নীরবে নীরবে পর্ব ২…
সেই মাতাল করা প্রিয় গন্ধ পেয়ে দিলু বুঝতে পারল, সাখাওয়াত ফিরে এসেছে। দিলু কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রইল। কিন্তু কিছু হচ্ছে না। ইশ, সে কি তার চোখের পানি দেখে ফেলেছে? সে চায় না লোকটি তাকে ভীতু ভাবুক। সে কখনও শাস্তি পাওয়ার কথা ভেবে কাঁদেনি। আজ তো কিছু স্মৃতিই তাকে কাঁদিয়েছে।
দিলুর গালে সাখাওয়াতের আঙুলের ডগার আলতো স্পর্শ পেয়ে সে শিউরে উঠল। সাখাওয়াত তাকে ছুঁয়েছে! অবিশ্বাসের সাথে আরও ছোঁয়া পাওয়ার জন্য টাইয়ের নিচে থাকা বন্ধ চোখগুলো আরও ব্যাকুল হয়ে উঠল। তার শ্বাস ভারী হয়ে আসছে। সেই একুশ বছরের লাজুক ছেলেটি কি তবে ফিরে এসেছে এই কঠোর লোকটির মাঝে? সে কি একটু তাকে জড়িয়ে ধরতে পারবে? কিন্তু মনে হচ্ছে, অতিপরিচিত এই আঙুলটি একটুও কাঁপছে না।
আরেকটা মৃদু কোমল ছোঁয়ায় দিলুর হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেল। নিশ্চিত, সাখাওয়াত এবার তার গালে ঠোঁট ছুঁইয়েছে। দিলু পাগলের মতো অন্ধদৃষ্টিতে ওই ঠোঁটগুলো খুঁজে বেড়াচ্ছে। দিলুকে এভাবে দেখে সাখাওয়াত আস্তে করে চড় বসিয়ে তার মুখটা সরিয়ে দিলো।
“আমি চাই না, এখানে চোখের পানি থাকুক। এমনকি কোনো ধরনের পানি থাকা চাই না..”
দিলু কিছু বুঝতে পারল না। তবে আঁচ করতে পারছে, সাখাওয়াত শয়তানি হাসি হাসছে। খেয়াল করল, তার মুখটা এখন শুকনো। চোখের পানিই বুঝি ও মুছে দিয়েছিল।
“কারণ আমি এখন পানি..”
হঠাৎ আচমকা একটা কাণ্ডে দিলু শ্বাস-প্রশ্বাসই বন্ধ হয়ে এলো। ভেতরে আটকে পড়ে বাতাস বের হতেও মুহূর্ত লেগে গেছে। দিলু মুখ হা করে রয়েছে। সে ভাবেইনি সাখাওয়াত এমনটা করতে পারে। সে এই রাতে এই আবহাওয়ায় তার গায়ের উপর ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছে। অকস্মাৎ ঘটা ব্যাপারটা বুঝে উঠতেও দিলুর সময় লেগে গেল।
“তুমি যখন ভিজে যাও, তখন তোমাকে খুব সুন্দর দেখায় ডার্লিং।”
এই কথাটা সে আগেও সাখাওয়াতের মুখে শুনেছে। চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায়ও সে বুঝতে পারছে, পরম তৃপ্তি নিয়ে সে এই কথাটা বলেছে।
দিলু বলল, “আমি বাসায় যাব।”
হঠাৎ দিলুর এই কথা সাখাওয়াতকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেয়। আগে কতবারই না সে তাকে শাস্তি দিয়েছে। আজ আবার কী হয়েছে? সে কথাটা এডজাস্ট করে নিতে পারল না। তাছাড়া রাত অনেক হয়েছে। নিজের শোয়া উচিত। এখন আর কোনো শাস্তির কথা মাথায় আসছেও না সাখাওয়াতের। অগত্যা টুপ টুপ করে পানি ফেলে দ্রুত দিলু উপরে উঠে যায়। পেছনে সাখাওয়াত ঢুলো ঢুলো হয়ে ঘরে ঢোকে। এরপর সে কোনো নোটিশ ছাড়াই ধপাস করে বিছানায় পড়ে ঘুমিয়ে কুপোকাত। বাথরুম থেকে দিলু এসে দেখে লোকটি ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
সে এসে আলতোভাবে তার জুতোজোড়া খোলে নেয়। একটা বালিশ টেনে এনে তার মাথার নিচে সে গুঁজে দেয়। আজ লোকটি খুব তাড়াতাড়িই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নইলে তার শাস্তিগুলো সারারাত চলতে থাকে। বিছানা থাকতে কখনও দিলুকে মেঝেতে ঘুমোতে আদেশ দিয়ে, আর কখনও সাখাওয়াতের মন পাল্টালে সারারাত তাকে বেলকনির পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে। তবে একটা ব্যাপার হলো, যদিও দিলু কখনও রাতে এই বিছানায় ঘুমোতে পারেনি, কিন্তু মেঝেতে থাকার বেলায় সাখাওয়াতও কখনও বিছানায় ঘুমোয়নি। কেবল সেদিনই ঘুমোয়, যেদিন দিলুকে বেলকনির সাথে বেঁধে রাখে। লোকটিকে সে বুঝে উঠতে পারে না।
তার গায়ের উপর সে একটি কম্বল জড়িয়ে দিলে সাখাওয়াত ঘুমের মধ্যেই একটু উম করে গুঙিয়ে উঠল। সে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে চেয়ে পরক্ষণে নিজেকে সংবরণ করে নেয়। লোকটি তার ছোঁয়া পছন্দ করে না। এমনকি সেও দিলুকে সহজে ছোঁয় না। অদ্ভুত লোকটা। সাইকো একটা।
কিন্তু.. যে স্মৃতি আজকে দিলুকে নাড়িয়ে দিয়েছে, সেই স্মৃতিই বলে লোকটি এমনটা হয়েছে। আগে তো ছিল না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিলু মেঝেতে নেমে খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে। আজ পঁচিশদিনেরও বেশি হয়েছে সে এখানে এসেছে। অথচ তারা একটিবারের জন্যও সেই ভালোবাসা মাখা দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকায়নি, যে দৃষ্টির প্রভাবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। তার মনের পর্দায় আবারও সেই আকর্ষণীয় দুই চোখ ভেসে উঠে। দিলুর বুক ফেটে কান্না আসে। খেয়ালও করেনি সাখাওয়াতের পায়ের সাথে তার মাথা লেগে আছে।
বৃষ্টির দিন। বৃষ্টি থামতেই দিলু বেরিয়ে পড়ে। দিলুর স্কুলে যাওয়ার পথে একটা জুতোর তলা ছিঁড়ে যায়। বাকিটা পথ তার এক পা টেনে টেনে যেতে হলো। বড় বিরক্তিকর। স্কুলে যাওয়ার মূল রাস্তায় উঠে তার স্বস্তি হয়। সকালটা সেদিন খুব সুন্দর ছিল। বৃষ্টির পড়ার দরুন নয়টার সময়কেও শান্ত ভোর সকাল মনে হচ্ছে। গাড়ি আসতেই রাস্তায় দল বেঁধে থাকা ময়নাপাখির ঝাঁক ডানার ফতফত আওয়াজ করে উড়ে গেল। একটা বাস এসেছে। কন্ডাক্টর নেমে বাসের গায়ে ধামধাম বাড়ি দিয়ে মানুষ ডাকছে। দিলু চোখ তোলে তাকিয়ে দেখে তার সামনের দোকানেই ওই ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে সবসময়ের মতোই কালো একটা মাস্ক। এই ছেলেটি নিজেকে আড়াল করতে চায়, নাকি অন্য কোনো সমস্যায় মাস্কটা পরে দিলু জানে না। প্রতিবারের মতোই ছেলেটি বাসে উঠে। দিলু কয়েক সেকেন্ড ছেঁড়া জুতো নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে বাসের দরজার দিকে একনজরে চেয়ে রইল। ছেলেটি দরজার কাছে উঠে পেছনে ঘুরে তাকায়, যেন আগে থেকেই জানত দিলু আসবে। সেই পরিচিত চোখগুলো দেখে দিলুর মন কৌতূহলী হয়ে পড়ে। ছেলেটি কি তাকে চেনে? কিন্তু এমনও হতে পারে, বাসে উঠার পর প্রতিদিন ফিরে রাস্তার দিকে তাকানো তার অভ্যাস। এই ভেবে দিলু হাঁটার গতি বাড়ায়। কিন্তু কন্ডাক্টরের উঁচু গলার ডাক আবারও তাকে একই ব্যাপারে কৌতূহলী করে তোলে। এই কৌতূহলের ফলেই দিলু পেছনে ফিরে তাকায়। ছেলেটিকে সে দেখতে পাচ্ছে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সাদা শার্ট গায়ে, মুখে কালো একটা মাস্ক, এক ঘাড়ের উপর কালো একটা মোটা ফিতা, যেটা ওই ছেলেটির ল্যাপটপের ব্যাগের মতো লম্বা হাতলের ব্যাগের। সবই ঠিক আছে। কিন্তু দিলু ঘুরে হাঁটা শুরু করলে মনে একটা সংশয় জাগে। ছেলেটি কি এতক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে হাসছিল? দিলু ওইদিকে তাকানোর পরই কি অন্যদিকে ফিরে গিয়েছে? মাস্কের প্রতি তার খুব ঘৃণা জাগে। ওটাই সব সংশয়ের মূল।
সকালের আজানের আওয়াজ শোনে দিলুর ঘুম ভেঙে যায়। নিচে থেকেছে তা আবিষ্কার করার আগেই লক্ষ করে তার গায়ের উপর একটি কম্বল আছে। বিছানায় তাকিয়ে দেখে সাখাওয়াত নেই। পরক্ষণে কম্বল দেখে ভাগে গতরাত কাঁদতে কাঁদতে ওর মাথা সাখাওয়াতের পায়ের দিকে হেলিয়ে পড়েছিল, যার ফলে সকালে ওর গায়ের কম্বল নিচে দিলুর উপর পড়ে যায়। এই একটা কারণই হতে পারে। তবু কেন মনে হচ্ছে কম্বলটা সাখাওয়াতই দিয়েছে? না না।
ততক্ষণে সাখাওয়াত বাথরুম থেকে এসে আবারও বিছানায় ধপ করে শোয়।
“এই নামাজ পড়তে উঠুন।”
“জ্বালিয়ো না তো। ঘুমোতে দাও।”
“উঠেছেনই যখন, নামাজটা পড়ে ফেলুন।”
“তুমি এতো পেইন কেন? আমি নামাজ পড়ব না। গেট লস্ট।”
“এখনই উঠুন।”
এই জায়গায় সাহসের কথা ভাবতে হয় না। দিলু নির্বিঘ্নে সাখাওয়াতকে কাঁধ ধরে বসিয়ে দেয়।
“উঠুন, অজু করে নিন।”
আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। নামাজ পড়তে ইচ্ছে না হলেও আল্লাহর কাজের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা যায় না। দাঁত কিড়মিড় করে সে উঠে পড়ে। নামাজ পড়ে গত কয়েকটা দিনের মতোই সে আর ঘুমাল না। বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। এদিকে দিলু আমজাদের কাছে যায়। বৃদ্ধ সবল এই লোকটির দুর্বলতা এখন অনেক বেড়েছে। দিলুর কাছে তাকে ধরে গরম পানি দিয়ে অযু বানাতে নিতে হয়, এরপর নামাজের জায়গায় বসিয়েও দিতে হয়। কিন্তু তাঁর মুখ দেখে এসব দুর্বলতা টের পাওয়ার অবকাশ নেই। তাঁর মুখ সবসময়ের মতোই কঠিন, অনেক সবলতা লুকিয়ে রেখেছে। আর ব্যাটা যেমন, বাপও তেমন।
.
সাখাওয়াত অফিসে যাওয়ার পর দিলু নিত্যদিনের কাজে হাত দেয়। সকালে সে একটা টিউশানিও করায়। কিন্তু এর অধিক নয়। সে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারেনি। তবু কেবল মাধ্যমিক পর্যন্ত যোগ্যতা রাখার ফলে প্রতিবেশী এক ভাড়াটে নিজ থেকে তার বাচ্চা ছেলেকে পড়াতে বলে। তাকে পড়িয়ে সে বাকি কাজ করতে থাকে। কাজ কম, কিন্তু শূন্যতা বেশি। কাজ শেষে সে বেলকনির কাছে এসে দাঁড়ায়। রডগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে তার কাছে রাতের ওর “সুইট অত্যাচারের” কথা মনে পড়ে। অন্তত ওরকম অত্যাচার সে চব্বিশ ঘণ্টা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। এটা সাখাওয়াত কখনও বুঝতে পারবে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিলু দেখে তাদের বিল্ডিঙের সামনের মাঠে কিছু ছেলে ফুটবল খেলছে। ওপাশের দূরের বিল্ডিংয়ের একটা অবয়বকে দিলু চিনতে পারল। ওখানে একটি মেয়ে রীতিমতো বসে কফি খাচ্ছে। তাদের প্রায়ই চোখাচোখি হয়, কিন্তু কখনও একে অপরকে হাত দেখায়নি। হয়তো বা একে অপরের কাছে তারা অপরিচিত থাকতে চায়। বেলকনিতে এলে মেয়েটি প্রায়ই তার দিকে তাকায়। সে কি দিলুর জন্য সহমর্মিতা অনুভব করে? দিলুর কাছে এমনটাই মনে হয়। কারণ মাঝে মাঝে রাতের বেলায় সাখাওয়াতের মেজাজ অতিরিক্ত উত্তপ্ত হলে সে দিলুকে শাস্তি দেওয়ারও ক্ষমতা রাখে না, হাত ধরে টেনে বেলকনিতে তাকে এনে দরজা বন্ধ করে চলে যায়। সেসময় দিলুর নজর ওই বিল্ডিংয়ের বেলকনিটির দিকে পড়ে, যেখানে নিশ্চিতভাবেই মেয়েটি তার দিকেই তাকিয়ে থাকে। তার বুঝি এই ড্রামা খুব ভালো লাগে? কলিং বেলের আওয়াজে দিলুর চিন্তার রেলগাড়ি থেমে যায়। কে আসতে পারে?
সে আঁচল দিয়ে নিজেকে ভালোভাবে ঢেকে দরজা খোলে। পরক্ষণে থমকে দাঁড়ায়।
“দিলু, আসতে পারি?”
“হ-হ্যাঁ।” দিলু এখনও শকড।
রাগিব ভেতরে ঢুকে বলে, আব্বা কই?
“রুমে পেপার পড়ছে।”
রাগিব নিঃশব্দে সোফায় বসে। সে জানে, তার আব্বা এখন কানেও কম শোনে। ভালোই হলো, রাগিবের উপস্থিতি টের পাবে না।
“আমার কিছু লাগবে না। তুমি এখানে বসো।”
দিলু বসে। “কেউ কি জানে আপনি এখানে এসেছেন?”
“তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন?”
দিলু অন্যদিকে তাকায়। লোকটা কি সামান্য কারণটাও বুঝতে পারছে না? রাগীবকে কি আর আগের মতো ফ্রেন্ড হিসেবে ভাবা যায়?
“তোমার কথা খুব করে মনে পড়ছিল তাই চলে এসেছি।”
তারা বেশ কিছুক্ষণ নীরব রইল।
“লাভলী কেমন আছে?”
রাগীব ভূত দেখার মতো করে চমকে উঠে তার দিকে তাকায়।
দিলু ভ্রূ কুঁচকিয়ে বলে, “আপনি কি এখনও ওর সাথে যোগাযোগ করেননি?” তার বাকরোধ হয়ে আসে, “মানে.. মানে আপনি এতদিন পর আমাকেই সর্বপ্রথম দেখা দিয়েছেন?” সে চোখ বড় করে তাকায়।
“হ্যাঁ।”
“হ্যাঁ মানে? আপনার উচিত আগে পরিবারের সবাইকে দেখা দেওয়া।”
রাগীব তার একটা হাত ধরে ওদিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আমার অতি নিকটের একজন ছিলে। তোমার কি মনে নেই আমরা কেমন বন্ধু ছিলাম?”
সে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কঠিন কণ্ঠে বলল, “আপনার এখানে আসা উচিত হয়নি। আমার স্বামী মাইন্ড করতে পারেন। আর ভদ্রভাবে বলছি, লজ্জা থাকলে পরস্ত্রীর সাথে এমন কথাবার্তা বলতে যাবেন না।”
ভ্রূ কুঁচকিয়ে রাগীব তার দিকে তাকালো।
“আমি কিন্তু জানি ভাইয়ার সাথে তোমার এখনও জমছে না। ওরকম একটা আধ-পাগলের সাথে তুমি সংসার করতে চাও?”
“কী বলছেন আপনি?”
“ঠিকই বলছি। সময় এখনও আছে। আমার কাছে চলে আসো দিলু। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসা দেবো।”
দিলু তার গালে চড় দিতে গিয়েও থেমে যায়। কোনোভাবে সে নিজের রাগকে সংবরণ করে বলল, “যদি পুরুষ হয়ে থাকেন, তবে মুখ লুকিয়ে আর না থেকে যে পাপটা করেছেন, তা ফেস করুন। অযথা আরেকটা পাপে জড়াতে যাবেন না। আর আপনার এই মুখ আমি আর কখনও দেখতে চাই না।”
সে হনহন করে হেঁটে নিজ ঘরে চলে এলো। এরচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আর কী হতে পারে? এমন সময় হুমায়রাও ফোন করল, টাকা পাওয়ার সুবাদে ধন্যবাদ দিতে এবং সে কেমন আছে জানতে।
দিলুর সিঁদুরমেঘ দেখা দিলো। সাখাওয়াত আসতেই তড়িদগতিতে এসে খপ করে দিলুর হাত ধরে তাকে টেনে বেলকনিতে নিয়ে যায়, পাছে তার আব্বা তাদের আওয়াজ না শোনে।
“তুমি.. তোমার এতো বড় সাহস তুমি লাইন মারছ? তাও আমার ভাইয়ের সাথে?”
সাখাওয়াত তার গালে একটি চড় বসিয়ে দেয়। তাকে কি দারোয়ান রাগীব ভাইয়ের কথা বলেছে?
“কী? জবাব দিস না কেন? আমার ভাইয়ের সাথে তোর কী সম্পর্ক?”
“আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
সে তার চুলের মুঠি ধরে বলল, “আমাকে শেখাস? আমি বুঝি না? আমি বিশ্বাস করব?”
“ঠিক যেভাবে আমি বিশ্বাস করি, আপনি আপনার কলিগ অহনার সাথে ডেটে যান।”
সাখাওয়াতের হাত নম্র হয়ে আসে। মুখ হা হয়ে যায়। মেয়েটি কীভাবে জেনেছে?
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার