#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ১৫
🍁
চোয়াল শক্ত করে গাড়িতে বসে আছে আঁধার, কিন্তু যার জন্য চোয়াল শক্ত করে আছে সে একদম নির্দ্বিধায় নির্বিকার ভাবে হেঁটে চলছে! আঁধারের রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে কিন্তু সে কিছু বলতে পারছে না,তার মতে ভুলটা তারই কিন্তু আরোহী ওকে বলার সুযোগই দিচ্ছে না। গত ১ ঘন্টা থেকে সে হেঁটেই চলেছে তবুও আঁধারের গাড়িতে সে উঠবে না! আঁধার ও কিছু বলে নি চুপচাপ সে তবে এবার আর না বলে পারছে না।আরোহীর পেছন পেছন সে ও এতোক্ষণ ধিরে ধিরে ড্রাইভ করে আসছিল!
–‘আরু এবার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে, গাড়িতে উঠো মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার!’
গাড়ি থেকেই চেঁচিয়ে বলে আধার,, আরোহী ঘুরেও তাকানোর প্রয়োজন মনে করলো না! আঁধার চেষ্টা করছে রাগটা যেন কমে যায়,কিন্তু পারছে না! তার রাগ বরাবরই একটু বেশি কিন্তু আরোহীকে সে সেটা একদম দেখাতে চায় না। তার মতে এমনিতেও সে আরোহীর সাথে সবসময় রাগা রাগিই করে!
–‘এই মেয়ে কি বলছি,কথা কানে যায় না তোমার?’
আঁধারের কথা কানে গেলেও কথাটা কানে না যাওয়ার মতো করেই হেঁটে চলেছে আরোহী! আঁধার গাড়ি থামিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ, চোখ খুলে আরোহীর দিকে তাকায়! তাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে হাঁটছে কিন্তু সে আসলেই হাঁটছে, কচ্ছপের গতিতে হাঁটছে সে!
–‘আর একবার বলবো যদি গাড়িতে না উঠো সিরিয়াসলি একদম রেখেই চলে যাব!’
আঁধারের কথাতে আরোহীর কোন ভবাবেগ হলো না উল্টো হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো। আঁধার একপলক তাকালো ঠিকই তবে গাড়ি থামালো না উল্টো স্পিড বোটের গতিতে গাড়ি টেনে চলে গেলো।
আরোহী হা করে তাকিয়ে আছে আঁধারের যাওয়ার দিকে, তার ধারণার বাহিরে ছিলো এটা।সে কখন ও স্বপ্নেও ভাবেনি তার এক মাত্র স্বামী, তাশরিফ আঁধার চৌধুরী তাকে রেখে এভাবে চলে যাবে।
হঠাৎ করে আরোহীর অনেক কান্না পায়, আঁধারের উপর অভিমাননের পাহাড় বেড়ে যায়! তখন ঠিক ওর পাশে দিয়ে একটা রিকশা যায়, কি আর করার চেঁচিয়ে ডাকে।
রিকশায় উঠে বসে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবে,,,, লোকটা এতোই নিষ্ঠুর আমায় একবার জোর ও করলো না। জোর করলে কি আর আমি যেতাম না নাকি! ওনার সাথে আর কথা বলবো না, আজই বাড়ি চলে যাব। থাকবো না আর ওনার সাথে! ভাবনায় এতোটাই মগ্ন ছিলো আরোহী, আঁধারের গাড়ি যে দাঁড়িয়ে সেটা ও আর দেখতে পায় না।আঁধার মুচকি হেসে আরোহীর রিকশার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিছু একটা ভেবে গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করে, আরোহীকে ক্রস করে যাওয়ার সময় আর চোখে একবার তাকায় কিন্তু আরোহীর কোন দিকেই খেয়াল নেই।
চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছেই আরোহী কাউকে দেখতে পায় না তাই সোজা আঁকলিমা চৌধুরীর ঘরে চলে যায়। আঁকলিমা চৌধুরী বসে বসে বই পড়ছিলেন,,
–‘আম্মু আসব!’
আরোহীর কন্ঠস্বর শুনে বই থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন,,,
–‘ আমার ঘরে আসার জন্য আবার তোকে পারমিশন নিতে হবে নাকি পাগল?’ আয়
আরোহী ভেতরে ঢুকতেই তিনি আবার বলেন,,
–‘বোস এখানে, ইসস এতো ঘেমে গেছিস কিভাবে বল তো?’
–‘বাহিরে অনেক গরম আম্মু তাই, একটা কথা বলার জন্য এসেছিলাম।’
–‘বল অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই তো!’
আঁকলিমা চৌধুরীর কথায় ধিরকন্ঠে বলে আরোহী,,,
–‘আমি ও বাড়ি যেতে চাই আম্মু। ‘
আঁকলিমা চৌধুরী ভ্রুকুঁচকে তাকায় আরোহীর দিকে, কিন্তু আরোহীর মাথা নিচু করে বসে আছে ।
–‘তোর কি এ বাড়িতে কোন সমস্যা হচ্ছে মা?’ আমরা কি তোর ভালো করে খেয়াল রাখতে পারছি না!
আরোহী থতমত খেয়ে যায়,,
–‘আরে না না সেটা কেনো হবে আম্মু, আসলে ৪ দিন হলো তো এ বাড়িতে আসার তাই!’ পাড়া প্রতিবেশী কি বলবে?
ধির কন্ঠে কথাগুলো বলেই লম্বা দম নেয় আরোহী।
–‘এটা কি অন্যের বাড়ি নাকি পাগল মেয়ে, এটা তো তোরই বাড়ি! ‘ ৪ দিন হোক কিংবা ৪০ দিন তোর বাড়িতে তুই থাকবি তাতে কে কি বলবে? আর প্রতিবেশীরা কে কি বললো সেসব কথায় কান দিলে হবে নাকি!
আঁকলিমা চৌধুরী শক্ত কন্ঠে বলেন।
আরোহী চোখ তুলে তাকায় কিন্তু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না, আঁকলিমা চৌধুরী আরোহীর মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবেন তার পর বলেন,,
–‘ আঁধার কি তোকে কিছু বলেছে, নাকি আদর বলেছে?’ আর তুই কি আদরের জন্যই এ বাড়িতে থাকতে চাচ্ছিস না?
আঁকলিমা চৌধুরীর কথায় আরোহী তড়িঘড়ি করে বলে,,
–‘ আম্মু সেটা না, আর আদরের কথা তুলছো কেনো উনি এখন আমার দেবর হন আমি আগের সবকিছু ভুলে গেছি!’
আঁকলিমা চৌধুরীর মনটা ভালো লাগায় ছেয়ে যায়, তিনি খুশি হয়ে বলেন,,
–‘তোর থেকে এটাই আশা করেছিলাম মা, তবে আজকে কি হয়েছে জানিস!’
তারপর তিনি আলিশার করা সব কথাগুলো আরোহীকে বলে, আরোহী চমকায় না, কারণ সেদিন রাতে আলিশা তাকে ডেকে মাফ চেয়েছে সবকিছুর জন্য।
আরোহীর ও পায়ে হাত দিতে গেছিল সে দেয় নি, তারই তো বোন তাই ক্ষমা করে দিয়েছে।তবে হঠাৎ করে আলিশার বদলে যাওয়ার কারণটা তার কেমন জানি লাগছিল কিন্তু আজকের সব কথা শুনে মনে হচ্ছে আলিশা সত্যি অনুতপ্ত।
তবে সেদিন আলিশা তার কাছে আবদার করেছিলো যে রাতটা তাকে ওর কাছেই থাকতে হবে! আরোহী নিজেও বারন করেনি থেকেছিল তবে সকাল বেলা আঁধারের রুমেই নিজেকে আবিষ্কার করেছিল,আঁধারকে জিজ্ঞেস করার আগেই তো সে ওভাবে বের হয়ে যায়! তারপর তো আর কথায় হয়নি তাই পরে আলিশাকে জিজ্ঞেস করতে আঁধার নিয়ে এসেছিল বলেছে তাকে।
–‘কিরে কি এতো ভাবছিস?’
আঁকলিমা চৌধুরীর কথায় আরোহী ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে।
–‘কিছু না আম্মু আপুর কথায় ভাবছিলাম,তুমি কি মাফ করে দিয়েছ?’
–‘প্রথমে ব্যাপারটা ভালো লাগেনি তবে আদর যখন বলেছে সবটা নতুন করে শুরু করবে তাই আমি ভাবলাম আমি আর রাগ করে থেকে কি করবো!’ দোষ তো ও একা করেনি আমার ছেলে ও সমান দোষী তাই মাফ করে দিয়েছি।
আঁকলিমা চৌধুরীর কথা শুনে আরোহী খুশি হয়ে যায়,মনে মনে ভাবে এই লোকগুলো কতোটা ভালো!
–‘ তই কিন্তু এখন এখান থেকে যেতে পারবি না, আরও কিছুদিন থাকতে হবে?’
–‘ কিন্তু আম্মু.. ‘
আরোহীর কথা শেষ হওয়ার আগেই আঁকলি চৌধুরী বলেন,,,
–‘কোন কিন্তু না, আমি যেটা বললাম সেটাই যা ফ্রেস হয়ে আয় খেতে হবে তো নাকি?’
আরোহী আর কিছু না বলেই মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।
আঁকলিমা চৌধুরী বইটা বন্ধ করে রেখে খাবার সাজাতে চলে যান।
রুমে ঢুকতেই কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম, সম্পূর্ণ রুম ফাঁকা পড়ে আছে। তহলে আঁধার কোথায়? ভাবনার মধ্যেই ওয়াশরুম থেকে খালি গায়ে উদম শরীরে নিচে একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে চুল ঝারতে ঝারতেই বের হলেন জনাব! তার শরীরে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা এখন লেগে আছে!
হঠাৎ করে কেনো জানিনা লজ্জা লাগতে শুরু করলো সাথে সাথেই আমি উল্টো দিকে ঘুরে গেলাম,এই লোকটা এমন কেনো? উনি কি সবসময় ভুলে যান যে রুমে আমি নামক ও কোন রমনী থাকে! ভাবলাম আর ওনার দিকে তাকাবো না, নিচের দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাব।
ঘুরতেই মনে হলো একটা লম্বা খাম্বার সাথে ধাক্কা খেলাম,আর খাম্বাটা যে স্বয়ং আমার বর তাশরিফ আঁধার চৌধুরী সেটা আমি না দেখেই বলতে পারি কারণ একটু আগেই তো এখানে কোন খাম্বা ছিলই না।হঠাৎ করে তো আর খাম্বার হাত পা উদয় হবে না যে আমার সামনেই এসে দাঁড়িয়ে যাবে! যাই হোক উনি আবার কোন খাম্বার চেয়ে কম।
পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে যাব তার আগেই খাম্বা অর্থাৎ আঁধার আমার হাত টেনে তার অনেকটা কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে দাড় করিয়ে দিলেন।আমি ভ্রুকুঁচকে তাকাতেই,
কোমড়ে তার শীতল হাতের ছোঁয়া অনুভব করলাম।কিন্তু তার হাতটা আমার কেন জানি স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশিই ঠান্ডা লাগছিল।মনে হচ্ছে আমি কোন বরফের পাহাড়ের চুরায় বসে আছি,কিন্তু জনাবের তাতে কোন যায় আসে বলে মনে হলো না! তিনি এবার দু’হাত দিয়ে আমার কোমড় চেপে ধরলেন। ঠান্ডায় কেঁপে উঠলাম আমি,
–‘হেঁটে হেঁটে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলেন যে ম্যাডাম?’ আমি তো ভেবেছিলাম আজকে আর আপনার দেখাই পাওয়া যাবে না!
চোখ তুলে তার দিকে তাকাতেই তার ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেশ দেখতে পেলাম । তখনকার করা তার নিষ্ঠুরতার কথা মনে পড়তেই, মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো! ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট শুরু করে দিলাম কিন্তু তার হাতের চাপ আরও খানিকটা শক্ত হয়ে আসলো।
–‘ছাড়ুন! ‘
–‘ছাড়িয়ে নেও!’
আরোহীর কথা শুনে আঁধার হেসেই কথাটি বললো,,,
আরোহীর রাগ হলো, কিন্তু এ দানবীয় শক্তির সাথে তার মতো চুনোপুঁটি কি আর পারে!
–‘উফফ এভাবে ছটফট করো না তো,ব্যাঙের মতো লাফালাফি করছো কেনো? ‘ এক মিনিট শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারো না?
হঠাৎ করে আঁধারের ধমকে শান্ত হয়ে দাঁড়ায় আরোহী। মনে মনে ভাবছে লোকটা আসলেই অদ্ভুত, নাহলে কোথায় ধমক দেওয়ার কথা আরোহীর দু’দিন বাসায় না আসার জন্য, উল্টো আরও উনি নিজেই ধমক দিচ্ছেন! মন খারাপ হয়ে যায় আরোহীর, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ।
আঁধার শান্ত চোখে আরোহীর দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়, একটু ধমকেই এতোটা মন খারাপ বাপ রে আর চোখ তুলে তার দিকে তাকাচ্ছে ও না৷ কেনো জানি আরোহীর বাচ্চামিতে আঁধারের হাসি পায়, কিন্তু না হেসে মুখটা সিরিয়াস করে বলে,,,
–‘আমি যা বলছি মন দিয়ে শুনবে, হুদাই রাগ না করে শান্ত ভাবে শুনো কি বলি!’
আঁধারের কথা শুনে আরোহীর ভ্রু আপনা আপনি কুঁচকে যায়, অর্থাৎ মহাশয় জানেন সে রাগ করে আছে কিন্তু উল্টো তিনি নিজেই রাগ দেখাচ্ছেন বাহ্।
–‘সেদিন আমি বাসা থেকে বের হই ঠিকই কিন্তু সোহেলদের কাছে পৌঁছাতে পারি না।’ তার আগেই আব্বু ফোন দিয়ে বলেন, যে আমায় এই মুহুর্তে অফিসে যেতে হবে। তাই সোহেলদের সাথে আর দেখা করতে পারিনি, অফিসে যাওয়ার পর পরই আব্বু কিছু ইম্পরট্যান্ট কাজে আমায় ঢাকার বাহিরে পাঠায় সাথে ম্যানেজার আঙ্কেল ও ছিলো। রাতে যেহেতু ফোনে চার্য এ দেইনি তাই বন্ধ হয়ে গেছিলো আর আমি মনে করেছিলাম তুমি জানো হয়তো! কিন্তু আজকে ফেরার পর আম্মু বললো হয়তো জানো না, আমি ও তোমার ব্যাবহার দেখে সিয়োর হয়ে যাই।এখন বলো আমার দোষ কোথায়? দোষ তো তোমার নিজেরই, কারণ তোমার বর দু’দিন থেকে বাড়ি ফেরেনি কিন্তু তুমি একবার খোঁজ ও নেওনি।
আঁধারের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনার পর শেষের কথাটাতে মনে হলো একপ্রকার অভিমান করেই কথাটা বললেন উনি।
আমি চোখ তুলে ওনার দিকে তাকাতেই উনি হুট করে আমার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। আর চুপচাপ কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন! আমি হাবলার মতো তাকিয়ে দেখলাম শুধু।
আসলেই তো সব দোষ আমার, উনি তো ঠিকই বলেছেন! আমি একবার কাউকে জিজ্ঞেস অব্দি করিনি। তবে টেনশনে তো ঠিকমতো খেতে অব্দি পারিনি আর না পারছি ঘুমোতে কিন্তু তবুও কাউকে জিজ্ঞেস করিনি।আমি কি সম্পর্কটাকে নিজেই এগোতে দিচ্ছি না, কিন্তু কেনো? আঁধার নামের এই লোকটার মায়ায় অনেক আগেই পড়ে গেছি, কিন্তু ভালোবাসা? রাহির মতে তো আমি ওনার প্রেমে পড়েছি তবে ভালোবাসা? উফফ মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে,কি করবো আমি?
আমার এসব ভাবনার মধ্যেই আঁধারকে বের হতে দেখলাম তবে উনি শার্টের বোতামগুলো খুলে রেখেছেন কেনো? ভ্রুকুঁচকে গেলো আমার, জানি না আমার কি হলো তবে নিজে থেকেই আঁধারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
উনি ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,ওনাকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ করেই ওনার শার্টের বোতামে হাত দিলাম। থমকে গেলেন উনি, থমকে গেলো ওনার দৃষ্টি! শুধু মাত্র থমকালাম না আমি এমনকি থামলাম ও না, নিজের মতো করে কাঁপা কাঁপা হাতে ওনার সবগুলো শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিয়ে ঝট করে সরে আসলাম।উনি তখন ও অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
হঠাৎ করেই আমার লজ্জা লাগতে শুরু হলো, ইসস কি করলাম আমি এটা নিজে থেকেই ওনার এতোটা কাছে গেলাম।এসব ভাবতে ভাবতেই লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যাওয়ার ইচ্ছে হলো, তবে সেটা না করে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। দরজা বন্ধ করার আগে আর একবার উঁকি দিয়ে ওনাকে দেখতে ইচ্ছে হলো, কিন্তু উঁকি দিতে গিয়েই ওনার চোখে চোখ পড়ে গেলো!আর কিছু না ভেবেই লজ্জায় দরজা লাগিয়ে দিলাম।
আরোহীর কান্ডে আঁধার এতোটাই অবাক হয়েছে যে, এখন অব্দি বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে তার অবাকের মাত্রা শেষ হয়ে যায়।ঘুরে দেখে একটা বিড়াল ফুলদানি মেঝেতে ফেলে দিয়েছে। ফুলদানিটা উঠিয়ে রেখে দেয় নিজ স্থানে! তখনই পেছন থেকে কারো ডাকে ফিরে তাকায়।
–‘আসব আঁধার? ‘
পেছনে ফিরতেই তার মাথা গরম হয়ে যায়, এই আলিশাকে দেখলেই তার মাথা এমনিতেই গরম হয়ে যায়!আঁধার ভেবে পায় না, আরোহীর মতো একটা মেয়ের এমন ছেঁচড়া বোন হয় কি করে!
–‘আঁধার! ‘
–‘হুম ! ‘
আলিশা আর কোন দিকে না তাকিয়ে আঁধারের পাশে এসে দাঁড়ায়। আঁধার বিরক্ত হলেও কিছু বলে না, কি আর করবে তারই ভাইয়ের বউ আবার তার বউয়ের বড় বোন হয়।
–‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো! ‘
–‘হুম আপু বলেন!’
আঁধারের হঠাৎ আপু বলাতে আলিশা ভেবাচেকা খেয়ে যায়,আবার আপনি করে ডাকাতে রাগ ও হয়।
–‘আপু, কে আপু?’ আমি ছোট না তোমার থেকে,আর আপনি করে ডাকছ কেনো আগে তো তুমি বলেই ডাকতে।
–‘বউয়ের বড় বোন তো আপুই হয় তাই না!’আর আগে তো বউয়ের বোন ছিলেন না তাই আপনি ডাকা হয়নি।
আঁধারের ঠেঁস মারা কথা শুনে আলিশার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।নিজেকে শান্ত করে বলে,,
–‘তবুও, আমায় নাম ধরে ডাকলে খুশি হব! ‘ নাহলে নিজেকে বড় বড় লাগবে,আর আমি তো তোমার ছোট ভাইয়ের বউ।
–‘বিয়েটা মানেন তাহলে, যাক শুনে খুশি হলাম!’
–‘আসলে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছিলাম,আমি অনেক অনুতপ্ত আঁধার! ‘ আমি যা করেছি সব তোমার জন্যই করেছিলাম তোমায় ভালোবাসি আমি।
আঁধার আলিশার কথা শুনে চোখ তুলে তার দিকে তাকায়, আলিশার চোখে পানি দেখে বুঝার উপায় নেই সে আসলে অনুতপ্ত কি না! আঁধারের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো মায় দেখাই মাফ করে দিত কিন্তু সে কিছুই বললো না আবার চুপ করেও থাকলো না!
–‘ভালোবাসা কিসের ভালোবাসা?’ একজনের বাচ্চা পেটে নিয়ে আর একজনের সাথে বিয়ের পিরিতে বসাকেই কি আপনার ভালোবাসা বলা হয় আপু?’
–‘আঁধার বিশ্বাস করো..’
–‘সরি আপু আমি আর কিছু বিশ্বাস করতে পারবো না,এবার আপনি আসতে পারেন?’
আলিশার কথা শেষ হওয়ার আগেই দরজার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে উক্ত কথাগুলো বলে আঁধার। আলিশা অবাক হয়ে যায়, সে হয়তো ভেবেছিলো আঁধার তার কান্না দেখে তাকে সান্ত্বনা দিবে।
–‘আঁধার আমি সত্যি অনুতপ্ত, বিশ্বাস করো আমি এখন আর তোমায় নিয়ে ভাবতে চাই না এসব বলার জন্যই এসেছিলাম!’ আমি নতুন করে আদরের সাথে সবকিছু শুরু করতে চাই।
আলিশার কথা শুনে আঁধার কিছু একটা ভেবে বলে,,
–‘ইটস ওকে, আমি মাফ করে দিয়েছি তোমায়, তবে হ্যা আমায় ভাইয়া বলবে আমি সম্পর্কে তোমার বড় ভাসুর হই।’ আই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড।
–‘হুম! ‘
বলেই আলিশা চুপচাপ চলে যায়, আঁধারের আলিশার কথাগুলো কেন জানি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে! তবে আর কিছু ভাবতে চায় না সে এই মেয়েকে নিয়ে তাই ওয়াশরুমের দরজার দিকে একপলক তাকায়। আরোহীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বলে,,
–‘নিচে আসো আম্মু খেতে ডাকে!’
বলেই চলে যায়।আরোহী অবাক হয়ে আঁধারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, বলেই চলে গেলো। আর সে যে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে একসাথে তাদের দেখলো সে ব্যাপারে প্রশ্ন করবে তো আরোহী! আলিশার হুম কথাটি ছাড়া অন্য কোন কথা সে শুনতে পায়নি। তাই তাদের মধ্যে কি কথা হলো সেটাই ভাবছে সে।
#চলবে?