নীরবে_ভালোবাসি
পার্ট: ১৯
মেঘের বুকে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছি ও আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। কতো ঝর বয়ে যাচ্ছে আমাদের উপর দিয়ে শান্তিতে থাকার কোনো উপায় নেই। শায়লাকে পুলিশে দিতে পারলে হাফ ছেড়ে বাঁচতাম কিন্তু কোনো প্রমাণই তো পাচ্ছি না। প্রমাণ পাবোই বা কি করে শায়লা তো কোনো প্রমাণ রেখে কাজটা করেনি। এখন একমাত্র রাস্তা শায়লার হাজবেন্ডকে ধরে পুলিশে দিতে হবে আর ওর মুখ থেকেই সব সত্যি বের করতে হবে। মেঘের ফোন বেজে উঠলো, এতো রাতে ফোন আসাতে বেশ অবাক হলাম। কে ফোন দিলো? মেঘের বুকের উপর তুথুনি রেখে ওর দিকে তাকালাম, মেঘ ফোন রিসিভ করলো।
মেঘ: হ্যালো।
শায়লা: মেঘ কণা কোথায়? (শায়লা ফোন করেছে দেখে মেঘ সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো)
শায়লা: কি হলো কথা বলছ না কেন? কণা কোথায়?
মেঘ: কণাকে কি প্রয়োজন?
শায়লা: ওর ফোনটা ওর বোনের কাছে হসপিটালে রেখে এসেছে ওর কাছে তোমার ফোনটা দাও আমি কথা বলবো।
মেঘ: কণা এখন ব্যস্ত আছে কথা বলতে পারবে না।
শায়লা: কণা কোথায় সেটা বলো।
মেঘ: কোথায় আবার আমার বুকে ঘুমুচ্ছে।
শায়লা: উউউউহহহহ।
মেঘ: চিৎকার করো না ফোন রাখো।
শায়লা: কণাকে বলে দিও ও আমার লোককে পুলিশে দিয়ে ভালো করেনি, এর ফল ওকে ভোগ করতেই হবে। (শায়লা ফোন রেখে দিতেই মেঘ আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো)
মেঘ: কাকে পুলিশে দিয়েছ?
আমি: আসিফ এর বদলে যে মেয়েটি জয়েন করার মিথ্যে অভিনয় করেছিল।
মেঘ: তুমি জানতে এই কথা?
কণা: উঁহু সেদিন জেনেছি। কিন্তু তুমি তো জানতে আমাকে বলনি কেন?
মেঘ: কণা আমরা সবাই শায়লার জালে আটকা পরে আছি।
আমি: মানে?
মেঘ: আমি এসব বুঝতে পেরে তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু কে যেন ফোন করে আমাকে বলে তোমাকে কিছু জানালে তোমার আম্মুকে মেরে ফেলবে…
আমি: কি?
মেঘ: হ্যাঁ আর আমি নিশ্চিত এই লোকের কথামতো শায়লা সব করছে।
আমি: শায়লার হাজবেন্ড নয়তো?
মেঘ: হতে পারে।
আমি: কিন্তু আম্মুকে মারবে কিভাবে আম্মু তো কানাডায়?
মেঘ: তাতো জানিনা তবে লোকটার কথায় আমি সত্যি ভয় পেয়েছিলাম। টাকা নিয়ে গেলেই কি আম্মু ভালো থাকলেই তো হলো তাই তোমাকে বলিনি।
আমি: আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না কিছুই বুঝতে পারছি না।
মেঘ: এসব নিয়ে পরে ভেবো এখন একটু ঘুমাও তো।
আমি: হুম।
মেঘের বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ ঘুমিয়ে রইলাম।
সকালে মেঘের ডাকেই ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি মেঘ ওর ঠোঁট দুটু আমার ঠোঁটের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে আসছে। একটা আঙ্গুল ওর ঠোঁটে রাখতেই যেন ওর ঘোর কেটে গেল।
আমি: কি হচ্ছে?
মেঘ: প্লিজ!
আমি: উঁহু চলো হসপিটালে যেতে হবে।
মেঘ: যাবো তো প্লিজ একবার মিষ্টি দুটু খেতে দাও।
আমি: মেঘ না প্লিজ! (মেঘ মুখ গোমড়া করে বারান্দায় চলে গেল। আমি উঠে ফ্রেশ হতে চলে আসলাম)
ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় আসলাম মেঘ রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর বাইরে তাকিয়ে আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছে।
আমি: এতো কি ভাবছ? (মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রাখলাম। মেঘ আমার দুহাতের উপর ওর দুহাত রাখলো)
মেঘ: ভাবছি তোমার সুন্দর জীবনটা আমি কিভাবে একটু একটু করে নষ্ট করে দিচ্ছি।
আমি: মানে? (মেঘকে ছেড়ে দিয়ে ওকে আমার দিকে ফিরালাম)
মেঘ: বিয়েটা হয়তো একটা এক্সিডেন্ট ছিল কিন্তু তারপর থেকে তো তোমার জীবনে একটার পর একটা ঝর বয়েই যাচ্ছে আর এইসব হচ্ছে আমার জন্য। শায়লা তোমা…
আমি: এসব শায়লা করছে মেঘ, এতে তোমার দোষ কোথায়?
মেঘ: শায়লা আমার আগের স্ত্রী বলেই তো এমন করছে নাহলে তো ও তোমাকে চিনতো না।
আমি: তাই বলে তোমার দোষ হয়ে গেল?
মেঘ: হ্যাঁ শায়লা…
আমি: এসব বলছ আমাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাই না?
মেঘ: আরে পাগলী কাঁদছ কেন আর আমি তোমাকে দূরে সরিয়ে দিবো কেন?
আমি: হসপিটালে যাচ্ছি। (হনহন করে চলে আসলাম ওর সামনে থেকে)
গাড়িতে উঠে বসতেই মেঘ দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠলো। কিছুনা বলে চুপচাপ একপাশে এসে বসে পড়লাম।
মেঘ: আমার পাশে এসে বসো নাহলে গাড়ি চলবে না।
আমি: তোহা ঘুম থেকে জেগে আমাকে খুঁজবে তাড়াতাড়ি চলো।
মেঘ: বললাম তো আমার পাশে এসে না বসলে গাড়ি চলবে না।
আমি: লাগবে না তোমার যাওয়া সরো আমি ড্রাইভ করতে জানি। (মেঘকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলাম মেঘ আমাকে টেনে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো তারপর মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো)
মেঘ: সবসময় এতো রেগে যাও কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: আচ্ছা বাবা সরি আর কখনো এসব বলবো না।
আমি: মনে থাকে যেন।
মেঘ: থাকবে, এবার বলো শায়লার ব্যবস্থা কি করেছ? ওর জন্য তো আমরা শান্তিতে থাকতে পারছি না।
আমি: শায়লার হাজবেন্ডকে পুলিশে দিবো আর পুলিশ ওর মুখ থেকে সব সত্যি বের করবে তারপর শায়লাকে এরেস্ট করাবো।
মেঘ: শায়লার হাজবেন্ড?
আমি: হিহিহি..
মেঘ: হাসছ কেন?
আমি: হাসবো না শায়লা তো তোমাকে বলেছিল ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে আর তুমি সেটা বিশ্বাসও করে নিয়েছিলে।
মেঘ: আমি সত্যিই অনেক বোকা।
আমি: জ্বী এবার একটু তাড়াতাড়ি চলুন আমার মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
মেঘ: ওকে।
তোহা: নতুন আম্মু কোথায় গিয়েছিলে তুমি? (দরজায় আসতেই তোহা প্রশ্ন করলো, এবার মেয়েকে কি বলে বুঝাবো)
আমি: বাসায় মামুনি।
তোহা: তুমি খুব পঁচা আমাকে একা রেখে চলে গিয়েছিলে।
আমি: এইতো চলে এসেছি।
জোহা: মামুনি তোমার আম্মু তো তোমার আব্বুর রাগ ভাঙাতে গিয়েছিল হিহিহি।
আমি: এই চুপ কর।
জোহা: সত্যি বলেছি চুপ করবো কেন?
আমি: রুহান তোমরা বাসায় চলে যাও আমি আর মেঘ আছি এখানে।
রুহান: ডক্টর বললো বিকেলে তোহাকে রিলিজ করে দিবে তখন নাহয় সবাই একসাথে বাসায় যাবো।
জোহা: হ্যাঁ এটাই ভালো হবে আর ততক্ষণে আপু তুমি তোমার কাজটা সেরে পেলো।
আমি: কি কাজ?
জোহা: শায়লার হাজবেন্ড এর ঠিকানা এখন আমাদের হাতে।
আমি: তাহলে তোমরা এখানে থাকো আমি আর মেঘ আসছি।
জোহা: ঠিক আছে।
রুহান: আমি আসবো?
মেঘ: না তুই এদিকে থাক।
রুহান: ঠিক আছে।
চাঁচির পাঠানো ঠিকানায় পুলিশ নিয়ে মেঘ আর আমি আসলাম কিন্তু বাসায় তো তালা দেওয়া।
মেঘ: কণা এই ঠিকানা ভুল নয়তো?
আমি: ভুল হবে কিভাবে? আচ্ছা তালাটা ভেঙে ফেলো ভিতরে গিয়ে দেখি। (পুলিশ তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকলো কিন্তু পুরো বাসা খালি। আশ্চর্য চাঁচি কি আমাকে ভুল ঠিকানা দিলো)
মেঘ: এইটা ভুল ঠিকানা আমি নিশ্চিত।
আমি: নিজের ছেলের এই অবস্থা দেখে ভুল ঠিকানা দেওয়ার সাহস চাঁচির হবে না। তুমি এখানে থাকো আমি আসছি।
মেঘ: উপরে যাচ্ছ কেন?
পুরো বাসা ঘুরে দেখতে দেখতে বেড রুমে এসে ঢুকলাম, যা খুঁজছি তা বেড রুমে পাওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি।
মেঘ: কি খুঁজছ বলতো?
আমি: ছবি।
মেঘ: কার?
আমি: এইতো পেয়ে গেছি।
মেঘ: এইটা তো শায়লা…
আমি: হ্যাঁ পাশে এই লোক তারমানে এইটাই শায়লার হাজবেন্ড।
মেঘ: হুম।
আমি: চলো।
আমি: এই লোককে যেখানে পাবেন এরেস্ট করবেন।
পুলিশ: কিন্তু…
আমি: চাচ্চুকে ফোন করতে হবে নাকি?
পুলিশ: না না আমরা ওকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
আমি: ঠিক আছে।
আবার হসপিটালে ফিরে আসলাম। এভাবে ব্যর্থ হবো ভাবতেও পারিনি। কিন্তু একটা জিনিস আমার মাথাতে ঢুকছে না রুহানের এই অবস্থা দেখেও চাঁচি ভুল ঠিকানা দিলো নাকি? যদি সঠিক ঠিকানা দিয়ে তাকে তবে কি শায়লা কোনো চালাকি করেছে? শায়লার কথা ভাবতে ভাবতেই শায়লা ফোন দিলো।
আমি: হ্যালো।
শায়লা: আমাদের ধরা এতো সহজ না।
আমি: মানে?
শায়লা: ইকবালকে এরেস্ট করাতে গিয়েছিলি পেরেছিস?
আমি: তারমানে আমার ধারণা ঠিক এইসব তোর চালাকি।
শায়লা: হ্যাঁ তুই বাসা থেকে বেরুনোর পর পরই আমি ইকবালকে ফোন করে ওই বাসা থেকে সরে যেতে বলি তা…
আমি: এসব খবর চাঁচি দিচ্ছে তাই না?
শায়লা: তুই খুব চালাক জানিস তো…
আমি: তোর পাখনা আমি ভাঙবো চাঁচিকে পুলিশে দিয়ে, অনেক বার সাবধান করেছি এই মহিলাকে আর নয়।
শায়লা: ইকবালকে খুঁজার চেষ্টা করিস না বার বার ব্যর্থ হবি সফল হতে পারবি না কখনো।
ফোনটা কেটে দিলাম, চাঁচিকে তো আজ আমি শাস্তি দিবো অনেক বেড়েছে এই মহিলা।
আমি: রুহান আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমার আম্মুকে পুলিশে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার কাছে। (তোহার পাশে বসতে বসতে কথাটা বললাম সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
পপি: ভাবি এসব তুমি কি বলছ? হ্যাঁ মানছি উনি ভুল করেছেন তাই বলে নিজের মানুষকে জেলে…
আমি: উনার ভুলটা এখন অপরাধে রূপ নিয়েছে পপি তাই উনার শাস্তি প্রয়োজন।
রুহান: নতুন করে আবার কিছু করেছেন?
আমি: হ্যাঁ আমি আর মেঘ বাসা থেকে বেরুনো মাত্রই উনি শায়লাকে ফোন করে সব বলে দিয়েছেন। আর শায়লা ওর হাজবেন্ডকে ওই বাসা থেকে সরিয়ে ফেলেছে নাহলে আজ নিশ্চিত ইকবালকে ধরা যেতো। শুধুমাত্র চাঁচির কারণে আমি আব্বুর খুনিদের শাস্তি দিতে পারছি না।
রুহান: যদিও ছেলে হয়ে কথাটা বলতে কষ্ট হচ্ছে তাও বলছি আম্মুকে তুমি পুলিশে দিয়ে দাও যদি নিজেকে একটু শুধরে নিতে পারেন তখন নাহয়…
আমি: তখন আমি নিজেই উনাকে সসম্মানে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আসবো রুহান।
রুহান: (নিশ্চুপ)
জোহা: তোহাকে নিয়ে আগে বাসায় যাই তারপর চাঁচির ব্যবস্থা করো।
আমি: হুম।
বিকেলে তোহাকে রিলিজ করে দিলো, সবাই তোহাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। আসার পথে পুলিশ আঙ্গেলকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেছি কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো চলে আসবেন।
মা: তোরা সবাই চলে এসেছিস?
পপি: মা চাঁচি কোথায়?
মা: রুমেই আছে কেন কিছু হয়েছে? (সবাই নিশ্চুপ হয়ে আছে। রুহান চুপচাপ সোফায় বসে পড়লো। পুলিশ আঙ্গেলকে ফোন দেওয়ার পর থেকে মেঘ চুপচাপ হয়ে গেছে কোনো কথা বলছে না আমার সাথে)
আমি: জোহা তোহাকে নিয়ে তুই রুমে যা।
জোহা: ঠিক আছে আপু।
মেঘ: কণা বলছিলাম…
চাঁচি: রুহান বাবা তুই ঠিক আছিস তো? (চাঁচি দৌড়ে এসে রুহানকে জড়িয়ে ধরলেন)
রুহান: ছাড়ো আমাকে।
চাঁচি: এই বদমাইশ মেয়ে তোকে আটকে রেখেছিল তোর কোনো ক্ষতি করেনি তো? তুই আসলি কিভাবে?
রুহান: আমার সাথে তো পপিকেও আটকে রেখেছিল আম্মু কই পপিকে তো কিছুই জিজ্ঞেস করলে না।
চাঁচি: আগে আমার ছেলে বুঝেছিস?
দাদী: কিরে কি হয়েছে কে কাকে আটকে রেখেছিল?
চাঁচি: কে আবার তোমার আদরের নাতবৌ আমার ছেলেকে আটকে রেখেছিল।
আমি: দাদী চাঁচিকে একবার জিজ্ঞেস করুন তো এসব আমি কেন করেছিলাম। (কলিংবেল বেজে উঠলো, দরজা খুলতে আমিই আসলাম)
দরজা খুলে পুলিশ আঙ্গেলকে দেখতে পেলাম। আঙ্গেল ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে চারদিকে চোখ বুলালেন।
আঙ্গেল: কণা মা কেমন আছ?
আমি: এইতো ভালো।
চাঁচি: বাসায় পুলিশ কেন? (ভয়ে আতকে উঠলেন চাঁচি)
রুহান: তোমার শাস্তি প্রয়োজন আম্মু অনেক পাপ করেছ।
চাঁচি: ওহ ওই বজ্জাত মেয়ের সাথে তুই যোগ হয়েছিস? তাহলে তো আমার ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে। (কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই চাঁচি টেবিল থেকে ফল কাটার চাকুটা হাতে নিয়ে পপির গলায় ধরে ফেললেন)
আমি: আরে চাঁচি কি করছেন?
মা: কি করছ পাগল হয়ে গেছ আমার মেয়েকে ছাড়ো।
চাঁচি: জেলে যখন যেতেই হবে আমার শত্রুর মেয়েকে শেষ করেই যাবো।
রুহান: আম্মু পপি শুধু তোমার শত্রুর মেয়ে না আমার স্ত্রী ছাড়ো বলছি ওকে।
চাঁচি: ছাড়বো আমাকে যেতে দাও তাহলে।
মেঘ: কণা আমি তোমার কাছে হাত জোড় করছি চাঁচিকে যেতে দাও আমার বোনকে বাঁচাও।
দাদী: অনেক্ষণ ধরে তোমার বদমাইশি দেখছি ছোট বৌমা ছাড়ো বলছি পপিকে।
চাঁচি: বললাম তো আমাকে যেতে দাও…
আঙ্গেল: আপনার মতো খারাপ মানুষকে সামলানোর জন্যই তো আমরা। (পুলিশ আঙ্গেল চাঁচির হাত ধরে ফেললেন, চাঁচি ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে পপির হাতে চাকু লাগিয়ে দিলেন। পপির হাতের শিরা কেটে গেছে হয়তো, ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে ওর হাত থেকে)
রুহান: পপি…
মেঘ: বলেছিলাম তোমাকে চাঁচিকে ছেড়ে দাও শুননি, আমার বোনের কিছু হলে কিন্তু… (মেঘ আমাকে শাসিয়ে পপির কাছে চলে গেল)
আঙ্গেল: আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি মেয়েটাকে হসপিটালে নিয়ে যাও ভয় নেই সব ঠিক হয়ে যাবে। (আঙ্গেল চলে যেতেই পপির কাছে আসলাম এখনো ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে)
মা: ওকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চল।
পপিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে সবাই বাইরে অপেক্ষা করছি। আমার খুব ভয় হচ্ছে যদি পপির কিছু হয় আমাকে মেঘ কখনো ক্ষমা করবে না। কিন্তু আমারই বা কি করার ছিল চাঁচি এতো নিচে নেমে যাবে আমি তো ভাবতেই পারিনি।
সবাই কাঁদছে আমি একা একটা চেয়ারে চুপচাপ বসে আছি এমনটা হবে কল্পনাও করতে পারিনি।
রুহান: ডক্টর আমার পপি.. (হঠাৎ রুহানের কথা শুনে পিছনে তাকালাম ডক্টর বেরিয়ে এসেছে)
ডক্টর: চিন্তার কোনো কারণ নেই.. (ডক্টর এর কথা শেষ হবার আগেই রুহান দৌড়ে কেবিনের ভিতর ঢুকে গেল। মেঘ দরজা থেকে পপিকে এক নজর দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসলো)
মেঘ: কণা সরি আসলে তখন মাথা ঠিক ছিল না তাই উল্টাপাল্টা কত কিছু বলে ফেলেছি তোমাকে।
আমি: এমন পরিস্থিতিতে কারো মাথা ঠিক থাকে না মেঘ। বিশ্বাস করো আমি ভাবতে পারিনি চাঁচি এতো নিচে নেমে যাবেন আর এমন জঘন্য কাজ করবেন।
মেঘ: চাঁচি আমাদের এতো ঘৃণা করেন আর আমরা কিনা বুঝতেই পারিনি।
আমি: মেঘ তুমি কিন্তু এখনো আমাকে বলনি তুমি চাঁচি আর রুহানের কাছে কিসের ঋণী।
মেঘ: ছোটবেলায় খেলতে খেলতে বাসার বাইরে রাস্তায় চলে গিয়েছিলাম। তখন তেমন কিছু বুঝতাম না কিন্তু সেদিনের সেই স্মৃতি আজো মনে পড়ে আমার। মাঝ রাস্তায় হাটছিলাম সামন দিক থেকে গাড়ি আর পিছনে চাচ্চু। চাচ্চু বারবার বলছিলেন সরে যেতে কিন্তু ছোট ছিলাম তো চাচ্চু বুঝতে পেরেছিলেন সরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আর তাই চাচ্চু দৌড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন আর নিজে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যান… (মেঘ হাউমাউ করে কাঁদছে কি বলবো ওকে বুঝতে পারছি না)
মেঘ: এই দৃশ্য মাঝেমাঝে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে বিশ্বাস করো কণা তখন আমার গা শিউরে উঠে। সেদিন চাচ্চু মারা যান, রুহান তখন খুব ছোট। আব্বু রুহান আর চাঁচির দায়িত্ব নেন। আমরা সবসময় চাঁচি আর রুহানকে ভালোবেসেছি কিন্তু চাঁচি যে সেদিনের ঘটনার জন্য আমাকে দায়ী ভাবেন সেটা কখনো বুঝতে পারিনি।
আমি: হুম আর এজন্যই চাঁচি তোমাদের শত্রু ভাবেন আর তাই এতোকিছু করেছেন, বারবার তোমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন আর আজ তো পপিকে…
মেঘ: চলো পপির কাছে।
পপি শুয়ে আছে পাশের চেয়ারে রুহান বসে বসে কাঁদছে, একটু দূরে মা আর দাদী বসে আছেন।
আমি: রুহান যা হয় ভালোর জন্যই হয় তা আজ আবার প্রমাণ হয়ে গেল। (আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো)
রুহান: মানে?
আমি: পপির আজ এ অবস্থা হয়েছে বলেই তো পপির প্রতি তোমার ভালোবাসাটা প্রকাশ পেলো।
রুহান: (নিশ্চুপ)
আমি: এভাবে মানুষ প্রিয়জনের জন্যই কাঁদে রুহান।
পপি: ভাবি…
আমি: পপি তুমি চুপ থাকো। রুহান এখন তো আর অস্বীকার করতে পারবে না যে তুমি পপিকে ভালোবাস না।
রুহান: (নিশ্চুপ)
আমি: এখন কিন্তু আর নিশ্চুপ হয়ে থাকাটা মানায় না। (রুহান সবার দিকে তাকালো ও হয়তো মা’কে দেখে লজ্জা পাচ্ছে)
মা: চলুন মা আমরা ডক্টর এর সাথে কথা বলে আসি।
মা আর দাদী বেরিয়ে যেতেই রুহান পপির কপালে চুমু খেলো।
রুহান: ভালোবাসি। (পপি মৃদু হেসে রুহানের হাত ধরলো)
মেঘ: এইযে মেডাম আমিও কিন্তু আপনাকে ভালোবাসি।
মেঘ ওদের সামনেই আমার দুগালে ধরে কপালে আলতো করে চুমু খেলো, লজ্জায় মেঘের বুকেই মুখ লোকালাম…
চলবে?