নীল আকাশের চাঁদনি পর্ব-০৩

0
1359

#নীল আকাশের চাঁদনি🌸❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৩

নীল ধাক্কা দিয়ে চাঁদনিকে ফেলে দিতে চাইলো। কিন্তুু চাঁদনি পড়ে যাওয়ার আগে আকাশ ধরে ফেললো। আকাশের এক হাত চাঁদনির কোমরে। চাঁদনি শক্ত করে আকাশের হাত ধরে রেখেছে। এদিকে নীল হা করে তাকিয়ে আছে। চাঁদনি আকাশের হাত ছেড়ে দিলো। আকাশও চাঁদনিকে ঠিকমত দাড় করালো। চাঁদনি নীলের দিকে কটকটে চোখে তাকিয়ে বললো।”

—-” এটা কি করলি তুই? আমাকে ধাক্কা মারলি কেন?”

নীল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

—-” ঠিকই করেছি। তুই আমার সাহস নিয়ে কথা বললি কেন?”

চাঁদনি দাত কিড়মিড় করে বললো।”

—-” বেয়াদব কোথাকার,

বলে হনহন করে চলে গেলো। চাঁদনি যেতেই আকাশ নীলকে বললো।”

—-” তুই মেয়েটাকে ধাক্কা দিলি কেন?”

নীল ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” তাতে তোর কি?”

আকাশ কপাল কুঁচকে বললো।”

—-” যদি পড়ে যেতো?”

নীল হেসে দিয়ে বললো,

—-” ভেরী ফানি আকাশ। পড়ে যাওয়ার জন্যই তো ধাক্কা দিয়েছি। তুই সিনেমার হিরোদের মতো ধরবি তার জন্য দেইনি।”

আকাশ বড় শ্বাস ছেড়ে বললো,

—-” তোর সাথে কথা বলে কেউ পারবে না।”

নীল মুখ বাঁকিয়ে বললো,

—-” তাহলে বলিস কেন?”

আকাশ ভ্রু কুঁচকে চলে গেলো। নীলও ভেংচি কেটে আকাশের পিছনে গেলো। ক্লাস শেষ করে বাড়ি চলে গেলো দুজন। নীল রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে নিলো। আর চাঁদনিকে নিয়ে ভাবতে লাগলো।”

—-” মেয়েটা আস্ত একটা ফাজিল। নাহলে আমার মতো নিরীহ একটা ছেলের সাথে ঝগড়া করতো না,

এটা বলতেই নীলের যেন মনে হচ্ছে কেউ ওকে বলছে।”

—-” লাইক সিরিয়াসলি? তুই আর নিরীহ?”

নীল আমতা, আমতা করে বললো,

—-” কি একটা অবস্থা? আজকাল নিজেকে নিরীহও বলতে পারিনা।”

নীল শাওয়ার নিয়ে এসে দেখলো আকাশ বসে আছে। তবুও ভ্রু কুঁচকে নীল সেটা দেখে বললো,

—-” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”

আকাশ আশপাশ খুজতে লাগলো। নীল কপাল কুঁচকে বললো।”

—-” কি খুজছিস তুই?”

আকাশ মুখ বাঁকিয়ে বললো,

—-” নিরীহ কে সেটাই খুজছি।”

নীল একটা ভাব নিয়ে বললো,

—-” আমাকে চোখে পড়ে না?”

আকাশ হাসতে, হাসতে বললো।”

—-” তুই আর নিরীহ? এনিওয়ে নাইস জোকস নেক্সট প্লিজ,

নীল গাল ফুলিয়ে বললো।”

—-” বের হ আমার রুম থেকে,

আকাশ হেসে বললো।”

—-” যাচ্ছি এমনিতেও থাকতে আসিনি। কে বলতে পারে? তোর মতো নিরীহর সাথে থেকে আমিও যদি নিরীহ হয়ে যাই,

নীল হাত দেখিয়ে বললো।”

—-” গেলি?”

আকাশ হাসতে, হাসতে চলে এলো। রাত ১১টা আকাশ বসে বই পড়ছে। আর নীল নিজের রুমে ফোনে গেম খেলছে। আকাশ বই পড়তে, পড়তে চাঁদনির কথা মনে পড়লো। নিজের অজান্তেই আকাশ হেসে বললো,

—-” মেয়েটা ভারী অদ্ভুত।”

এদিকে নীলেরও হঠাৎ চাঁদনির কথা মনে পড়লো। নীল দাত কিড়মিড় করে বললো,

—-” মেয়েটা ভারী ডাইনি হু।”

একটুপর দুজনেই ঘুমিয়ে গেলো। চাঁদনিও পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে গেলো। সামনেই ওদের পরিক্ষা। সবাই পরিক্ষার প্রস্তুতি নিলেও নীল একমাএ প্রানী। যার এসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। ওর মনে হয় পাশ করলেই হলো,

______________

সকালে চাঁদনি ঘুম থেকে উঠলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৬টা বাজে। চাঁদনি উঠে ফ্রেশ হয়ে গায়ে শাল জড়িয়ে বাগানে চলে এলো। হালকা শীত পড়েছে চারদিকে। বাগানের দোলনাটায় কতক্ষণ বসে রইলো চাঁদনি। এরপর আবার রুমে চলে এলো। ৯টার দিকে ব্রেকফাস্ট শেষ করে ভার্সিটি চলে এলো। এসে দেখলো আকাশ বাইকে বসে আছে। আশপাশে খেয়াল করে দেখলো নীল আছে কি না? নীলকে না দেখে এগিয়ে গেলো। গিয়ে হালকা করে বললো।”

—-” শুনুন,

চাঁদনিকে দেখে আকাশ অবাক হলো। চাঁদনি হালকা হেসে বললো।”

—-” গতকাল আমাকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য থ্যাংকস,

আকাশ মুচকি হেসে বললো।”

—-” ওয়েলকাম,

এরমাঝে নীল এলো। তবে আজকে গাড়ি নিয়ে এসেছে। আকাশকে চাঁদনির সাথে কথা বলতে দেখে। দুর থেকেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এরপর ধাপধুপ পা ফেলে এগিয়ে এসে বললো।”

—-” এই ডাইনি আমার ভাইকে খেতে এসেছিস?”

চাঁদনি বড়, বড় চোখ করে বললো,

—-” ভাই মানে?”

নীল আকাশকে দেখিয়ে বললো।”

—-” ও আমার জমজ ভাই,

চাঁদনির এখন ঝগড়ার মুড নেই তাই এতটুকু বললো।”

—-” দুজনের তো একটুও মিল নেই,

বলে চলে গেলো ওখান থেকে। আকাশ নীলের উপর বিরক্ত হয়ে চলে গেলো। নীলও চোরের মতো এদিক, ওদিক তাকিয়ে ক্লাসে গেলো। আকাশ চুপচাপ ক্লাসে করলেও নীল করছে না। হাতে একটা কলম নিয়ে ঘোরাচ্ছে। আবার সেটা দিয়ে আকাশকে খোঁচা দিচ্ছে। আকাশ নীলের কাজে বেশ বিরক্ত। এমনিতেও আকাশ পড়াশোনায় নীলের থেকে ভাল। নীলের ক্ষেএে টেনেটুনে পাশ করেছে বললেই চলে। নীল ছোট থেকেই অনেক ফাজিল। স্কুল লাইফে প্রতিদিনই নীলের নামে নালিশ আসতো। নীলের এসবে নীলের বাবা রেগে ওকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলো। নীল কান্নাকাটি করে বলেছিলো আর দুষ্টুমি করবে না। নীলের বাবা সেটা মেনে নিয়ে ওকে রেখে দেয়। কদিন নীল ঠিকই ছিলো পরে আবার যা তা হয়। ওনারাও হাল ছেড়ে দেয়। কারণ বুঝে যায় এ ছেলে ঠিক হবে না। নীল এখনো আকাশকে খোচাচ্ছে। আকাশ ফিসফিস করে বললো।”

—-” নীল কি করছিস?”

নীল দাত কেলিয়ে বললো,

—-” খোচাচ্ছি।”

স্যার ওদের কথা বলতে দেখে বললো,

—-” নীল, আকাশ কথা বলছো কেন?”

নীল দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” আল্লাহ মুখ দিয়েছে খেতে আর কথা বলতে। এখন তো খাচ্ছিনা তাই কথা বলছি স্যার,

আকাশ নীলের শার্ট টেনে বললো।”

—-” নীল চুপ কর,

স্যার মুখ বাঁকিয়ে বললো।”

—-” নীল তুমি এত বাজে স্টুডেন্ট। তবুও এত ভাব আসে কোথা থেকে? আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো?”

নীল ভাব দেখিয়ে বললো,

—-” তা কি প্রশ্ন?”

এই মুহূর্তে নীলকে দেখে মনে হচ্ছে। ও স্যার আর স্যার স্টুডেন্ট। স্যার হেসে বললো।”

—-” সম্রাট শাহজাহানের বউয়ের নাম কি ছিলো?”

নীল জ্যাকেট টানতে, টানতে বললো,

—-” স্যার আমি আপনাকে একটা পরিষ্কার কথা বলতে চাই।”

স্যার ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” কি কথা?”

নীল কলার টেনে বললো।”

—-” লোকের বউয়ের খবর রাখার অভ্যাস আপনার থাকতে পারে আমার নেই,

আকাশ বাদে সবাই হেসে দিলো। আকাশ আর স্যার হা করে তাকিয়ে আছে। নীল লাজুক স্বরে বললো।”

—-” স্যার আমার ইয়ে পেয়েছে গেলাম,

বলে চলে গেলো। স্যার আকাশকে বললো।”

—-” এটা তোমার জমজ ভাই না?”

আকাশ মিনমিন করে বললো,

—-” জ্বি স্যার।”

স্যার হতাশ কন্ঠে বললো,

—-” একদমি তোমার মতো হয়নি।”

পরেরদিন প্রিন্সিপালের রুমে দাড়িয়ে আছে নীল। নীলের বাবা রবিন চৌধুরী চেয়ারে বসা। প্রিন্সিপাল চুপচাপ বসে আছে। নীলের বাবা রাগী চোখে নীলকে দেখছে। এদিকে নীল দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে,

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে