নীল জোছনায় ভাসি পর্ব-০৩

0
1832

#নীল_জোছনায়_ভাসি (০৩)
#লেখা: ইফরাত মিলি
___________________

একজন পাত্রী পাওয়া গিয়েছিল। পাত্রীর বয়স উনচল্লিশ। গায়ের রং শ্যামলা। উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। চুল কোমড় পর্যন্ত লম্বা। আঁখি দুটো গাঢ় কালো। ওজন আটান্ন কেজি। নাক খাড়া। সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু পাত্রীর গালে অতি ক্ষুদ্র একটা তিলের কারণে বাবা এই পাত্রীকেও চয়ন করলো না। বাবার মন খারাপ, সাথে আমারও। একটি মাত্র তিলের কারণে বাবা এমন না করলেও পারতো।
একটা খাবার হোটেলে আমরা দুই বাবা-মেয়ে মুখোমুখি বসে আছি। আমাদের দুজনের মুখই ভার। আজ বাবার সাথে আমিও জামালপুর গিয়েছিলাম পাত্রী দেখতে। বাবা জোর করেই সাথে নিয়ে গেল। পাত্রীকে পছন্দ হয়েছিল আমার। বাবার সাথে ভালো মানাতোও। আমার বাবা বয়স্ক হতে পারে, কিন্তু সুদর্শন।

করিম চাচা এসে বাবার পাশে বসলেন। ওনারও হয়তো মন খারাপ। আমরা কেউ কিছু বলছি না। অনেকক্ষণ নীরবতা। বাবা হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোর মন খারাপ কেন রে মা? কি ভাবছিস তোর বাবার বিয়ে হবে না? চিন্তা করিস না, করিম ভাই তো বললো, আসছে ফাল্গুনের মধ্যেই তুই বাবার বিয়ে খাওয়ার ভাগ্য লাভ করবি।”

আমি বাবার কথা শুনলাম, কিন্তু এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে ইচ্ছা হলো না। বললাম,
“গাজরের ফেসপ্যাক দিয়ে তোমার চেহারার ভালোই উন্নতি হয়েছে বাবা। কাল থেকে তুমি আর আমি দুজনেই ফেসপ্যাক লাগাবো।”

বাবা এ কথা শুনে খুশি হলো। এক গাল হেসে বললো,
“শুধু কি গাজরের ফেসপ্যাক? টম্যাটো, কলা, চিচিঙ্গা, ঢেড়শ, করলা আরও কত কীসের ফেসপ্যাক যে আছে। তুই আর আমি প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন ফেসপ্যাক লাগাবো।”

চিচিঙ্গা, ঢেড়শ, করলা? এসবের ফেসপ্যাকও হয়? আমি আগে কখনও শুনিনি। বাবা রূপচর্চার ব্যাপারে ভালোই উন্নতি করেছে বলতে হয়।

আমরা খাবার খেয়ে হোটেল থেকে বের হলাম। বাবা আমাকে সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়ে করিম চাচাকে নিয়ে দোকানে গেল। বাজারে আমাদের বস্ত্রের দোকান আছে। দুজন লোক রাখা আছে দোকানে। তাদের কাজে রেখেই বাবা পাত্রী দেখতে ঘুরে বেড়ায়।
সিএনজি আমাকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিলো না, বাসা থেকে অনেক দূরে নামিয়ে দিলো। তার না কি কোথায় যেতে হবে। ড্রাইভারের সাথে হালকা তর্ক হলো আমার। আমি ভাড়া দিলাম একদম মেপে মেপে। একটুও বেশি ভাড়া দিলাম না। এটাও আমার বাবার শিক্ষা। পাওনাদারকে তার ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করো, এর চেয়ে একটু কমও না, বেশিও না।

মেইন রোড দিয়ে হেটে আসছি। কোথায় যেন গন্ডগোল হচ্ছে টের পেলাম। কোনো এক গলির রাস্তায়। হঠাৎ মনে হলো সেজান ভাইয়ার কণ্ঠ শুনতে পেলাম। আমি মূল রাস্তা সংলগ্ন একটা গলির রাস্তা ধরে একটু এগোতেই দেখতে পেলাম বিশাল ঝামেলা লেগেছে। ঝামেলা মা’রামারি হওয়ার পর্যায়ে। ঠিক তাই, সেজান ভাইয়া একজনের নাকে ঘু’সি মা’রতেই সে পড়ে গেল। ঘু’সি খাওয়া লোকটার সাথে থাকা অন্যরা অবশ্য বসে থাকলো না, সাথে সাথে সেজান ভাইয়ার নাকেও একটা ঘু’সি পড়লো। এবার ক্ষেপে গেল সেজান ভাইয়ার সাথে থাকা ছেলেরা। মা’রামারি হয়তো চরম পর্যায়ে পৌঁছবে! আমি এমন ভয়ংকর মা’রামারি দেখার মতো মেয়ে নই। আমার হাত-পা এখনই কাঁপছে। দৌড়ে গলি ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। হৃৎপিণ্ডও কাঁপছে আমার। বখাটে টু বখাটেদের ফাইট। এটা মোটেই খারাপ কিছু নয়, এটা হলো অতি নিম্ন মানের খারাপ জিনিস। সেজান ভাইয়া তো অনেক খারাপ হয়ে গেছে! আমি একটু ঘৃণা করার চেষ্টা করলাম তাকে, কিন্তু আমার মনে একটুও ঘৃণা বোধ এলো না। এলো এক ঝাঁক উড়ো চিন্তা, উদ্বিগ্নতা। তাও সেজান ভাইয়াকে ঘিরে। এই মুহূর্তে আমার মনের একটাই চাওয়া, সেজান ভাইয়া বেশি আঘাত না পাক।

সুমনা চাচি টিউবওয়েল চেপে বালতি ভর্তি করছিল পানিতে। আমাকে দেখেই থেমে গেল। কেমন চাপা স্বরে ডাকলো,
“এই সেতু!”

তার ডাকটা এমন যেন কেউ শুনে ফেললেই সে বিপদে পড়ে যাবে।
আমি দাঁড়ালাম। চাচি আমার কাছে এসে এক হাত চেপে ধরে আমাকে সিঁড়ির নিচে নিয়ে এলো। আমি চাচির আচরণে খুব অবাক বোধ করছি। উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলাম,
“কী হয়েছে চাচি?”

চাচি ফিসফিস করে বললো,
“তোর বাবা না কি বিয়ে করবে? সে না কি পাত্রী-টাত্রী দেখে বেড়াচ্ছে?”

ভেবেছিলাম চাচি আমাকে দারুণ ভয়ংকর কোনো ঘটনা সম্পর্কে বলবে, কিন্তু চাচির এই প্রশ্ন আমাকে পুরোপুরি হতাশ করলো। অবশ্য বাবা বিয়ে করবে এটা আমার কাছে দারুণ ভয়ংকর কোনো ঘটনা না হলেও, চাচির কাছে হয়তো দারুণ ভয়ংকর ঘটনাই। বললাম,
“হুম পাত্রী দেখছে। কিন্তু কোনো পাত্রী পছন্দ হচ্ছে না। তবে করিম চাচা আশ্বাস দিয়েছেন যে, আসছে ফাল্গুনে বাবার বিয়ে তিনি পরিয়েই ছাড়বেন।”

চাচি শিউরে উঠলো,
“হায় আল্লাহ! এই বয়সে সে আবার বিয়ে করবে? তোদের কথা একবারও ভাবছে না?”

“আমাদের কথা কী ভাববে? আমরা কি মরে যাচ্ছি চাচি? বাবার বিয়ে হলে তো আমরা মরে যাব না।”

“শোনো মেয়ের কথা! সৎ মায়ের জ্বালা তো বুঝিসনি, সৎ মা ঘরে এলেই বুঝবি। ফরিদ ভাইয়ের মেয়েটার কথা মনে আছে? সৎ মায়ের অত্যাচারে মেয়েটা মরে গেল, দেখিসনি?”

“মেয়েটার ভাগ্যে অমন মৃত্যুই লেখা ছিল চাচি, তাই ওভাবে মারা গিয়েছে। আমার ভাগ্যে যেরকম মৃত্যু লেখা আছে আমিও সেরকম ভাবেই মরবো।”

চাচি আমার কথা শুনে দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কয়েক সেকেন্ড। অতঃপর আশ্চর্য গলায় বললো,
“তুই কি তোর বাবার বিয়ে করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছিস?”

“বাবার বিয়ে খাবো, ব্যাপারটা মজার না? কজন মেয়ের ভাগ্য হয়েছে বাবার বিয়ে খাওয়ার?” আমি হাসলাম।

চাচি বোধহয় পাগল পাগল বোধ করছে। আমারও খুশি লাগছে চাচিকে এমন বোধ করাতে পেরে।
চাচি অনেকক্ষণ কিছু বললো না। যখন বলতে চাইলো তখন আর বলতে পারলো না। বলতে উদ্যত হওয়া মাত্রই সিঁড়ি থেকে একজন বলে উঠলো,
“সিঁড়ির নিচে কে?”

চাচি ভয় পেয়ে গেল। আমি সিঁড়ির নিচ থেকে বেরিয়ে এলাম। প্রাইমারি শিক্ষক ও একজন হাই স্কুলের শিক্ষক দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়িতে। চাচিও বেরিয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়ালো।

জাবির ভাই অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনারা সিঁড়ির নিচে কী করছিলেন?”

আমি বললাম,
“আপনাকে তো বলা যাবে না। আপনার সাথে কথা বলা নিষেধ। মিস রূপকথা কঠিন ভাবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।”
হাই স্কুলের শিক্ষকের দিকে চেয়ে বললাম,
“আপনার জ্বর ভালো হয়েছে স্যার?”

“মোটামুটি।”

“প্যারাসিটামল খাবেন।”

“খেয়েছি।”

“তারপরও যায়নি? সমস্যা নেই খেতে থাকুন, সেরে যাবে।”

তাদের পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে এলাম।

জাবির ভাই বলে উঠলো,
“তোমার বোন নিষেধাজ্ঞা জারি করলো কেন?”

আমি থামলাম না, উপরে উঠতে উঠতে বললাম,
“সেটাও বলা যাবে না। কারণ আপনার সাথে কথা বলা নিষেধ।”

“কথা তো বলছোই, তাহলে এটা কেমন নিষেধাজ্ঞা পালন করা?”

“এটাও বলা যাবে না।”

_____________________

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আকাশে এখন রঙের খেলা। শহর জুড়ে মৃদু বাতাস ঘুরছে। খুব শান্ত পরিবেশ। আমি দাঁড়িয়ে আছি গেটের সামনে। সেজান ভাইয়ার জন্য। সে ফেরেনি। আমি আসলে দাঁড়িয়ে আছি সে কতটা মা’র খেয়েছে তা দেখার জন্য। বখাটে টু বখাটে ফাইট! মারাত্মক হওয়ারই কথা। কিন্তু আমার ধারণা ভুল হলো।
সেজান ভাইয়া ফিরে এসেছে। সে একদম সুস্থ। কপালে একটা কা’টা দাগ আর গলায় একটা কা’টা দাগ। আর কোনো ক্ষত নেই। বললাম,
“আঘাত পেয়েছো কীভাবে?”

“পড়ে গিয়েছিলাম।”

“মিথ্যা বলার দরকার কী? বলে দিলেই পারো রিফাতদের হাতে মা’র খেয়েছো! আর কখনও মা’রামারি কোরো না। চিন্তা হয়!”

বলে আমি আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালাম না, তড়িৎ পায়ে পিছন ঘুরে হাঁটা শুরু করলাম। পিছন থেকে সেজান ভাইয়া ডাকলো,
“সেতু!”

তার ডাক আমাকে থামতে বাধ্য করলো। দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকালাম। এই আলো-আধারিয়া ক্ষণে আমি অদ্ভুত কিছু লক্ষ করলাম সেজান ভাইয়ার চোখে। যা তার চোখে আগে কখনও দেখিনি। কিংবা আগেও হয়তো ছিল আমি লক্ষ করিনি। এই অদ্ভুত ব্যাপারটা কী তার চোখে? এটা কি ভালোবাসা জাতীয় কিছু? আমার তো মানুষের চোখে তাকিয়ে মন পড়ে ফেলার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা নেই, কী করে বুঝবো এটা কী? তবে মনে হচ্ছে সেজান ভাইয়ার চোখে এই মুহূর্তে যে ব্যাপারটা আছে সেটা আমার অনেক দিনের চাওয়া। আর এই অনেক দিনের আকাঙ্ক্ষিত জিনিসটা আমি অনেকদিন পর উপলব্ধি করলাম।

সেজান ভাইয়ার পিছনে একটা রিকশা থামলো। রিকশায় আপু বসে আছে। ওর দৃষ্টি আমার দিকে। আমার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। ঘুরে দাঁড়ালাম। বুকের ভিতরটা বিরতিহীন কাঁপছে। তবে তা আপুর ভয়ে না, সেজান ভাইয়ার চোখে দেখা অদ্ভুত ব্যাপারটার কারণে। ওই চোখ জোড়ার এত ক্ষমতা যে কারো বুকের ভিতর এমন কম্পন সৃষ্টি করছে!

____________________

ঘড়িতে এখন সময় দুপুর দুইটা। সময়টা ঘুমানোর সময়। প্রতিদিনই ঘুমাই এমন সময়। কিন্তু আজ ঘুমের কী যে হলো বুঝতে পারছি না। ঘড়িতে আরও একবার সময় দেখলাম। দুইটা দশ। ভীষণ তিক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠে বসলাম।
বসার ঘরে পা রাখতেই বাবার নাক ডাকার শব্দ শোনা গেল। বাবার আগে নাক ডাকার অভ্যাস ছিল না। কিন্তু কিছুদিন ধরে লক্ষ করছি বাবা নাক ডাকছে। এরকম হলে তো পাত্রীরাও বাবাকে অপছন্দ করতে শুরু করবে। খুব চিন্তিত বোধ করলাম। নাক ডাকার রোগ নিরাময়ের উপায় কী?

আপুর রুমে একবার উঁকি দিলাম। আপুও ঘুমাচ্ছে। গরমের সময়। কোনো ঠান্ডা নেই। কিন্তু আপু গায়ে একটা কাঁথা দিয়ে রেখেছে। এমন নয় যে ওর জ্বর। আপুর মাঝে কিছু কিছু অদ্ভুত ব্যাপার আছে। আমি ব্যাপারগুলোয় যেমন বিস্মিত হই, তেমনি মুগ্ধও হই। বাবা আফসোস করে আপু কেন আমার মতো হলো না, আর আমি আফসোস করি আমি কেন একটুও আপুর মতো হলাম না।
দরজা টেনে রাখলাম। আমাদের বাসায় তিনটাই শোবার ঘর। সবাই আলাদা আলাদা রুমে থাকি। আমাদের আত্মীয়স্বজন বলতে তেমন কেউ নেই। বাবা সবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। কিংবা বলা যায় অন্য সবাই আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। সম্পর্ক ছিন্নর কারণটা সম্পদ সংক্রান্ত। দাদার রেখে যাওয়া সম্পত্তির একটা কানাকড়িও বাবা পায়নি। সব আমার চাচারা বুদ্ধি করে নিজেদের নামে করে নিয়েছে। বাবা সম্পত্তি পায়নি বলে দুঃখ করে না, কিন্তু ভাইয়েরা এমন বেইমানি করেছে বলেই তার যত দুঃখ। বাস্তবতা এমনই। খুব বেশি আপন না হলে মানুষ মানুষকে নিয়ে ভাবে না।

সম্পূর্ণ বিল্ডিং জুড়েই নীরবতা। সবাই হয়তো ঘুমাচ্ছে। আমি একাই কেবল জেগে আছি। নিজেকে হঠাৎ চোর চোর মনে হচ্ছে। এই যে সিঁড়ি দিয়ে নামছি চোরের মতোই সাবধানী পায়ে। যেন একটুও আওয়াজ না হয়। আওয়াজ অবশ্য হচ্ছে, কিন্তু আমি এরকমভাবে নামছি কেন? এমন তো নয় যে আমার পায়ের আওয়াজে সবার ঘুম ভেঙে যাবে, আর চোর এসেছে বলে সবাই দৌড়ে এসে ভুলে আমাকে মা’রধর শুরু করবে।

আমি এসেছি বাড়ির পিছনের পেয়ারা গাছতলায়। পেয়ারা গাছের নিচটা পরিষ্কার করা হয়েছে। কে করেছে সেটাও আমি জানি। সুমনা চাচি। তার আবার নোংরা স্থান সহ্য হয় না।
গাছে সবুজ ও হলুদ দুই রঙেরই পেয়ারা আছে। আমি পাকা পেয়ারা পছন্দ করি না। একটা সবুজ রঙের পেয়ারা একেবারে নিচেই ঝুলছে। কিছুদিন আগেও এটা ছোটো ছিল। এটার বড়ো হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। আমি হাত বাড়ালাম পেয়ারাটা পাড়ার জন্য। কিন্তু আমার হাত পেয়ারা অবধি পৌঁছানোর আগেই অন্য একটা হাত পেয়ারাটাকে ছিঁড়ে নিলো। আমি চকিতে পিছনে তাকালাম। সেজান ভাইয়া আমার পিছনেই দাঁড়ানো ছিল। আমি ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে সে আমার মাথার জন্য তার চিবুকে ব্যথা পেল। ব্যথা পেয়েছে এমন ভঙ্গিতে চিবুক চেপে ধরলো সে। আচমকা প্রশ্ন করলো,
“তুই কী খাস?”

আমি চমকালাম,
“কী খাই? একটা মানুষ যা খায় তাই তো খাই। ভাত, মাছ, মাংস, শাকসবজি…”

“আর কিছু খাস না?”

“না।”

“তাহলে তোর মাথার হাড় এত শক্ত কেন?”

আমি হেসে বললাম,
“কী খেলে মাথার হাড় শক্ত হয় সেজান ভাইয়া?”

সেজান ভাইয়া উত্তর না দিয়ে কিছুটা কটমট করে তাকালো। বললো,
“বড়োদের জিনিস কেড়ে নিতে হয় না।”

“আমি তো কিছু কেড়ে নিইনি। তুমিই তো পেয়ারা কেড়ে নিলে।”

“কে বলেছে কেড়ে নিয়েছি? এটা আমার ন্যায্য পাওনা।”

আমার দৃষ্টি হঠাৎ তৃতীয় তলার জানালায়
গিয়ে পড়লো। দেখতে পেলাম সেখানে জাবির ভাই দাঁড়িয়ে আছে। সে হয়তো স্কুল থেকে ফিরেছে এইমাত্র। তার স্কুল দুইটায় ছুটি হয়। আমি তার চেহারা ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু বুঝতে পারছি তার চেহারায় অসন্তুষ্টির ছায়া। আমি সেজান ভাইয়ার সাথে কথা বলছি এটা সে পছন্দ করছে না। কিন্তু কেন এই অপছন্দ? একটা ছেলে কখন একটা মেয়েকে অন্য ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে অসন্তুষ্ট হয়? আমি চোখ সরিয়ে আনলাম। কিন্তু একটু ক্ষণ পর আবারও তাকালাম আড়চোখে। সেজান ভাইয়া তা লক্ষ করে বললো,
“বার বার ওদিকে কী?”

বলে সে নিজেও আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো। জাবির ভাইকে আমি ওই দূরের তৃতীয় তলার জানালায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি এতে সেজান ভাইয়াও খুশি হলো না। তার মুখও গম্ভীর হয়ে গেল। সে তাকালো আমার দিকে। আমি তার রাগ আরও বাড়িয়ে দিতে বললাম,
“জাবির ভাই অনেক ভালো মানুষ। সে কারো সাথে ঝামেলা করে না। সিগারেট, মদ, গাঁজা কিছু খায় না। তুমি তার মতো হতে পারো না?”

সেজান ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে ফেললো। কিন্তু কিছু বললো না। হাতের পেয়ারাটা ছুঁড়ে ফেলে চলে গেল।
আমি হাসলাম। ইদানীং আমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। অদ্ভুত! কিন্তু আমি নিজের এই অদ্ভুত হয়ে যাওয়াটাকে উপভোগ করছি।
আমি পাকা পেয়ারা অপছন্দ করি। কিন্তু আজ একটা পাকা পেয়ারাই খেলাম। আজবভাবে আমার মনে হলো এমন মিষ্টি কিছু এর আগে আমি কখনও খাইনি।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে