#না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤
#Ritu_Jahan
#Part_16
একটা নীল শাড়ি পরে,,, হালকা সাজলাম,,আমার সাজই হলো,, কাজল,আর হালকা লিপস্টিক,,
আজ খুব ভালো লাগছে,,অনেক দিন পর আজ একটু ঘুরবো,,,আজকাল আদির দুষ্টামি, কেয়ার সব খুব ভালোলাগে,,,,
আমিও চাই সুখী হতে,,সবার মতো সুন্দর ভাবে বাকি সময়টা কাটাতে,,,তার জন্য একটু না হয় স্বার্থপর হয়ে অতীত থেকে একপা এগিয়ে আসি,,,আর কার জন্যই বা অতীত আঁকড়ে ধরে থাকবো অতীতের মানুষটাতো ভুল,,,আদির মতো মানুষের ভালোবাসা কে বা হারাতে চায়,,যে ভালোবাসায় কোন মিথ্যা,, অভিনয় নেই আছে শুধু নিঃস্বার্থ ভালোবাসা,,,
এসব ভেবে,,, রেডি হচ্ছি,,,তখননি আদি কল করলো,,,
আদিঃ ঋতু রেডি হয়েছো?নিচে নামো
আমিঃ হুম হয়েছি,,আসছি,,
নিচে নামতেই আদি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে এভাবে তাকিয়ে থাকায় খানিকটা অস্বস্তি হচ্ছে,,, আমি ওর সামনে এসে দাড়ালাম তবুও ওর কোন হেল দোল নেই,,
আমিঃ যাবেন নাকি এখানে দাড়িয়ে থাকবেন নাকি,,,,
আদি কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথায় নাড়িয়ে গাড়িতে বসলো,,আদি ড্রাইভ করছে আর ফাঁকে ফাঁকে আমার দিকে তাকাচ্ছে,,
আদিঃ আজকে তোমাকে নীলপরির মতো লাগছে,,,
আমি একটা মুচকি হেসে,,
আমিঃ মনে হচ্ছে একটু বেশিই বলে পেলছেন,,,
আদিঃ মোটেও বেশি বলছি না বরং কম বলছি,,
আমি কিছু না একটা হাসি দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম,,,হঠাৎ,,
আমিঃ এই,,,, এই গাড়ি থামান,,( জোরে)
আদি ঋতুর কথা শুনে জোরে ব্রেক কষে,,
আদিঃ কি হলো,, এনি প্রবলেম,,
আমি হাত দিয়ে দেখালাম পাশের ফুচকাওয়ালা কে,,
আদি ওইদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে,,,
আদিঃ এই সামান্য ব্যাপারেরে জন্য এতো চিৎকার করার কি আছে,, নরমেলি বললেও আমি শুনবো তো,,আর এই শীতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া লাগবে না,,বড় কোন ফুচকার দোকানে যাবো।।
আমি মুখ বাকা করে,,
আমিঃ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়ার স্বাদই আলাদা,,,
বল,,গাড়ি থেকে নামলাম,,ওনি নামলো,,,
আমি ফুচকাওয়ালা কাকুর কাছে গিয়ে,,,
আমিঃকাকু দুই প্লেট ফুচকা দেনতো,,একটাতে ঝাল কম দিবেন।
কাকুঃআইচ্ছা তোমরা এ হানে বহো,,মুই এহনি বানাই দিতাছি,,
আদিঃআরে দুই,,প্লেট কেন,,আমি খাব না তোমার ওই ফুচকা,,,
আমিঃ আরে কিছু হবে না একদিন খেয়েই দেখেন,, ভালো লাগবে,,,
আদি আর কিছু বললো না,,
আদি আর ঋতু বসে অপেক্ষা করছে,,আদি দেখলো ঋতু ঠান্ডায় কাঁপছে,,,,,
আদিঃ এই ঠান্ডার মধ্যে তুমি শীতের কিছু পরো নাই কেন,,,এখন যে কাঁপতেছ!
ঋতু বোকা হাসি দিয়ে,,
আমিঃ ভুলে গেছি,,
আদি তার গায়ের ব্লেজারটা খুলে ঋতুর গায়ে দিয়ে বলল,,,
আদিঃ কোন দিন তুমি নিজেকে ভুলে যাও আল্লাহ জানে,,
ফুচকাওয়ালা কাকু ফুচকা দিলো বেশি ঝলটা আমি নিলাম,,ওকে কমটা দিলাম,,
আদি ঋতুর দিকে তাকিয়ে দেখছে,, ঋতু কি আনন্দ নিয়ে ফুচকা খাচ্ছে একটার পর একটা,, আর আদি এখনো একটাই মুখে,, নিয়ে বসে আছে,,
আদিঃ আমার প্লেট এ ঝাল কম তবুও ঝালে খেতে পারছি না আর তুমি এতো ঝাল কিভাবে খাচ্ছো,,
আমিঃ ( খাওয়ার জন্য বলতে কষ্ট হচ্ছে)আমি পারি,,অভ্যাস আছে,,,,
আদি দেখছে শুধু ঋতুর এই বাচ্চামো খাওয়া,,,,এই মেয়েটা বাড়িতে তেমন কিছুই খায় না আর এখন এমন ভাবে খাচ্ছে,,যেনো হাজারো দিনের ভুখী,,হা হা,,,আমি আস্তে আস্তে খাচ্ছি ঝালে পারছিও না,, আমি তিনটা খেতে না খেতে ঋতুর প্লেট শেষ,,আমি হা হয়ে আছি,,,
আমিঃ কাকু আরেক প্লেট ফুচকা দেন তো,,, ফুচকা গুলো অনেক মজা😋
এই মেয়ে বলে কি এমনিতে একপ্লেট খেয় পুরা মুখ লাল হয়ে গেছে এবার তো নির্ঘাত পেট খারাপ হবে,,
আদিঃ কাকু আর দেওয়া লাগবে না,,,আর ঋতু এই শীতে তোমার এতো বাইরের খাওয়ার খেলে পেট ব্যাথা করবে,,,
বলে কাকুকে টাকা দিয়ে ওকে টেনে নিয়ে চলে আসলাম,,,গাড়িতে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে,,
আদিঃ কি হলো আবাড মুড অফ হয়ে আছে কেন?
আমিঃ আর এক প্লেট খেলে কি এমন ক্ষতি হতো?(মুখ ফুলিয়ে)
আদিঃ তুমি বুজতেছ না এখন আবহাওয়া ভালো না খাওয়ার একটু ব্যাতিক্রম হয়ে শরীর খারাপ করবে,,,তোমার জন্য অন্য একদিন বাসায় নিয়ে যাবো,,ওকে,
আমিঃওকে,,,,এখন কোথায় যাবো,,,
আদিঃ রেস্টুরেন্টে যাবো ডিনার করতে,,,
আমিঃ কি এতো তাড়াতাড়ি ডিনার করবে না এমনি কোথাও নিয়ে যান,,,,
আদিঃ ওকে,,,
গাড়ি এসে থামলো একটা নদীর পাড়ে,,,এখানে লাইটিং করা মনে হয় এখানে অনেকে ঘুরতে আসে,,,চারপাশে তেমন মানুষ নেই,,, কিন্তু আবার একদম নির্জন ও না,,
আমি আর আদি পাশাপাশি হাঁটছি,,,
আদি হঠাৎ করে বলল,,
আদিঃ তোমার এইভাবে হাঁটতে কেমন লাগছে,,
আমিঃ খুবই ভালো,,আপনি কি এখানে আগে কখনও আসছেন?
আদিঃ হুম,,অনেকবার,,ফ্রেন্ডদের সাথে,,আর কাজিনদের সাথে,,,
কাজিনের সাথে শুনে মনে আসলো বর্ষাকে,,
আমিঃ বর্ষা ও ছিল আপনাদের সাথে ( ভ্রু কুঁচকে)
আদিঃ ওফকোর্স ও, তো কাজিন না,,
আমিঃআচ্ছা একটা কথা বলবো,,,
আদিঃ হা বলো,,
আমিঃ আপনার আর বর্ষার মধ্যে কিছু ছিলো,,( ভয়ে বললাম)
আদিঃ কি,, বলছো এসব,,, আমি আগেই বলছি তুমি আমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা,,, তোমার এমন কেন মনে হলো ওর আর আমার মাঝে কিছু ছিলো,,,
আমিঃ এমনিতেই,,ও কেমন আপনার সাথে চিপকে চিপকে থাকে আর আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে,,,তাই,
আদি ভাব নিয়ে,,,
আদিঃ এরকম একটা হেন্ডসাম ছেলে সামনে থাকলে শুধু বর্ষা কেন সবাই তাকাবে আর ট্রাই মারার চেষ্টা করবে,,কিন্তু যার হাসবেন্ড তার খবর নাই বাকি মেয়েদের ঘুম নাই,,,,
(এই মানুষটা যখনই সুযোগ পাবে ফ্লট করা শুরু হয়ে যাবে,,যেন পৃথিবীতে ওনি একমাত্র সুন্দর ছেলে,,হুহ)
আমিঃ বাকি মেয়েদের ভালো চোখ নেই তাই আপনাকে দেখে,,আমার তো আর চোখ খারাপ না,,
আদি মুখভার করে,,
আদিঃ আমি জানতাম,, তুমি সবসময় আমাকে পঁচানোর জন্য রেডি থাকো,,,একদিন দেখবে তুমি নিজেই আমাকে বলবে আমি দেখতে হ্যান্ডসাম,,, হাহ
আমি হেসে,,,
আমিঃ হুহ,, কুছ বি,,( গালে বাকা করে)
আদিঃ দেইখো তখন আমার কাছে আসতে চাইবে হয়তো তখন আমিই থাকবো না,,
ওর শেষের কথা আমার বুকে এসে লাগলো,,,কেন জানি খুব ভয় করছে,,,হারানোর ভয়,,না আমি আর জীবনে কিছু হারাতে পারবো না,,প্রথম ভালোবাসা হারালাম কিন্তু আর না,, মনের ভিতর খুব ভয় লাগছে আর মনে কু ডাকছে,,,আমি আদির হাতটা শক্ত করে ধরলাম,,,
আদি হঠাৎ ঋতুর স্পর্শ পেয়ে অবাক হয়ে গেল,,এই প্রথম ঋতু তাকে স্পর্শ করেছে,,ব্যাপারটা কেমন হজম হচ্ছে না আদির,,,
আদিঃ তোমার কি ভয় করছে,,
আমিঃ কেন ভয় হবে আপনি আছেন না,,
আদিঃ তাহলে হঠাৎ হাত ধরেছো যে,,
আমিঃ কেন হাত ধরতে পারি না নাকি,,
আদিঃ পারবে,,কিন্তু তোমার ধরার কারণটা কি অন্যকিছু( প্লিজ ঋতু বল তুমি স্বামীর অধিকারে ধরছো),,,
ঋতু কথা কাটানোর জন্য বলে,,
আমিঃ ফ্রেন্ড হিসেবে তো ধরাই যায়,,
আদির মুখটা কালো হয়ে গেলে ও হয়তো অন্যকিছু শুনতে চেয়েছে,,,
তবুও নিজেকে সামলে হাঁটছে,,, অনেকক্ষণ হাঁটার পর,,
আদিঃ চলো,,এবার বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে,,,
আমিঃ ওকে চলেন,,,,
গাড়ি করে একটি বড় রেস্টুরেন্টে আসলাম,,আদি আমার জন্য সুপ ওর্ডার করলো,,
আমিঃ ছি আমি সুপ খাবো না,,
আদিঃ এমনিতে ফুচকা খেয়েছ,,তার উপর অনেকক্ষণ ঠান্ডার মধ্যে ছিলে,,,এখন গরম গরম সুপ খেলে ভালো লাগবে,, না হয় শরীর খারাপ করবে
আমিঃ আপনাকে এতো ভালো ভাবতে হবে না,,
আদিঃহয়তো একদিন ভালো ভাবার মানুষই পাবে না,,,
আজ আদির কথা গুলো কষ্ট হচ্ছে,, মনটা বারবার কেমন করছে,,
তাই কথা না বাড়িয়ে সুপটা ইচ্ছে না থাকার স্বর্তে ও খেয়ে নিলাম,,তার পর আদি আরো কিছু ওর্ডার করলো,,,আমি তো আর খেতেই পারছি না,,, তবুও আদির দমকে সব খেতে হচ্ছে,, আদি তো ঋতুর মুখ দেখে হাসছে,,এভাবে তাদের খুনসুটির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টে,,
কিন্তু দূর থেকে একজনের গা জ্বলে যাচ্ছে তাদের এই খুনসুটি দেখে,,,তার চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে,,,,
আদি আর ঋতু ডিনার শেষ করে,, গাড়িতে উঠলো,,আদির কেমন যেন মনে হচ্ছে এখানে কেউ ছিলো,,,আদি তেমন পাত্তা না দিয়ে গাড়ি চালালো,,
গাড়ির নিছ থেকে আরিয়ান উঠে বাকা হাসি দিয়ে হাত ঝারলো,,,
আদি গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ তার মনে হলো গাড়িকে সে কন্ট্রোল করতে পারছে না ফুল স্পিড এ চলছে,,,আমি ভয়ে,,
আমিঃ কি হয়েছে আপনি এতো জোরে চালাচ্ছেন কেন,,এক্সিডেন্ট করবে তো,,
আদিঃ মনে হচ্ছে গাড়ির ব্রেক ফেল করেছে,, থামাতে পারছি না,,
ঋতু ভয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরে আছে,,
আদিঃ ঋতু ভয় পেয়ো না আমি থাকতে কিছু হবে না তোমার,,,,
আদি অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু গাড়ি থামছে না যেকোন মূহুর্তে এক্সিডেন্টে করবে,,,আদি আর কোন আশা না পেয়ে,,
আদিঃ ঋতু আমার দিকে তাকাও,,,,, ভয় পেয়েও না,, সাহস রাখো,,, আমাদের গাড়ি যেকোনো সময় ব্লাস্ট হতে পারে,,,এখন একটাই উপায়,,,তোমাকে এখান থেকে বের হতে হবে,
আদি দরজা খুলেছে,,কিন্তু ঋতু কিছুতে লাফ দিচ্ছে না,,
আমিঃ আদি আমি তোমাকে ছাড়া যাবো না দুজনে একসাথে বের হবো,,,
আদিঃ ঋতু প্লিজ বুজার চেষ্টা করো,, তোমাকে যেতেই হবে,,আমি চেষ্টা করবো বের হওয়ার,,,,, তার আগে তোমাকে বের হতে হবে,,,,
আদি ঋতুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে,,,
আদিঃ ঋতু একটাবকথা মনে রেখো আমি না থাকলেও আমার ভালোবাসা সব সময় তোমার সাথে থাকবে,,I love you ritu,,
বলে খালি জায়গায়,,ঋতুকে ধাক্কা মারে,,,ঋতু রাস্তার ধারে পড়ে যায়,,তার কপাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে,,ঋতু সামনে তাকিয়ে দেখে গাড়িটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে ব্লাস্ট হয়ে,,
,,ঋতু জোরে একটা চিৎকার দেয়,,ঋতুর আর কিছু মনে নেয়,,,,ওইখানে সেন্সলেস হয়ে যায়,,
( আদির ভালোবাসা কি পূর্ণতা পাবে না,,,এখানে শেষ হবে তাদের সম্পর্কটা?)
চলবে,,,,
[ ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন 🙏]