নীল আকাশের চাঁদনি পর্ব-০২

0
1525

#নীল আকাশের চাঁদনি🌸❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২

নীল ভেংচি কেটে চলে গেলো। হাটতে, হাটতে গিয়ে চাঁদনির সাথে ধাক্কা খেলো। কিন্তুু এখানে বাংলা সিনেমার কাহিনী হলো না। যে হিরোইন পড়বে আর হিরো বাঁচাবে। তারপর দুজন দুজনের দিক তাকিয়ে থাকবে। চাঁদনি ধপাস করে নিচে পড়ে গেলো। নীল মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলো। চাঁদনি উঠে রেগে ফায়ার হয়ে বললো।”

—-” ওই উজবুক এটা কি করলি?”

নীল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,

—-” হোয়াট উজবুক মানে?”

চাঁদনি তেড়ে এসে বললো।”

—-” তুই আমাকে ফেলে দিলি কেন?”

নীল একটু রেগে বললো,

—-” অপরিচিত কাউকে তুই বলতে নেই জানেন না?”

চাঁদনি রেগে ফোস, ফোস করে বললো।”

—-” অপরিচিত কাউকে বুঝি ফেলে দিতে আছে? তুই আমাকে ফেলে দিলি কেন বল?”

নীল একটা ভাব নিয়ে বললো,

—-” আমি দেখে ফেলিনি ওকে?”

চাঁদনি মুখ বাঁকিয়ে বললো।”

—-” ওহহহ আপনি কানা? সেটা আগে বলবেন তো,

নীল হালকা চেঁচিয়ে বললো।”

—-” এই মেয়ে আমি কানা হবো কেন হ্যা? আমাকে দেখে আপনার কানা লাগে?”

চাঁদনি জামা ঝেড়ে বললো,

—-” আপনি নিজেই তো বললেন দেখেননি।”

নীল মিনমিন করে বললো,

—-” সেটা তো আপনাকে খেয়াল করিনি তাই।”

এবার চাঁদনি আবার রাগ দেখিয়ে বললো,

—-” কেন চোখ কোথায় থাকে? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ধাক্কা খেতে ইচ্ছে করে না?”

নীল হু হা করে হেসে দিয়ে বললো।”

—-” কি আপনি সুন্দরী? আপনাকে কে বললো আপনি সুন্দরী? আপনার থেকে রানু মন্ডলকে বেশী ভাল লাগে,

বলে নীল আবার হাসতে লাগলো। চাঁদনি রেগে নীলের জ্যাকেটের কলার ধরে বললো।”

—-” কি বললি তুই? আমার থেকে রানু মন্ডল বেশী সুন্দরী?”

নীল চাঁদনির হাত ধরে বললো,

—-” কলার ছাড়ুন নাহলে।”

চাঁদনি আরো জোড়ে কলার ধরে বললো,

—-” নাহলে কি করবি তুই?”

আকাশ তাড়াতাড়ি সেখানে এলো। সবাই ইতিমধ্যে এক জায়গায় হয়ে গিয়েছে। চাঁদনি নীলের কলার ছাড়ছেই না। নীল এবার প্রচন্ড রেগে গেলো। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। দাতে দাত চেপে বললো।”

—-” কলার ছাড়ো বলছি। নাহলে থাপ্পর মেরে দাত ফেলে দেবো ফাজিল মেয়ে। দেখে তো জুনিয়র লাগছে। লজ্জা করেনা সিনিয়র ছেলের কলার ধরতে,

চাঁদনি তবুও কলার ছাড়ছে না। এই মুহূর্তে ওকে দেখে মনে হচ্ছে। একমাএ নীলের কলার ধরে রাখাই ওর প্রধান কাজ। এবার আকাশ এগিয়ে এসে বললো।”

—-” এই যে মিস ওর কলার ছাড়ুন,

চাঁদনি দাত কিড়মিড় করে বললো।”

—-” কেন ছাড়বো কেন? এই ছেলেটা আমাকে ফেলে দিয়েছে। তারউপর একটা সরিও বলেনি। উল্টো ভাব দেখিয়ে বলছে খেয়াল করিনি,

আকাশ একটু হেসে বললো।”

—-” তাহলে তো হলোই তাই না? ও তো বললো ও খেয়াল করেনি। দেখুন সবাই তাকিয়ে আছে ওর কলার ছাড়ুন,

নীল হাত নাড়িয়ে বললো।”

—-” বেয়াদব মেয়ে ছাড়,

চাঁদনি রেগে বললো।”

—-” দেখলেন কি বললো ও?”

রিয়াজ আকাশের কানে, কানে বললো,

—-” এই মেয়ের কি মাথায় প্রবলেম আছে নাকি?”

আকাশ একটু চুপ থেকে বললো।”

—-” নীলের কলারটা ছাড়ো,

চাঁদনি আশেপাশে তাকিয়ে বললো।”

—-” নীল কে? এখানেতো কোন নীল, সবুজ দেখছি না। আমিতো এই কানার কলার ধরেছি,

নীল রাগে গজগজ করে বললো।”

—-” এই মেয়ে আরেকবার কানা বললে তোর চোখ তুলে দেবো,

আকাশ নীলকে থামিয়ে বললো।”

—-” ওই কানার নামই নীল,

নীল রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। আকাশ আমতা, আমতা করে বললো।”

—-” আই মিন ওর নাম নীল,

চাঁদনি ভেংচি কেটে বললো।”

—-” এই কানার নাম নীল?”

নীল জোড়ে বললো।”

—-” জাস্ট সাট আপ,

চাঁদনি ভয় পেয়ে কলার ছেড়ে দিলো। এবার আকাশের কলার ধরে বললো।”

—-” তোর জন্য ও আমাকে ধমক দিলো,

চাঁদনির ফ্রেন্ড অনু এসে চাঁদনিকে নিয়ে গেলো। চাঁদনি যেতে, যেতে চেঁচিয়ে বললো।”

—-” তোদের দুজনকে আমি ছাড়বো না। তোরা জানিস না এই চাঁদনি কি জিনিষ,

নীল আর আকাশ একসাথে বললো।”

—-” চাঁদনি?”

এবার নীল মুখ বাঁকিয়ে বললো,

—-” এই ফাজিল মেয়েটার নাম চাঁদনি।”

আকাশ কপাল কুঁচকে বললো,

—-” নামটাতো অনেক সুইট।”

নীল ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” ওই কি বলছিস তুই?”

আকাশ দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” কিছুনা চল ক্লাসে যাই,

এরপর ওরা ক্লাসে গেলো। ওরা দুই ভাই এলএলবি ফাইনাল ইয়ারে। আর চাঁদনি এবার সেকেন্ড ইয়ারে। ক্লাস শেষ করে ওরা বেরিয়ে এলো। নীল চারদিকে তাকাচ্ছে আর মুখ দিয়ে সিটি বাজাচ্ছে। আকাশ নীলকে ধাক্কা মেরে বললো।”

—-” কাউকে খুজছিস?”

নীল ভাব দেখিয়ে বললো,

—-” আমি আবার কাকে খুজবো? আশপাশের মেয়েরা আমাদের যেভাবে দেখছে সেটাই দেখছি।”

আকাশ তাকিয়ে দেখলো সত্যি। আকাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,

—-” চল এখান থেকে।”

বলে নীলকে নিয়ে বাইকের কাছে গেলো। বাইকের উপর বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। চাঁদনিও ওর ফ্রেন্ডের সাথে বেরিয়ে এলো। দুর থেকে নীল আর আকাশকে দেখে বললো,

—-” ওদের দেখ মনে হচ্ছে এখানে আড্ডা দিতে এসেছে।”

অনু ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” তোর কি বল তো?”

চাঁদনি মুখ বাঁকিয়ে বললো।”

—-” আমি আমার শএুদের ছাড়ি না। এদেরও আমি ছাড়বো না,

সব ক্লাস শেষে সবাই বাড়ি চলে গেলো।”

_________________

চাঁদনি বাড়ি এসে হাতের ব্যাগটা সোফায় ফেললো। চাঁদনির মা মিসেস তানিয়া এসে বললো,

—-” কি হয়েছে চাঁদনি? তুমি এভাবে ব্যাগটা ফেললে কেন?”

চাঁদনি সোফায় বসে বললো।”

—-” মা আমি এমনিই রেগে আছি। তাই আমাকে আর রাগিয়ো না,

চাঁদনির বাবা আফজাল খাঁন এসে বললো।”

—-” কি হয়েছে আমার মামনির? সে এত রেগে আছে কেন?”

চাঁদনি ঠোট উল্টে বললো,

—-” বাবা আমাকে একটা ছেলে আজকে ফেলে দিয়েছে। আর ফেলে দিয়ে বলে সে নাকি দেখেনি।”

চাঁদনির মা ব্যাগটা তুলে রেখে বললো।”

—-” তাহলে হয়তো সত্যিই ছেলেটা দেখেনি,

চাঁদনি রাগ দেখিয়ে বললো।”

—-” তুমি ওই ছেলেটার সাইড নিচ্ছো কেন?”

চাঁদনির বাবা বললো,

—-” ছেলেটার নাম কি?”

চাঁদনি ভেংচি কেটে বললো।”

—-” নীল না চিল ফাজিল একটা। বলে আমার থেকে নাকি রানু মন্ডল বেশী সুন্দরী,

এটা শুনে চাঁদনির মা, বাবা হেসে দিলো। চাঁদনি গাল ফুলিয়ে বললো।”

—-” তোমরা হাসছো তো হাসো,

বলে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে দাতে দাত চেপে বললো।”

—-” তোদের আমি ছাড়বো না দেখিস,

এরপর একটা হট শাওয়ার নিলো চাঁদনি। একটা টি শার্ট আর প্লাজু পড়া। একটা বই নিয়ে ব্যালকনিতে বসলো। এরপর মনোযোগ দিয়ে বইটা পড়তে লাগলো। বই পড়াটা চাঁদনির নেশার মতো। তবে সেটা গল্পের বই। বইটা পড়তে, পড়তে চাঁদনি ব্যালকনির চেয়ারেই ঘুমিয়ে গেলো।”

এদিকে নীল গান শুনছে। নীল আর আকাশ একপাশেই বসা। নীল গান শুনছে আর কতক্ষণ পর, পর আকাশের কানের কাছে গেয়ে উঠছে। আকাশ নীলের কান থেকে হেডফোন খুলে বললো,

—-” তুই এত ফাজিল কেন?”

নীল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।”

—-” কেন? আমি আবার কি করলাম?”

আকাশের ইচ্ছে করছে নীলের চুল ছিড়তে। আকাশ রাগ দেখিয়ে বললো,

—-” আর একবারও আমার কানের কাছে গান গাইবি না।”

নীল মুখ বাঁকিয়ে আবার গান শুনতে লাগলো। একটুপরই আবার যা তা শুরু হলো। আবারো আকাশের কানের কাছে মুখ নিয়ে গান গাইছে। আকাশ এবার নীলের চুল টেনে ধরলো। নীল কম কিসে? নীলও আকাশের চুল টেনে ধরলো। দুজন গামুর, গুমুর করে কিল দিচ্ছে দুজনকে। মারামারি করতে, করতে সোফা থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলো। তবুও মারামারি করেই যাচ্ছে দুই ভাই। ওদের মা শব্দ শুনে এসে দেখলো এই অবস্থা। তবে উনি একটুও অবাক হলো না। কারণ এটা রোজ হয়ে থাকে। উনি পিছন থেকে এসে দুজনকেই খুন্তি দিয়ে বারি দিলো। বারি খেয়ে দুজন একসাথে বললো,

—-” আউচ আম্মু গো।”

পরে তাকিয়ে দেখলো ওদের মা। দুজন দুজনকে ছেড়ে উঠে বসে বললো,

—-” মম মারছো কেন?”

ওদের মা রাগ দেখিয়ে বললো।”

—-” তোরা মারামারি করছিস কেন?”

আকাশ রেগে বললো,

—-” মম তোমার ছেলে কি করেছে শোনো।”

নীল ইনোসেন্ট ফেস করে বললো,

—-” মম আমি কিছু করিনি।”

রাহেলা চৌধুরী ধমক দিয়ে বললো,

—-” তুই চুপ কর ফাজিল। আমি জানি তুই কেমন।’

নীল মুখটা চুপসে বললো,

—-” আজ বাচ্চা বলে।”

আকাশ হেসে বললো,

—-” তুই বাচ্চা? ভেরী ফানি।”

নীল আকাশের পিঠে চর মেরে বললো,

—-” এই ভাইয়া চুপ কর।”

আকাশ ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” আবার ভাইয়া বলছিস?”

নীল দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” হ্যা কারণ তুই আমার ৫মিনিটের বড়,

রাহেলা চৌধুরী খুন্তি দেখিয়ে বললো।”

—-” দুজনেই রুমে যা,

ওরা ভয় পেয়ে রুমে চলে গেলো।”

_________________

ভার্সিটির মাঠে তুমুল লড়াই চলছে। একেবারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই যাকে বলে। আকাশ বনাম চাঁদনি আজকে। বুঝতে পারছেন না কি হচ্ছে? চলুন দেখে আসি ঝগড়ার কারণ,

নীল আর আকাশ ভার্সিটিতে এসে বাইক রেখে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলো। কিন্তুু নীল তো আর শান্ত ছেলে না। নীল ঢং করে হাটতে গিয়ে আকাশকে ফেলে দিলো। আকাশকে ফেলে জিহ্বা কামড়ে বললো।”

—-” ইসস সরি ভাইয়া ওঠ,

আকাশ তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নীল ঢোক গিলে বললো।”

—-” ইয়ে আকাশ ওঠ,

আকাশ উঠে রাগী ভাবে বললো।”

—-” তুই সবসময় এমন করিস। আজকে তোকে আমি,

তারআগেই নীল দৌড় দিলো। নীলের পিছনে আকাশও দৌড় দিলো। দৌড়াতে, দৌড়াতে আকাশ গিয়ে ধাক্কা খেলো চাঁদনির সাথে। আর চাঁদনি আজকেও ধপাস করে পড়লো। আকাশ সরি বলতে গিয়ে চাঁদনিকে দেখে বিরবির করে বললো।”

—-” নাও হয়ে গেলো,

নীল একটু দুর থেকে বললো।”

—-” আজতো আকাশ শেষ,

চাঁদনি উঠে গিয়েই আকাশকে চর মেরে দিলো। নীল হা করে তাকিয়ে আছে। আর আকাশ রেগে বললো।”

—-” হাউ ডেয়ার ইউ?”

চাঁদনি আঙুল তুলে বললো,

—-” চুপ একদম আমাকে ফেললি কেন?”

আকাশ রেগে দাতে দাত চেপে বললো।”

—-” এই মেয়ে তোমাকে ইচ্ছে করে ফেলেছি নাকি? আমিতো সরি বলতাম তুমি চর মারলে কেন? এখন আমি যদি তোমাকে চর মারি। তাহলে তো তোমার দাত সব খুলে পড়ে যাবে,

নীল হু হা করে হেসে দিলো। চাঁদনি একবার নীলের দিকে তাকিয়ে আবার আকাশকে বললো।”

—-” তুই আমাকে চর মারবি তুই? তোকে গাছের সাথে বেধে পিটাবো,

আকাশ চোখ বড়, বড় করে বললো।”

—-” কি তোমার এত সাহস? বেয়াদব কোথাকার,

চাঁদনি তেড়ে বললো।”

—-” তুই বেয়াদব, তোর চৌদ্দ গুষ্টি বেয়াদব,

আকাশ একটু সামনে এগিয়ে বললো।”

—-” এই মেয়ে গুষ্টি তুলবে না বলছি,

চাঁদনি গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে বললো।”

—-” তুললে তুই কি করবি?”

নীল এবার এগিয়ে এসে বললো,

—-” ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো।”

চাঁদনি নীলের দিকে তাকিয়ে বললো,

—-” কি? ফেলতো তোর কত সাহস।”

নীল চাঁদনির কাছে গিয়ে বললো,

—-” আমার সাহস নিয়ে কথা বলা?”

চাঁদনিকে ধাক্কা মেরে বললো।”

—-” এই লে ধাক্কা,

চাঁদনি পড়ার আগেই আকাশ ধরে ফেললো। আকাশের এক হাত চাঁদনির কোমরে। চাঁদনি আকাশের হাত শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে