নীলপদ্ম ৩য় পর্ব

0
1642

#নীলপদ্ম
#৩য়_পর্ব

পিছু নেওয়া লোকটি খুব কাছে চলে আসায় একরকম ছুট লাগায় দিশা। গলি যেনো শেষ হবার নাম নেই। ছুটতে ছুটতে হঠাৎ পায়ে পা বেঁধে পড়ে যেতে নিলে কেউ যেনো তাকে পেছন থেকে আগলে ধরে। মনের মধ্যে দলা পাকানো ভয় গুলো তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে দিশার। চিৎকার করার প্রকল্প নিতেই সেই মানুষটি তার মুখ চেপে ধরে ধীর কন্ঠে বলে,
– চেঁচিয়ো না আমি, হৃদয়

কথাটি শোনামাত্র দিশা শান্ত হয়ে যায়। পেছনে ফিরে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে আসলে সেই ব্যাক্তিটি তার বস হৃদয়। দিশা এখনো হাফাচ্ছে, কিন্তু হৃদয়কে দেখে অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে৷ হৃদয় দিশার অবস্থা দেখে তাকে ধীর কন্ঠে বলে,
– এভাবে পাগলের মতো ছুটছিলে কেনো রাস্তায়? আরেকটু হলে তো পড়ে যেয়ে ব্যাথা পেতে
– আসলে কেউ আমাকে ফলো করছিলো। তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
– সেটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু এই অন্ধকার গলিতে তুমি কি করছিলে?
– আসলে কখন যে এই গলিতে ঢুকে পড়েছি বুঝতে পারি নি।

দিশা একটা অচেনা গলিতে ঢুকে পড়েছে। তখন দৌড়াতে দৌড়াতে কখন এই অচেনা গলিতে ঢুকে পড়েছে তার খেয়াল ই নেই। হঠাৎ দিশা খেয়াল করলো সে এখনো হৃদয়ের বাহুতেই রয়েছে, আর হৃদয় এখনো তাকে সেই একই ভাবেই জড়িয়ে ধরে আছে। ব্যাপারটি বুঝতে পেরে তৎক্ষনাৎ সে নিজেকে হৃদয়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো। ব্যপারটা দিশাকে খুব অপ্রস্তুতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। দিশার ইতস্তত দেখে হৃদয় ও তাকে ছেড়ে দেয়৷ পরিস্থিতি হালকা করতে শান্ত ভাবে বলে,
– চলো আমি তোমাকে পৌছে দিচ্ছি। তোমার যা অবস্থা এখন তোমাকে একা ছাড়াটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
– না না স্যার, অহেতুক আপনি কেনো কষ্ট করতে যাবেন। আমি চলে যেতে পারবো।
– মিস দিশা, এতো বেশি না বুঝতেও আপনার চলবে বলে আমি মনে করি। তাই অহেতুক কথা না বাঁড়িয়ে চলো।

হৃদয়ের খানিকটা কড়া সুরের কথা শুনে দিশা বেশ চুপসে গেছে। লোকটা তাকে যেনো হুকুম করছে তাকে। বাধ্য হয়ে মাথা নিচু করে হৃদয়ের পেছন পেছন চলা শুরু করলো দিশা। দিশা গাড়িতে বসতেই হৃদয় তার দিকে একটু ঝুকে যায়। হৃদয় এমন কাজে খানিকটা হলেও চমকে যায় দিশা। গাড়ির দরজার দিকে সরে যেয়ে বেশ ভীত গলায় জিজ্ঞেস করে,
– আপনি এভাবে ঝুকে আসছেন কেনো?

হৃদয় কোনো কথা না বলে শুধু দিশার দিকে ঝুকে যাচ্ছিলো। একটা সময় হৃদয় যখন দিশসার খুব কাছাকাছি চলে আসে৷ আবেশে দিশার চোখ বন্ধ৷ হয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ কোন সাড়া না পেয়ে টিপটিপ করে চোখ খুলে দিশা। চোখ খুলতেই দেখে হৃদয় তার সিটে বসে মিটিমিটি হাসছে। নিজের দিকে তাকেতেই দেখে হৃদয় আসলে তার গাড়ির সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়েছে। দিশার অবস্থা দেখে খুব হাসি পাচ্ছে হৃদয়ের। বাহির থেকে কড়া এবং কঠিনত্ব দেখালেও মেয়েটি খুব ভীতু। যেটা আজ দুবার সে প্রমাণ পেয়ছে। মেয়েটির কাছে গেলে প্রেয়সীর অনুভূতিগুলো যেনো আরো জোরদার হয়ে যায়। কিন্তু হাতে কোনো প্রমাণ নেই।

রাত ১০টা,
দিশার বাসার সামনে গাড়ি এসে থামে হৃদয়ের। গাড়ি থেকে নেমেই “ধন্যবাদ” জানিয়েই এক প্রকার যেনো ছুট লাগায় দিশা। একবার ও হৃদয়কে বাসায় আসার আহবান ও দেয় নি। দিশার এই আচরণে অবাক হয়ে মনে মনে হৃদয় বলে,
– মেয়েটি কি কিছু লুকানোর চেষ্টা কিরে যাচ্ছে? আমাকে এড়িয়ে চলছে কেনো? সে যদি প্রেয়সী হয় তবে এতো ভয় কিসের? আমাকে সত্যটা বের করতেই হবে

বাসায় পৌছাতে পৌছাতে বেশ রাত হয়ে যায় হৃদয়ের। নিজের রুমে ঢুকে লাইট অন করার আগেই কেউ তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে। রাগের বসের মানুষটির হার ধরে সামনে নিয়ে এসে লাইট লাগায় হৃদয়। মানুষটি আর কেউ নয় হৃদয়ের বাগদত্তা নিশাত। নিশাতকে দেখে এক রকম রেগে গিয়ে হৃদয় বলে,
– তোমাকে আমার ঘরে ঢুকার পারমিশন কে দিয়েছে? আজ এসব কি অসভ্যতামি? বারবার মানা করা অবধি এই কাজ গুলো তোমার কিরতেই হবে?

হৃদয়ের রুঢ় আচারণে নিশাত বেশ রেগেই হৃদয়কে বলে,
– সমস্যাটা কি হৃদয়? আমি কি তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না? হৃদয় আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তোমার থেকে এমন আচরণগুলো কি আমি ডিজার্ভ করি?
– নিশাত, বারবারের মতো এবারো বলছি আমার দ্বারা এই বিয়েটা করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয়। কেনো জোর করছো? আমার অলরেডি বিয়ে হয়ে গেছে
– কোথায় তোমার ওয়াইফ? বলো কোথায়?
-…….
– তোমার ওয়াইফকে যদি তুমি খুজে পাও তবে একথাগুলো তোমার মুখে শোভা পাবে। এর আগে নয়। যেদিন আসলেই তাকে খুজে পাবে সেদিন আমাকে বলো আমি সেইদিন ই তোমাকে ছেড়ে দিবো।

বলেই কাঁদতে কাঁদতে৷ রুম থেকে বেরিয়ে যায় নিশাত। হৃদয় তখন মাথা দু হাত দিয়ে চেপে বসে পড়ে। পুরুষদের নাকি কাঁদতে নেই তবুও আজ চোখের কোনায় পানি চিকচিক করছে হৃদয়ের। আর না পেড়ে তখন ই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে।

দুপুর ২টা,
কাজ করতে করতে দুপুরের খাবার টুকু খেতে ভুলে গেছে দিশা। নিজের কাজের প্রতি সে খুব সিনসিয়ার। হঠাৎ তার ডেস্কে পিয়ন এসে জানায়,
– ম্যাডাম স্যার আপনাকে ডাকতেছে
– আচ্ছা শফিক ভাই আপনি যান

এই নতুন এম.ডি মতিগতি কিছুই বুঝে না দিশা। কেমন যেনো সন্দেহের চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই লোকটার চাহনি দিশার হৃদয়কে নাড়য়ে দিতে সক্ষম।

রুমে ঢুকতেই হৃদয় দিশাকে বলে,
– দিশা, আমাদের এখনই প্রজেক্ট রিলেটেড চৌধুরী গ্রুপের সাথে একটা মিটিং এ যেতে হবে। আমি লাঞ্চ করি নি। সো আগে লাঞ্চ করে দেন আমরা মিটিং এ যাবো।
– স্যার আমি কি আপনার সাথেই যাবো?
– হ্যা ডু ইউ হ্যাভ এনি প্রবলেম?
– নো স্যার, চলুন
– অকে

অফিস থেকে বের হয়েই একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকলো তারা। ওয়েটার মেনু কার্ড দিতেই হৃদয় বলে,
– লেডিস ফার্স্ট, যা ওর্ডার করার করো।
– কিন্তু স্যার
– আমি জানি তোমারো লাঞ্চ হয় নি। ওর্ডার করো।

দিশা কথা না বাড়িয়ে ওয়েটারকে বলে,
– আচ্ছা আপনারা কি এই ডিশটাতে পরণ ইউস করেন?
– জ্বী ম্যাম।
– অকে প্রণ ছাড়া কি দেওয়া যায়? প্রণে এলার্জি আছে তো।
– ওকে ম্যাম
– আর ঝাল কম দিবেন প্লিজ
– অকে ম্যাম

ওয়েটার চলে যেতেই হৃদয় বলে,
– তুমি কিভাবে জানলে আমার প্রণে এলার্জি? আর আমি একদম ঝাল খেতে পারি না?

হৃদয়ের প্রশ্নে খানিকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় দিশা। হঠাৎ এমন প্রশ্ন করবে হৃদয় সেটা বুখে উঠতে পারে নি সে। নিজেকে সামলে ধীর গলায় বলে,
– হোয়াট এ কোয়েন্সিডেন্স আমারও সেম প্রণে এলার্জি আর আমিও ঝাল একেবারেই খেতে পারি না

কে যেনো হৃদয় দিশার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। মনের মাঝে সন্দেহগুলো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আচ্ছা দিশাই কি তবে তার প্রেয়সী____

তিন দিন পর,
হৃদয়ের কেবিনে রাসেল দাঁড়িয়ে রয়েছে। হৃদয়ের হাতে একটা ফাইল যাতে দিশা সম্পর্কিত যাবতীয় ডিটেইলস আছে। ফাইলটা রেখে চুপ করে বসে থাকে হৃদয়। তার মুখ শক্ত হয়ে আছে। রাসেল কিছু বলতে পারছে না ভয়ে। কারণ হৃদয়ের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে খানিকটা চটে আছে। রাসেল ধীর গলায় বলে,
– স্যার, সরি ছ মাস আগের কোনো খবর আমি বের করতে পারি নি। কারণ ফ্যামিলিটি ছ মাস আগে এখানে শিফট হয়েছে। আগে মিস দিশা চিটাগং এর ব্রাঞ্চ এ ছিলেন।
– আচ্ছা তুমি যাও, দিশাকে পাঠিয়ে দিও।

রাসেল বেরিয়ে দিশাকে হৃদয়ের রুমে যেতে বলে, দিশা হৃদয়ের রুমে যেতেই…….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে