#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#শেষপর্ব ২৩
.
.
গাড়ী ড্রাইভ করছিল ফাইয়াজ, হটাৎ পুস্পিতা বলে উঠল গাড়ী থামান।
……এখন কেনো?
……বলছি তো গাড়ী থামান।
……দেরি হয়ে যাবে পুস্পিতা?
……এখনো সময় আছে আমাদের হাতে ২০ মিনিট, তাই পাশ করে গাড়ী থামান।
……ওকে।
ফাইয়াজ পাশ করে গাড়ী থামাল রাজাবাহাদুর রোডে পদ্ম পুকুরের ওই পাশে। পুকুরটা ফুলে ফুলে সাদা হয়ে ছিলো। খুব সুন্দর একটা দৃশ্য চোখ আঁটকে যাওয়ার মতো। সেখানেই দুজন নেমে গাড়ীর সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
দুপুরে ওরা বাসায় এলো। দেখল নিবিড়, নিশা সামনেই বসে কথা বলছিল, ওদের দেখে তাকালো বাট পুস্পিতা প্রচুর রেগে রুমের দিকে চলে গেল। আর ফাইয়াজ ওদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে গেল।
বিকেল দিকে পুস্পিতা চোখ বন্ধ করে ছাদের দোলনায় বসে ছিলো, ঠিক তখনই কেউ বলে উঠল।
……কী ব্যাপার মন খারাপ নাকি ম্যাডাম?
তাকিয়ে দেখল নিবিড় দাঁড়িয়ে ছিলো। তাই পুস্পিতা দোলনা থেকে উঠে চলে আসতে নিলো। তার মন খুবই খারাপ ছিলো, আজ এই নিবিড়ের সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছেই নেই তার। কিন্তু পুস্পিতা যখন ছাদ থেকে চলে আসতে নিলো, ঠিক তখনই নিবিড় এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে গেল পথ আঁটকে।
……কোথায় যাচ্ছ ম্যাডাম? একটু কথাই তো বলতে আসছি, নাকি প্রেম করতে আসছি? হ্যা তুমি চাইলে করতেও পারো প্রেম।
…….দেখেন আমার এখন আপনার চেহারা দেখার ইচ্ছেও নেই, তাই প্লিজ পথ ছাড়েন।
……পথ না ছাড়লে?
……আমি সরিয়ে নিতে জানি।
……ওকে নাও তবে।
পুস্পিতা চারিদিকে তাকিয়ে দেখল তার সোজাসুজি একটা
ঝাটা রাখা আছে, যেটা দিয়ে ছাদ পরিষ্কার করে, তাই সে এগিয়ে গিয়ে ঝাটা-টা হাতে নিয়েই এগিয়ে এলো।
……আমি সকালেই বলে ছিলাম, আমি জুতার থেকেও খারাপ কিছু এপ্লাই করতে পারি। এটা দেখছেন? এটা দিয়ে এমন ঝাড় দেবো না, যে আপনার এসব নোংরামি এক ঝাড়ায় পালাবে।
……তাই বুঝি? আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম ম্যাডাম।
এই বলে নিবিড় পুস্পিতার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিলো, তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে পেছন দিক থেকে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল।
…….আমি নিজের রক্ষা করতে জানি ম্যাডাম, এত অবলা হাত দিয়ে আমার কিছুই করতে পারবে না। তোমার এই হাতে চুড়িই মানায় ঝাটা নয়।
……আমার হাতে শুধু ঝাটা নয় ঝাটার বারিও বেশ মানায়।
এই বলে পুস্পিতা, নিবিড়ের পায়ে খুব জোরে একটা পারা দিলো। যার জন্য নিবিড় ওকে ছেড়ে দিয়ে পায়ে হাত দিয়ে মালিশ করতে লাগল, যেহেতু জুতো ছিলো পুস্পিতার পায়ে তাই খুব বেশিই একটু লেগে গেল, তাই সে উবুড় হয়ে পা মালিশ করছিল। আর এদিকে পুস্পিতা ঝাটা নিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে দিলো নিবিড় কে, নিবিড় ধরার খুব চেষ্টা করছিল বাট যে হাত দিয়ে নিবিড় ধরতে আসছে সেই হাতেই তার ঝাটার বারি পড়ছে।
পুস্পিতার যত রাগ ছিলো সব রাগ আজ ওর উপর ঝাড়ল। পুস্পিতা থামছিল না। মারতে মারতে নিবিড় ছাদেই শুয়ে পড়ল। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে পুস্পিতার কপালে নাকের ডগায়, তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল সেদিন যখন নিবিড় অত মানুষের মাঝে তার গায়ের থেকে ওড়না টান দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাই সে তার গায়ে যতটা জোর ছিলো সব দিয়ে নিবিড় কে ঝাটা পিটা করতে শুরু করল। প্রায় ১০/১৫ মিনিট পড়ে কেউ এসে পুস্পিতা কে ধরে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু পুস্পিতা তাকে ঠেলে সরিয়েও নিবিড় কে ইচ্ছে মতো পেটাতে শুরু করল। আজ হয়ত সে নিবিড় কে মেরেই ফেলতো কিন্তু কেউ তাকে খুব শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো যার জন্য পুস্পিতা নড়তেও পারছে না। পুস্পিতা তাকিয়ে দেখল ফাইয়াজ ছিলো।
…….আমাকে ছেড়ে দিন বলছি।(ছোটাছুটি করতে করতে)
…….পুস্পিতা শান্ত হও প্লিজ।
…….ফাইয়াজ প্লিজ ছাড়ুন আমাকে?
পুস্পিতা এতটাই রেগে ছিলো যে ফাইয়াজের নাম ধরেই বলে ফেলল। সে ফাইয়াজ কে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। তারপরে আবার নিবিড়ের দিকে যেতে নিলো। কিন্তু ফাইয়াজ পুস্পিতাকে ধরে নিবিড় কে ধমকের শুরে বলল।
…….তুই এখনো কী করছিস এখানে? যেতে পারিস না এখান থেকে?
ফাইয়াজের কথা শুনে নিবিড় উঠে ছুটে পালালো সেখান থেকে। পুস্পিতা ও যেতে চাইছিল বাট ফাইয়াজ পুস্পিতাকে টেনে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরল, যার জন্য পুস্পিতা নড়তেও পারছে না। এখন পুস্পিতার খুব কান্না পাচ্ছে। বাট সে কাঁদতে চাইছে না এখন, তাই সে চোখের পানি মুছে ফাইয়াজ কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ছুটে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
পুস্পিতা নিজের রুমে এসে ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা রেখে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ভাবছিল। সকালে গাড়ী থামিয়ে যখন ফাইয়াজ কে সব খুলে বলল, তখন ফাইয়াজ বলে উঠল।
…….শেষ তোমার কথা?
পুস্পিতা অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলো ফাইয়াজের দিকে।
……কী হলো? আরও কিছু বলার আছে?
……নাহ।
……তবে এখন যেতে পারি? কারণ আর মাত্র ৭ মিনিট আছে এর মধ্যে আমাদের গিয়ে পৌঁছাতে ও হবে।
পুস্পিতা গিয়ে গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। ফাইয়াজ ও গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। ফাইয়াজ আর কিছু বলে নি পুস্পিতা কে। এজন্য পুস্পিতার খুব কষ্ট হচ্ছে, কারণ সে বুঝতে পারছে ফাইয়াজ রেগে আছে তার সাথে। কিন্তু কেনো রেগে আছে এটাই সে বুঝতে পারছে না। পুস্পিতা চুপ করে এখনো ফ্লোরে বসে ছিলো, বেশকিছু পড়ে দরজায় কড়া নড়ে উঠল।
……পুস্পিতা দরজা খোলো দেরি হচ্ছে।
পুস্পিতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, ৪:৪৫ মিনিট তাই সে উঠে চোখ মুছে দুটো ড্রেস বের করে, ফাইয়াজেরটা বিছানায় রেখে তারটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
দুজনে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল, কেউ কারো সাথে কথা বলল না। আজ আর চা খাওয়ার সময় হলো না।
৬টার দিকে পুস্পিতা একটু ফ্রী হলো। তাই দু-কাপ চা অর্ডার করল, ফাইয়াজের রুমে এক কাপ তার রুমে এক কাপ। চা দিয়ে যেতেই পুস্পিতা তাকে জিজ্ঞেস করল।
……ডক্টর ফাইয়াজের রুমে দিয়েছেন?
……জ্বি ম্যাম।
……ওকে আসুন তবে।
এদিকে ফাইয়াজের ও খুব চায়ের প্রয়োজন ছিলো, কিন্তু রুগীর চাপে অর্ডার দেওয়ার সময় করে উঠতে পারেনি। চা পেয়ে একটু খুশিই হয়েছে সে। তাই চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে একটা ম্যাসেজ দিলো। যাতে লেখা ছিলো, ধন্যবাদ চায়ের জন্য।
রাতে বাসায় ফিরে দুজন শুনতে পেলো নিবিড়, নিশা দুজনই চলে গেছে, যা শুনে ফাইয়াজ পুস্পিতার দিকে তাকালো, কিন্তু পুস্পিতা তার দিকে না তাকিয়েই রুমে চলে গেল।
রাতে দু’জন দু-দিক ফিরে শুয়ে ছিলো, ফাইয়াজ ভাবছে তার রাগের কারণ আছে, কারণ পুস্পিতা তার থেকে এতবড় একটা কথা লুকিয়ে রেখেছে, যদি পুস্পিতার কিছু হয়ে যেত তখন? এটা ভেবেই সে রেগে গিয়েছিল তখন, বাট পুস্পিতা কেনো রেগে আছে? এটাই সে বুঝতে পারছে না। যাক কী আর করার এখন রেগে যখন আছে তবে তাকেই এই রাগ ভাঙাতে হবে, নায়ত এই রাগ কবে ভাঙবে তার জানা নেই। তাই সে পুস্পিতার দিকে ফিরে আস্তে করে পুস্পিতার হাতের উপর হাত রাখল, পুস্পিতা তার হাত সরিয়ে দিলো।
…….আচ্ছা আমি রাগ করেছি তা না ভাঙিয়ে তুমি কেনো রাগ করলে? তোমার কী উচিৎ ছিলো না একবার আমার রাগ ভাঙানোর? তা না করে উল্ট রাগ করে আছো
…….(ঘুরে গিয়ে) আপনার রাগ করার কী হয়েছে?
……এইযে তুমি আমার থেকে এতবড় কথা লুকালে? যদি তখন তোমার কিছু হয়ে যেত? তখন কী হতো?
……আমি তো ভেবেছিলাম আপনি টেনিশন করবেন এজন্য বলিনি। আর নিরা তো ছিলো তখন আমার সাথে।
……বাট তোমার বলা উচিৎ ছিলো আমাকে।
……হুম আমিও মানছি, আমার ভুল হয়েছে, বাট আমি তো আপনি টেনশন করবেন এজন্যই কিছু বলিনি।
…….ঠিক আছে যা চলে গিয়েছে তা গেছে। বাট আগে থেকে আমার থেকে কিছু লুকালে তখন কিন্তু আর আমি কথা বলব না তোমার সাথে। তাই যা করবে বুঝে শুনে করবে।
…….হুম স্যরি।
এই বলে পুস্পিতা ফাইয়াজের বুকে মাথা রাখল। আর ফাইয়াজ ও তাকে আগলে নিলো।
…….পুস্পিতা?
……হুম।
…….প্রচুর পরিমানে ভালোবাসি তোমাকে, তাই রুমি কোনো কথা আমার থেকে লুকাবে না। আমার খুব কষ্ট হয় এটা জানলে, তুমি কথা লুকিয়েছ আমার থেকে।
……হুম ইন’শা’আল্লাহ আর কখনো কিছু লুকাব না আপনার থেকে। কথা দিলাম।
…….ভালোবাসি তোমাকে খুব বেশি।
…….আমিও যে ভালোবাসি আপনাকে অনেক বেশি।
এভাবেই দিন গুলো তাদের যেতে লাগল। এভাবেই তাদের ভালোবাসা আরও গভীর হতে লাগল। জীবনটা খুব ছোট তার মাঝে যদি এমন একটা ভালোবাসার, বিশ্বাস করার, কেয়ার করার মতো মানুষ থাকে তবে এই ছোট জীবনটা মধুময় হয়ে যায়। আল্লাহ তায়া’লা জানো সবাইকে এমন ভালোবাসার একটা মানুষ দাণ করেন যাতে কেউ একাকিত্ব বোধ না করে। আল্লাহ হাফিজ বন্ধুরা। আগামীতে আবার নতুন কিছু নিয়ে আশার চেষ্টা করব ইন’শা’আল্লাহ। আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো থাকবেন।
………………সমাপ্তি সকাল।…….. ❤️ u friends ❤️❤️