নিস্তব্ধ শহর পর্বঃ ০১
লেখকঃ আবির খান
জান্নাত বাসর ঘরে বসে আছে। পারিবারিক ভাবে আজ জান্নাতের বিয়ে হয়েছে ওরই পছন্দের একজন লেখকের সাথে। যার গল্প পড়ে ওর দীর্ঘ অলস সময়গুলো নিমিষেই কেটে যেত। তার গল্প পড়তে পড়তে তার উপর এমন মায়া আর ভালবাসা জন্মে যে জান্নাত মরিয়া হয়ে তাকে খুঁজে বের করে। হাজার পাঠক/পাঠিকার ভীড়ে সেদিন প্রথম ও ওর প্রিয় লেখক আবির হাসানকে দেখে৷ অনেক কষ্টে জান্নাত সেদিন তার কাছে যায়৷ জান্নাত অটোগ্রাফ নেয়ার সময় অনেক আকুতি করে তাকে বলেছিল,
~ প্লিজ এই চিঠিটা আপনি রাখবেন? আপনাকে নিয়ে আমার অনেক জমানো কথা এই চিঠিতে লেখা আছে। সাথে আমার নাম্বারও। প্লিজ পড়ে উত্তরটা জানাবেন।
আবির সেদিন বেশ অবাক হয়। কারণ এভাবে ওকে আগে কেউ কোন চিঠি দেয় নি। ও চিঠিটা স্বযত্নে পকেটে রেখে দিয়েছিল। জান্নাত সেদিন যা খুশী হয়েছিলো তা বলার বাইরে। আবির স্পষ্ট সে খুশী দেখেছে। কিছু সময় তাকিয়ে ছিল জান্নাতের দিকে যখন অন্যদের অটোগ্রাফ দিচ্ছিলো। আবির সেদিনের মিটআপ শেষ করে বাসায় ফিরে। অন্য সবাই হলে হয়তো ভুলে যেত চিঠিটার কথা। কিন্তু আবির ভুলে নি। ও চিঠিটা বের করে ওর লেখালেখির টেবিলে ওর সবচেয়ে প্রিয় বইটার নিচে চাপা দিয়ে রাখে। এরপর ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে রাত ১১ টা নাগাদ ও টেবিলে বসে। বসেই চিঠিটা হাতে নেয়। টেবিল ল্যাম্পের আলোতে চশমাটা চোখে ভালো করে এটে পড়া শুরু করে। চিঠিটায় লেখা ছিল এমন-
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
~ “প্রিয় লেখক,
২০১৮ সালের জুলাই ১২ তারিখে প্রথম আপনার গল্প পড়ি ফেইসবুকে। ভেবেছিলাম কি এমন আর গল্প হবে হয়তো এক পর্ব পড়ে আর পড়া হবে না। সত্যি বলতে আপনি সেদিন আমার ধারণাই পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। এক পর্ব পড়েই দ্বিতীয় পর্বের জন্য বেকুল হয়ে যাই। সারাদিন আপনার গল্পের আশায় অস্থির হয়ে থাকি। এরকম আগে কখনো হয়নি আমার সাথে। কেমন জানি এক অজানা টান আর একরাশ মায়া আপনার গল্প পড়ে অনুভব করি। কোন ভাবেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই আপনার পুরনো যত গল্প আছে তা পড়া শুরু করি। যতই পড়ছি ক্রমশ আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। হ্যাঁ এসবটা সেই প্রথম দিনেই হয়েছিল। আপনার মতো আমিও অবাক হয়েছি নিজেকে দেখে। বিশ্বাস করুন এরপর শুধু আপনার গল্প ছাড়া আমি আর কারো গল্প পড়িনি। টানা একটা বছর আপনার সব গল্প পড়েছি। মাঝে শুনেছি আপনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানেন খুব কেঁদেছিলাম আপনার সুস্থতার জন্য। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করে। আপনি এক সপ্তাহ পর পোস্ট দিলেন যে এখন আপনি সুস্থ। খুব শিগগিরই নতুন গল্প আসছে। এই খবরটা পেয়ে হয়তো আপনার পাঠক/পাঠিকারা খুশী হয়েছে যে তারা আবার আপনার গল্প পাবে৷ কিন্তু আমি খুশী হয়েছি আপনি ভালো আছেন বলে৷ কারণ প্রথমে হয়তো আমি আপনার গল্পকে ভালবাসতাম। কিন্তু পরে আপনাকে ভালবাসে ফেলি। কারণ গল্পটাতো আপনিই লেখেন। আপনার চিন্তাধারা এতো সুন্দর বলেই গল্পগুলো এতোটা মনে ধরে। আজ দীর্ঘ এক বছর ৭ মাস পর অনেক কষ্টে আপনার সাথে সেই চিটাগং থেকে দেখা করতে ঢাকাতে এসেছি। শুধু মাত্র আপনাকে একনজর দেখবো আপনার নতুন বইটা নিব আর এই চিঠিটা দিব বলে। জানি না পারবো কিনা। আর পারলেও আপনি পড়বেন কিনা। আমার কাছে সবই স্বপ্ন। এই চিঠিটার মূল উদ্দেশ্য হলো, আমার খুব ইচ্ছা আপনার জীবন সঙ্গী হওয়ার। কিন্তু আমি জানি আমি আপনার জীবন সঙ্গী হওয়ার বিন্দুমাত্র যোগ্যতা রাখিনা। কারণ আপনি অনেক বড়। আর আমি খুব সামান্য। আপনার জীবন সঙ্গী হবে ঠিক আপনার মতো যোগ্য কেউ। তাই জীবন সঙ্গী না বানান যদি আপনার বন্ধু বানাতেন, মাঝে মাঝে একটু কথা বলতেন খুব ভালো লাগতো। যদি চিঠিটা পড়ে থাকেন তাহলে আমার নাম্বারে কল করে জানাবেন। আমি অপেক্ষায় থাকবো। আমি আবার চলে যাচ্ছি চিটাগং। বাবা-মার সাথে একপ্রকার রাগারাগিই করে এসেছি শুধু আপনাকে একটু দেখবো বলে। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
ইতি,
আপনার খুব সামান্য একজন পাগলি পাঠিকা, জান্নাত
চিঠিটা পড়ে আবির লেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। অসম্ভব সুন্দর হাতের লেখা। তারচেয়েও সুন্দর তার মনের কথাগুলো। আবির ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বারটা তুলে জান্নাত লিখে সেইভ করে রাখে। ওর একটা পারসোনাল ডাইরি আছে। যেটা ও কাউকে ধরতে দেয়না। সেই ডাইরির মাঝে জান্নাতের চিঠিটা ও রেখে দেয়। একজন লেখক হিসেবে আবির বেশ বুঝতে পেরেছে এই চিঠিটার মূল্য আর মর্ম কতটুকু। সেদিন রাতে আবির ঘুমায় নি। এই প্রথম কোন একজন ওর রাতের ঘুম কেরে নিয়েছে। জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত সেদিন রাতেই ও নিয়েছিল।
পরদিন রাত ১০.৩০,
আবির জান্নাতকে কল দেয়। একটা রিং হতেই ফোন রিসিভ হয়। আবির বেশ অবাক হয়। ওপাশ থেকে অস্থির হয়ে জান্নাত বলে,
~ আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
আবির আস্তে করে বলে,
– অলাইকুম আসসালাম। আমি আবির হাসান বলছি। আপনি কি জান্নাত?
জান্নাতের হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। ওর মনে হচ্ছে ও অজ্ঞান হয়ে যাবে৷ কিছুক্ষণের জন্য ও বিছানায় পড়ে রয়৷ আবির জান্নাতের কোন উত্তর না পেয়ে ফোনটা কানে নিয়েই চুপ করে রয়। কারণ ও জানে যার চিঠিতে এতো ভালবাসা আর সম্মান মিশে আছে সে নিশ্চিত ওর ফোন ফেলে কিছুক্ষণ সকে থাকবে। ঠিক তাই হলো। জান্নাত আবার উঠে বসে। কাঁপা কাঁপা নরম হাত দিয়ে ফোনটা আবার তুলে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,
~ হ্যাঁ আমি জান্নাত। আপনি কী সত্যি আমাকে ফোন দিয়েছেন? কাল থেকে সারাদিন ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিলাম। আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না।
আবির মুচকি হেসে বলে,
– আগে শান্ত হন৷ জীবন সঙ্গী হওয়ার আবদারটা না করে বন্ধু হওয়ার আবদারটা করতে কষ্ট হয়নি?
জান্নাত আবার সক খায়। পাশের টেবিল থেকে দ্রুত একগ্লাস পানি খায়। আবির শুনতে পায় ওর পানি খাওয়ার শব্দ। ও মুচকি হাসছে। জান্নাত পানি খেয়ে ঠোঁটের উপর লেগে না অমূল্য পানির অংশটুকু হাত দিয়ে মুছে নিজেকে যতটা সম্ভব স্থির রেখে বলে,
~ তার মানে আপনি চিঠিটা পড়েছেন?
– জ্বি পড়েছি। একবার না অনেক বার৷ এবার উত্তর দিন আমার প্রশ্নটার।
~ জানেন আমার না মনে হচ্ছে আমি এখন স্বপ্ন দেখছি। কি সুন্দর একটা স্বপ্ন। আমার সবচেয়ে সবচেয়ে সবচেয়ে প্রিয় লেখক আবির হাসানের সাথে আমার কথা হচ্ছে। আচ্ছা আমি কি সত্যিই স্বপ্ন দেখছি না এটা বাস্তব?
– স্বপ্ন হলে এতোক্ষণে ভেঙে যেত। যেহেতু যায় নি তাহলে বাস্তবই ভাবতে পারেন।
~ তাইতো। এটা অসম্ভব সুন্দর একটা বাস্তব। আচ্ছা আপনার প্রশ্নটার উত্তর দি না হয় বেয়াদবি হয়ে যাবে৷ উত্তরটা হলো, আমি কখনো ভাবিনি আপনার সাথে ফোনে কথা হবে। সেখানে জীবন সঙ্গী হতে চাওয়াটা বিলাসিতা আমার কাছে। আর আমি আপনার যোগ্যও না। খুব সাধারণ আমি। একটা মেয়ের ভিতরে যেকটা গুন থাকা দরকার সবই আমার আছে। কিন্তু আপনার সমতুল্য আমি না। আপনার বন্ধু হওয়াটাই সৌভাগ্য। তাই কষ্ট হলেও জীবন সঙ্গী হওয়ার ইচ্ছাটা মাটি চাপা দিয়ে শুধু বন্ধু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। জানিনা আদও সে স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা।
– আচ্ছা আপনার কণ্ঠটা যে অনেক সুন্দর তা কেউ বলেছে?
~ বাবা-মা ছাড়া আর তেমন কারো সাথে কথা বলি না। শুধু ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় বান্ধবীদের সঙ্গে একটু কথা হয়। তবে হ্যাঁ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড লিমা একদিন বলেছিল আমার কণ্ঠ শুনলে নাকি মনে লেগে থাকে।
– হুম ভুল বলে নি। আচ্ছা অনেক কথা হলো এবার আপনার বাবার নাম্বারটা দিন তো।
~ কেন!
– তার কাছে নালিশ করবো। বলবো আপনার মেয়ে প্রেমে পড়েছে। তাকে তাড়াতাড়ি আবির হাসান নামে একজন লেখকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিন। কি চলবে তো?
জান্নাত আরেকবার সক খায়। স্তব্ধ হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। আবির চুপ জান্নাতও চুপ। আবির স্পষ্ট এই নিস্তব্ধতার মাঝে জান্নাতের ক্রমশ বেড়ে যাওয়া হৃদস্পন্দন গুলো শুনতে পাচ্ছে। আবির মুচকি হাসি দিয়ে আবার বলে,
– কি হলো দিবেন না? লেখককে যে গল্প লিখতে হবে৷ নাম্বার না দিলে গল্প তো সামনে আগাবে না৷
জান্নাতের ঘোর কাটে। ও যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
~ আপনি সত্যি বলছেন?(বেশ অবাক হয়ে)
– এই রাতে মিথ্যা বললে ব্ল্যাক ফরেস্টের ভূতগুলো এসে আমাকে ধরবে৷ (রসিকতা করে)
জান্নাত খিলখিল করে হেসে দেয়। আবির মুগ্ধ হয়ে সে মধুর হাসির আওয়াজ শুনে। জান্নাত যে কি খুশী তা ও ছাড়া হয়তো আল্লাহ ভালো বুঝবেন। জান্নাত ওর বাবার নাম্বারটা দ্রুত বলে দেয়। আবির নোট করে বলে,
– আপনার নামে নালিশ দিচ্ছি এবার। রেডি থেকেন। শুভ রাত্রি।
~ শুনুন..
-জ্বি?
~ নালিশটা একটু তাড়াতাড়ি দিয়েন। অনেকটা সময় অপেক্ষা করেছি। আপনার দাসী হয়ে থাকবো। তাও ফিরিয়ে দিবেন না দয়া করে।
– ছিঃ কি বলছেন! নারী মানে কি জানেন? নারী মানে একজন মা। আর আমার কাছে একজন নারীর সম্মান অনেক। আপনাকে দাসী না রাণী করে রাখবো। আর কখনো নিজেকে ছোট করবেন না। এটা আমার অপছন্দ।
~ আচ্ছা সরিইই। শুভ রাত্রি।
জান্নাত ভয়ে ফোন কেটে দেয়। আসলে ভয় না অজস্র সম্মানের জন্য৷ আবির ফোনটা পাশে রেখে চিঠিটা হাতে নিয়ে আবার পড়তে পড়তে সেদিন ঘুমিয়ে গিয়েছিল। এরপর আর কি, জান্নাতের বাবা তার মেয়ের জন্য এতো বড় নামকরা লেখকের বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে বেজায় খুশী। তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। আর আবির আর জান্নাতের বিয়ে দিয়ে দেন।
এখন,
জান্নাত বঁধু সাজে আবিরের রুমে বসে আছে। বিশাল বড় রুম। আজ একজন লেখক আর পাঠিকার বাসর রাত। জান্নাতের মনে কেমন জানি এক অন্যরকম উত্তেজনা অনুভব হচ্ছে। কেমন ভাবে ও পাবে ওর প্রিয় লেখককে? সেকি তার গল্পের মতোই রোমান্টিক হবে নাকি তার গল্পের নেহালের মতো রাগি চরিত্রের? কেমন হবে আবির? এইসব হাজারো প্রশ্ন আর চিন্তা নিয়ে জান্নাত বসে আছে তার প্রিয় লেখক তার স্বামী আবির হাসানের জন্য। এ অপেক্ষার প্রহর যেন দীর্ঘ, শেষই হতে চায় না। হঠাৎই…
চলবে…?
#নিস্তব্ধ_শহর
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০১
সবার ভালো সাড়া চাই। কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়। ধন্যবাদ।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share