না চেয়েও তোমায় পেলাম পর্ব-০৫

0
1834

#না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤
#Ritu_Jahan
#part_5

ঋতুর চোখ সামনে যেতেই তার হাত পা কাঁপতে লাগলো। কি করে পারলো ও??

আরিয়ান আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।ও বলেছে আমার বিয়েতে আসবে আমাকে বধূ সাজে দেখতে কিন্তু আমি কল্পনা ও করতে পারছি না আসলে ও এসেছে।ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে খুবই স্বাভাবিকই লাগছে।

কিন্তু আমি স্বাভাবিক থাকতে পারলাম না।ওকে দেখতেই আমার চোখ পানি থামছে না।আমি ওর দিকেই তাকাই আছি।সবাই আমাকে বলছে আদিকে মালা পরাই দিতে।আমার কানে কিছুই আসছে না। আমি শুধু আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি পেলছি।আমার ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক কোন মেয়ের বিয়েতে যদি তার বয়ফ্রেন্ড তার সামনে থাকে তাহলে ওই মেয়েটাই জানবে তার ভিতরের খবর।আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি পেলছি।সবাই বলতেছে আদিকে মালা পরিয়ে দিতে কিন্ত ওদের কথা আমার কান অব্দি যাচ্ছে না। আমি সামনে আরিয়ানের দিকই তাকিয়ে আছি,,,

আদি ব্যাপারটা বুজেছে তাই সে আমাকে মালাটা পরিয়ে দেয় আর আমার হাত ধরে নিজেই পরে নে।সবাই অনেকটা অভাক হয়।

এবার আসে বিদায় এর পালা।আমিতো সেই তখন থেকেই কান্না শুরু হয়েগেছে।আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছি,আব্বু ও নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না কান্না শুরু করে দেয়।আব্বুকে ছাড়ছি ও না।এ মানুষগুলোর বুকে ঠাই পাওয়ার জন্য হাজারো ইচ্ছে বিসর্জন দিতে পারবো। আম্মু বোনকে ধরে কাদতেছি,আজকে আমার জগরাটে বোনটা ও কাঁদছে। আগে বলতো তুই চলে গেলে আমি খুশি হবো আর এখন ছাড়ছে ও না।এটাই মনে হয় ভাইবোনের সম্পর্ক। শত জাগরার পরেও বুকের ভিতর ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে।

আমি কান্না করতে করতে চারপাশ কেমন ঘোলাটে দেখি চোখের সামনে আরিয়ানের চেহারা বেশে ওঠলো।আর কিছু মনে নেই,আমি সেন্সলেস হয়ে যাই।

চোখ মেলতে একটা রুমে নিজেকে আবিষ্কার করি।আমার সামনে অনেকে বসে আছে।কিছু কিছু মানুষকে ছিনি।যেহেতু ওনারা আনার আব্বুর কাজিন তাই অনেকের মুখ ছেনা।

আমার ননদ এ শরবত দিলো।আমি খেতে চাই নি তবুও জোর করলো তাই না খেয়ে পারলাম না । ওর একটা ছোট মেয়ে আছে অনেক কিউট আমার কাছ থেকে সরচেই না।আমার ননদ ওর ভাই থেকে ছোট কিন্তু বয়সে আমার থেকে একটু বড়।

হঠাৎ ওখানের একটা মধ্য বয়সী মহিলা বলে ওঠলো,,,

মহিলাটিঃ আজ কাল বউ রা তেমন কান্না করে নাকি।তুমিতো কেদে ভাসিয়ে দিয়েছো।আমার জন্মেও এই রকম কান্না করতে কাউকে দেখিনি।নিশ্চয়ই কোন গন্ডোগোল আছে।নাকি অভিয়ন করছো?

ওনার কথা শুনে খারাপ লাগলো,,,

আদিবা(ননদ)ঃ মামী সবাই তোমার দেখা মতো বউ হবে এমনতো কথা নেই।আর কাদলে যে কোন গন্ডগোল থাকবে তার ও কোন মানে নেই।অভিনয় কারা করতে পারে সেটা তাদের মুখ সেখলেই বলতে পারে।সো এই ধরনের মাইন্ড বদলাও।

মহিলাঃ এখনতো বলবি তোদের বউ যে।অবশ্যই ওরা তো আর হাই সোসাইটির ফ্যামিলির মেয়ে না, আর আমার মেয়ের মতো ফ্যাশন ও জানে না।এরা কান্না ছাড়া কি পারবে হা হা।

আদিবাঃ আমরা তোমার মেয়ের মতো কোন মডেল আনি নাই যে ফ্যাশন দেখাবে আমাদের।আর তুমি কোন সোসাইটি থেকে আসছো তা আর নাই বললাম।

ওনি এবার চুপসে গেল।

আমি বুজলাম ওনি আমার মামী শাশুড়ী।

মহিলাটির সাহস কি করে হয় আমাকে অপমান করার😒।আমাকে ফ্যাশন শেখাচ্ছ,কলেজে আমাকে সবাই ফ্যাশন কুইন বলতো😏।যদি ও তেমন মেকাপ করতাম না কিন্তু অল্পতেই নিজেকে ফুটিয়ে তলতাম।আমি যদি বউ না হতাম তাহলে ওনার বোতা নাক থোঁতা করে দিতাম হুহ🥱।আমাকে তো ছিনে না বুজিয়ে দিতাম ঋতু নাজনীন কি না পারে।( মনেমনে)

ওনার কথায় রাগ আসলেও। আমার ননদ এর কথায় খুশী লাগলো।আসলে এমন ননদ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার,,,

আমার শাশুড়ী এসে সবাইকে নিয়ে গেল আর আমাকে রেস্ট নিতে বলল।

আদিবা আমার পাশে এসে বলল,,,

আদিবাঃ ভাবি আপনি কিছু মনে করিয়েন না।ওনি ওই রকমই।একটা ছোট পরিবার থেকে এসে এখন আমার মামার টাকা নিয়ে অনেক অহংকার দেখায়।মানুষকে খোঁচা দিয়ে কথা বলাই অভ্যাস।নিজে কি ছিল ওটা ভাবে না।আপনি কিছু মনে করবেন না।

আমিঃ না না আমি কিছু মনে করি নাই।( ইচ্ছেতো করছিল নাক পাটাই দিতে।)।আর আপনি আমাকে তুমি করেই বলেন বয়সে আপনার থেকে ছোট।

আদিবা ছোট একটা হাসি দিয়ে,,,,

আদিবাঃ ওকে।আপনি রেস্ট নিন আমি আসি।

ও চলে গেল।আমারও খুব খারাপ লাগছে।তাই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতে ঘুম চলে আসলো।

রাত ১২ টা🌸🌸🌸🌸

মেয়েরা সবাই আমাকে অন্যরুমে নিয়ে গেল।রুমটা গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে। রুমটা দেখেই বুকটা ধুপ করে উঠলো

।মনে চলে আসলো আরিয়ানের কথা। ওর সাথে স্বপ্ন দেখা,ও আমাকে বলতো আমাদের বাসী ঘরটা শুধু গোলাপ ফুল দিয়ে সাজাবে।কারণ আমি গোলাপ ফুল পছন্দ করি।আজ তো ঠিকই গোলাপ ফুল দিয়ে সাজিয়েছে কিন্তু আমার তো ভালো লাগছে না।আজ যদি আরিয়ান থাকতো আদির জায়গা তাহলে এই রুমটা সবচেয়ে ভালো লাগতো।

সবাই আমাকে খাটে বসিয়ে রেখে চলে গেল।আরো কতো মজা করছে। আমার এখন লজ্জা পাওয়ার কথা কিন্ত আমার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে।

বসে বসে আগের কাটানো দিন গুলোই ভাবছি।হঠাৎ মাথা আসলো আজকে তো বাসর রাত যদিও আমি মানি না তবুও তো এটাই সত্যি। ওনি যদি আমার উপর স্বামীর অধিকার খাটাতে চায়।এটা মনে আসতে একটু একটু শীত থাকায় ও আমার শরীর ঘেমে একাকার,,

আম্মুগো তুমি আমারে নিয়া যাও।না হলে ওই আদির বাচ্চা কাদি এ আমারে শেষ করে দিবে, আমি কি করে মুখ দেখাবো,ধুর বিয়ে তো হয়ে গেছে মুখ তো দেখাতে পারবো।কিন্তু আমি নিজেকে নিজে কেমনে মুখ দেখাবোআমার ভার্জিনি শেষ করতে দিবো না।কি করি এখন,,,,কিছুই তো মাথায় আসছে না,,,

সেফটিপিন হাতে নিয়ে,,,,

পেয়েছি ও যদি আমার কাছে আসে,,,,,ওর পেটে সেফটিপিন ডুকিয়ে দিবো।কিন্তু আমি এই চিকনা মেয়ে কি ওই বডি বিল্ডারের সাথে পারবো? না না আমাকে পারতে হবে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করতে দিবো না।আমি শুধু আরিয়ানকে ভালোবাসি।

মনে সাহস রাখলাম আমাকে ধরার চেষ্টা করলেই একদম মেরে দিবো।কিন্তু সাহস যেন কোথা হাওয়া হয়ে যায়।ভয়ে আমার জান বের হয়ে যাচ্ছে তার উপর এতো ভারী মেকাপ।

এগুলো ভাবছি আর হাত কচলাচ্ছি। হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজ হতেই আমি তো শেষ। হাত পা কাঁপছে কিভাবে সেফটিপিন পেটে ডুকাবো সেফটিপিন তো কাঁপতেছে।আল্লাহ গো তুমি আমারে উঠাই নাও,না হয় গায়েব করে দাও😒।

অবশেষে দিশা না পেয়ে দিলাম ভেঁ ভেঁ করে কাঁদা,,,,,,,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে