নিস্তব্ধ শহর পর্বঃ ০২

0
4066

নিস্তব্ধ শহর পর্বঃ ০২
লেখকঃ আবির খান

জান্নাত বঁধু সাজে আবিরের রুমে বসে আছে। বিশাল বড় রুম। আজ একজন লেখক আর পাঠিকার বাসর রাত। জান্নাতের মনে কেমন জানি এক অন্যরকম উত্তেজনা অনুভব হচ্ছে। কেমন ভাবে ও পাবে ওর প্রিয় লেখককে? সেকি তার গল্পের মতোই রোমান্টিক হবে নাকি তার গল্পের নেহালের মতো রাগি চরিত্রের? কেমন হবে আবির? এইসব হাজারো প্রশ্ন আর চিন্তা নিয়ে জান্নাত বসে আছে তার প্রিয় লেখক তার স্বামী আবির হাসানের জন্য। এ অপেক্ষার প্রহর যেন দীর্ঘ, শেষই হতে চায় না। হঠাৎই দরজা ঠেলে কারো আসার শব্দ জান্নাত শুনতে পায়। এতো বছরের প্রিয় মানুষটা কি তবে আজ একদম ওর হয়ে কাছে আসলো? জান্নাতের হৃদস্পন্দন ক্রমশ বাড়িয়ে দিচ্ছে এই প্রশ্ন। জান্নাত বড় ঘোমটা’টা টেনে বসে থাকলেও আবিরের উপস্থিতি বুঝতে ওর বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়নি। ও আস্তে করে উঠে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। আবির একটু কাছে আসতেই জান্নাত,

~ আসসালামু আলাইকুম।
– অলাইকুম আসসালাম। (খুশী হয়ে)

জান্নাত আবার নিঃশব্দে বেডে বসে পড়ে। আবির এ ভদ্রতা দেখে মুগ্ধ। ও মুচকি হাসে আর বলে,

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


– খুশী হলাম তুমি পা ছুলে না বলে। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কখনো কারো সামনে মাথা নত করতে নেই। যারা করে খুব পাপ হয় তাদের। তবে তুমি যে সালাম দিয়েছো এটা খুব ভালো ছিল। এটাই নিয়ম। গুড।

জান্নাত আস্তে করে ওর মধুর কণ্ঠে বলে,

~ আপনার গল্প থেকেই শিখেছি।
– কি বলো তাই নাকি? তা আর কি কি শিখেছো শুনি?(রসিকতার স্বরে)

জান্নাত লজ্জায় পড়ে যায়। ও বুঝতে পারছে উনি ইচ্ছা করে ওকে লজ্জা দিতে চাচ্ছে। তাই লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ যা শিখেছিলাম সব ভুলে গিয়েছি। আপনি আবার শিখিয়ে দিয়েন।
– বুদ্ধিমতী মেয়ে। ভালো। ওহ তোমার ঘোমটাই তো ওঠানোই হলো না। আচ্ছা উঠিয়ে দিচ্ছি।

আবির আস্তে করে জান্নাতের সামনে বসে। জান্নাতের কেমন অজানা এক অনুভূতি হচ্ছে৷ আবিরের সাথে জান্নাতের তেমন দেখা হয়নি। বিয়েটাও খুব দ্রুত আর ইসলামিক ওয়েতে হয়েছে। তাই দেখা সাক্ষাৎ এর কোন অবকাশ ছিলা না। তাহলে বলা যা এই ঘোমটা উঠানোর পর ওদের প্রথম দর্শন হবে একে অপরের। আবির দু’হাত দিয়ে জান্নাতের লাল বেনারসি শাড়ীর ঘোমটা তুলে ওর লজ্জাসিক্ত অজস্র মায়ায় ভরা মুখখানা ঘোমটার আড়াল থেকে বাইরে আনে। জান্নাত আস্তে আস্তে চোখ তুলে আবিরের দিকে তাকায়। আবির জান্নাতকে দেখছে।

সিল্কি লম্বা ঘন কালো কেশগুলো পিছন থেকে ঘুরিয়ে সামনে ফেলে রাখা৷ যা আবিরের সবচেয়ে বেশী পছন্দ। শ্যামলা রঙের মুখখানায় আছে বড় বড় ভাসানো মুক্তার মতো দু’খানা চোখ। অসম্ভব সুন্দর পাপড়িগুলোর জন্য চোখগুলো আরো মন কেড়ে নিচ্ছিলো। এরপর আবিরের চোখ যায় টানা টানা নাকের নিচে মিষ্টি গোলাপি ঠোঁটগুলোর দিকে৷ আবির বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে জান্নাতের মিষ্টি ঠোঁটের কোণায় ছোট কালো তিলটার দিকে৷ এই তিলটা যেন ওকে আরো মায়াবী করে তুলছে। জান্নাত আহামরি কোন রূপসী মেয়ে না। দুধের মতো ধবধবে ফর্সাও না। ওর এই শ্যামলা চেহারাই যেন ওর জন্য পারফেক্ট।

