নীলাম্বরে জোছনা পর্ব-৬+৭

0
672

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
৬+৭
#পর্ব-৬
রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে, রতন সাহেব আশেপাশের খোঁজ করেছেন, কোথাও মানাহার খবর পেলেননা।তার বোনের মৃত্যুর পর নিজেই আগলে রেখেছিলেন মেয়েটাকে। বুকের ভেতর তীব্র ব্যাথা হচ্ছে।মনে কত রকম ভাবনা আসছে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাত দু’টোর সময় বাসায় ফিরলেন। আদুরি নিজের বাবাকে দেকে ছুটে আসলো। বাবার চেহারা বলে দিচ্ছে মানহার খোঁজ পাওয়া যায়নি। গ্লাস পানি এনে বাবার সামনে দিল। রতন সাহেব পানির গ্লাসটি নিলেন আদুরী বাবাকে বললো তুমি এত চিন্তা করো না, বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার মনে হচ্ছে মানহা ঠিক জায়গায় আছে। ওর কিছু হবেনা দেখে নিও রতন সাহেব মেয়ের কথায় চিন্তা মুক্ত হতে পারলেন না। তার মাথায় ঘুরছে কতশত চিন্তা! নিজের বোনকে কথা দিয়েছিলেন নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবেন, আজ সে কথা রাখতে ব্যর্থ! ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিলো সোফায়।

তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত হল রুনা বেগম চোখমুখে কাঠিন্য ফুটিয়ে তুলে বলে এসবকিছু তোমার আদরের ভাগ্নি ইচ্ছা করে করেছি।
আমি অতো শত বুঝি না আমার মেয়ের যদি কোনরকমে ক্ষতি হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়বো না।আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব!

রতন মিয়া চোখ বন্ধ করে বললেন মেয়েটা ম’রে গেলেই তো তুমি শান্তি দেখো ইচ্ছে পূরণ হয়ে যায়নাকি! আচ্ছা রুনা তোমার কখনো মেয়েটার জন্য মায়া হয় না!
বাচ্চা মানুষ একটা ভুল করে ফেলেছে,সে ভুলের শাস্তি তুমি আর কত দিবে।এবার হয়েছে তো তোমার শান্তি।

রুনা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, এসব নাটক আমার সাথে করে লাভ নেই! আমি সব বুঝি তুমি নিজেই তোমার ভাগ্নীকে অন্য কোথাও সরিয়ে দিয়েছো!।এখন এসে আমার সামনে নাটক করছো! আমি কিছুতেই তুমি যা চাইছ তাই হতে দেবো না। আমার মেয়েকে আমি মিফতাজের সাথে বিয়ে দিয়ে ছাড়বো । কিছুতেই তোমার ভাগ্নিকে আমি সুখী হতে দিবোনা। রাত অনেক হয়েছে নাটক বন্ধ করে যে যার রুমে ঘুমাতে যাও। সকাল হলে আবার নাটক করতে পারবে।

রুনা বেগম নিজের রুমে চলে গেলো।
আদুরি তার বাবার পাশে এসে বলে বাবা যাও যেয়ে শুয়ে পরো। আমি মিফতাজকে একটা কল করে বলি।
‘রতন সাহেব বললেন বলে দেখ।
আদুরী কল করছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না।
মূলত মিফতাজ ইচ্ছে করেই রিসিভ করছে না।
আদুরী উপায় না পেয়ে টেক্সট করলো।
কিন্তু কোন রেসপন্স নেই। হতাশ হলো আদুরী। বৃত্তস্থ এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার মানুষ না। সব সময় কমপক্ষে রাত তিনটা পর্যন্ত জাগে। তবে আজ এখন লাইনে নেই কেন! মানহার সাথে তাজে কিছু করেনি তো!আদুরীর সন্দেহ হতে লাগলো। আদুরী ঠিক করল সকাল হলেই একবার তাজের সাথে দেখা করবে।

মিফতাজ একটা চেয়ার টেনে বসে আছে মানহার মুখোমুখি। মানহা তখন গভীর ঘুমে। ঘুমে তো থাকারই কথা,এই ঘুম পারানোর জন্যই তো এতো আয়োজন। মিফতাজ এক ধ্যানে মানহার দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পর উঠে এসে মানহার কপালে চুমু দিলো। মানহাকে নিজের বাহুতে আগলে নিয়ে নিজেও ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।

সবাই ঘুমে থাকলেও একটা মানুষের চোখে ঘুম নেও তার চোখে মুখে প্রতিশোধের নেশা। রুনা বেগমের এখনো মনে আছে সেই দিনটির কথা। চোখ বন্ধ করলেও যেনো, ভেসে উঠে সেই গাঁ শিউরে উঠা দৃশ্য!
তার মনে একটাই প্রশ্ন বারবার ঘুর পাক খায় আর সেটা হল, মানহা আয়াতকে কেন ধ্বাক্কা দিয়েছিলো
কেন তার মেয়ের সাথে এতো নিষ্টুরতা করলো?


রাত তো চলেই যায় নতুন দিন শুরু হয়ে।তবে আমাদের হৃদয়ের ক্ষত গুলো প্রতি রাতে বাড়তে থাকে। সকালে গাড়ির হর্ন আর ব্যস্ত মানুষের সমাগম বাড়তেই থাকে এই এড়িয়ায়। পুরান ঢাকার বংশালে নিয়ে এসে রেখেছে মানহাকে। মিফতাজ উঠে ফ্রেশ হলেও মানহার এখনো কোন হুস নেই। পুরান ঢাকার মানুষ এক আজব জনগোষ্ঠী। এখানে এখনো সকাল হলে পুরো পরিবার মিলে বাখরখানি আর চায়ের আড্ডা মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। অলি গলির এই শহরে একে অপরের সাথে মিশে আছে সকলে। এখনো এখানের মানুষ নিজেদের ঐতিহ্য বহন করে। বাপ দাদার আমলের। তাদের মধ্যে এখনো রয়েছে কথার ফাঁকে হিন্দি বলার রেওয়াজ। বাড়ি গুলো যেনে একেকটার সাথে আরেকটা লেপ্টে আছে। এখনো প্রায় বাড়ির ছাদে বারান্দায় ঝুলে থাকতে দেখা যায় বানর।এই বানরের কাহিনির শেষ নেই, কলা খেয়ে মানুষের টাকে ছুড়ে মারা। আরেক ছাদ থেকে এটা সেটা নিয়ে আসা চলতে থাকতে বানর বাহিনির। অদ্ভুত ভালো লাগে এসব দেখতে। মাগার তাহারা পরোয়াভি করে না কিছু। পুরান ঢাকার মানুষের কলিজা মেলা বড়। অতিথি আপ্যায়নে তাদের জুড়ি মেলা ভার। তেমন আবার খু’ন করতেও দোবারা ভাবেনা।
মিফতাজ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবার ব্যস্ততা দেখছে। এরমধ্যেই ঘরের মধ্য থেকে কিছু ভাঙ্গার শব্দ পেয়ে ছুটে আসে তাজ। চায়ের কাপ টেবিলে রেখে মানহার উদ্দেশ্যে বলে,রিলাক্স জান এতো হাইপার হচ্ছো কেন?

-একদম আমার সাথে কথা বলবে না। এসব করে তুমি আমাকে পেয়ে যাবে, ভেবে থাকলে তুমি ভুল!
-জান তোমাকে পেয়ে গেছি।আর নতুন করে কি পাবো।
-জোড় করে শরীর পাওয়া যায় মন না।
-এসব কি ধরনের কথা বলছো। মানছি তোমাকে এখানে এনে রেখেছি কিন্তু জোড় করে তোমার সাথে কিছু করিনি।
-আজ করোনি কাল করবে না তার কি গ্যারান্টি আছে!
-কি সব উদ্ভট কথা বলছো মানহা। তোমার আমাকে সেরকম মনে হয়!
-আমাদের কত কিছু মনে হয় না কিন্তু সে রকম অনেক কিছুই আমাদের সাথে হয়। দূর্ভাগা আমরা মানুষ চিনতে ভুল করি।
-তুমি রেগে আছো তাই ভুল বকছো। রিলাক্স হও আমার কথাটা শোন।
-এই পুরান ঢাকায় তোমার বাবার এপার্টমেন্ট কবে হলো?
-এটা রিন্তি ফুপির বাসা। ফুপি তো পরিবার নিয়ে বাহিরে থাকে তুমি জানোই।
-তাই আমাকে এখানে নিয়ে আসবে? বউ করতে না পারলে রক্ষিতা করে রাখবে বুঝি।
-মানহার কথা শুনে তাজ মানহার দিকে তেড়ে এসে বলে এনাফ ইজ এনাফ। অনেক বলেছো তুমি আর না। ভালোবাসি বলে মাথায় চড়ে বসেছো!
-ভালেবাসার দোহাই দিয়ে একটা মেয়েকে ঘুমের মে’ডি’সি’ন দিয়ে নিজের কাছে পুরো রাত রেখে দিয়ো তার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দেবে!
-আমি অতো-শতো বুঝিনা যে পর্যন্ত তুমি তোমার আর আয়াতের সাথে ঘটে যাওয়া সত্য না বলছো তোমাকে ছাড়বো না।
-সে সব শুনে হজম করতে পারবেন তো! মিস্টার মিফতাজ আয়মান!
-মানে তুমি কি বলতে চাইছো।
-সত্য কঠিন সত্য। যা শোনার আর মানার ক্ষমতা আপনার নেই।
-এতো হেয়ালি না করে বলো।
– আমি এখন বাসায় যাবোে। আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই।
– সামনের টেবিলে পা দিয়ে জোড়ে আঘাত করে মিফতাজ বলে,আমিও তোমাকে এখান থেকে বের হদকরতে বাধ্য নই। বলেই দরজা বন্ধ করে চলে যায়।
– এই অতীত মানহা কারো সামনে আনতে চায় না। কিন্তু ঘুরে ফিরে সেটাই বারবার তার জীবনে চলে আসে।

আরহাম আজ এসেছে এক বুকশপে। এখান থেকে মাহিবা বই ক্রয় করতো।
আরহাম এসে দোকানের কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করতে থাকে কিন্তু সবাই বলে এমন কাউকে তারা চেনেনা। হাতাশ হয়ে একটা চেয়ারে বসে পরে, ঠিক তখন মনে পরে, মাহিবার বলা একটা কথা।

“ক্লান্ত হয়ে ফিরবে যখন নীড়ে আমায় খুঁজে পাবে তোমার তীরে”!
আরহামের মনে পরলো চিঠির কথা এতো কিছুর মধ্যে সেটা সে ভুলেই বসে ছিলো। এখন মনে হয় প্রাণে পানি এসেছে।

#চলবে

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৭

মাঝে মাঝে আমরা প্রকৃতির বেড়াজালে আটকে যাই।সমস্ত পরিবেশ প্রতিকূল আমাদের বিপক্ষে থাকে। সে সময় কেউ থাকেনা আমাদের পাশে সবাই কেমন দূরে সরে যায়। পরিচিত মানুষগুলো অপরিচিত লাগে! আপন বলতে কেউ থাকেনা। নিজের কথাগুলো বোঝার কেউ থাকে না, একাকীত্ব গ্রাস করে নেয় আমাদের।তখন খুব করে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয় দুচোখের পানি ও তখন ছন্দ হারায় তারাও তখন ধরা দিতে চায় না! এমন এক কঠিন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে মানহা তারা কি করা উচিত। দুহাতে নিজের চুল খামছে ধরে বেডের উপর বসলো। ভালোবাসা অতীত দুটোর মধ্য থেকে কোনটা বেছে নেওয়া উচিত! অতীতের জন্য বর্তমান কে হারানো,নাকি বর্তমানের জন্য অতীতকে হারানো!
নিজেকে কোন ভাবেই স্থীর করতে পারছে না মানহা। সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে। নয়তো নিজেকে শেষ করতে ইচ্ছে করছে।


মিফতাজ বের হয়ে সোজ চলে আসলো মানহাদের বাসায়।
রুনা বেগম মিফতাজকে দেখে স্বান্ত স্বরে বললো,তোমাদের ষোল কলা পূর্ণ হলো!

– দেখুন আপনি বড় আপনার সাথে আমি বাজে বিহেভ করতে চাইছি না। তাই নিজের লিমিটে থেকে কথা বলুন।
– দু’দিনের বাচ্চা ছেলে এসেছে আমাকে লিমিট শেখাতে! এই শোন এই যে মানহাকে খুঁজে না পাোুার যে নাটকটা চলছে তার মূল নায়ক তুমি!
– দেখুন আমি মানহার বিষয়ে কথা বলতে আসিনি আমাকে আয়াতের ব্যাপারে বলুন।
– আয়াতের বিষয় জেনে তোমার কি?
– আপনি বলুন তারপর বলছি? আয়াত কতদিন দরে অসুস্থ ওর এই অবস্থা কিভাবে হলো?
– তোমার প্রেমিকা তোমাকে কখনো আয়াতের কথা বলেনি!তা বলবে কেন নিজের এতো বড় পাপ কেউ প্রকাশ করে নাকি?
– আন্টি হেয়ালি না করে আমাকে বলুন কি হয়েছিল। আমি জানতে চাই সবটা?
– আজ থেকে তিন বছর আগের কথা। মানহা তখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে আমার আয়াত তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে একি কলেজে পড়তো দু’জনে।মানহার মায়ের মৃত্যুর পর মানহার বাবা আরেকটা বিয়ে করে বাহিরে চলে যায়। সেই তখন থেকে নিজের মেয়ের মত বড় করেছি। তখন বুঝতে পারিনি দুধ কলা দিয়ে কাল সা’প পুষে ছিলাম।
– আয়াতের কোন বান্ধবীর বাসায় বার্থডে পার্টি ছিলো। আদুরী তখন রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। তাই আয়াতের সাথে মানহাকে পাঠাই সেখানে।এটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কাল।
– আমার সুস্থ হাসোজ্জল মেয়াটাকে পাঠিয়ে ছিলাম এক বিষাক্ত মনের মেয়ের সাথে। যে আমার মেয়েটাকে হিংসা করতো। তখন কি এসব বুঝতাম ওইটুকু মেয়ের মনে যে এতো হিংসা।
– দুজনেই গেলো ঠিক মত কিন্তু রাত তিনটার সময় কল আসলো আপনার মেয়েরা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি দ্রুত আসুন।
– পৃথিবী আমার অন্ধকার হয়ে গেলো। এমনিতেই বারোটার পর থেকে অপেক্ষা করছিলাম চিন্তা হচ্ছিল কখন আসবে। তোমার আঙ্কেল কল করছিলো দু’জনের ফোন সুইচড অফ।এগারোটার সময়ও মেয়েটা আমাকে কল করে বলেছিল বারোটা দশেই তারা বের হব৷ চিন্তা করতে না। আমি যেন তোমার আঙ্কেলকে একটু এগিয়ে আনতে বলি।
– ছুটে হসপিটালে গেলাম যে দেখি মানহার হাতে আর মাথায় বেন্ডেজ করা। জিজ্ঞেস করলাম আয়াত কই। আইসিইউর দিকে দেখিয়ে দিলো। মেয়েটা আমার মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলো আমি শুধু তাকিয়ে দেখছিলাম। তিনদিন পর আমার মেয়েটার জ্ঞান ফিরে আসলেও চিনতে পারছিলো না কাউকে। এভাবে মাস খানেক যাওয়ার পর আস্তে আস্তে উদ্ভট কাজ করা শুরু করে দেয়। একটা টাইমে বদ্ধ উন্মাদ পাগলিতে পরিনত হয়। ডাক্তারের বলে দিলো আমার মেয়েকে পাবনা নিয়ে যেতে। সেখানের খোঁজ খবর নিয়ে আর সাহসে কুলোয়নি। তাই এভাবেই শেকল বন্দি করে রেখেছি।
-জানো এতো কিছুর পরেও ওই মেয়ে আমার চোখের সামনে ঘুরঘুর করছে এরচেয়ে বড় কষ্ট ার কি হতে পারে।সবাই বলে এই কাজ মানহা করতে পারেনা নিশ্চিত অন্য কোন কাহিনি লুকিয়ে আছে এর পিছনে। কিন্তু এতো বছরে এতো ভাবে জিজ্ঞেস করার পরেও ওই মেয়ে একি কথা বলে যাচ্ছে! নিজের স্বামীর ভাগ দিতে রাজি হয়ে গেছে! যদি অন্যায় নাই করে থাকতো তাহলে সব মানলেও তোমাকে ভাগ করে নেয়া মানতো না। তারমানে সব করেছে ও নিজেই।

‘কিন্তু এসব হলো কি করো?

– তোমার প্রেমিকা করেছে সে নিজের মুখেই স্বীকার করেছে। সে আমার মেয়েকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়েছে।

আচ্ছা আন্টি আমি কি আয়াতকে একবার দেখতে পারি?

– আসো আমার সাথে।
আয়াত তখন ঘুমে, মিফতাজ হয়তো কল্পনাও করতে পারছেনা তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।কোন ভয়াবহ সত্যির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সে! সে যদি জানতো তবে এই সময় টুকু মুছে দিতো জীবন থেকে।


আরহাম ছুটে আসলো নিজের রুমে এসে নিজের ভাবতে লাগলো। হুট করে মনে পরলো মিফতাজের কথা মিফতাজ বলেছিল আরহামের নামে একটা চিঠি এসেছে।
মিফতাজ বসে পরলো বেডে নিচের চুল খামচে ধরে নিজের দিকে তাকিয়ে আছে। কি আশ্চর্য মনে হচ্ছে ফ্লোরে মাহিবার হাসোজ্জল চেহারটা ভেসে উঠেছে।দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থেকে বলে,আমার ভীনদেশী তারা, তুমি কোন আকাশে উড়ে বেরাও আমার আকাশ ছাড়া!
আরহাম ভাবছে এই হয়তো মাহি হেসে উত্তর দিবে, আমার আমার আকাশ, তাই তোমায় ছেড়ে আর কোথায় উড়বো বলো!
মাহির সাথে আরহামের পরিচয় হয়েছিল বেশ ইন্টারেস্টিং ভাবে,ভার্চুয়াল জগতের পরিচয়,একটা কার্টুনে মাহির কমেন্ট দেখে কৌতূহলি হয়ে মাহিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছিল আরহাম। মাহিও একসেপ্ট করে নেয়। তারপর তারা ফেসবুক ফ্রেন্ড হলেও তেমন কথা হতো না তাদের। একদিন মাহির একটা স্টোরির রিপ্লাই করা থেকে কথা শুরু হয়।
প্রথম দিকে তেমন কথা না হলেও মাসখানেক পর তাদের মধ্যে নিয়মিত কথা শুরু হয়। মাহির চাঞ্চল্য আর মিঠা মিঠা কথা খুব দ্রুত আরহামের মনে জায়গা করে নেয়। তখনও দেখা হয়নি কেউ কাউকে।
একদিন হুট করে সাহস জুগিয়ে আরহাম মাহির পিক চাইলে মাহি একটা হাতের পিক দেয়।
এভাবে ধীরে ধীরে কথা বলতে বলতে একদিন আরহাম মাহিকে প্রপোজ করে বসে, মাহি তোন উত্তর দেয়না। খুব ভালো ভাবে আগাচ্ছিল সম্পর্ক কিন্তু হুট করে কি হলো সব কিছু পাল্টে গেলো এক মূহুর্তে। আর দেখা গেলনা মাহিবার আইডির পাশে সবুজ বাতি।একদিন, এক সপ্তাহ,একমাস, এক বছর এমন করে আজ তিন বছরেও আর পেলো না মাহির কোন খোঁজ।
ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই, এইযে ভিজে উঠেছে আরহামের চোখের কোন এটা কি অন্যায়। আরহাম আবার ব্যাস্ত হলো চিঠি খুঁজতে।

কিন্তু এই এতো বছরে সেই চিঠি পাবে তো আরহাম?


আদুরী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। একটা কাজল নিয়ে চোখে পরলো। আবার টিস্যু দিয়ে মুছেও দিচ্ছে। হাঠাৎ হাসছে আবার চোখ ভরে উঠছে। নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,প্রিয় আমি তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবেসেছিলাম তার বিনিময় তুমি আমাকে এক আকাশ না না সাত আসমান সম দুঃখ দিয়ে গেলে।জানো প্রিয় আমারও ইচ্ছে করে বউ সাজতে!কিন্তু বর হিসেবে যে আমি শুধু তোকেই চেয়েছিলাম। কেন পেলাম না। কেন ঠকালে আমায়। একবার কি এই উত্তর দিতে পারবে?
আচ্ছা আমার কমতিটা কোথায় ছিলো বলে যেতে।আমি চাই একবার আমাদের দেখা হোক, আর একবার আমাদের কথা হোক। আমি বেশিকিছু না শুধু তোমার থেকে আমার ভালোবাসা, সময় আমার মূহুর্তগুলো ফেরত চাইবো। এই যে তুমি আমাকে বিরহে রেখে সুখে আছো! তোমার কি হৃদয় কাঁপে না। তোমার কি মাঝ রাতে হুট করে ঘুম ভেঙে যায় না আমাকে দেয়া কষ্টের ভারে?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে