নিশি কাব্য পর্ব-১৬

0
1019

নিশি কাব্য পর্ব-১৬
(রোমান্টিক সংসারে গল্প)
লেখা-Rudro khan himu

~
দেখতে দেখতে রবিবার চলে আসলো।আমি আর পুতুল বউ দুজনই বেশ রোমাঞ্চিত। নিশির অসুস্থতা এখন একদম নেই।আমি রবিবার অফিস শেষ করে বিকেলে বাসায় ফিরে দেখলাম নিশি কিছুই গোছগাছ করেনি।এমন এলোমেলো মেয়ে কেন নিশি?ঘরে ঢুকে দেখি নিশি পুতুলের মত শুয়ে আছে।ড্রেস চেঞ্জ করছি আর নিশি অসুস্থ কিনা তা দেখলাম।নাহ্ পুতুলটা তো সুস্থ আছে।তাহলে এই অসময়ে শুয়ে আছে কেন?চেঞ্জ করে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লক করব এমন সময় নিশি নিজেও ওয়াশরুমে ঢুকল।আমি বের হতে চাইলে ও বলে বের হতে হবেনা।কেন?আমি এখানে আসছি তোমাকে গোসল করিয়ে দিতে।আমাকে গোসল করাতে হবেনা।ও কেমন যেন চুপসে গেল।রাগে গজগজ করতে করতে সাবান আর শ্যাম্পুর বোতল নিয়ে বের হয়ে গেল। নিশি তুমি ওগুলো নিলে আমি গোসল করব কেমন করে? নিশি কিছুতেই দিতে চাচ্ছেনা।উল্টো কাঁদছে।মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।যখন বললাম ঠিকআছে গোসল করিয়ে দাও তখন মুখে হাসি নিয়ে ওয়াশরুমে এলো।কিন্তু সাবান শ্যাম্পু কই?না ওগুলো দিয়ে তোমাকে গোসল করতে দিবনা।কেন?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

আমি তোমার গায়ের গন্ধ নিতে চাই তোমার সাথে মিশে গিয়ে।যখন প্রথম বার তোমার খুব কাছে যাব তখন আমি যেন এই কৃত্রিম সাবান আর শ্যাম্পুর গন্ধ না পাই।আমি আমার দুষ্টু বরের আসল গায়ের গন্ধ নিতে চাই।খুব কাছ থেকে তোমাকে দেখব আর সেই গন্ধ নিজের গায়ে মাখব।তুমি জানোনা সাবানের গন্ধ কিছুক্ষণ পরে আর থাকে না?হ্যা জানি তো।কিন্তু মানুষের গায়ের আসল গন্ধ সারাজীবন থেকে যায়।আমি তোমাকে যখন কাছে ডাকব তখন তোমাকে সেই চিরচেনা গন্ধ নিয়ে অনুভব করব।পিচ্চি বর একটা কথা বলি?হ্যা বল।তুমি যখন বাসায় থাকোনা তখন আমি তোমাকে না পেয়ে তোমার শার্ট,টি শার্ট পড়ি,তোমার পোশাক নাকে লাগিয়ে গন্ধ নিই।
–এসব পাগলামি কেন কর?
–কেন করি বলতে পারবনা তবে আমি যদি পাগলও হয়ে যাই তবে যেন তোমার গায়ের গন্ধ আমাকে ঠিক তোমাকে চিনিয়ে দেয়।
আমি পুতুল বউয়ের কথা শুনে কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।অবশেষে হেসেই দিলাম।তখন নিশি আমাকে কয়েকটা কিল আর মাথায় ছোট ছোট থাপ্পর দিল।কি হ্রামি বউ!বরকে মারধর করে!নিশির ইচ্ছাই পুরন করলাম।শুধু পানি দিয়ে গোসল করে নিজের গায়ের গন্ধ অটুট রাখলাম।খাওয়া শেষে দুজন মিলে ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছি।আম্মু এসে আমাদের যাবতীয় সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে গেল। নিশি কি পড়ে যাবে সেটাই ঠিক করতে পারছিলনা।আনিকাকে ফোন করেও শিওর হতে পারছিলনা।সবশেষে আমাকেই জিজ্ঞেস করল।শোনে নিশি যেহেতু তুমি আমার পুতুল বউ তাই বউদের শাড়িতেই মানায়।সালোয়ার কিংবা অন্য কোনো পোশাকে মনে হয় তারা অবিবাহিতা।এবার নিশি আমার কথায় সায় দিয়ে একটা শাড়ি পড়ল।রাত নয়টায় বাস তাই আমরা আটটায় বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।আব্বু আম্মুকে সালাম করে আল্লাহর নাম নিয়ে বের হলাম।ট্যাক্সি করে টার্মিনালে পৌছালাম।বাসে উঠে আব্বু আম্মুকে জানিয়ে দিলাম আমরা যাচ্ছি।এদিকে রাঙামাটিতে আগেই হোটেলে বুক করে রেখেছিলাম। নিশি জানালার পাশে বসে আছে। নিশি আমাকে এসি বাসের টিকিট নিতে মানা করেছিল।সে নাকি বাইরের বাতাসে নিজেকে মেলে ধরতে চায়।এমন পাগলী বউ কোথাও পাওয়া যাবেনা।বাস চলছে দুরন্ত গতিতে।বাইরে থেকে বাতাস কুড়িয়ে এনে নিশি আমার মুখে লাগিয়ে দিচ্ছে।ওর চুলগুলো এলোমেলোভাবে বাতাসে উড়ছে।আমার মুখে মাঝে মাঝে এসে আলতো করে ছুয়ে যাচ্ছে। নিশি আমার পাশে বসে আছে এর চেয়ে আর সুখের অনুভূতি পৃথিবীতে দ্বিতীয় আছে কিনা সন্দেহ।কখনও জানালার সাথে হেলান নিয়ে বাতাস উপভোগ করছে,কখনও আমার কাধে স্বস্তি খুঁজছে,কখনও আমার বুকে আশ্রয় খুঁজছে।এভাবেই সারারাত কেটে গেল।শেষরাতে জেগে দেখি নিশি আমার বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।কি অপুর্ব লাগছে মেয়েটাকে।বাসের জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে নিশির মুখে লাগছে।এ কেমন সময় আমি জেগে উঠলাম!আমি এসব কি দেখছি।এসব দেখার ভাগ্য কি সবার হয়?আমার সৌভাগ্যটা নিশি গড়ে দিচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তে।এরকম দৃশ্য জীবনে কেউ কোনোদিন দেখেছে কিনা সন্দেহপোষন করছি আমি।সকাল সাতটায় বাস টার্মিনালে পৌছাল।তখনও নিশি ঘুমিয়ে আছে।রাতে চন্দ্রের আলোতে নিশিকে দেখতে দেখতে সুর্যের সোনালি আভায় দেখছিলাম সকালবেলা।এরকম দৃশ্য আমার চোখে কোনোদিন পড়বে স্বপ্নেও ভাবিনি। নিশিকে জাগিয়ে দিতে ইচ্ছা করছেনা।মন চাচ্ছে রাঙামাটি আরে দুরে হলে বেশি ভালো হত।প্রায় চার ঘণ্টা আমি নিশিকে মুগ্ধ নয়নে শুধু দেখেই গেছি।কিন্তু তবুও মন ভরেনি।বাস থেকে নামতেই রাঙামাটির চোখ রাঙানো সৌন্দর্য চোখে এসে লাগছে।কিন্তু চন্দ্রের আলোয় আর সুর্যের সোনালি আভায় নিশির মুখটা আমার কাছে বেশি বেশি ভেসে উঠছে।এরকম কেন হচ্ছে আমার?এই সৌন্দর্য নিশির সৌন্দর্যের কাছে কিছুই না।আমার আবারও ওই চার ঘণ্টায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে।এসব ভাবছি এমন সময় নিশি জেগে উঠে বলে পিচ্চি বর তোমায় ভালোবাসি।তারপর নিশিকে নিয়ে বাস থেকে নামলাম।একটা গাড়িতে করে হোটেলে পৌছালাম।রুমটা অনেক সুন্দর।শহরের মাঝখানে হওয়ায় শহরের অনেকটুকু এই বিল্ডিং থেকে দেখা যায়।সকালে নাস্তা করা হয়নি।ক্লার্ক এসে নাস্তা দিয়ে গেল। নিশি চায়ের কাপটা নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওই দুর আকাশের প্রান্তে মেঘে ঢাকা পাহাড় দেখছে।সাতরঙা রংধনু দেখছে কারন সকালেই এক পশলা বৃষ্টিতে রাঙামাটি পবিত্রতা অর্জন করেছে।চায়ের কাপে নিশি প্রকৃতি দেখছে আর আমি প্রকৃতিতে বিমোহিত না হয়ে নিশিকে বিমোহিত হয়ে দেখছি। নিশি জানালার পাশ থেকে বলে উঠল পিচ্চি বর দূরে কেন দাঁড়িয়ে আছো?এসো কাছে এসো চা খাই আর প্রকৃতি দেখি।হা হা.. নিশি তো জানেনা আমি আজ শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কি দেখেছি!ও কাছে গিয়ে দাড়িয়ে আমি প্রকৃতি দেখছিলাম।বেশ ঠান্ডা লাগছে আমার।
–আচ্ছা তুমি আমাকে ওইভাবে দেখছিলে কেন?
–আমি!দেখছিলাম!কি?_
–বাব্বাহ্ পিচ্চি বর মনে হয় কিছুই বোঝে নাই।শোনো আমি জানি তুমি বাসের মধ্যে আমাকে না ঘুমিয়ে হ্যাবলার মত দেখছিলে।
–জাদুকর নাকি?কেমনে জানল?কে কে বলছে আমি তোমাকে দেখছিলাম?
–আমি জানি,আমি অনুভব করেছিলাম তুমি আমায় দেখছিলে।
–কিভাবে?
–কারন তোমার হৃৎপিন্ডের সাথে আমার হৃৎপিন্ডের যোগাযোগ সবসময় হয় কিন্তু তুমি তা জানোনা।
–এহ্ কে বলছে তোমাকে?
–আগে বলো আমি মিথ্যে কথা বলছি?
–এ কেমন মেয়ে?ওর তো এসব জানার কথা না।হ্যা তা ঠিকি বলছো।নাস্তা করে দূজন একটু রিল্যাক্স করছিলাম। নিশি চুপচাপ বসে আছে আমি ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম আর বাসায় ফোন করে কথা বললাম। নিশি আমার ফোন হাতে দেখে বেশ বিরক্ত।এক ঝটকায় ফোন হাতে থেকে নিয়ে নিল।এই শোনে হানিমুন করতে এসে ফোন ব্যবহার করা চলবেনা।এখানে যতক্ষণ থাকব ততক্ষণ আমাকে সময় দিতে হবে।কারন আমার জন্যই এখানে আসছ।বাসায় তোমাকে সারাদিন না পেয়ে কত ছটফট করি তা তো জানোনা।প্লিজ এখানে আমি তোমাকে শতভাগ চাই।এক অংশ কম পেলে আমি কেঁদেই মরব।বউয়ের একগাদা চাওয়া পুরন করতে আসলাম নাকি হানিমুনে আসলাম বুঝতেছিনা।এই ডায়নি বউ আমাকে শতভাগ চাও?হ্যা…।খেয়ে ফেল তাইলে সম্পূর্ণটা।ওমা!!বলতে না বলতেই আমাকে কামড় দেয়া শুরু করল!সুযোগ বেশি দিয়ে ফেললাম না তো?

~
রাঙামাটি আসতে আসতেই সকাল বেলাই নিশি ওর একশভাগের কিছু ভাগ নিয়ে নিল।মেয়েটা আমাকে ফকির করে দিবে আমার সবকিছু নিয়ে।কামড়েই প্রায় বিশভাগ নিয়ে নিল।এরপর যে আরো কত অত্যাচার করবে আল্লাহ্‌ জানে।কখন যে বুকের উপর নিশি ঘুমিয়ে পড়েছে আর আমিও যে ঘুমাইছি বুঝতেই পারিনি।সারারাত বাসে ঘুমাইনি আমি।ক্লান্ত শরীরে নিশির সাথে থাকার পরেও ঘুমানোর সময় পাওয়া মানে আমার কাছে বিশাল কিছু।নিশ্চিন্তভাবে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।হঠাৎ শরীরে কাতুকুতু অনুভব করলাম। নিশি আমার হাতে পায়ে পেটে নাক আর কান লাগিয়ে দেখছে আমার শরীরের প্রতিটি কোষে ও অবস্থান করছে কিনা।কিছুক্ষণ পর আর কিছু করলনা।মনে হয় পুতুল বউটা ফিল করতে পারছে হাউ মাচ আই লাভ হার।আমার শরীরের প্রতিটি কোষে নিশির নাম লেখা।আসলেই কি মেয়েটাকে ভালোবাসি?আচ্ছা এই ভালোবাসা কোনোদিন শেষ হয়ে যাবেনা তো?হুর!!এটা আত্মার ভালোবাসা।এই ভালোবাসা শেষ হওয়ার নয়।আচ্ছা নিশি আমার কাছে কি চায়?ও কখনও বলেনা আমাকে কিন্তু আমার অজান্তেই আমাকে অত্যাচার করে তা আদায় করে নেয়?পৃথিবীতে কি এমন বউ আছে যে অত্যাচার করে ভালোবাসা আদায় করে?স্বপ্ন পুরন করে?আচ্ছা আমাকে বললেই তো আমি ওর স্বপ্ন পুরন করতাম,তাহলে কেন বলেনা?নাকি আমাকে জ্বালাতে,অত্যাচার করতে ও পৈশাচিক আনন্দ পায়?এসব ভাবছি কেন? আমি ভালো করেই জানি নিশি পাক্কা একটা হ্রামি।
–কি তুই আমাকে হ্রামি বললি?তোর এত বড় সাহস? নিশি জেগে উঠেই আমাকে মাইর দেয়া শুরু করল।
–আরে আমি তো মনে মনে বলছিলাম।ও কেমনে বুঝল আমি ওকে হ্রামি বলছি?এটা বউ নাকি সাইকোলজিস্ট?মনের সব কথা ধরতে পারে!বউ বউ থামো থামো।নাহ্ থামছেনা।অগত্যা জোড় করে জড়িয়ে ধরলাম নিশিকে।বুকের সাথে যখন ওর মাথা লাগলো তখন নিশি নরম হয়ে গেল।
–আরো ক্লোজ হয়ে বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলছে তোকে ভালোবাসি তাই এমন করি।যেদিন আমি চলে যাব সেদিন বুঝবি আমি তোর জীবনে কি ছিলাম!পিচ্চি বর নাম দিয়েছি তোর।কেন জানিস?যেন তোর উপর আমি অধিকার দেখাতে পারি।বড় বর বললে তোকে আমার ভয় পেতে হতো।একজন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে ভয় পায় সেখানে আর যাই হোক ভালোবাসা জন্ম নিতে পারেনা।সেখানে শুধু ভালোবাসার মৃত্যুর পচা গন্ধ পাওয়া যায়,কলিজা পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। নিশির কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।একটা মেয়ে একটা ছেলেকে এতটা ভালোবাসতে পারে আমার তা জানা ছিলনা। নিশির ওর ভালোবাসা দিয়ে আমার চোখ খুলে দিল।আযান দিছে নিশি গোসল করে নামায পড়ি চলো।আজকেও নিশি সাবান শ্যাম্পু ব্যবহার করতে দিলনা আমাকে।শুধু কাচা পানি দিয়ে গোসল করিয়ে ছাড়ল আমাকে।দুজনে নামায শেষে লাঞ্চ করলাম।দুপুর টাইম তাই নিশি শরীরের উপর শুয়ে আছে।মেয়েটা একমিনিট আমাকে।ছেড়ে থাকতে চায়না।সবসময় গিলে ফেলতে চায় আমাকে।
–পিচ্চি বর?
-হুম?
–তুমি তো সারাদিন অফিসে থাকো আর আমি বাসায় একা একা থাকি।আমার একা একা ভাল্লাগেনা।তুমি চাকরী ছেড়ে দাও।
–পুতুল আমি চাকরী ছাড়লে খাবে কি?
–তোমায় পেলে আমি না খেয়ে থাকতে পারব।শুধু ভালোবাসা দিও তাতেই আমার পেট ভরে যাবে।
–হা হা করে হাসছি। নিশি বিরক্ত হয়ে আর কিছুই বলল না।আমি নিজেই একটু পর বললাম
–বেবি চাও?বলতে না বলতেই বুকের উপর থেকে লাফিয়ে পেটের উপর বসে পড়ল।
–হ্যা চাই, দাওনা একটা বেবি।
হে আল্লাহ নিজের অজান্তেই কি বলে ফেললাম কারণ এটা কখনো আমাদের জীবনে সত্যি হয়ে আসবে না। নিশি কে কিছু বুঝতে না দিয়ে হাসে বললাম-
— মেয়ে চাই আমার যদি রাজি থাকো তবে দিব।
–না পিচ্চি বর আমার ছেলে চাই।
–না মেয়ে চাই।
–শোনো তাহলে, মেয়ে জন্ম নেয়া মানেই কষ্ট।তিনদিন আগেই দেখলা আমি তলপেটের ব্যথায় কত কষ্ট করলাম।তুমি কি তোমার প্রিয় মেয়ের এই কষ্ট সহ্য করতে পারবে?তারপর বাচ্চা হওয়ার সময় মেয়েরা অনেক কষ্ট পায়।তুমি কি তোমার মেয়ের ওই কষ্ট সহ্য করতে পারবে? নিশির কথায় যুক্তি আছে।একটা মেয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যথায় কষ্ট করে।যা সহ্য করা একজন সুস্থ ছেলের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।মেয়েরা পারেও বটে।কত কিছু সহ্য করে ওরা বেঁচে থাকে।জীবনের প্রতিটি ঝড় সামলে বেঁচে থাকে ওরা।কিন্তু আমার যে মেয়ের শখ।মেয়ে হলে ওর কষ্টগুলো সহ্য করতে পারবে?না পারবোনা। আমার অজান্তেই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নিশি চলো বের হই।শাড়িতে নিশিকে নতুন বউ বউ লাগছে।হ্যা পিচ্চি বরের পুতুল বউ।যে পিচ্চিটার সারাজীবনের খেলার সঙ্গী।গাড়িতে করে পাহাড়ে উঠছি।অপরুপ দৃশ্য।চারদিকে পাহাড় কুয়াশায় ঢাকা।সবকিছু মানুষের কল্পনার মত করে আঁকা। নিশি মুগ্ধ চোখে দেখছে।একদম পাহাড়ের চুড়ায় পৌছে গেলাম।গাড়ি থেকে নেমে আমি আর নিশি হাত ধরে হাটছি। নিশির কনুই আঙুলের সাথে আমার কনুই আঙুল লেগে আছে।পাহাড়ের উপরে বেশ সাজানো গোছানো।অনেকেই বেড়াতে এসেছে।ছবি উঠছে সবাই।এখানেও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা আছে। নিশি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে সোজা পাহাড়ের শেষ কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পরল।কি যেন দেখছে ও।কিছুক্ষণ পরে দুই হাত পাখির মত মেলে ধরল।ভাবলাম বউটা উড়তে শিখল নাকি!নাহ নিশি কি যেন অনুভব করছে।মনে হচ্ছে পাহাড়ের সাথে ওর অনেকদিনের পরিচয়,ওর পুরনো কোনো বন্ধু।কিছুক্ষণ পরে ঝুম বৃষ্টি চলে আসল।মনে হচ্ছে নিশির উপর দিকে তাকিয়ে হাত তুলে বৃষ্টিকে আহ্বান জানাচ্ছিল। নিশি পাখির মত হাত উঠিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছিল।আমি পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশিকে বৃষ্টিতে ভেজা দেখছিলাম।অপরুপ লাগছে মেয়েটাকে।এদিকে যে আমি ভিজে যাচ্ছি সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।লোকজন দৌড়ে বিভিন্ন ছাউনিতে আশ্রয় নিচ্ছে।কিন্তু আমি আর নিশি বৃষ্টিতে আবালের মত ভিজছি।আমার ভেজার কোনো ইচ্ছা ছিলনা।কিন্তু নিশির জন্য আমি ভিজতেছি। নিশিকে মুগ্ধ নয়নে দেখছি।অনেকক্ষণ হলো বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু থামার কোনো নাম নেই। নিশি ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।আর আমি শীতে কাঁপছি।সন্ধা হয়ে গেছে অনেকটাই অন্ধকার নেমে আসছে পাহাড়ে। নিশির পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে টাইটানিক সিনেমার মত করে ওর হাত ধরে আমিও উড়তে চাইলাম। নিশি মনে হয় বেশ মজা পেল।মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজলে ওদের শরীর দিয়ে একটা সুন্দর মোহময় ঘ্রান পাওয়া যায়।যারা বৃষ্টিতে ভিজেছে একমাত্র তারাই জানে এই ব্যাপারটা।আমি নিশির গায়ে গন্ধ টের পাচ্ছি।অসম্ভব মায়াবি সেই গন্ধ।মায়ায় জড়িয়ে গেলাম দুজন। নিশি আমাকে বৃষ্টির পানিতে ভেজা শরীরের গন্ধে আমাকে পাগল করে রেখেছে।আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে নিশির শরীর আমার মত ঠান্ডা হয়নি।ওর শরীর এখনো উষ্ণতায় ভরপুর।বৃষ্টির বেগ কমে এলো।আমরা দুজনে পিচ্ছিল পথে জুতো খুলে খালি পায়ে পাহাড়ের উপরে হাটছি।কেমন যেন একটা অনুভূতি। আমি শীতে কাপছি অথচ নিশির এরকম কোনো লক্ষণই নেই।আশেপাশের লোকজন আমার আর নিশির দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে এরকম পাগলা আর পাগলী কাপল এর আগে দেখিনি।হঠাৎ একটা মেয়ে আমার নাম ধরে ডাক দিল। নিশি আমাকে কেউ মনে হয় ডাকল!পাহাড়ে ওরকম ডাক এমনিতেই শোনা যায়।কান না দিয়ে দুজনে হাটছি।আবারও ডাক পড়ল।ছাউনির দিকে তাকিয়ে দেখি উপমা ডাকছে।আমার ইউনিভার্সিটি লাইফের বান্ধবী।ও দৌড়ে আমার কাছে এসে হাতে হাত মেলাল।পাশ থেকে বুঝতে পারলাম নিশির এটা পছন্দ হয়নি।
–কিরে বিয়ে করেছিস জানালি না যে?
–কেমনে জানাব বল? কোনোরকম প্লানিং ছাড়াই বিয়েটা হইছে। নিশি সাথে উপমার পরিচয় করিয়ে দিলাম।উপমার হাজব্যান্ডও আসছে এখানে ঘুরতে আমরা দুজনে কাকভেজা হয়ে আছি।উপমা এরকম দেখেই আমাকে বলল তোর মনে আছে ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর বৃষ্টি নেমেছিল।তুই বৃষ্টিতে ভেজা পছন্দ করতি না অথচ তোকে আমরা জোড় করে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে সাতদিন জ্বরে ভুগিয়েছিলাম।কি হ্রামি বান্ধবী রে!সব মনে রাখছে।মনে থাকবেনা কেন?হইছে হইছে এখন বল ভাইয়া কোথায়?ওইতো ছাউনিতে দাঁড়িয়ে আছে।জানিস তোক আর নিশিকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে আমারও ভিজতে ইচ্ছে করছিল।কিন্তু ও নিয়ে গেলনা।তোদের দেখে সবাই বলল সাহস আছে এই কাপলটার।আয় ডিনার করব সবাই একসাথে।নারে বৃষ্টিতে ভিজে আছি।আর কিছুক্ষণ থাকলে অসুখ করবে।তারাতারি হোটেলে ফিরে গোসল করে কম্বলের মাঝে ঢুকে গেলাম আমি।শীত করছে আমার। নিশি ওর চুল আচড়াচ্ছে।ভেজা চুলে,কুচি দিয়ে শাড়ি পড়া কোনো মেয়ের শরীর দিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা একটা গন্ধ বের হচ্ছে।পুরো ঘরটা সেই মোহময় গন্ধে ভরপুর।হঠাৎ দরজায় নক করল কেউ।খুলে দেখি ডিনার চলে আসছে। নিশি আর আমি ডিনার করে নিলাম। বাংলাদেশ আর ভারতের ক্রিকেট খেলা দেখছি আমি টিভিতে আরর নিশি চুল শুকাচ্ছে। –নিশির এখনও হয়নি শুকানো?কিছু বলছেনা পুতুলটা।কাছে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে নিলাম ওকে।আমি আবারও সেই তীব্র গন্ধ পাচ্ছি নিশির শরীর থেকে।মাতাল হয়ে গেলাম আমি। নিশির ঘারের চুলগুলো সরিয়ে সেখানে একটা নিঃশ্বাস ফেলতেই চিরুনি দিয়ে আমাকে মাইর শুরু করল।
–তুই বৃষ্টিতে আগেই ভিজেছিস না?জানিস তোর জন্য আমি কোনোদিন বৃষ্টিতে ভিজিনি!স্বপ্ন ছিল তোর সাথে প্রথম বৃষ্টিতে ভিজব।ভিজলাম কিন্তু তুই কি করেছিস?তোর এই এক্সপেরিয়েন্স আগেই নেয়া। নিশির শরীরের গন্ধে আমি মাতাল হয়ে আছি।ওকে কোলে নিয়ে শুইয়ে ঘুমিয়ে দিব কিন্তু ঘুমুচ্ছেনা পুতুলটা।আমার কাছে ও কিছু চায়।কি চাও?আমাকে বেবি দাও।
বেবির কথা শুনলেই আমরা গলা শুকিয়ে আসে আর কত মিথ্যে আশা দিয়ে যাবো নিশি কে। নিজের কষ্টা লুকিয়ে বললাম —
–আচ্ছা ঠিকআছে তোমাকে বেবি দিব।সকালবেলা নিশি আগে আগেই উঠে ফ্রেশ হয়ে আমাকে ডাকছে।এই পিচ্চি বর ওঠো।কি?সকাল হইছে ফ্রেশ হয়ে আসো।দুজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট করব।আজকে নিশিকে বেশ চনমনে মেজাজে দেখা যাচ্ছে।ও মনে হয় অনেক খুশি আজকে।পিচ্চি বর আমি অনেক অনেক খুশি আজকে।তুমি আমার স্বপ্ন পুরন করেছ। নিশির মুখে এরকম হাসি দেখে আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম।এটুকু ভালোবাসা পেয়েই একটা মেয়ে এতটা খুশি হতে পারে ভাবা যায়না।পুতুল?কি?বেবি পেয়ে আমাকে ভুলে যাবেনা তো?যেতেই পারি।কারন আমি আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন পেয়ে যাবো তখন।কি হ্রামি বউ?আচ্ছা আমি ভুল করলাম তো?।ভুল করেছ তুমি আমাকে বেবি দিয়ে।একটা বেবির জন্যই তোমাকে এতটা ভালোবেসেছি।পেয়ে গেলে তোমাকে ভুলে আমার ছেলেকে নিয়ে থাকব।এহ্ কি খারাপ!তোমার মেয়ে হবে।একথা বলতেই ধুমধাম কিল শুরু করল পুতুলটা।কি আজব!একটার পর একটা মিথ্যা বেবি হয়ে স্বপ্ন দেখি যায়ছি একদমই ঠিক হয়েছে। কিন্তু সব কথা নিশিকে কিভাবে বলবো। কথা গুলো শুনে যদি আবার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। না না না কখনো নিশি কে এই বিষয়ে টা জানাতে দাও যাবে না। কিন্তু আমার ও কত স্বপ্ন ছিল আমার পুতুল বউটার থেকে আরকেটা পুতুল জন্ম নিবে।ভাবাই যায়না কতটা আনন্দ এর মাঝে লুকায়িত ছিল স্বপ্ন গুলো। এইসব ওয়াশরুম বসে বসে ভাবছি আচ্ছা ছেলেদের না কান্না করতে হয়ে না। আমি একদম আর কান্না করবো না ।
চলবে(…..)

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে