না চেয়েও তোমায় পেলাম পর্ব-০৭

0
1860

#না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤
#Ritu_Jahan
#part_7

পার্লারের মেয়ে আসলো আমার মেকাপ করতে,,ওফ এই মেকাপ করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেছি

আমাকে একটা বেবি পিন্ক কালারের গরজিয়াছ গার্ওন পরিয়েছে,মেচিং জুয়েলারি,,, সাথে মেকাপ।আজকের মেকাপটা কালকের থেকে একটু হালকা হয়েছে।আমাকে সাজিয়ে বাইরে নেয়ে গেল,,আদিবা দেখে,,,,,

আদিবাঃ ওয়াও ভাবি তোমাকে পুরা পুতুলের মতো লাগছে,,,ভাইয়া দেখে ফিদা হয়ে যাবে।

বর্ষাঃ মেকাপ আর ড্রেস টা সুন্দর বাট ওকে মানায় নাই।আমি আবার ফাও কমপ্লিমেন্ট দিতে পারি না ছরি ভাবি,,,,

আদিবাঃ যার চয়েছ যেমন আরকি।এনি ওয়ে ভাবি চলো,,সবাই কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেছে শুধু আমারাই বাকি আছি,,,,।

সবাই মিলে গাড়িতে করে কমিউনিটি সেন্টারে যাচ্ছি।আমার মাথা তো রাগে পেটে যাচ্ছে মেয়েটির কথায়।নিজের চেহারা আয়নায় দেখেছে পুরো মেকাপ করে ভুত হয়ে গেছে,, নিজেকে তো একটু সুন্দর লাগছে মা আবার আমাকে বলে। ইচ্ছে করছে নাক ফাটিয়ে দিই।

গাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে থামলো।সবাই নামছে,,আমি যেহতু নতুন বউ আর আমাকে তো কেউ নামাতে হবে নিজে নিজে নেমে গেলে ব্যাপারটা কেমন দেখায়।

আদিবাঃ ভাবি তুমি একটু ওয়েট করো তোমাকে নামানোর মানুষ আসচ্ছে।

আমি সামনে তাকাতে দেখলাম,,আদি আসছে,,ও আমার সাথে মেচিং করে জামা পরেছে,চুল গুলো স্পাক করা,,, পুরো জেন্টেলম্যানস এর মতো লাগছে।

সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দিল,,,, আমি দেখলাম চারপাশে মানুষ আছে হাত না ধরে উপায় নেই,,,

আমি ওর হাত ধরে নামলাম,,,,ও আমার সাথে ভেতরে ডুকলো।সবাই শুধু আমাদের নিউ কাপলের দিকে তাকিয়ে আছে।,,,

কিছুক্ষণ পর আমার পরিবারের সবাই আসলো।তাদের দেখে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না।জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিয়েছি।আমার বোনটা তো আমাকে দেখেই কেঁদে দিলো।আজ বুজতে পারছি যতোই ঝগরা মারপিট থাকুক না কেন,যতোই খারাপ সাজুক না কেন ভাই বোনের ভালোবাসা সব সময় অটুট থাকে।আমার বেস্টি ও আসছে,, ওকে জড়িয়ে ধরে,,,

আমিঃ কেমন আছিস জানু?

রিয়াঃ তোকে ছাড়া ভালো থাকতে পারি! অনেক মিস করতেছি,,তোকে ছাড়া কলেজ এ কেমন এ যাবো এ নিয়ে ডিপ্রেশনে ভুগছি।

আমিঃ কেন আমিতো বিয়ের পরেও পড়বো পাগলি

রিয়াঃ পড়বি ঠিকে আছে কিন্তু আমাদের কলেজে থাকবি কিভাবে তোর শশুর দের পরিবার তো সবাই শহরে থাকে তোকে যদি ওই খানে নিয়ে যায়।

আমিঃ নেহি,,,এ কাবি নেহি হোচাকতা,,,,, জানু তোরে ছাড়া নতুন কলেজে কেমনে থাকবো😞

রিয়াঃ ওইটা তো কথা,,, তুই আদি ভাইয়ার কথা বলিস

আমিঃ হুম😒

রিয়ারা সবাই কথা বলছে,,,, রিয়া অনেকক্ষণ থেকে ফলো করছে হাসিব ওর পিছু পিছু হাঁটছে আর ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না।কাল বিয়েতে ওকে জ্বালিয়ে মারছে,,

এদিকে আমি খেয়াল করেছি বর্ষা শুধু আদির দিকে তাকাচ্ছে আর আদি আমার সাথে থাকলে ওর মুখটা কেমন করে আমার দিকে তাকায়। এ মেয়ের হাবভাব ভালো ঠেকছে না।ডাল মে কুছ তো হে🤔।

এভাবে দিন কেটে গেল,,,আমার পরিবারের সবাই চলে গেল যাওয়ার সময়ও খুব কেঁদেছি,,, ইচ্ছে করছিল ওদের সাথে চলে যেতে,,,

রুমে শুয়ে আছি।আমার শাশুড়ী আর আদিবা রেস্ট নিতে বলল,,,

এদিকে আদি রুমে এসে দেখে ঋতু শুয়ে আছে,,দেখেই বুজা যাচ্ছে চোখ মুখে ক্লান্তির চাপ আর কান্না করার ফলে চোখ ফুলে গেছে,,ঘুমানো অবস্থায় ঋতুকে অনেক কিউট লাগছে।আদি ঋতুর পাশে বসে ঋতুকে অনেক মনোযোগ দিয়ে দেখছে,,,।মুখটা কেমন বাচ্চা বাচ্চা ভাব দেখলে কেউ বলবে আমার সাথে এতো ঝগড়া করে।।ওর মুখের সামনে ছোট ছোট চুল গুলো পড়ে আছে। আদি চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে,,,কিছু একটা ভেবে ওঠে গেলো,,,,

আমি ঘুম থেকে ওঠে দেখলাম রাত হয়ে গেছে ,, ধুর আমি এতোক্ষণ ঘুমে ছিলাম,,ওঠে নিচে গিয়ে দেখি সবাই গল্প করছে।আমি ঘোমটাটা টেনে তাদের সামনে গেলাম,,,

শাশুড়ীঃ ঋতু তুমি এত তাড়াতাড়ি ওঠতে গেলে কেন। সারাদিন অনেক ঝাপড় গেছে আরেকটু রেস্ট নিতে।

আমিঃ না না আন্টি আমি অনেকক্ষণ রেস্ট নিয়েছি।

শাশুড়ীঃ ওমা এ কি কথা আন্টি কেন ডাকছো আমি ও তোমার মাই। তোমাকে তো আমি আমার মেয়ে ভেবে নিয়েছি তুমি বুজি আমাকে মা বলে মেনে নিতে পারোনি।( অভিমানী সুরে)

আমিঃ সেটা নয় আম্মু এমনি মুখে দিয়ে চলে আসছে,,

শাশুড়ীঃ এবার ঠিক আছে।যাও তুমি গিয়ে ওদের সাথে গল্প করো।

আমি আদির কাজিনদের সাথে বসে গল্প করছি।সহজে সবার সাথে মিশে গেছি।হঠাৎ বর্ষা আমার পাশে এসে বলল,,

বর্ষাঃ ভাবি তোমাকে একটা কোশ্চেন করবো?

আমিঃ হুম করো

বর্ষাঃ তোমার কি বয়ফ্রেন্ড ছিল? তুমি আমার সাথে ফ্রেন্ডলি সব শেয়ার করতে পারো।

আমি বুজলাম মেয়েটা আমার থেকে কথা বের করতে চাচ্ছে। আমি কি পাগল নাকি তোর মতো রিনা খানকে আমি আমার পারসোনাল কথা বলবো।

আমিঃ না নেই।

বর্ষাঃ তো,,,

ও কিছু বলার আগে আমি ওখান থেকে ওঠে চলে আসলাম, কি না কি আবার বলে ফেলে,তাই ওঠে কিচেনে গেলাম।আমার শাশুড়ী আর ননদ এ চা বানাচ্ছে সাথে ঝালপিঠা। এই ঠান্ডার মধ্যে ঝাল কিছুর খাওয়ার মজাই আলাদা।

আমিঃ আম্মু আমি একটু হেল্প করি না।

শাশুড়ী ঃ আরে না তোমার কিছুই করা লাগবে না তুমি নতুন বউ না,,,

আমিঃ আম্মু আপনি তো বলছেন আমি আপনার মেয়েই তাহলে মেয়ে একটু হেল্প করলে কি সমস্যা।

আদিবাঃ নাও মা তোমার কথার জালে তোমায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে 😆।

শাশুড়ীঃ হা হা তা তো দেখচি।আচ্ছা তুমি আমার সাথে এগুলো নিয়ে চলো সবাইকে দিতে হবে।

আমিঃ ওকে আম্মু।

আমি চা নিয়ে বসার রুমে গেলাম সবাই সোফায় বসে আছে,,,আমি গিয়ে প্রথমে আমার শশুরকে চা দিলাম।

শশুরঃ আমার নতুন মেয়েকে দিয়ে কে কাজ করাচ্ছে শুনি

আমিঃ আব্বু আমি কোন কাজ করি নাই,সব আপু আর আম্মু করছে আমি শুধু আনালাম মাত্র।

আদিঃ( সবার সাথে কি মিষ্টি মিষ্টি কথা আর আমার সাথে খারাপ হুহ)

আমি একে একে সবাইকে নাস্তা দিলাম,,,

হঠাৎ আদি বলে উঠলো,,,,

আদিঃ আব্বু আমাকে কালই অফিসে যেতে হবে অনেক কাজ জমে গেছে।

আব্বুঃ কি বলিস কাল তো ঋতুদের বাসায় যাওয়ার কথা।

আদিঃ আব্বু তুমি তো জানো কাজ ভালো না হলে আমাদের কোম্পানির লস হবে।সমস্যা নেই তো ঋতুরা যাবে আমি না গেলে হবে তো।

আম্মুঃ এটা কোন ধরনের কথা। তোর জন্যই তো আয়োজন হবে।কাল দিনটা একটু মেনেজ কর প্রয়োজন হলে কাল বিকেলে এসে তুই আর ঋতু রাতে রওনা দিবি।

আদিঃ কেন তোমারা যাবে না?

আম্মুঃ আরে সবে কাল বিয়ে গেল এখানে সব কিছু এখনও এলোমেলো সব ঠিকঠাক করে আমরা যাবো।

আদিঃ তাহলে ঋতু ও থাক।আমি একা সামলে নিবো।

আম্মুঃ আরে তুই অফিস থেকে এসে সব সামলাতে পারবি না ঋতু যাক।আমার থাকতে পারবো আমাদের নিয়ে চিন্তা করিস না।

আদিঃ ওকে তোমরা যা ভালো বুজো।

আমার রাগে গা জ্বলছে।এই কাদি টার সাথে আমাকে যেতে হবে।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে