#নীলপদ্ম
#৭ম_পর্ব
দিশার মোবাইলে কনটিয়াসলি ফোন করে যাচ্ছে সে। মানুষ ফোন যদি নাই ইউজ করে, সাথে রাখার কি মানে এটা বুঝে পাচ্ছে না হৃদয়। হঠাৎ তার পা জোড়া থমকে গেলো। সামনে দিশা দাঁড়িয়ে, এবং তাকে একটি ছেলে জড়িয়ে ধরে আছে। ব্যাপারটা এতো বড় কোনো ইস্যু না, তবুও কেনো জানে খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে হৃদয়ের। দিশা হেসে হেসে ছেলেটার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেনো মনে হচ্ছে তারা খুব বেশি ঘনিষ্ঠ। হৃদয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাদের দেখেই যাচ্ছে। তা জানি কি কথা বলছে।
অপরদিকে,
দিশা কেবিন বের হতেই পেছনেথেকে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে, প্রথমে আৎকে উঠলেও পিছনে ফিরে দেখে ব্যাক্তিটি আর কেউ নয় তার বন্ধু ফয়সাল। ফয়সাল এখানের ডিউটি ডাক্তার। তার সাহায্যেই আলতাফ সাহেবের চিকিৎসা এতো দ্রুত হয়েছে। ফয়সাল তার ছোটবেলার বন্ধু। একসাথেই বড় হয়েছে ফয়সাল, সায়মা এবং দিশা। ফয়সাল একটি ভূবন ভুলানো হাসি দিয়ে দিশাকে বলে,
– সারাক্ষণ এতো ভয় পেলে চলবে রমনী? ঘুম কেমন হলো আমার এই হসপিটালে?
– আর ঘুম, এখনো রেশ রয়ে গেছে, আচ্ছা বাবা কেমন আছেন?
– রিপোর্টস নরমাল, বিকেলে ডিসচার্জ নিতে পারিস
– যাক বাঁচালি, আন্টি কেমন আছেন রে?
– ভালো, কিন্তু মেলা ঝামেলায় আছি বুঝলি?
– কেনো? আবার কি হলো?
– আম্মু সেই এক বিয়ের ঘ্যানঘ্যানানি। আর বিয়ে করবো না কে শুনে কার কথা?
– শোন এই বুড়ো বয়সে কোনো মেয়ে পাবি না বিয়েটা করে ফেল
– তাহলে তুই কেনো করছিস না বিয়ে? তোর আরা আমার তো এজ সেম ই
– আমার জন্য এসব নয় এজন্য
– তাই বুঝি? ভালো। আচ্ছা শোন……
কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেখানে হৃদয় এসে উপস্থিত। চোখ দুজোড়া তার জ্বলজ্বল করছে। বেশ ঝাঝালো কন্ঠে দিশাকে বলে,
– আমি তো ভেবেছিলাম তুমি হয়তো অনেক টেনশনে আছেন কিন্তু আমার ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করার জন্য ধন্যবাদ।
হঠাৎ করে হৃদয়ের উপস্থিতি দিশাকে বেশ চমকে দিয়েছিলো। হৃদয় যে হাসপাতালে উপস্থিত হবে কিংবা সে তার বাবার অসুস্থতার কথা জানবে এটা দিশা ভাবতে পারে নি। হৃদয়ের ঝাঝালো কথা শুনে কিছু বলতে যাবে তার আগে হৃদয় আবার বলে উঠলো,
– আজ একটা ইমপোর্টেন্ট মিটিং ছিলো ক্লাইন্টের সাথে, আজ তোমার উপস্থিতি খুব ই জরুরি ছিলো। কিন্তু তুমি যখন আসো নি আমি সায়মার কাছ থেকে জানতে পেরেছি আংকেল অসুস্থ। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আংকেলের সেবাতে ব্যস্ত। কিন্তু এখানে অন্য কিছুই আমার নজরে পরছে।
– মানে? কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?
দিশার হৃদয়ের খোচা মারা কথাগুলো যেনো একেবারেই হজম হচ্ছে না। চোখ মুখ খিচে হৃদয়ের কথাগুলোর মানে জিজ্ঞেস করে সে। হৃদয় ও কম যায় না, অমনি মনের ঝাল কথার ছলে তাকে বুঝিয়ে দিলো।
– আসলে কি, এটা একটা হাসপাতাল। তাই বলছি, প্রেম করতে হলে বাহিরে যেয়ে করবে। এখানে এমন আচারণ গুলো ঠিক শোভা পায় না।
– মুখ সামলে কথা বলবেন স্যার। ভুলে যাবেন না আমি আপনার অফিসের কর্মচারী মাত্র। তাই আমাকে নিয়ে কিছু বলার আগে দু বার ভাববেন।
এবার যেনো নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না দিশা। দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললো দিশা। হৃদয়ের চিন্তাভাবনা এতোটা ঘৃণ্য এটা দিশা কল্পনাও করতে পারছে না। হৃদয় ও কম কিছু যায় না, দিশার হাতে ফুলে বুকে টা ধরিয়ে সে হাটা দিলো বাহিরের দিকে। সেখানে এভাবে আচারণ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার ছিলো না কিন্তু কি যে হলো নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারলো না হৃদয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
বিকেল ৫টা,
বাড়িতে ঢুকতেই যেনো আক্কেল গুডুম হৃদয়ের। বাড়িটা যেনো একটা মরা বাড়ির মতো লাগছে। একজন কাজের লোককে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো,
– স্যার ম্যাডামের হঠাৎ করেই বুকে ব্যাথা উঠেছে।
কাজের লোকের কথা শুনে বেশ ক্ষেপে গিয়ে হৃদয় বললো,
– তবে আমাকে ফোন করা হয় নি কেনো? মা কোথায়?
– স্যার নিশাত ম্যাডাম বাসায় আসিলো, উনি ডাক্তার ডেকেছেন। বড় ম্যাডাম তার রুমে আছে।
হৃদয় এক মিনিট অপেক্ষা না করে দৌড়ে চলে গেলো নুর বেগমের রুমে। নুর বেগম তখন বিছানায় শোয়া। সেদিন তাদের মধ্যে কথা কাটকাটি হওয়ায় নুর বেগম আর হৃদয়ের সাথে কথা বলে নি। হৃদয় তার পাশে বসতেই তিনি মুখটি অন্যদিকে সরিয়ে নিলেন। মায়ের ক্ষুদ্ধ হবার কারণ হৃদয়ের বেশ ভালো করেই জানা। তাই ধীর কন্ঠে তাকে বললো,
– মা, তুমি এখন কেমন লাগছে?
-………
– কথা বলবে না?
-…………
তখন নিশাত শান্ত গলায় বলে,
– হৃদয়, আন্টি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেন। আসলে উনি তোমাকে নিয়ে খুব চিন্তা করেন। চিন্তায় চিন্তায় ঔষধ ও ঠিক মতো খাচ্ছিলেন না। তাই এই অবস্থা। ডাক্তার বলেছেন, উনাকে কোনো প্রকার স্ট্রেস দেওইয়া যাবে না
– মা, তুমি কেনো এমন করছো? ঔষধ খাচ্ছো না কেনো? তুমি তো জানো ঔষধ না খেলে তোমার কি অবস্থা হয়? প্লিজ মা
– নিশাত তাকে বলে দেও, সে যদি তোমাকে এই সপ্তাহে বিয়ে না করে তবে আমি ঔষধ খাবো না। কার জন্য বাঁচবো? যে ছেলের বমায়ের ইচ্ছের দাম দিতে পারে না তার জন্য? মোটেই না। এর থেকে মরে যাওয়াই সই
মার কথায় অভিমান স্পষ্ট। হৃদয় আর কথা বাড়ালো না, সে মায়ের জিদ সম্পর্কে বেশ ভালো করেই অবগত। ঔষধ না খেলে মা অসুস্থ হয়ে যাবে এটা ও সে খুব ভালো করে জানে। মা ব্যতীত তার আপন বলতে কেউ নেই। তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– যা ভালো মনে করো, তাই করো।
বলেই সেখান থেকে চলে যায় সে। হাজারো কষ্ট বুকে আগলে রেখে বেঁচে আছে সে। নিজের মাও যদি তা বুঝে কিছুই করার নেই তার। নুর বেগম বেশ খুশি, তার ছেলের বিয়ে হবে। এদিকে নিশাত একটি বাঁকা হাসি হেসে তার জয়ের উল্লাস করছে।
সকাল ১১টা,
সারা অফিস জুড়ে কানাঘুসা চলছে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও এখন দিশার বড্ড কৌতুহল হচ্ছে কি নিয়ে এতো আলোচনা। সব চিন্তা বাদ দিয়ে হঠাৎ সকল স্টাফদের একত্রিত করা হলে দিশার কৌতুহল যেনো আরো বেড়ে যায়। হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে সবার সামনে। খুব মলিন মুখে সে বলতে লাগলো,
– আমি মাত্র সপ্তাহ কয়েক এই কোম্পানিটি কিনেছি কিন্তু আপনারা আমার ফ্যামিলির মতো। সো আমার কোনো খুশির মোমেন্টে আপনাদের আগমণটি খুব কাম্য আমার। আগামী সপ্তাহে………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি