#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৩
মানহা জড়োসড়ো হয়ে ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন যুবক। থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট আর ব্ল্যাক টি-শার্ট মানহা এক পলক সেদিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো আকাশের পানে। নিকোষ কালো রাত কোথাও একটা তারাও নেই আজ হয়তো আমাবস্যা। ল্যামপোস্টের মৃদৃ আলো কে এখন মানহার কাছে তীব্র আলো মনে হচ্ছে।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি কাশি দিয়ে বলে,আমার কথাগুলো কি শুনবেন?
এখনে কেউ কাউকে স্পষ্ট ভাবে দেখেনি আবছা আলোয় আবছা দেখেছে। ছায়ার মত
মানহা বলল,জ্বি বলুন।
আপনার পাগল বোনকে আমি বিয়ে করবো! আমার কোন আপত্তি নেই।
মানহা হাসলে সেই হাসি আরহামের দৃষ্টিতে পরলো না।
‘আপনাকে তাজ পাঠিয়েছে?
‘আমি নিজেই এসেছি।
‘এতো উদার হবার কারণ নিশ্চয়ই আপনার ভাই!
‘সে যাইহোক আমার যখন আপত্তি নেই আপনি সবার সাথে কথা বলে রাখবেন। আজকের মত আসি।
‘আপনাকে এতো রাতে বাসায় কে ঢুকতে দিলে?
‘আপনার মামা, দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন। আচ্ছা আসি।
আরহাম চলে গেলো।মানহা আবার শুন্যে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আচ্ছা পৃথিবীতে এতো যন্ত্র তৈরি হয়েছে! অতীত পরিবর্তন করার কোন যন্ত্র কেন তৈরি হলো না!
তাহলে মানহা এই তিক্ত অতীত মুছে ফেলতো। মানহার এলোমেলো চুলগুলো মৃদু বাতাসে উড়ছো।
নীলাম্বরে আজ কোন জোছনা নেই নিকষ কালো
রতন সাহেব মানহার পাশে এসে দাঁড়ালেন। শূন্যে দৃষ্টি রেখে বললেন, ছেলেটা কে?
– তাজের বড় ভাই আপন না কাজিন বড় ভাই।
– তাহলে তো হলোই ছেলেটা আয়াতকে বিয়ে করলে আর কোন সমস্যা থাকলো না।
– আমার কি মনে হয় জানো মামা! আমার জীবনটা ঠিক এই আমাবস্যা রাতের মত নিকোষ কালো। কোথাও কোন আলো নেই চারদিকে শুধু আধারের হাতছানি।
রতন সাহেব মানহার মাথায় হাত রেখে বলে,জানিস আধারের জন্যই আলোর সূচনা। আধার না থাকলে আলো মূল্যহীন। এই যে দীর্ঘ কালো রাত তার শেষেই রয়েছে নতুন দিনের সূর্য। একদম চকচকে সূর্য।
– সব আঁধার ভেদ করে সূর্য উঠে না মামা।
– ভুল বলছিস সব আঁধারের শেষেই থাকে আলো।ওই অদূরে তাকিয়ে দেখ এই আঁধারেও জোনাকিরা কি অদ্ভুত আলো ছড়াচ্ছে!
“যখন ধরনীর সকল আলো নিভে যায়! তখন নীলাম্বরে জোছনা উঁকি দেয়”!
শেষ বললেই শেষ হয়না! শেষ থেকেই নতুন কিছু শুরু করতে হয়।
এই পৃথিবীতে মানহার আপন বলতে এই একটা মানুষ। মায়ের মৃত্যুর পর যে তাকে আগলে রেখেছে।মানহা নিজের মামাকে জড়িয়ে ধরে বলে,মামা সব যেনে ঠিক হয়ে যায়। আমি চাই সমস্ত আঁধার কেটে নতুন দিনের সূর্য উঠুক। রাঙিয়ে দিক আমার জীবন।
রতন সাহেব মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,সব ঠিক হয়ে যাবে মা।
‘দুঃখ হলো একটা দীর্ঘ রাতের ন্যায়! যা শেষ হয়ে নতুন দিনের সূর্য উদিত হবেই।
______________________________________________
রাতের সকল আধার যেনে মূহুর্তে শুষে নিয়ে নিজের আলো তে পুরো ধরনীকে আলোকিত করে তুলেছে নতুন দিনের সূর্য। পাখির কিচিরমিচির ডাক আর কর্ম ব্যাস্ত মানুষ নিজেদের স্বপ্ন পূরণের তাগিদে ছুটে চলা শুরু করেছে। প্রতিটি দিন প্রতিটি মানুষের জন্য নতুন কিছু নিয়ে হাজির হয়। এই ইট পাথরের নগরে কত মানুষের স্বপ্ন রোজ দাফন হয়। কে হিসেব কষে। আবার কত মানুষ নতুন স্বপ্নে বুনে চলেছে অবিরাম।
‘জীবনতো স্রোত ধারা, যা বহমান। তার সাথে তাল মিলিয়ে আমারা বয়ে যেতে থাকি। সে নিরলস চলতে থাকে। ‘যে থেমে যায় সেই খেই হারায়!
দিশা বেগম রাতে ছেলেকে কিছু বলেনি। ছেলের র্গ সম্পর্কে তার ধারণা আছে! আর তাছাড়া ছেলে মেয়ে বড় হলে তাদেরকে কিছু স্পেস দিতে হয়। তাই গতকাল ছেলেকে কিছু বলেনি।এখন বাজে সকাল দশটা পনেরো নিজের ছেলের রুমের সামনে এসে বার কয়েক ডাকলেন তাজ উঠো কথা আছে।
মিফতাজ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো, আম্মু প্লিজ আর একটু ঘুমোতে দাও।
– উঠে এসো তোমার সাথে তোমার বাবা কথা বলবেন।
– পাঁচ মিনিট আমি আসছি ফ্রেশ হয়ে।
আরহাম ধোঁয়া উঠা কফি মগে চুমুক দিচ্ছে আর চিন্তা করছে, আচ্ছা মানহাকে তার এতো পরিচিত কেন মনে হলো!, সে-তো চৌদ্দ বছর পর বাংলাদেশে আসলো। তাহলে ওই কন্ঠ এতো পরিচিত কেন মনে হচ্ছে।
সকালের আকাশ দারুন উপভোগ্য তবে বেশির ভাগ মানুষ তা উপভোগ করতে ব্যার্থ। এইযে একটু একটু করে সব আঁধার ছাপিয়ে আলোকিত হয়ে উঠে শহর আরহামের ভিষণ পছন্দ এই দৃশ্যটা। কফির শেষ চুমুক কিংবা আঁধারে আলো হারানোর দৃশ্য অথবা আলোতে আঁধার মিলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আরহাম মিস করে না।
মিফতাজ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। মাহমুদ সাহেব পত্রিকা পড়ছিলেন মনোযোগ দিয়ে। মিফতাজকে দেখে পত্রিকা নামিয়ে রেখে বলে, তুমি কি বিয়েটা করবেই?
‘কোন ডাউট আছে!
‘কার সামনে কথা বলছো বিষয়টা মাথায় রাখো!
‘বাবা বিয়ে আমি মানহাকেই করবো।
‘করো কে মানা করেছে। সাথে পাগলি একটা বউ ফ্রী পাবে। দারুণ ব্যাপার।
‘এরকম কিছু হবে না বাবা।
‘ওরা কি নিজের কথা থেকে সরে এসেছে!
‘মনে হচ্ছে এসেছে।
এরমধ্যেই আরহাম এসে বলে, আয়াতকে আমি বিয়ে করবো।
মাহমুদ সাহেব বেজায় রাগ দেখিয়ে বলে, মাথায় কি গোবড় নাকি তোমার! তোমার কি কম আছে? যে, একটা পা’গ’ল বিয়ে করতে হবে?
– আমি একজন সাইকোলজিস্ট। তাই আমি বিয়ের পর নিজের স্ত্রীকে ঠিক সুস্থ করে তুলতে পারবো।
-বিয়েটা ছেলে খেলা না মন চাইলো খেললাম মন চাইলো না ভেঙে দিলাম। একটা পা’গল সুস্থ হবে তার কি গ্যারান্টি আছে?
‘সুস্থ হবে না তারও তো কোন গ্যারান্টি নেই!
নিলুফা খাবার খাচ্ছিলো আরহামের কথা শুনে খাবার গলায় আটকে রইলো মনে হচ্ছে। বুকের ভেতর কেমন চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। আরহামকে নীলু ভালোবাসে। ভালোবাসা বোঝার পর থেকেই। আজ ভালোবাসা এতো কাছে এসেও দূরে চলে যাচ্ছে!
মাহমুদ সাহেব বললেন, তোমার মায়ের সাথে কথা বলে ডিসিশন নিয়েছো তো!নাকি মন মতলবি একটা বলে দিচ্ছো।
‘ লাইফটা আমার আর সারাজীবন সংসার করবো আমি। তাই ডিসিশন সেটাই ফাইনাল যেটা আমি বলবো।
মাহমুদ সাহেব বললেন, তোমাদের যা ইচ্ছে করো। আমি বলার কে?
______________________________________________
মানহা গোসল করে জোহরের নামাজ পরে নিচে আসলো। রুনা বেগম তখন আয়াতকে খাওয়াচ্ছে। মানহাকে দেখেই আয়াত খুশি হয়ে ছুটে আসতে চায়। তবে শেকল বন্দি আয়াত সমনে এগোতে ব্যার্থ। মানহা আয়াতের সামনে এসে বলে,কেমন আছো আপুই। আয়াত হুটকে মানহার গলা জড়িয়ে ধরে বলে পালিয়ে যা যা মে’রে ফেলবে ওরা আমাদের পালা। আয়াত হাইপার হয়ে যাচ্ছে এখন কোন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। মানহা দ্রুত আয়াতের ইনজেকশন নিয়ে আসলো। রুনা বেগমকে ইশরা করতে তিনে আয়াতে ধরে রাখলেন। মানহা দ্রুত ইনজেকশন পুশ করে দিলো। আয়াত নিস্তেজ হতে হতেও বলছিলো ওরা আমাদের মে’রে ফেলবে পালা।
মানহা ঘামছে ভয়ে মানহার হাত পা কাঁপছে। এটা নতুন কিছু না। তবে এই বিষয়টা বারবার অতীতকে মনে করিয়ে দেয়।
রুনা বেগম মানহাকে ধমকে বললেন এভাব দাঁড়িয়ে না থেকে আমাকে সাহায্য কর। মানহা আর রুনা বেগম আয়াতকে ধরে আয়াতের রুমে এনে শুইয়ে দিলো।
মানহা আয়াতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে কি হতো যদি ওই দিনটাই না আসতো।
রুনা বেগম মানহার হাত ধরে বাহিরে এনে বলে,তোর কাছে এখনো সময় আছে সত্যিটা বল সেদিন কি হয়েছিল!
মানহা চুপ করে আছে।
রুনা বেগম আবার বললেন আজকে তুই সত্যি না বললে তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না!
মানহা এবার মুখ খুললো চিৎকার কর করে বললো,
#চলবে