নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ৭

0
2888

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

মেঘ: কণা তুমি এসব কি বলছ?
আমি: ঠিকি বলছি তুমিই আব্বুকে খুন করেছ।
মেঘ: আমি কেন স্যারকে খুন করতে যাবো?
আমি: কারণ তুমি এখনি সম্পত্তি নিজের দখলে নিতে চাইছ।
মেঘ: কিসের সম্পত্তি কি বলছ এসব।
আমি: তোহার নামে দিয়েছি সেটা তুমি জানতে পেরেছ আর তাই…
মেঘ: তোহার নামে মানে?
আমি: এখন না জানার ভাণ করছ কেন?
মেঘ: তোমার মাথা ঠিক নেই তাই ভুলভাল বকছ। আমি তোমার আব্বুকে খুন করবো কেন আমি কি এতোটাই খারাপ?
আমি: হ্যাঁ তুমি খারাপ।
মেঘ: কণা কোথায় যাচ্ছ একা যেও না।
দৌড়ে নিচে চলে আসলাম।

গাড়িতে উঠতেই মেঘ পিছু পিছু এসে গাড়িতে উঠলো।
মেঘ: আমি ড্রাইভ করছি সরো।
কণা: আমি একাই যেতে পারবো।
মেঘ: তোমার মাথা ঠিক নেই এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।
আমি: হলে হউক তাতে তোমার কি?
মেঘ: এক থাপ্পড় দিবো চুপ করে বস এখানে।
মেঘের ধমকে চুপচাপ বসে রইলাম, ও আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো অন্য হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে। চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে, আস্তে আস্তে চোখ দুটু বুজে আসলো।

চোখেমুখে পানির ছিটা পড়তেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম।
মেঘ: কণা আমরা চলে এসেছি ভিতরে চলো।
মেঘ: কণা আস্তে যাও পরে যাবে।
মেঘের কথার পাত্তা না দিয়ে দৌড়ে ভিতরে চলে আসলাম।

সাদা কাপড়ে মোড়ানো আব্বুর নিথর দেহটা পরে আছে ড্রয়িংরুমে। আব্বুর পায়ের কাছে দফ করে বসে পড়লাম, সাদা কাপড়টায় এখানে সেখানে রক্তের ছাপ লেগে আছে। চারপাশে শুধু কান্নার আওয়াজ, উপরের রুম থেকে আম্মুর চিৎকার ভেসে আসছে। আমার চোখ দিয়ে কান্না আসছে না কেন, আমি পাথরের মূর্তির মতো বসে আছি কিভাবে?
পুলিশ আঙ্গেল: কণা তুমি ভেঙে পড়ো না মা তুমি এমন করলে আমরা তদন্ত করবো কিভাবে খুনিকে ধরবো কিভাবে?
আমি: আঙ্গেল এই কাজ কে করলো?
পুলিশ: জানিনা মা তুমি কি কাউকে সন্দেহ করো? (মেঘের দিকে তাকালাম আমি ওর নাম বলে দিতে পারি এই ভয় না পেয়ে উল্টো ও আমার কাছে এসে এক হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর কাধে মাথা রেখে বসে রইলাম)
কণা: না চাচ্চু আপনারা খুঁজে দেখুন।
পুলিশ আঙ্গেল: ঠিক আছে মা। (পুলিশ চলে যেতেই মেঘ আমার একটা হাত ওর হাতের মুঠোয় নিলো)
মেঘ: তুমি যে আমাকে সন্দেহ করছ সেটা পুলিশকে বলনি কেন?
কণা: শুধু সন্দেহের বশে আমি তোমার গায়ে কলঙ্গের দাগ লাগাতে চাই না। পুলিশ তদন্ত করুক তখনি তো সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মেঘ: কণা আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করি তাই বলে আমি এতোটা খারাপ না যে কোনো মানুষ খুন করবো।
আমি: আগে তো বলেছ প্রয়োজন হলে তুমিও খুন করতে পারো।
মেঘ: রুহান বলেছে তাই বলেছি তোমাকে হারানোর ভয়ে বলেছি। বলেছি বলে আমি স্যারকে খুন করবো ভাবছ কিভাবে? (মেঘের ফোন বেজে উঠলো ও ফোন নিয়ে দূরে চলে গেল। সত্যি বুঝতে পারছি না কাকে আমি সন্দেহ করবো)

আব্বুর থেকে একটু দূরে সোফাটায় বসে আছি আর আব্বুর নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে আছি।
চাচ্চু: কণা মা। (হঠাৎ চাচ্চুর কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকালাম চাচ্চু চাঁচিআম্মা আর জোহাকে দেখে দৌড়ে ওদের কাছে গেলাম)
আমি: চাচ্চু তোমরা? (ভাই মারা গেছেন আমরা কানাডায় বসে থাকি কিভাবে বল)
জোহা: আপু। (আর বোধহয় কান্না চেপে রাখা সম্ভব না সবার কান্না দেখে জোহাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম)
চাঁচিআম্মা: কণা তোর মায়ের কাছে চল।
চাচ্চু: দাড়া কণা।
আমি: বলো চাচ্চু।
চাচ্চু: তোর কি কাউকে সন্দেহ হচ্ছে।
আমি: নাতো কাকে সন্দেহ করবো? আমার মাথায় কিছুই আসছে না।
চাচ্চু: আমি দেখছি তুই ভেঙ্গে পড়িস না তোর মায়ের কাছে যা।
আমি: হুম।

সকাল হয়ে গেছে একটু পর আব্বুকে দাফন করা হবে।সারাটা রাত জোহার কোলে শুয়ে কেঁদে কেঁদেই কাটিয়ে দিয়েছি আর আম্মু তো অজ্ঞান হয়ে পরে আছেন। আমাদের এতো বড় ক্ষতি কে করলো বুঝতেই পারছি না।
রুহান: কণা… (চাঁচিআম্মার কাধে মাথা রেখে বসে ছিলাম, রুহানের ডাকে সামনে তাকালাম)
রুহান: রাতে এভাবে চলে এসেছ বাসার কাউকে কিছু না বলে…
আমি: আমার তোহা কোথায়?
রুহান: আসছে চাঁচির সাথে।
আমি: হুম।
রুহান: কণা প্লিজ তুমি ভেঙ্গে পড়ো না আমরা সবাই তো আছি।
আমি: (নিশ্চুপ)
রুহান: কণা কে করতে পারে এই কাজ কাউকে সন্দেহ হচ্ছে তোমাদের?
আমি: সবাই শুধু এই একি প্রশ্ন করছ আমি জানলে কি এখানে বসে থাকতাম? খুনিকে ধরে এনে নিজের হাতেই তো শাস্তি দিতাম। (আমার চিৎকার শুনে চাচ্চু আর মেঘ দৌড়ে আসলো)
চাচ্চু: মা কি হয়েছে?
আমি: যে আব্বুকে এতো কষ্ট দিয়ে মেরেছে তাকে ধরে এনে দাওনা চাচ্চু, আমি ওকে নিজের হাতে শাস্তি দিতে চাই।
চাচ্চু: এভাবে কাঁদিস না তোর কি একা কষ্ট হচ্ছে, আমার হচ্ছে না? আমারো তো ভাই। (চাচ্চু কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন, মেঘ এসে আমার পাশে বসলো। আমি যতোটা কাঁদছি মেঘও কাঁদছে, নাহ মেঘ খুনি হতে পারে না আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি মেঘ আব্বুকে কতোটা ভালোবাসতো)
মেঘ: কণা এভাবে কেঁদো না প্লিজ তোমার কান্না আর সহ্য করতে পারছি না।
তোহা: নতুন আম্মু… (তোহার ডাক শুনে চমকে উঠলাম মেয়েটা দাদুর কোল থেকে নেমেই দৌড়ে আমার কাছে চলে আসলো)
আমি: মামুনি কাঁদে না এভাবে।
তোহা: তুমি কাঁদলে আমিও কাঁদবো। (তোহার আধোআধো কন্ঠে এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই কেঁদে দিলো, বাচ্চা মেয়ে অথচ এতোটা ভালোবাসে আমাকে। মেঘ কখনো তোহাকে আমার থেকে কেড়ে নিলে আমি হয়তো মরেই যাবো)

নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছি বিছানায়, পাশে জোহা, পপি, মা আর চাঁচি বসে আছেন। আব্বুর নিথর দেহটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না কাকে সন্দেহ করবো। মেঘকে সন্দেহ করেছিলাম কিন্তু মেঘ কেন… আচ্ছা রুহান করেনি তো? হতেই তো পারে মেঘ’কে আমি ভালোবাসি বলে এমনটা করেছে। মেঘ’কে ফাঁসিয়ে দিয়ে আমার জীবন থেকে ওকে সরিয়ে দিলো। উফফ ভেবে পাচ্ছি না কিছু কাকে রেখে কাকে সন্দেহ করবো সত্যি ভেবে পাচ্ছি না। রুহানের কথা ভাবতে ভাবতেই রুহান আমার রুমে আসলো। আব্বুর দাফন কাজ হয়তো শেষ। একবার রুহানের সাথে কথা বলা প্রয়োজন।
আমি: সবাই একটু বাইরে যাও রুহানের সাথে আমার কথা আছে। (রুহানের মা আর পপি কিছুটা অবাক হলেও বের হয়ে গেল)
রুহান: কি হয়েছে কণা?
আমি: রুহান তুমি কিছু করনি তো।
রুহান: মানে?
আমি: মেঘকে আমার জীবন থেকে সরান…
রুহান: মেঘ আমার ভাই হয় কণা তাছাড়া আমি তোমাকে ভালোবাসি আর ভালোবাসা কখনো খুন করা শিখায় না। হ্যাঁ আমি তোমাকে রাগের মাথায় বলেছিলাম প্রয়োজন হলে খুন করবো তাই বলে সত্যি…
আমি: ভালোবাসার জন্য মানুষ সব করতে পারে রুহান।
রুহান: কণা তোমার মাথা ঠিক নেই তাই যাকে সামনে দেখছ তাকেই সন্দেহ করছ।
আমি: বাবার নিথর হয়ে পরে থাকা লাশ দেখা মেয়েটার পক্ষে তো এটাই স্বাভাবিক।
মেঘ: কণা আসবো? (মেঘকে দেখে রুহান বেরিয়ে গেল)
মেঘ: কণা এখন…
আমি: আব্বুকে একা রেখে চলে এসেছ তাই না?
মেঘ: কেঁদো না প্লিজ এটাই তো নিয়ম।
আমি: এখন আমি কাকে আব্বু ডাকবো?
মেঘ: সব ঠিক হয়ে যাবে আর কেঁদো না।
আমি: হ্যাঁ ঠিক হবে কিন্তু আব্বু তো আর ফিরে আসবে না।
মেঘ: হুম। (মেঘ আমার পাশে শুয়ে ওর বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো আমাকে। বাচ্চা মেয়ের মতো ওর বুকের সাথে মিশে চুপচাপ শুয়ে রইলাম)

পপি: ভাবি উঠো তোহা কাঁদছে। (পপির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, মেঘ কখন উঠে চলে গেছে বুঝতে পারিনি। রাত বোধহয় অনেক হয়েছে, অনেক সময় ঘুমিয়েছি)
পপি: তোমাকে ডাকতাম না ভাবি কিন্তু তোহা কাঁদছে খুব তোমার কাছে আসার জন্য।
আমি: হুম দাও ওকে। (তোহাকে এনে আমার বুকের উপর শুয়ে দিলাম, মেয়েটা নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে)
পপি: ভাবি কিছু খেয়ে নাও।
আমি: উঁহু খিদে নেই। (পপি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চলে গেল। পপি যেতেই তোহা উঠে ওর কোমল হাতে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে)
আমি: কি হয়েছে মামুনি?
তোহা: তুমি কাঁদছ কেন?
আমি: আমার আব্বু মারা গেছেন তো তাই।
তোহা: মারা যাওয়া কি?
আমি: আকাশের তারা হয়ে গেছেন।
তোহা: আর আসবে না?
আমি: না মামুনি আকাশে চলে গেলে আর ফিরে আসা যায় না।
তোহা: ওওও। (কিছুক্ষণ থেমে থেকে তোহা আবার প্রশ্ম করলো)
তোহা: আমিও যদি তারা হয়ে যাই তুমি কি কাঁদবে? (তোহার প্রশ্নে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, কি বলছে এসব তোহা)
আমি: এসব বলতে নেই মা তুই আমার কাছে না থাকলে আমি মরেই যাবো।
মেঘ: ওকে তোমার থেকে কেউ দূরে সরিয়ে নিবে না। (তোহাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম হঠাৎ মেঘ আসলো)
আমি: কোনো একদিন হয়তো এমন পরিস্থিতি আসবে যে তুমি নিজেই ওকে আমার থেকে কেড়ে নিবে।
মেঘ: কথা দিচ্ছি যাই হয়ে যাক তোহাকে তোমার থেকে আলাদা করবো না।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: নিচে যেতে পারবে তোমার চাচ্চু ডাকছেন?
আমি: হুম তোহাকে ঘুম পারিয়ে আসছি।

তোহাকে ঘুম পারিয়ে নিচে আসতেই দেখি মেঘ’দের বাড়ির সবাই চলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছে।
দাদি: কণা তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম, আমরা চলে যাচ্ছি।
আমি: এতো রাতে যাওয়ার কি প্রয়োজন সকালে…
মা: না মা আমরা যাই, তোমার যখন ভালো লাগবে যেও ততদিন মেঘ এখানেই থাকবে। তুমি মন খারাপ করে থেকো না।
আমি: হুম।

একে একে সবাই চলে গেল বাসাটা কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। থাকবেই তো বাসার প্রাণ যে আব্বু, আব্বুই তো নেই।
চাচ্চু: কণা আমাদের তো চলে যেতে হবে। দুদিনের বেশি থাকা সম্ভব না বুঝিসই তো ওদিকে…
আমি: আমরা কার কাছে থাকবো?
চাচ্চু: আমি চাইছিলাম ভাবিকে আমাদের সাথে কানাডা নিয়ে যাই, তুই চাইলে তুইও…
আমি: আমি কিভাবে যাবো?
চাচ্চু: ভাবি বাসায় একা থাকবে কিভাবে আমাদের সাথে নিয়ে যাই, তুই যখন বলবি তখনই আবার নিয়ে আসবো।
আমি: তাহলে আমি একা থাকবো কিভাবে?
মেঘ: একা কোথায় কণা আমরা সবাই তো তোমার পাশে আছি।
জোহা: আব্বু আমি আপুর কাছে থাকি?
চাচ্চু: ঠিক আছে।

নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছি পাশে মেঘ আর তোহা ঘুমুচ্ছে। আমার ঘুম আসছে না বারবার আব্বুর চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি আব্বু আমাকে কণা মা বলে ডাক দিবেন। ছোটবেলা থেকে আব্বুই আমার প্রথম বন্ধু ছিলেন, সবকিছুতে আব্বু আমাকে সাপোর্ট করেছেন আর আজ আব্বু আমাকে একা করে দিয়ে এভাবে চলে গেলেন। চোখের সামনে বাবার লাশ দেখার মতো নির্মম দৃশ্য আছে কিনা জানিনা খুব কষ্ট হচ্ছে, ভাবতেই পারছি না আর কেউ আমাকে কণা মা বলে ডাক দিবে না। কে এই কাজ করেছে এইটা জানতে পারলে হয়তো কষ্টটা কিছুটা হলেও কম হতো।
আম্মু: কণা জেগে আছিস? (এতো রাতে আম্মুর ডাক শুনে বেশ অবাক হলাম। তাড়াতাড়ি উঠে এসে দরজা খুললাম)
আমি: আম্মু তুমি?
আম্মু: তোকে একটা জিনিস দিতে ভুলে গেছি আমার রুমে চল।
আমি: চলো।

আম্মুর পিছু পিছু আম্মুর রুমে আসলাম। আম্মু ড্রয়ার থেকে একটা ফোন বের করে আনলেন।
আমি: আম্মু কার ফোন এইটা?
আম্মু: সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর ফোনটা আমি ফ্লোরে পেয়েছি, ওদের মধ্যে কারো হবে, হয়তো পকেট থেকে পরে গেছে। (তাড়াতাড়ি আম্মুর থেকে ফোনটা আনলাম অফ হয়ে আছে চার্জ নেই হয়তো)
আমি: আম্মু আমি দেখছি তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো।
আম্মু: ঘুম আসছে নারে মা কি থেকে কি হয়ে গেল।
আমি: এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো হবে না আম্মু। জোহা আম্মুকে বিছানায় নিয়ে যাতো।
জোহা: ঠিক আছে।
জোহা আর চাঁচিআম্মা আম্মুর কাছে আছে তাই নিশ্চিন্তে ফোনটা নিয়ে রুমে চলে আসলাম।

ফোনটা চার্জে দিয়ে অপেক্ষা করছি, হয়তো এই ফোন থেকে কিছু পাবো। ফোনটা চার্জে রেখে বিছানায় এসে বসলাম, দেয়ালে রাখা আব্বু আর আমার ছবিটার দিকে চোখ পড়তেই দুচোখ ভিজে উঠলো। এভাবে আব্বুকে হারিয়ে ফেলতে হবে কখনো ভাবিনি।

রাত প্রায় তিনটা বাজে সোফায় বসে ফোনটা হাতে নিয়ে ঘাটাঘাটি করছি। কল লিস্টে একটি নাম্বার ছাড়া সারা ফোনে আর কিছুই নেই। এই নাম্বারে ফোন দিবো কিনা ভাবতে ভাবতে ফোন দিয়ে দিলাম। আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে মেঘের ফোন বেজে উঠলো। অবাক হয়ে মেঘের ফোনটা হাতে নিলাম, এইটা মেঘের নাম্বার কিন্তু সন্ত্রাসীদের কাছে কেন? তবে কি আমার সন্দেহ ঠিক? কিন্তু মেঘের আচরণে তো কিছু বুঝা যায়নি। ফোনের রিংটোনে মেঘের ঘুম ভেঙে গেল, ঘুম ঘুম চোখে ও আমার দিকে তাকালো।
মেঘ: কণা তুমি ঘুমাওনি?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কণা কি হয়েছে আর আমাকে এতো রাতে কে ফোন করেছে?
আমি: নিজেই দেখে নাও। (মেঘের হাতে ফোন দিয়ে আমি আবারো কল করলাম, মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
মেঘ: কি ব্যাপার ওই ফোন থেকে আমাকে ফোন দিচ্ছ কেন আর এই ফোন কার?
আমি: সত্যি তুমি জাননা এই ফোন কার? নাম্বারটা তো তোমার চেনার কথা তাই না?
মেঘ: আশ্চর্য আমি কিভাবে জানবো এই নাম্বার কার।
আমি: মেঘ ন্যাকামো করো না তুমি ভালো করেই জানো এই নাম্বার কার।
মেঘ: কণা তুমি কি বলছ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমি: এই ফোন আব্বুকে মারার সময় একজন ভুলে ফেলে গেছে মেঘ আর এই ফোনে শুধু তোমার নাম্বার।
আমার চিৎকার শুনে মেঘ উঠে দাঁড়িয়ে গেল, ও অবাক হয়ে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ফোনটার দিকে তাকাচ্ছে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে