#না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤
#Ritu_Jahan
#Part_17
ঋতুর সেন্স আসতেই ও দেখলো ও হাসপাতালে ওর কপালে বেন্ডেজ করা,,,
ঋতুর আগের কথা মনে করতেই ওর চোখের সামনে গাড়িটির ব্লাস্ট এর ছবি আসছে,,,
আদির কথা মনে আসতেই কেদে দিলো,,আদির কিছু হলে আমি বাঁচবো না,,, আমি নতুন করে বাঁচতে শিখেছি আদির জন্য,, আদিকে ভালোবাসি কিনা জানি না কিন্ত আদি আমার অস্তিত্বে জড়িয়ে গেছে,,,যেটা ভালোবাসার থেকেও বেশি,,,,যেটা ছাড়া বাঁচা অসম্ভব,,,,, আদিকে হারাতে পারবো না।
ঋতু কাঁদছে চিৎকার করে,,, নার্সরা এসে ওকে থামানোর চেষ্টা করছে,,,,ঋতুর আওয়াজ শুনে ঋতুর আম্মু আব্বু আসলো,,
ঋতুর ওদের দেখে পাগলে মতো,,,চিৎকার করে,,
আমিঃ আম্মু আদি কোথায়,,,আমি ওর কাছে যাবো,,( কাঁদতে কাঁদতে)
আম্মুঃ ঋতু শান্ত হও আগে,,না হয় শরীর আরো খারাপ করবে,,,
আমিঃ,, আমি কিছু শুনতে চাই না,,আমাকে আদির কাছে নিয়ে চলো,,ও কোথায়,,,,,বলো,,,
আম্মুঃ আচ্ছা,, আগে শান্ত হও তারপর নিয়ে যাবো,,,
ঋতু কিছুটা শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে,,,
আমিঃ আমি ঠিক আছি,,,আমাকে নিয়ে চলো,,,
আমার জেদে এ হার মেনে,,, আম্মুরা আমাকে ধরে ধরে একটা কেবিনের সামনে নিয়ে আসলে,,কেবনের সামনে,,,আমার শশুর, শাশুড়ী,, আদিবা দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদছে,,,,,ঋতু ওখানে গিয়ে ওর শাশুড়ীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,,,,, শাশুড়ী আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে,,
শাশুড়ীঃ আমার ছেলেটার কি হয়ে গেলো,,,ওর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাচবো,,( কাঁদতে কাঁদতে)
আমি নিজেকে সামলে,,,
আমিঃ ওর কিছুই হবে না,, সব ঠিক হয়ে যাবে,,আল্লাহর উপর ভরাসা রাখেন,,,,,,
ওই মুহুর্তে,, ডাক্তার বের হলেন,,,
শশুরঃ ডাক্তার আমার ছেলে এখন কেমন আছেন,,,
ডাক্তারঃ আমারা এখনো কিছু বলতে পারছি না,,,ওনি মনে হয় গাড়ি ব্লাস্ট হওয়ার সময়ই লাফ দেয়েছে,,যার কারণে পায়ের অনেক অংশ পুড়ে গেছে,,,আর খুব বাজে ভাবে পড়েছে,,তাই আঘাতটা ও অনেক বেশি পেয়েছে,,এখন সেন্স আসা পর্যন্ত আমরা কিছুই বলতে পারবো না,,,,তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন ওনি গাড়ি থেকে বের হতে পেরেছেন,,না হলে বাচতো না,,,
এটা শুনার পর আমার মাথা ঘুরছে,,চারপাশ অন্ধকার লাগছে,,,আর কিছুই মনে নেয়,,,,
চোখ মেলতেই সামনে আম্মুকে দেখলাম,,কাঁদছে,,,বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো,,আদির কিছু হলো না তো,,,
আমি চিন্তিত গলায়,,
আমিঃ আদি ঠিক আছেতো আম্মু,, কিছুক্ষণ আগে ডাক্তার বলছে সেন্স না আসলে কিছু বলতে পারবে না,,, সেন্স আসছে ওর,,
আম্মু কাঁদতে কাঁদতে,,
আম্মুঃ কিছুক্ষণ আগে না ডাক্তার এটা দুদিন আগে বলছিল,,
আমিঃ মানে,,
আম্মুঃ তোর শরীর দূর্বল আর আদির খবরে বড় শকড পেয়েছিস বিধায় তোর সেন্স আসছিলো না,, আমরাতো অনেক টেনশনে ছিলাম,,,আল্লাহ রহমত করেছে তোর উপর,,তাই দুদিন পর সেন্স আসলো,,
আমিঃ কি দুদিন,, তাহলে আদির কি অবস্থা,, ও ভালো আছে তো,,
আম্মুঃ কালকে ওর সেন্স আসছে, বাট ওর অবস্থা তেমন ভালো না,,,, এখনোও, ডাক্তাররা কাউকে যেতে দেয়নি।
আমি একটু ওঠার চেষ্টা করছি বাট শরীর অনেক খারাপ লাগছে,,,
আম্মুঃ তুই কি করছিস,,,, তুই এখনো পুরোপুরি সুস্থ হোস নি,, একটু রেস্ট নে,,,
আমি আর কথা বলতে পারছি না,,,,তাই আবার শুয়ে পড়লাম,,,,,,চোখটা লেগে যায়,,,,
ঘুম ভাঙ্গে আম্মুর আওয়াজে,,, আম্মুর আওয়াজে ভয় আসলো,,আদি ঠিক আছে তো,,
আমিঃ আম্মু আদি ঠিক আছে তো,
আম্মুঃ ও ঠিক আছে,,আগের থেকে,,কিছুক্ষণ আগের ওর সাথে সবাই দেখা করতে গেছে,ও নাকি তোকে দেখতে চাচ্ছে,,তুই ঘুমে ছিলি তাই ডাকিনি আগে,,,,
আদির আনাকে ডাকছে শুনে মনটা খুশি হয়ে গেলো,,,, ওকে দেখার জন্য মনটা চটপট করছিলো,,
আমিঃধুর তুমি আমাকে ডাকো নাই কেন,, এখন চলো আমি ওনাকে দেখবো,,
আম্মুঃতুই তো এখনো,,
ওনাকে কথা বলতে না দিয়ে,,
আমিঃ আম্মু আমি ঠিক আছি,,,,চলো তো,,
আমি ওনার কেবিনের সামনে যেতেই একজন নার্স এসে,,
নার্সঃআপনারা আর কেউ ভিতরে যেতে পারবেন না,,এমনিতেই সবাই ওনার সাথে কথা বলায় ওনি একদম দূর্বল হয়ে গেছে,, ওনাকে রেস্ট নিতে দিন,,
আমিঃ প্লিজ আমি একটু দেখেই চলে আসবো,, কোন কথা বলবো না,,শুধু একটি বার দেখা করবো,,
নার্সঃ ছরি আমি পারবো না,,কিছি হলে ওটার রিক্স কে নিবে,,পেসেন্টকে রেস্ট নিতে হবে,,
আমাদের কথা কাটাকাটি শুনে,,ডাক্তার এসে,,আমাকে বলল,,
ডাক্তারঃ আপনার নাম কি ঋতু,,,
আমিঃ জ্বি আমি ঋতু,,,আমি ওনাকে শুধু একটি বার দেখবো আর বেশি কিছু না,,
ডাক্তারঃ নার্স,, ওনাকে যেত দাও,,আদির সেন্স আসার পর থেকে ঋতু নাম ডেকে ডেকে অস্থির হচ্ছে,, ঋতুকে দেখলে একটু শান্ত হবে,,,,তবে শুধু আপনি যাবে,,,আর তেমন কথা বলবেন না,,,
আমিঃধন্যবাদ ডাক্তার,,, আমি ওনাকে কথা বলতে দিবো না,,,
ডাক্তার একটা মুচকি হেসে চলে গেল,,
আমি ভিতরে ডুকে আদির দিকে তাকাতে বুকটা কেঁপে ওঠলো,, হাতে,,পায়ে,,মাথায় বেন্ডেজ,, মুখটা শুকিয়ে গেছে,,,আমি ওনার পাশে বসলাম,,,চোখে পানি চলে আসলো,,আমি ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ও চোখ মেলে পেললো,,আমাকে দেখে তৃপ্তির হাসি দিলো,,যেন আমারি অপেক্ষায় ছিলো,,,
আদি অস্পষ্ট ভাবে,,কিছু বলছে,,কিন্তু বুজতেছি না তাই ওনার মুখের সামনে গেলাম,,,
আদিঃ তু,,মি,,ঠিক,,আছো,,(কষ্ট করে বলল)
ঋতু আদির কথা শুনে অবাকের শেষ সীমানা চলে গেল,,,আজ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে এমন অবস্থায়ও সে আমি ঠিক আছি কিনা জিজ্ঞেস করছে,,এ কেমন ভালোবাসা,, আদো কি আমি এই পবিত্র ভালোবাসার যোগ্য?
আমি কেঁদে দিলাম,,
আমিঃ আমাকে চিন্তা করা লাগবে না আমি একদমই ঠিক আছি,,,আজ আমার জন্য এসব হলো আমি যদি ঘুরতে যেতে না বলতে না বলতাম তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না,(,বলে কাঁদছি)
আদি হাতটা উঠানো চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,,
আমি ওর হাত শক্ত করে ধরে,,
আমিঃ প্লিজ আপনি নড়াচড়া করবেন না,,,আপনার রেস্ট এর প্রয়োজন,,,,,। আপনি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
আদি চোখ বন্ধ করে আছে আর আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,,ওর মুখে এখন তৃপ্তির ঘুম,,,
এভাবে কেটে যায় কয়েকটা দিন আদি আগের থেকে অনেকটা ভালো আছে,,, আমা এক মুহূর্তের জন্য ও ছেড়ে যাইনি,,,,কিন্তু এখন আদি জেদ ধরে বসে আছে, ও বাসায় চলে যাবে,,কিন্তু ডাক্তার বলেছে,, আরো দশ পনেরো দিন হাসপাতালে থাকতে,,কারণ ওর হাত পা এখনো প্লাস্টার করা আরো এক মাস লাগবে ভালো হতে,,কিন্তু আদির নাকি হাসপাতালে দম বন্ধ হয়ে আসছে,,আর আসবে নাই বা কেন একটা কেবনে আর কতো থাকা যায়,,,আদির জেদে হার মেনে আমার শশুর ডাক্তারকে অনেক বুজিয়েছে রাজি করিয়েছে,, ডাক্তার বলে দিয়েছে আদিকে আরো একমাস বেডরেস্ট এ থাকতে হবে,,যদি কোন ইনফেকশন হয় তাহলে ডাক্তারদের দায় নেই,,,,সব শর্ত মেনে,,শেষমেশ ওকে নিয়ে আসলাম,,আমাদের রুমে শুয়ে দিয়েছে,,,
আমার শাশুড়ী বলেছে অনেকদিন দিন পর হাসপাতাল থেকে এসেছে,,একটু পানি দিয়ে গা টা মুচে দিতে,,কারণ এখন গোসল করানো যাবেনা হাত পায়ের প্লাস্টারের কারণে,,,
আমার খুব নার্ভাস লাগতেছে,এই ফাস্ট আদিকে এতো ক্লোজভাবে স্পর্শ করতে হবে এতোদিন তো খাইয়ে দেওয়া আর ওনার পাশে বসে থাকা ছাড়া কিছু করিনি,,এখনতো ওনার অনেক ক্লোজ হতে হবে,,,শাশুড়ী কে কিছু বলতেও পারছি না,,কারণ স্রী তার স্বামীকে গা মুছে দিবে এটা অনেক স্বাভাবিক বিষয়,,কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন আমাদের মধ্যে ওই রকম সম্পর্ক নেই,,,বাট আমাকে আপনাদের সম্পর্কটা পরিপূর্ণ করে ঠিক করতে হবে,,,,
অনেকটা সাহস নিয়ে সামনে গেলাম,,ওনার দিকে তাকাতে নার্ভাসনেস বেড়ে গেলো,,,
চলবে,,,,