নীলাম্বরে জোছনা পর্ব-০২

0
722

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-২

মানহা আয়াতের কাছে আসলো, আয়াত চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে আছে। মানহা আয়াতকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলে,তুই কবে সুস্থ হবি! আপু বলনা তুই কবে সুস্থ হবি!
আয়াত কি বুঝলো কে জানে, হয়তো পাগলেরও অনুভূতি থাকে। আয়াত মানহার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে, কাঁদিস নারে পাঁকা বুড়ি বর আসবে এক্ষুনি নিয়ে যাবে তখনি কি মজা কি মজা বলে হাত তালি দিলে লাগলো।
রুনা বেগম এসে মানহাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আয়াত জোড়ে জোড়ে বলছে পাকা বুড়ি কে ছেড়ে দাও। বর আসবে এক্ষুনি নিয়ে যাবে তখনি।

মনহা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো,মৃদু স্বরে বললো,মামি লাগছে ছাড়ো আমায়।

-লাগুল লাগার জন্যই তো ধরেছি তোর সাহস কি করে হয় আমার অসুস্থ মেয়ের কাছে যেয়ে ন্যাকামি করার।
আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।

শারীরিক মানসিক যন্ত্রণা একসাথে হলে মানুষ হয়তো অনূভুতি শুন্য হয়ে পরে।
মানহাকে টেনে এনে সোফার রুমের মেছেতে ফেলে দিলো। টেবিলের কোনার সাথে লাগে পায়ের চামড়া ছিলে গেলো।

যতদিন এই বিয়ে না হচ্ছে ততদিন তুই চিলে কোঠায় থাকবি। আর মানহার আশেপাশেও যেন তোকে না দেখি।

রতন সাহেব বললেন, রুনা কি শুরু করেছো এসব!

– একটা কথাও বলবে না তুমি! যেদিন তোমার আদরের বোনের মেয়ের জন্য আমার মেয়েটার জীবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সেদিন কোথায় ছিলো তোমার কথা?

– ওটা একটা এক্সিডেন ছিলো। আর এক্সিডেনটে কারো হাত থাকে না।

– বাহ বাহ এক্সিডেন বলে চালিয়ে দিচ্ছ। ও নিজের হাতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো আমার মেয়েকে। ওকে যে বাঁচিয়ে রেখেছি এটাই বেশি! তবে ওর বেঁচে থাকা হবে মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণা দায়ক। ও প্রতিদিন মরবে এটাই ওর শাস্তি। কেউ যদি ওর প্রতি দরদ দেখিয়েছে তার সাথে আমার বোঝাপড়া হবে। বলেই গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলেন।

রতন সাহেব মানহার পাশে বসে মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, মা,রে তুই চলে যা এখান থেকে। এই নরকে তোকে থাকতে হবে না।

– মানহা চোখের জল মুছে বলে,প্রত্যেকটা ভুলের শাস্তি আছে মামা। আমার ভুলের শাস্তি তো আমাকে পেতেই হবে বলো। তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না। আমি ঠিক সহ্য করে নেবো। চেয়ার ধরে উঠে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে গেলে চিলে কোঠায়।

আদুরি দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিলো।চোখের পানি মুছে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে চলে আসলো চিলে কোঠায়।

আদুরি আস্তে করে মানহার পা নিজের হাঁটুর উপরে নিয়ে ভায়োডিন লাগিয়ে দিলো। সামান্য ছিলে গেছে।

মানহা বলল,তুমি কেন আসলে! মামি জানলে রাগ করবে তো?

‘তুই চুপ কর সব কিছু কেন মেনে নিচ্ছিস? কেন সত্যিটা আমাদের বলছিস না। কেন সব কথা লুকচ্ছিস। বল সেদিন কি হয়েছিল?

‘এটাই সত্যি আমি আয়াতকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়েছি।

‘আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল মানহা!

‘তাকানোর কি আছো সত্যি তো আর পাল্টে যাবে না। এটাই সত্যি।

আদুরি রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।

মানহা সেই রাতের কথা ভাবতে চায়না বিভৎস রাত। নিজের মোবাইল নিয়ে মিফতাজকে কল করলো রিসিভ হচ্ছে না।

মানহা কল করেই যাচ্ছে।

মিফতাজ বারান্দায় বসে গিটার টুংটাং সুর তুলে গিটারের সুর বলে দিচ্ছে কতটা ক্ষত হচ্ছে হৃদয়। আচ্ছা এই যে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হয়! তা কেউ কেন দেখতে পায় না। এই ক্ষতে কেউ কেন মলম লাগায় না!

গান গাওয়াটা হচ্ছে মিফতাজের মন খারাপ আবার মন ভালো উভয় সময়ের সঙ্গী। আজ যেন তার গানের শুরে বিষাদ ছড়িয়ে পরছে।

Payer Jhutha Tha
Jataya hi kiyun
Aase jana tha
Aaya hi kiyun

A Sitamghar to zara
Aur sitam karde aaa
Aaja bewajah sa yeh
Rista khatam karde aa

O bedardeya
Yaar bedardeya

Darde-e-dil ki bina
Mahfil hi kiya
Jo na toota kabhi
Woh dil hi kiya
Hai mera haal bura
Aur bura karde aa

Mere zakhom ko zara
Aur hara karde aa

O bedardeya
Yaar bedardeya

O bedardeya
Yaar bedardeya

O bedardeya
Yaar bedardeya aaaaaaaaaaa

আরহাম মিফতাজের রুমে এসে দেখে মিফতাজের হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে তবুও গিটারের তাড়ে সুর তুলে গান গাইছে। প্রতিটি লাইন যেনো হৃদয় ছি’ড়ে বেড় হচ্ছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।

রুমের ফ্লোরে সব জিনিস ভেঙে চুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। আরহাম লাইট অন করে মিফতাজের হাত থেকে গিটার নিয়ে নিলো। বেডের উপর মিফতাজের মোবাইলে রিং হচ্ছিল। আরহাম মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে লাইফ লাইন লিখে সেভ করা নাম্বারটা। আরহাম কল রিসিভ করে মিফতাজের সামনে রেখে বের হয়ে যায়।

দুই প্রান্তে দু’জনের দৃষ্টি স্থীর একে অপেরর চোখের দিকে।

মানহা অস্থির হয়ে বলে,তোমার হাতে রক্ত কেন? কি হয়েছে বলো।

– রক্ত চক্ষু নিয়ে মানহার দিকে তাকিয়ে বলে,নাটক করবি না একদম নাটক সহ্য হচ্ছে না। কেন করলি তুই এটা আমার সাথে কেন?

মানহার চোখ বেয়ে আশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো খুব করে মনে পরছে সেই দিনের কথা।

‘এই শুনো রেগে গেলে তুমি কি আমায় তুই করে বলবে?

-উঁহু আপনি করে বলবো।

– তাহলে ঠিক আছে তোমার মুখে তুই ডাকটা শুনতে আমার কানে বিষের মত লাগবে।অতীতর কথা গুলো ভেবে মুখ চেপে চিৎকার করলো।

মিফতাজের হুশ আসলো মানহার অবস্থা দেখে। সাথে সাথে মোবাইল হাতে নিয়ে একদম মোবাইলের স্কিনের সামনে যেয়ে বলে প্রাণ পাখি আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো এমন হবে না। প্লিজ কাঁদে না এই প্রাণ পাখি কান্না বন্ধ করো।

– মানহা করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কতটা ভালোবাসলে একটা মানুষ এমন পাগলামি করতে পারে!

– জান তোমার কি হয়েছে বলো আমাকে, তুমি কি মজা করেছো তখন আমার সাথে। বলো না জান চুপ করে থেকে না কিছু তো বলো।

মানহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,তাজ তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করো না হলে তোমার সাথে আমি একটাও কথা বলবো না।

আরহাম ততক্ষণে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে এসেছে আরহাম মিফতাজের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে কিন্তু আরহামকে দেখা যাচ্ছে না।

মানহা বললো, কে এসেছে তাজ?

– তোমাকে যার কথা বলেছিলাম অনেক বার সে।

আরহাম রুম ছেড়ে চলে গেলো।

মানহা বলল,,তুমি কিছু খেয়েছো?মেয়েরাই পারে নিজের কষ্ট লুকিয়ে অন্যের কষ্ট দূর করতে। এদের চেয়ে বড় অভিনেত্রী, হয়তো আর কেউ নেই।

মিফতাজ বললো খাবার রাখো দেখা করছো কখন সেটা বলো।

‘খেয়ে ঘুমিয়ে পরোো।আগামীকাল বিকেল তিনটায় হাতিরঝিল দেখা হচ্ছে।

‘এতো ঘন্টা অপেক্ষা করতে পারবো না?

‘এর আগে তো আসতে পারবো না।খেয়ে নাও রাখি এখন।

ফোন কেটে দিয়ে মানহা কান্নায় ভেঙে পরলো। কি করবে সে এখন! কি করা উচিৎ তার ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরা নাকি নিজের বোনকে সংসার দেয়া। এটাও তে ঠিক আয়াতকে কেউ বিয়ে করতে চাইবে না। একটা পাগল মেয়েকে কেউ নিজের বউ করতে রাজি হবে না। দু’হাতে নিজের চুল খামচে ধরে চিৎকার করে কাঁদছে মানহা। আজ খুব করে নিজের মায়ের অভাব অনুভব হচ্ছে।

“মেয়েরা নিজেদের কষ্টের কথা ‘মায়ের কাছে জমা রাখে
তারা ভাবে মা’ তাদের কষ্ট দূরে করে দিবে!

এই কথাটা রুবি ম্যাডামের মুখে ক্লাসে কতবার শুনেছে। অথচ কখনো মানহার কথা তার মায়ের কাছে জমা রাখা হলো না!

যখন নিজের কষ্টগুলো নিজেকেই সামলাতে হয় তখন মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় হয়ে পরে।তবে সে সময় তারা পাথরে পরিনত হয়। কষ্ট পেতে পেতে কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা চলে আসে নিজের মধ্যে। মানহা নিজের চোখের পানি মুছে দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু হিসেব মেলাচ্ছে।

হঠাৎ তার দরজায় কেউ জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে লাগলো ধড়ফড়িয়ে উঠে দরজার কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে