#নীরা
#২য়_পর্ব
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
আমি কেন বার বার ভাবনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছি।আজ এত গুলো দিন পর আমার কেন সেই মানুষটার কথা বার বার মনে হচ্ছে,
যেই মানুষটা আমাকে…
_মা ও মা।
_তুমি ঘুমাওনি মা?
_না।
_আচ্ছা আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,তুমি ঘুমাও।
আমি নীরাকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল হতেই অনুভব করলাম কে যেন আমার গালে চুমু খাচ্ছে।
আমি চোখ খুলতেই দেখি নীরা।
_এত সকালেই উঠে গেছো আম্মু?
নীরা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বল্লো।
আমি নীরাকে হাত মুখ ধুইয়ে দিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
কিছু ক্ষণ পরই আম্মু আমাকে ডাকছে।
_ন্রিতা,নীরাকে নিয়ে খেতে আয়।
আমি নীরাকে নিয়ে নাস্তা করতে গেলাম।
_শোন,নাস্তা করেই নীরাকে নিয়ে ওই জায়গায় যাবি,যেখানে কাল নীরাকে পেয়েছিলি।
আর যদি দেখিস কেউ ওকে নিতে আসেনি।
তাহলে থানায় গিয়ে একটু জানিয়ে আসবি।
ওর বাবা মা অবশ্যই থানায় জানাবে।
আর তাহলেই ওকে ওর বাবা মা পেয়ে যাবে।
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে আচ্ছা বললাম।
নাস্তা করার পর আমি নীরাকে নিয়ে আমার রুমে গেলাম।
নীরা আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো।
_মা ও মা,আমি যাবোনা।
_তোমার আব্বু আম্মু চিন্তা করছে মা,
তোমাকে না পেলে অনেক কান্না করবেতো তারা।
এখনও কাঁদছে তোমার আব্বু আম্মু।
_কেউ নেই,কিচ্ছু নেই।আমি যাবোনা মা।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম।
গিয়ে দেখি একটু তোমার আব্বু আম্মু কেউ নিতে এসেছে কিনা।
না আসলে আমি তোমাকে আমার সাথে করে নিয়ে আসবো।ওকে?
নীরা মন খারাপ করে রইলো।
আমারো নীরাকে কাউকে দিতে ইচ্ছে করছেনা।
তবুও যে দিতে হবে।
ওর মা বাবা না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে ওর জন্য।
আমি নীরাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম।
ওই পথে যেতে হবে,
যেখানে নীরাকে আমি গতকাল পেয়েছিলাম।
কিছু দূর যেতেই আমি একটা মার্কেটে নিয়ে গেলাম নীরাকে।
ওখান থেকে
একটা নীল,একটা হলুদ,আরেকটা সাদা রঙের ড্রেস কিনে দিলাম।
আর একটা পুতুল।
নীরা এত কিছু পেয়েও খুশি না।
ও মুখ ভাড় করে আছে।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
আরো কিছু লাগবে তোমার?
খুশি হওনি তুমি?
_আমি যাবোনা মা।
আমার এবার বুক টা কেঁপে উঠলো।
আমি নীরাকে নিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলাম।
পৌঁছে গেলাম,নীরাকে যেখানে পেয়েছিলাম সেখানে।
গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
হঠাৎ খেয়াল করলাম,আমার চোখ থেকে পানি পড়ছে।
নীরা আমার কোমর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
‘
‘
‘
‘
_রাজ,
_হুম বলো,
_আমাদের নীরার চুল হবে তোমার মত বুঝছো?
_হুম বুঝলাম।
_আর চোখ ও হবে তোমার মত।
_আর?
_আর হাসিটাও হবে তোমার মত।আর আর আর ঠোঁট হবে আমার মত।
_আমার ঠোঁট ও সুন্দর বুঝলেন?
_উঁহু আমার ঠোঁট বেশি সুন্দর।
_না আমার ঠোঁট তোমার ঠোঁটের মতই।
_হুম আসলেইতো আমার আর তোমার ঠোঁট একই রকম।
কিন্তু তুমি সি*গা*রেট খেয়ে কালো বানায় ফেলছো।
_উঁহু আমার ঠোঁট কালো না।
_ওকে আমার ঠোঁট কালো,হইছে?
_হুম হইছে,আমার কালো ঠোঁটই পছন্দ।
_ধুর।
_মা ও মা আমি যাবোনা।
আমি নীরার কপালে একটা চুমু খেয়ে নীরাকে নিয়ে আমার বাসার দিকে আবার রওনা দিলাম।
যেই বাবা মা এত কেয়ারলেস তাদের কাছে যেতে হবেনা নীরাকে।
এই টুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে সামলে রাখতে পারেনা।
আর যদি মেয়ের প্রতি এতই মায়া থাকতো,তাহলে ঠিকই এত ক্ষণে খোঁজ শুরু করে দিতো।
এসব মনে মনে বকতে বকতে নীরাকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
জানিনা,নীরাকে হারানোর ভয়ে এসব বলছি,তাদের দোষ দিচ্ছি,মিথ্যে বাহানা দিচ্ছি।নাকি সত্যি সত্যি এগুলো আমার মনের ভাবনা।
এই মুহূর্তে এসব কিচ্ছু জানার দরকার নেই আমার।
আমার শুধু নীরাকেই দরকার।
নীরাকে সাথে নিয়ে বাসায় পৌঁছাতে দেখে আম্মু জিজ্ঞেস করলো,
_কিরে?নীরার বাবা মাকে পাসনি?
_নাহ।
_থানায় গিয়েছিলি?
_এত কিছু করার তো দরকার নেই আম্মু।
ওর বাবা মায়ের কাছে ওর মূল্য থাকলে ঠিকই এত ক্ষণে খোঁজ করতো।
আর এভাবে ওকে ছেড়ে দিতোনা রাস্তা ঘাটে।
ওর যদি কিছু হয়ে যেতো তখন কি হতো ভেবেছো?
ওর বাবা মা যদি কখনো খোঁজ করে,আর আমার সামনে আসে তাহলে ওকে আমি তাদের হাতে তুলে দিবো।তার আগে না।
আম্মুকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নীরাকে সাথে করে নিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম।
আমি গিয়ে খাটে বসতেই নীরা হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমার কপালে গালে চুমু খেলো।
আমিও ওকে জাপ্টে ধরে আমার বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম।
ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করার পর আম্মু হঠাৎ আমার রুমে এলো।
_ন্রিতা শোন,
_হুম আম্মু বলো,
_আমি বুঝতে পারছি,তোর ওর জন্য খারাপ লাগছে।
কিন্তু এটা কি ঠিক হচ্ছে?
_আম্মু আমি গিয়েছিলাম না ওকে নিয়ে?
ব্যাস শেষ।
নীরা আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
_নানু আমি যাবোনা।
আম্মুও আর কোন কথা বল্লোনা।
চলতে লাগলো নীরাকে নিয়ে আমাদের জীবন।
দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন কেটে গেলো।
নীরা আমাকে মা আর আম্মুকে নানু বলেই ডাকে।
নীরা এখন আমাদের জীবন।
ওকে ছাড়া একটা মুহূর্ত আমরা ভাবতে পারিনা।
নীরাকে নিয়ে আমরা প্রায়ই ঘুরতে বের হই।
নীরাও অনেক খুশি আমাদের সাথে।
একদিন রাতে নীরা আমাকে বলে,
_মা মা আমি বাবার কাছে যাবো।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
আমি ওর বাবাকে এখন কই পাবো,
মনে একটা ভয় কাজ করতে শুরু করলো।
যদি ও চলে যায় ওর বাবা মায়ের কাছে,তাহলে আমি থাকবো কি করে ওকে ছাড়া?
আমি নীরাকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ালাম।
কিছু ক্ষণ পর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।
অন্ধকার ঘর,
একদল লোক ঢুকলো হঠাৎ করে রুমের ভেতর।
দরজা খোলা ছিলো কিনা জানা নেই।
চিল্লাবো যে সেই শক্তিটাও পাচ্ছিনা।
লোক গুলো তাদের হাতে থাকা লাইট দিয়ে নীরাকে দেখছে।
একজন আমার বুক থেকে নীরাকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করছে।
আমি খুব চেষ্টা করেও নীরাকে ধরে রাখতে পারছিনা।
পারছিনা তাদের শক্তির সাথে।
নীরা কান্না করছে,
বার বার বলছে,
আমি যাবোনা মা,আমি যাবোনা।
কিন্তু হঠাৎ ই নীরার হাত টা ছুটে গেলো আমার হাত থেকে।
আর লোক গুলো নীরাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।
আমি চিৎকার করে কাঁদছি,আর বলছি,
ওকে তোমরা নিও না প্লিজ।
আমি আমার মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।
কিন্তু ওরা আমার নীরাকে আমার কাছে দিচ্ছেনা।
নীরা চিৎকার করে কাঁদছে,
_আমি যাবোনা মা,আমি যাবোনা।
আমাকে দিয়ে দিও না মা,আমাকে দিয়ে দিও না।
চলবে,