নীরবে_ভালোবাসি
পার্ট: ৫
মেঘ’কে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলাম। মেঘ তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গেল চারদিকে চোখ বুলিয়ে ফিরে আসলো আমার কাছে।
মেঘ: ওয়াক থুঃ।
আমি: হু!
মেঘ: অবাক হচ্ছ কেন? তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবেসে এমন করেছি? আর ঠোঁটে এতো গাড়ো করে লিপস্টিক দিতে হয় নাকি যত্তোসব।
আমি: কি বলছ এসব তুমি?
মেঘ: তুমি না সত্যি একটা বোকা মেয়ে, আরে রুমের বাইরে দাদি দাঁড়ানো ছিল তাই একটু অভিনয় করলাম। (বিছানায় বসে পড়লাম চুপচাপ, চোখ দিয়ে একনাগাড়ে পানি পড়ছে। মেঘ এমন করতে পারলো)
মেঘ: দাদি আমার হাতে শাড়িটা দিয়ে বললো উপরে নাকি আসতে পারবে না সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হয় আমি যেন তোমাকে শাড়িটা দিয়ে দেই কিন্তু তখন আমার সন্দেহ হয়। আর আমার সন্দেহটাই সত্যি হয়েছে, দাদি আমাকে পরীক্ষা করার জন্য লুকিয়ে উপরে এসেছিল তাই তো পরীক্ষাটা ভালো করে দিলাম হাহাহা।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কি কণা চৌধুরী হেরে গেলে তো মেঘ এর অভিনয়ের কাছে।
আমি: ভালোবাসা নিয়ে অভিনয় করেছ তো তাই বুঝতে পারিনি তাছাড়া খান পরিবারের ছেলে যে কোনো মেয়ের বিশ্বাস ভালোবাসা নিয়ে এতো নিখুঁত ভাবে অভিনয় করতে পারে সেটা আমার ভাবনায় আসেনি।
মেঘ: ভুলেও কখনো আমার কাছ থেকে ভালোবাসা আশা করো না।
আমি: তা নাহয় চাইবো না কিন্তু একটা প্রশ্ন করতে পারি?
মেঘ: হুম বলো।
আমি: আমার দোষটা কোথায়? কেন করছ এসব? কেন কষ্ট দিচ্ছ আমাকে? কেন খেলছ আমার ইমোশন নিয়ে?
মেঘ: সেদিন যদি তুমি বিয়েতে রাজি না হতে তাহলে আজ আমি এতো যন্ত্রণায় পড়তাম না। আর এটাই তোমার সবচেয়ে বড় দোষ। শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি দাদির কাছে সব…
আমি: বিয়েটা কিন্তু আমি তোমার মেয়ের কথা ভেবেই করেছি।
মেঘ: তুমি রাজি নাহলে আমি তোহাকে ঠিক বুঝিয়ে নিতাম।
আমি: ওহ তাই বুঝি? ঠিক আছে আমি নাহয় তোমার থেকে দূরে সরে যাবো।
মেঘ: মানে?
আমি: চলে যাবো তোমাদের ছেড়ে খুশি?
মেঘ: যদি তোমার যাওয়াটা সম্ভব হতো তাহলে আমিই তোমাকে চলে যেতে বলতাম।
আমি: তুমি যেহেতু আমাকে মেনে নেওনি তাহলে তো একদিন আমাকে চলে যেতেই হবে, এভাবে তো সারাটা জীবন কাটানো সম্ভব না আর তোমার মতো মানুষের সাথে তো একদমই না।
মেঘ: এভাবেই থাকতে হবে এইটা জেনেই তো বিয়েটা করেছ আর আমি ভালো নাকি খারাপ সেটা বিচার করার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?
আমি: তোমার প্রতি আমার সব ধরণের অধিকার আছে বুঝেছ? আর এই অধিকার আমাকে কবুল শব্দটা দিয়েছে।
মেঘ: অধিকার অধিকার বলে কি বুঝাতে চাইছ? তোমার মর্যাদা চাই? আমাকে চাই আমার সঙ্গ চাই তাহলে চলো বিছানায়।
আমি: ছিঃ মেঘ তুমি এতো নিচ।
মেঘ: তোমাদের মেয়েদের সাথে নিচ হওয়াটাই উত্তম কাজ, তোমাদের ভালোবাসলে তোমরা পিছন থেকে চাকু মারতে দিদ্ধা করো না।
আমি: তুমি কিন্তু আবারো শায়লার সাথে সবাইকে গুলিয়ে ফেলছ।
মেঘ: আমার কাছে সব মেয়েই এক।
আমি: দ্যাত তোমার সাথে কথা বলে অযতা সময় নষ্ট হচ্ছে।
মেঘ: কথা বলতে বলেছে কে?
মা: মেঘ তোদের হলো অনেক দেরি হয়ে গেছে তো।
মেঘ: আসছি আম্মু।
মেঘ তোহাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল পিছু পিছু আমিও বেরিয়ে আসলাম।
আমাদের বিদায় দিতে ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে।সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতেই রুহান ডাক দিলো, উফফ পারিনা আর।
আমি: কি কিছু বলবে?
রুহান: আসবে কখন?
আমি: সেটা তো বাড়ির বড়দের জানার কথা তোমাকে কৈফিয়ত দিতে যাবো কেন?
রুহান: এভাবে কথা বলছ কেন?
আমি: তো কিভাবে বলবো? তুমি কি আমার স্বামী নাকি প্রেমিক যে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবো? অবশ্য তুমি আমার দেবর হয়ে যদি থাকতে তাহলে নাহয় একটু মিষ্টি করে কথা বলতাম। (ইচ্ছে করেই এভাবে কথা গুলো বললাম রুহান যেন আমাকে ভুলে গিয়ে পপির ভালোবাসা বুঝতে পারে)
চাঁচি: আমার ছেলে একটা কথা জানতে চেয়েছে মাত্র আর তুমি ওকে এতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলে।
দাদি: বৌমা তুমি কেমন মা রুহানকে একটু বুঝাতে পারো না, ওর তো বুঝা উচিত কণা এখন সম্পর্কে ওর ভাবি হয়।
মা: আহ থামবে তোমরা? ছেলে মেয়ে দুটু বের হবে এখন আর তোমরা ঝগড়া শুরু করে দিলে।
দাদি: যা তো দাদুভাই তোরা বের হ আর সাবধানে যাস।
মেঘ: হ্যাঁ আসছি।
গাড়িতে উঠে বসলাম, মেঘ আমার দিকে না তাকিয়ে সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতেই বললো…
মেঘ: তুমিও তো কম নাটক করো না দেখছি।
আমি: মানে?
মেঘ: এইযে রুহানের সাথে এতো সুন্দর অভিনয় করছ, খেলছ ওর ভালোবাসা নিয়ে।
আমি: রুহানের ভালোবাসা নিয়ে আমি খেলছি না, ওকে আমি অনেক বুঝিয়েছি তারপরও রুহান পাগলামি করলে আমার কিছু করার নেই।
মেঘ: আমিও তো তোমাকে বুঝাচ্ছি তারপরও শুনছ না কেন? কেন পাগলামি করছ?
আমি: কখন পাগলামি করলাম।
মেঘ: ওইযে…
আমি: হয়েছে আর একটা কথাও শুনতে চাই না।
মেঘ: হুম।
গাড়ি ছুটছে তার গন্তব্যের দিকে, জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছি। অপর জানালা দিয়ে বাবা মেয়ে এইটা ওইটা দেখে হাসছে। কিন্তু আমি ওদের সাথে হাসিতে যোগ দিতে পারছি না, এখনো কান্না থামছে না বারবার মনে হচ্ছে মেঘ আমার ইমোশন নিয়ে খেলা করেছে। একটা মানুষ কতোটা নিচে নামতে পারে আর এই কাজ করতে পারে ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।
বাসায় এসে গাড়ি থেকে নামতেই মেঘ ডাক দিলো।
আমি: কিছু বলবে?
মেঘ: তোমার বাবা মায়ের সামনে এমন কিছু করো না বা বলো না যাতে উনাদের সন্দেহ হয় আর আমার পরিবারে জানিয়ে দেয়।
আমি: পরিবারের সামনে এতো ভালো সাজার কি আছে যত্তোসব।
মেঘ: আমি মানুষ ভালোই তবে ভালো মানুষের সাথে ভালো আর খারাপ মানুষের সাথে খারাপ।
আমি: তারমানে আমি খারাপ?
আব্বু: কিরে তোরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
আমি: এইতো আব্বু আসছি।
আব্বু আম্মুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে আসলাম, পিছু পিছু মেঘও তোহাকে নিয়ে আসলো।
মেঘ: বাহ্ তোমার রুমটা তো খুব সুন্দর। (মেঘের সাথে কথা বলবো না ভেবে রেখেছি তাই কোনো উত্তর দিলাম না)
মেঘ: ফ্রেশ হব ওয়াশরুম কোনদিকে? (আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম, ও চলে যেতেই তোহার কাছে এসে বসলাম। তোহার দুগালে ধরে জিজ্ঞেস করলাম..)
আমি: আম্মু তুমি কার কাছে থাকতে চাও আব্বুর কাছে নাকি আমার কাছে?
তোহা: আমি তো দুজনকেই চাই।
আম্মু: তা আর সম্ভব না মা, আমি আর ফিরে যাবো না। তুমি আমার কাছে থাকো।
তোহা: না আমার আব্বুকেও চাই।
আমি: তাহলে তোমার আব্বুর কাছে চলে যাও।
তোহা: না আমার তোমাকেও চাই। (কান্না আটকাতে পারছি না তোহাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। এই মেয়ের জন্য দূরে সরে আসতে পারছি না আবার মেঘের এমন ব্যবহারের পর ওর কাছে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না)
মেঘ: তোহা তুমি কাঁদছ কেন? (মেঘের কথা শুনে তোহাকে ছেড়ে দিলাম, মেয়েটা কাঁদছে তাড়াতাড়ি ওর চোখের পানি মুছে দিলাম)
মেঘ: তোমার সাহস কি করে হয় আমার মেয়েকে কাঁদানোর?
আমি: মেয়ে কিন্তু আমারো আর মা কখনো সন্তানকে কাঁদাতে চায় না। তোহা আমাকে হারানোর ভয়ে কাঁদছে।
মেঘ: হুহ মা! (মেঘের ভেংচি যেন বুকের বাম পাশে এসে লাগলো, এতো ভালোবাসি তোহাকে কিন্তু মেঘ আমাকে তোহার মা ভাবতে পারছে না)
মেঘ: এই তুমি এত কাঁদতে পারো কিভাবে?
আমি: যখন ভালোবাসার মানুষ অবহেলা করবে তখন বুঝবে কান্না কিভাবে আসে। (মৃদু হেসে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)
আম্মু: কিরে ওখানে কেমন আছিস কিছুই তো বললি না, মেঘ তোকে মেনে নিয়েছে তো। (ভাত খাচ্ছিলাম আম্মুর কথায় ভাতের লোকমা আর মুখে দিতে পারলাম না, ভাগ্যিস মেঘ আগেই খেয়ে রুমে চলে গেছে। কিন্তু আম্মুকে কিভাবে বলি মেঘ যে আমাকে মেনে নেয়নি)
আম্মু: বিয়ের দিন মেঘ যা রাগ দেখিয়েছে আমার মনে হয় না মেঘ তোকে মেনে নিবে।
আমি: কি বলছ আম্মু এসব মেঘ তো আমাকে মেনে নিয়েছে আর ও বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ খুব ভালো আমাকে সবাই খুব ভালোবাসে।
আম্মু: মিথ্যে বলছিস নাতো?
আমি: মিমিমিথ্যে কেকেন বলবো? (মায়ের কাছে বোধহয় এতো সহজে মিথ্যে বলা যায় না তাইতো আমার গলা কাঁপছে)
আম্মু: তুই এখন আমার কাছে মিথ্যে বললেও একদিন তোর এসব কথাই সত্যি হবে এই বিশ্বাস তোর উপর আমার আছে।
আমি: হুম।
আব্বু: কণা খেয়ে একটু আমাদের রুমে আসিস তো।
আমি: ঠিক আছে আব্বু।
আব্বু আম্মুর সামনে বসে আছি আব্বুকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে জানিনা কি বলবে।
আব্বু: কণা আমি বলছিলাম সব সম্পত্তির উইলটা নতুন করে করতে।
আমি: ঠিক আছে করো আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে।
আব্বু: সবকিছু তোর নামে দিয়ে দিতে চাই তোর নামে থাকলেও দেখাশোনা তো মেঘই করবে তাই আমার কোনো টেনশন থাকবে না, মেঘ কিন্তু খুব ভালো ছেলে। (কতোটা ভালো সেটা তো শুধু আমিই জানি, অপদার্থ একটা)
আব্বু: কিরে কথা বলছিস না কেন, কি ভাবছিস?
আমি: আমাকে যখন জিজ্ঞেস করেছ আমি যা বলি মেনে নিবে?
আব্বু: মানবো না কেন বলে দেখ।
আমি: সব কিছু আমি তোহার নামে দিতে চাই। (আমার কথা শুনে আব্বু আম্মু দুজনই একে অপরের দিকে অবাক হয়ে তাকাচ্ছেন)
আম্মু: কণা তোর মাথা ঠিক আছে তো কি বলছিস এসব?
আমি: আম্মু আমি ভেবে চিন্তেই বলছি আর তোহার নামে থাকলেই তো এখন তোহার হয়ে যাবে না, তোহার আঠারো বছর পূর্ণ হবার পর তোহা পাবে এর আগে সবকিছু মেঘই দেখাশোনা করবে আর আব্বু তো চানই মেঘ সবকিছু দেখাশোনা করুক।
আব্বু: হ্যাঁ চাই তাই বলে তোহা…
আমি: তোহা আমার মেয়ে আর মায়ের সম্পত্তি মেয়েই তো পাবে।
আব্বু: তারপরও আর একবার ভেবে দেখ মা।
আমি: আমার সিদ্ধান্ত আমি তোমাদের জানিয়ে দিয়েছি এখন তোমাদের ইচ্ছা।
আব্বুর রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। সবকিছু তোহাকে দিয়ে দিবো, মেঘকে বুঝিয়ে দিবো তোহাকে আমি কতোটা ভালোবাসি, তোহার জন্য আমি কতোটা ভাবি।
দুদিন পর….
বাসায় ফিরে আসলাম মেঘের খারাপিও শুরু হয়ে গেল। সবার সামনে ভালো স্বামী আর রুমের মধ্যে বদের হাড্ডি একটা।
রুহান: কণা কথা ছিল। (আরেক পাগল এসে জুটেছে)
আমি: কি বলো।
রুহান: তুমি কি আমার কথা শুনবে নাকি আমি পাগলামি শুরু করবো?
আমি: তুমি ভালো ছিলে কবে সবসময় তো মানসিক রোগী হয়েই আছ।
রুহান: বেশি ভালোবাসি তো তাই আমাকে তোমার কাছে মানসিক রোগী মনে হয়।
আমি: এই শুনো আজকে থেকে তুমি আমাকে ভাবি বলে ডাকবে আর এসব ভালোবাসি ভালোবাসি যেন আর না শুনি।
রুহান: কণা প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো।
আমি: হাত ছাড়ো আমার, তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার হাত ধরার।
মেঘ: বাহ্ অফিস যাওয়ার সময় রুমে ফষ্টিনষ্টি।
আমি: মেঘ?
মেঘ: চিৎকার করছ কেন? আর রুহান ফষ্টিনষ্টি করার জায়গা কি আমার রুমেই?
রুহান: সরি ভাইয়া। (রুহান বেরিয়ে গেল। গেল তো গেল আমাকে খারাপ সাজিয়ে গেল)
মেঘ: আমার রুমে যেন আর কখনো এসব না দেখি, ফষ্টিনষ্টি করার ইচ্ছা থাকলে বাড়িতে আরো অনেক জায়গা আছে।
আমি: তোমার ভাই তোমার বউয়ের সাথে এমন করে কোথায় তুমি ভাইকে শাসন করবে তা না উল্টো আমাকে কথা শুনাচ্ছ।
মেঘ: কে আমার বউ, তুমি? তোমাকে তো আমি আমার স্ত্রী এর মর্যাদাই দেইনি তাহলে কিভ…
আমি: ব্যাস আর বলতে হবে না, তোমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে যাও।
মেঘ হনহন করে বেরিয়ে গেল। আর পারছি না সারাক্ষণ শুধু খারাপ ভাষায় কথা বলা, একটু ভালোভাবে কথা বললে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় নাকি?
রাত অনেক হয়েছে কিন্তু মেঘ ফিরে আসার নাম নেই। সবার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছি তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো। পপি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই মেঘ এসে ঢুকলো, আমার দিকে একনজর তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেল।
মা: কি হলো বলতো এভাবে রেগে চলে গেল কারো সাথে কোনো কথা বলল না।
দাদি: কিরে কণা বসে আছিস কেন রুমে যা, গিয়ে দেখ দাদুভাই রেগে আছে কেন।
আমি: হুম।
আমি: আহহ! (দরজায় আসতেই কি যেন একটা উড়ে এসে আমার কপালে পড়লো, অনেকটা জায়গা কেটেও গেছে। কপালে হাত দিয়েই নিচে তাকালাম, মেঘের জুতা)
মেঘ: সব দোষ ওই মেয়ের আজ তো ওকে আমি…(মেঘ আর একটা জুতা খুলে ছুড়ে দিতে দিতে দরজায় তাকালো, আমাকে দেখতে পেয়েই হনহন করে আমার কাছে আসলো)
মেঘ: এসো আমার সাথে।
আমি: আরে দরজা বন্ধ করছ কেন।
মেঘ: একদম চুপ।
আমি: আরে আস্তে চেঁচাও তোহা ঘুমে।
মেঘ: শুধুমাত্র তোমার জন্য আজ আমাকে সবাই এতো অপমান করল।
আমি: কে অপমান করেছে আর কেনই বা করেছে আমি তো তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।
মেঘ: আজ অফিসে সবাই বলেছে আমি নাকি তোমার বাবার সম্পত্তির লোভে তোমাকে বিয়ে করেছি। তোমার জন্য আমি এসব কথা কেন শুনবো?
আমি: এই কথা কে কে বলেছে?
মেঘ: বললে কি হবে? ওদের চাকরি খেয়ে ফেলবে?
আমি: যারা আমার স্বামীকে অপমান করেছে তাদের তো এমনি ছেড়ে দিবো না।
মেঘ: আসছে স্বামী বলতে কে তোর স্বামী? আমি… (আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর দিকে ফিরাতেই আমার কপালের দিকে ওর নজর পড়লো)
মেঘ: তোমার কপাল কেটেছে কিভাবে রক্ত ঝরছে তো।
আমি: ঝরতে দাও এটাই তো শুধু চোখে দেখতে পারছ ভিতরের রক্ত ঝরা তো কখনো দেখতে পারবে না।
মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, ওর হাতটা আমার কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত কোথাও আলোর রেখা নেই চারপাশ থেকে শুনশান শব্দ ভেসে আসছে শুধু। আমার চোখের পানি তো মেঘ কখনো দেখে না আর এই অন্ধকারে তো একদমই দেখবে না। কথা দিচ্ছি মেঘ
আজকের পর আর কখনো তোমার সামনে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করবো না। এখন থেকে নাহয় তোমার চোখের আড়ালে নীরবেই ভালোবেসে যাবো তোমাকে…
চলবে?