নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_3
#adrin_anisha…..
.
হাপাতে হাপাতে ক্লাসে ঢূকলো নীলা। নীলাকে এভাবে দেখে তাড়াতাড়ি সাদিয়া এসে নীলাকে ধরে দাড়ালো?
– আমি পাগল হয়ে যাব রে সাদিয়া।
– কেন কি হলো আবার তোর? আর এতো হাপাচ্ছিস কেন?
– আর বলিস না কোনোভাবে পালিয়ে এসেছি।
– কার থেকে পালিয়ে এসেছিস? আচ্ছা আগে বস এখানে। তারপর বল একে একে কি হয়েছে।
– আজ তুই আগে আগে চলে এলি, আর আমারো গাড়ী দিয়ে আসতে মন চাইলো না। তাই একা একাই হেটে আসছিলাম, হঠাৎ রুনার সাথে দেখা। পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডাক দিল, অনেক দিন পর ওর সাথে দেখা। দুজনে কথা বলতে বলতে কিছুদূর আসার পর ওর বাসা এসে গেল আর ও চলে গেল।
– হুম, তো এখানে এতো ঘাবড়ানোর কি আছে?
– আরে ধুর পুরো কথাটা তো শোন। ও যাওয়ার পর পেছন থেকে একজন বলে উঠলো
“ওহ তোমার নাম তাহলে নীলা?”
আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম হঠাৎ পেছন থেকে এভাবে কথা বলায়। পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে হেসে হেসে আমার পিছু পিছু আসছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম
“কি?”
তখন ছেলেটা আমার পাশাপাশি হাটতে হাটতে বলল,
– সুন্দর নাম।
ছেলের তাকানোর স্টাইল দেখেই বুঝলাম ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছে। তাই আমি কিছু না বলে তাড়াতাড়ি হাটা শুরু করলাম। ছেলেটাও হাটা শুরু করল আমার পাশাপাশি। যতই জোরে হাটি না কেন ছেলেদের হাটার সাথে কি মেয়েরা তাল মেলাতে পারে নাকি। সে আবার বলল,
” আচ্ছা তুমি রেদোয়ান কে চেন?”
ছেলেটার কথা শুনে আমি জাস্ট অবাক। ও রেদোয়ান আংকেলকে চিনলো কেমনে? আমি ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকালাম, আমাকে দেখে মুচকি হেসে বলল,
” হুম, তোমার মুখ দেখেই বুঝে গেছি। তোমার বাবার নাম্বারের শেষে কি ৪৪০?”
এবার আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলাম। ছেলেটা এতো কিছু জানলো কেমনে? জানিস আমার বাবার অফিসের নামও বলে দিল। ভাগ্য ভালো তখনি স্কুলে পৌছে গেছি। দেখলার পিছু পিছু স্কুলেও ঢুকলো। আমার দারুন ভয় হচ্ছে রে। আমার পেছনে কি গোয়েন্দা লেগে গেল নাকি? আমাকে কি কেও মারার চেষ্টা করছে?
একদমে কথাগুলো বলে হাফ ছাড়লো নীলা। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে তাড়াতাড়ি কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিল। নীলার অবস্থা দেখে সাদিয়া হেসে দিল। নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
– আরে পাগল, তোর মতো গাধি কে মেরে কি ওদের কোনো লাভ আছে নাকি? শোন ছেলেটা মনে হয় তোকে পছন্দ করে। আর যেভাবে তোর সব ডিটেইলস বলল, তার মানে ছেলেটা তোকে অনেক আগে থেকেই ফলো করছিলো। তুই কখনো কিছু টের পাসনি?
– না তো। আমি তো ছেলেটাকে আজই প্রথম দেখলাম।
– আমার মনে হয় ছেলেটা হয়তো তোর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।
– তুই কি পাগল নাকি? আমি মাত্র নাইন এ পড়ি। বাবার স্বপ্ন আমাকে ডাক্তার বানাবে। এই সময় কেউ বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে গেলে তো বাবা নিজেই তাকে মেরে ফেলবে।
– হুম, তাও ঠিক তোর তো এখনো ১৮ হয়নি। ধুর বাদদে এখন এসব।
– আচ্ছা বাদ দিলাম। কিন্তু শোন কাল থেকে আমাকে ফেলে আর আসবি না। একসাথে আসবো।
– ঠিক আছে। আজ তো আমার একটু কাজ ছিলো আগে তাই এসেছিলাম। আর আসবো না।
নীলা আর সাদিয়া কথা বলতে বলতেই মুন্নি ও ক্লাসে ঢুকলো। সাদিয়া মুন্নিকে সব বলল আজ নীলার সাথে কি হলো। সবটা শুনে মুন্নিও একটু চিন্তায় পড়ে গেল।
.
ক্লাসের সময় আজও মেঘ নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। একে তো আজকের ঘটনায় অনেক ভয়ে আছে নীলা। তারউপর কেউ এভাবে সারাক্ষন কারো উপর নজর দিলে তারও বিরক্ত লাগবে। নীলা রেগে গিয়ে স্যারকে ডাক দিল।
– স্যার ওই ছেলেটা আমায় ডিস্টার্ব করছে।
স্যার নীলার হাতের ইশারায় পিছনে তাকিয়ে দেখলো মেঘকে। মেঘ তাড়াতাড়ি তার চোখ নিচে নামিয়ে নিল। যেন সে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।
স্যার নীলার দিকে ফিরে বলল,
– কে? মেঘ?
– জি স্যার।
স্যার একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বলল,
– কি করবে বলো? বখাটে তো বখাটেই থাকে। তবে তুমি চিন্তা করো না। আমি দেখছি।
নীলাকে বসিয়ে স্যার আবার ক্লাস নিতে শুরু করল। নীলার চোখ মেঘের দিকে পড়তেই মেঘ একটা শয়তানি হাসি দিল,যার অর্থ স্যার ওর কিছুই করতে পারবে না।
.
.
বাসায় এসে বুক সেল্ফে ব্যাগ টা রেখেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল নীলা। এতো টেনশন আর ভালো লাগছে না ওর। একে তো মেঘের ওই হাসিটা ওর কাছে অনেক অদ্ভুত লেগেছে। মনে হয়েছিল মেঘ যেন কিছু খারাপ করতে চলেছে। তারউপর আবার ওই নতুন ছেলেটার কথাগুলো। এতো কিছু জানলো কিভাবে ছেলেটা। আর ছেলেটার উদ্দেশ্য কি?
তাছাড়া আকাশের কালকের করা ঘটনাও ভুলিয়ে যেতে পারছে না। আকাশের কথা মনে হতেই নীলার হাত তার গালে চলে গেল। চোখের সামনে কালকের ঘটনা ভেসে উঠেতেই লাফিয়ে উঠলো নীলা। যেন ঘটনা টা এখন ঘটছে। লজ্জায় মুখ ঢেকে নিল নীলা। নীলা মনে মনে বলতে লাগলো,
– আমি তো এটা বুঝতে পারছি না যেইখানে আমার রাগ করার কথা সেখানে আমি লজ্জা কেন পাচ্ছি?
একটু পরেই আকাশ আসবে আমাকে পড়াতে। কিভাবে আকাশের সামনে যাব আমি? আচ্ছা আমার কি ওকে রাগ দেখানো উচিত? নাকি ওকে জিজ্ঞস করা উচিত ও এমন টা কেন করলো? না না, এটা করা যাবে না। তাহলে আমিই লজ্জা পেয়ে যাব। তাহলে কি আমি ওকে ইগনোর করব? হ্যাঁ, ইগনোরই করব তাহলে কোনো প্রবলেম হবে না। ধুর না, আমি ওর সাথে প্রতিদিন এর মতই ব্যাবহার করব।
নীলা এসব ভাবতে ভাবতেই ওর রুমে আকাশ এলো। নীলা সেদিকে লক্ষ্য করেনি। নীলার হাত তখনো ওর গালে। নীলা যে লজ্জা পাচ্ছে সেটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আকাশ। মুচকি হেসে নীলার কাছে গিয়ে ওর মুখের উপর উপুড় হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– কিরে আবার স্কুলে যাবার প্ল্যান আছে নাকি?
চোখ খুলে আকাশ কে দেখেই হুরমুড়িয়ে উঠলো নীলা। তাড়াতাড়ি করে বসে নিজের বুকে থু থু দিল, তারপর আকাশের হাতে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,
– তুই কখন এলি? আর কারো রুমে যে নক করে ঢুকতে হয় সেটা জানিস না? তাছাড়া আজ এতো তাড়াতাড়ি কেন? আর তুই এসেছিস তো মা ডেকে দেয় নি কেন আমাকে?
নীলা আরো কিছু বলবে তার আগেই ওর মুখ চেপে ধরল আকাশ।
.
.
.
চলবে…..