#নীল আকাশের চাঁদনি🌸❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৪
প্রিন্সিপালের রুমে দাড়িয়ে আছে নীল। চেয়ারে নীলের বাবা রবিন চৌধুরী বসা। প্রিন্সিপাল চুপচাপ বসে আছে। রবিন চৌধুরী রাগী দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে নীল দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে। রবিন চৌধুরী প্রিন্সিপালকে বললো।”
—-” দেখুন নীল যেটা করেছে ঠিক করেনি আমি বুঝতে পারছি। বাট আমি আপনাকে বলছি ও আর এমন করবে না,
প্রিন্সিপাল এবার তাকিয়ে বললো।”
—-” এই কথাটা আপনি কতবার বলেছেন?”
রবিন চৌধুরী হতাশ কন্ঠে বললো,
—-” এটাই লাস্ট। এরপর নীল এমন কিছু করলে। আপনারা ওকে রাস্টিকেট করবেন।”
নীল বড়, বড় চোখ করে বললো,
—-” ড্যাডি এসব কি বলছো?”
রবিন চৌধুরী রেগে ধমক দিয়ে বললো।”
—-” সাট আপ নীল। আর একটাও কথা বলবে না তুমি,
নীল গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো। প্রিন্সিপাল এবারের মতো মেনে নিলো। রবিন চৌধুরী দাড়িয়ে বললো।”
—-” নীল ওনাকে সরি বলো,
নীল ইনোসেন্ট ফেস করে বললো।”
—-” আমি কি করেছি? আমি কেন সরি বলবো?”
রবিন চৌধুরী চোখ রাঙিয়ে বললো,
—-” তোমাকে সরি বলতে বলেছি।”
নীল মুখ কালো করে বললো,
—-” সরি স্যার।”
প্রিন্সিপাল মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—-” হ্যা হয়েছে এখন যাও।”
নীল যেতে, যেতে মনে, মনে বললো,
—-” শালার প্রিন্সিপাল তোকে আমি ছাড়বো না।”
নীলের বাবা নীলের মুখ দেখে বললো,
—-” মনে, মনে শয়তানি বুদ্ধি এটে থাকলে বন্ধ করো।”
আকাশ ওদের দেখে এগিয়ে এসে বললো,
—-” ড্যাড স্যার কি নীলকে রাস্টিকেট করেছে নাকি?”
নীল ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” রাস্টিকেট করলে খুশি হতি নাকি?”
আকাশ কপাল কুঁচকে বললো,
—-” এসব কি বলছিস?”
নীল ভেংচি কেটে বললো।”
—-” যেভাবে দৌড়ে এলি জানতে,
আকাশ নীলের কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো।”
—-” ড্যাড কি হলো?”
রবিন চৌধুরী সুটটা পড়ে বললো,
—-” ওকে আরেকটা চান্স দিয়েছে।”
নীল ভাব দেখিয়ে বললো,
—-” আরে আমি ওনাদের চান্স দিয়েছি।”
রবিন চৌধুরী রেগে বললো,
—-” আর কোন কম্পলেইন যেনো না আসে গট ইট?”
নীল মাথা নাড়িয়ে ওকে বললো। রবিন চৌধুরী অফিসে চলে গেলো। রবিন চৌধুরী যেতে আকাশ নীলকে বললো।”
—-” তুই কবে ভাল হবি বল তো?”
নীল এদিক, ওদিক তাকিয়ে বললো,
—-” আমি খারাপ ছিলাম কবে?”
আকাশ এবার একটু রাগ দেখিয়ে বললো।”
—-” তোর জন্য ড্যাডকে ছোট হতে হয় বুঝিস না?”
নীল ঠোট চেপে হেসে বললো,
—-” কিন্তুু ভাইয়া ড্যাড ছোট হলো কি করে? আমিতো এখনো ড্যাডকে বড় দেখলাম।”
আকাশের ইচ্ছে করছে নিজের চুল ছিড়তে। আকাশ চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
—-” ইউআর জাস্ট টু মাচ নীল।”
নীল শার্ট ঠিক করে বললো।”
—-” এসব টু মাচ, থ্রি মাচ বাদ দে চল যাই,
বলে হেলেদুলে হাটতে লাগলো। আকাশ একটা বড় শ্বাস ছেড়ে নীলের সাথে গেলো।”
________________
ক্লাসের পর নীল আর আকাশ বের হলো। নীল তাকে, তাকে আছে কোন সময় প্রিন্সিপাল বের হবে। নীলকে এমন তাকাতে দেখে আকাশ বললো,
—-” আবার কি কুটনামি করছিস তুই?”
নীল মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” তোর মাথায় কি এসব থাকে নাকি?”
আকাশ হাটতে, হাটতে বললো,
—-” এসব আমার না তোর মাথায় থাকে।”
নীল পা টিপে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে গেলো। সব স্যাররাই কম বেশী চলে গিয়েছে। এখন উনিও বের হবে। নীল পকেট থেকে চুলের জেইল বের করলো। এটা নীল সবসময় কাছে রাখে। সুযোগ বুঝে কিছুটা জেইল ফেলে রাখলো। এরপর আবার আকাশের কাছে গিয়ে দাড়ালো। আকাশ নীলকে বললো,
—-” চল বাড়ি যাই।”
নীল আর আকাশ হাটা দিলো। এরমাঝেই ধপাস করে আওয়াজ হলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলো প্রিন্সিপাল পড়ে আছে। সব স্টুডেন্টরা হেসে দিলো। নীল গড়াগড়ি খাওয়ার মতো হাসছে। আকাশ দৌড়ে গিয়ে প্রিন্সিপালকে ওঠালো। এরপর ওনাকে ভেতরে চেয়ারে বসিয়ে বললো,
—-” আর ইউ ওকে স্যার?”
উনি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। আকাশ বাইরে এসে নীলকে টেনে নিয়ে এলো। নিচে এনে নীলকে রাগী ভাবে বললো।”
—-” এটা তুই করেছিস না?”
নীল না জানার ভান করে বললো,
—-” আমি কেন করবো?”
আকাশ চেঁচিয়ে বললো।”
—-” সাট আপ নীল,
আজকে অনু ক্লাসে আসেনি। চাঁদনি ভেবেছিলো দুজনে আজ রিক্সা করে বাড়ি যাবে। তার জন্য গাড়িও আনেনি। কিন্তুু ক্লাসে এসে জেনেছে অনুর জ্বর। চাঁদনি উপায় না পেয়ে একাই বের হলো। কিন্তুু এখন দুপুর হওয়ায় রাস্তায় রিক্সাও নেই। চাঁদনি হেটে সামনের দিকে গেলো। এখান থেকে একটু এগোলেই সামনে রিক্সা পাওয়া যায়। কিন্তুু একটু এগিয়ে চাঁদনি থেমে গেলো। সামনেই কয়েকটা ছেলে বসে আছে। এদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে বখাটে।”
নীল ভেংচি কেটে চলে এলো। নীলের পিছনে আকাশও এলো। নীল আর আকাশ আজকে এক গাড়িতে এসেছে। নীল গিয়ে গাড়িতে বসে বললো,
—-” আজকে তুই রিক্সায় বাড়ি যাবি।”
আকাশ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কেন গাড়ি আছে কি করতে?”
নীল দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” গাড়ি আছে আমার বাড়ি যাওয়ার জন্য,
বলেই নীল গাড়ি স্টার্ট দিলো। আকাশ চোখ বড়, বড় করে বললো।”
—-” নীল আমাকে নিয়ে যা,
নীল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আকাশ পিছন থেকে জোড়ে বললো।”
—-” নীলের বাচ্চা আমাকে নিয়ে যা,
কে শোনে কার কথা? অগত্যা আকাশ হেটেই বেরিয়ে এলো। কিন্তুু চাঁদনির মতো কোন রিক্সা পেলো না। আকাশ চাঁদনি যেই রাস্তায় গিয়েছে ওইদিকে হাটা দিলো। আকাশও জানে এখন একমাএ ওখানেই রিক্সা পাবে। একটু এগিয়ে গিয়ে আকাশ দাড়িয়ে গেলো। রাগে ওর শরীর জ্বলছে। সেই ছেলেগুলো চাঁদনিকে বিরক্ত করছে। চাঁদনির ওড়না একটা ছেলের হাতে। চাঁদনি বারবার ওড়না দিতে বলছে। আকাশ জোড়ে পা ফেলে সামনে গেলো। চাঁদনি আকাশকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। আকাশ শকড হয়ে দাড়িয়ে আছে।”
________________
চাঁদনি আকাশকে জড়িয়ে ধরেই বললো,
—-” প্লিজ আমাকে বাঁচান।”
আকাশ একহাতে চাঁদনিকে ধরে বললো,
—-” চাঁদনি ডোন্ট ওয়ারী।”
বলে চাঁদনিকে সরিয়ে ওই ছেলেগুলোকে বললো,
—-” কি প্রবলেম তোমাদের? রাস্তায় একা মেয়েদের পেলেই বিরক্ত করতে মন চায়?”
ওদের মধ্যে একজন দাত কেলিয়ে বললো,
—-” বিরক্ত করবো না শুধু। মেয়েটাকে আমাদের চাই ওকে দিয়ে চলে যা।”
আকাশ শার্টের হাতা ফোল্ড করে বললো,
—-” তাই নাকি? আয় নিয়ে যা।”
চাঁদনি ভয় পেয়ে বললো,
—-” এসব কি বলছেন আপনি?”
আকাশ চাঁদনিকে চুপ করতে বললো। চাঁদনি চেঁচিয়ে বলে উঠলো।”
—-” আপনিও ওরকম তাই না?”
আকাশ ধমক দিয়ে বললো,
—-” জাস্ট সাট আপ।”
একটা ছেলে এগিয়ে আসতেই আকাশ ঘুষি মেরে দিলো। এরপর সবগুলো ছেলেকে আকাশ মারতে লাগলো। এরমাঝে একটা ছেলে এসে আকাশের মাথায় ইট দিয়ে বারি মারলো। এটা দেখে চাঁদনি চিৎকার করে বললো,
—-” আকাশশশশশ।”
ছেলেগুলো রক্ত দেখে চলে গেলো। চাঁদনি দৌড়ে আকাশের কাছে গেলো। আকাশের মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। চাঁদনি ওর ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আকাশের মাথায় বেধে দিলো। আকাশ মাথায় হাত দিয়ে বললো,
—-” আর ইউ ওকে?”
চাঁদনি অবাক হয়ে বললো।”
—-” আপনি নিজেই তো ঠিক নেই,
আকাশ মুচকি হেসে বললো।”
—-” আরে আমি ঠিক আছি,
চাঁদনি মাথা নিচু করে বললো।”
—-” সরি ফর মাই বিহেভিয়ার,
আকাশ হালকা হেসে বললো।”
—-” ইটস ওকে,
চাঁদনি ওড়নাটা ঠিক করে বললো।”
—-” আমি তাহলে আসি,
আকাশ ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” যেতে পারবে?”
চাঁদনি হেসে মাথা নাড়ালো। এরপর দুজনেই বাড়ি চলে গেলো। আকাশ বাড়ি যেতেই সবাই প্রশ্ন করলো মাথায় কি হয়েছে? আকাশ সাতপাঁচ বুঝিয়ে দিলো। নীল আকাশের মাথায় ব্যান্ডেজ করছে। এদিকে নীলের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আকাশ অবাক হয়ে বললো,
—-” নীল কি হয়েছে?”
নীল এবার বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কেঁদে বললো।”
—-” আই এম সরি আকাশ। আমি যদি তোকে রেখে না আসতাম তাহলে তোর এমন হতো না,
আকাশ নীলকে জড়িয়ে ধরে বললো।”
—-” ইটস ওকে ভাই এভাবে কাঁদতে হয়?”
ওদের বন্ডিংটাই এরকম। হাজার ঝগড়া, মারামারি করলেও দুজন দুজনের জীবন,
১৫দিন পর, ভার্সিটির অনুষ্ঠান আজকে। আকাশ আর নীল সেম ড্রেসআপ করেছে। দুজনেই ব্লাক কালার পাঞ্জাবী পড়েছে। চুলগুলো জেইল দিয়ে সেট করা। চোখে ব্লাক সাইন গ্লাস। সব মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে। এরমাছে গেইট দিয়ে চাঁদনি ঢুকলো। চাঁদনি সবুজ কালার একটা শাড়ী পড়েছে। কোন পরীর থেকে কম লাগছে না। নীল আর আকাশ হা করে তাকিয়ে আছে। আকাশ মনে, মনে বলে উঠলো।”
—-” আই থিংক আই লাভ হার,
নীল চাঁদনির দিকে তাকিয়ে বললো।”
—-” আই থিংক আই লাইক হার,
#চলবে…