#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৪
‘আমি ধাক্কা দিয়েছি আয়াত আপুকে কি শাস্তি দিতে চাও দাও।
এক কাজ কর আমাকে মে’রে ফেলো। না থাকবে বাঁশ আর না বাজবে বাঁসুরি।
রুনা বেগম তেড়ে এসে মানহার গ’লা চেপে ধরলো। তোমাকে মে’রেই ফলবো। খুব শখ তোর ম’রা’র তাইনা!
মানহার শ্বাস আটকে আসছে চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। আর কিছু সময় এমন থাকলে হয়তো সত্যি সত্যি মানহার জীবন শেষ হয়ে যাবে।
আদুরি একটা প্রাইমারি স্কুল টিচার।বিকেলে একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস করায়। রেডি হয়ে হল রুমে আসতেই এই দৃশ্য দেখে দৌড়ে এসে মানহাকে রুনা বেগমের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
মানহা কাশতে কাশতে শেষ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছে। আদুরী মানহার মুখের সামনে পানির গ্লাস ধরলো। মানহা কয়েক ঢোক পান করলো। আদুরি মানহাকে ধরে সোফায় এনে বসালো।
নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,তুমি কি চাইছো মা’ মেয়েটাকে এভাবে টর্চার কেন করছো?
‘খুব দরদ উতলে উঠেছে, একদম বাজে বকবি না।
‘মা তোমার কি হয়েছে তুমি তো এমন ছিলে না!
‘আমি জানিনা আমি কেমন ছিলাম। আমি শুধু জানি আমার মেয়ের জীবন যার জন্য নষ্ট হয়েছে তাকে আমি শান্তিতে থাকতে দেবো না।
‘এসব করলে কি আয়াত সুস্থ হয়ে যাবে?
‘তুই কোন কথা বলবি না আদুরী তোর জন্য ও আমাকে কম কথা শুনতে হচ্ছে না। আমি যে সুস্থ আছি এটাই ঢের। নাহলে যার এক মেয়ে বিয়ে করবে না বলে সন্যাসী হয়েছে আরেক মেয়ে পাগল! সে সুস্থ থাকে কি করে?
আদুরি আর কথা বাড়াতে চাইছে না। তাই চুপ রইলো।
‘এখন মুখে তালা দিলি কেন? বল বিয়ে করবি না কেন?
আদুরী মানহাকে ধরে মানহার রুমে নিয়ে আসলো। মানহকে বেডে বসিয়ে দিয়ে বলে,কত মানুষ মা’রা যাচ্ছে!তুই কেন বেঁচে আছিস! না পারিস সত্যি বলতে আর না প্রতিবাদ করতে!
মানহা নিরব।
আদুরী আবার বললো,ম’রে তো যাবিই হয়তো শারীরিক মৃত্যু নয়তো মানষিক মৃত্যু। বলেই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
আদুরী বেড় হতেই স্ব শব্দে মানহার ফোনটা বেজে উঠলো, স্কিনে জ্বলজ্বল করছে মাই হার্ট লেখা নাম্বার টা।
মানহা কল রিসিভ করতেই মিফতাজ বলল,জান তুমি রেডি হয়ে বের হও আমি বাইক নিয়ে তোমার গেটের সামনে আসতেছি।
‘বাইক কেন!
‘ইচ্ছে হলো।ষোড়শী প্রেমকি হতে তাই। আমার আসতে দশ মিনিট লাগবে তাড়াতাড়ি রেডি হও।
‘মানহার কথা বাড়ানোর মুড নেই। তাই কথা না বাড়িয়ে বললো ঠিক আছে।
কালো বোরকা আর হিজাব পড়ে বেড় হলো। বের হতেই দেখে মিফতাজ দাঁড়িয়ে আছে। ব্ল্যাক পাঞ্জাবি হোয়াইট কটি। কালো শু আর ব্ল্যাক ওয়াচ। মিফতাজের চুলগুলো সব সময় মানহার একটু বেশিই পছন্দ। ওই ঠিক করা গোছানো চুল দেখলেই মানহার ইচ্ছে হয় এলোমেলো করে দিতে। বেশি ক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলো না। চোখ নামিয়ে নিয়ে এগিয়ে আসলো বাইকের কাছে।
মিফতাজ মুখ ভার করে বললো,কালো শাড়ী পড়ে আসতে বলেছিলাম!
‘কালো তো পরেছি শাড়ী না পরলে কি?
‘জান দিনদিন আনরোমান্টিক হয়ে যাচ্ছো।
‘মানহা দারুণ অবাক হয়! আচ্ছা তাজ কি বুঝতে পারছে না আমি কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি! একবারও কি আমার কষ্ট ওর হৃদয় স্পর্শ করতে পারছে না!
‘মিফতাজ বললো জান কি ভাবছো। এখানে দাঁড়িয়ে ভাবলেই হবে! নাকি বাইকে উঠে বসবা। আমাদের তো যেতে হবে নাকি?
মানহা বাইকের পিছনে বসলো,
তাজ বললো একদিনে কি এমন হলো জান! তুমি আমাকে এতো পর করে দিলে?
‘ মানহা তাজের কথা বুঝতে পেরে তাজের কাঁধে হাত রাখলো।
মানহা কাঁধে হাত রাখতেই তাজ বাইক চালানো শুরু করলো।
মানহার মনে আকাশ কুসুম ভাবনা। কি বলবে আর কি হবে সেটাই ভাবছে মানহার অবুঝ হৃদয়।
______________________________________________
আরহাম নিজের মোবাইলে জুম করে কারো হাতের চুড়ি পড়া পিক দেখছে। আর মনে মনে হাসছে সেদিনের কথা ভেবে।
(অতীত)
‘একটা পাঞ্জাবি পড়া পিক দাও তো।
‘আমি তো পাঞ্জাবি পড়ি না।
‘ওকে ব্রেকআপ।
‘পাঞ্জাবি পড়ি না বলে ব্রেকআপ করবা!
‘যেই ছেলে পাঞ্জাবি পড়ে না। সে আন রোমান্টিক। আর লবনহীন তরকারির মত।
‘তুমি লাইফে আসার আগে কেউ তো বলেনি এই কথা প্রাণ পাখি!
‘একদম আমাকে প্রাণ পাখি ডাকবেননা। যে পাঞ্জাবি পড়ে না তার মুখে মধুর ডাক মানায় না
আরহাম হেসে বলে, ‘ভিনদেশী তোমার সঠিক ঠিকানা বলবে না?
‘আমি কি মিথ্যে বলি আপনাকে?
‘সত্যি ও তো বলো না।
‘সবটুকু জানা হয়ে গেলে, সব কথা পড়ে ফেলার পর!
পঠিত মানুষ এক পুরনো কবর!( সালমান হাবিব)
‘ভিনদেশী তুমি বড্ড রহস্যময়!
‘মেয়ে মানুষ যদি রহস্যময় না হয় তাহলে খুঁজবেন কি?
‘তুমি বলছো তোমাকে খুঁজে বের করতে?
‘হু দেখি কতটা পারেন।
‘তারমানে তুমি তোমার বলা দু’টো শহরের কোন একটাতে আছো! সঠিক করে বলছো না কোনটাতে আছো?
‘সব বলে দিলে কি করে হবে!
‘ভিনদেশী তোমাকে আমি খুঁজে বের করবোই করবো।
‘কচু করবেন থাকেন তো সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার আবার আসছে আমাকে খুঁজবে!
‘তোমার ঠিকানা যদি আ্যামজন জঙ্গলেও হয়! তাতেও আমার সমস্যা নেই মায়াপরি। আমার তোমাকে দরকার তোমার ঠিকানাকে নয়। তৈরি থেকো।
‘তো আসেন আসেন আ্যামজন থেকে আমাকে বউ করে নিয়ে যান।
‘সে তুমি বললেও আসবো না বললেও আসবো!
আরহাম দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,তোমাকে কোথায় খুঁজবো ভিনদেশী! এ জীবনে তোমাকে কাছ থেকে একবারও কি দেখা হবে না!
✨
মিফতাজ আর মানহা দু’জনেই পাশাপাশি বসে আছে। হাতিরঝিলে এমন দৃশ্য অহরহ। সবাই তাদের প্রিয় মানুষকে নিয়ে এই যান্ত্রিক শহরে একটু কোয়ালিটি টাইম কাটানোর জন্য এখান-টাতে ভীর জমায়। মিফতাজ বললো, জান তুমি কি চুপ করে থাকবে পণ করে এসেছো?
‘ভাবছি কোথা থেকে শুরু করবো?
‘ভাবা ভাবির কি আছে আমার সাথে কথা বলতে এখন তোমার ভাবতে হবে?
‘আচ্ছা তাজ ধরো কোন কারণে আমাদের বিচ্ছেদ হলো! আমরা একে অপরের হতে পারলাম না তখন তুমি কি করবে?
‘মিফতাজের শান্ত মেজাজ গরম করার জন্য এই কথা টুকু যথেষ্ট ছিলো। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ সংযাত করে ধীর কন্ঠে বলে,তুমি আসলে কি চাইছো?
‘আমি এমনি বলছিলাম। দেখো মানুষ পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করতে পারে, কিন্তু নিজের ভাগ্যের সাথে লড়াই করতে পারেনা।
‘দেখো মন আমরা একটা সুন্দর সময় কাটাতে এসেছি, তুমি বাজে কথা বলে সেটা নষ্ট করবে না আশাকরি।
‘তাজ আমি সময়টাকে নষ্ট নয় উপভোগ করতে চাইছি।
‘তা এভাবে উল্টো পাল্টা কথা বলে আমার রাগ তুলে উপভোগ করবে বুঝি?
‘তুমি এই সামান্য কথায় রেগে যাবে ভাবিনি!
‘তুমি আমার হবে না, এটা সামান্য কথা!
‘আমি নিশ্চিত ভাবে বলিনি বলতে চেয়েছি যদি এমন কিছু হয় তো?
‘তুমি কি বাসা থেকে ঠিক করেই এসেছো আমাকে কষ্ট দেবে?
‘সরি আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইছি না। আচ্ছা এসব কথা বাদ দাও। চলো ফুচকা খাবো।
মিফতাজ উঠে আসলো এক হাতে মানহার হাত আবদ্ধ। মিফতাজ হাটছে আর কিছু ভাবছে। দু’য়ে দু’য়ে চার মিলিয়ে নিয়ে, মনে মনে বলে, জান তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও তবে তোমাকে পেতে হলে আমাকে এই পথ নিতেই হবে। জানি এটা ঠিক না। এরপর তুমি আমাকে হয়তো ঘৃণা করবে! তোমাকে হারানো চেয়ে তোমার ঘৃণা সহ্য করা আমার জন্য সহজ।
‘মানহা মৃদু স্বরে বললো কি হলো দাঁড়িয়ে পরলে কেন?
‘জান চলো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং🥰