আবির ওর একটা হাত দিয়ে জান্নাতের থুতনি ধরে বলে,

– মাশাল্লাহ, তুমি একদম আমার মনের মতো। সাধারণ একটা মেয়ে। কিন্তু এই সাধারণের ভিতর লুকিয়ে আছে অসাধারণত্ব।

জান্নাত লজ্জা পাচ্ছে। ও আসলে কিছুই বলতে পারছে না। খুব নার্ভাস লাগছে ওর। কিন্তু ওর এই নার্ভাসনেস নিমিষেই কেটে যায় আবিরের একটা কথায়৷ আবির বলে,

– তুমি আমার পাঠিকা বলে কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করিনি। আর আমার প্রতি তোমার যে অজস্র ভালবাসা তা দেখেও না।

জান্নাত আশ্চর্য হয়ে যায়। ৫১২ ভোল্টের সক খায়। চোখ দুটো বড় করে বলে,

~ তাহলে?

– বলছি। সেদিন প্রথম যখন তুমি আমার সাথে দেখা করো সেদিনই কিন্তু তোমাকে আমার ভালো লাগে। সব মেয়েরা আমার জন্য সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে আমার চোখে পড়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কিন্তু একমাত্র তুমি একটা বোরখা আর হিজাব পরে খুব সহজ সাধারণ ভাবে আমার সামনে এসে দাঁড়ালে। তোমার সেই সহজতর উপস্থাপনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এরপর তোমার চিঠি পড়লাম। তোমার হাতের লেখা অসম্ভব সুন্দর। আমার হাতের লেখাও এত্তো সুন্দর না। এরপর কথার ছলে বুঝে নিলাম তুমি কেমন। তুমি ছেলেদের সাথে মিশো না, আমাকে অনেক সম্মান করো, সত্যিকারের ভালবাসতে জানো, সব কাজ জানো। এসব কিছুই আমাকে মুগ্ধ করেছে। কি ভেবেছো তোমার সম্পর্কে আমি কোন খোঁজ নেই নি? সব নিয়েছি। আমি ঠিক যেরকম একটা মেয়ে চেয়েছিলাম তুমি ঠিক তেমন। তুমি আমার পাঠিকা, আমার গল্পের পাগলি এসব আমি কখনো গোনায় ধরিই নি। ওগুলো একটা শখ। ভালো লাগা মাত্র। ওগুলো দিয়ে জীবন চলে না। স্বামী স্ত্রী একে অপরের যোগ্য না হলে কখনো সেখানে সুখ আসে না। তাই কখনো ভাববে না তুমি আমার পাঠিকা বলে আর আমার গল্পের পাগলি বলে আজ তোমাকে বিয়ে করেছি। বরং তুমি একজন যোগ্য স্ত্রী বলে তোমায় বিয়ে করেছি। আমাদের লেখক পাঠিকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক সেটা আজীবন থাকবে। সেটা একরকম। আর এর বাইরে তুমি আমার যোগ্য স্ত্রী। সেই সম্মান নিয়েই চলবে। কাউকে বলবে না যে তুমি আমার পাঠিকা বলে তোমাকে আমি বিয়ে করেছি। এতে করে আমাদের সে সম্পর্কটাকে ছোট করা হবে। বুঝলে মায়াবতী?

জান্নাতের চোখ দিয়ে টপটপ টপটপ করে অফুরন্ত সম্মান আর খুশীর অশ্রু ঝরছে। আবির জান্নাতের চোখ মুছে দেয়। আর একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওকে স্বাভাবিক থাকতে বলে। জান্নাত বলে,

~ আমি একসময় আপনার লেখাকে ভালবাসতাম। এখনও বাসি। কিন্তু আপনার লেখার মধ্যে সে ভালবাসা সীমাবদ্ধ রয়নি সেটা আপনার উপর চলে এসেছে। আপনার লেখাগুলো অনেক সুন্দর। একজন ভালো মানুষই এরকম লিখতে পারে। আপনি একজন প্রকৃত মানুষের মতো মানুষ বলেই আপনাকে ভালবাসি। একজন ভালো মানুষ হিসেবে ভালবাসি। লেখাটা আপনার প্রফেশন। ওটার কারণে আপনাকে চিনেছি, জেনেছি আর বুঝেছি আপনি কেমন। তাই আমিও বলবো আমি আপনাকে একজন লেখক হিসেবে ভালবাসিনি। বেসেছি একজন ভালো মানুষ হিসেবে। খবরের কাগজে আপনার কত কত ভালো কাজের কথা আমি পড়েছি। সেসব দেখেই আপনার জীবন সঙ্গী হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। সৎ স্বপ্ন। যার দরুন আজ তা পূরণ হলো।

– বাহ! দেখেছো এর জন্যই আমাদের বিয়ে হয়েছে। কারণ আমরা ওকে অপরকে পছন্দ করেছি।

~ জ্বী।

– আর একটা কথা আমাকে বলতেই হবে।

~ সেটা কি?

– তুমি যেমন অসম্ভব সুন্দর ঠিক তেমনি তোমার কথাগুলোও খুব সুন্দর।

~ আপনার গল্প পড়ে পড়ে কথা শিখেছি। আগে মিলিয়ে বলতে পারতাম না।

– হাহা। চলো নামাজটা পড়ে আসি। তারপর সারারাত গল্প করবো। তোমার জমানো সব কথাগুলো শুনবো। কি চলবে তো?

~ আপনি আমার মনের কথা বুঝেন তাইনা?

– সেটা না হয় তুমিই বুঝে নিও। এখন চলো আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে আসি।

~ আচ্ছা।

এরপর ওরা দুজন নামাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। আবির জান্নাতকে বসিয়ে রেখে নিজ হাতে দুকাপ কফি বানিয়ে আনে৷ জান্নাতকে নিয়ে বারান্দায় যায়। ওকে ওর পাশে বসিয়ে ও বসে৷ জান্নাতের হাতে কফি তুলে দিয়ে বলে,

– আকাশটা অনেক বড় তাইনা?
~ জ্বী।
– আজ আকাশে চাঁদটা নেই কেন জানো?
~ কেন?
– কারণ সে চাঁদটা আমার পাশে বসে আছে।

জান্নাত কফির মগে চুমুক দিতে গিয়েও থমকে যায়। ও আস্তে করে আবিরের দিকে তাকায়। সে চাহনিতে লেগে আছে অজস্র মায়া। আবির চুমুকটা শেষ করে মগটা রেখে দিয়ে জান্নাতের দিকে তাকায় আর একটা মুচকি হাসি দেয়। জান্নাত এখনো থমকে আছে। আবির ওর দিকে তাকিয়েই বলে,

– শেষ করো। পরে আমাকে দেখো। (মজা করে)

জান্নাত দ্রুত কফি শেষ করে ফেলে। কারণ আবির বলেছে। শেষ করে মগ রেখে বলে,

~ জ্বী শেষ।

আবির হেসে দেয়। জান্নাতের এই বাচ্চামিটা আবিরের ভালো লাগলো। জান্নাত লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে রয়। ওর খুব ইচ্ছা হচ্ছে আবিরের কোলে বসে তার বুকের সাথে মিশে এই নিস্তব্ধ শহরটাকে দেখবে অনুভব করবে৷ কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছে না। আবির হঠাৎ বলে উঠে,

– আচ্ছা তুমি ওখানে বসে আছো কেন এদিকে আসো। দূরে দূরে মনে হচ্ছে। এখানে আমার কোলে এসে বসো। চাঁদটাকে একটু কাছ থেকে দেখি।

জান্নাত যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। ও ভাবছে, উনি কি সত্যি আমার মনের কথা বুঝে? না বুঝলে কিভাবে বলল! আবির আবার বলে,

– কই আসো।

জান্নাত আস্তে করে উঠে আবিরের কোলে বসে৷ লজ্জায় মেয়েটার মায়াবী মুখখানা লাল হয়ে গিয়েছে। আবির অপলক দৃষ্টিতে তা উপভোগ করছে। জান্নাত আর না পেরে মনের অজান্তেই আবিরকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। এরপর শুরু হয় ওদের গল্প। সে রাতের প্রতি মুহূর্ত জান্নাতকে মুগ্ধ করেছে। ভালবাসায় পরিপূর্ণ ছিল রাতটা। জান্নাত কখনো ভুলবে না এই রাতের প্রথম আবিরের স্পর্শ ওর মসৃণ কপালে। ছোট্ট একটা চুমু ওর কপালে আবির এঁকে দিয়েছে। সেসময়টায় ও যেন অজ্ঞান হয়ে যাবে এমন অবস্থা। আবির মুচকি হেসে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে রয়৷ আর জান্নাত আবিরের বুকে মিশে চোখ বন্ধ করে নিস্তব্ধ শহরটাকে অনুভব করে।

পরদিন সকালে,

জান্নাতের ঘুম ভাঙে। আবির এখনো ঘুমানো। ও আস্তে করে চোখ মিলে তাকিয়ে দেখে ও…

চলবে..?

-“গল্পের চলমান অবস্থা অনুযায়ী গল্পের আয়তন বড় ছোট হয়ে থাকে।”

সবার ভালো সাড়া চাই। কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে