নীল জোছনায় ভাসি পর্ব-০৫

0
1636

#নীল_জোছনায়_ভাসি (০৫)
#লেখা: ইফরাত মিলি
___________________

চ্যাঁচামেচির আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। এক মুহূর্ত আর বিছানাতে থাকলাম না। দরজা খুলে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। একটু আগেও একসাথে কয়েকজনের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল, আর এখন কেবল সেজান ভাইয়ার গলা শোনা যাচ্ছে। একটু পর সেজান ভাইয়াকে দেখতেও পেলাম। ভালোই বুঝতে পারছি ঘটনা কী। চাচা-চাচি ঘরে ঢুকতে দেয়নি তাকে। আজ কি মদ খেয়েছে সে? এখন আমার অবশ্যই ঘৃণাবোধ হওয়া উচিত, কিন্তু আমার উলটো খারাপ লাগছে। এখন রাত আনুমানিক একটা কি দেড়টা। সারারাত ধরে সেজান ভাইয়া বাইরে থাকবে? দেখলাম সে বসে পড়েছে মাটিতে। একটু আগেও ঘরের লোকদের বকাবকি করছিল, এখন সে নিশ্চুপ।
কিছুক্ষণ পর একটা গানের সুর ভেসে এলো। কী গান গাচ্ছে সে? একটু শোনার পর বুঝতে পারলাম এটা জেমসের ‘ফুল নেবে না অশ্রু নেবে’ গানটি। সুরের কিছুটা বেহাল দশা। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। এরপর দেখলাম গেট দিয়ে একটা মানুষকে ঢুকতে। মানুষটার চেহারা ভালো করে দেখতে পাইনি, কিন্তু জানি এটা কে। এটা সেজান ভাইয়ার বন্ধু আনাম। আনাম ভাইয়া তাকে ধরে দাঁড় করালো। এরপর তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল গেট দিয়ে।
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যাক সব সময়কার মতো আজও তাহলে সেজান ভাইয়াকে বাইরে রাত কাটাতে হবে না। যখনই চাচা-চাচি সেজান ভাইয়াকে ঘরে ঢুকতে দেয় না তখন তার এই বন্ধু এসে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। যদিও তার বন্ধু মোটেই তার মতো নয়। সে সিগারেট খায় না, মদ খায় না, কারো সাথে ঝামেলায় জড়ায় না। সে একজন ভালো মানুষ। কিন্তু তবুও সেই ভালো মানুষটি নিজের খারাপ বন্ধুটিকে ত্যাগ করেনি। বরং খারাপ বন্ধুটির ভালো করে দেখাশোনা করছে। খারাপ পথ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করছে।
এবার আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো। বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
আজ চাচির সাথে মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম সেজান ভাইয়ার জন্য। মেয়ে খুব সুন্দর। মনে হলো নম্রও। সেজান ভাইয়ার সাথে মানাতো মেয়েটিকে। কিন্তু আমি চাচিকে বলেছি দুজনকে একদমই মানাবে না। কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। কী করবো? চাচির ছেলেকে যে আমি অত্যধিক ভালোবাসি, তাই চাচির ছেলের পাশে অন্য মেয়েকে দেখতে আমার অত্যধিক খারাপ লাগবে!
কীভাবে মানবো ওই মানুষটির হৃদয়ে অন্য কারো জন্য ভালোবাসা? কীভাবে সহ্য করবো অন্য কারো জন্য তার প্রণয়ের কথা? আমি যে চাই তার হৃদয়ের সব জমিনটুকুই আমার নামে লিপিবদ্ধ থাক।

____________________

আপু যাওয়ার আগে বাবাকে কড়া গলায় বলে গিয়েছে আজ বাড়িতে থাকতে। কারণটা কী সেটা সকাল দশটার আগ পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছিল না। আমি আর বাবা দুজনেই বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে ভাবছিলাম। কিন্তু আমাদের ভাবনা কোনো কিনারা পাচ্ছিল না। অতঃপর আমরা সকাল দশটা নাগাদ ঘটনাটি বুঝতে পারলাম, আপু ফিরে আসার পর।
আপু একটি ছেলেকে নিয়ে এসেছে। ওদের ভিতর সম্পর্কটা প্রীতিপূর্ণ। সম্পর্ক বোধহয় বিয়ের দিকেও এগোবে।
ফ্রিজে আপেল, সন্দেশ ও পাউরুটি আর দুধ দিয়ে বানানো একটা খাবার ছিল, আমি তাই খেতে দিলাম ছেলেটাকে। বাবা আর সে কথা বলছে। আপুও বসে আছে বাবার পাশে। বাবা নানান প্রশ্ন করছে। তার ভিতর কিছু প্রশ্ন আবার লজ্জাদায়ক। যেমন-
‘মাধ্যমিকে ফেল করেছিলে কয় সাবজেক্টে?’
‘ও তোমার বাবা পুলিশ? মাসে কত টাকা ঘুস খান উনি?’
‘তোমার ঠোঁট কালো কেন? তুমি কি সিগারেট খাও? শুধু সিগারেট? না কি সাথে ইয়ে-টিয়েও খাও?’

এরকম আরও অনেক প্রশ্ন করছে সে। আপু নানাভাবে বাবাকে এসব প্রশ্ন করতে নিষেধ করছে, কিন্তু বাবা কি আর শোনার পাত্র? আমি ছেলেটাকে লক্ষ করলাম। ছেলেটা ঘামছে। বাবার প্রশ্নের ঝড়ে পড়ে খারাপ হয়ে গেছে বেচারার অবস্থা।
ছেলেটা চলে যাওয়ার পর বাবার কপালে দুঃখ রচিত হবে এ অনুমান সহজেই করতে পারছি।
ছেলেটা এক সময় আচমকা বলে উঠলো,
“আঙ্কল, আমাকে এখন যেতে হবে। আমাদের দাদা বাড়ি যাওয়ার কথা বারোটায়। প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। আমি এখন উঠি।”

ছেলেটা উঠে দাঁড়ালো। আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি যাচ্ছি রূপকথা। পরে তোমার সাথে যোগাযোগ হবে।”

আপুর মুখে চিন্তার ছাপ। ও কি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ভয় করছে? বাবা এমন সব কথা বলবে জানলে হয়তো কখনোই ছেলেটাকে বাসায় নিয়ে আসতো না। ছেলেটার সামনে বাবাকে কিছু বলতেও পারেনি বেচারি। আমার দুঃখবোধ হলো আপুর জন্য। তার থেকেও বেশি দুঃখবোধ হচ্ছে বাবার জন্য। না জানি বাবাকে কোন দুর্যোগের ভিতর দিয়ে যেতে হবে।

আপু ছেলেটাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলো। ও ফিরে আসতেই বুকের ভিতর কম্পন শুরু হলো আমার। এখন ছোটোখাটো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে আমাদের ছোট্ট ঘরটি।
আপু ক্ষুব্ধ বাঘিনির ন্যায় বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
“পাগল হয়ে গেছো? পাবনার মানসিক হাসপাতালে তোমার ভর্তির ফরম পূরণ করবো? এগুলো কী বললে তুমি ওকে? কাকে কী বলতে হয়, কী রকম ব্যবহার করতে হয় জানো না? কিছু শিখে বুড়ো হওনি? তোমার থেকে একটা বারো বছরের বাচ্চাও ভালো বোঝে সবকিছু।”

বাবা বললো,
“তুই এই ছেলেটাকে পেয়েছিস কোথায় বল তো? এই ছেলের চোখ দেখেছিস? চাইনিজদের মতো। আমি শিওর এই ছেলের মা চীন দেশের নাগরিক ছিল। চীন দেশের মানুষরা কি খায় জানিস? ওরা অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রাণী খায়, অক্টোপাস খায়, অ্যানাকোন্ডা খায়। তুই কি এই ছেলেকে বিয়ে করে এসব খাবি? তুই আমার মেয়ে হয়ে…”

“বাবা…” আপু চিৎকার করে উঠলো, “বলছো কী এসব? তুমি আসলেই পাগল হয়ে যাচ্ছ ধীরে ধীরে। তাশরীফ ভালো ঘরের ছেলে ছিল। আজ ওর সাথে যেরকম করলে তাতে ও আমাকে বিয়ে করবে?”

“ও বিয়ে করবে কী, আমিই তো তোকে ওর সাথে বিয়ে দেবো না। তুই আমার রুপোর টুকরো মেয়ে, ও হচ্ছে লোহা। একটা লোহার সাথে তোকে বিয়ে দেবো না। বাবা হিসেবে এই কাজ আমি কখনও করতে পারবো না।”

“আমি ওকেই বিয়ে করবো। কীভাবে করবো, কীভাবে কী হবে আমি জানি না। শুধু জানি তুমি সবটা ঠিক করবে।”

আপু বেডরুমের দিকে এগোতে লাগলো। বাবা পিছন থেকে বললো,
“রুপো হয়ে লোহার পিছনে ছুটছিস? ও ছেলে ভালো না। চোখ ছোটো, নাক বোচা, চাইনিজ বংশ। বিয়ের পর তোকে হাবিজাবি খেয়ে থাকতে হবে।”

বাবা অসহায় চোখে আমার দিকে তাকালো,
“সেতু, ওকে একটু বুঝা।”

বাবার অসহায়পূর্ণ চোখ দুটো দেখতে ভালোই লাগছে। বললাম,
“একটা চাইনিজ দুলাভাই পেলে আমি অখুশি হবো না বাবা।”

বাবা আমার কথায় চমকে গেল।

____________________

দুপুর থেকে বৃষ্টি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আজকে প্রাইভেট পড়তে যাব না। মিস রূপকথা কী করে যেন আমার মনের গোপন এই সিদ্ধান্তটি সম্পর্কে টের পেয়ে গেছে। তাই সে টিউশনিতে যাওয়ার আগে আমাকে কড়া নির্দেশ দিয়ে গেছে, যেন আমি বৃষ্টি দেখে কম্বলের ভিতর ঢুকে বসে না থাকি। সে কমল স্যারের কাছে কল দেবে। কল দিয়ে আমি সেখানে নেই শুনলে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা সে ভালো করেই নেবে। এটা শান্তভাবে আমাকে শাসানো ছাড়া আর কিছু নয়। তবে তার শাসানোতে কাজ হলো। আমি ভদ্র মেয়ের মতো তৈরি হয়ে বিকেলে প্রাইভেট পড়তে গেলাম।
ধীরে ধীরে বৃষ্টির তেজ বাড়লো। সাথে বইতে লাগলো ঝড়ো হাওয়াও। কমল স্যারের ওখানে আটকা পড়ে রইলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে যাওয়ায় এই দুর্যোগের ভিতরই বেরিয়ে পড়লাম। একা নই, সাথে আরও সহপাঠীরা ছিল। একটা জায়গায় এসে সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে সিএনজি পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ালো। কেউ আমাদের বাড়ির ওদিকে যেতে রাজি হচ্ছে না। রাস্তার পাশে একটা সিএনজি পাওয়ার আশায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার পোশাক ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। ছাতা বলতে গেলে কেবল মাথাটাকে রক্ষা করছে। কিন্তু ঝড়ো বাতাস আমার মাথার সুরক্ষা টুকুও কেড়ে নিলো। আমার ছাতাটা হঠাৎ উলটে গেল উপরের দিকে। আমি দৌড়ে এসে একটা দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়ালাম। এরই মধ্যে ভিজে গেছি। উলটে যাওয়া ছাতাটাকে ঠিক করার চেষ্টা করলাম। আমি পারছি না দেখে একজন চাচা আমাকে সাহায্য করলো। কিন্তু তবুও ছাতাটা ঠিক করতে পারলাম না। খুব রাগ লাগছে। ইচ্ছা করছে বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে চলে যাই। ব’জ্রপাত হচ্ছে না। যাওয়াই যায়। ক্ষতির ভিতর যা হবে তা হলো জ্বর আসতে পারে। আসুক। এ জীবনে বৃষ্টিতে ভিজে কম জ্বর বাঁধাইনি। আমি কঠিন মেয়ে। যাকে ভালোবাসি তার জন্য যদি মেয়ে দেখতে যেতে পারি, তাহলে এই বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফেরা তো সামান্য ব্যাপার। কেউ কেউ আমাকে নিষেধ করলো বৃষ্টিতে যেতে, কিন্তু আমি শুনলাম না, নেমে গেলাম। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আমি ছাউনি থেকে বেরোনোর পরও ভিজলাম না। আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। কেউ একজন আমার মাথার উপর ছাতা বাড়িয়ে দিয়েছে। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম মানুষটি আমার পরিচিত। আনাম ভাইয়া। সে কি এখানেই ছিল? আমি তো আগে লক্ষ করিনি।

আনাম ভাইয়া বললো,
“এটা নিয়ে যাও।”

“আপনি বাড়ি ফিরবেন কীভাবে তাহলে?”

“বৃষ্টি থামলে চলে যাব।”

“যদি বৃষ্টি না থামে?”

“থামবে। না থামলে গাড়িতে করে চলে যাব।”

ছাতাটা নিয়ে কৃতজ্ঞতা জানালাম,
“ধন্যবাদ ভাইয়া।”

আনাম ভাইয়া হাসার চেষ্টা করলো।

আমি আনাম ভাইয়ার ছাতা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। কিন্তু ভাগ্য আজ সত্যিই আমার সহায় নয়। আনাম ভাইয়ার ছাতাটাও ভেঙে গেছে! এখন কী করবো? নতুন একটা ছাতা কিনে দিতে হবে?
চিন্তায় কালো মুখ নিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম। কলে জাবির ভাইকে দেখা যাচ্ছে। এই বৃষ্টির ভিতর সে এসেছে পানি নিতে। পাঁচ লিটার ওজনের বোতলের কর্ক আটকিয়ে পিছনে ফিরেই আমাকে দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। হয়তো ভয় পাওয়ারই কথা। কারণ বৃষ্টির ভিতর ভাঙা ছাতা মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এরপর মেঘের কারণে পরিবেশ হালকা অন্ধকারাচ্ছন্ন, এর সাথে যুক্ত হয়েছে সন্ধ্যার আগমন বার্তা। সে বিস্ময়ের সাথে বললো,
“মিস তুতু, তুমি দুটো ছাতা…”

সে কথাটা বলতে বলতে কলপাড় ছেড়ে উঠোনের মাটিতে পা রেখেছিল। তার হয়তো খেয়াল ছিল না এখন বৃষ্টি হচ্ছে, আর উঠোনের মাটি আর মাটি নেই, পিচ্ছিল কাদা হয়ে গেছে। সে সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই কাদায় পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে গেল! হাত থেকে ছিটকে গেল ছাতা ও পানির বোতল। আমার বক্ষদ্বার কেঁপে উঠলো। আতঙ্কের সাথে ডেকে উঠলাম,
“জাবির ভাই!”

জাবির ভাই উপুড় হয়ে পড়ে গেছে। এজন্য আরও বেশি ব্যথা পেয়েছে নিশ্চয়ই।
আমি সাবধানে পা ফেলে তার কাছে এলাম। কাদার ভিতর ইটের টুকরো ছিল, তার উপর পড়ায় জাবির ভাইয়ের নাক কে’টে গেছে!

“বেশি ব্যথা পেয়েছেন জাবির ভাই?”

জাবির ভাই নাক চেপে ধরে উঠে দাঁড়ালো। সে কাদায় মাখামাখি হয়ে গেছে প্রায়। ব্যথা পেয়েছে, তবুও হেসে বললো,
“এখন তোমার আপু এসে গেলে তুমি আমার কাছে না এসে ঘরে চলে যেতে তাই না?”

আমি জবাব না দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তার চোখে অব্যক্ত কিছু ভাষা ফুটে আছে। যদিও তা অব্যক্ত, কিন্তু আমি জানি ওই অব্যক্ত ভাষাগুলো কী। তবুও এমন ভাণ করি যেন কিছু জানি না, বুঝি না। আমার বাবা একটা কথা বলে- যে যত বেশি না বোঝার অভিনয় করে, তার জীবন তত বেশি সহজ। বাবার এই কথাটা আমি মানি।
জাবির ভাই এক আঙুল দিয়ে আমার গালে কাদা লাগিয়ে দিলো। চোখের গভীরতা ও গলার গভীরতা দুই-ই মিলিয়ে বললো,
“চলে গেলে আগেভাগেই চলে যেয়ো মিস তুতু, নিজের চিহ্ন ফেলে তারপর চলে যেয়ো না।”

(চলবে)
____________________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে