#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৩
🍁
টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলাম ওনার গালে।
উনি মনে হয় খানিকটা ভেবাচেকা খেয়ে গেলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আমায় চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলেন।
–‘কি করলে তুমি এটা? হাউ ডেয়ার ইউ?’ সাহস হয় কি করে তোমার?
ওনার চিৎকারে নিজেই নিজের কাছে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। উনি সত্যি সত্যিই আছেন! তার মানে আমি সত্যিই ওনাকে চুমু দিয়ে দিলাম, ও মাই আল্লাহ! কি লজ্জাজনক ব্যাপার। আমি..আমি কি করি এখন, কি বলবো ওনাকে আমি? আর কিছু ভাবতে পারছি না ।
কিন্তু হঠাৎ উনি মিষ্টি হেসে আমায় দু হাতে জড়িয়ে ধরে আমাদের মাঝের দুরত্বটা একদম কমিয়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে হঠাৎ করেই প্রশ্ন করে বসি,,,,
–‘আপনি আমায় জড়িয়ে ধরেছেন কেনো আঁধার?’ আমি…
কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই আঁধার আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে দেয়৷ আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে তখনই তার ফিসফিস কথার শব্দে অবাক হয়ে যাই।
–‘ উহু, নড়াচড়া করো না, দরজায় কে যেনো আছে! সো একদম চুপ করে থাকো।’
–‘কোথায় কে…. ‘
–‘হুসসসস, নো মোর ওয়াড।’ চোখ তুলে ভালো করে দেখো!
আমি ভালো করে তাকাতেই কারো একটা ছায়া দেখতে পাই, কিন্তু কে সেটা বুঝতে পারছি না।
আঁধারের দিকে তাকাতেই তাকে কিছুটা ভাবুক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতে পাই।
কিন্তু আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না, আঁধারের জড়িয়ে ধরাতে অনেকটা অসস্তিতে পড়ে যাই। আর এতোক্ষণ সেটা না বুঝলেও এখন শুধু বুঝতেই পারছি না উপলব্ধি করতেও পারছি। বুকের ভেতরে মনে হচ্ছে ঢোল বাজছে।
আমার অসস্তি আরও কয়েকগুন বাড়ানোর জন্যই হয়তো আঁধার আমায় আরও শক্ত করে চেপে ধরলো।
–‘উফফ বউ এমন পালাই পালাই করছো কেনো বলো তো?’ আমার এখন রোমান্স করার ইচ্ছে করছে সো ডন্ট ডিসটার্ব!
আঁধারের হঠাৎ উচ্চস্বরে বলা কথাটা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। পরমুহূর্তেই মনে হলো আরে উনি তো নাটক করছেন।
উনাকে হঠাৎ করেই আমার মুখের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমার আত্মা মনে হয় হাতে চলে এসেছে৷ কিন্তু উনি ধিরে ধিরে আমার ঠোঁটের দিকে আসছেন তো আসছেনই।
ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। কিন্তু লোকটার তাতে কেনো হেলদোল নেই। হঠাৎ করেই উনি থেমে গিয়ে আমার মুখের দিকে তাকান। কিন্তু একি উনি তাকানো মাত্রই আমার হিচকি শুরু যায়।
হঠাৎ করেই উনি দম ফাটানো হাসিতে মেতে উঠেন। আমি হা করে ওনার হাসির দিকে তাকিয়ে আছি, কি সুন্দর ওনার হাসি! হাসলে ওনার দুগালে টোল ও পড়ে আবার বাহ। তবে আমি এতোদিন জানতাম টোল সাধারণত মেয়েদের গালেই পড়ে কিন্তু ছেলেদের ও যে টোল পড়ে সেটা আজই প্রথম দেখলাম। মনে হলো প্রথম বাড়ের মতো আমি কারো হাসির উপর ক্রাশ খেলাম।
হঠাৎ করেই উনি হাসি থামিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন মনে হয়। গলা খেঁকারি দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,,,
–‘রেডি হয়ে নেও, উই নিড টু গো!’
আমি ছোট ছোট চোখ করে ওনার দিকে তাকাতেই উনি বলে উঠেন।
–‘কি বললাম শুনতে পারো নি?’ নো মোর কোয়েশ্চেন! ওনলি ২০ মিনিটস সময় দিলাম, ১ মিনিট ও যদি লেট হয় তাহলে আমি নিজেই এসে রেডি করাতে বাধ্য হব।
আমি ওনার কথা শুনে নাক মুখ কুচকে তাকাই আর ভাবি,,
ওনাকে যতোটা ভালো মনে করতাম উনি আসলে ততোটা ভালো না। অসভ্য লোক একটা, কথার কি সিরি।
–‘কি হলো যাও।’
আর কিছু ভাবার আগেই ওনার ধমকে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যাই।
আরোহী ওয়াশরুমে যাওয়ার পর পরই আঁধার হেসে ফেলে। এতোক্ষণ সে অনেক কষ্টে নিজের হাসি কন্ট্রোল করে ছিলো।
হঠাৎ করেই আঁধারের দরজার কথা মনে হতে, তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। হয়তো চলে গেছে! দেখেই আঁধার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যায়।
আলিশা আবার নিজের রুমে এসে নিজের চুল টানতে থাকে। রাগে তার শরীর কাঁপছে, আঁধার আর আরোহী যে এক রাতের মধ্যেই এতো কাছাকাছি এসে যাবে ভাবতেই তার রাগ হচ্ছে অনেক। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে রাগ হয়েই বা কি হবে যা করার আরোহী তো এখন আঁধারের বউ।
এরইমধ্যে আঁধার আলিশার দরজায় নক করে। আলিশা প্রথমে থম মেরে থাকলেও পড়ে খুশি হয়ে যায়৷
–‘আঁধার তুমি বাহিরে দাড়িয়ে আছ কেনো, ভেতরে আস!
খুশিতেই বলে উঠে আলিশা।
–‘ আমি তোমায় কিছু বলতে এসেছিলাম আলিশা।’
–‘হুম বলো,তোমার আমার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে না তো! আমি তো তোমারই….
–‘ভাবি হও। ‘
আলিশা কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আঁধার মুচকি হেসে কথাটি বলে।আলিশার হাসি মুখটা কালো হয়ে যায়। এতে যেনো আঁধার খানিকটা মজাই পায়।
–‘আসলে আলিশা ভাবি হয়েছিলো কি বলেন তো, কারো রুমে পারমিশন ছাড়াই লুকিয়ে কথা শুনা ব্যাড মেনার্সের মধ্যে পড়ে জানেন তো। ‘ আর আমি আমার বউয়ের সাথে আপনার উঁকি ঝুঁকি মারার কারণে শান্তি মতো রোমান্স করতেই পারলাম না। বোঝোই তো নতুন নতুন বিয়ে করেছি।
আলিশার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়।
আঁধার আলিশার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,,,
–‘দেখো আলিশা তোমায় আমি কখনও অন্য কেনো নজরে দেখিনি বোনের নজরেই দেখে ছিলাম তাই দূরত্ব মেইনটেইন করে চলতাম সবসময়।’ তোমার আর আমার বিয়ের ব্যাপারটা ও জানতাম না আমি। কাল হঠাৎ যখন আমায় বাবা ডেকে নিয়ে এসে বিয়ে করতে বলে তখনই আমি বারণ করতাম কিন্তু বাবা নিজের অসুস্থতার কথা বলে আমায় বাধ্য করেছিলেন বিয়ে করতে৷ কাল যদি তেমনটা না হতো তাহলে হয়তো তোমায় বিয়ে করতাম ঠিকই কিন্তু কখন স্ত্রীর অধিকার দিতে পারতাম না। আর আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম বিয়ে করে সাথেই বিদেশে চলে যাবো। কিন্তু যখন আমার বিয়েটা তোমার সাথে না হয়ে আরোহীর সাথে হয় তখনই আমার মতামত পাল্টে যায়৷ আরোহীর উপর একদিনেই আমার অনেকটা মায়া চলে এসেছে। আর সবথেকে বড় কথা তুমি এখন আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আর আমার বড় শালী। মানে আমার বড় বোনের মতো। আর আমি চাইলেই এখন তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে পারি প্রতারণার জন্য কিন্তু আমি সেটা করছি না কেনো জানো? কারণ কাল এতো কিছু না হলে হয়তো ৪ টা জীবন নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু আমি মনে করি ভাগ্যে ছিলো হয়তো এইটা হওয়ার তাই তো কবুল বলার কয়েক মিনিট আগেই কেনো এরকম ঘটনাটা ঘটলো। যাই হোক, তোমার গর্ভে এখন আদরের সন্তান সো ভালো হবে নিজের সন্তান নিয়ে ভাবো আর মন দিয়ে সংসার করো। আর হ্যা এই সবকিছুর জন্য শুধুমাত্র তুমি এবং তোমরাই দায়ী আমি বা আরোহী না৷ আমার মনে হয় তোমার একটু ভাবনার প্রয়োজন। তুমি শান্ত মতো ভাবার চেষ্টা করো সব বুঝতে পারবে। এন্ড হ্যা মোস্ট ইম্পরটেন্ট টপিক, তুমি আরোহী সাথে ভালো ব্যাবহার করার চেষ্টা করবে কজ সি ইজ মাই ওয়াইফ। এতোদিন সে কি ছিলো তোমরা ওর সাথে কি বিহেইব করেছো সেটা তোমাদের ব্যাপার বাট ফ্রম নাও সি ইজ মাই ওয়াইফ। মিসেস তাশরিফ আঁধার চৌধুরী, সো আই হোপ তোমরা তোমাদের সীমার মধ্যে থাকার চেষ্টা করবে। এন্ড দা লাস্ট টপিক, স্টে এ্যাওয়ে ফ্রম মি এন্ড মাই ওয়াইফ।
আলিশা ভাবছে,, আচ্ছা আমি কি কিছু ভূল করছি। সব দোষ তো আমার আর আদরের, আমরা নিজের দোষেই আজকে এইরকম পরিস্থিতিতে আছি তাহলে কি আমি ভুল।
আঁধার কি তাহলে আমায় সব ঠিক কথাই বললো।
আলিশা ভাবতে ভাবতেই মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো।
আরোহী আঁধারকে খুজতে খুজতেই আলিশার ঘর থেকে আঁধারকে বের হতে দেখে থমকে যায়। আঁধারও খানিকটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। কিন্তু আরোহীকে কিছু বলতে না দিয়েই বলে উঠে,,,
–‘চলো লেট হয়ে যাচ্ছে।’
আরোহী কিছু না বলেই সম্মতি দেয় ঠিকই কিন্তু আঁধার আলিশার ঘরে কি করছিলো সেটাই ভাবতে থাকে। পরে ভাবে হয়তো তখন রাগের বসে মেরে ছিলো তাই হয়তো এখন কষ্ট হচ্ছে সে জন্যই হয়তো এসেছিলো।
হাসপাতালে একটা কেবিনের ভেতরে বসে আছে আঁধারে বাবা ও মা। পাশেই বেডে শুয়ে আছে আদর। হাত, পায়ে প্লাস্টার। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। মুখের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ক্ষত। আদরের সেন্স এখন ও ফেরেনি। এরইমধ্যে আঁধার ও আরোহী প্রবেশ করে৷ আঁকলিমা চৌধুরী ও তারেক চৌধুরী আরোহীকে দেখে খুশি হয়ে যায়। তাদের ধারণা ছিলো আরোহী হয়তো সবটা এতো তাড়াতাড়ি মানতে পারবে না। কিন্তু আরোহী তাদের ধারণাকে সম্পূর্ণ ভূল প্রমাণ করে দিয়ে আঁধারের সাথে হয়তো সব মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আরোহী তাদের দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দেয় কিন্তু আদরের দিকে একবার তাকিয়েও দেখে না।
–‘মামনি তুমি এসেছো?’
খানিকটা উৎফুল্লের সাথে বলে উঠেন আকলিমা চৌধুরী।
–‘ভালো আছি আন্টি তুমি কেমন আছ?’
–‘আমার আর ভালো থাকা মা.. ‘ তা আলিশা আসেনি?
মন খারাপ করে বলে উঠলেন আকলিমা চৌধুরী।
–‘না আন্টি, আসলে আপু…।
–‘থাক মা আমি বুঝতে পেরেছি।’
–‘না আসলে আন্টি আমরা আপুকে এখন ও জানাইনি এই ব্যাপারে। ‘
খানিকটা সংকোচ নিয়ে বলে আরোহী। আর মনে মনে ভাবে এই মানুষগুলো কতো ভালো এতো কিছু হওয়ার পরও আলিশা আসার কথা জিজ্ঞেস করছে।
তখনই ডাক্তার প্রবেশ করে কেবিনে তাই আর তেমন কথা হয় না তাদের।
আঁধার গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বললো৷ তারপর আদরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে। তার মা বাবার সাথে ভালো মন্দ কথা বলে আরোহীকে বাসায় যাওয়ার কথা বললেই আরোহী ও রাজি হয়ে যায়।
#চলবে।
(ভূলত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।)