#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট১০
যা ভাবা ছিলো তাই ই।হৃদিকে হাসপাতাল থেকে নেওয়ার পথে মিসেস ছায়া হৃদির জন্য শপিং করে।একজন অচেনা অজানা মেয়ের জন্য মহিলাকে এমন করতে দেখে হৃদি খুব অবাক হয়।এখনকার দিনে মিসেস ছায়ার মতো মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন ব্যপার।তার আচার আচরণে মনে হচ্ছে হৃদি যেন তার বহুদিনের চেনা।অল্পসময়েই মহিলা হৃদিকে আপন করে নিয়েছে।হৃদিরও কেমন যেন মন চাইছে মিসেস ছায়াকে আপন করে নিতে।কিন্তু কিছুটা হলেও খুতখুতানি মনে ভেতর কাজ করছে।অনেকটা দোটানায় পড়েছে হৃদি।
মলের সামনেই ফুচকাওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে।মিসেস ছায়া হৃদিকে জিজ্ঞাস করেন,,
-হৃদি ফুচকা খাবে না ভেলপুরি নাকি ঝালমুড়ি বা চানাচুর মাখা?
হৃদি কী বলবে ভেবে পায় না।একটা অচেনা অজানা মহিলা এভাবে হৃদিকে খাওয়ার জন্য অফার দিচ্ছেন।হৃদি মুখ ফুটে কিভাবে বলবে যে সে এটা খাবে!ওটা খাবে!আত্মসম্মানে ভিষণ লাগছে হৃদির।মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের মনে হয় আত্মসম্মানটা একটু বেশিই থাকে।এদের জীবনের লক্ষ্যই থাকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা মার জন্য কিছু করতে পারা।আর পাঁচটা মেয়ের মতো হৃদিরও জীবনের লক্ষ্য তাই ছিলো।কিন্তু তা তো শুরুতেই শেষ হয়ে গেলো।
-হৃদি বললে না তো কী খাবে!
মিসেস ছায়ার ডাকে হ্রদির ধ্যান ভাঙে।হৃদি মুচকী হেসে বলে
– কিছু না আন্টি।
-মামা ভেলপুরি দাও তো।
অ্যাহ!এই মহিলা কিভাবে বুঝলো হৃদির ভেলপুরি খেতে মন চাচ্ছে?ভেলপুরি হৃদির খুব প্রিয়।কলেজ থেকে যখন হৃদি সাম্যের সাথে আসতো তখন প্রায়ই ভেলপুরি খেতো।কিন্তু এখন সে গুলো স্মৃতি মাত্র।আর স্মৃতি মানুষকে অনেক কষ্ট দেয়।হৃদির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হই নি।
-আফা বাটি নেন।
ফুচকাওয়ালার ডাকে হৃদির ধ্যান ভাঙে।বাটিটা হাতে নিয়ে আনমনে ভেলপুরি খেতে লাগে।মিসেস ছায়া বুঝতে পারেন হৃদি একটু হলেও মানসিক চাপে আছে।আর থাকাটাই স্বাভাবিক। কম ঝড় ঝাপটা তো যায় নি মেয়েটার ওপর দিয়ে।বিভোরের কাছ থেকে শুনেছেন মিসেস ছায়া।ছোটবেলা থেকেই নাকি মেয়েটা অনেক সংগ্রাম করেছে।বাস্তবতাকে খুব অল্প বয়সেই সে বুঝতে পেরে গেছে।ভেলপুরি খাওয়া হয়ে গেলে দাম মিটিয়ে মিসেস ছায়া হৃদিকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেন।
বাসায় গিয়ে হৃদি ফ্ল্যাটটা ঘুরে ঘুরে দেখে।সব ঘর খুব পরিপাটিভাবে গুছানো শুধু একটা ঘর বাদে।নিশ্চিয়ই এটা অফিসার বিভোরের ঘর।লোকটা তো বাইরে বেশ পরিপাটি কিন্তু তার ঘর যে এমন হবে কে জানতো!
এক কথায় যাকে বলে বাইরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট। সাম্যদাও অনেকটা এই রকমই ছিলো।হৃদি নিজ হাতে প্রতিদিন সাম্যের ঘর গুছাতো এখন দায়িত্ব পড়েছে সিঁথিদির ওপর।
-কী দেখছো?বিভোরের ঘর? আর বলো না।ছেলেটাকে গুছাতে পারলাম না।একা মানুষ আমি আর কতটুকুই করতে পারতাম।তাও যতটুকু পারি চেষ্টা করি।
হৃদি আর কিছু বলে না।মুচকী হাসে।দুপুর দুটো বাজে।হৃদিকে দেখে মনে হচ্ছে হৃদির নাওয়া খাওয়া হয় নি।মিসেস ছায়া হৃদির হাতে টাওয়েল আর জামা কাপড় দিয়ে বলে,,
-যাও গা ভিজিয়ে আসো।
মিসেস ছায়াকে দেখে হৃদির মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো।হৃদির মাও হৃদির হাতে টাওয়েল জামা কাপড় দিয়ে গোসল করতে বলতেন।কেন যেন মিসেস ছায়ার মধ্যে হৃদি নতুন করে নিজের মাকে খুঁজে পাচ্ছে।।
★
-স্যার আসসালামু আলাইকুম।
-জ্বী ওয়ালাইকুম আস সালাম।
-স্যার আমার মেয়েটা..
-কোন মেয়ে। নাম বলুন।
-হৃদি।
মুহুর্তের মধ্যেই ফাইল থেকে চোখ সরে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক বয়স্ক ব্যক্তির ওপর পড়ে বিভোরের।তিনিই হয়তো হৃদির মামা।বেশ কয়েকবার ফোনে উনার সাথে কথা হয়েছে।
-আপনার ভাগ্নি তো আপনাদের বাসায় যেতে রাজী নয়।
-হাসপাতালেই কী আছে ও?শুধু চোখের দেখা দেখেই আসবো।আর জিজ্ঞাস করবো কি জন্য ও ফিরতে চায় না।
-নাহ উনি হসপিটালে আর নেই।আমার মা উনাকে আমাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে গেছেন।আপনি এক্টু ওয়েট করুন।কিছুক্ষণ পরেই বাসায় যাবো।সঙ্গে আপনাকেও নিয়ে যাবো।প্লিজ সিট।
বিভোরের আহবানে সালাম সাহেব বসেন।কাজ গুছানো হয়ে গেলে সালাম সাহেবকে বাইকের পেছন চাপিয়ে রওনা দেন বাসার দিকে।
*
-হৃদি!
রান্না ঘরে মিসেস ছায়ার হাতে হাতে কাজ গুলো করে দিচ্ছিলো হৃদি।সালাম সাহেবের ডাকে পিছন ঘরে তাকায় হৃদি। প্রথমে ভেবেছিলো মনের ভুল হয়তো।কিন্তু না। ঘুরে দেখে পিছনে সয়ং সালাম সাহেবই দাঁড়িয়ে আছেন।
-কেমন আছো মামা?
-তোকে ছাড়া আমি কিভাবে ভালো থাকি।বাসায় ফিরবি না?
-নাহ।
-কেন?
সত্য লুকিয়ে আর লাভ কী?আর মিথ্যা বলেও পাপের বোঝা বাড়ানোর ইচ্ছে আর হৃদির নেই।সালাম সাহেবকে নিয়ে একটা আলাদা ঘরে যায় হৃদি। গোঁড়া থেকে শুরু করে সব বলে দেয় মামাকে।সবটা শুনে সালাম সাহেব বলেন,,,
-কিহ?সাম্যের তোর সাথেও সম্পর্ক ছিলো?
-সাথেও মানে?বুঝলাম না মামা।
-সাম্য তো বলেছিলো ওর শুধু সিঁথির সাথে সম্পর্ক ছিলো।তাই তো সিঁথির সাথেই ওর বিয়ে দিয়েছি।আগে যদি জানতাম ওর তোর সাথে।সম্পর্ক ছিলো তাহলে কখনো ওই মেয়েকে আমি ঘরে তুলতাম না।
সালাম সাহেবের কথা শুনে।হৃদির পায়ের তলার মাটির সরে যায়।একটা মানুষ কিভাবে এরকম করতে পারে?তাহলে সব কি নাটক ছিলো?হতেও পারে!মানুষ দ্বারা তো কোনো কিছু অসম্ভব না।ভালোই হয়েছে হৃদি সরে এসেছে।
-মামা,তোমার কাছে তো আমার এক্সামের সার্টিফিকেট গুলা আছে তাই না?
-হু।
-কষ্ট করে সেগুলা দিয়ে যাবা?
-কী করবি আগে সেটা বল।
-প্রথমে একটা ছোটখাটো চাকরি জোগার করবো।তারপর আবার পড়াশোনা শুরু করবো।
-চাকরি এখনই করা লাগবে না।পড়বি তুই।খরচ আমি দেবো।
-কিন্তু মামা…..!
-কোনো কিন্তু না।যা বলছি তাই করবি।
চলবে,,,