী ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের কান্না আঁটকে ধরার চেষ্টা করে, ততোক্ষণে তার ঘাঁড়ের অনেকটা অংশ ভিজে গিয়েছে। তাহলে কি আঁধার কাঁদছে?

আরোহী আর কিছু না ভেবেই উল্টো ঘুরে জড়িয়ে ধরে আঁধারকে আর শব্দ করেই কেঁদে উঠে। আঁধার আজকে আর আঁটকায় না তার আরুপাখিকে।

–‘আমি অনেক খুশি আরু অনেক, তুমি তুমি…. ‘

আর কিছু বলতে দেয় না আরোহী আঁধারকে নিজের ওষ্ঠের ভাজে আঁধারের ওষ্ঠের স্থাপন করে।থাক না কিছু অনুভূতি অজানা,অদেখা ক্ষতি কি তাতে? সব অনুভূতি সবসময় প্রকাশ করে যে সুখটা পাওয়া যায় না সেটা না প্রকাশ করার মাধ্যমেই অনেক সময় সেই সুখটা পাওয়া যায়।

থাক না কিছু ভালোবাসা অজানাই।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে