না চেয়েও তোমায় পেলাম পর্ব-১৪

0
1868

#না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤
#Ritu_Jahan
#Part_14

🌼🌼🌼
সকালে সামনের দিকে তাকাতেই দিলাম চিৎকার,,,

আমি আদিকে জড়িয়ে ধরে আছি,,,আমার চিৎকারে আদি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো,,

আদিঃ কি হয়েছে ঋতু,,,চিৎকার করছো কেন,,,

আমিঃ আপনি আমার এতো কাছে কেন আসলেন,,,

আদি চারপাশে তাকিয়ে বলল,,

আদিঃ আমি আমার জায়গায় আছি,,,,তুমি তোমার দিকে তাকিয়ে দেখো তুমি আমার কাছে এসেছো আমি যায় নাই,,,

আমি আমার পাশে তাকিয়ে দেখি কোলবালিশ নিচে পড়ে আছে আমি কোলবালিশ এর জায়গায় চলে এলাম,,

আমি আদির দিকে সন্দেহ চোখে তাকিয়ে,,

আমিঃ বায় এনি চান্স আপনি কোলবালিশ আমার এখানে ফেলে আমাকে এখানে আনেন নাই তো।ভুল করেও আমার ঘুমের সুযোগ নিবেন না।( ভ্রু কুঁচকে)

বলে আদির দিকে তাকালাম,,, আদিকে দেখে বুকটা আঁতকে ওঠল,,, চোখ মুখ লাল করে পেলেছে,,আমার আত্মা বের হওয়ার উপক্রম হলো,,,,,,বাবাগো কেন যে বলতে গেলাম আজ তোর কপালে শনি দশা আছে,,,,

আদিঃ তুৃমি কি করে ভাবলে আমি তোমার ঘুমের এডভান্টেজ নিবো,,আমাকে তুমি এখনো বুঝতে পারো নাই,,,,আমারই দোষ আজো আমি তোমার বিশ্বাস অর্জন করতে পারলাম না।।আমাকে তোমার ঘুমের সুযোগ নেওয়া লাগবে না,,তোমার উপর আমার এমনিতেই অধিকার আছে,,,কিন্তু আমি জোর করে অধিকার চাই না,,যতদিন না তুমি আমাকে মেনে নিবে ততদিন তোমাকে ছোঁয়ার ও চেষ্টা করবো না,,,

আমিঃ আমি ওইভাবে মিন করি,ন,,

আমার কথা না শেষ হতেই ওনি ওঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো

ধুর কেন যে বলতে গেলাম,,আমি জানি ঘুমের মধ্যে আমি এক জায়গায় থাকতে পারি না,,,তাই হয়তো ওনার কাছে চলে গেছি,, তবুও কেন যে সন্দেহ করতে গেলাম,,এখন ওনি যদি রাগ করেন,,,

আমি এসব ভেবে কিচেনে চলে গেলাম,,,

সবার জন্য নাস্তা রেডি করছি,,,আদিবা ও আসলো আমার হেল্প করতে,,,নাস্তা টেবিলে নিয়ে গেলাম দেখি আদি রেডি হয়ে আসলো মুখ কালো হয়ে আছে,,,,

সোজা টেবিলে বসে নাস্তা করে চলে গেল,,একটি বার উপরেও তাকালো না,,,প্রতিদিন আমি কিছু না বললে ও ওনি বকবক করতো আজ কোন কিছু না বলেই চলে গেলো,,,,কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে গেল,,কারণটা আমার জানা নেই,,,তবুও নিজেকে সামলে,,সবার সাথে বসে নাস্তা করে নিলাম,

সারাদিন সবার সাথে খুব ভালো কেটেছে,,,তাহিয়া তো আমাকে ছাড়া কিছু বুঝে না,,এমনকি আদিবার কাছেও যায় না,,,,বিকেল বেলা তাহিয়াকে ঘুম বানিয়ে রুম ঘোচাচ্ছি,,,, আদির আলমারি খুলে ওর জিনিস ঠিক করছি এমন সময় একটা হাতে শক্ত কিছু লাগলো,,,ভালো করে দেখতে বুজালাম এটা ডায়েরি,,, ডায়েরি দেখেই আরিশা আপুর কথা মনে পড়লো,,,,

(আরিশা আপু বলেছে আদি নাকি আমাকে দুই বছর আগে থেকে ভালোবাসে,,,ডায়েরি পড়লে নাকি বুজবো)এই কথাটা আমার মাথায় ছিলো না,,,,,

আমি ডায়েরিটা নিয়ে বেলকনির দোলনায় বসলাম,,,

ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠায় তার কলেজ লাইফের কথা তার পড়া শুনা নিয়ে,,,,

তারপরের পৃষ্ঠা ওলটালাম,,,, লেখা আছে,,,,

আজকে আম্মুর জোরাজোরিতে ওনাদের দূরের কাজিনের মেয়ের বিয়েতে গিলাম,,,

ডায়েরিতে,,,🌼

(বিয়েতে এসে একটুও ভালো লাগছে না।কারণ তেমন কাউকে চিনি না,,,,হঠাৎ একটি মেয়েকে দেখেই আমার পৃথিবী থেমে গেছে,,,লাইফে কোন মেয়েকে আমার ভালো লাগে না,,আমি ওইভাবে তাকাতাম না,,,আজ কি জানি হলো,,ওই মেয়ের দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না,,,কোন মেকাপ ছাড়া কাউকে এতো কিউট লাগে আমার জানা ছিলো না,,,
পরে আদিবার কাছ থেকে জানলাম ওর নাম ঋতু,, নামটাও ওর মতো কিউট,, আস্তে আস্তে ওর কথাবার্তা, চলাফেরা দেখে আমি একদম মুগ্ধ হয়ে গেছি,,খুবই সাধারণ একটা মেয়ে,,,বিয়েতে কোন ছেলের সাথে ও কথা বলতে দেখিনি,,এমনকি আমার দিকেও তাকায়নি,,,, বাড়িতে এসে,, ঘুমাতে,, বসতে,,সব সময় ওর ছবি আমার চোখে ভাসে,, খুব মিস করি,,,আমি বুঝে গেছি আমি ঋতুকে ভালোবেসে পেলেছি,,যে আমি মেয়েদের দিকে তাকাইনি আজ একটা মেয়ে আমার ঘুম কেড়ে নিলো,,,,তারপর থেকে ওর ব্যাপারে সব খোঁজ নিই,,,,,অনেকদিন কলেজেও গিয়েছি ওকে দেখতে,,
এভাবে দিন কাটলো আমি দিনদিন ঋতুকে ভীষণ ভালোবেসে পেলেছি,,,, এভাবে ২ বছর কেটে গেলো ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবাসা,,, দূর থেকে লুকিয়ে দেখা,,কখনো সাহস হয়নি ওর সামনাসামনি হতে,,
পরে পরিবারকে জানালে সবাই রাজি হয়,,কারণ সবাই জানে ঋতু অনেক ভালো মেয়ে,,,তাই সবাই মিলে এনগেজড করে পেলে,,কিন্তু আমি ওকে আংটি পরানোর সময় দেখলাম ওর চোখের কোণে পানি,, এটা দেখে বুকটা কেঁপে ওঠলো,,, ঋতু কি বিয়েতে রাজি নেই,,মনের ভিতর হাজারো প্রশ্ন জমলো,,,তাই ওর সাথে আলাদা দেখা করি,,,আমি ওর সাথে কথা বলে জানলাম ওর বয়ফ্রেন্ড আছে,,,, এই কথাটা শুনার পর আমার ভিতরটা দুমড়ে ওঠল,,, মনে হলো কেউ আমার শরীর থেকে আত্মাটা বের করে পেলছে,,,,নিজেকে সামলে চলে আসলাম,,কিন্তু ওর ফ্রেন্ড থেকে শুনলাম ওর বয়ফ্রেন্ড ভালো না,,,,খোঁজ নিয়ে দেখলাম আসলেই ওই ছেলেটা ঋতুকে ইউজ করছে,,,তাই আর বিয়েটা ভাঙ্গলাম না,,,জানি না ও আমাকে কখনও মেনে নিবে কিনা,,, কিন্তু ও আমার চোখের সামনে আছে এটাই আমার কাছে অনেক,,ওকে দেখে বাকি জীবনটা পার করে দিবো,,,কখনও কখনও ইচ্ছে হয় ওর ঘুমন্ত চেহারাটা ছোঁয়ে দিই,,কিন্তু বিবেক এ বাধা দেয়— তবুও ভালোবেসে যাবো সারাজীবন)

ডায়েরিটা পড়ে আমার খুব অপরাধবোধ কাজ করছে,,একটা মানুষ নিস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেই গেলো আর আমি তাকে তার প্রাপ্য অধিকারটুকু দিতে পারছি না,,উল্টো তাকে সন্দেহ করছি,,,আসলেই ওনি খুব ভালো একজন মানুষ,, আদির জায়গায় অন্যকেউ থাকলে এতোক্ষণে তার অধিকার আধায় করে নিতো,,,,

ভাবতে ভাবতে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি রাত হয়ে গেছে,,,ডায়েরি পড়তে পড়তে কখন যে রাত হয়ে গেছে টেরই পেলাম না,,, ডায়েরিটা আলমারিতে রেখে বাইরে এসে আম্মুর সাথে গল্প করছি,,,,

কলিংবেল বাজতেই,,,আমি গিয়ে খুললাম,,, আদি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে গেল,,,এটা কি হলো প্রতিদিন দরজা খুলতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিতো,,,কেন যেন ওনার ইগনোর সহ্য হলো না,,,,,,

রুমে গিয়ে দেখি ওনি নেই,,,হয়তো ওয়াশরুমে গেলো,,আমি এসে সবার জন্য ডিনার রেডি করে টেবিলে আনলাম,,আদি ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসলো,,নিচের দিকে তাকিয়েই খাচ্ছে,,,

আব্বুঃ তোর কি কিছু হলো,,,আসার পর থেকে দেখছি কেমন চুপচাপ,,

আদিঃ কই না তো কিছু হয়নি,,এমনি একটু মাথা ব্যাথা করছে,,

আব্বুঃ ও অফিসের চাপতো,,, একটু রেস্ট নে ঠিক হয়ে যাবে,,,

আদিঃ হুম,,

আদি খেয়ে চলে গেলো,,,আমি সব গুছিয়ে আসতেই তাহিয়া বায়না ধরেছে আজকে আমার কাছে থাকবে,,
কিন্তু আদিবা অনেক বুঝাচ্ছে কিন্তু ছোট বাচ্চা যেটা জেদ ধরেছে ওইটাই,,,আদিবা না পেরে বকা দিচ্ছে,, আমি গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে আদিবাকে বুঝিয়ে ওকে আমার রুমে নিয়ে এলাম,,

এসে শুইয়ে দিতে,,,

তাহিয়াঃ আমি মামু আর তোমাল সাথে থাকবো,,

আমিঃ ওয়েট তোমার মামুকে ডেকে আনি,, ততক্ষণে তুমি সুন্দর করে শুয়ে থাকো,,,একটুও নড়বেনা ওকে,,

তাহিয়াঃ ওকে,,

আমি উঠে ওনাকে খুজতেছি ওনি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে,,,

আমিঃ আপনি এই ঠান্ডার মধ্যে এখানে কি করছেন,,,তাহিয়া আপানাকে ছাড়া ঘুমাচ্ছে না চলুন তো,,

আদি এখনো সামনের দিকে তাকিয়ে,,,

আদিঃ তুমি আমার পারমিশন ছাড়া আমার ডায়েরিতে হাত কেন দিয়েছো,,

( আদি ফ্রেশ হওয়ার জন্য আলমারি খুলতেই দেখলো কাপড় সব গুছানো আর ডায়েরিটা আগের জায়গায় নেই এক পাশ করে রাখা,,আদির আর বুজতে দেরি হলো না ঋতু ডায়েরিটা ধরেছে,,)

আদির কথা শুনে ঋতু শুকনো ডোক গিললো,,,

ঋতুর থেকে কথা না পেয়ে আদি ভ্রু কুঁচকে বলল,,

আদিঃ তুমি কি ডায়েরিটা সব পড়েছো?

আমিঃ (আওয়াজ ছোট করে)হুম,,

আদি আবারও সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলো,,,

ঋতু ভয়ে ভয়ে,,,

আমিঃ আপনি আমাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসেন এটা এতোদিন বলেন নাই কেন,,,

আদি একটা তুচ্ছ হাসি দিয়ে,,

আদিঃ যেখানে বিশ্বাসই অর্জন করতে পারলাম না সেখানে আবার ভালোবাসার কথা বলা বিলাসীতা,,,হাহ

বলে রুমে চলে গেল,,

আদির কথায় নিজের কাছে খুব খারাপ লাগলো,,,

আমিও রুমে চলে এলাম,,দেখি মামা ভাগ্নী কথা বলছে,,আমি গিয়ে তাহিয়ার পাশে শুয়ে পড়লাম,,,মাঝখানে তাহিয়া আর দুপাশে আমি আর আদি,,,

তাহিয়াঃ মামু একতা গল্প শুনাও না

আদিঃ ওকে শুনাবো,, কিন্তু গল্প শুনে তোমাকে ঘুমাতে হবে।

তাহিয়াঃ আচ্ছা

আদি গল্প বলেই যাচ্ছে কিন্তু তাহিয়ার ঘুমের কোন নামই নেই।ও শুধু তারপর তারপর করছে,,, এদিকে গল্প বলতে বলতে আদি নিজেরই ঘুম চলে আসছে,,তবুও ঘুম ঘুম কন্ঠে যা পারছে গল্প বলছে আসলে গল্প বলছে না বকছে😆।এদের কান্ড দেখে আমার খুব হাসি আসছে,,

এক পর্যায় তাদের দুজনেরই ঘুম আসলো,,আমি আদির দিকে তাকিয়ে আছি,,এতো কাছ থেকে কখনো ভালো করে দেখিনি,,,ঘুমান্ত চেহারায় পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে,,,চোখে ক্লান্তি চাপ,,সারাদিন কাজের চাপ আর এখন ভাগ্নীর চাপে পুরা ক্লান্ত হয়ে গেছে,,,

আদির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুম চলে আসছে টেরই পাই নি,,,,

চলবে,,,

( গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ🙂)
[ ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন🙏]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে