নীলাম্বরে জোছনা পর্ব-০৫

0
646

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৫

দু’টি মানুষ একে অপরের এতো কাছাকাছি যে, একে অপরের নিশ্বাস এসে মিলিত হচ্ছে।
মিফতাজের প্রতিটি নিশ্বাস যেন মানহাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। এ-কেমন অনূভুতি। এ অনূভুতি বড্ড মিঠা। উঁহু বড্ড তেতো। দূর এ অনূভুতির নাম মেলাতে পারছে না মানহা। বেশ খানিক সময় পর মানহা বলে,কোথায় আসলসাম আমরা?

-তোমার শ্বশুর বাড়ি।
-কি হচ্ছে তাজ! এমন উদ্ভট কথা কেন বলছো?
-জান আমার কথা তোমার কাছে উদ্ভট কবে থেকে মনে হওয়া শুরু করলো!
তাজ আমাদের ফুচকা খাওয়ার কথা ছিলো? তুমি বললে সারপ্রাইজ আছে কিন্তু এখন সারপ্রাইজ কই?
– জান তোমার সারপ্রাইজ এটাই।মিফতাজ মানহার আরো কাছে আসলো। মানহা মিফতাজের শার্ট খামচে ধরলো। মিফতাজ নিজের হাত মানহার কোমড়ে আর ঘাড়ে রাখলো সেকেন্ডের মধ্যে তাদের সব দূরত্ব ঘুচিয়ে একে অপরের অধরের মিলন ঘটালো।
– কয়েক মিনিট পর মানহার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো। মিফতাজ মানহাকে ছেড়ে দিতেই মানহা পেছন দিক ঘুরে দাঁড়িয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো ।
– মিফতাজ পেছন থেকে মানহাকে জড়িয়ে ধরলো। মিহতাজের স্পর্শে মানহা খানিক কেঁপে উঠলো।মিফতাজ মানহার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিলো।
– মানহা নিজের কামিজ খামচে ধরে বলে,আমি এরকম মেয়ে না তাজ!
– জান এতোটুকু আদর করতেই তো পারি!
– উঁহু পারবে না। কারন এখন লিমিট ক্রস হয়ে যাচ্ছে। আমরা দু’জনেই এডাল্ট।
– আজকে না হয় বেসামাল আমাকে সামলে নাও জান!
– তুমি আদুরে স্বরে আমাকে অবৈধ প্রস্তাব দিচ্ছো।
– জান ভালোবাসার পূর্নতা চাচ্ছি।
– এভাবে তো তুমি শরীরের পূর্নতা চাচ্ছো।
– তাহলে তুমি কি চাও?
– হালাল ভাবে তোমাকে পেতে চাই।
মিফতাজ মানহাকে জড়িয়ে ধরে, বলে তোমার ইচ্ছে পূরণ হোক জান।

মানহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,আমি বাসায় যাবো।
– এতো তাড়া কিসের চলো ফুচকা খাবে না।
– আচ্ছা এটা কোথায়?
– এটা আমার বাবার এপার্টমেন্ট। বিয়ের পর তুমি আমি এখানেই থাকতাম।
– আচ্ছা চলো বের হই।
– তাজ মানহার হাত ধরে একটা রুমে নিয়ে আসলো, সেখানে টেবিলের উপর অনেক সুন্দর করে ফুচকা ডেকোরেশন করা। মানহা খুশি হয়ে দ্রুত ফুচকা খাওয়া শুরু করে দিল। মিফতাজ একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। মনে মনে বলছে, সরি জান, ভালোবাসা আর লড়াইয়ের ময়দানে সব জায়েজ। যদি ভালোবাসার জন্য এতোটুকু করতে না পারি! তবে কেমন প্রেমিক আমি?
– মানহা বেশ কিছু ফুচকা খাওয়ার পর পাশেই ডার্ক চকলেট কেক দেখতে পেলো। পিছু ঘুরে একবার মিফতাজের দিকে তাকালো। তারপর এক পিস কেক নিয়ে নিজে খেলো। আর এক পিস কেক হাতে এগিয়ে আসছিলো মিফতাজের দিকে। কিন্তু তার পা কেমন টলছে মাথা ঘুরছে, চোখে কেমন ঘোলাটে দেখছে। এক হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরল মানহা লুটিয়ে পরার আগেই মিফতাজ মানহাকে নিজের বাহুতে আগলে নিলো। কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বলে, জান খুব দ্রুত তুমি মিস থেকে মিসেস মিফতাজ হবে। বলেই মানহার কপালে চুমু দিয়ে দরজা লক করে বের হয়ে আসলো। বাহিরে দু’জন সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে ছিলো,একজন মধ্যে বয়ষ্ক অন্যজন কিশোরী।
– মিফতাজ তাদের উদ্দেশ্যে বললো,তোমাদের যা, যা বলেছি ঠিক সেরকম করবে। মনে থাকবে তো?
– জ্বি স্যার আমাগো কোন ভুল হইবো না। আপনে যেমন কইছেন তেমন করমু।
– মিফতাজ শিস বাজাতে বাজাতে বের হয়ে গেলো। তার মনে হচ্ছে সে যেনো বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।

‘ পৃথিবীতে ভালোবাসা জয় করার আনন্দ হয়তো বিশ্ব জয় করার আনন্দের চেয়ে বহুগুণ বেশি।

‘এই যে মিফতাজের মুখের স্নিগ্ধ সুন্দর হাসি তার প্রমাণ বহন করছে।


আরহাম দাঁড়িয়ে আছে নারায়ণগঞ্জ চাষারার ঈদগাহ মাঠে। বিকেল টাইমে এখানে অনেকেই আশে হাটাহাটি করতে। তবে আরহামের চোখ চাতক পাখির মত অন্য কাউকে খুঁজচ্ছে। আচ্ছা ভিনদেশী তুমি আমাকে এভাবে কেন ফাঁকি দিলে!
আজ তিনটা বছর আমার রাতে ঠিক মত ঘুম হয়না। তোমার কথা মনে পরলে শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। কেন করলে এমন! সত্যি পরিচয় বললে কি হতো মাহিবা।
আচ্ছা তোমার নাম মহিবা তো! নাকি এটাও ভুল। দীর্ঘ সময় ঈদগাহে বসে রইলো। এখানে বসে একবার ভিডিও কল করেছিল মাহি। সেই স্মৃতি চারণ করতেই আরহাম এখানে এসেছে। আরহামের খুব করে মনে পরছে মাহির বলা কিছু কথা।

‘আচ্ছা আমি যদি হারিয়ে যাই তখন কি করবেন?
আরহাম হেসে উত্তর দিয়েছিলো খুঁজে বের করবো।
‘উঁহু একদম না কারণ খুঁজে পাবেননা আমাকে।

‘তাহলে আর কি, ভুলে যাবো তোমাকে।
মাহি এবার শব্দ করে হেসে বলে,এই যে আমরা বলি, ভুলে যাবো, আসলে কি আমরা ভুলতে পারি! একদম ভুলতে পারিনা। বরং যত ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি তার স্মৃতি আমাদের মস্তিষ্কে তত জায়গা দখল করতে থাকে। ভুলে যেতে যেতেও তাকেই বারবার স্বরণ করি। কি অদ্ভুত তাই না মিস্টার অসুস্থ!

‘হু সব কিছুই অদ্ভুত। আর সবচেয়ে বড় অদ্ভুত তুমি! আচ্ছা ঠিকানা না হয় বাদ দিলাম তোমার কলেজের নামটা তো বলতে পারো!

‘এই যে মিস্টার অসুস্থ, আমি সহজে গলে যাওয়ার পাত্রি নই,আমি যখন বলবো না বলেছি তখন বলবোই না।

‘আমাকে সত্যি সত্যি তুমি অসুস্থ করে দিচ্ছো মাহি!

‘মিস্টার অসুস্থ আমার নাম মাহিবা নট মাহি।

‘এইযে মিস রহস্যময়ী, আমার নাম আরহাম নট অসুস্থ।

‘উঁহু আপনি মিস্টার অসুস্থ।
‘তা কোন রোগে অসুস্থ মিস!

‘আমার ঠিকানা জানার রোগে।

‘বলতে হবে না তোমার ঠিকনা। আমি তোমাকে ভালোবাসি এখন তুমি যদি উগান্ডার মানুষ ও হও তবুও তোমাকেই ভালোবাসবো।

‘এই আপনি না দু’দিন আগেও আমাকে আপনি করে বলতেন!

‘এখন সারাজীবন তুমি করেই বলবো মিস মাহি।

‘আচ্ছা এতো যত্ন করে যে মাহি ডাকেন, যেদিন জানবেন এটা আসলে আমার নাম না তখন?

‘তখন তোমাকে না হয় আমার ভিনদেশী তারা বলে ডাকবো। এসব ভাবনার মাঝেই কেউ একজন বললো স্যার মালা নিবেন, বকুল ফুলের মালা।

মিফতাজ ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে মালার দিকে তাকালো। হুট করে মনে পরলো মাহির বলা কথা।
‘জানেন বকুল ফুল শুকিয়ে গেলেও ঘ্রাণ থাকে।

‘তাই
‘হু তাই। বিশ্বাস না হলে কখনো শুকিয়ে ঘ্রাণ শুকে দেখবেন।

মিফতাজ বাচ্চাটাকে বললো কত নিবে?

‘দশ টাকা পিস স্যার আপনে কয়টা নিবেন?

‘তোমার কাছে কয়টা আছে?

‘এহন আর পনেরোটা আছে

মিফতাজ হাজার টাকার নোট বের করো ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে সবগুলো আমাকে দিয়ে দাও।

‘আনন্দে ছেলেটার চোখ মুখ চকচকে হয়ে উঠলো মালা গুলো মিফতাজের হাতে দিয়ে।বলে,জানেন সাহেব মেলা দিন আগে এক আপায় আমার থিকা সব মালা কিনছিলো। আর আইজ আপনে কিনলে ।

মিফতজা যেনো আশার আলো দেখতে পেলো।
ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো তা কতদিন হবে?
‘মেলাদিন স্যার।ধরেন বছর দু’য়েক আগে। হেই আফায় নাকি এই হানে ঘুরতে আইছিলো।

মিফতাজ নিরাশ হলো। কি ভাবে খুঁজবে তার ভিনদেশী কে আর কোথায় খুঁজবে?


রুনা বেগম সেই কখন থেকে বসার রুমে বসে আছেন। না কারো সাথে কথা বলছেন আর না কারো কথার উত্তর দিচ্ছেন।
রতন সাহেব কত কি জিজ্ঞেস করলেন। তবুও সে একটা কথারও উত্তর দেননি।

‘আদুরি বসে আছে একটা সিঙ্গেল সোফায়। সেই কখন থেকে মানহাকে কল করেই যাচ্ছে। কিন্তু বারবার সুইচ অফ বলছে। আদুরী ভিষণ ঘাবড়ে গেছে।তার বলা কথাগুলো ইফেক্ট করোনি তো! যদি সেই কথা শুনে ভুল করে বসে মানহা!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে