নিমাইদা পার্ট ১

0
1801
নিমাইদা পার্ট১ গল্পবিলাসী – নিশি -‘আহ!! হাত ছাড়ো। হাতে লাগছে আমার। ‘ একপ্রকার চেঁচিয়ে বলে উঠলো ঋতু। ঋতুর কথা শুনে আরো কঠোর ভাবে চেপে ধরে সীমান্ত। বুকের বা পাশে ইশারা করে, -‘ আমার ও লাগছে এই পাশটাতে। ‘ -‘দেখো! ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। ‘ -‘সেটাতো দেখতেই পাচ্ছি বউ ।’ ঋতুকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে, -‘ চাচা গাড়ি চালাও।’ -‘ গাড়ি চালাও মানে? মামার বাড়ি আবদার পাইছো?’ -‘ নাহ। জামাইর বাড়ির আবদার।’ -‘ চাচা দেখো ভূলেও গাড়ি চালাবে না বলে দিলাম আমি।আমি কিন্তু চিৎকার করবো।’ সীমান্ত হেসে কাছে টেনে, -‘ আমার রাগ আমার উপর ঝাড়ো চাচার উপর কেন? ‘সীমান্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে, -‘কেমনে করো এতো ন্যাকামি? লজ্জা করেনা না তোমার? কিভাবে আবার আমার সামনে আসছো? তোমার মা বাবা তোমার পরিবার যখন আমাকে কথা শুনিয়েছিলো তখন কোথায় ছিলে তুমি? কই ছিলো তোমার বউ গিরী? সেপারেশন হাতে ধরায় দিয়া স্বপ্নের পথে উড়াল দিছিলা তখন মনে ছিলো না আমার কথা? তখন বুকে ব্যাথা ছিলোনা?’ সীমান্তকে চুপ থাকতে দেখে, -‘ এখন চুপ কেনো? এখন কথা নাই? এখন প্রেম জেগে উঠছে তোমার? প্রেম দেখাইতে আসছো আমারে?আমাকে বিয়ের পরতো তোমার মায়ের মান সম্মান হাটুর নিচে চলে গেছিলো এখন কেনো আবার আমার পিছন নিসে? সকালবিকাল আমার বাড়িতে কেনো কল দিয়ে আমার খবর নেয়। বিয়ের পর আমি কাঁদা মাটির পুতুল ছিলাম আর এখন আলমারিতে তুলে রাখা জাঁকজমক ভাবে সাজানো সপিজ হয়ে গেছি? আত্নীয়স্বজনের কাছে আমাকে ছোট করতে একটুও বিবেকে বাঁধেনাই তার। ‘
চোখ দিয়ে একফোটা পানি এলোনা ঋতুর।কিছুক্ষন পরপর একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে গড়গড় করে কথাগুলো বলতে লাগলো। -‘আমার থেকেও ইউরোপ যাওয়াটা তোমার খুব বেশি কিছুই ছিলো বলেইতো সেদিন সম্পর্কটা শেষ করেই চলে গেছিলা। তাইলে আজকে কি দাবি নিয়া আসছো আমার কাছে? সাবধান করে দিচ্ছি আর মাত্র এগারো দিন পরেই ডিভোর্স। এখন কোনো ঝামেলা করবে তো মনে রেখো ঠিক নিজেকে শেষ করে দিবো। তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য অনেক কথা শুনতে হইছে আমার বাবা মাকে। আর না। সাবধান করে দিচ্ছি। ‘বলেই ধাক্কা মেরে গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো ঋতু। সোজা সামনে হাটতে হাটতে চোখের পানিটা মুছে নিলো। খুব কষ্টে সীমান্তের সামনে নিজেকে কঠিন থেকে কঠিন রূপে দাড়ঁ করিয়েছি। অফিস থেকে বের হতেই সীমান্তের মুখোমুখি হয়ে যায়।থমকে দাঁড়িয়ে যায় ঋতু। শান্ত সুরে, -‘বাসায় চলো।’ কিন্তু সীমান্তের কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে সীমান্ত। -‘ঋতু পাব্লিক প্লেসে কোনো সিনক্রিয়েট করোনা। চলো বাসায় চলো।’ ভ্রু কুঁচকে সীমান্তের ধরে থাকা হাতের দিকে একবার তাকিয়ে আবারো সীমান্তের মুখে তাকায় ঋতু। -‘ আমিতো কোনো সিনক্রিয়েট করছিনা। দেখুন আপনি করছেন। আমাকে মহব্বতের বাণী না শুনিয়ে সেই বাণী আপনার নিজের উপর প্রয়োগ করুন।’ বলেই হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা চালাতে থাকে।ঋতুর কথাগুলো শুনে আবারো শক্তভাবে চেপে ধরলো হাতটা। -‘চলো বাসায় চলো।’ -‘ কিসের বাসা? কার বাসা? ‘ -‘ কিভাবে নিতে হয় আমার খুব ভালো ভাবেই জানা আছে।’ বলেই খুব জোড়ে টেনে বুকের কাছে এনে, -‘এতো রাগ কেনো হ্যা?’ বলে হালকা হেসে ঋতুকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিতে গেলেই কথাগুলো শুনালো সীমান্তকে। কিছুদূর হেটে গিয়ে একটা টেক্সি ডেকে উঠে পরে ঋতু। বাসায় এসে ব্যাগ রেখেই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। কানে হেডফোন লাগিয়ে ফুল ভলিয়মে গান ছেড়ে কাথাঁমুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো। কখন ঘুমে তলিয়ে গেলো তার জানা নাই। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শাহজাহান সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, -‘কি ব্যাপার ঋতু এখনো বাসায় এলোনা? ‘ -‘কি জানি বিকাল পাঁচটা বেজে গেলো এখনো এলোনা কেনো মেয়েটা? ‘ কথাটা বলেই শোবার রুমে পা বাড়ালো ফাতেমা বেগম। শোবার ঘর থেকে মোবাইলটা এনে স্ক্রিনে তাকাতেই নাইন মিসড কল। আসমা রেহমানের নাম্বার থেকেই সবগুলো কল এসেছে। -‘শুনলে! ঋতুর শ্বাশুড়ি আবারো আজকে কল দিলো। ‘ -‘হুম।সীমান্ত ও আজকে আমার অফিসে গিয়েছিলো।’অবাক। হয়ে ফাতেমা বলে উঠলো
-‘ সীমান্ত দেশে এসেছে? ‘ -‘হ্যা। গতকালই নাকি এসেছে।এসেই ছুটে গিয়েছিলো আমাদের আগের বাসায়। সেখানে না পেয়ে আজ অফিসে গেছে। বুঝতে পারছিনা কি করা উচিত। ‘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে ঋতুকে কল দেয় শাহজাহান। কলটা কেটে দেয় ঋতু। -‘ মনেহয় আশেপাশে চলে এসেছে।তাই কেটে দিয়েছে।’ তখনি কলিংবেলটা বেজে উঠলো। ঐতো চলে এসেছে ঋতু। দরজাটা খুলতেই যেনো তিনি অবাক হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেলেন ফাতেমা। সীমান্ত? তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার মা আসমা রেহমান। শ্বাশুড়ি কে দেখে -‘ আসসালামু আলাইকুম মা। কেমন আছেন? ‘ -‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। হ্যা বাবা আছি ভালোই।তুমি হঠাৎ ? ভেতরে এসো। বেয়াইন আসেন ভিতরে আসেন।’ -‘ ঋতু একবার এদিকে আয়তো। কথা আছে তোর সাথে। ‘ শোবার ঘর থেকেই একটু জোড়ে বলে উঠলো শাহজাহান সাহেব। -‘ঋতু আসেনি। ‘ ঋতু আসেনি শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সীমান্ত। বসুন আপনারা আমি ঋতুর বাবাকে ডেকে নিয়ে আসছি। ফাতেমাকে তাড়াহুড়ো করে আসতে দেখে আরে আস্তে আবারো পরবা কিন্তু। -‘ আরে রাখোতো। সীমান্ত আর বেয়াইন এসেছে। ‘ -নাজেহাল করে দিচ্ছে ছেলেটা। ঋতুর সাথে কথা না বলে আমি কিছুই করতে পারছিনা। কি বলবো আমি? ‘ -‘কিছুইতো করা লাগেনা। ওর মা ডিভোর্সে এপ্লাই করেছে আমরা তো করিনি। শোনো আমার মেয়েকে আমি কিছুতেই ও বাড়ি পাঠাবো না।আমাদের উপর ভরশা করেই আজ এই অবস্থা। কতোটা ডিসপ্রেশনে কেটেছে তা তুমিও ভালো করেই জানো।ভালোয় ভালোয় ডিভোর্স হোক। তারপর দেখেশুনে ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিবো।’ -‘আহা চেঁচামেচি কেনো করছো? চলো গিয়ে দেখি।’ শাহজাহান সাহেবকে দেখেই এগিয়ে এলো সীমান্ত। -‘কি ব্যাপার। তুমি এখানে?’ -‘ বাবা আমি ঋতুর সাথে দেখা করতে এসেছি।’ -‘ ঋতু বাসায় নেই।’ -‘বেয়াই সাহেব। আমি আমার বউমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। মানুষ মাত্রইতো ভূল। আমি কোন দুনিয়ায় পরে মেয়েটারে এভাবে এতোকিছু করেছি ভেবে নিজেরই খুব কান্না পায়।আমাদের বউ আমাদের কাছে নিয়া যাইতে আসছি।’ -‘বাসায় নেই মানে? দুপুরেই তো বাসায় আসতে দেখলাম। ‘ -‘এখনো আসেনি। আমরাও টেনশনে আছি। কল দিয়েছিলাম কেটে দিলো।’ কলটা কেটে দিয়ে কিছুক্ষন চোখবন্ধ করে রইলো ঋতু।মোবাইলে টাইমটা দেখে লাফিয়ে উঠে ঋতু। পাঁচটা পনেরো বাজে? বাসায় এসে কারোর সাথেই দেখা হয়নি তার। নিশ্চয়ই টেনশন করছে বাবা মা। একপ্রকার চেঁচিয়ে, -বাবা আমি রুমে কল দিচ্ছো কেনো?’ কথাটা বলেই চুলগুলো হাতখোপাঁ করে রুমের লাইটটা জ্বালিয়ে দিলো। ড্রইংরুম থেকে কথার আওয়াজ ভেসে আসছে। কন্ঠটা কেমন পরিচিতো পরিচিতো মনে হচ্ছে। কে আসছে শিয়র হওয়ার জন্য বাহিরে পা বাড়ানোর আগেই রুমে আসে সীমান্ত। ঋতুর কথা শুনেই ঋতুর রুমের দিকে দৌড়েঁ আসে সীমান্ত। -‘ তুমি? ‘কোনো জবাব না দিয়ে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দেয় সীমান্ত। -‘ কি হলো কিছু জিজ্ঞাসা করছি আমি। আমার রুমে কি করছো তুমি? আর দরজা বন্ধ কেনো করছো?’ ঋতুকে চেঁচাতে দেখে, – চুপ একদম চুপ।’ -‘কিসের চুপ? ‘ দুহাতে আলতোভাবে ঋতুর গাল ধরে -‘লক্ষ্মী আমার আমার কথাটা একবার শুনো। ‘ -‘কি শুনবো আমি? বলো কি শুনবো? তোমার সেই কাজিনের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেইটা শুনবো? নাকি তুমি ‘বলতে গিয়েও থেমে যায় ঋতু।বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে -‘ প্লিজ সীমান্ত চলে যাও। আমি তোমাকে। তোমার ফ্যামিলিকে হ্যাপি করতে পারিনি যে তোমার ফ্যামিলিকে হ্যাপি করতে পারে তার কাছেই যাও। দোহাই লাগে আমার সামনে এসোনা। সহ্য হয়না আমার তোমাকে। ঘৃণা হয় তোমাকে দেখলে।’ বলেই দরজা খুলতে গেলে হাত ধরে কাছে টেনে এনে, -‘ এতোই যদি ঘৃণা তো কাদঁছিলে কেনো তখন? -‘হাত ছাড়ো।’ -‘ চলো বাসায় চলো। আমি সব কেন্সেল করে আসছি।’ -‘ যাবোনা আমি আর ঐ শান্তিভবনে। যেখানে শান্তির রূপ ধরে শুধু অশান্তি ঘুরঘুর করে।’ -‘ চলো। মা বাহিরে অপেক্ষা করছে।’ -‘একটা পাগলও তার ভালোটা বুঝে আর আমি সুস্থ মস্তিষ্কের একজন মানুষ। মরে যাবো তারপরও আমি যাবোনা।’ -‘প্লিজ চলো। ‘ চলবে,,,,,,


( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/nishe.ratri.9809

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে