#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১৫
.
.
রাত তখন ১১টা বাজে সবাই মিলে আমাকে স্যারের রুমে দিয়ে গেল। আমি রুমের ভেতর চলে আসতেই সবাই দরজা বন্ধ করে দিল। তাকিয়ে দেখলাম রুমটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। আমি সব ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। এর আগে তেমন একটা স্যারদের বাসায় আসা হয়নি। দু একবার আসলেও ড্রইং রুম থেকেই চলে গিয়েছি। আজ প্রথম স্যারের রুমে এলাম। স্যারের রুমে #নীলফড়িং যুক্ত অনেক আসবাবপত্র রয়েছে। লজ্জায় তো এমনিতেই আমি শেষ হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। প্রচুর পরিমানে ভয় করছে। এর মধ্যে হঠাৎ ওয়াশ রুম থেকে শব্দ হলো আমি ভয়ে আঁতকে উঠলাম। ওয়াশ রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম দরজাটা একা একাই খুলে যাচ্ছে, ওহ গড ভূত বলে চিৎকার দেবো না কী করব বুঝতে পারছি না। এর মধ্যে হঠাৎ একটা আবছায়া দেখে আমি চোখ বুঝে ভয় পেয়ে এবার চিৎকার না করে আর পারলাম না।
…….ভূত ভূত ভূত ভূ………।
আমি আর চিৎকার করতে পারলাম না। কেউ এসে আমার মুখ চেপে ধরল। আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু পরক্ষণেই কেউ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল।
……এই এভাবে কেউ চিৎকার করে? কেউ শুনলে কী বলবে?
আমি ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তার দিকে তাকালাম দেখলাম স্যার দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় মুখ থেকে হাত সরাতে বললাম। সে হাত সরিয়ে নিতেই বলে উঠলাম।
…….আপনি ছিলেন ওখানে?
……হ্যা তবে কে থাকবে?
……কী করছিলেন আপনি?
……আরে ওয়াশ রুমে সবাই যা করে আমিও তাই করছিলাম। তোমার সন্দেহ আছে কোনো?
…….আমি তা জিজ্ঞেস করিনি। আমি বলেছি আপনি তো বাহিরে ছিলেন, তবে এখানে কখন এলেন?
……ওহ এই কথা? আমি তো আরও ৩০ মিনিট আগেই চলে এসেছিলাম। ল্যাপটপে কিছু কাজ ছিলো তাই করছিলাম।
এই বলে সে সরে গেল। কিন্তু তুমি এখনো এত ভারি ড্রেস পড়ে আছো কেনো? বিরক্তি লাগছে না বুঝি?
…….লাগলেও কী করার আছে?
……কেনো?
……কিছু না।
স্যার গিয়ে ওয়াশ রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। আমি গিয়ে বিছানার এক পাশে বসে পড়লাম।
……..বালিশের পাশে দেখো কিছু রাখা আছে।
আমি স্যারের কথা শুনে তার দিকে তাকালাম, সে চোখের ইশারায় আবার দেখতে বলল। আমি এগিয়ে গিয়ে বালিশের পাশে হাত দিতেই দেখলাম একটা বক্স সেটা বের করে উঁচু করে স্যারের দিকে ধরতেই বলে উঠল।
…….খুলে দেখো।
আমি খুলতে নিলাম। খুলে দেখলাম একটা খুব সুন্দর ডায়মন্ড সেট ছোটর ভেতর কিন্তু খুব সুন্দর। সাথে একটা ছোট্ট #নীলফড়িং এর আংটি। যা দেখে ঠোঁটে এক চিলতে হাসি চলে এলো। স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেও মুচকি হাসছে।
স্যার আমার সামনে এসে বসে পড়লেন। আমার হাত দুটো তার দু-হাতের মাঝে নিয়ে বলে উঠলেন।
…….জানো? আজকের এই দিনটার জন্য আমি কতটা অপেক্ষা করেছি? আমি কখনো ভাবিনি তোমাকে একেবারে নিজের করে পাবো। প্রতিটি মূহুর্তে প্রতিটি সময় আমি ভেবেছি তুমি হয়ত হারিয়ে যাবে, পাবো না হয়ত তোমাকে আর। বাট আজ সব বাধা পেড়িয়ে তুমি শুধু আমার হয়ে এসেছ, এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। তুমি জানো আজও যখন এক্সিডেন্ট করেছিলাম, তখন বারবার তোমার চেহারাটাই চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। মনে হয়েছিল আর কোনোদিন হয়ত তোমাকে দেখতে পারব না। কিন্তু দেখো কোথা থেকে আমি কোথায় চলে এসেছি? আজ আমি অনেক খুশি অনেক অনেক খুশি। আজ আর আমাদের মধ্যে কোনো ৩য় ব্যক্তি নেই আজ শুধু তুমি আর আমি।
স্যারের কথা শুনে আমার চোখের কোণে পানি জমা হলো। সত্যি আজ অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আমরা এক হয়েছি। আমার চোখের পানি গুলো স্যার নিজের হাতে যত্ন করে মুছে দিল।
……কাঁদছ কেনো? আজ কান্না নয়, আজ শুধু হাঁসবে, তুমি মন খুলে হাঁসবে আমি দেখব।
স্যার বিছানায় শুয়ে পড়ল। স্যারের পা দুটো ঝুলে আছে স্যার একটি কুশন বালিশ মাথার নিচে দিয়ে বেশ আড়াম করেই শুয়ে ছিলো। আমি বসে ছিলাম নিচের দিকে তাকিয়ে। স্যার আমার হাত ধরে টান দিল। যার জন্য আমিও পড়ে গেলাম তার পাশে। দুজনে পাশাপাশি শুয়ে ছিলাম। স্যার উপর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল।
……তুমি কিছু বলবে না?
……কীহ বলব?
……কিছুই কী বলার নেই?
…….উঁহু। আজ শুধু শুনতে ইচ্ছে করছে। বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি যে।
…….আচ্ছা তবে চলো।
…….কোথায়?
……বলছি যাও আগে চেঞ্জ করে এসো।
……হুম
আমি গিয়ে লেহেঙ্গা-টা চেঞ্জ করে নিলাম, একটা সুতির শাড়ি পরে এলাম, পড়া ঠিক হয়নি জানি, বাট যেমন হয়েছে তাতেই চলবে। আমি শাড়িটা পড়ে বেরিয়ে আসলাম। সব গহনা খুলে নর্মাল ভাবে সাজলাম।
বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলাম স্যার আকাশ পানে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাশি দিলাম, যা শুনে স্যার ঘুরে তাকাল।
……হুম এখন মনে হচ্ছে তুমি আমার রাজ্যের রানী।
আমি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছিলাম। স্যার বলে উঠল।
……দাড়াও একটু।
স্যার এগিয়ে গিয়ে দরজা ফাঁকা করে কী জানি দেখল, এরপর এগিয়ে এসে একটা চাঁদর নিলো ড্রয়ার থেকে। আমাকে ডেকে নিয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে আমিও তার সাথে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম বাইরের রুম গুলোর আলো নিভিয়ে রাখা হয়েছে সম্ভবত সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমরা দু’জন ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।
ছাদে উঠে স্যার চাঁদরটা দোলনায় রেখে বলে উঠল।
……এখন ভালো লাগছে।
……স্যার এত রাতে ছাদে কেনো?
স্যার রাগী লুক নিয়ে আমার দিকে ঘুরে গিয়ে এগিয়ে এসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন।
……আমি এখনো তোমার স্যার?
……না মানে হ্যা।
……ওহ গড। তবে তোমার হাসবেন্ড কে?
……(কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে) আপনি।
……তবে কে তার হাসবেন্ড কে স্যার বলে?
……স্যার আপনি তো আগে থাকতেই জানতেন আমি আপনাকে সম্মান দিয়ে স্যার বলে ডাকি। তবে আমাকে কেনো বিয়ে করতে হলো? যে আপনাকে নাম ধরে বলে আপনি তেমন কাউকে বিয়ে করলেই তো পারতেন।
……এখানেই তো সমস্যাটা হয়ে গেছে। চোখ বুঝতে পারেনি, মন ভাবার সময় পায়নি। আর আমি নিজেকে বোঝাতে পারিনি। যার জন্য আজ তুমি ছাত্রী আমি শিক্ষক।
……বাট স্যার।
……আবার স্যার?
……তবে কী বলব?
……সেটাও আমি বলে দেবো?
……তবে থাক কিছুই বলব না।
…….তাও ভালো।
এই বলে পুস্পিতা দোলনায় বসে পড়ল। তার স্যার গিয়ে তার পাশে বসল। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে বসে পূর্ণিমার চাঁদটা দেখল। কেউ কোনো কথা বলল না। এই নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে লাগল দুজনেই।
বেশ কিছুক্ষণ পরে স্যার এগিয়ে বসে চাদর-টা পুস্পিতার আর তার গায়ে জড়িয়ে নিলো। ঠান্ডা বাতাশ এসে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে তাদের।
……পুস্পিতা ভেতরে চলো এখানে অনেক ঠান্ডা।
……হুম চলেন।
এরপর দুজনে সেখান থেকে উঠে রুমে চলে এলো।
স্যার গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তাই পুস্পিতা গিয়ে বিছানার এক পাশে বসে পড়ল।
দুজনেই দু’দিকে ফিরে শুয়ে ছিলো হটাৎ রুমের আলো নিভিয়ে দিয়ে স্যার পুস্পিতার হাতের উপর হাত রাখলেন। পুস্পিতা চোখ বন্ধ করে নিলো। স্যার পুস্পিতার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে গেল।
খুব সকালে ঘুম ভাঙল দরজার খটখট শব্দে, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল পুস্পিতা, স্যার তাকে খুব শক্ত করে ধরে রেখে ছিলেন। পুস্পিতা আস্তে আস্তে স্যারের হাত সরাতে নিলো, বাট স্যারের ঘুম ভেঙে গেল। স্যার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল পুস্পিতা ওঠার চেষ্টা করছে তাই সে হাত সরিয়ে নিলো।
…….কী হলো?
……কেউ এসেছে দরজা নক করছে।
……আচ্ছা আমি দেখছি।
ফাইয়াজ শার্ট গায়ে দিতে দিতে দরজা খুলতে চলে গেলেন। পুস্পিতা বিছানা থেকে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
পুস্পিতা বের হয়ে দেখল ফাইয়াজ সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিল, পুস্পিতা ভেজা চুল গুলো মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। পুস্পিতার চুল ঝাড়া দিতেই পানি এসে ফাইয়াজের গায়ে পড়ল।
……এই যে ম্যাডাম আমি ভিজে যাচ্ছি তো।
……ওহ স্যরি।
পুস্পিতা আস্তে আস্তে চুল মুছতে নিলো। হটাৎ তার মনে হচ্ছে কারো হাত তার কোমড় স্পর্শ করছে। সে ভয় পেয়ে পেছনে ঘুরতেই খেলো ফাইয়াজের মাথার সাথে সজোরে একটা টাক।
……আহ। আপনি এখানে কী করছেন? ইশ (মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)
……আমি ও হ্যা ফুটবল খেলছিলাম।
……রুমের মধ্যে ফুটবল, কিন্তু এত জায়গা থাকতে এখানেই কেনো?
……ওহ গড। আচ্ছা তোমার মাথায় কী আছে?
……আমার মাথায়? চুল রয়েছে।
……উফ, ঘিলু নেই মোটেও তোমার মাথায়।
এই বলে ফাইয়াজ রাগ করে ওয়াশ রুমে চলে গেল। আর পুস্পিতা রেডি হয়ে ড্রইং রুমে চলে এলো। সেখানে এসে দেখল সবাই বসে আছে বাট তার শাশুড়ী রান্নাঘরে সাথে কাজের মেয়েটা কাজ করছে, তাই সে মাথার কাপড়টা ভালো করে টেনে নিয়ে এগিয়ে গেল রান্নাঘরের দিকে।
……আম্মু আমি সাহায্য করি?
……আরে না না মামণি তুমি কেনো এত জলদি কাজ করবে? এসেছ কিছুদিন রেস্ট নাও তারপর না হয় করবে।
……কিন্তু হসপিটালে যেতে নিলে তো অতটা কাজ করতে পারব না। তাই যেকদিন ছুটিতে আছি সেই কদিন তো করি।
……সমস্যা নেই তুমি যতটুকু পারবে ততটুকুই করে নিও। এখন যাও সবার সাথে গিয়ে কথা বলো।
……আপনি একা একা কাজ করবেন আর আমি বসে থাকব? প্লিজ আম্মু দিন আমি কিছু করি?
……আমার লক্ষী একটা মেয়ে( গালে হাত রেখে) এখন তুমি কাজ করলে সবাই আমাকে কথা শুনাবে, বাকা দিবে, যে কী দিন আসলো নতুন বউ আসতে না আসতেই তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে। যাও মা সবার সাথে গিয়ে বসো, এখানে রুমকি আছে তো, ও আর আমি মিলে সব সামলে নেবো।
……ঠিক আছে।
পুস্পিতা এসে সবার সাথে ড্রইং রুমে বসে পড়ল। সবার সাথে কথা বলছিল। সবাই অনেক ইয়ার্কি ফাজলামো করছিল তার সাথে।
।
।
।
চলবে………..।