নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি পর্ব-২১+২২

0
657

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ২১

🍁

খাবারে বিশ টিশ মেশা ও নি তো আবার,,,

কথাটা বর্জ্য কন্ঠের মতো আঘাত করে আলিশার বুকে, চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আদর আলিশার চোখে পানি দেখে কষ্ট পায়! কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারে না! আরোহীর বুকটাও ধক করে ওঠে, হাজার হোক বোন তো! এতো বড় একটা কথা বোনের বিরুদ্ধে শুনে তার নিজের ও চোখে পানি চলে আসে, মাথাটা নিচু করে নেয় সে! আঁধার সবে মাত্র খাবার টেবিলে এসে বসবে এমন কথা শুনে সে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে যায়!কিন্তু তারেক চৌধুরী নির্বাক।

–‘কি হলো কাঁদছ কেনো, আমি কি ভুল কিছু বললাম!’ তোমার কাছে তো সেসব কোন ব্যাপারই নয়।

আঁকলিমা চৌধুরী চোখ মুখ শক্ত করে আবার বলেন উক্ত কথাটি,,,

আলিশা নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু আজকে সে ব্যর্থ! চোখের জ্বলগুলো ও আজকে মনে হয় পণ করেছে একটু কথার আঘাতেই গড়িয়ে গড়িয়ে পড়বে!

–‘একদিন বিশ মেশানো খাবার খেলে কিছুই হবে না আম্মু, বরং কয়েকদিনের জন্য সবাই রেস্ট নিতে পারবো কি বলো?’

চেয়ার টেনে বসতে বসতে কথাটি বলে আঁধার। আরোহীর মুখ হাসি ফুটে উঠে, এই লোকটা আসলের অন্যরকম! আলিশা আঁধারের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। আঁকলিমা চৌধুরী চোখ মুখ শক্ত করে আঁধারের দিকে তাকায়!

–‘আরে খিঁদে পেয়েছে আলিশা দেখি কি ব্রেকফাস্ট বানিয়েছো!’

বলেই টেবিলের উপরে রাখা সবগুলো খাবারের দিকে নজর দেয়। আদর হাসে তার ভাইয়ের কান্ডে, যেখানে তার বউয়ের হয়ে সে কিছুই বলতে পারলো না অথচ তার ভাই ঠিকই তার হয়ে উত্তরটা দিয়ে দিলো! মনে মনে ভাবছে আমাকে ও শক্ত হতে হবে, আলিশাকে বদলাতে সাহায্য করতে হবে। মেয়েটা সবে মাত্র নিজেকে বদলানো শুরু করেছে এরই মাঝে এমন পরিস্থিতি আসলে সে হয়তো নিজেকে একা ভাববে।

–‘আরে কি হলো আলিশা দাঁড়িয়ে আছো কেনো, দাও সবাইকে নাস্তাগুলো!’

আঁধার আবার কথাটি বলে নিজে নাস্তা উঠিয়ে আরোহীর প্লেটে দেয়। আরোহী মুচকি হেসে আলিশার দিকে তাকিয়ে ইশারায় দিতে বলে। আলিশা চোখের পানি মুছে তারেক চৌধুরীকে নাস্তা দেয়, তিনি কি মনে করে জানি আলিশার মুখের দিকে তাকায়।আলিশার চোখ মুখে তিনি সত্যিকারের অনুশোচনা দেখতে পারছেন! তার মায়া হয়, তিনি আলিশাকে নিজের পাশের চেয়ারে বসতে বলেন।

–‘না না আঙ্কেল আমি ঠিক আছি, আমি পরে খাব!’

আদরকে খাবার দিতে দিতেই বলে আলিশা। কিন্তু তারেক চৌধুরীর কথাটি পছন্দ হয়নি তিনি চোখ মুখ শক্ত করে বলেন,,,

–‘আঁধার ও আদরের কাছে শুনলাম তুমি অনুতপ্ত তাই আমি ও তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি এমনটা ভাবাটা তোমার বোকামি!’ তবে হ্যা বন্ধুর মেয়ে হিসেবেই বসতে বলেছি।

তারেক চৌধুরীর কথায় আলিশার ভালো মনটা খারাপ হয়ে যায়।কষ্ট পায় আবার সে, আঁকলিমা চৌধুরীর ব্যাবহারে কষ্ট পেলেও এতোটা কষ্ট হয়নি যতোটা না তারেক চৌধুরীর কথায় হয়েছে।

আঁধার এক মনে খেয়েই চলেছে, আদর ও আরোহী খাবার নাড়াচাড়া করছে কিন্তু খেতে পারছে না! আঁকলিমা চৌধুরী আলিশার বানানো খাবার খায় না তিনি নিজেই ফল কেটে নেন খাওয়ার জন্য! যদিও তিনি সচারাচর সকালে ফল খান না তবে আজকে আলিশার বানানো খাবার খাবে না তাই ফলই খাচ্ছেন তিনি। আলিশা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না! এরই মধ্যে আদর বলে উঠে,,,

–‘এ কি আম্মু তুমি হঠাৎ ফল খাচ্ছো এসময় যে?’

আদরের কথায় আঁকলিমা চৌধুরী কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,

–‘আমি অকালে মরতে চাই না!’ মোট কথা আমি এক বিন্দু ও এই মেয়েটাকে বিশ্বাস করি না।

আঁধার খাওয়া থামিয়ে আদরের দিকে তাকায়, আদরকে অসহায় চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসে আঁধার। আরোহীকে ইশারায় আলিশাকে বসিয়ে দিতে বলে।আরোহী আঁধারের ইশারা বুঝতে পেরে আলিশাকে টেনে বসিয়ে দেয়।

আঁকলিমা চৌধুরী শক্ত চোখে এবার আরোহীর দিকে তাকায়!কিন্তু আরোহী সে দিকে খেয়াল নেই, সে আলিশাকে এক চামচ নুডলস খাইয়ে দেয়। আলিশা পরে খাবে বললেও আরোহীর জোড়াজুড়িতে খেয়ে নেয়।

আরোহী চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই আঁকলিমা চৌধুরীর দিকে চোখ যায় তার। ইনোসেন্ট একটা হাসি দিয়ে খাওয়ার মনোযোগ দেয় সে, কিন্তু আঁকলিমা চৌধুরী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আলিশার দিকে তাকিয়েই খাবারটা শেষ করে।

তারেক চৌধুরী খাওয়া শেষ করে আঁকলিমা চৌধুরীকে ঘরে আসতে বলে! স্বামীর পেছন পেছন তিনিও চলে যান। এতোক্ষণে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে সকলে। আদর ও আঁধারর সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে!আরোহী হাফ ছেড়ে বাঁচে, কিন্তু আলিশা নির্বাক হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে! আরোহী আলিশার কাঁধে হাত রেখে বলে,,

–‘মন খারাপ করিস না আপু সব ঠিক হয়ে যাবে!’

আলিশা মাথা নাড়ায়। আদর আলিশার হাতে হাত রাখে, আলিশা চোখ তুলে তাকায় তার দিকে। আদর আলিশার চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে বলে,,

–‘ডোন্ট ক্রাই আশা,সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি শুধু চেষ্টা করো! ‘ আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।

আলিশার কান্না পায়,এই মানুষগুলো তার জন্য সবকিছু করছে! তার হয়ে প্রতিবাদ ও করছে অথচ সে একসময় এদের সাথে কতো কি করেছে। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে আলিশা আদরের দিকে তাকায়।

আদর চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে, আঁধার উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,

–‘তবে হাল ছেড়ে দিলে হবে না, চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে!’

আলিশা মাথা নাড়িয়ে আঁধারকে ধন্যবাদ বলে। আঁধার হেসে চলে যায়।

ভার্সিটির গেইটের কাছে একে একে দুইটা গাড়ি এসে থামে, সকলে এক পলক তাকিয়েই বুঝে যায় কারা এসেছে! তবে নীলিমা দৌড়ে চলে আসে একটা গাড়ির সামনে, ততোক্ষণে আঁধার নেমে দাঁড়িয়েছে। নীলিমাকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে ভ্রুকুঁচকায় আঁধার!

নীলিমা হাসি মুখে আঁধারকে কিছু বলবে তার আগেই পাশের দরজা খুলে আরোহীকে বের হতে দেখেই অবাক হয়ে যায় সে।আরোহীকে দেখেই মেজাজটা তার খারাপ হয়ে যায়।কিছু বলবে তার আগেই তাকে অবাক করে দিয়ে আরোহী চুপচাপ সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

নীলিমার সাথে তরী ও বাকি সবাই ও অবাক হয়ে যায়, কিন্তু শিহাব,সোহেল ও রাতুল স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ততোক্ষণে আদর ও আলিশা ও গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে যায়।আরোহীকে চলে যেতে দেখে আদর ডাকে,,

–‘আরে আরো তুমি চলে যাচ্ছো কেনো দাঁড়াও!’

আরোহী পেছনে ঘুরেতেই হাতের ইশারায় ডাকে আবার আদর। আরোহী এক পলক সবার দিকে তাকিয়ে আবার আদরদের দিকে এগিয়ে যায়, কিন্তু মাঝ পথে নীলিমার একটা প্রশ্ন শুনে দাঁড়িয়ে যায়।

–‘ওই মেয়েটা তোর সাথে কেনে আঁধার?’

নীলিমার প্রশ্নে আঁধার ভ্রুকুঁচকে তাকায়। আরোহী আঁধারের উত্তরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে!

–‘কোন মেয়েটা?’

কিছুই না বোঝার মতো করে বলে আঁধার। নীলিমার রাগ হয় কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না।মুখে মিথ্যে হাসি ফুঁটিয়ে বলে,,

–‘আরোহী!’

আঁধার মুচকি হেসে বলে,,,

–‘এবার ঠিক আছে, ওকে আর ওই মেয়েটা বলে ডাকবি না সুন্দর একটা নাম আছে ওর সেটা বলে ডাকবি!’ আর সেটাও না পারলে তুই ওকে সবার মতো আরো বলেই ডাকতে পারিস।

রাতুল ফিঁক করে হেসে দেয়। তরী মুখ চেপে হেসে ওঠে, কিন্তু সোহেল ও শিহাব গম্ভীর হয়েই থাকে।নীলিমা চোখ মুখ শক্ত করে হাত দিয়ে নিজের জামা চেপে ধরে রাগ কমানোর চেষ্টা করে! আলিশা ও আদর সবার দিকে তাকায় একবার আবার আঁধারের দিকে তাকায় তারা কিছুই বুঝতে পারছে না।

আরোহী আঁধারের রসিকতায় হাসে ও না রাগেও না তবে তার অভিমান হয়, লোকটা তাকে বউ বলে পরিচয় দেয়নি এখন ও তাহলে!

আঁধার আরোহীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,

–‘তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনে এদিকে আসো!’

আরোহী তবুও এক পাঁ এগোচ্ছে না দেখে আঁধার বিরক্ত হয়ে আরোহীর হাত টেনে তার সামনে নিয়ে আসে। আরোহী অসস্তিতে পড়ে যায়, হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু আঁধার হাত ছাড়ে না উল্টো শক্ত করে ধরে নীলিমার দিকে তাকায়।

নীলিমার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আছে, সে একবার আরোহী ও আঁধারের হাতের দিকে তাকায় তো একবার আঁধারের দিকে।

আঁধার সোহেলের দিকে তাকায়, সোহেল নীলিমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু তার চোখমুখে বিষাদের ছায়া।হয়তো প্রেয়শীর মনে অন্যকারোর জন্য কঠিন অনুভূতি দেখেই সেটা প্রকাশ পাচ্ছে।

–‘ওকে তুই নাম ধরে না ডাকলে ও ভাবি বলে ডাকতে পারিস!’

আঁধারের কথাটা শুনে নীলিমা অবুঝের মতো তাকায় তার দিকে।

–‘ভাবি মানে!’

–‘ভাবি মানে ও হলো আমাদের প্রাণপ্রিয় বন্ধুর একমাত্র বউ!’

নীলিমার কথার উত্তর হিসেবে রাতুল হেসে কথাটি বলে।

নীলিমা হতবাক হয়ে তাকায় শিহাব ও সোহেলের দিকে। সোহেল মনে মনে হাসে, তার প্রেয়শী এতোটাই বোকা যে রাতুলের কথার মানে এখন ও বুঝতেই পারেনি! হয়তো সোহেল কিংবা শিহাবের বউ ভেবেছে।

–‘ভাবছিস কার বউ তাইতো?’

শিহাবের কথায় তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় নীলিমা।তরী এবার মুখ খুলে,৷

–‘ওয়াও, আরোহী ওরফে আরো আমাদের ভাবি?’ এই তুমি আগে বলোনি কেনো বলো তো তোমায় কিন্তু ভাবি হিসেবে আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে তুই ও তো আগে বলিস নি আঁধার।

তরী উৎফুল্লের সাথে প্রথমের কথাটি আরোহীর একটা হাত ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললেও শেষের কথাটি আঁধারের উদ্দেশ্যে বলে।আরোহী মিষ্টি একটা হাসি দেয় তরীর দিকে তাকিয়ে।

–‘আঁধার বলবে মানে, কি বলছিস তুই তরী?’

নীলিমার কথায় তরীর মনে পড়ে যায় তার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী যে আসলে আঁধারকে অনেক বেশিই ভালোবাসে। এখন কি হবে? কিভাবে সহ্য করবে সে এই কথাগুলো?

–‘কারণ ও তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর একমাত্র বউ আলিনা সিরাতুল আরোহী!’

–‘ভালোই মজা করতে পারিস সোহেল তুই কিন্তু আমি মজার মুডে নেই এখন!’

সোহেল হাসে কিন্তু দৃষ্টি কঠিন করে তার কথাটা তার প্রেয়শীর মজা বলেই মনে হলো হাহ্।

–‘সোহেল মজা করছে না নীলি, আরোহী ইজ মাই ওয়াইফ! ‘

আঁধারের কথাটি বার বার নীলিমার কানে বাজতে থাকে, আরোহী ইজ মাই ওয়াইফ! কতো সহজেই বলে দিলো আঁধার অথচ নীলিমার কাছে কথাটি বিশ বাক্যের ন্যায় লাগছে! চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে আসছে, কি বললো আঁধার এটা,কেনো বললো!

অশ্রু সিক্ত চোখে আঁধারের দিকে তাকায় নীলিমা, আঁধার হতাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারই দিকে।নীলিমা কি বলবে কি করবে ভাবতে পারছে না। আরোহী নীলিমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আঁধারের দিকে তাকায়। আঁধারকে হতাশার দৃষ্টিতে নীলিমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুকে চিনচিন ব্যথার আভাস পায় সে। তৎক্ষনাৎ মাথা নিচু করে নেয় সে।

আঁধারের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যায় নীলিমা, আঁধার আরোহীর দিকে তাকায়! আরোহীকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আর কিছু বলে না।কিন্তু নীলিমা আঁধারের কাছে গিয়ে বলে,,

–‘বিয়ে করেছিস, আমাদের জানাসনি!’

–‘আসলে হঠাৎ করেই হয়ে গেছে রে বিয়েটা!’ তোদের জানাবো জানাবো করে আর জানানো হয়নি।

–‘ভালোবাসিস তোর বউকে?’

নীলিমার প্রশ্নে আঁধার হেসে আরোহীর হাতটা আরও খানিকটা শক্ত করে ধরে বলে,,

–‘জানিনা রে তবে ওকে ছাড়া অন্য কাউকে জীবনে ভাবতেও পারি না! ‘

নীলিমা আঁধারের কথা শুনে ব্যথাতুর হাসি দেয়, আর কিছু বলে না কিন্তু রাতুলদের বলে,,

–‘তোরাও আগে থেকেই জানতিস সব!’

–‘কাল বিকেলের দিকে আঁধার বলেছে!’

শিহাব উত্তর দেয়। নীলিমা হেসে বলে আচ্ছা। সকলে নীলিমার দিকে অসহায় চোখে তাকায়! নীলিমা যে আঁধারকে ভালোবাসে তারা জানে তবে আঁধার কখনো তাকে ওই নজরে দেখেনি সেটাও তারা জানতো। নীলিমার ভালোবাসাটা যে একপক্ষীক, আর ওয়ান সাইড লাভ যে বড়ই ব্যথাদ্বায়ক!

নীলিমার কষ্টটা তারা সকলে বুঝতে পারছে কিন্তু কি করবে ভালোবাসা তো আর সবার প্রতি আসে না!

–‘আচ্ছা আমি যাই রে পরে তোদের সাথে কথা বলবো কেমন!’

কথাটি বলেই নীলিমা আর দাঁড়ায় না, এক ছুটে ভার্সিটির বাহিরে চলে যায়। তরী ও নীলিমার পেছন পেছন যায়।আরোহী বুঝতে পারছে নীলিমার না বলা অনুভূতিগুলো, হয়তো সে ও আঁধারকে ভালোবাসে!

–‘আপুটা আপনাকে ভালোবাসে তাই না!’

এতোক্ষণ নীলিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো আঁধার, হঠাৎ আরোহীর প্রশ্নটি শুনে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। আদর ও আলিশা ও ঘটনাটা বুঝতে পারে।

–‘হুম!’

আঁধারের কথা শুনে আরোহীর মন আর ও খারাপ হয়ে যায়।

–‘একমাত্র বউ বাদে সবাই আমাকে ভালোবাসে কি কষ্ট কি কষ্ট! ‘

আরোহীকে মন খারাপ করতে দেখে বলে আঁধার। আরোহী হেসে ফেলে। আর সোহেল,রাতুল ও শিহাব একসাথে সুর দিয়ে বলে উঠে,,

–‘আহারে কি কষ্ট কি কষ্ট! ‘

আরোহী লজ্জা পায়, আর কোনো দিকে না তাকিয়ে ক্লাসের দিকে ছুট লাগায়।এতোক্ষণের মন খারাপ সব বিষাদের ছায়া কেটে গিয়ে লজ্জায় লাল নীল হতে শুরু করে অনুভূতি গুলো সব।

#চলবে?

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ২২

🍁

কেটে গেছে ৩ দিন, এই ৩ দিনে আরোহী একবারের জন্য ও নীলিমাকে কোথাও দেখেনি৷ এমনকি আঁধারকে জিজ্ঞেস করবে সেটাও পারছে না, আঁধার নিজেও ওই ব্যাপারে আর কথা তুলেও না বলেও না!

আরোহী ভাবছে নীলিমা কি আঁধারের শোকে নিজের সাথে কিছু করেছে নাকি সে ভালো আছে! কেনো জানি না তার অনেকটা চিন্তা হচ্ছে নীলিমা নামক রমনীটির জন্য! আসলে তার চিন্তা করাটাও শোভা পায় না,কারণ নীলিমা তো তারই স্বামীকে ভালোবাসে।তবে আরোহীর হিংসে হয় না, অবশ্য না হওয়ারই কথা আঁধার তাকে বোনের নজরেই দেখে।

তবে এই কয়েকদিনে বাকি সবার সাথে অনেক ভালে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে আরোহীর। সবাই তাকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসে আগলে রাখে।সোহেল, শিহাব ও রাতুল তো আরোহী বলতে পাগল! তারা ভাবতেও পারেনি এমন একটা ছোট বোন পাবে কখনো তারা।

আরোহী নিজেও ওদের মতো ভাই পেয়ে অনেক খুশি, আরোহীর এখন মনে হয় আঁধার তার কেউ না ওরা তার নিজের ভাই! আঁধার এই কয়েকদিনে অনেকবার কথাটি বলেছে ও অবশ্য। কিন্তু বরাবরের মতো গম্ভীর কন্ঠে বলেছে,, “আরু পাখি আমার নিজেকে এখন তোমার বডিগার্ড ছাড়া কিছুই মনে হয় না!”

আরু তখন প্রথমবারের মতো আঁধারের কথায় ভয়, লজ্জা, সংকোচ ছাড়াই বলেছিলো,,” কেনো,আমি কি আপনাকে আমার পেছন পেছন ঘুরাই।”

আঁধার তখন মুখ গোমড়া করে বলেছিলো,,”তা নয়তো কি,আমি তোমার সাথে সাথে থাকি কিন্তু তুমি আমার সাথে একটা বাক্য ও ব্যায় করো না! উল্টো সোহেলদের সাথে কথার উপর কথা বলতেই থাকো, লাইক হাঁসের মতো প্যাক প্যাক করো। কিন্তু আমার সাথে বডিগার্ডের মতো হু হা তেই কথা বলো!”

আঁধারের কথাশুনে সেদিন প্রথমবারের মতো আরোহী মন খুলে হেঁসেছিলো। আর আঁধার মুগ্ধ হয়ে তার বউয়ের হাসি দেখছিলো। তবে তার মুগ্ধতা বেশিক্ষণ টেকে নি, কারণ আরোহী তৎক্ষনাৎ মনে পড়ে যায় আঁধার তাকে হাঁসের সাথে তুলনা করেছিলো! আঁধারের দিকে কটমট চাহনিতে আরোহী যখন বলেছিলো,,,”আপনি আমায় ইন্ডাইরেক্টলি হাঁস বললেন!”

আঁধার তখন মুচকি হেঁসে আরোহীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,,,”ইন্ডাইরেক্টলি কখন বললাম আরুপাখি, আমি তো তোমায় ডাইরেক্টলি হাঁস বললাম!”

আরোহী তখন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলেছিলো,,, ” আমি হাঁস হলে আপনি কি, গন্ডার একটা!”

আঁধারকে গন্ডার বলার সাথে সাথে, আঁধার আরোহীকে ছেড়ে দিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে আরোহীকে বলে,,,” আমাকে কোন দিক দিয়ে তোমার গন্ডার মনে হয়।”

আরোহী তখন হতাশার সাথে বলেছিলো,,,” যে দিক দিয়ে আমায় হাঁস মনে হয় ওই দিক দিয়ে।”

ওইদিন দু’জনে বচ্চাদের মতো ঝগড়া করেছিলো, একসময় আরোহী আঁধারের গায়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে দিয়ে এক ছুটে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।ঘটনা এতো দ্রুত ঘটে যে আঁধার হতভম্ব হয়ে যায়। কিন্তু একটু পরেই শব্দ করে হেঁসে দেয়! তার বউ যে এখন ও বাচ্চা এইটা তারই প্রমাণ!

ছোট বাচ্চারা যখন ঝগড়ায় পারে না তখন থু থু দিয়ে পালিয়ে যায়,ঠিক তেমনি আরোহী যখন ঝগড়ায় পারলো না পানি দিয়ে পালিয়ে গেলো!

এরপর থেকেই আঁধার আরোহীকে ছোট বাচ্চা বলে খেপাতে থাকে, আর আরোহী ও ছোট বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করতে থাকে।

আরোহী এইসব ভেবেই আনমনে হেঁসে দেয়,আঁধার গাড়ি থামিয়ে ভ্রুকুঁচকে আরোহীর দিকে তাকায়! কিন্তু আরোহীর কি আর সে খেয়াল আছে, সে নিজের মতোই ভাবনা গুলো নিয়ে হাঁসছে।

–‘এই তুমি একা একা হাঁসছো কেনো?’

আঁধারের গলা শুনে হকচকিয়ে যায় আরোহী! ভাবনার মাঝে সে এতোই ব্যস্ত ছিলো আঁধার যে তার সাথে আছে সেটা তার মনেই ছিলো না।

–‘কি হলো কথা বলছো না কেনো?’

আরোহীর মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে আঁধার। আরোহী আমতা আমতা করে কিন্তু কি বলবে সে এখন, যে আপনার সাথে আমার খুনসুটি গুলোর কথা মনে করে হাসছি! আঁধার তখন কি মনে করবে আমাকে বেহায়া, না না তা কি করে হয় আমি তো ওনার বউ! কিন্তু বলা টা কি ঠিক হবে।

আরোহীর এসব ভাবনার মাঝেই আঁধার আবার তার সামনে তুড়ি বাজায়।আরোহী তৎক্ষনাৎ ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে।আসে পাশে তাকিয়ে দেখে ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামিয়েছে আঁধার।

–‘আরে ওই যে দেখেন ওইদিকে!’

আঙ্গুল দিয়ে গাড়ির বাহিরে দেখিয়ে দেয় আঁধারকে আরোহী। আঁধার সিরিয়াস কিছু মনে করেই তাকায়। কিন্তু কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার আরোহীর দিকে তাকিয়ে দেখে আরোহী নেই, ততোক্ষণে গাড়ি থেকে বাহিরে চলে গেছে!

চোয়াল শক্ত করে বসে থাকে আঁধার, কারণ সে খুব বুঝতপ পারছে তাকে কথাটা বলবে না তাই এভাবে বোকা বানিয়ে চলে গেলো মেয়েটা! একবার শুধু হাতের কাছে পাই তারপর বুঝাবো তাশরিফ আঁধার চৌধুরীকে বোকা বানানোর শাস্তি কি?

আরোহী তড়িঘড়ি করে দৌড়ে আসতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে উল্টে পড়ে যায়! মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় তার, না দেখেই হাতের বইটা ছুঁড়ে মারে! কিন্তু লোকটা বইটা হাত দিয়ে ক্যাচ ধরে ফেলে।আরোহীর দিকে ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে বলে,,,

–‘এই তুই এই অভ্যাসগুলো চেঞ্জ করবি না,সবসময় যার তার সাথে ধাক্কা খেতেই থাকিস দেখি!’

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে আরোহী চোখ তুলে তাকায়, কিন্তু ছেলেটাকে দেখে লাফিয়ে ওঠে! আরোহীকে লাফাতে দেখে ছেলেটা দু কদম পেছনে চলে যায়।আরোহী খুশিতে গদগদ হয়ে ছেলেটাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। ছেলেটার মুখেও এবার হাঁসি ফুঁটে উঠে। আরোহীকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

–‘কেমন আছিস বুড়ি!’

আরোহীকে বুড়ি বলাতে আরোহী ক্ষেপে যায়,ছেলেটাকে ছেড়ে দু কদম পেছনে চলে যায়। ছেলেটা হাবলার মতো দাঁত বের করে হেসে বলে,,,

–‘রাগ করে লাভ নেই তুই আমার কাছে সারাজীবন বুড়িই থাকবি!’

–‘তোমার সাথে কথা বলবো না আমি তুমি আমায় বুড়ি বলেছো আবার সাহফিফ ভাইয়া!’

আরোহীর অভিমানী কন্ঠস্বর শুনে সাহফিফের হাসি পায় কিন্তু হাসে না। এখন হাসলে আরোহী আরও রেগে যেতে পারে, তাই ঘুর্ণঝড়কে নিজে থেকেই আর নিমন্ত্রণ করলো না সাহফিফ।

–‘আচ্ছা -আচ্ছা বলিস না কিন্তু এখানে কি করছিস।’

–‘আমি তো এই ভার্সিটিতেই পড়ি কিন্তু তুমি এইখানে কেনো?’

আরোহী প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় সাহফিফ।আরোহী সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় সাহফিফের দিকে।আরোহীর দৃষ্টি দেখে ভড়কে যায় সাহফিফ। আমতা আমতা করে বলে,,,

–‘ওই একটা কাজে এসেছিলাম আর কি,বাদ দে তবে আমি কিন্তু এখন তোদের বাসায়ই যাচ্ছি!’ আজকে অনেক আড্ডা দিবো কি বলিস?

সাহফিফের কথা শুনে আরোহী লাফিয়ে ওঠে কিন্তু পরমুহূর্তেই তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আরোহীকে মন খারাপ করতে দেখে সাহফিফ বলে,,,

–‘কি রে তুই খুশি হসনি আমার আসাতে।’

–‘আরে হয়েছি তো অনেক খুশি হয়েছি,কিন্তু আমি তো!’

–‘কি বল?’

–‘কি হচ্ছে এখানে?’

কথার মাঝেই আঁধারের গলা শুনে হকচকিয়ে যায় আরোহী। সাহফিফ ভ্রুকুঁচকে তাকায় আঁধারের দিকে।

–‘আসলে আমরা…’

আঁধার কঠিন চোখে তাকাতেই আরোহী গড়গড় করে বলতে শুরু করে,,,

–‘উনি আমার মামাতো ভাই সাহফিফ ভাইয়া!’

আঁধার এবার স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকায় সাহফিফের দিকে। সালাম দিয়ে হাত মেলায় আঁধার। সাহফিফ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,,,

–‘কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না?’

আঁধার আরোহীর দিকে তাকাতেই আরোহী চটপট বলতে শুরু করে,,,

–‘উনি আমার বর ভাইয়া,আসলে ব্যাপারটা এখন ও কাউকে তেমন জানায়নি বাবা হঠাৎ করেই আরকি!’

–‘কি বলছিস বুড়ি তুই বিয়ে করেছিস অথচ আমি জানি না,হাউ ইজ দ্যাট পসিবল এয়ার?’ তোরা কেউ আমায় একটা বার কিছু বলার প্রয়োজন মনে করিস নি? আমার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে কিন্তু আমি ভাই হয়ে কিছুই জানি না।

কিছুটা আক্ষেপের স্বরে কথাগুলো বলে সাহফিফ। আঁধার ভ্রুকুঁচকায়, তার মানে তাদের বিয়ের ব্যাপারটা এখন ও তেমন কেউই জানে না।আর সেখানে তো আরোহীর মামাতো ভাই নিজেও জানে না, তাহলে জানেটা কে?

আরোহী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না, তার বাবা হয়তো এখন কাউকেই এই ব্যাপারে জানাতে চায় না।

–‘আসলে ভাইয়া!’

–‘থাক আর তোকে কিছু বলতে হবে না, আমার কাজ আছে আমি যাই সময় পেলে চলে আসিস তোদের বাসায়।’

আরোহীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কথাগুলো বলে সাহফিফ। আঁধার সাহফিফের ব্যাবহারে অবাক হয়, কিন্তু তাদের ভাই বোনের ব্যাপারে তার কথা বলাটা ঠিক মনে হয় না তাই চুপ করেই থাকে।

সাহফিফ আঁধারের কাছ থেকে সুন্দর করে বিদায় নিয়ে চলে যায়।আরোহী মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে, সে বুঝতে পারছে সাহফিফ অনেক কষ্ট পেয়েছে!

আঁধার সাহফিফের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আরোহীর দিকে তাকায়, কিন্তু আরোহীকে মন খারাপ করতে দেখে খারাপ লাগে তার। পরক্ষণেই কিছু একটা মনে পরতে আরোহীর হাতের ভাজে নিজের হাত ঢুকিয়ে দেয়! আরোহী ছোট ছোট চোখ করে তাকায়,আঁধার হেসেই বলে,,,

–‘একটু আগে না আমায় বোকা বানিয়ে আসলে এখন কি করবে শুনি?’

আঁধারের কথা শুনে আরোহী কিছুক্ষণ আগে নিজের করা কাজের কথা মনে হতেই আত্মা কেঁপে উঠে। এখন কি করবে সে!

আরোহীকে ভয় পেতে দেখে আঁধার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আরোহীর হাত ধরেই হাঁটতে শুরু করে। আরোহীর ভয় যেনো আর ও দ্বিগুণ হয়! ঢোক গিলে কিছু বলবে তার ও সুযোগ দিচ্ছে না আঁধার, সে নিজের মতো করেই হেঁটে চলেছে।

গাড়ির কাছে নিয়ে আসতেই ভয়ে আরোহী চোখ মুখ শুকিয়ে যায়।তাকে গাড়িতে উঠতে বললে ও উঠবে না জানে আঁধার, তাই ঠেলে তাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দেয়।

আরোহী আঁধারের কান্ডে অবাক হয়ে যায়, আঁধার কি তাকে গাড়িতে লক করে চলে যাবে। এটাই কি তাহলে আঁধারের দেওয়া শাস্তি! আরোহী যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত ছিলো ঠিক তখনই নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব পেতেই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।

গলার কাছে গরম নিশ্বাস এতোটাই জোড়ে পড়ছে যে সে বার বার শিউরে উঠছে! আঁধার যে তার খুব কাছে সেটা আরোহী না দেখেও তার নিঃস্বাসের শব্দে বুঝতে পারছে।আরোহীর দিকে চোখ যেতেই আঁধার বাঁকা হাসি দিয়ে আরোহীর মুখের দিকে ঝুঁকে যায়।এবার আরোহী আরও খানিকটা শিউরে ওঠে, আঁধার আরোহীর মুখের দিকে তাকায়।

মেয়েটা চোখ বুঝে আছে কিন্তু তার মনে হচ্ছে এভাবে মেয়েটার সৌন্দর্য আরও কয়েকগুন বেড়ে গেছে। কথায় আছে না,ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই সুন্দর লাগে!

আঁধারের মনে হচ্ছে কথাটা আসলে তার জন্যই তৈরি হয়েছে,এই যে এই মেয়েটি যাকে দেখলে তার মনের ভিতরের সব ঝড় থেমে যায়।যাকে একবার জড়িয়ে ধরলে তার সব কিছু শান্ত হয়ে যায়। এই মেয়েটিকে সে ভালোবাসে, সত্যিই ভালোবাসে।

যদিও সেটা কাল অব্দি কি ছিলো যানে না তবুও সে এই মেয়েটিকেই ভালোবাসে। আঁধার আরোহীর অবস্থা দেখে তার চোখ মুখে একটা ফুঁ দেয়। এতে যেনো আরোহীর মাথা থেকে পায়ের পাতা অব্দি শিউরে ওঠে। চোখ আরও একটু চেপে বন্ধ করে নেয়।

আঁধার সরে আসে, গাড়ি স্টার্ট দেয়। সে তো এগিয়ে গিয়েছিল আরোহীর সিট বেল্ট লাগানোর জন্য কিন্তু মেয়েটা কি না কি ভেবে বসে আছে! হাসতে ইচ্ছে করছে তার আজকে প্রাণ খুলে কিন্তু হাসি কন্ট্রোল করে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয় সে।

আলিশা সকাল থেকে অনেকবার বমি করেছে, আদর এখন তার খেয়াল রাখে নিজেই। আলিশা আদরের ব্যাবহারে দিনদিন মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে!

আদর যে এতো কেয়ার করতে পারে সেটা হয়তো আদরের সাথে তার বিয়ে না হলে জানতেই পারতো না।সে নিজেও এখন চেষ্টা করে আদরের খেয়াল রাখতে তাই তো আলিশার ছোট বড় সবকিছুর যেমন আদর নিজে থেকে খেয়াল রাখে, তেমনি আলিশা নিজেও আদরের সবকিছুর খেয়াল রাখে।

তবে সে এখন ও আঁকলিমা চৌধুরীর মন জয় করতে পারেনি। তিনি আগের থেকে ও বেশি খারাপ ব্যাবহার করেন এখন আলিশার সাথে। আলিশার মাঝে মাঝে মন খারাপ হলেও মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে।

কিন্তু কষ্টটা একটু কম পায় কারণ তারেক চৌধুরী তাকে ক্ষমা না করলেও কটু কথা শোনান না আঁকলিমা চৌধুরীর মতো৷ আর না খারাপ ব্যাবহার করেন, আরোহীর মতোই আলিশার সাথে ব্যাবহার করেন তিনি।

আর আদর তো আছেই, এই তো একটু আগেও সে আলিশার সব বমি গুলো পরিষ্কার করেছে নিজেই।আবার আলিশাকে একটু সুপ বানিয়ে খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দিয়েছে। এমনকি আলিশাকে শুইয়ে দিয়ে গেছে, আর লিমাকে বলেছে তার পাশে বসে থাকতে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে