নীল জোছনায় ভাসি পর্ব-১০

0
1614

#নীল_জোছনায়_ভাসি (১০)
#লেখা: ইফরাত মিলি
___________________

বাবা দুপুরে বাড়িতে খেতে আসেনি। করিম চাচার বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল, সেখানে খেয়েছে আজ। সন্ধ্যায় বাড়িতে আসবে বোধহয়। আমি দরজায় তালা মে’রে বের হলাম।

জেবিন কল চাপছে আর সেজান ভাইয়া বসেছে এক বালতি পোশাক নিয়ে, ধৌত করবে বলে। এই বিকেল বেলা সে জামাকাপড় নিয়ে বসেছে কেন?
তাদেরকে দেখতে দেখতে গেটের দিয়ে এগোচ্ছি। সেজান ভাইয়া আমাকে দেখতে পেয়ে বলে উঠলো,
“যাচ্ছিস কোথায় রে? বাবার জন্য মেয়ে দেখতে?”

তার মুখে ঠাট্টাভাব।
আমিও তাকে আঘাত করার জন্য বললাম,
“হুম মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। আমার বাবার জন্য মেয়ে পেতে সমস্যা হয় না জানো তো। মেয়েরা তো তোমাকে রিজেক্ট করে, আর আমার বাবা মেয়েদের রিজেক্ট করে।”

“কী বললি তুই?” সে নাক ফুলিয়ে বললো। তপ্ত চোখ দেখালো আমাকে ভয় পাওয়ানোর জন্য। কিন্তু আমি তো তাকে ভয় পাই না। বললাম,
“যা বলেছি তুমি তাই শুনেছো।”

দাঁড়িয়ে থাকলে কথায় কথা বাড়বে বলে আমি চলে এলাম। গাড়ির জন্য দাঁড়াতে হবে কিছুক্ষণ। বেশিরভাগ সময়ই গাড়ি পেতে দেরি হয়। ভাগ্য ক্রমে দু-একটা দিন অল্প অপেক্ষাতেই পাওয়া যায়। আজ আমাকে ঠিক কতটা অপেক্ষা করতে হবে জানি না।
দূরে একটা রিকশা দেখতে পেলাম। এদিকেই আসছে ওটা। আমি খুশি হলাম। কিন্তু খুশি বিলীন হতেও সময় নিলো না। রিকশায় যাত্রী আছে। তবে আমার খুশি ফেরত আসতেও সময় নিলো না। রিকশার যাত্রী আনাম ভাইয়া। সম্ভবত সে আমাদের এখানেই থামবে। এই রিকশাটাতেই যেতে পারবো তাহলে।

“কেমন আছেন আনাম ভাইয়া?” প্রশ্ন করলাম আমি।

সে ভাড়া পরিশোধ করে আমার দিকে ঘুরে বললো,
“ভালো। তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

“পড়তে যাচ্ছ?”

“হুম।”

“আচ্ছা যাও।”

আনাম ভাইয়া গেট দিয়ে ঢুকতে গিয়ে আবার দাঁড়ালো। ফিরে তাকালো আমার দিকে। তার মুখে ঝাপসা সংশয় দেখতে পেলাম। শেষমেশ সে সংশয় কাটিয়ে বললো,
“সকালে গেলে না কেন? অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ছিলাম।”

আনাম ভাইয়ার কথা বুঝতে পারলাম না। কোথায় যাইনি আমি? কোথায় অপেক্ষা করছিল সে? বললাম,
“আমার কি কোথাও যাওয়ার কথা ছিল?”

আনাম ভাইয়াও আমার কথায় অবাক হলো।
“আজ সকালে আমাদের রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা ছিল না? কিন্তু তোমার বাবা তো এরকমই বলেছিল আমাকে।”

সকালের ঘটনাটা মনে পড়লো আমার। যখন আমরা নাস্তা করছিলাম বাবা একটা কাগজ দিয়েছিল। একটা রেস্টুরেন্টের ঠিকানা লেখা ছিল সেখানে। এর মানে কী? আমি চমকে আনাম ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভেবেছিলাম বাবা হয়তো আমার সঙ্গে মজা করার জন্য ওরকম করেছিল। কিন্তু না, কেউ তো সত্যিই আমার সাথে দেখা করার জন্য রেস্টুরেন্টে ছিল। আর সেটা আনাম ভাইয়া!
আমি চমকে তাকিয়ে আছি দেখে আনাম ভাইয়া বললো,
“তুমি কি কিছু জানো না?”

আমার বুক ধুকপুক করছে। চোখে জ্বালা অনুভব করছি। চোখ দিয়ে কি পানি পড়বে? আমি চাইছি না আনাম ভাইয়ার সামনে এমন কিছু ঘটুক। তাকে এই মুহূর্তে আমার কিছু বলারও নেই। আমি তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নই। আমি রিকশাটা দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু মনে হচ্ছে আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না। আমি রিকশা চালককে যেতে বললাম। আনাম ভাইয়া বললো,
“কেন? পড়তে যাবে না?”

“টাকা আনতে ভুলে গেছি।”

“টাকা আমি দিয়ে দিচ্ছি।”

“না।” আমি গেট পেরিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকলাম। সেজান ভাইয়া বললো,
“কীরে আবার ফিরে এলি কেন?”

“রিকশা ভাড়া নেই সাথে।”

এর বেশি কিছু বলতে পারলাম না। সিঁড়ির কাছাকাছি আসতেই বুঝতে পারলাম আমার চোখে জল। নিঃশ্বাস নিতে পারছি না যেন। বাবা কি সত্যিই আমার বিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে? কেন?
মাথা নিচু করে সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম। কেউ ডাকলো,
“মিস তুতু।”

এই নামে জাবির ভাই ছাড়া কেউ ডাকে না। আমি ভুলে তার দিকে চোখ তুলে তাকালাম। আর এই সুযোগে সে আমার অশ্রু ভেজা চোখ জোড়া দেখে নিলো। সঙ্গে সঙ্গে কালো হয়ে গেল তার মুখ।

“কাঁদছো কেন?”

“কাঁদছি না।”

“তুমি কাঁদছো!”

“না।”

আর কিছু বলতে পারলাম না। তার পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে এলাম। সেও পিছন পিছন এলো।

“কী হয়েছে মিস তুতু? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে? সেজান কিছু বলেছে?”

পিছন পিছন তার আসাকে এই মুহূর্তে আমার কাছে বিষের মতো বিষাক্ত লাগছে। বললাম,
“আপনি থামুন জাবির ভাই। কিছু হয়নি আমার।”

সে এবার থেমে গেল। তার চোখে এখনও প্রশ্ন, জানার আকুলতা। আমি তার আকুলতাকে উপেক্ষা করে উপরে চলে এলাম।
____________________

সন্ধ্যায় ফিরলো বাবা। আমি তখনই কিছু বললাম না। বাবাও কিছু বললো না আমি দেখা করতে যাইনি কেন সে প্রসঙ্গে। বাবা এসেই গোসল করলো। দুপুরে যেহেতু বাসায় আসেনি তাই গোসলও করা হয়নি।
আমি বসার ঘরে বসে রইলাম বাবার অপেক্ষায়। আমি কী বলবো তার আগে সে এসে বললো,
“ছেলেটা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে ছিল, গেলি না কেন তুই?”

“আমি কিছু জানি না, শুনিনি, তুমি হঠাৎ একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলবে এখানে চলে যাস, আর আমি চলে যাব?”

“ঠিক আছে আজ যখন যাসনি, কাল যাস।”

“আমি কোথাও যাব না বাবা। তুমি কাউকে কিছু না জানিয়ে এসব কী করছো? আনাম ভাইয়া? ওনার সাথে বিয়ে দেবে আমাকে?”

বাবা উৎসাহী হয়ে জানতে চাইলো,
“পাত্রটা যে আনাম বুঝলি কীভাবে?”

“তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল।”

“তাই না কি? কখন? কোথায়?” আমাদের দেখা হওয়াতে বাবা যেন খুব খুশি হয়েছে। তার বলার ধরনে এমনই মনে হচ্ছে।

“বিকেলে। বাড়ির সামনে।”

বাবা একগাল হেসে বললো,
“বুঝলি সেতু, আনাম খুবই ভালো ছেলে। যখনই আমি তোর বিয়ের কথা চিন্তা করছিলাম তখন হঠাৎ করে আমার ওর কথা মনে পড়লো। টুক করে করিম ভাইকে দিয়ে ওর বাসায় প্রস্তাব পাঠালাম। ওর পরিবারও ওর জন্য মেয়ে খুঁজছিল। তোর কথা বলাতে তারা খুশি হয়েছে। খুব পছন্দ করেছে তোকে। ভালো করেছি না?”

“ভীষণ খারাপ করেছো বাবা!” বলতে গিয়ে আমার চোখে পানি এসে গেল।

বাবা বললো,
“কেন? খারাপ কেন?”

এবার সত্যিই কান্না পাচ্ছে। আমি বাবাকে কী করে বলবো আমি সেজান ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাই! এ কথা শুনলেও বাবা বকবে। হ্যাঁ, যে মানুষটা কখনও বকা দেয় না সে মানুষটা এই কথা শুনে অবশ্যই বকবে! আপু? ও তো মে’রেই ফেলবে আমাকে! সেজান ভাইয়ার কথা ওদের জানানোর সাহস আমার এখনও তৈরি হয়নি। আর এ কথাটা সহজে বলার মতোও নয়। বাবাকে অশ্রুসজল চোখ দেখিয়ে বললাম,
“বাবা, জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী আমার এখনও আঠারো বছর হয়নি।”

বাবা আমার চোখে পানি দেখে মহা বিরক্ত হয়ে বললো,
“বাচ্চাদের মতো কাঁদিস না তো। জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়ানো কোনো ব্যাপারই না। কত বছর বাড়াতে চাস?”

“আপু জানে তুমি আমার বিয়ের জন্য পাত্র ঠিক করেছো?”

“জানাবো কেন? সারপ্রাইজ হবে? তোদের বিয়ে দিয়ে একদিন ওকে বাসায় ডেকে এনে আচমকা পরিচয় করিয়ে দেবো। কেমন হবে বল তো?”

আমি বুঝতে পারছি না বাবা আসলেই আমার বিয়ে নিয়ে সিরিয়াস কি না। তার কথা শুনে সিরিয়াস মনে হচ্ছে না। আবার সিরিয়াস যদি না-ই হবে তাহলে আনাম ভাইয়ার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো কেন? আপুকে সবটা জানাতে হবে। আপু যদি জানতে পারে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে তাহলে কখনও বিয়ে হতে দেবে না। আর সেজান ভাইয়ার বন্ধুর সাথে তো নয়ই। আমি দ্রুত বাবার রুমে চলে এলাম। বাবা বলে উঠলো,
“আরে যাচ্ছিস কেন? বিয়ে নিয়ে প্ল্যানিং-ট্ল‍্যানিং করে নিই।”

আমি বাবার ফোন দিয়ে আপুকে কল করলাম। সবটা বললাম আপুকে। সব শুনে আপু খুব রেগে গেল।

“ওই ব্যাটা আবার পাগলামি শুরু করেছে? কোথায় সে? ফোনটা তার কাছে দে।”

আমি বসার ঘরে ফিরে এলাম। বাবার দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিতেই সে বললো,
“দিলি তো সারপ্রাইজ মাটি করে। আমার মেয়ে হয়ে তোর মাথায় সিকি ভাগও বুদ্ধি নেই। তবে এতে আমি অবাকও নই। তোর মা’ও ছিল বোকার সর্দার।”

বাবা ফোন নিয়ে বেশ মিষ্টি গলায় বললো,
“কেমন আছিস মা? ইমাইদ কেমন আছে? তোর শ্বশুরের না কি প্রেশার উঠেছিল? ঠিক হয়েছে?”

বাবা এক সঙ্গে চারটা প্রশ্ন করেছে, কিন্তু এর একটা উত্তরও বাবা পাবে না এটা আমি ভালো করে জানি। ফোনের ভলিউম বাড়িয়ে দিয়েছি যাতে আপু যা বলে শুনতে পাই। আপু গর্জে উঠলো আচমকা বজ্রপাতের ন্যায়,
“তুমি কী শুরু করেছো? আমাদের কি ভালো থাকতে দেবে না? আমাদের ভালো দেখলে কি তোমার হিংসা হয়? তুমি কোন আক্কেলে সেতুর বিয়ের জন্য পাত্র দেখেছো? তুমি আমার সাথে একবার আলাপ করার প্রয়োজনবোধ করোনি। কেন? ওর গার্ডিয়ান কি শুধু তুমি একা? আমি কি সেতুর গার্ডিয়ান নই? তুমি হুট করে আমার জন্য পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিয়েছো, এখন আবার সেতুরও বিয়ে দিতে চাইছো? কেন এত তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে দিতে হবে? ওর বয়স কত? ওর কি বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে?”

“তুই শুধু শুধু রাগ করছিস। বিয়ে দিলে ক্ষতি কী? তাছাড়া ওর বিয়ের বয়স হয়নি এমনও তো না। সার্টিফিকেটে আঠারো না হলেও ওর বয়স কিন্তু আঠারো বছর হয়েছে।”

“না হয়নি। আঠারো কেন? ওর বয়স আঠাশ হলেও আমি ওর বিয়ে দেবো না। আর তোমার কী রুচি, আনামকে ঠিক করেছো পাত্র হিসাবে?”

বাবা তুমুল বিস্ময়ে বলে উঠলো,
“কেন? আনামের ভিতর কী খারাপ আছে? ভালো ছেলে, পরিবার ভালো, নিজে শিক্ষিত, পরিবার শিক্ষিত, চেহারা সুন্দর, লম্বা, আচরণ ভদ্র, ধনী, ওর এলাকায় ওর সুনাম রয়েছে। সবচেয়ে বড়ো কথা যেটা সেটা হলো, আনাম সিগারেট খায় না, বিড়ি খায় না। অন্যসব যা আছে তাও কিছু খায় না। তাহলে কী খুঁতটা আছে ওর?”

“খুঁত নেই বলছো? ওর সবচেয়ে বড়ো খুঁত তো এটাই যে ও সেজানের বন্ধু। ও নিজে সিগারেট, মদ না খেলেও ওর একটা নেশাখোর বন্ধু তো আছে। এটা খুঁত নয় বলছো?”

বাবা চিন্তিত হয়ে পড়লো,
“এটা কি খুঁত?”

“অবশ্যই। যার সেজানের মতো একটা বন্ধু আছে আমি তার ঘরে আমার বোনকে বউ করে পাঠাবো না।”

“সেজান ভালো না এটা সেজানের সমস্যা, আনামকে কেন…”

“সেতুর এখন বিয়ে হবে না এটাই আমার শেষ কথা। তুমি আনামের পরিবারকে জানিয়ে দিয়ো। আর তুমি যদি এর পরও কোনো রকম ওর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো, তাহলে এটাও জেনে রাখো এর পরিণাম ভালো হবে না। আমি তোমার ঘরে আ’গুন লাগিয়ে দেবো।”

বাবা আঁতকে উঠলো,
“বলছিস কী? তাহলে আমি থাকবো কোথায়? তোর নতুন মা থাকবে কোথায়?”

“নতুন মা? তোমার এই পাগলামিও বন্ধ করো বাবা। নয়তো আমরাও পাগল হয়ে যাব।”

বাবার মুখ হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বললো,
“কথাটা খারাপ বলিসনি রূপকথা। চল আমরা সবাই মিলে পাগল হয়ে যাই। একসঙ্গে তিন বাবা-মেয়ে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো, ব্যাপারটা কিন্তু সুন্দর হবে। আমরা ফেমাস-টেমাসও হয়ে যাব।”

বাবার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। আপুর কী অবস্থা জানি না। ওপাশ থেকে দুর্বল গলা ভেসে এলো,
“তোমার সাথে আর কথা বলতে চাই না। আনামের পরিবারকে বলে দিয়ো আমরা এত তাড়াতাড়ি সেতুর বিয়ে দেবো না। রাখছি।”

আপু কল কেটে দিলো। বাবা হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে চেয়ে বললো,
“সবাই মিলে পাগল হলে ব্যাপারটা কিন্তু ভালোই হতো। আচ্ছা, কী করে পাগল হওয়া যায় বল তো? জাবিরের সাথে কথা বলতে হবে। ছেলেটা অনেক জ্ঞানী। হয়তো ওর জানা থাকতে পারে পাগল হওয়ার উপায়।”

বাবা উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে গেল সদর দরজার দিকে। বাবা কি এখনই জাবির ভাইয়ের কাছে পাগল হওয়ার উপায় জানতে যাচ্ছে? জিজ্ঞেস করলাম,
“যাচ্ছ কোথায়?”

“একটু হেঁটে আসি।”

বাবা বেরিয়ে গেল। আমি দরজা আটকে দিলাম। এখন একটু শান্তি শান্তি লাগছে। আপু যেহেতু বলেছে সুতরাং বাবা আমার বিয়ের প্রসঙ্গ সামনে এগোতে পারবে না।

আমি রুমে এলাম, তারপর ব্যালকনিতে। ঘরের সম্মুখের লাইটটা আজ কোনো কারণে অফ। নষ্ট হয়ে গেল না কি লাইটটা?
উঠান জুড়ে অন্ধকার। সেই অন্ধকারের বুকে আমি ক্ষুদ্র একটি জ্বলন শিখা দেখতে পেলাম। ওটা সিগারেটের প্রভা। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বুঝলাম সেজান ভাইয়া উঠোনে ইজি চেয়ার নামিয়েছে এবং এখন সেই ইজি চেয়ারে আধ শোয়া হয়ে সিগারেট খাচ্ছে। আমার হৃদয়ে বিষাক্ত একটা অনুভূতি সুচ ফোটানোর মতো করে ফুটে উঠলো। সেই সূক্ষ্ম সুচ পরিমাণ বিষাক্ত অনুভূতি ধীরে ধীরে বিস্তীর্ণ হয়ে দখল করে নিলো হৃদয়ের সমস্ত স্থল। সেজান ভাইয়া কি জানে তার বন্ধুর সঙ্গে আমার বিয়ের সম্বন্ধ হয়েছিল? সে কি আগে থেকেই জানতো? আমাকে তো কিছু বলেনি। আমার হঠাৎ কঠিন অভিমান হলো তার উপর। সেজান ভাইয়া আগে থেকেই সব জানতো, অথচ তার মুখে তো একটুখানিও কষ্টের ছাপ দেখিনি, কিংবা খারাপ লাগার কোনো বিষয়ও উপলব্ধি করিনি। তাহলে সেই দিন সন্ধ্যায় তার চোখে যা দেখেছিলাম তা কি ভুল ছিল? না কি আমার এই মুহূর্তের ভাবনা ভুল? প্রচণ্ড কান্না পেল। হঠাৎ এত কষ্ট হচ্ছে যে, মনে হচ্ছে আমার হৃৎপিণ্ড উত্তপ্ত আগুনের তাপে পুড়ে কালো হয়ে যাচ্ছে। ভীষণ অভিমানিনী হয়ে তার কাছে এই মুহূর্তে খুব করে একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হলো,
‘তুমি কি আমায় ভালোবাসো না?’

অথচ আমি জানি না আমি কোন ভিত্তিতে এই প্রশ্ন করবো। সে তো আমাকে এমন কোনো কথা দেয়নি যে সে আমাকে ভালোবাসবে। যেখানে কোনো কথা দেওয়া ছিল না, ভালোবাসা নিয়ে কখনও আলোচনা ছিল না, সেখানে আমি হুট করে তাকে এই প্রশ্নটা কীভাবে করবো?

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে