#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ১৪
🍁
ভার্সিটির গাছতলায় বসে আছি আমি ও রাহি, দু’জনে বসে আছি ঠিকই কিন্তু গভীর ভাবনা নিয়ে! ভাবনাটা মূলত আঁধারকে ঘিরেই, উনি সেদিন সকালে বের হয়ে এসেছিলেন তারপর থেকে আর বাড়ি ফেরেননি !
আজকে দু’দিন ধরে বাসায় যাননি উনি, আছে কোথায় সেটাও জানি না। সেদিন ওনার অপেক্ষায় ছিলাম সারাদিন কিন্তু ওনার কোন খবর ছিলো না, ফোন দিতে গিয়ে দেখি এখন ও নাম্বার ব্লক করা তার মানে খুলতে সময় পাননি হয়তো নাহলে মনে নেই।
রাগ উঠছিল অনেক তবে রাগ দেখানোর মতো লোকটা তো বাসায় থাকার লাগবে, সেই লোকটাই আজ দু’দিন ধরে নিখোঁজ! আম্মু আব্বুকে তাকে নিয়ে চিন্তা করতে দেখিনি, কি জানি বাবা তারা কেমন নাকি আঁধারের সাথে তাদের কথা হয়েছে সেটাও ঠিক জানি না।
লজ্জায় কাউকে জিজ্ঞেস করতে ও পারিনি। আঁধারের জন্য চিন্তা হচ্ছে অনেক, তবে রাহির মতে আমিই কিছু একটা করেছি তাই আঁধার রেগে আর বাসায় আসেননি! কিন্তু এই মেয়েকে ৩০ মিনিট যাবত বুঝাতে বুঝাতে হাফায় গেছি ভাই তবুও বুঝাতে পারিনি।
কি আর করার ভাঙ্গা মন নিয়ে বসে আছি,তবে আঁধারকে ছাড়া এই দু’টো দিন আমার দুই বছরের সমান কেটেছে। না পারি ঠিক মতো ঘুমাতে, আর না পারি ঠিক মতো খেতে। এমনকি বসে, শুয়ে হাঁটে ও শান্তি পাইনা।
এই দুই দিনের সব ঘটনা রাহিকে বলার পর তার মতে আমি প্রেমে পড়েছি সেটাও আবার আঁধারের, শুধুই প্রেমে না একদম হাবুডুবু খাচ্ছি ওয়ালা প্রেম! রাহির কথা শুনে বরাবরের মতো বিরক্ত হলেও আমার ও কেন জানি মনে হচ্ছে রাহির কথাটা কি সত্যি! আবার কখন ও মনে হচ্ছে না স্বামী হয় তাই হয়তো চিন্তা হচ্ছে! বাসায় ভালো লাগছে না তাই সময় কাটানোর জন্য আজকে ভার্সিটিতে আসা আমার।
নিজের উপর নিজেই বিরক্ত আমি,আঁধার নেই আমার তো ভালো থাকার কথা কিন্তু আমি ভালো থাকতে পারছি না কেনো? হোয়াই?
এরইমধ্যে হেমাদের দলকে আমাদের দিকে আসতে দেখে আত্মা কেঁপে উঠে আমার।রাহিকে হাত দিয়ে গুতাগুতি করছি কিন্তু সে ভাবনায় এতোই মগ্ন যে আমার গুতাগুতিতে তার কিছু যায় আসছে না।
–‘রাহি ওই দিকে দেখ না একবার প্লিজ? ‘ এই মেয়ে,,
আরোহীর দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সামনে তাকাতেই রাহির কলিজা হাতে চলে আসে। হেমা ও তার দল তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে! রাহি কাঁপা কাঁপা দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকায়, সেদিনের ঘটনা তার চোখের সামনে ভাসতে শুরু করে!
ভয়ে কাঁপতে শুরু করে রাহি,রাহির অবস্থা দেখে আরোহীর দম ফাটানো হাসি পাচ্ছে। এই মেয়ে তার সামনে বাঘ আর এদের সামনে বিড়াল!
হেমা আরোহীর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে রাহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
–‘এই মেয়ে অনিল তোমায় পছন্দমতো করে, সো তুমি আজকে থেকে ওর গার্লফ্রেন্ড!’
রাহির কাপাসিয়া কাঁপি বন্ধ হওয়ার জন্য এই একটি কথায় যথেষ্ট ছিলো, আরোহী হা করে তাই আছে! আর অনিল মুচকি হেসে রাহির দিকে তাকিয়ে আছে, রাহি একপলক অনিলের দিকে তাকিয়ে আরোহীর দিকে তাকায়। মুখে তার অমায়িক হাসি, রাহির হাসির মানে আরোহীর কাছে অস্পষ্ট।
আরোহী এক পলক হেমাদের দলকে ভালো করে পর্যাবেক্ষণ করে, হেমা নামের মেয়েটি ঠিক তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর লিমা নামের মেয়েটি রাহির দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে, সাদ নামের ছেলেটি অনুপস্থিত অর্থাৎ আসেনি সে সাথে ভেবেই সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে আরোহী, ছেলেটা অনেক বেয়াদব। সাথে আরও দুই একটা ছেলে মেয়ে আছে তাদের সাথে কিন্তু এদের কাল আরোহী হেমাদের সাথে দেখেনি তাই বুঝতে পারছে না এরা কে!
অনিল নামের ছেলেটি রাহির দিকে এগিয়ে আসে বলে,,
–‘ তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকা হলুদপরি।’
রাহির কপাল আপনা আপনি কুঁচকে যায়, আরোহী অনেক কষ্টে নিজের হাসি কন্ট্রোল করে আছে। রাহি অনিলের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এক পলক নিজের দিকে তাকায়, সে আজকে হলুদ জামা পড়ে এসেছে তাই তাকে হলুদ পরি বলে সম্মোধন করলো বেয়াদব ছেলেটি। রাহির মনে হচ্ছে সে আর এই বেয়াদবের দলকে ভয় পাচ্ছে না!
–‘হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকা মানে?’
হাসি কন্ট্রোল করে কোন মতো প্রশ্নটি করে আরোহী।
–‘আরে সাত দিন আগে রাস্তায় এক হলুদ পরিকে দেখেছিলাম কিন্তু হঠাৎ হারিয়ে ফেলি আর আজকে হলুদ জামা পড়ে দেখে চিনতে পারলাম।’ ছরি হলুদ পরি কালকের জন্য।
প্রথমের কথাটা আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলে পরের কথাগুলো রাহির দিকে তাকিয়ে বলে।আরোহী তো মনে মনে হেসেই যাচ্ছে ফ্রিতে বিনোদন পাচ্ছে সে! রাহি হাবলার মতো তাকিয়ে আছে, হেমা আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলে,,,
–‘আঁধার কালকে তোমায় কিছু বললো না কেনো?’
আরোহী শুনেও না শোনার মতো করে অনিলকে প্রশ্ন করে,,
–‘তাহলে প্রেমিকা হলো কিভাবে ভাইয়া,প্রেম তো হয়নি?’
হেমা রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়,তার কথা এড়িয়ে গেলো এই মেয়ে এতো সাহস, তবে সাহস তো আছেন না হলে কাল এতো বড় একটা ঘটনা সে ঘটাতে পারতো না!
–‘মনে মনে প্রেম করে নিয়েছি তো।’
বোকা হাসি দিয়ে বলে অনিল, আরোহী এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না জোড়েই হেসে দেয়। কিন্তু তার মনে হয় তার সাথে আরও কয়েকজনের হাসির শব্দ আসছে। হেমারা ও অবাক হয়ে তাকায়, পাশেই সোহেল, রাতুল,নীলিমারা হাসছে। তারা তাদের থেকে মাত্র কয়েকহাত দুরে বসে আছে, তাই ওদের সব কথায় তারা শুনতে পেয়েছে। একমাত্র শিহাব ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আছে।
আরোহী নিজের হাসি থামিয়ে তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়, সবাই উপস্থিত আছে শুধুমাত্র আঁধার ছাড়া! আবার মন খারাপ হয়ে যায় আরোহীর। সোহেলরা গড়াগড়ি করে হাসছে, রাহির প্রচুর লজ্জা লাগছে এমন পরিস্থিতিতে পড়বে সেটা কল্পনায় ও ভাবেনি সে। অনিলের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দেয় সে, ছেলেটাকে তার মোটেও ভালো লাগে না আর তার সাথে প্রেম করবে সে কখনো না।
রাহির মথায় চট করে একটা বুদ্ধি চলে আসে, হুট করে সে সোহেলদের দিকে যায়। আরোহী ভ্রুকুঁচকে বুঝার চেষ্টা করছে রাহির কর্মকান্ড! সোহেলরা তখন ও হাসছে,
–‘ভাইয়া একটু সাইড দিবেন প্লিজ?’
কারো কন্ঠে ভাইয়া ডাক শুনে রাতুল গর্বের সহিত একটু না প্রায় অনেকটাই সরে গিয়ে বসে, আর রাহি গিয়ে সোহেল ও শিহাবের মাঝখানে বসে পড়ে৷ চট করে তাদের হাসি থেমে যায়, বুঝার চেষ্টা করছে তারা আসলে হচ্ছেটা কি!
হেমারা নিজেরা ও অবাক হয়ে যায় সাথে অনেকটা ভয় ও পেয়ে যায়,রাহি সোহেলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,,
–‘আচ্ছা ভাইয়া,ওই যে ওরা কোন ইয়ারে পড়ে!’ আই মিন আপনাদের থেকে সিনিয়র নাকি জুনিয়র।
আঙ্গুল দিয়ে হেমা ও তার দলকে দেখিয়ে বলে।
–‘বুদ্ধু আপু আমাদের থেকে সিনিয়র নেই এখানে আমরাই সিনিয়র, আর ওরা ৩য় বর্ষে পড়ে! বুঝলে?’
আপু বলাতে রাহির মুখ চুপসে যায় সে এসেছিলো একটা কাজ করতে এখন সোহেল তো তাকে আপু বললো তার মানে ছোট বোন বললো এখন কি করা যায়, ফট করে অনিলসহ সকলকে তাদের কাছে ডাকে রাহি।
–‘এদিকে এসো সবাই, সিনিয়রদের সন্মান দিতে শিখ নি? ‘
রাহির কথায় হেমাদের সকলের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় অনিল ছাড়া,কিন্তু সিনিয়ররা আছে আর সব থেকে বড় কথা এদের রাগ বেশি তাই তারা চুপচাপ ভয় ভয় করেই চলে আসে। হেমা অনিলের কানে কানে বলে,,
–‘তোর হলুদ পরিকে পড়ে যদি শিক্ষা না দেই, আমাদের শিখাচ্ছে সে!’ এতো সাহস।
অনিল হেমার দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে বলে,,
–‘ভুলে ও ওই ভুল করিস না, নাহলে আমি ভুলে যাব তুই আমার ফ্রেন্ড।’
হেমা কটমট চাহনিতে অনিলের দিকে তাকায়। অনিল ততোক্ষণে সামনে এগিয়ে গিয়েছে!
–‘আরে আরোহী যে, বসো!
আরোহীকে দেখেই সোহেল বসার জন্য যায়গা করে দিয়ে বলে।
–‘আরে না ভাইয়া,আমি ঠিক আছি…’
–‘এই বস বস সিনিয়রদের রেসপেক্ট করতে হয় তো,আরে ভাইয়া আধারে ভাইয়া কোথায়? ‘
আরোহীর কথা শেষ হওয়ার আগেই রাহি উক্ত কথাটি বলে উঠে। আরোহী রাহিকে চোখ রাঙ্গায়! কিন্তু রাহির তাতে কিছু যায় আসে না,তার একমাত্র লক্ষ এখন অনিলকে ছেঁকা দেওয়া। মারাত্মক ছেঁকা যাকে বলে!
–‘আঁধার ও একটু বিজি আছে আর কি,কেনো বলো তো? ‘
নীলিমার কথা শুনে রাহি ভ্রুকুঁচকে তাকায়,সে তো সোহেলকে জিজ্ঞেস করলো কিন্তু এই মেয়েটা কেনো উত্তর দিলো।রাহির মুখ দেখেই মনে হচ্ছে নীলিমার উত্তর দেওয়া তার পছন্দ হয়নি,সে ঘুরে আরোহীর দিকে তাকায়! আরোহীকে তীক্ষ দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকাতে দেখে রাহি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
–‘ কি ব্যাপার তোমরা ওদের কিসের কথা বলছিলে, কে কার গার্লফ্রেন্ড? ‘
তীক্ষ দৃষ্টিতে হেমাদের দিকে তাকিয়ে বলে শিহাব।
হেমারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে,ভার্সিটিতে সবাই আঁধার ও তার বন্ধুদের ভয় পায়!তারা যেমন ভালো,তেমনি ফাজিল ও আবার অনেক রাগি ও সবাই তাদের যেমন সন্মান করে তেমন ভয় ও পায় হেমারা ও তার ব্যাতিক্রম নয়। অনিল এতোক্ষণ যতো সহজে রাহির সাথে কথা বলছিলো এখন ততোটাই ভয়ে সিটিয়ে আছে।
–‘আসলে ভাইয়া, আমরা তো এম. এমনি মজা করছিলাম আর কি হে হে।’
তোঁতলানোর স্বরে বলে হেমা, অনিল শুঁকনো ঢোক গিলে।শিহাব ভ্রুকুঁচকিয়ে তাকায় তাদের দিকে।হেমাকে তোঁতলাতে দেখে আরোহী আর রাহি হা করে তাকিয়ে আছে, এই মেয়ে ও যে কাউকে ভয় পায় সেটা আজকে বুঝতে পারছে তারা।
–‘আরে কি মজা করছিলে বলো তো, এইসব আবার মজা নাকি হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকা,স্বপ্নে প্রেম হাউ কিউট!’
সোহেলের কথা শুনে অনিল ভয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
–‘আরে ভাই হলদিয়া পরি বাদ দিলি কেনো?’ হায় গো হলদিয়া পরি, তোমার রুপের আগুনে যখন তখন পিছলাইয়া পড়ি।
রাতুলের কথা শুনে নীলিমা, তরি ও সোহেল উচ্চস্বরে হেসে দেয় শুধু মাত্র শিহাবের মুখ গম্ভীর। রাহি রাতুলের ছন্দ শুনে চোখ মুখ কুঁচকে বসে আসে, আর আরোহী মুখ চেপে হেঁসেই যাচ্ছে।
–‘ আরে কি যে বলেন না রাতুল ভাই,আমরা তো…
–‘স্টপ!’
অনিল আর কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই গম্ভীর কন্ঠে কথাটি বলে শিহাব।
–‘ এই মেয়েটি যে তোমার প্রেমিকা নয় সেটা তোমার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে, ডু ইউ লাইক হার?’
রাহির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে কথাটি বলে শিহাব!
অনিল সহ বাকি সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে!
কপাল কুঁচকে অনিলের দিকে তাকায় এবার শিহাব,অনিল তাড়াহুড়ো করেই বলে,,
–‘আসলে, হুম ভাই!’
অনিলকে মাথা নিচু করতে দেখে বাঁকা হেসে শিহাব বলে,,
–‘তাহলে পঁটিয়ে নেও, বোকার মত থাকলে হবে! ‘
শিহাবের কথা শুনে সবাই অনেকটা অবাক হয়ে যায়, তাদের মনে একটাই জথা ঘুরছে, কি বলছে এই ছেলে পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি!
–‘এই এই কি বললেন, আমাকে পঁটিয়ে নিবে মানে!’
শিহাবের কথা শুনে সকলে চুপ করে থাকলেও উত্তেজিত হয়েই রাহি কথাটি বলেই ফেলে।
–‘ছেলে তো ভালোই সমস্যা কি তাহলে!’কি রে সোহেল বল।
শিহাবের কথা শুনে রাহির এবার রাগ হয়,,
–‘ ছেলে ভালো মানে, কখন ও দেখেছিলেন কেউ বান্ধবী কে দিয়ে বলায়, ” ওর তোমায় পছন্দ হয়েছে আজকে থেকে তুমি ওর গার্লফ্রেন্ড!” কি ভাই এগুলো কোন কথা মনে তো হলো যে আমরা ওদের কেনা গোলাম ওনারা যেটা বলবেন সেটায়।
–‘ তো নিজে প্রপোজ করতে বলছ ওকে!’
ভ্রুকুঁচকে বলে শিহাব।
রাহির মাথায় এবার দুষ্ট বুদ্ধি আসে, এক লাফে শিহাবের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,,
–‘ ও গো, তুমি রাগ করে এসব বলছো, এভাবে বলো না চুমু টুমু দিয়ে রাগ ভাঙ্গিয়ে দেই।’
সবার হা করে থাকা মুখশ্রী হা এ রয়ে যায়, সোহেল তো খুঁক খুঁক করে কেশে উঠেছে! রাতুল এতোটাই অবাক হয়েছে যে রীতিমতো সোহেলের কোলে শুয়ে পড়েছে! শিহাব নিজেও ভেবাচেকা খেয়ে গেছে, তার মারাত্মক হারে হিঁচকি উঠে গেছে। আসতে ধিরে রাহির হাত গুলো তার গলা থেকে সরিয়ে দেয়। নীলিমা আর তরি দু’জন দাঁড়িয়ে পড়েছে। হেমারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, আরোহী নিজেও বড় একটা হা করে দাঁড়িয়ে আছে। অনিলের মুখ চুপসে গিয়েছে!
–‘ আরে আপনারা সবাই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো, আরে আমি আপনাদের ভাবি হই তো!’ এই যে উনি, উনি আমার ও গো হন।
স্বাভাবিক ভাবে কথাগুলো বলে হাত দিয়ে শিহাবের দিকে দেখিয়ে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলে রাহি।
শিহাবের হিঁচকি মনে হয় বেড়ে যায়, সোহেল ঝট করে রাতুলে কে ফেলে দাঁড়িয়ে যায়। রাতুল ব্যাথা পেলে ও তার মনের ব্যাথার কাছে এ ব্যাথা কিছুই না মনে করে উঠে রাহির কাছে বসে ভাবি ভাবি বলে মুখে ফেণা তুলা শুরু করে! রাহি হাসি মুখে রাতুলের সাথে গল্প করা শুরু করে,, অনিল রাহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
–‘হলুদ পরি তুমি এসব কি বলছো?’
–‘ ওই মিয়া ওই, আ’ম ইয়োর ভাবি নট হলুদপরি! ‘ ও গো আপনি চুপ করে আছেন কেনো, আপনার সামনে আমায় এভাবে বলছে।
অনিলের রাগে কটমট করে তাকিয়ে বলে,অনিলের অসহায় ফেস দেখে শিহাবের সামনে গিয়ে কান্নার ঢং করে বলে রাহি।
–‘ ভাইয়া, আপনি ওদের বলেন না আমি আপনাদের ভাবি হই, আমার ও গো তো লজ্জায় কাউকে বলতেই পারছেন না। ‘
রাতুলের দিকে তাকিয়ে কান্নারত স্বরে বলে রাহি।রাতুল বেচারার মায়া হয়,,
–‘ এই ও আমাদের ভাবি হয় তার মানে তোমাদের ও ভাবি, আজকে থেকে ওকে ভাবির নজরে দেখবে! ‘ এই শিহাব তুই চুপ করে আছিস কেনো বল কিছু একটা?
শিহাব হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে যায়, কি হচ্ছে এসব তার সাথে! কিন্তু সে অবাক হচ্ছে, তাকে নিয়েই সবকিছু হচ্ছে কিন্তু তার রাগ হচ্ছে না কেনো জানি!
অনিল এগিয়ে এসে রাহির হাত ধরার চেষ্টা করতেই রাহি শিহাবের পেছনে চলে যায়,,
–‘ প্লিজ ভাইয়া রাগ করবেন না, এরা অনেক বিরক্ত করে তাই আপনার সাথে এমন একটা নাটক করতে হলো! ‘ প্লিজ এদের কিছু বলে বিদায় করুন ন প্লিজ!
রাহি শিহাবের অনেকটা কাছে গিয়ে ফিসফিস করেই কথাটা বলে, শিহাব শিউরে ওঠে, রাহির কন্ঠস্বর এতোটাই আবেদনময়ী শোনায় যে শিহাবের শরীরের লোমকূপ সহ কেপে উঠে!
–‘প্লিজ! ‘
রাহির করুন কন্ঠ শুনে শিহাবের মায়া হয় না, কিন্তু অন্যকিছু অনুভূতি দেখা দেয়! গলা খেঁকারি দিয়ে অনিলের উদ্দেশ্যে বলে,,
–‘ ওকে আর যেন ডিস্টার্ব করার কথা না শুনি, তুমি এবং তোমার দল ওদের থেকে দূরে থাকবে!’ আঁধার এমনিতেও তোমাদের উপর ক্ষেপে আছে, ছুটির পড়ে প্রিন্সিপাল রুমে চলে যাবে সকলে, ইস দ্যাট ক্লিয়ার!
কাঠকাঠ গলায় কথাগুলো বলেই নিজেদের ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে যায়।হেমারা ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিলে! অনিল রাহির দিকে তাকিয়ে আছে, তার চোখ মুখে বেদনার ছাপ স্পষ্ট কিন্তু রাহি নিজেও না দেখার ভান করে আরোহীর হাত ধরে সামনের দিকে এগোয়!
ক্লাস শেষ করে বের হতেই সামনের একটা ছেলে হুট করে মুখে হাসি ফুটিয়ে আরোহীদের দেখে বলে,,
–‘ আসসালামু আলাইকুম ভাবি, আঁধার ভাই আপনাদের প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যেতে বলেছে!’
রাহি ওকে বলে আরোহীর হাত ধরে টানটে টানটে হাটা শুরু করে, আরোহী আর চুপ করে থাকতে পারলো না,,
–‘ রাহি আমি যাব না!’
–‘কেনো যাবি না?’
–‘দেখ ওনার সামনে আমি যেতে চাচ্ছি না বর্তমানে, উনি দুটো দিন কোথায় ছিলো? ‘ আমি যাব না তুই যা।
আরোহীর কথা শুনে রাহি মুখ চেপে হেসেই বলে,,
–‘ তুই না ভাইয়াকে ভালোবাসিস না তাহলে এখন অভিমান করছিস কেনো?’ দেখ যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে অভিমান কারা বিলাসিতা মাত্র।
–‘ তবুও আমি যাব না!’
–‘আরে আয় তো!’
রাহির জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়েই আরোহীকে যেতে হয়।
প্রিন্সিপাল স্যারের পার্মিশন নিয়ে ঢুকতেই আঁধারের গম্ভীর মুখশ্রী নজরে আসে আরোহীর। আঁধারের থেকে চোখ সরিয়ে পুরো রুমে নজর বুলাতেই হেমা ও তার দলের সবাইকে সাথে আঁধারের বন্ধুদের ও নজরে আসে তার।
আঁধার আরোহীকে সেদিনের সব ঘটনা খুলে বলতে বলে,আরোহী নিচের দিকে তাকিয়েই সবকিছু খুলে বলে। সব কথা শুনে প্রিন্সিপাল হেমাদের অনেক বকাঝকা করেন কালকে গার্ডিয়ানহস আসতে বলেন। আরোহীদের কাছে ক্ষমা চায়,নেক্সটে এমন কিছু হলে সরাসরি তার কাছে অভিযোগ করতে বলেন তিনি।
আরোহীরা বের হয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবে, তার আগেই আঁধার আরোহীকে তার জন্য অপেক্ষা করতে বলে গাড়ি আনতে যায়।আরোহী অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে একা একা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাই আঁধার আসার আগেই হুরমুর করে বেড়িয়ে যায়।
আদরের পায়ের কাছে বসে আছে আলিশা, সামনে মিসেস আঁকলিমা চৌধুরী ও তারেক চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে। আলিশার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে, সে মূলত আদরের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্যই তার পায়ের কাছে বসে আছে,,,
–‘প্লিজ আদর আমায় ক্ষমা করে দেও, যা হয়েছে ভুলে যাও দোষ আমাদের উভয়েরই ছিলো! ‘ আমি অনুতপ্ত আদর, সবটা নতুন করে শুরু করি না প্লিজ।
বলেই আলিশা হু হু করে কেঁদে উঠে। আদরের মায়া হয় কিন্তু সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, এক পলক মা বার দিকে তাকায়! তারা তাকে সম্মতি দেয় আলিশাকে মেনে নিতে।
–‘আদর এই বাচ্চাটার জন্য হলেও সবকিছু নতুন করপ শুরু করো প্লিজ, বাচ্চাটা তো তোমার তাই না! ‘
বলেই আলিশা আদরের দিকে তাকায়।
–‘ঠিক আছে চেষ্টা করবো, তুমি উঠো এখন।’
আদরের বলতে দেড়ি কিন্তু আলিশার উঠতে দেড়ি হয়নি।আদরের বাবা মায়ের কাছে গিয়ে ক্ষমা চায় সে।
–‘দেখ মা, তোমরা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো, আগের সবকিছু ভুলে আদর ও ছোট প্রাণটার জন্য নতুন করপ সবকিছু শুরু করো! ‘ আমরা ও সেটাই চাই কিন্তু এক ভুল আর দ্বিতীয় বার করতে যেও না।
আঁকলিমা চৌধুরী মুখ কালো করে কথাগুলো বলেন। আলিশার মুখে হাসি ফুটে উঠে, কিন্তু তারেক চৌধুরী বিচক্ষণ মানুষ তিনি ঠিক আছে বলেই চলে যান।
#চলবে?